ফিলোফোবিয়া পর্ব -৩৭

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা ( সাজিয়ানা মুনির )

৩৭.

( কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ )

গভীর রাত। ঘর জুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। খোলা জানালা দখিনা বাতাস। আকাশ জুড়ে তারার মেলা। চন্দ্রসুধায় ভুবন ছেয়ে। বারান্দার দোলনা দুলছে, বাতাসে শুভ্র গন্ধরাজের মাদকতা মিলিয়ে।
আঁধারে ডাকা ঘরটায় উষ্ণ নিশ্বাসের ভারী আওয়াজ।চাদর খামচে চোখ বুজে শক্ত শিথিল হয়ে শুয়ে আছে প্রিয়। শতাব্দ তার গলার গভীরে মুখ ডুবিয়ে। উত্তপ্ত নিশ্বাস, ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ায় কেঁপে উঠছে প্রিয়। সেদিকে কি ধ্যান আছে বেহোঁশ শতাব্দ’র। বুকের গভীরে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে প্রিয়’কে। আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে। চোখে অঢেল ঘোর, গভীর নেশা মাখিয়ে।
প্রিয় কাঁপছে। হাত পা নড়ছে থরথর। শতাব্দের গাঢ় স্পর্শ তার শক্তপোক্ত আবরণকে ভেঙ্গে, ঘুড়িয়ে, মিলিয়ে দিচ্ছে। খোলস ছাড়িয়ে টেনে আনছে সেই পুরানো দুর্বল প্রিয়’কে।
কাঁপাকাঁপি হাতটা শতাব্দের ঠোঁটের কাছে ধরল প্রিয়। ভাঙ্গা ভাঙ্গা সুরে বলল,
‘ প্লি..প্লিজ থামুন। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।’
থেমে গেল শতাব্দ। মাথা উঁচিয়ে মুখপানে চাইল প্রিয়’র। চন্দ্রসুধা এসে তার চোখেমুখে পড়ছে। হরিণটানা চোখজোড়া টলমল করছে। রক্তিম লিপস্টিক ঠোঁটের চারপাশে ছড়িয়ে। অগোছালো কেশ বালিশের উপর এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে। হাত বাড়িয়ে কপালের চুল গুলো গুছিয়ে দিলো শতাব্দ। দুগালে হাত রেখে কপালে গভীর ঠোঁট ছুঁয়িয়ে প্রিয়’র বুকে মাথা রাখল। ঘর জুড়ে পিনপতন নীরবতা। প্রিয় তখনো অস্বাভাবিক রকম অস্থির, কাঁপছে। আকুতির স্বরে বিড়বিড় করে বলল,
‘ এমন কেন করছেন? আপনি বেহোশ! রাত পোহাতে সব ভুলে যাবেন। আমি কি করে ভুলব?’
গলায় নাক ঘোষতে ঘোষতে শতাব্দ নিগূঢ় সুরে বলল,
‘ ভুলতে কে বলেছে? সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে টেনে নেও কাছে।’
‘ কেন অবুঝ হচ্ছেন?’
‘ নিজের বিয়ে করা বউকে আদর করাতে অবুঝের কি দেখলে?’
