বস বর পর্ব ৫+৬

#বস_বর (পর্ব- ৫ ও ৬)
Part-5
Writer : Eti Chowdhury
.
সকালে,

রোদ সকালে চোখ খুলতেই দেখে পাগলীটা লুতুপুতু হয়ে ঘুমাচ্ছে। এলোচুল আর হালকা রোদ মুখের উপরে অপরূপ লাগছে মন চায় এভাবেই আজীবন চেয়ে চেয়ে দেখি। ইতি কিছুটা নড়ে উঠলো। ইি দেখার আগেই রোদকে বের হতে হবে আজ মেডামের জন্য Surprise আছে যে। মনে মনে ভেবেই একটা শয়তানি হাসি দিলো রোদ।

ইতির ঘুম ভাংতেই দেখে রোদ রুমে নেই। ভাবে হয় ড্রইং রুমে আছে বাবার সাথে গল্প করছে।

-উফফ…দেরি হয়ে গেলো যে অফিসে যেতে হবে।

ইতি ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখে রোদ কোথাও নেই। ইতি রোদকে এদিক সেদিক খুজতে লাগলে মা জিজ্ঞেস করে,
– কিরে কাউকে খুজছিস?
– না মা।
ইতি একবার ভাবে জিজ্ঞেস করবে মা তো আর তাকে বলতে যাবে না যে ইতি তার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো,
-মা
-হ্যা বল
-উনি কোই?
– উনিটা আবার কে?
ইতির মা ঠিকি বুঝতে পেরেছে তাও নাটক করছে। রাগ দেখিয়ে ইতি বলে,
-হুহ… অসহ্য । তোমাদের জামাইকে দেখছি না যে?
– রোদ তো সকাল সকাল বের হয়ে গেলো । বলল ওর নাকি কি খুব জরুরী কি কাজ আছে।
– ওহ……
– আয় তুই অ নাস্তা করে নে।
ইতি নাস্তা করে নিয়ে বলে,
– মা আমি যাই
– ইতি শুন
– হ্যাঁ বলো।
– তোদের ২জনের জন্য লাঞ্চ আর শুন আল্লাহ তার বান্দাদের ভালটাই চায় সবসময়। আল্লাহ চেয়েছেন বলেই ওর সাথে তোর বিয়েটা এভাবে হয়েছে। ছেলেটার দিকে খেয়াল রাখিস মা।
– হুম…আসি মা তোমরা ভালো থেকো।
মার কথা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে ইতির। মনে হলে ইতিকে সত্যি সত্যি বিদায় করে দিলো। নিচে নামতেই ইতি দেখে ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে। ইতিকে দেখতেই গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল,
– স্যার পাঠিয়েছেন আপনাকে নিয়ে যেতে।
– হুম……
কোন কথা না বলেই ইতি গাড়িতে উঠে পরল। মার কথা শুনার পর থেকেই ইতির মনটা খারাপ।

অফিসে আসতে না আসতেই হা করে দারিয়ে রইল ইতি। রিমি বলেই ইতি দিলো এক চিৎকার,
-ইতিইইইইইইইই
ইতির চিৎকারে রিমি এক দৌড়ে এসে ইতির সামনে দাড়ায়,
– কি হয়েছে মেম?
– অফিসে কি ডাকাত পরেছিলো নাকি?
– কেনো মেম?
– কেনো মানে? আমার কেবিন খালি কেনো?
– ওহ… আপনার কেবিন তো চেঞ্জ হয়ে গেছে।
-মানে?
– আপনার জন্য নতুন কেবিন রেডি হয়েছে।
– কিন্তু কেনো?
– সেটা তো মেম আমি জানি না।
– কে করেছে?
– এমডি স্যার করেছেন।
– এই ওনার জরুরী কাজ।
– কিছু বললেন মেম?
রাগে ইতির মাথা ফেটে যাচ্ছে। চেঁচাতে চেঁচাতে ইতি বলে,
– কোথায় আমার কেবিন ?
রিমি ইতিকে তার নতুন কেবিনে নিয়ে গেলো। রোদের রুমের পাশেই ঠিক তার টেবিল বরাবর ইতির কেবিন। মাঝে কেবল একটা কাচ দেয়া তাই ইতি কি করছে না করছে রোদ সব দেখতে পারবে।
-উফফফ……অসহ্য।
রোদ ইতির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে আর তা দেখে ইতির গা ঝলে যাচ্ছে।

