বউ কিডন্যাপ পর্ব ৭

________ #বউ_কিডন্যাপ ________
লেখক: ShoheL Rana
__________ #পর্বঃ০৭ ___________

চড় খেয়ে কাশেম একপাশে সরে গেলো। এরপর আমি আন্টিকে বললাম, ‘আন্টি আমরা তো সন্দেহ করেছিলাম, আপনার সেলিমই স্নেহাকে তুলে নিয়ে গেছে, কিন্তু উনার সাইজ দেখে তো মনে হচ্ছে এসব উনার ধারা হবেনা…..
আন্টি একটু রেগে গিয়ে বললেন, ‘রানা তুমি বারবার ওকে সাইজ সাইজ বলবানা বলে দিলাম। দেখো তো আমার সোনা পাখিটা আমার জন্য চিন্তা করতে করতে কতো শুকিয়ে গেছে……’ শেষের কথাটা উনি মোটকুর থুতনিটা আলতো করে ধরে আদরের ভঙ্গিতে বললেন।
আমি বললাম, ‘তারমানে আগে উনি আরো মোটা ছিলেন? আমার মাথায় আসছেনা, উনি কী করে আপনাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। ভালোই হয়েছে কাশেম আপনাকে আগেই তুলে নিয়ে এসেছে, তা নাহলে আপনার সেলিমকে রফিক সাহেবের লোকে এতক্ষণে বেগুন ভর্তা বানিয়ে ছাড়তো।
-কী অলক্ষুণে কথা বলছো তুমি? ও মোটেও ধরা পড়তো না, ঠিকই আমাকে তুলে নিয়ে আসতো।’ জোরগলায় বললেন আন্টি।
-হুমমম, তা তো সাইজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, উনি নিজের শরীর সামলাতেন নাকি আপনাকে সামলাতেন?’
মোটকু রেগেমেগে উঠে দাঁড়ালো আমার কথা শুনে। তাকে সামলিয়ে আন্টি বললেন, ‘রানা তুমি আবারো সাইজ বলছো ওকে?
-আচ্ছা বাদ দিন, আমাদের এখন স্নেহাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ওকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যেতে পারে?’
আমার কথা শুনে সবাই ভাবতে লাগলো। মোটকু মিয়াও গালে হাত দিয়ে এমন ভাবে ভাবতে শুরু করলো যেন সবার চাইতে তার টেনশন বেশি।
কিছুক্ষণ নিরবতায় কেটে গেলো। তারপর হঠাৎ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, এমন কেউ কি আছে যে স্নেহাকে ভালোবাসে?’
আন্টি জবাব দিলো, ‘এমন কেউ তো নাই। তবে মাঝেমাঝে স্নেহাকে কে যেন ফোন দিতো, আর স্নেহা তার সাথে চিল্লাচিল্লি করে কথা বলতো…..’
-নাম/তাম কিছু শুনেছিলেন স্নেহার মুখে?
-নাহ, তবে একবার একটা ছেলেকে দেখেছিলাম আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে স্নেহার রুমের জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে।
-দেখতে কীরকম ছেলেটা?
-চুলগুলো কুঁচকানো, গায়ের রং কালো, বেশি লম্বাও না, বেটেও না।
-চুলগুলো কুঁচকানো?
-হ্যাঁ…
-তাহলে নিশ্চয়ই নাহিদ…..’ আমি বলার আগেই বললো কামাল।
-হুমমম…..নাহিদই হবে। সেও স্নেহাকে পছন্দ করতো। কিন্তু স্নেহাকে বিরক্তও করতো তা জানা ছিলোনা। চল এখন নাহিদের বাসায় যাবো……’
আমি, কামাল আর সুজন বের হলাম নাহিদের বাসায় যাওয়ার জন্য। বাকিদের বাংলোয় রেখে এলাম।
.
.
নাহিদের বাসায় এসে দেখলাম, কারা যেন তাকে মেরে ফাটা টমেটোর মতো করে রেখে গেছে। হাতেপায়ে তার ব্যান্ডেজ। কারা তার এই অবস্থা করে রেখে গেছে জানতে চাইলাম আমরা। নাহিদ কেঁদে ফেললো বলার আগেই। আমরা তার কান্না থামার জন্য অপেক্ষা করলাম, বেচারা অনেকদিন কাঁদেনি। কিছুক্ষণ কাঁদার পর নাহিদ বললো, ‘দোস্ত, তোরা আমাকে ক্ষমা করে দিস। সবসময় তোদের বিপক্ষে চলতাম, তাই আজ আমার এই অবস্থা।’