চাপা রাগ হলো প্রিয়’র। অধৈর্য হয়ে বলল,
‘ আমাকে ছাড়ুন! যেতে দিন।’
শতাব্দের নিমিষ গভীর আওয়াজ,
‘ পারবো না ছাড়তে। ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। তুমি যে সোনার হরিণ!’
প্রিয় চুপ। শতাব্দ বলল,
‘ এতটা বছর আমি ভালো ছিলাম না প্রিয়। একটু ভালো ছিলাম না। তোমার শূন্যতায় আমিও পুড়েছি। আমার সকল সাফল্য তুমিহীন বৃথা। আমার প্রত্যেকটা দিন তুমিহীন ছিল মুশকিল!’
একটু চুপ থেকে আবারো বলতে লাগল,
‘ তোমার আমাদের প্রথম দেখার কথা মনে আছে প্রিয়?’
প্রিয়’র টলমল চোখ। খানিক সময় নিয়ে ছোট ঢোক গিলে বলল,
‘ মেলায়। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।’
মৃদু হাসল শতাব্দ। বলল,
‘ উহু তার আগে।’
বিস্মিত স্বরে প্রিয় জিজ্ঞেস করল,
‘ মানে! তার আগে আমাদের কোথায় দেখা হয়েছিল?’
‘ তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম দুইহাজার নয়ের গ্রীষ্মের কোন এক পড়ন্ত বিকালে। ঢাকা থেকে মাত্রই ফিরেছিলাম বাড়িতে। ভাপসা গরমে চারিদিক চৌচির। সূর্যের তাপ তখন কমেছে সবে। চারিদিকে র*ক্তিম আলো ছড়িয়ে। মাথায় ঠান্ডা পানি ঢেলে ফ্রেশ হতে বারান্দায় যেতে হ্ঠাৎ হাসির রোল বাজলো কাছে। আওয়াজের সুত্র খুঁজতে চোখ পড়ল পাশের বাড়ির ছাদে। এক ঝাঁক মেয়ে সেখানে। নাচ গান আড্ডা দিচ্ছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলাম, অমনি চোখ আটকে গেল এক কিশোরীতে। খুব সুন্দর করে হাত পা নাড়িয়ে ক্লাসিকাল ড্যান্স করছে। সাদা গ্রাউনটা গোল হয়ে রাউন্ড রাউন্ড ঘু্রছে, লম্বা খোলা কেশ বাতাসে দুলছে। কয়েক স্টেপ করেই থেমে গেল মেয়েটা। খিলখিল করে হেসে ফেলল। আমি থমকে গেলাম, স্তব্ধ হয়ে বিমূঢ় চেয়ে রইলাম। কতক্ষণ চেয়ে ছিলাম জানিনা। তবে , সেই মুখখানায় চেয়ে নির্দ্বিধায় এক যুগ কাটিয়ে দেওয়া যায়। তার আগেও অনেক সুন্দরী দেখেছি। কিন্তু সেই সুশ্রী মুখখানায় অন্যরকম অদ্ভুত টান ছিল। টানা চোখজোড়ায় মাদকতা মেশানো ছিল। সরু ঠোঁটের কোণে ভুবন ভুলানো এক চিলতে হাসি। নির্দ্বিধায় তাকে বলাই যায় অন্যন্য সুন্দরী! হ্ঠাৎ তার সাথে চোখাচোখি হতেই ঘাবড়ে গেল সে। কপাল কুঁচকে মিলিয়ে নিলো হাসি। গুটিসুটি হয়ে কায়দা করে আড়াল করে নিলো নিজেকে।