রোদ নিজের কেবিনে দেখছে। মিট মিট করে হাসছে আর মনে মনে বলছে মেয়েটা রাগে গজগজ করছে চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তোমাকে চোখে চোখে রাখবো বলেই তো এমনটা করলাম️। রোদ আড় চোখে দেখল ইতি ওর কেবিন থেকে বের হচ্ছে। ইতি রোদের দিকেই যাচ্ছে । তাই রোদ স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

ইতি একদম রোদের টেবিলের কাছে গিয়ে কিছুটা তার দিকে ঝুকে বলল,
– কি চান আপনি?
– তোমাকে
রোদের কথা শুনে হা করে রইল বলল,
– এটা কেমন কথা? আমাকে মানে?
– যেমন প্রশ্ন করেছো তেমন উত্তর দিলাম।
– উফফ…..আপনি একটা অসহ্য হুহ………
রোদ হো হো হো করে হেসে দিলো।

রোদের হাসি দেখে ইতির মাথাটা বিগরে গেলো। রাগ আর বিরক্ত নিয়ে বলল,
– আপনি শুধু অসহ্যই না খাটাশ একটা……
বলেই বেরিয়ে গেলো ইতি। সারাদিন ইতি আর রোদের সামনেই যায়নি। কিন্তু রোদ তো শুধু খাটাশ না সে একটা আসতো পেইন । আর পেইনাটা কিছুতেই ইতির পিছু ছাড়ছে না।
রোদ বসে বসে ভাবছে,
– সারাটা দিন মেয়েটাকে দেখলাম না। গেলো কোই? অফিস টাইমও শেষ।

ইতি রোদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। ইতি মনে মনে বলল,
– আহা কি আনন্দ তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে এসেছি। অফিস থেকে কিছুটা পথ যেতেই কে যেনো পিছন থেকে হর্ণ দিয়েই যাচ্ছে। পিছনে ঘুরতেই ইতি দেখে রোদ,
-উফফ…..আবার আপনি।
একটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল ইতি। একটা হাসি দিয়ে রোদ বলে,
– জি আমি। গাড়িতে উঠো।
– সরি আপনার সাথে তো আমি যাচ্ছি না। বস এর সাথে ইমপ্লিই যাবে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না।
– না কিছুই দেখায় না। আর এখন না তো আমরা অফিসে আর না অফিসের সামনে সো কেউ আমাদের দেখতেও পারবে না।
– তাও আমি যাবো না।
বলেই ইতি ঘুড়ে দাড়াল।

মেয়েটা এমন কেন ভাবতে ভাবতেই গাড়ি থেকে বের হয়ে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে দিলো ইতি। ইতি রাগে গটগট করে বলে,
– আপনি অনেক বাজে।

সারা রাস্তা ইতি রোদের সাথে আর কোনো কথা বলল না। বাসায় গিয়ে সোজা রুমে চলে গেলো। রোদ ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে গেলো। ইতি বসে বসে ভাবছে,
-আমি একা বাসায় কি করি?
ইতির কিছুই ভালো লাগছে না তাই কিচেনে চলে গেলো। কি সুন্দর একটা কিচেন। মন মতো রান্না শুরু করল সে। অনেকক্ষণ পর রোদ এলো। টেবিল ভর্তি খাবার দেখে অবাক হয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করল,
– এতো কিছু কে করেছে?
– কেনো আমাকে কি চোখে দেখা যায় না।
– বাহ…
রোদ চোট করে ফ্রেস হয়ে খেতে চলে এলো। রোদ মনে মনে বলছে,
– ওয়াও এতো টেস্টি হয়েছে খাবারগুলো যে কি বলবো।
রোদকে চুপচাপ খেতে দেখে ইতি বলে,
– কি হলো? ভালো হয় নি?
– কেনো? খাচ্ছি তো।
– খাচ্ছেন কিছু বলছেন না যে?
– ঝালটা….
– বেশি হয়ে গেছে?
রোদ হালকা একটা হাসি দিয়ে বলল,
– নাহ। বউয়ের হাতের রান্নার কি কোনো Specialty আছে?
– কেনো?
– না এমনি। যার বউ নেই সে বুঝবে না। সো তুমিও বুঝবা না।

