গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৫৩ অন্তিম
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
-: প্লিজ আপনি শান্ত হন।আমার পুরো কথা এখনও শেষ হয়নি।আগে পুরোটা শুনুন আপনারা যা ভাবছেন তেমন কিছু এখনও ঘটেনি রিলাক্স।
.
ডক্টরের কথায় সবার চোখে মুখে কিছুটা আশার আলো ফুঁটে উঠলো।রাহাত তাৎক্ষনাত উঠে দাঁড়িয়ে কান্না ভেজা চোখে ডক্টরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।আপনি কি বলতে চাইছেন আমার পরী এখনও বেঁচে আছে…?
.
কিছুটা শান্ত হয়ে ডক্টরের উওরের অপেক্ষায় উনার দিকে তাকিয়ে আছে রিহান সহ সবাই।
.
ডক্টর একটু এগিয়ে রিহানের কাছে এসে দাঁড়ালেন।কাধেঁ হাত দিয়ে বললেন…. আমি জানি এখন আপনার মনের মধ্যে কি চলছে।আপনি আপনার ওয়াইফকে খুব ভালোবাসেন।আর আপনার ওয়াইফও আপনাকে অনেক ভালোবাসেন।আপনাদের মনের মধ্যে এখন একটা প্রশ্নই ঘোরপাক খাচ্ছে যে আপনি আপনার ওয়াইফকে চাওয়া সও্বেও আমরা কেন আপনার বেবিকে বাঁচালাম।কিছুটা থেমে আবারও বলতে শুরু করলেন….আসলে যখন আপনি আপনার ওয়াইফের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসেন তখন আপনার ওয়াইফ আমার সাথে কথা বলেন আর উনি এমনভাবে কথা বলেন তার কথা আমরা ফেলতে পারিনি।
.
কিছুক্ষণ আগে….
.
ডক্টর আমি আমার জীবন চাই না আমি আমার জায়গায় বেবিকে চাই।
.
সরি মিসেস চোধুরী আপনার হাজবেন্ড এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন…?এখানে আমাদের কিছু করারা নেই।
.
প্লিজ ডক্টর একজন ওয়াইফ হিসাবে নয় একজন মা হিসাবে আপনার কাছে রিকুয়েস্ট করছি আমি আপনি আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে দিন।আপনি জানেন না ডক্টর এই বাচ্চাটাকে ঘিরে আমরা অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম।ওর আগমনে আমার শ্বশুর শাশুড়ি আব্বু আম্মু ভাইয়া ভাবী সবাই অনেক আশা নিয়ে বসে আছেন।আপনি বলুন ডক্টর যেখানে এতগুলো মানুষ এই একজনের প্রতীক্ষায় আছে আজ আমি কি করে তাদের মন ভেঙ্গে দেই।যেখানে একজন মা তার সন্তানকে সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে সেখানে আমি কি করে আমার বেবির আয়ু নিয়ে পৃথিবীতে বাঁচতে পারি আপনিই বলুন ডক্টর একজন মা হিসাবে আমি কি এটা মানতে পারি।ওই বেবিটার জায়গায় যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে ওকে ছাড়া বেঁচে থেকেও মরে যাবো আমি।প্লিজ ডক্টর একজন মৃত্যু পথযাএী হিসাবে আমার শেষ ইচ্ছাটা রাখুন।প্লিজজ
.
তুমি যা বলছো সবই ঠিক মা।আমরা ডক্টর বলে আমাদের কোনো ইমোশন নেই এমন নয়।সবটাই বুঝতে পারছি মা কিন্তু তোমার হাজবেন্ড সে তো তোমাকে ছাড়া অন্যকাউকে মানতে পারবে না আজ যদি তোমার সন্তানকে বাঁচিয়ে তোমার ফ্যামিলির কাছে দেই তারা কি খুশী হয়ে ওকে মেনে নিবে।আর সবার কথা না হয় বাদই দিলাম তোমার হাজবেন্ড!! সে কি মানবে মা।
.
ওকে মানতেই হবে ডক্টর!!কারণ এই বাচ্চাটাকে নিয়ে ওরই সবথেকে বেশি স্বপ্ন ছিলো।আমি রিহানকে চিনি প্রথমে রাগ করলেও ওই পিচ্চিটার মুখ দেখে আর রাগ করে থাকতে পারবেনা।আপনি শুধু আমার কথাটা রাখুন!! এখনই ওকে কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই।
.
ডক্টর কিছুক্ষণ ভেবে ঠিক আছে মা তাই হবে।আমরা তোমার সন্তানকেই বাঁচাবো।তুমি আবারও প্রমাণ করলে যোকোনো মায়ের কাছে সন্তানকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে হয়।মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করি মা আল্লাহ যেনো তোমার সন্তানের সাথে তোমাকেও বাঁচিয়ে রাখেন।একটা মিরাক্কেল যেন হয়।
.
.
