নতুন গল্প…..
.
________ #বউ_কিডন্যাপ________
লেখক: ShoheL Rana
#পর্বঃ১
___________________________
কয়েকদিন ধরে খুব ঠান্ডা পড়তেছে। বিশেষ করে সকালের টাইমে। তখন ব্ল্যাঙ্কেট মুড়িয়ে গভীর ঘুমে থাকি আমি। সহজে উঠতে মন চাইনা। তখন যদি কেউ ঘুম ভাঙিয়ে দেয় মেজাজটা বিগড়ে যায়। এমনই এক সকালে আমার ফোনটা নাগিন ড্যান্স দিয়ে বেজে উঠে। মজার ঘুমটা গেলো ভেঙে। বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করলাম ফোন। ঘুমের ঘোরেই বললাম, ‘হ্যালো……’
ওপাশ থেকে একটা মেয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, ‘রানা তুমি কোথায়?’
-এভারেস্ট জয় করতে আসছি, আপনি কে বোন?’
-ওরে হারামী আমি তোর বোন না, আমি তোর গার্লফ্রেন্ড স্নেহা।
-স্নেহা! কে স্নেহা? মহাপুরুষদের কোনো গার্লফ্রেন্ড থাকেনা। আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন। রাখি…..’
ফোন রেখে দিতেই আবার বেজে উঠলো। উফ! সকাল সকাল ফোনটা কী বিদ্রোহ শুরু করলো! আবারো ফোন রিসিভ করে বললাম, ‘আপনি যাকে ফোন করেছেন, তিনি এই মুহূর্তে এভারেস্ট জয় করতে ব্যস্ত আছেন, প্লিজ একটু দেরিতে আবার কল করুন, ধন্যবাদ।’
ওপাশ থেকে মেয়েটা বললো, ‘রানা, আমি তোমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, প্লিজ ফাজলামি করোনা।’
অবাক হওয়ার ভান করে আমি বললাম, ‘আমার বাড়ির সামনে! কী বলেন? আপনি কি নেপালে? আমি তো এখন নেপালে, এভারেস্টের চূড়ায় উঠতেছি, আর একটুপর জয় করে ফেলবো।’
মেয়েটা বিরক্তি হয়ে বললো, ‘প্লিজ রানা ফাজলামি অফ করো এবার, আমি সত্যি সত্যি তোমার বাসার সামনে। তুমি বের হয়ে আমাকে নিতে এসো।’
আর কোনো জবাব না দিয়ে আমি ফোন কেটে দিলাম। তারপর সুইচড অফ করে রাখলাম ফোন, নয়তো আবারো যেকোনো মুহূর্তে নাগিন ড্যান্স দিয়ে বিদ্রোহ শুরু করতে পারে আমার ঘুমের বিরুদ্ধে।
.
.
একটানা আরো কয়েকঘণ্টা ঘুমিয়ে ১১ টার দিকে ঘুম ভাঙলো আমার। ভাবলাম স্নেহাকে একটা ফোন দেয়া দরকার, তাই ফোনটা অন করে ওর নাম্বারে ডায়াল করলাম, কিন্তু ওপাশ থেকে সে ফোন রিসিভ করলোনা। আরো কয়েকবার ট্রাই করে ব্যর্থ হলাম। শেষে আমার রুমমেট বিজয়কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দোস্ত, কী হলো বলতো, স্নেহা আমার ফোনই রিসিভ করতেছেনা?’
বিজয় বললো, ‘স্নেহা এসেছিলো আজ সকালে, তুই নাকি ওর সাথে ফোনে উল্টাপাল্টা বলেছিস?’
-আরে ঘুমের ঘোরে কী বলতে কী বলেছি আমি জানি নাকি? কেন এসেছিলো সে?
-বাসা থেকে নাকি ওর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, তাই সবকিছু নিয়ে তোর কাছে চলে এসেছিলো সে?’
