বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব ৭৪

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৭৪.

ওটির সামনে আবরার মেনশনের সবাই বসে আছে। সবার চোখেমুখে প্রচণ্ড টেনশনের ছাপ। মানিক আবরার, রিমা, লিমা, হাসান কোতয়াল চিন্তিত মুখ করে বসে আছেন। বাকিরা এদিক ওদিক দাঁড়িয়ে আছেন। জাবিন বাড়িতেই আছে, স্নিগ্ধকে সামলাচ্ছে। আদ্রিয়ান ফ্লোরে বসে আছে, সব-মুখ জুড়ে বিষণ্নতা, কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়। ফোনে যখন মিসেস রিমা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন যে অনিমা পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে আর ওকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন আদ্রিয়ানের মানসিক অবস্থা কল্পনা করাও অসম্ভব ছিল। মনে হচ্ছিলো দাঁড়াতেও পারবেনা ঠিকভাবে। খবরটা রিক আর হাসান কোতয়ালের কানে পৌঁছাতেই ওনারা সোহাগকে বিদায় দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আদ্রিয়ানকে নিয়ে হসপিটালে আসে। আসলে অনিমা নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিল। নিউস চ্যানেলে দেখায় আদ্রিয়ান আর হাসান কোতয়াল কবির শেখের গোডাউনের ভেতরে আছে। আর সাংবাদিকরা বাইরে দাঁড়িয়ে নিউজ করছে। ও তখন ঘাবড়ে যায়। যেহেতু কবির শেখ মারাত্মক চালাক একজন মানুষ। উনি যা খুশি করতে পারেন। আর সেই ভয়েই অনিমা উত্তেজিত হয়ে উঠে দ্রুত বেরিয়ে সবাইকে বলার জন্যে যাচ্ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কার্পেটের সাথে পা আটকে পড়ে যায়। আর এরকম সময়ে এভাবে পড়ে যাওয়াটা সত্যিই ভয়ংকর। ব্যাথা পেয়ে প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে ওঠে ও। ওর চিৎকারের আওয়াজে বাড়ির সবাই ছুটে আসে। অনিমাকে এভাবে দেখে স্বাভাবিকভাবেই সবাই প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। তবে একটুও সময় নষ্ট না করে ওনারা হসপিটালে নিয়ে যায় ওকে আর আদ্রিয়ানকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেয়। স্নিগ্ধা ওটিতে ঢুকেছে। রিক আদ্রিয়ানের সাথেই আছে। এ সময়ে আদ্রিয়ানের একজনের সার্পোট প্রয়োজন। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পরেও কোন খবর আসছে না। মাঝে শুধু একজন নার্সকে তাড়াহুড়ো করে দৌড়ে ঢুকতে বের হতে দেখা গেছে। এবার সবাই মনে মনে বেশ ভয় পাচ্ছে। সবাই মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছে মা আর বাচ্চা দুজনেই যাতে সুস্হ থাকে। আদ্রিয়ান একদৃষ্টিতে ওটির দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে ছলছল ভাব স্পষ্ট। ভেতরে অনিমা কষ্ট পাচ্ছে এটা মনে হলেই বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে ওর।কিছুক্ষণ বাদে বাদে ওর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। ওকে ধরে বসে থাকায় রিক সেটা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। আর এটাই ভাবছে যে, যে ছেলেটা সমস্ত ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখে। যেকোন বিপদে নিজে শক্ত থেকে বাকিদের সামলায়। আজ সে নিজেই কেঁপে উঠছে বারবার। একটা মেয়েকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালো না বাসলে হয়তো এটা সম্ভব নয়। অন্যসব ক্ষেত্রে আদ্রিয়ান যতই শক্ত হোক না কেন এই একটা জায়গাতে সে দুর্বল, ভীষণ দুর্বল।

দীর্ঘ সময় পর, নার্স একটা সাদা টাওয়েলে জড়িয়ে একটা বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। ওটির দরজা খোলার সাথেসাথেই আদ্রিয়ান উঠে ছুটে গেল। বাকিরাও এগোলো। বাচ্চাটাকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে থমকে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে কম্পিত কন্ঠে বলল,

” আমার ওয়াইফ কেমন আছে?”

নার্স কিছু বলার আগেই স্নিগ্ধা বেরিয়ে এলো। আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই স্নিগ্ধা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” ভাইয়া, তোমার বউ ফিজিক্যালি একদম ঠিক আছে। চিন্তা করার কিচ্ছু নেই।”

আদ্রিয়ান সহ বাকি সকলেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। স্নিগ্ধা বলল,

শুরুতে একটু প্রবলেম হয়েছিল কিন্তু অনি যথেষ্ট কোঅপারেট করেছে। এখন একদম ঠিক আছে। একটু পরে কেবিনে দেব। এবার তোমার মেয়েকে তো কোলে নাও! শুধু বউয়ের কথা ভাবলে হবে? মেয়ে রাগ করবে তো!”