রোদ কি বুঝাতে চাইল ইতি কিছুই বুঝল না কিন্তু রোদের বলা কথাটা খুব ভালো লাগলো ইতির। হয়ত প্রশংসা করলেও এতোটা ভালো লাগত না।

রোদ খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলো। বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরাল। সিগারেটে টান দিতে দিতে ভাবছে,
-আমি কি ওর মোহে পরে যাচ্ছি? কিন্তু এমনটা তো হবার কথা নয়। আমি তো ওকে বিয়েটা এমনি এমনি করিনি। সংসার করার জন্য তো নয়ই তাহলে কেনো এমন হচ্ছে। আমি কেনো ওর সাথে এতোটা স্বাভাবিক আছি।

রুমে এসে রোদকে না দেখে ইতি খুজতে থাকে তাকে। গেলো কোথায়? বারান্দায় গিয়ে দেখে সিগারেট টানছে মাহশয়। রোদকে সিগারেট টানতে দেখে মুখ দিয়ে হুট করেই বেরিয়ে এলো,
-আপনি সিগারেট খান?
– হুম, কেনো?
-উহু,, কিছু না।
বলে চলে আসল ইতি সেখান থেকে। রোদ পিছন থেকে ডাকে বলল,
– প্রবলেম না থাকলে একটু থাকবে?
– আমার প্রবলেম নেই থাকতে কিন্তু
– কিন্তু?
– আমার সিগারেটে প্রবলেম হয়। সহ্য হয় না আমার এলার্জি আছে।

ইতি কথাটা বলার সাথে সাথে রোদ হাতের সিগারেটটা ফেলে দিলো। কেন করল এমন তা সে নিজেও জানে না৷ শুধু ইতির অসুবিধা হয় তা শুনে কেমন যেন লাগল। ইতি বলল,
– একটা কথার উত্তর দিবেন প্লিজ?
– বলো।
– কেনো করলেন আমায় বিয়ে?
– শুনো তাহলে….. তোমাকে ভালোবেসে বা পছন্দ করে সংসার করার জন্য বিয়ে করিনি আমি তোমাকে।
– তাহলে?
– আমাদের সম্পত্তি নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছিলো। এটা না যে আমার সম্পত্তির প্রতি অনেক মহো কিন্তু অনেক কষ্টে এতো কিছু ধরে রেখেছি আমরা। বিশেষ করে আমি তাই চাইনা আমারই ভাই বোনেরা বেঈমানি করে সব নিয়ে যাক। ওরা হয়ত বললে আমি এমনি দিয়ে দিতাম কিন্তু তা নয়। ওরা ওদের পন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলো আমাকে এতে ওদেরই দলভারী থাকতো। কারণ নিয়ম অনুযায়ী আমার বউই হবে আমার সম্পত্তির লিগেল সেয়ার হোল্ডার। আর তা বুঝতে পেরেই আমি সরে যাই। আর তখন কি করবো বুঝতে পারিনি। তোমাকে আমি ওভাবেও বিয়েটা করতে চাইনি।
– কিন্তু আমি কেনো?
– তোমার কাজের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য সব কিছু দেখে আমার মনে হয়েছে সব শুনলে তুমি আমায় না করবে না। তাই….আমি তোমায় আগে সব বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরিস্থিতি
– বললেন না কেনো আমি যদি রাজি না হই এজন্য?
– সুযোগটা পাইনি। ওদিন আমার জন্য একটা মেয়ে দেখতে যাবার কথাছিলো। ভাবীর এক কাজিন হয়। ওদের প্লেন ছিলো দেখতে যাবার নাম করেই বিয়েটা দিয়ে দিবে। তার আগেই আমি সবটা জেনে যাই আর তখন তোমাকে এতো কিছু বলার সময়ছিলো না। তাই….