তখন আপনার ওয়াইফের শেষ সময়ের কথা না রেখে থাকতে পারিনি আমি।তবে একটা সুখবর আছে…আপনার ওয়াইফ এখনও বেঁচে আছেন।তবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না অবস্থা তেমন ভালো নয়।চার ঘন্টা না গেলে আমরা কিছুই বলতে পারছিনা।আপনারা উনার জন্য প্রে করুন।আমি জানি মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে ফিরান না।
.
রোজ বেঁচে আছে এই কথাটা সবার মুখে কিছুটা হাসি ফুটালেও আমারও তা মিলিয়ে গেলো।তবে এখন সকলের দোয়ায় যদি আবারও বেঁচে উঠে রোজ।
.
ডক্টরঃকি হলো মিঃরিহান মেয়ের মুখ দেখবেন না……?নার্স বাচ্চাটাকে উনার কোলে দিন।
.
রিহান কি বলবে বুঝতে পারছেনা।নার্স বাচ্চাটাকে রিহানের কোলে দিলো।রিহানও খুব যত্নে কোলে তুলে নিলো ওকে।বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো রিহান।এ যেন রোজেরই কার্বন কপি।নিজের মেয়েকে অজস্র চুমোতে ভরিয়ে দিলো।বাচ্চাটাও হাত পা নাড়াচ্ছে পিটপিট করে তাকাচ্ছে।তার ওই ছোট ছোট হাত রিহানের গাল স্পর্শ করলো।এটা দেখে রিহান সহ সবাই হাসলো।আবির বলেই দিলো….দেখলি তুই ওকে চাইছিলিস না আর ও পৃথিবীতে এসেই বুঝিয়ে দিলো বাবাকে কতটা ভালোবাসে।বাবার চোখের পানি সহ্য হচ্ছেনা ওর।একে একে সবাই কোলে নিয়ে আদর করছে ওকে।একদিকে যেমন বাচ্চাটার আগমনে সবার মাঝে খুশী বিরাজ করছে অন্যদিকে রোজকে হারানোর ভয়ও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সবাইকে।
.
চারঘন্টা পর…
.
রোজের সুস্ততার জন্য দোয়ায় ব্যস্ত সবাই।মেয়েকে কোলে নিয়ে চোখের পানি ফেলছে রিহান।আর একটা কথাই আওরাচ্ছে রোজ আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।ওকে ফিরতে হবে আমার জন্য বাঁচতে হবে ওকে।
.
কিছুক্ষণ পর ডক্টর বেরিয়ে এলেন রোজের কেবিন থেকে।হাসিমুখে বলে উঠলেন… বিপদ কেটে গেছে একটু পর পেসেন্টের জ্ঞান ফিরবে।আপনারা দেখা করতে পারবেন।
.
খবরটা পেয়েই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো সবাই।আজ মরতে মরতেও বেঁচে গেলো রোজ।রিহান মেয়ের দিকে তাকাতেই কি বুঝে যেন বাচ্চাটাও হেসে উঠলো।যার অর্থ এমন ছিলো বাবা তুমি আর কেঁদো না মাম্মাম ভালো হয়ে গেছে।
.
একটু আগেই জ্ঞান ফিরেছে রোজের।সাতদিন পরে ওদের ছেড়ে দিবে।রোজের বাবা মা শশুড় শাশুড়ি ভাইয়া ভাবী রোজকে দেখতে ওর কেবিনে ঢুকেছে।তিশা রিহান আর আবির একটু পর আসবে।রোজের মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদছেন।এ কান্না এখন দুঃখের নয় বরং মেয়েকে আবার ফিরে পাওয়ার আনন্দের।একটু পরেই মেয়েকে কোলে নিয়ে রোজের কেবিনে ঢুকলো রিহান সাথে তিশা আর আবির।তিশা ভিতরে ঢুকেই শোয়া অবস্থায় গলা জরিয়ে ধরলো ওর।দুজনে কিছুক্ষণ এভাবে থেকে সরে আসলো তিশা।রিহান এককোণে দাঁড়িয়ে আছে মুখে কোনো কথা নেই।রাহাত রোজকে তুলে ওর কোলে দিলো মেয়েকে।মেয়েকে কোলে নিয়ে কেঁদে দিলো প্রায় রোজ আজ অনেক কষ্টের পর ওকে পেয়েছে।শেষপর্যন্ত পেরেছে ওর মেয়েকে পৃথিবীর আলো দেখাতে।রোজের সাথে দেখা করে রাহা বেবিকে কোলে করে সবাইকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।রিহান এখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।বড্ড অভিমান হয়েছে রোজের উপর।রোজ রিহানের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।
.
কি হলো আমার কাছে আসবেন না…?কথা বলবেন না আমার সাথে…?
.
না তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।(রোজের কাছে বসে)।তুমি কি করে পারলে রোজ আমাকে না জানিয়ে এরকম একটা ডিসিশন নিতে।একটি বারও আমার কথা ভাবলে না।আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তখন আমি কি করতাম।কে সামলাতো আমাদের সন্তানকে।
.
