#বউ চুরি
#সিজন-১
পর্ব ঃ ১৪
লেখিকা ঃ জান্নাতুল নাঈমা
রুমে প্রবেশ করে বিছানায় চোখ পড়তেই ইমন শখড খেলো। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো তার। ইমন কে দেখে মুসকান বেশ লজ্জা আর অসস্থি তে পড়ে গেলো। শাড়ির আঁচল বার বার টেনে কাঁধে জরিয়ে নিচ্ছিলো।
ইমন মুসকানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়েই রইলো।
আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? সত্যি মুসকান শাড়ি পড়েছে তো? ধীর পায়ে এগিয়ে ঘড়ি আর ওয়ালেট টা টেবিলে রাখলো।
ইমনের গলা দিয়েও আজ স্বর বের হচ্ছে না। এসি চলা সত্তেও মুসকান ঘেমে ওঠছে নাক, কপাল ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ইমনের ও কপাল ঘামতে শুরু করেছে।
ইমন দ্রুত পায়ে বাথরুন চলে গেলো।
মুসকান এর বুকের ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে।
আমার সাথে তো কথাই বললো না। তাহলে কি শাড়ি পড়া পছন্দ হয়নি, আমাকে কি শাড়িতে ভালো লাগছে না। নানারকম ভাবনায় মুখ টা চুপসে গেলো মুসকানের।
এদিকে ইমনের বুকের ভিতর উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। আমার স্বপ্ন কি সত্যি হতে যাচ্ছে? আমার এতো দিনের ইচ্ছা টা আজ পূরন করলো মুসকান। আমার সেই পিচ্চি বউ টা আজ শাড়ি পড়েছে। কতোই না ইচ্ছা ছিলো বউ টা কে শাড়ি পড়া দেখবো, ঘুম ভাঙতেই এলো মেলো শাড়ির মাঝে মুসকান কে দেখবো । আর ও লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকাবে। আমিও পরম আবেশে জরিয়ে নিবো আমার মাঝে।
ইমন চোখে মুখে পানি দিলো তার বুকের ভিতর বেশ অস্থিরতা কাজ করছে। এই অস্বাভাবিক অস্থিরতা কি স্বাভাবিক করতে পারবে মুসকান? এইভাবে আমার সামনে আসলে নিজেকে সামলানো টা যে বড় দায় হয়ে পড়ে। ওকে কি কেউ এভাবে পাঠিয়েছে নাকি নিজের ইচ্ছাতেই। ইমন বেশ দ্বিধায় পড়ে গেছে খুব চেষ্টা করছে নিজেকে সামলানোর কিন্তু পারছেনা।
আমিতো চেয়েছিলাম ও নিজে থেকে আমার কাছে আসবে স্ত্রীর অধিকার চাইবে। কিন্তু ও তো মুখ ফুটে সেটা চায়নি। একটা গভীর শ্বাস ছেড়ে তয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো ইমন।
চুপ করে বসে এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুচড়াচ্ছে সমান তালে। ইমন কে দেখে আরেকটু গুটিশুটি মেরে বোসলো। ইমন মুসকান কে এইভাবে দেখে তয়ালে টা রেখে বললো –
রাতে খাওয়া হয়েছে??
মুসকান মাথা ঝাকিয়ে হুম বললো।
ইমন মুসকানের পাশে এসে বোসলো। আর বললো-
হঠাৎ শাড়ি পড়লে…. কে পড়িয়ে দিলো…?
মুসকান নিচু স্বরে বললো- আম্মু।
ওহ শাড়ি পড়েই ঘুমাবে?