সেই মুখখানা আমার মস্তিষ্কে গাঢ় ছাপ এঁকে দিয়েছিল। সেইদিন থেকে আজ অবধি তাকে ভুলতে পারিনি। হ্যাঁ প্রিয়, তুমি হয়তো ভুলে গেছ। কিন্তু আমি কোনদিন সেই বিকালটাকে এক মুহূর্তে’র জন্যেও ভুলতে পারিনি।’
শতাব্দের কথা লেগে লেগে আসছে। বুজে আসছে চোখ। প্রিয়’র দিক হাত বাড়াল। মুখ ফিরিয়ে নিলো প্রিয়। চোখের কোনে জল জমেছে তার। কন্ঠ ধরে আসছে। নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করল। কাঁপা কাঁপা সুরে বলল,
‘ কেন এসেছিলেন আমার জীবনে? আপনার ভালোবাসাকে আমার ভয় হয়। প্রচন্ড ভয়!’
শতাব্দের করুন আকুতি,
‘ ভালোবাসি। একটু ভালোবাসো! দেখো, তোমার তৃষ্ণায় ক্ষণে ক্ষণে মরছি প্রিয়।’
‘ অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভালোবাসা হবেনা আর!’
প্রিয়’র চোখের কোন বেয়ে পানি ঝরল। শতাব্দের দূর্বল চোখ বুজে বুজে আসছে। হাত বাড়িয়ে দিলো। প্রিয়’র চোখ মুছতে চাইল তার আগেই বিছানায় ঢলে পড়ল। খানিক বাদে কেশে উঠল। প্রিয়’কে ছেড়ে কাশতে কাশতে উঠে বসল। ফ্লোরে পা রাখতে পড়ে গেল। মুখ ভরে বমি করে মাখিয়ে ফেলল ফ্লোর। হতভম্ব প্রিয়। ধরফড়িয়ে বিছানা থেকে নামল। শতাব্দের পাশে যেয়ে বসলো। আ*তঙ্কিত চোখমুখ। আলতো করে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল প্রিয়,
‘ আপনি ঠিক আছেন?’
হা, না উত্তর দিলো না শতাব্দ। থম মে*রে বসে রইল। প্রিয় বুঝল ঘোর কাটেনি। শরীর দুর্বল। কোনরকম ধরে বুঝিয়ে শতাব্দকে বিছানায় বসালো। পানি এনে শতাব্দকে পরিষ্কার করে কাপড় পাল্টে। ঘর মুছে পরিচ্ছন্ন করে চলে গেল। কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল, শুয়ে পড়েছে শতাব্দ। হাত পা গুটিয়ে ঘুমিয়ে। তার শীত করছে কি? হয়তো। গায়ে চাদর মেলে দিতে গিয়ে থমকে গেল প্রিয়। জ্বরে পু*ড়ছে গা। তড়িঘড়ি করে কপালে হাত রাখল। প্রচন্ড গরম। ঘাবড়ে গেল প্রিয়। কি করবে এখন? তাড়াতাড়ি করে ভেজানো কাপড়ে শরীর মুছে দিলো। ঘুমের ঘোরে শতাব্দ প্রিয়কে নিজের কাছে টেনে নিলো। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা রাখলো। বাঁধা দিলো না প্রিয়। নিমিষ চেয়ে রইল শতাব্দের ঘুমন্ত মুখখানায়। বিড়বিড় করে বলল,
‘ একবুক ভালোবাসা নিয়ে আমার আঘা*ত সইতে পারবেন তো?’
পাশে বসে থেকে সারারাত জেগে কপালের জলপট্টি বদলে দিলো। ভোরের দিক শতাব্দের জ্বর নামল।