আদ্রিয়ান হালকা হেসে এগিয়ে গিয়ে নিজের মেয়েকে কোলে তুলে নিলো। সাথেসাথেই মনে হল যেন ও পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি। এর চেয়ে বেশি সুখের কিছু হতেই পারেনা। এতক্ষণ আটকে রাখা চোখের জলটুকু এখন বেরিয়ে এলো চোখ দিয়ে। বেবীর মুখে চুমু খেয়ে আলতো করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল ও বাচ্চাটাকে। এই দৃশ্য থেকে সকলেই তৃপ্তি পেলো মনে। সকলেই প্রশান্তির হাসি দিল।

_________

কিছু মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি নামক জিনিসটা সহজে ধরা দেয়না। অনি-আদ্রিয়ানও হয়তো সেই দলের মধ্যেই পড়ে। কয়েক ঘন্টা আগেও সবাই ভীষণ খুশি ছিল। জাবিন স্নিগ্ধকে নিয়েই ছুটে এসেছিল অনি-আদ্রিয়ানের মেয়েকে দেখতে। অভ্র মিষ্টি কিনে এনেছিল। অরুমিতা তীব্র আর স্নেহাও ছুটে চলে এসেছিল বেবীকে দেখার জন্যে। আদ্রিয়ান অনিমার পাশ থেকে এক মিনিটের জন্যেও সরেনি। অনিমার হাত ধরে বসেছিল আর ওর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছিল। কিন্তু অনিমার জ্ঞান ফেরার পর যে এমন কিছু হবে সেটা হয়তো কেউই ভাবেনি। জ্ঞান ফেরার পর থেকেই অনিমা একেবারেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করল। এতোদিন এমনিতেও ও মানসিকভাবে সুস্হ ছিলোনা। ধীরে ধীরে অবস্থা খারাপ-ই হচ্ছিলো। কিন্তু এখন একদম অন্যরকম ব্যবহার করছে। এমন বিহেভ করছে যেন ও কাউকে চেনেই না। আর আচরণগুলোও স্বাভাবিক মানুষের মতো না। ওর এরকম অবস্থা দেখে বাচ্চাটাকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কেবিন থেকে।অনিমার শরীর এমনিতেই ভীষণ দুর্বল। তাই অস্বাভাবিক হলেও ফিজিক্যাল মুভমেন্ট খুব একটা করতে পারছিল না। আদ্রিয়ান যতবার ওর কাছে গেছে ততবারই অনিমা অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। ছুঁতে পর্যন্ত দেয়নি। আদ্রিয়ান শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল অনিমার দিকে। এমনকি হাসান কোতোয়ালের দিকে তাকিয়েও দেখছেনা অনিমা। সবকিছু দেখে নাহিদ বলল,

” এরকম কিছুর ভয়টাই পাচ্ছিলাম। ব্যাপারটা এখন বেশ জটিল হয়ে গেছে।”

মুহূর্তেই আনন্দমুখর পরিবেশটা বিষাদময় হয়ে গেল। সবার চোখে-মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ। হঠাৎ এরকম ঘটনায় সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে। আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। কিছুক্ষণ আগেও এমন অপার সুখের অনুভূতি পাওয়ার পর আবার এরকম একটা ঘটনা স্তব্ধ করে দিলো ওকে।

__________

মাঝে আরও তিনটে দিন পার হয়ে গেল। এই তিনদিনে অনিমার ব্যবহারে কোনরকম পরিবর্তন আসেনি। অদ্ভুত আচরণ করছে ও।যেনো নিজের মধ্যেই হারিয়ে গেছে। আশেপাশের কোনকিছুর সাথে কোন সম্পর্ক নেই ওর। আদ্রিয়ান অনেক কষ্টে ওর কাছে গেছে। অনিমাকে খাওয়াতে, ঔষধ দিতে ওর কাছে যেতে একপ্রকার যুদ্ধ করতে হয়েছে। বেবীর ফিডিং করাতেও স্নিগ্ধাকে অনেক রিস্ক নিতে হয়েছে। তবে অদ্ভুত ব্যপার হচ্ছে অনিমা বেবীকে ফিডিং করানোর সময় একদম চুপচাপ হয়ে যেতো। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো নিজের মেয়ের দিকে। হয়তো এটাকেই মাতৃত্বের টান বলে। এসব মিলিয়ে বাড়ির সবারই বিশেষ করে আদ্রিয়ানের এই তিনটে দিন ভয়ংকর কেটেছে। নাহিদ কতগুলো টেস্ট করাতে দিয়েছিল আজ যার রিপোর্ট নিয়ে এসেছে ও। ড্রয়িংরুমে বসে আছে বাড়ির সবাই। সবাই জানতে ইচ্ছুক অনিমর এখন কী হয়েছে। অনিমা আর বেবী দুজনেই ভেতরে আলাদা আলাদা ঘুমাচ্ছে।