ইমনের এমন প্রশ্নে মুসকান চোখ তুলে তাকালো ইমনের দিকে। দুজনেরই চোখাচোখি হয়ে গেলো ইমন আজ মুসকানের চোখে গভীর চাহিদা অনুভব করতে লাগলো। সামনের চুল গুলো কানের পিঠে গুজে মুসকান চোখ সরিয়ে নিলো।
একরাশ অভিমান ভর করলো তার মনে তাই বললো-
আচ্ছা আমি শাড়ি পালটে আসি বলেই বিছানা ছেরে নেমে দাড়ালো।
মুহূর্তে ইমনের বুকের ভিতর ধুকপুকানি টা বেড়ে গেলো। আমি কি কোন ভুল করলাম। মেয়েটাকে আজ কতোটা আবেদনময়ী লাগছে………….ধ্যাত কি যে করি আমি বলেই সেও দাঁড়িয়ে পড়লো মুসকানের এক হাত টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো। মুসকান এক পা আগাতেই টান অনুভব করলো চোখ খুলতেই ইমনের মুখ টা ভেসে এলো।
লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। ইমন একহাতে মুসকানের কোমড় জরিয়ে আরেক হাতে তার চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিলো।
আমি কি শাড়ি পালটে আসতে বলেছি? মুসকানের একদম কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো ইমন। ইমনের গরম শ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই পুরো শরীর শিউরে ওঠলো তার। তার ও শ্বাস ঘন হয়ে আসলো ইমন মুসকানের ঘনঘন নিশ্বাসের শব্দ পেয়ে আর কোন প্রশ্ন করলো না। কোমড় টা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো- অপরূপ সুন্দরী লাগছে। শাড়িতে তোমায় একটু বড় বড় লাগে, মনে হচ্ছে কোন এক অপ্সরীর আগমন ঘটেছে আজ আমার ঘরে। ইমনের বলা কথা গুলো মুসকানের কান জুরে শীতল শিহরণ বয়িয়ে দিলো। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে।
ইমন মুসকানের কানের পিঠে আলতো করে চুমু খেলো। মুসকান হালকা কেঁপে ওঠলো ইমনকে দুহাতে জরিয়ে ধরলো।
ইমন বুঝে গেছে মুসকান আজ তাকে কাছে চাইছে। তার চাওয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাধ্য ইমনের নেই।
মুসকান কে সরিয়ে ইমন গিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দিলো।
মুসকানের কাছে এসে তাকে পাজাকোল করে নিয়ে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো।
দুজনেরই হার্টবিট দ্রুত গতিতে ওঠানামা করতে শুরু করেছে। মুসকান ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে যা ইমনকে একদম পাগল করে দিচ্ছে। আর কোন বাঁধা নেই ইমনের যেখানে মুসকান ই তাকে কাছে চাইছে সেখানে আর কারো সাধ্য নেই তাদের আলাদা করার, বা দূরে সরিয়ে দেওয়ার।
ইমন আজ একদম মুসকানের মাঝে হারিয়ে গেলো। না আছে রাগ না আছে ক্ষোপ সম্পূর্ণ ভালবাসায় একে অপরের সাথে মিলিত হলো। ভালবাসার অন্য এক রূপ মুসকান খুজে পেলো। সে আজ পুরোটাই ইমনের দখলে কোন ভয় নেই, অভিমান নেই, আছে শুধু দুজনের দুজনের প্রতি অসীম ভালবাসা।