ইতি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। কি বলবে বুঝতে পারছিল না। রোদ বলল,
– হয়ত ভাবছো আমি নিজের স্বার্থের জন্য তোমার সাথে এমন করলাম।
– আগে বললে হয়ত অন্য কোনো রাস্তা বের করা যেতো। হয়ত বিয়েটা করা লাগতো না।
– আমি অনেক ভেবেছি বিয়ে করা ছাড়া কোনো পথই ছিলো না। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না। তোমার জীবন নষ্ট হবে না।
ইতি জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকাল। রোদ ইতির দিকে তাকিয়ে হালকা একটা হাসি দিয়ে বলল,
– শুধু একটা বছর। সব পেপার ঠিক হয়ে গেলেই আমি তোমাকে মুক্ত করে দিবো।

রোদের মুখে মুক্ত করে দিবে কথাটা শুনে ইতির বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। কিন্তু কিছু বলল না চুপ করে দাড়িয়ে রইল। রোদ বলল,
– অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পরো। কাল আমরা উকিলের কাছে যাবো।
.
.
চলবে…….
.
.
.
#বস_বর
Part-6
Writer : Eti Chowdhury
.
রোদের মুখে মুক্ত করে দিবে কথাটা শুনে ইতির বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। কিন্তু কিছু বলল না চুপ করে দাড়িয়ে রইল। রোদ বলল,
– অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পরো। কাল আমরা উকিলের কাছে যাবো।

সকালে,

রোদের ঘুম ভাংতেই দেখে মেয়েটা তার হাতে মাথা দিয়ে রোদের সাথে লেগে শুয়ে আছে। রোদের নিঃশ্বাসে ওর চুল গুলো উড়ে গিয়ে ওর চোখের উপর পরছে। এতো মায়া রোদের ইচ্ছে হয় এভাবেই তাকিয়ে থাক সে। ইতি হালকা নড়ে উঠলো। নিজেকে এভাবে রোদের বাহু ডোরে দেখলে হয়ত লজ্জা পাবে। তাই রোদ ইতিকে সরিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে উঠে গেলো।

ইতির ঘুম ভাংতেই দেখে রোদ অলরেডি রেডি হয়ে গেছে। তাই ইতি নিজেও ফ্রেস হয়ে বের হতেই দেখে রোদ কি যেনো খুঁজছেন। রোদকে কিছু খুঁজতে দেখে ইতি পিছন থেকে বলে,
– Sorry
– কেনো?
– আমার জন্য দেরি হয়ে গেলো।
রোদ মৃদু হেসে মনে মনে নিশু স্বে বলল,
– পাগল।
– কি বললেন?
– কিছু না, চলো যাই।
রোদ ড্রাইভ করছেইতির দৃষ্টি শুধু রোদের দিকে যাচ্ছে। রোদকে ব্লু সুটটায় যে কি লাগছে। বলার মতো নয়৷ রোদ ড্রাইভ করতে করতেই বলে,
– এভাবে তাকিয়ে থেকো না একসিডেন্ট হয়ে যাবে।
ইসস….কি লজ্জা কি লজ্জা রোদ দেখে ফেলেছে ইতি ওকেই দেখছিলো। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে মেয়েটা। ইতি মনে মনে ভাবছে গাড়ি তো সে চালাচ্ছেন আর আমি তাকে দেখছি তাহলে একসিডেন্ট হবে কিভাবে? তাহলে কি সে নিজেও আমাকে দেখছেন নাহলে বুঝল কিভাবে?…..কথাটা ভাবতেই মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
রোদ গাড়ি চালাচ্ছে আর মনে মনে রাগ হচ্ছে। এমনি সব সময় মেয়েটা চুল বেধে রাখে আজ কে বলল খুলে রাখতে। ওই খোলা চুল দেখে যে চোখ ফেরাতে পারছো না। মনে মনে রোদও ইতিকে নিয়েই ভাবছে।
দুইজনই চুপচাপ পাশাপাশি বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। নিরবতা ভেঙে ইতি বলে,
– একটা কথা জিঙ্গেস করি?
– হুম
– আপনি জানলেন কিভাবে যে আপনার ফ্যামিলি আপনার বিরুদ্ধে প্লেন করছে।
– চলো আগে বলছি।