আদ্রিয়ান নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কী দেখলি রিপোর্টে?”

নাহিদ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,

” এতোদিন ওর মানসিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। আর সেটা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছিলো। আর এরকম উইক মাইন্ডে হঠাৎ আদ্রিয়ান আর আঙ্কেলের জন্যে টেনশন। তারওপর পড়ে যাওয়ার পর প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাওয়া আর বাচ্চাটার জন্যে টেনশন সবমিলিয়ে মাইন্ডে এতোটাই এফেক্ট ফেলেছে যে…”

জাবিন বলে উঠল,

” ভাবীর মেমোরি লস হয়েছে?”

নাহিদ বলল,

” না, আসলে মেমোরি লস বলে কিছু হয়না। হ্যাঁ হয়তো সাময়িক সময়ের জন্যে মানুষ কিছু কিছু ঘটনা হঠাৎ হঠাৎ ভুলে যেতে পারে যেকোন কারণে। কিন্তু একেবারে নিজের নাম, ঠিকানা, অস্তিত্ব সব ভুলে যাবে বাকি সব সুস্থ স্বাভাবিক এরকমটা ফিল্ম, নাটকে দেখালেও বাস্তবতা ভিন্ন। অনিমার অবস্থাটা হচ্ছে ও এখন সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। আসলে ও নিজের মধ্যেই হারিয়ে গেছে এখন। আশেপাশে কোন কিছুই এখন ওর বোধগম্য নয়। আর সেজন্যই ও এরকম ব্যবহার করছে।”

সবাই ব্যাপারটা বুঝল। সমস্যাটা যে জটিল সেটাও বুঝতে পেরেছে। হাসান কোতয়াল কম্পিত কন্ঠে বললেন,

” ও কি ঠিক হবেনা আর?”

নাহিদ মলিন মুখে বলল,

” মিথ্যে আশ্বাস দেবনা আঙ্কেল। যদি চিকিৎসাটা শুরুতেই করা যেতো তাহলে কোন সমস্যা হতোনা। কিন্তু এখন বেশ জটিল হয়ে গেছে ব্যাপারটা। তবে ডোন্ট লুজ হোপ। ও ঠিক হয়ে যাবে।”

আদ্রিয়ান সবার সামনে আর কিচ্ছু বলল না। কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে বসে থেকে যে যে যার যার রুমে চলে গেল। এখন সকলেরই একটা রেস্ট দরকার অনেক ধকল গেছে তিনদিন সকলের। আদ্রিয়ান, রিক আর নাহিদ হাঁটছে আবরার মেনশনের রোডের পাশ দিয়ে। তিনজনেই চুপ আর গম্ভীর। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান নাহিদের হাতে হাত রেখে বলল,

” তুই যা বলবি আমি করব। ওকে জাস্ট ঠিক করে দে। প্লিজ।”

আদ্রিয়ানের মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখ-নাক লালচে হয়ে আছে। রিক তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আদ্রিয়ানের মতো ছেলেকে এভাবে দেখে। ও এইটুকু খুব ভালো করেই জানে অনির কিছু হলে এই ছেলেটা শেষ হয়ে যাবে। একদম শেষ হয়ে যাবে। নাহিদের এখন নিজেরই খুব অসহায় লাগছে। কী করবে বুঝতে পারছেনা। শুধু আদ্রিয়ানের হাতে হাত রেখে বলল,

” দেখ, আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করব। এখন ব্যপারটা জটিল হয়ে গেছে অবশ্যই কিন্তু অসম্ভব না। শুধু একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।”

আদ্রিয়ান লম্বা একটা শ্বাস ফেলল। কাঁদতে খুব ইচ্ছে করছে ওর কিন্তু এখন কাঁদার মত পরিস্থিতি নেই। ওকে শক্ত হতে হবে। নাক টেনে নিজেকে সামলে নিল।