সারারাত ইমন মুসকানের মাঝেই ডুবে ছিলো।
কতো দিনের জমিয়ে রাখা ভালবাসা যে আজ সে মুসকানকে দিচ্ছে সেটা মুসকান ই টের পাচ্ছে খুব করে। সে যেনো ক্ষূদার্ত বাঘ হয়ে গেছে তাকে বাঁধা দেওয়ার শক্তি বোধ হয় এই পৃথিবীতে কারো নেই।
ভোর পাঁচটার দিকে ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। মুসকান কে সে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। মুসকান ও পরম আবেশে তার বুকে ঘুমাচ্ছে। পাশে তাকাতেই মুচকি হাসলো ইমন। ভেবেছিলো এলোমেলো শাড়িতে বউ দেখবে কিন্তু বউ এর গায়ে তো শাড়ির ছিটে ফোটাও নেই। বিছানার একপাশে শাড়ি পড়ে আছে। মুসকান কে ছাড়িয়ে আস্তে করে ওঠে পড়লো ইমন। বাথরুম গিয়ে গোসল সেরে নিলো। পিঠের দিকে বেশ জ্বালা অনুভব করছে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে মুসকানের হাতের দিকে তাকালো বেশ রাগ হলো তার।
এতো বড় বড় নখ রাক্ষসী হয়ে গেছে নাকি আজি এই নখের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভেবেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো চোখ দুটো তার বড় বড় হয়ে গেলো গালেও বেশ দাগ পড়ে গেছে।
সবগুলোই নখের আঁচ।
বাহ বেশ ভালোতো এখনতো অফিস বাদ দিয়ে রুমেই বসে থাকা লাগবে। মানুষের সামনে বের হওয়াও মশকিল হয়ে যাবে। অন্য মানুষ না হয় বাদ ই দিলাম বাড়ির লোক কে মুখ দেখাবো কি করে। এই মেয়েকে তো আজ দেখেই ছাড়বো। ইমন প্রচন্ড রেগে গিয়ে মুসকান কে ডাকতে শুরু করলো।
মুসকান ওঠো, সকাল হয়ে গেছে ওঠো বলেই গালে হাত দিতেই বেশ তাপ অনুভব করলো।
একি এতো গরম কেনো গাল বলেই কপালে গলায় হাত দিতেই বুঝলো বেশ জ্বর এসে গেছে।
হায় কপাল এই ছিলো আমার কপালে একরাতেই জ্বর এসে গেছে। সেদিন না হয় ভিন্ন ছিলো ব্যাপারটা আজ জ্বর কেনো ধূর……
ইমন মুসকানকে কোলে করে নিয়ে বাথরুম বসিয়ে দিলো ঝর্ণা ছেড়ে দিলো। মুসকানের ও ঘুম ছেড়ে গেছে। ইমন কিছু ক্ষন হেল্প করে বাইরে চলে গেলো।
বেডশিট টা চেন্জ করে নিজে রেডি হতে শুরু করলো।
মুসকান ঢোলতে ঢোলতে গোসল করে বেরিয়ে এলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ইমন অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিল আটটা বেজে গেছে। মুসকানের এমন অবস্থা দেখে ইরাবতীকে ফোন করো খাবাড় রুমেই পাঠিয়ে দিতে বললো।
ইমন একটা শুকনো তয়ালে নিয়ে মুসকানের পাশে বসে মুসকানকে একটু ওঠিয়ে চুল গুলো ভালোভাবে মুছে দিতে লাগলো।
মুসকান কেমন লাগছে শরীর খারাপ লাগছে কি?