গাড়ি লইয়ারের অফিসে চলে এলো।
লইয়ার আঙ্কেল রোদকে দেখে বলেন,
– আরে রোদ যে? কেমন আছো?
– জি আঙ্কেল ভালে আপনি কেমন আছেন?
– ভালো বাবা তা উনি কি আমার মামনি নানি?
লইয়ার আঙ্কেল ইতিকে দেখে জানতে চাইলেন এটাই কি রোদের বউ কিনা৷ আর রোদকে বিয়ে করার আইডিয়াটাও উনিই দিয়েছিলেন। রোদ বলে,
– জি আঙ্কেল ও ইতি আপনার বউ মা।
রোদ ইতিকে ইশারা দিলো সে যেন লইয়ার আঙ্কেলকে সালাম করে। রোদের ইশারা বুঝতে পেরে ইতি তাই করল।
– আরে একি করছো মামনি??
আঙ্কেল ইতিকে বাধা দিতে নিলে রোদ বলে,
– থাক না আঙ্কেল বাবা-মা বেঁচে থাকলে তো ইনাদের দোয়াও নিতো আর আপনি তো আমার জন্য কোন অংশে কম নন।
ইতি রোদকে যত দেখছে কেবল অবাকই হচ্ছে।
রোদ বলে,
– ইতি তুমি জানতে চেয়ে ছিলে না কিভাবে জানলাম সব কিছু। এই যে সেই মানুষটা আঙ্কেল কে দেখছো উনি কেবল আমার লইয়ার ই না উনি আমার বাবার বন্ধু। বাবা-মা মারা যাবার পর উনি সবসময় আমাদের খবর রেখেছেন। আঙ্কেক ই বুঝতে পারেন সবটা। যে আমার পিছনে আমার আপন জনেরা আমার খারাপ চাইছে। উনিই আমাকে জানান আমার পিছনে কি কি হচ্ছিলো। আর বিয়ে ছাড়া যে কোনো রাস্তা নেই তা আঙ্কেলই বলেছিলো আমাকে।
– হুম আমার কথাতেই রোদ বিয়েটা করে।
ইতি বলে,
– তাহলে এখন কি করতে হবে।
– এখন ওদের ফ্যামিলি নিয়ম অনুযায়ী ওর সম্পত্তির লিগেল সেয়ার হোল্ডার হবে তুমি। আর তোমার পারমিশন ছাড়া রোদ একা কোন কিছুই করতে পারবে না।
– আমি?
বলেই একবার রোদের দিকে তাকাল ইতি আর একবার আঙ্কেলের দিকে। রোদ বলে,
– হুম
– কোন রাস্তা নেই উনার সম্পত্তি কেবল উনারই থাক।
– আছে। তুমি যদি লিখে দাও তাহলে সম্ভব।
– ওকে তাহলে আমি এখনি লিখে দিচ্ছি।
– এখন তা সম্ভব না।
– কেনো?
– এক বছর সময় লাগবে। এক বছর একসাথে থেকে তারপর এটা সম্ভব।
– এক বছর?
– হুম
– ওহ।
রোদ বলে,
– ঠিক আছে তাহলে এভাবেই হোক। আঙ্কেল আজ আমরা আসি।
– রোদ শুনো?
– জ্বি
– আগামী শুক্রবার আমার বাসায় তোমাদের দাওয়াত আমি কোন না শুনবো না তোমরা আছো।
– ওকে আঙ্কেল।