-কী হয়েছে খুলে বল….’ উত্তেজিত হয়ে বললাম আমি। নাহিদ চোখ মুছে নিজেকে সামলিয়ে বললো, ‘বলছি…. আমি স্নেহাকে তুলে এনেছিলাম ঠিক, কিন্তু, পথে একটা দল আমাকে আটকায়। ওরা আমার কাছ থেকে স্নেহাকে নিয়ে যেতে চাইলো, আমি বাঁধা দিলাম, কিন্তু ওরা আমাকে মেরে স্নেহাকে নিয়ে যায়।
-কারা ওরা? চিনতে পেরেছিস কাউকে?’
-না, কাউকে চিনতে পারিনি। আগেও কাউকে দেখিনি।’
-কেন ওরা স্নেহাকে তুলে নিয়ে যেতে চাই, কিছু জিজ্ঞেস করিসনি?’
-করেছি, ওরা বললো ওদের আস্তানায় গিয়ে কথা বলতে।
-ওদের আস্তানা কোথায়?
-আস্তানা জানতে হবেনা, আমরা নিজেরাই এসেছি।’ হঠাৎ পেছনে কেউ একজন বললো কথাটা। ঘুরে তাকালাম দরজার দিকে, কয়েকজন অচেনা লোক ভেতরে ঢুকলো। নাহিদ ওদের দেখিয়ে বললো, ‘ওরাই নিয়ে গেছে স্নেহাকে।’
আমি ওদের খুঁটিয়ে দেখলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, ‘কারা আপনারা? স্নেহাকে তুলে নিয়ে গেলেন কেন?’
ওদের একজন জবাব দিলো, ‘আমরা আসলে মেয়েটাকে তুলে নিতে চাইনি, চেয়েছিলাম ওর সৎমাকে তুলে আনতে?’
-আন্টিকে! কেন?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
-ভাইয়ের নির্দেশে।’
-ভাই? ভাইটা আবার কে?’
-ভাই মানে, রমজান ভাই। এই এলাকার ডন উনি।’
-এরকম ডনের নাম তো শুনিনি। কিন্তু উনি কেন আন্টিকে তুলে নিয়ে যেতে চাইলেন?’
-সে এক বিরাট ইতিহাস। ভাই ভালোবাসতো উনাকে, কিন্তু উনি ভালোবাসতো এক মোটকুকে। মাঝখানে রফিক সাহেব এসে বিয়ে করে নিয়ে যান। তাই প্রতিশোধ নিতে আমাদের ভাই স্নেহার আম্মুকে তুলে নিয়ে যেতে আমাদের পাঠায়। আমরা গিয়ে স্নেহার আম্মুকে না পেয়ে বেরিয়ে আসি, তখন দেখি এই ছেলেটা স্নেহাকে নিয়ে পালাচ্ছিলো, তারপর আমরা ভাবলাম মাকে পাইনি কী হয়েছে, মায়ের বদলে মেয়েকে নিয়ে যায়।’ কথাগুলো বলে থামলো লোকটা। আমি একটা টিস্যু বের করে এগিয়ে দিলাম লোকটার দিকে। তারপর বললাম, ‘বিরাট কাহিনী বলতে বলতে আপনি হাঁপিয়ে গেছেন।’
লোকটা টিস্যু নিয়ে বললো, ‘ধন্যবাদ।’
-তা আপনারা আবার কেন এসেছেন?’
-আর ভাই বলবেননা, মেয়েটাকে আর একদিন রাখলে আমরা পাগল হয়ে যাবো, মেয়েটা আমাদের জালিয়ে মারছে একদিনে।’
-তারমানে ওকে আপনারা ফেরত দিবেন?’
-না, আমরা বলতে এসেছি, ওর আম্মুকে আমাদের হাতে তুলে দিতে পারলে, আমরা ওকে ছেড়ে দিবো।’
-আপনারা ওর আম্মুকে চান তাই তো?’
-হুমম….’
-ওকে, রাতে আমরা ওর আম্মুকে আপনাদের হাতে তুলে দিবো।’
-ওর মা কোথায় আপনি জানেন?’
-জানি……’
-আপনি আমাদের বাঁচালেন ভাই। একদিকে রমজান ভাই এর জালা , অন্যদিকে মেয়েটার জালা সহ্য করতে না পেরে গতরাত থেকে কিছু খাইনি।’
-আচ্ছা আপনারা টেনশন করবেন না, আমরা স্নেহার আম্মুকে নিয়ে আসবো।’ বলেই আমরা চলে আসলাম রমজান ডনের ঠিকানা নিয়ে।
.

.
বাংলোতে এসে দেখি আরেক কান্ড ঘটে গেছে। মোটকু বেটা দরজার সামনে বসে কান্না করতেছে বাচ্চাদের মতো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হলো মোটকু মিয়া?’ এভাবে কান্না করছো কেন?’
মোটকু মিয়া কোনো জবাব না দিয়ে তার কান্না আরো বাড়িয়ে দিলো। আমি বিজয়কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বিজয় কী হয়েছে বলতো?’
বিজয় তার কণ্ঠটা নরম করে বললো, ‘কাশেম স্নেহার আম্মুকে নিয়ে পালিয়েছে….’
.
.
(চলবে……)
.

.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here