রাতের আঁধার চিড়ে উজ্জ্বল ভোর নেমেছে ভুবনে। রান্নাঘরে টুকটাক আওয়াজ। এক চুলায় চায়ের পানি ফুটছে অন্য চুলায় বেগুন ভাঁজা হচ্ছে। খাবারের ঘ্রাণে ঘর মোমো করছে। ব্যস্ত হাতে প্রিয় বেগুন ভাঁজা উল্টে দিচ্ছে। আচমকা এক জোড়া হাত কোমর চেপে ধরল শক্ত করে। প্রিয় কেঁপে উঠলেও চোখেমুখে বিস্মিয় ফুটতে দিলোনা। বাম হাতে ছাড়াতে চাইল একবার। শতাব্দের শক্তির সাথে পারল না। হাল ছেড়ে শব্দ করে খুন্তি রাখল। পেছনে ফিরে। গম্ভীর মুখ করে শতাব্দের কপালে হাত ছুঁয়ে দেখল। জ্বর নেই এখন। তারপর আবার ঘুরে কাজে হাত লাগালো। শতাব্দ ঠোঁট মেলে হাসলো। আবারো প্রিয়’র কোমর চেপে ধরল। কানের কাছে মুখ এনে আলতো স্বরে বলল,
‘ সরি! হবেনা আর।’
কন্ঠে রাগ এঁটে প্রিয় বলল,
‘ কন্ট্রোল করতে না জানলে সেই জিনিস না খাওয়াই ভালো।’
দুষ্ট হাসল শতাব্দ। বলল,
‘ সব এনার্জি তো বউ সামলাতেই লেগে যায়। কন্ট্রোল করতে কি করে জানবো।’
রাগী চোখে তাকাল প্রিয়। উত্তর দিলো না কোন। শতাব্দ আশেপাশের তাকিয়ে দেখল, ভুনা খিচুড়ি, আলু গরুর গোস্ত, ভর্তা সব রান্না সাজানো। চুলায় বেগুন ভাঁজা হচ্ছে। সবকিছুই শতাব্দের পছন্দের।
শতাব্দ চমকাল। বিস্ময় সুরে বলল,
‘ এত ভালো রান্না জানো জানতাম না তো।’
প্রিয়’র আড়ষ্ট গম্ভীর উত্তর,
‘ কারণ আপনি জানতেই চাননি কখনো।’
শতাব্দ প্রিয়’র দিক চেয়ে রইল। প্রিয় চুলা বন্ধ করে গোছগাছ করতে করতে বলল,
‘ ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনাকে খাবার দিয়ে, ভার্সিটিতে যাবো।’
শতাব্দের গম্ভীর উত্তর,
‘ তুমি আজ ভার্সিটিতে যাচ্ছো না।’
হতভম্ব প্রিয়,
‘ মানে? যাচ্ছিনা মানে? ‘
‘ আজ সারাদিন তুমি আমার সাথে থাকবে। অসুস্থ স্বামীর, সেবা করবে।’
‘সেবা করতে আমার বয়েই গেছে! ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। সামনে ফাইনাল। নোট কালেক্ট করতে হবে।’
‘ তোমার সব নোট বাড়িতে পোঁছে যাবে।’
ফস করে শ্বাস ফেলল প্রিয়।
ঘামে ভিজে থাকা প্রিয়’র মুখখানায় চেয়ে আছে শতাব্দ। নাকের ডগায় মুক্তার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সামনের বেবি হেয়ার গুলো ঘেমে কপালে লেগে। দুকদম এগিয়ে এলো শতাব্দ। আঙ্গুল দিয়ে নাকের ঘাম মুছে দিতে দিতে আলতো আবদার করে বলল,
‘ ভালো লাগছেনা কিছু। আজকের দিনটা আমার সাথে কাটাও না প্রিয়!’
ভ্রু কুঁচকে ছোট ছোট চোখ করে তাকাল প্রিয়। খানিক চেয়ে থেকে হনহনিয়ে চলে গেল।