মুসকানের ঘুমের রেশটা কাটেনি চোখ বুজেই আছে সে। ইমন চুলগুলো মুছে তার মাথাটা বালিশে রাখলো। মুসকান গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো আর অস্পষ্ট ভাবে বললো –
মাথাটা খুব যন্ত্রণা করছে ভাইয়া……. শরীর ও খুব ব্যাথা করছে দুপা একদম বিষে যাচ্ছে, কোমড় ব্যাথায় আর থাকতে পারছিনা ওঠতেও পারছিনা… বলেই কেঁদে ফেললো মুসকান।
ইমন মাথায় হাত রেখে বড় বড় করে মুসকানের দিকে তাকালো। মুসকান চোখ বুজেই কেঁদে চলেছে।
ইমন কিছু বলার ভাষা খুজে পেলো না।
দীপান্বিতা খাবাড় নিয়ে দরজায় নক করছে। ইমন গিয়ে দরজা খুলে দিলো। কাকি আসো ভিতরে।
আসলে মুসকানের একটু জ্বর হয়েছে খাবাড় রেখে যাও আমি ওকে খাওয়িয়ে দিবো।
আমি দেই খাওয়িয়ে তুমি খেয়ে অফিস যাও।
না সমস্যা নেই এক ঘন্টা সময় আছে তুমি যাও।
দীপান্বিতা আর কিছু না বলে মুচকি হেসে চলে গেলো খাবাড়টা রেখে।
ইমন গিয়ে মুসকান কে ওঠিয়ে বসালো। নিজের হাতে ভাত মেখে খাওয়িয়ে দিলো। মুসকান খেতে চাইলো না ইমন জোর করে তাকে অল্প খাওয়ালো সাথে নিজেও খেয়ে নিলো।
এই মেয়ে নাকি আমার সেবা করবে? এর সেবা করেই আমার রাত দিন পার হচ্ছে একটু ভালবাসা দিলে হাজারগুন ফেরত নিচ্ছে বড্ড বদমাইশি শিখেছে। মনে মনে ভাবছে আর মুচকি হাসছে ইমন।
হাত ধুয়ে মুসকানকে একটা জ্বরের ওষুধ সাথে ব্যাথার ওষুধ খাওয়িয়ে দিলো। মুসকান আবারো ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
হায়রে ঘুম একদিন একটু জেগেছে এতেই তার এতো ঘুম বাব্বাহ।
এ বউ না ননির পুতুল কিছুইতো বুঝিনা। ছুঁয়ে দিলেই গলে যায়।
মনে মনে ভাবতে ভাবতে মুসকানের একদম কাছে এসে কপালে আলতো করে চুমু খেলো। ঠোঁট আর গলায় চোখ পড়তেই ইমন বাঁকা হাসলো।
ভালবাসার স্পর্শ গুলো এমনই হয় নাকি??…….
ইমন নিচে নেমে এলো বেরোনের সময় তার মা কে বলে গেলো দুপুরে মুসকানের জ্বর টা চেক করতে। জ্বর না কমলে আরেকটা নাপা এক্সট্রা খাওয়িয়ে দিতে বললো।
ভাইয়া তোমার গালে কি হয়েছে?? দিপুর করা প্রশ্নে ইমন একটু চমকে ওঠলো।
দিপু তারাতারি গাড়িতে গিয়ে বোস। ইমন এদিকে আসোতো। ( দীপান্বিতা)
দিপু আর কিছু না বলে চলে গেলো। ইমন লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাচ্ছিলো। দীপান্বিতা ইমনকে বললো-
তোমার কাকা ফিরছে এ সপ্তাহেই। তারপর তোমাদের বিয়ের বড় করে অনুষ্ঠান হবে। তারপর দিপক এর জন্য মেয়ে দেখবো।দুজনের মধ্যে বেশ কিছু কথা হলো কথা শেষে ইমন চলে গেলো।
অফিস যাওয়ার সাথে সাথে মোজাম্মেল চৌধুরী বেশ ধমকে কথা বললো লেট করার কারনে। ইমন রাগ করতে গিয়েও করলো না। কারন এতটুকু স্বাভাবিক ইমন অফিসে কমই সময় দিচ্ছে। নাহ আজ থেকে কাজে মনোযোগ দিতে হবে অনেক গাফিলতি করেছি আর না। ইমন ভাবতে ভাবতে এগুচ্ছিলো নিজের কেবিনের দিকে এমন সময় পিছন থেকে সাব্বির ডেকে ওঠলো – ইমন।
ইমন পিছন তাকাতেই বেশ অবাক হলো।
কিরে তুই এখানে??
হ্যাঁ। তোর সাথে আমার খুব দরকারি কথা আছে।
কি হয়েছে বল তোর মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?