মুখে হাসির রেখা টেনে।কেন আপনি বেবিকে আর বেবি আপনাকে।আচ্ছা বাদ দিন দেখুন আমি এখন একদম ঠিক আছি।কিছু হয়নি আমার তাহলে কেন আর খারাপ সময়ের কথা মনে করছেন।এখন এসব মনে না এনে ওকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো আমরা।
.
হুমম!!কপালে চুমো এঁকে #বড্ড_ভালোবাসি♥ রোজ।আর কখনও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করো না।
.
হুমম!!আমিও #বড্ড_ভালোবাসি♥ আপনাকে।
.
.
তিন বছর পর…
.
আজ হৃদিতা রুহি মানে রোজের মেয়ের তৃতীয় জন্মবার্ষিকী।সেজন্য বাড়িতে বড় করে পার্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রিহান নিজ হাতে ব্লু শাড়ি পরিয়েছে আমায়।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে মনের মতো করে সাজাচ্ছে আমাকে।ব্যাপারটায় চরম বিরক্ত তবুও কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছি আমি।চোখে হালকা কাজল ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক আর কোনো সাজ নয় ব্যাস আমার সাজ কমপ্লিট।কিন্তু লিপস্টিক পরিয়ে উনি কেমন একটা চিন্তায় পরে গেলেন।
.
কি হলো কি এত ভাবছেন…?আপনার সাজানো শেষ হলে আমি আসি।
.
নো!!এখনও শেষ হয়নি এখানে বসো লিপস্টিকে তোমাকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে।
.
তাহলে দাঁড়ান আমি মুছে ফেলছি।
.
না আমি যখন সাজিয়েছি তাহলে আমিই মুছে দেবো বলেই রোজের ঠোঁট জোড়া শুষে নিতে লাগলো রিহান।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দুজনেই হাঁপাতে লাগলো।
.
ছিঃ এই ছিলো আপনার মনে।আমি ভাবলাম কি
.
এত ছিঃছিঃ করোনা এবার নিচে চলো।সবাই অপেক্ষা করছে।নিচে গিয়ে দেখলাম তিশা আবির ভাইয়াও চলে এসেছে।সাথে ওদের কিউট গার্ল তিয়াও এসেছে।এরইমধ্যে রাহাত রাহাও চলে এসেছে।রোজের বাবা মা আসতে পারেন নি।ভাইয়ার সাথে কথা বলছি এমন সময় দৌড়ে এলো রুহি….
.
মাম্মাম মাম্মাম লাফি(রাফি) ভাইয়া বকছে!!
.
কেন মাম্মাম ভাইয়া তোমায় বকছে কেন…?নিশ্চয় ভাইয়ার কথা শুনো নি আবার দুষ্টুমি করেছো..?
.
না মাম্মাম আমি কিছু কলিনি।তবুও ভাইয়া বকেতে।না তোমাকে আল বলবো না।জানো পাপা(রিহানের কাছে গিয়ে)আমি কিছু কলিনি তুদু একটু কেক খেয়েতিলাম তাই লাফি ভাইয়া ধমক দিয়েতে আল এত এত বকা দিয়েছে।(হাত দিয়ে দেখিয়ে)
.
তুই ফুপ্পি আর আঙ্কেলের কাছে আমার নামে নালিশ করছিস।কোনো লাভ নেই ফুপ্পি আর আঙ্কেল জানে রাফি গুড বয় তোর মতো পঁচা মেয়ে নয়।
.
রাহাতঃরাফি কি হচ্ছে মামনিকে বকছিস কেন…?এমন কিউট একটা মেয়েকে কেউ বকে নাকি।
.
পাপা ভাইয়া আবাল আমায় পঁতা বলছে।আমি কথা বলবো না তোমাল সাতে।
.
এদের এরকম দুষ্টুমি চলতেই থাকে।রাফি সবসময় কড়া শাসনে রাখে রুহিকে।রুহি বাবা ভক্ত মেয়ে মায়ের দিকে খেয়ালই নেই তার।।রাফি সবসময় রুহিকে শাসায় এদিকে যাবিনা ওদিকে যাবিনা এভাবে হাঁটবি না ওভাবে হাঁটবি।ভীরের মধ্যে একদম যাবিনা ভাইয়ার হাত ধরে ধরে হাঁটবি আরো কত কি!রাফির এত কেয়ারে রোজ অনেক হ্যাপী।রাহাতের মতো রাফিও রুহিকে আগলে রাখছে।
.
এভাবে ভালোবাসায় কেটে যাচ্ছে রোজ রিহানের জীবন।জীবনের সকল বাধা বিপওি কাটিয়ে রুহিকে নিয়ে হ্যাপী লাইফ কাটাচ্ছে ওরা।এভাবেই চলতে থাকুক ওদের জীবন।
💕 ______সমাপ্ত_____💕
Golpota shotti khub khub valo hoyeche❤❤❤❤i wish shobar gibonei jeno rihan er moto akjon valobashar manush thake ☺☺☺☺