__________

দেখতে দেখতে কেটে গেল এক সপ্তাহ। আবরার মেনশনের সকলের সুখ আর দুঃখ দুটোর সমন্বয়েই কেটেছে। অনিমার এরকম কঠিন অবস্থা আর ওকে সামলানোতে সবারই হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনিমার অবস্থার অবনতি বেশ ভয়াবহ খারাপ হয়েছে। প্রথমে কষ্ট হলেও আদ্রিয়ান ধৈর্য্য ধরে কিছুটা সামলাতে পারছে ঠিকই। মাঝেমাঝে কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাচ্ছে ও। সামনে যাকে পাচ্ছে তাকে আঘাত করে বসছে। এই সাতদিনে আদ্রিয়ানকে পাঁচবার আঘাত করেছে অনিমা। প্রথমবার অনিমাকে এরকম এগ্রিসিভ হতে দেখে আদ্রিয়ান অনিমার কাছে কাউকেই আসতে বারণ করে দিয়েছে। যদিও অনিমা ওরকম এগ্রেসিভ মাঝেমাঝে হয়। কখনও কখনও একদম শান্তও থাকে। তবুও ওর কাছে এখন শুধু তিনজন যায় আদ্রিয়ান, নাহিদ আর স্নিগ্ধা। বেবীকে যখন ফিডিং করানোর দরকার হয় তখন নিয়ে আসে স্নিগ্ধা বাচ্চাকে অনিমার কাছে। প্রথম প্রথম বাচ্চার সিকিউরিটি নিয়ে বেশ ভয় পেতো ওরা। কিন্তু বাচ্চাটাকে ফিডিং করানোর সময় অনিকে ওরকম শান্ত দেখে এখন সেই ভয় কিছুটা কমেছে। তবে অনিকে স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে রাখা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এই নিয়ে সবার মন বিষণ্ন থাকলেও বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় দুজন মানুষের সন্তান এসেছে। সবার আদরের। ওর উপস্থিতি এতো কষ্টের মধ্যেও সবাইকে কিছুটা খুশি রাখছে। অনি-আদ্রিয়ানের মেয়ের নাম রাখা হয়েছে আদ্রিমা আবরার জোহানী। নামটা আদ্রিয়ান রেখেছে। আর ডাকনাম হল মিষ্টি। এটা অনিমাই বেছে রেখেছিল মিষ্টি গর্ভে থাকাকালীন। মিষ্টির দেখাশোনা বাড়ির সবাই মিলে করে। স্নিগ্ধার কাছেই বেশি সময় থাকে ও। তবে রাতে আদ্রিয়ান নিজের মেয়েকে ছাড়েনা।

ড্রয়িংরুমে গম্ভীরমুখে বসে আছে আবরার মেনশনের সবাই। হাসান কোতয়ালও এসেছেন। মাথা নিচু করে বসে আছেন উনি। আদ্রিয়ানের মাথায় বেশ বড় একটা ব্যান্ডেজ। আজ আবার অনিমা আঘাত করেছিল আদ্রিয়ানকে। আজকের আঘাতটাও ভয়ংকর ছিল বড় ক্ষতি হতে পারতো আদ্রিয়ানের। এর আগেও এরকম একবার করেছে ও। সব শান্ত হওয়ার পর আজ এক কষ্টদায়ক প্রস্তাব রেখেছে নাহিদ নিজে। সেটা হল অনিমাকে মেন্টাল হসপিটালে পাঠানো। কারণ সত্যি সত্যিই অনিমা বেশ এগ্রেসিভ হয়ে যাচ্ছে। ওর কাছে এখন কেউ কিচ্ছু না। কাউকেই ও নিজের বলে বুঝতে পারছেনা। সেই অবস্থাতে ও নেই। বাড়িতে দুটো বাচ্চা আছে। বড়দের জন্যেও ব্যাপারটা সেফ থাকছে না। সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল কিন্তু লাভ হচ্ছেনা। তাই বুকে পাথর চেপে হলের মানিক আবরার আর রিমা একমত পোষণ করলেন। আর কেউ কিছু না বললেও দ্বিমতও করেনি। হাসান কোতয়ালও চুপ করে বসে আছেন কিছু বলার মত ভাষা নেই ওনার। আদ্রিয়ান অসহায়ভাবে বসে আছে। ওর চোখ-মুখে তীব্র অসহায়ত্ত্বের ছাপ। এতোটা অসহায় হয়তো এই ছেলেটা কোনদিন ফিল করেনি। কী করবে ও? কোন দিকে যাবে? কীভাবে এতো নিষ্ঠুরতা করবে নিজের জানপাখির সাথে? সবকিছু এতো বিষাক্ত এতো অসহ্য কেন লাগছে?

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here