-কী বলিস এসব? তুই কিছু বলিসনি ওকে?’
-আমি কী বলবো? আমাকে তো কিছুই বলার আর সুযোগ দিলোনা, রাগ করে ব্যাগনিয়ে চলে গেছে।’
-কোথায় গেছে?’
-ওর বাসায় চলে গেছে আবার। আর যাওয়ার সময় বলে গেছে, তোকে নিয়ে ওর বিয়ে খেতে যেতে?’
-কী বলিস? প্রেমিকার বিয়ে খেতে যায় নাকি কেউ?’
-কেউ না গেলেও তুই যাবি। বলেছে, নেপাল থেকে তাড়াতাড়ি এসে ওর বিয়ে খেতে যেতে…..
-কী নেপাল? কী বিয়ে? দূর বেটা কিছুই মাথায় ঠেকছে না। হঠাৎ ওর বিয়ে ঠিক হলো কী করে?
-কী জানি….
-দোস্ত, আমি এভাবে অকালে বিধবা হতে পারবোনা, চল ওর বাসায় যাবো এখন।
-পাগল হয়েছিস? ওর বাবাকে তুই চিনিসনা? মনে হয় উনার পূর্বপুরুষ কসাই ছিলো। উনার সামনে গেলে তো আমি নিজের হাটু দুইটাও খুঁজে পাইনা।
-তাইলে এখন কী হবে?
-রাতে যাবো চুরি করে….
-স্নেহা যদি দেখা না করে? যেভাবে রেগে চলে গেছে…..
-সেটা পরে দেখা যাবে। এখন আমি একটু বের হবো। তুই থাক।’ বলেই বিজয় বেরিয়ে গেলো।
.
.
রাতে আমি আর বিজয় চুপিচুপি গেলাম স্নেহাদের বাসায়। মই বেয়ে দোতলায় উঠলাম আমি, নিচে বিজয় পাহারা দিচ্ছিলো। স্নেহার রুমের দরজা খুলাই ছিলো, আর সে রুমে একাই ছিলো। আমি ওর রুমে ঢুকে একটা হাসি দিয়ে বললাম, ‘হাই…..’
স্নেহা রেগে উঠলো আমাকে দেখে। রেগে গিয়ে বললো, ‘তুমি! কেন এসেছো তুমি? এভারেস্ট জয় করোনি?’
-নাহ, অর্ধেক জয় করে চলে এসেছি তোমাকে জয় করতে।
-আমাকে জয় করতে হবেনা, চলে যাও তুমি।
-যাবোনা। তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
-তাতে তোমার কী?
-আমার কী মানে? তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড।
-কিসের গার্লফ্রেন্ড? মহাপুরুষদের তো কোনো গার্লফ্রেন্ড থাকেনা।
-উফ! সরি সোনা, ওটা মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। এখনো রেগে আছো বুঝি?
-চলে যাও তুমি, এখন কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হতে পারে।
-আগে বলো কীভাবে কী হলো, হঠাৎ বিয়ে কেন?
-ভালো পাত্র হাতছাড়া করতে রাজি হয়নি আমার ফ্যামিলি, তাই সবকিছু তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো, দুইদিন পর আমার বিয়ে। তুমি এসে পেট ভরে খেয়ে যেও।
-চুপ, এ বিয়ে হতে দিবোনা কিছুতেই…..’
-কী করবা?
-তুলে নিয়ে যাবো…..’
-দেখা যাবে…. এখন যাও তুমি।’ স্নেহা আমাকে রুম থেকে বের করে দিলো। আমিও চলে আসলাম বিজয়কে নিয়ে।
.
.