এখানেই বলবো নাকি অন্য কোথাও।
চল আমার কেবিনে চল।
ওকে।
সাব্বিরের কথা গুলো শুনে ইমনের বুকের ভিতর ছেদ করে ওঠলো। পরোক্ষনেই আবার ভাবলো না মুসকান আমার বউ। আজ আমি একা না মুসকান ও আছে আমার পাশে। আর কোনো ভয় নেই আমার আমার বউ কে আমি কাউকে দিবো না কাউকে না। এতো কিছুর পর আমি ওকে একদম নিজের করে নিয়েছি। ওকে ছেড়ে দেওয়া অসম্ভব কখনোই সম্ভব না সেটা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-
লোকটা কি এখনো ঢাকাতেই আছে?
হ্যাঁ ঢাকাতেই আছে। লোকটাকে আমার সুবিধার মনে হয়নি দেখে।
আচ্ছা কোথায় ওঠেছে জানিস?
হ্যাঁ জানি।
ঠিকানাটা মেসেজ করে দিয়ে রাখ।
ওকে।
বিপদ যেনো পিছু ছাড়ছেইনা ইমনের। একের পর এক বিপদ সামনে আসছে। সব বিপদই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে ইমন। কিন্তু এই বিপদটা সামলে ওঠতে পারবে তো? নাকি আবারো নতুন ঝড়ের আগমন ঘটতে চলেছে? এতো বছরের পুরোনো অতীত টা কেনো সামনে আসতে চাইছে? মুসকান কি রক্তের টানে ফিরে যাবে? আমার ভালবাসা কি আবারো ওপেক্ষা করবে মুসকান? প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করলো ইমন।
মোজাম্মেল চৌধুরী ছেলের এমন অবস্থা দেখে দিপককে কিছুদিন ইমনের দায়িত্ব নিতে বললো।ইমন ও একটু স্বস্তি পেলো অফিস থেকে বিকালেই বাড়ি চলে গেলো। দিপক অফিস চলে গেলো। ইমন বাড়ি ফিরে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো। দুপুর পরেই মুসকানের জ্বর কমে গেছে।
নিজের রুমে মনের সুখে গুনগুন করছিলো আর চুল আচরাচ্ছিলো। এমন সময় ইমন রুমে ঢুকেই পিছন থেকে খুব শক্ত করে জাবটে ধরলো মুসকানকে।
আকস্মিক ঘটনায় মুসকান স্তব্ধ হয়ে গেলো। বেশ কিছু ক্ষন সময় লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে। ঘুরে দাড়াতে চাইলে ইমন একটু আলগা করলো হাতের বাঁধন। মুসকান ঘুরতেই একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো ইমন।
মুসকান ও তার পিঠে শক্ত করে চেপে ধরলো। দুজনই দুজনের বুকের ধুকপুকানি অনুভব করছে। দুজনের হৃদয়ই একই সাথে সমান তালে স্পন্দিত হচ্ছে।
বেশকিছুক্ষন পর মুসকান অনুভব করলো ইমন খুবই শক্ত ভাবে চেপে ধরেছে। বিষয়টা এমন যেনো কেউ তার থেকে মুসকানকে কেড়ে নিচ্ছে কিন্তু সে যেতে দিবেনা। মুসকান একটু নড়তে চেয়েও পারলো না আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন।
মুসকানের এবার দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা কোনভাবেই ছাড়াতে পারছে না ইমন কে।
ছাড়ো আমার লাগছে তো? কি হয়েছে এমন করছো কেনো?
না কোনভাবেই ইমন ছাড়ছে না। মুসকান ইমনের বুকের স্পন্দন তার অস্থিরতা বেশ বুঝতে পারছে। সেই সাথে এটাও খেয়াল হলো যে সে বিকালেই বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু তার তো রাতে ফেরার কথা…..