বিকালের শেষ প্রহর। চারিদিকে নিভু নিভু আলো। যান্ত্রিক শহরের কৃত্রিম আলো জ্বলতে শুরু করেছে। দোলনায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে প্রিয়। দুপুরের দিকে জ্বর উঠেছিল আবার। ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে এখন। তাই এখন বইখাতা খুলে বসেছে। ক্লাস শেষে ইরা এসেছিল। নোট দিয়ে গেছে। সেই গুলোতে চোখ বুলাচ্ছে। কেউ পাশে বসতে প্রিয়’র ঘোর কাটল। শতাব্দ এসেছে। প্রিয় বইয়ের দিক চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল,
‘ জ্বর ছেড়েছে আপনার?’
উত্তরে কিছু বলল না শতাব্দ। প্রিয়’র মুখের সামনে ধরা বইটা টেনে নিলো। কোমর টেনে কাছে এনে প্রিয়’র হাত কপালে রেখে বলল,
‘ তুমি-ই দেখো।’
তড়িঘড়ি করে হাত সরিয়ে নিলো প্রিয়। গম্ভীর মুখ করে দোলনা ছেড়ে উঠে যেতে চাইল। শতাব্দ হাত টেনে ধরল।কোলে বসিয়ে কোমর চেপে শক্ত করে ধরল। প্রিয়’র ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে আলতো স্বরে বলল,
‘ আমাদের একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক হতে পারেনা প্রিয়?’
প্রিয়’র সোজাসাপটা রুখা উত্তর,
‘ না, পারেনা।’
‘ কেন?’
তাচ্ছিল্য হাসল প্রিয়। বলল,
‘ অনেক বছর আগে আমি সব ছেড়ে আপনার কাছে এসেছিলাম। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আপনি। আমার বিপদের দিনে আপনাকে পাশে পাইনি। এখন আমার আর আপনাকে চাইনা!’
শতাব্দের শান্ত, স্বাভাবিক আওয়াজ,
‘ কারণ কি এতটুকুই? নাকি অন্যকিছু!’
প্রিয় চুপ। তার চঞ্চল চোখ। শতাব্দ তা ঠাহর করল। কিছু বলল না। একটু চুপ থেকে বলল,
‘ সেদিন তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরী ছিল। আমি চাইনি এতো অল্প বয়সে শেয়াল কুকুরদের মাঝে এসে পড়ো। তখন তুমি সবে কিশোরী। এই অল্প বয়সে আমি কি করে তোমার কাঁধে দায়িত্ব ফেলে।সেই পুরানো ইতিহাস আবার রিপিট করি। তাও তখন, যখন চারিদিকে জ*ঘন্যরকম বি*পদ। আমি নিজে তখন সামান্য মেডিক্যাল স্টুডেন্ট, আমার হাতে না জোর ছিল, না ছিল আজকের মত এমন ক্ষমতা। তখন তোমাকে নিজের কাছে রাখা মানে, তোমার হ*ত্যা করা। আমি তোমাকে রাস্তায় ছেড়ে দেইনি প্রিয়। সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা তোমার বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আজকের এই প্রিয় প্রাপ্তবয়স্ক, স্ট্রং, আত্মনির্ভরশীল। কেউ সহজে ভাঙ্গতে পারবেনা। আর আমার সেইদিনকার সেই প্রিয় ছিল অবুঝ, সরল। আমি কি করে নিজের সুখের জন্য সেই নিষ্পাপ কিশোরী মেয়েটাকে এমন গোলক ধাঁধা এনে আটকাই। তখন আমার মনে হয়েছে, আমার কাছে থাকার চেয়ে, তোমার বেঁচে থাকাটা বেশি জরুরী। আর তা নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নই। আরো হাজার বারও যদি তোমার ভালোর জন্য এমন করতে হয়। আমি করবো।’
খানিক চুপ থাকল। রাগ চেপে আবারো বলল শতাব্দ,
‘ আর রইল বি*পদের দিনে হাত ছেড়ে দেওয়ার কথা! আমি কখনো এক মুহূর্তের জন্য তোমাকে ছাড়িনি। আমি সবসময় তোমার পাশে ছিলাম। ছায়ার মত। অতীতে খোঁজ করে দেখো কখনো….. কিন্তু একটা আফসোস চিরকাল থাকবে আমার। সেই রাতে তোমার কাছে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। যার জন্য আমি আজও অনুতপ্ত। রোজ সেই অনুতপ্ততার আগুন খাঁখাঁ করে পোঁড়ায়।’
শতাব্দ রাগে শক্ত হয়ে বসে রইল। প্রিয়’র কোমর ছেড়েছে অনেকক্ষণ।
খানিকক্ষণ নীরবতায় কা*টলো। প্রিয় গম্ভীর জিজ্ঞাসু সুরে বলল,
‘ তাদের ঝামেলা আমার খালার সাথে ছিল। তাহলে আমাকে টার্গেট করল কেন?’
প্রিয়’র মুখপানে গম্ভীর হয়ে চেয়ে রইল শতাব্দ। বলল,
‘ কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো।’

শতাব্দ দোলনা ছেড়ে উঠে গেল। তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে, গভীর ভাবনায় ডুবে গেল প্রিয়।

চলবে…….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মতামত জানাবেন।

টাইপোগ্রাফি: মুগ্ধ তা আপু🌺❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here