বন্ধুরা মিলে সব প্লান করলাম কীভাবে কী করতে হবে। বিজয় কোথা থেকে যেন একটা লোক ভাড়া করে আনলো, দেখতে রোগাটে। লোকটা নিজেকে কিডন্যাপ বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করে, দেখে তো আমার পেটের ভেতর নাড়িভুঁড়ি সুদ্ধ হেসে উঠে। এটা নাকি কিডন্যাপ বিশেষজ্ঞ। লোকটাকে দেখিয়ে বিজয়কে বললাম, ‘এটা তোর কিডন্যাপ বিশেষজ্ঞ? দেখে তো মনে হয় স্নেহাকে তুলে আনতে গিয়ে নিজেই কিডন্যাপ হয়ে যাবে।’
আমার কথাটা মনে হয় লোকটার বড়সড় কোনো বাঁশ মনে হলো। লোকটা বললো, ‘কী বললা তুমি? আমার প্রেস্টিজ তুলে কথা বললে? জানো আমার নাম কি? আমার নাম কাশেম আলী, সবাই কাশেম কিডন্যাপার বলে এক নামে চেনে।’ বলেই সে নিজের বুকে কয়েকটা চাপড় মারলো।
-ও আচ্ছা তাই? তাহলে দেখা যাবে কাশেম কিডন্যাপারের কেরামতি।’ বললাম আমি।
.
.
রাত দশটার দিকে আমরা কয়েকজন বন্ধু একটা মাইক্রোবাস নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। কাশেম কিডন্যাপার তখন বিজয় ও সাদ্দাম নামের আমার আরেক বন্ধুকে সাথে নিয়ে স্নেহার বাড়ির ভেতর গেলো। ভেতরে তখন তার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিলো।
খুব অস্বস্তিতে ছিলাম আমি, পারবে তো ওরা স্নেহাকে তুলে আনতে? ধুর! এতক্ষণ কী করতেছে ওরা ভেতরে? ধরা পড়েনি তো আবার? চিন্তা বেড়ে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখলাম ওরা আসতেছে। কাশেম কিডন্যাপারের সাথে কাঁধে সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশের মতো কিছু একটা দেখা গেলো। ওটাই মনে হয় স্নেহা। যাক বাঁচা গেলো। কিন্তু ওকে লাশের মতো করে আনতেছে কেন ওরা?
যাইহোক, ওরা গাড়িতে উঠেই স্নেহাকে শুয়ে দিলো, তাকে চেতনানাশক স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে রাখা হয়ছে। তাই কোনো সিনক্রিয়েট হয়নি। ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিতেই আমি কাশেমকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্নেহাকে এভাবে সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো হয়েছে কেন?’
কাশেম জবাব দিলো, ‘যাতে পুলিশে চেক করার সময় লাশ ভেবে ছেড়ে দেয়।’
-বাহ! বুদ্ধি আছে কাশেম কিডন্যাপারের।’
আমার কথা শুনে সামনের সিট থেকে বুক ফুলালো কাশেম কিডন্যাপার, যেন বিরাট কিছু করে ফেলেছে সে।
অনেক্ষণ গাড়ি ছুটিয়ে আমরা একটা বাসায় আসলাম। বাসাটা আগের রাতে ভাড়া করেছি আমরা। স্নেহাকে তুলে নিলাম আমি দুহাতে পাঁজাকোলা করে। কী ব্যাপার, ওর ওজন হঠাৎ এতো ভারী হয়ে গেলো কেন? আগেও ওকে এভাবে তুলেছি, এতো ভারী তো লাগেনি। মরে/তরে যায়নি তো? শুনেছি মরে গেলে লাশের ওজন বেড়ে যায়। বুকের ভেতর ধকধক করতে লাগলো আমার। কোনমতে বাসার ভেতরে ঢুকে বেডের উপর শুয়ালাম তাকে। তারপর তার উপর থেকে সাদা কাপড়টা সরাতেই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম আমি। সাথে সাথে সবাই আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আমি চিৎকার করে বললাম, ‘এটা তোমরা কাকে তুলে আনলা? এটা তো স্নেহার আম্মু…..’
.
.
(চলবে…….)
.