মুসকান একটু জোর খাটিয়েই ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। ইমন এবার হুশে ফিরে এলো আর মুসকানকে ছেড়ে দিলো। তার চোখের কোনে পানি জমে আছে।
এক হাতে চোখ মুছে তয়ালে নিয়ে বাথরুম ঢুকে পড়লো। মুসকানের বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো।
কাঁদছে চোখে পানি? কিন্তু কেনো? আমাদের তো সব ঠিক হয়ে গেছে। তাহলে কিসের কষ্ট কি হয়েছে ইমন ভাইয়ার? আমার জন্য সেদিন প্রথম ইমন ভাইয়াকে কাঁদতে দেখেছি। এমন স্ট্রং একজন মানুষ খুব বড়সড় আঘাত না পেলে তো কাঁদার কথা না। আজ তাহলে কি হলো কিসের আঘাত পেলো। তার সাথে কি আমি জরিয়ে আছি কোন ভাবে? আমাকে জানতেই হবে কি হয়েছে জানতেই হবে।
পুরুষ মানুষ এতো সহজে কাঁদে না। নিশ্চয়ই বড় কোন আঘাত পেয়েছে আমায় সব জানতেই হবে।
ইমন বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। মুসকানকে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো-
মুসকান কিছু হালকা খাবাড় নিয়ে আসো খেতো দাও আমায়। স্বামীর হুকুম যেনো তার বুকের ভিতর ভালো লাগার শিহরন বয়িয়ে দিলো। চটপট নিচে নেমে গেলো দিপান্বিতাকে বলতেই সে মুসকানকে কিচেনে নিয়ে গিয়ে নুডলস তৈরী করা শিখিয়ে দিচ্ছিলো আর দেখিয়ে দেখিয়ে তৈরী করে ফেললো।
মুসকান সেটা নিয়েই রুমে চলে গেলো।
ইমন ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো। মুসকান আসতেই ফোন রেখে দিলো।
মুসকান তার সামনে নুডলস দিতেই সে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে পানি খেয়ে নিলো।
তারপর মুসকানকে পাশে বসতে ইশারা করলো।
মুসকান পাশে গিয়ে চুপটি করে বসে রইলো।
ইমন তার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কি না।
জ্বর তো কমে গেছে। এখন শরীর ঠিকাছে তো??
ইমনের করা প্রশ্নে মুসকান লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো- হ্যাঁ…..ঠিকি আছে তো।
ইমন চট করে মুসকানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মুসকান হঠাৎ এমন কান্ডে চমকে ওঠলো। তারপর ভালোভাবে বোসলো।
ইমন চোখ বুজে রয়েছে চোখ বুজেই বললো – মাথাটা বেশ ধরেছে একটু চুলগুলো টেনে দাওতো।
হুম বলে মুসকান আলতো করে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো…..
কই চুল টেনে দিতে বলেছিতো হাত বুলাতে বলিনি….
না মানে আসলে ব্যাথা লাগে যদি……
ইমন বাঁকা হাসলো চোখ বুজেই… তোমার ঐ ছোট্ট হাতের টানে আমার ব্যাথা লাগবে না। রাতে যা ব্যাথা দিয়েছো সেটাই সহ্য করে নিয়েছি। আর এটা তো আমি নিজে বলছি।
মুসকান ভ্রু কুচকে তাকালো।
ব্যাথা মানে আমি কখন ব্যাথা দিলাম। ( মনে মনে )
হঠাৎ ই ইমন ধপ করে ওঠে বোসলো।
মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো- যাও নেইল কাটার টা নিয়ে আসো।
মুসকান অবাক চোখে তাকিয়ে জিগ্যাস করলো-কি হলো নেইল কাটার কেনো??
যা বলছি তাই করো আগে যাও।
মুসকান গিয়ে নেইল কাটার নিয়ে আসলো।
ইমনের হাতে দিয়ে চলে যাবে ঠিক তখনি ইমন তার এক হাতে ধরে হেচকা টান দিলো। মুসকান টাল সামলাতে না পেরে ইমনের উপর গিয়ে পড়লো।
ইমন তাকে পিছন দিক করে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বোসলো। মুসকানের কাঁধে থুতনি রেখে বাম হাত দিয়ে মুসকানের বাম হাত সামনে নিয়ে ডান হাতে নেইল কাটার নিয়ে মুসকানের নখ কাটতে শুরু করলো।
একি কি করছো ভাইয়া…. নখ কাটছো কেনো??
