#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ৩১
ব্যস্ততাময় রাস্তায় একের পর এক গাড়ি ছুটে চলেছে এদের গন্তব্যস্থানে।
গাড়ির হর্নের শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
গাড়ির ধুয়ায় চারিদিক ভরপুর।
নোমান গাড়ির কাচ উঠিয়ে দিতে চাইলেও অপুর জন্য পারেনি।
অপু কাচ লাগিয়ে বসে থাকতে পারেনা।তার অসস্থি হয়।খোলা হাওয়া অপুর পছন্দ।
একথা নোমান জেনেছে।আরও অনেক খুটিনাটি বিষয়ই অপুর বিষয়ে জেনেছে সে।
তাই তো অপুর পছন্দমতো চলার চেষ্টা করছে সে।
গাড়ির জানালায় মাথা রেখে বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত অপু।
নোমান গাড়ি চালানোর ফাকে ফাঁকে সেদিকে বারবার আড়চোখে তাকায়।
খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে অপুর সাথে।
বাইরের হাওয়ায় অপুর মুখে চুল এসে পরে।
নোমানের ইচ্ছে করে হাত দিয়ে আলতো করে সে চুল সরিয়ে দেয়।
কিন্তু কোন এক অজানা দেয়াল বাধা হয়ে দাঁড়ায় সে ইচ্ছের সামনে।
অপরাধবোধের দেয়াল হবে হয়তো।
নোমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
সে চাইলে এই সময়টা অন্যরকম হতে পারতো।
দুজনে হাসি খুশি ভাবে গ্রামে বেড়াতে যেতে পারতো।কথার ফুলঝুরি ঝরতো তখন এখানে।
কিন্তু এখন?
শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে এ গাড়িতে।
এসবের জন্য নিজেকে নিজে কাঠগড়ায় দাঁড় করায় নোমান।
কেনো সেদিন ওমনটা করলো সে?
কেনো বিশ্বাস করলো না অপুকে?
কিন্তু এসব এখন ভেবে কি আর হবে?যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।অতীতের ঘটনা ভেবে যতোই আফসোস হোক তা তো আর বদলানো যাবেনা।
হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করে নোমান।
অপু নোমানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। নোমান সে নিঃশব্দ প্রশ্নের উত্তরে এক চিলতে হাসি উপহার দেয়।
মুখে বলে,
—নামো।।
অপু অবাক হয়।এখানে কেনো নামবে তারা?এটাতো গ্রাম নয়,তারা তো এখনো শহরেই আছে।তাহলে এখানে নেমে কি করবে?
মনের ভেতর হাজার প্রশ্নেরা উঁকি দিলেও সে প্রশ্ন মুখ ফুটে বের হয়না তার।
চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়।
নোমানও নামে।
অপুকে ইশারা করে নোমানের পিছু পিছু সামনে এগিয়ে যেতে।
কয়েক কদম যাওয়ার পর অপুর চোখ বড়বড় হয়।
একবার সামনে তো একবার নোমানের দিকে তাকায়।
তার বিশ্বাসই হতে চায়না,এখানে নোমান তাকে এনেছে?নোমান খান?
কিন্তু নোমান কি করে জানলো,অপুর ফুচকা পছন্দ? অপু তো কখনো বলেনি?
তাছাড়া সে তো নোমানের ওপর রেগে আছে।তাহলে রেগে থাকা ব্যাক্তির ট্রিট কি করে নেবে সে?
অপুকে ভাবতে দেখে নোমান হেসে এগিয়ে আসে।
পাশের টুলে টেনে বসায় অপুকে,নিজেও বসে।
বলে,
—ভাবনা চিন্তা সব একপাশে রাখো তো।এখন আপাতত ফুচকা খাও।
ফুচকাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—মামা দু প্লেট ফুচকা দেন।
অপু বিস্ময়ে হতবাক হয়।নোমানের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে,
—দু’প্লেট কেনো?আপনিও ফুচকা খাবেন?
—তো আমি খাবোনা?তুমি খাবে আর আমি বসে বসে দেখবো?
অপু থতমত খায়।বলে,
—না,আপনি কি এসব খান নাকি?
—খাইনা তো কি হয়েছে?আজ খাবো।
অপু আর কথা বাড়ায়না।
মাথা নিচু করে বসে থাকে।
হুট করে কিছু মনে পড়ায় ফুচকাওয়ালাকে বলে ওঠে,
—মামা আমার ফুচকায় অনেক ঝাল দেবেন কিন্তু।
পাশ থেকে নোমান বলে,
—আমারও।
অপু বড়বড় চোখ করে নোমানের দিকে তাকায়।নোমান যে ঝাল খেতে পারেনা তা তো অপু জানে।
ইতস্তত করে বলে,
—আপনি তো ঝাল খেতে পারেননা।
নেমান ভাব নেয়।গর্বিত ভঙ্গিতে মাথা দুলায়।বলে,
—নোমান খান পারেনা এমন কোন কাজ নেই।আর ঝাল?হু,সে তো তুচ্ছ!
—————
গাড়ি আবার স্টার্ট দিয়েছে নোমান।এবার আর কোথাও থামবে না তারা।সোজা গ্রামের বাড়ি গিয়ে থামবে।
গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে একহাতে ধরে রাখা পানির বোতলে মুখ লাগাচ্ছে নোমান।
চোখ তার টকটকে লাল বর্ণ ধারন করেছে।
ফুচকায় এতো পরিমানে ঝাল ছিলো যে নোমানের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে।
অপুর সামনে চিল্লাতেও পারছেনা।এতো ঝালে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ইচ্ছে করছে তার।
নোমান ভেবে পায়না,এতো ঝাল মানুষ খায় কেমন করে?
মানুষ তো দুর অপু নিজেও তো খেয়েছে।
কই তার তো কিচ্ছুটি হয়নি।
দিব্বি বসে আছে।
নোমান গাড়ি থামিয়ে আরেক বোতল পানি বের করে।
অপুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।
অপু ব্যাগ থেকে চকোলেট বের করে নোমানের সামনে ধরে।
নোমান সেদিকে একপলক দেখে অপুর দিকে তাকায়।
অপু বলে,
—চকোলেটটা খেয়ে নিন,ঝাল কমে যাবে।
নোমান মুখ ভোঁতা করে চকোলেট হাতে নেয়।কোথায় সে ভেবেছিলো অপু নোমানের কষ্ট দেখে তার মিষ্টি ঠোঁট চেপে ধরবে তা না,এই কাঠ কাঠ চকোলেট দিচ্ছে।
,
,
চলবে……