এগুলো তো আমি অনেক কষ্ট করে রেখেছি। প্লিজ কেটোনা।
উহম………..এততো নড়াচড়া করো না হাতে লেগে যাবে।
না তুমি কেটোনা……
চুপপপপ।
ইমনের এক ধমকে চুপসে গেলো মুসকান। আর কোন কথা সে বললো না। ইমন খুব মনোযোগ দিয়ে যত্ন সহকারে নখ গুলো কেটে দিলো। নখ কাটা শেষে নেইল কাটারটা পাশে রেখে দুহাতে মুসকানকে জরিয়ে নিলো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো- এগুলো বড্ড জ্বালিয়েছে আমায় আর যাতে না জ্বালাতে পারে সেই ব্যাবস্থা করলাম। ইমনের গরম নিশ্বাস কানে লাগতেই মুসকানের পুরো শরীর শিউরে ওঠলো।
ইমন আরেকটু গভীরভাবে জরিয়ে নিয়ে ঘারে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
কারো আসার শব্দ পেয়ে চট করে ছেড়ে দিলো মুসকান কে। মুসকান একটু সরে হাঁপাতে লাগলো।
মুসকান আপু মুসকান আপু….. মুভীটা শুরু হয়ে গেছে তারাতারী আসো। বলেই রুমে ঢুকলো দিপু। ইমনকে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো।
ইমন ওঠে দাঁড়াতেই দিপু বললো-
না মানে আপু জানাতে বলেছিলো। আমি যাই পড়তে বসিগা। বলেই ছুটে পালালো দিপু।
ইমন মুসকানের দিকে তাকাতেই –
কইই…… আমি কখন ওকে বললাম ঢের মিথ্যা কথা। ( তুতলিয়ে বললো মুসকান )
হ্যাঁ সত্যি তো তুমি তো মুভী একদমই লাইক করো না। জানিতো আমি। আমি ঘুমাবো তুমি মাথাটা টিপে দিবে ওকে। বলেই ইমন আবারো মুসকানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
মুসকান মুখটা ভাড় করে তাকিয়ে রইলো ইমনের দিকে। ইশ মুভীটা দেখা হলো না…… ( মনে মনে )
কিহলো মাথায় হাত রাখো….
হুম এইতো রাখছি।
মুসকান ইমনের চুলগুলো আলতোভাবে টেনে দিচ্ছে ইমন পরম আবেশে চোখ বুজে রয়েছে।
কিছুক্ষন পর মুসকান ডাকলো- ইমন ভাইয়া………..
ইমন চোখ বুজেই বললো- এখানে তোমার কোনো ভাই নেই… ( কঠোর গলায়)
মুসকান একটু ভয়ে ঢোক গিললো।
না মানে আসলে… আমার কিছু বলার ছিলো…..
হুম বলে ফেলো..
মুসকান আরেক ঢোক গিলে বললো-
তোমার কি কিছু হয়েছে..? মানে কোনভাবে কষ্ট পেয়েছো??
ইমন চোখ মেলে তাকালো। মুসকান কিছু শুনার জন্য উৎসুক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মুসকান কি তখনকার অমন আচরনে এটা জিগ্যাস করছে?? ও আমাকে বুঝার চেষ্টা করছে তাহলে। আমার কষ্টটা ও কি একটু হলেও টের পেয়েছে??
পাবে নাইবা কেনো এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো। ও যে আমার অর্ধাঙ্গিনী।
চলবে……………………..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। ভালো লাগলে জানাবেন এবং পাশে থাকবেন।