অফিসে,

অফিসে এতো কাজ যে ইতির দম নেয়ার সময় নেই। অফিস টাইমও শেষ। বের হয়ে গেলো ইতি। কিছুটা পথ যেতেই দেখে রোদ গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রোদকে দেখে সামনে এগিয়ে গিয়ে ইতি জিজ্ঞেস করে,
– আপনি এখানে?
– তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। এসো।
ইতির আজ অনেক ক্লান্ত লাগছিলো তাই কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে গেলো সে। মনের মধ্যেও কেমন যেনো অস্থিরতা কাজ করছিলো। আর এখানে তো অফিসের কেউ নেই যে দেখবে। তাই আর কথা বাড়ালো না।
রোদ লক্ষ করেছে আঙ্কেলের ওখান থেকে আসার পর থেকেই কেমন চুপচাপ হয়ে রয়েছে মেয়েটা কিন্তু কেনো। ইতি নিজেও জানেনা মনটা তার ভিষন উদাস আজ। কিন্তু এই উদাসীনতার কার সে নিজেও জানে না।
ইতি বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে বারান্দায় বসে আছে। রোদের বলা কথাটা মনে পর ইতির তার মানে রোদ আগে থেকেই জানতেন এক বছর লাগবে। তাই বলেছিলেন একবছর পর আমাকে মুক্ত করে দিবেন আর এই এক বছর উনার সাথেই থাকতে হবে। নাহ এসব ভাবতে ভালো লাগছে না ইতির৷ তার কেনো এতো অস্থির লাগছে এসব ভেবে। ইতি বসে বসে মনে মনে এসবই ভাবছিলো আর তখনি পিছনে কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পেয়ে পিছনে ঘুড়েই দেখে রোদ।
ইতিকে এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
– তোমার কি কিছু হয়েছে?
– নাহ তো।
– খাবে না?
– আমার ক্ষিদে নেই আপনি খেয়ে নিন।
– মন খারাপ?
ইতি রোদের কথার আর কোনো জবাব দিতে পারল না পিছনে ফিরে আবার রকিং চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে রইল। ইতি মুখে রোদকে জবাব দিতে পারেনি ঠিকি কিন্তু মনে মনে বলল, আমার মনটা ভিষন খারাপ।
রোদ বুঝতে পারছে না কেনো মেয়েটার মন খারাপ কিন্তু ওর মন খারাপ থাকাটা যে রোদ নিতে পারছে না। তার নিজেও অনেক খারাপ লাগছে। কিছু একটা করা লাগবে ভাবতেই রোদ আইডিয়া পেয়ে গেলো সে কি করবে।

হঠ্যাৎ গিটারের আওয়াজ। রোদ ইতিকে অবাক করে দিয়ে গিটার বাজাতে বাজাতে ইতির সামনে বারান্দার রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো। রোদ একটা গান ধরল।
রোদ ইতির দিকে একবার তাকিয়ে অন্য দিকে ফিরে গান শুরু করল,

আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে
তুমি আনমনে বসে আছো
আকাশ পানে দৃষ্টি উদাস
আমি তোমার জন্য এনে দেব মেঘ থেকে বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি হাওয়া
সেই হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি
সেই হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি

আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে
তুমি আনমনে বসে আছো
আকাশ পানে দৃষ্টি উদাস
আমি তোমার জন্য এনে দেব
মেঘ থেকে বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি হাওয়া
সেই হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি
সেই হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি

আজ তোমার চোখের কোণে জল
বৃষ্টিও অবিরাম কাঁদে
তোমার সাথে সাথে আমার পথে পথে
আমি তোমার জন্য এনে দেব
রোদেলা সে পাখিকে করে দেব তোমার আপনজন
পরী তুমি ভাসবে মেঘের ভাঁজে
পরী তুমি ভাসবে মেঘের ভাঁজে

আজ তোমার জোসনা হারায় আলো
প্রজাপতির ডানায় বিষাদ করে ভর
যখন তখন বিষাদ করে ভর
আজ তোমার জোসনা হারায় আলো
প্রজাপতির ডানায় বিষাদ করে ভর
যখন তখন বিষাদ করে ভর
আমি তোমার জন্য এনে দেব
অঝর শ্রাবণ আকাশ ছোয়া জল জোসনা
পরী তুমি ভাসবে মেঘের ভাঁজে
পরী তুমি ভাসবে মেঘের ভাঁজে

আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে
তুমি আনমনে বসে আছো
আকাশ পানে দৃষ্টি উদাস
আমি তোমার জন্য এনে দেব
মেঘ থেকে বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি হাওয়া
সেই হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি
সেই হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি

রোদ গান শেষ করে গিটারের তারে শেষ টানটা দিয়ে ইতির দিকে তাকালো।
রোদের গানের সাথে পালা দিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। গান আর বৃষ্টি ইতির জীবনের সবচাইতে প্রিয় দুটি জিনিস। তাও ইতি জানে না কেনো তার চোখের কোণে এক ফোঁটা জল চলে এলো। হয়ত এটাকেই আনন্দ অশ্রু বলে আবার হয়ত না। রোদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো ইতি।

পরেরদিন সকালে,

ইতি আজ একটু যলদি উঠলো। নাস্তা রেডি করে নিজেদের জন্য লাঞ্চ রেডি করে নিলো। রোদ উঠে এসে পিছন থেকে বলে,
– গুড মর্নিং
– আপনি উঠে গেছেন? নাস্তা রেডি।
– আমি নাস্তা বাইরে করে নিবো। আমার একটা মিটিং আছে। ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তোমাকে অফিসে দিয়ে আসবে।
রোদ না খেয়েই চলে গেলো। একবার দেখলোও না। ইতি তার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছিলো আজ তার জন্য ধন্যবাদ হিসেবে আগের রাতে ইতির মনটা ভালো করে দেয়ার জন্য কিন্তু ইতি আবার হেসে দিলো ভেবে এখন খায়নি তো কি হয়েছে লাঞ্চে খাবে।
রোদের নিজেরও খারাপ লাগছে এভাবে কষ্টটা না দিলেও পারত সে। মেয়েটা কষ্ট করে রান্না করল কিন্তু কি করবে রোদ ওর সাথে যে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তার।

ইতি অফিসে চলে গেলো। ইতিকে দেখে রাফসান এগিয়ে আসে,
– হ্যালো
– আরে তুমি কবে এলে? তোমার বোনের বিয়ে কেমন হলো?
– গতকাল রাতে এসেছি। আপুর বিয়েটা ভালোই হয়েছে। আপু অনেক চেয়ে ছিলো তুমি যাও।
– কি করবো বলো তুমি নেই আমিও যদি না থাকতাম তাহলে কিভাবে হতো। ডিল গুলোও তো আটকে যেতো।
– হ্যাঁ তা ঠিক বলেছো তাই তো আসতে না আসতেই বস নতুন কাজ ধরিয়ে দিলেন।
– বস মানে? বস কখন কাজ দিলেন?
– এইতো তুমি আসার আগে।
– তুমি এমডি স্যারের কথা বলছো?
– হ্যাঁ নয় তো আর কে।
– উনি অফিসে?
– হ্যাঁ অফিসে থাকবে না তো কোথায় থাকবেন। আমি যাই কাজ করি পরে কথা হবে।

ইতি নিজের কেবিনে গিয়ে রিমিকে ডাকল,
– আসবো মেম?
– এডমি স্যারের আজ সকালে বাইরে কোনো মিটিং ছিলো?
– নাহ তো মেম।
– আচ্ছা তুমি যাও। তার মানে উনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন। কিন্তু কেনো?
ইতি নিজের চেয়ারটায় বসে পরলো।

রোদ নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে ইতিকেই দেখছে আর নিজের সাথে কথা বলছে,
– মেয়েটা কাজ করেই যাচ্ছে কেউ দেখলেও বলতে পারবে না এই মেয়েটা কোম্পানীর এডমির বউ।
বউ শব্দটা বলেই রোদ হেসে দেয়। অধিকার এই একটা শব্দের মাঝে।
রাফসান ইতির কেবিনে এসে বলে,
– এই যে মেম কতো কাজ করবেন লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে। খাবে না?
– হ্যাঁ তুমি যাও আমি আসছি।
তখন রিমি এসে বলে,
– রাফসান স্যার মেম আমাদের সাথে আর খাবেন না।
– কেনো রিমি?
– মেম ইদানিং এমডি স্যারের সাথে লাঞ্চ করেন।
– তাই নাকি অফিসে এতো কিছু চলছে আর আমি কিছুই জানি না।
ইতি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
– কিছুই চলছে না। যাও আমি আসছি।
ওদের পাঠিয়ে দিয়ে ইতি রোদের জন্য লাঞ্চ নিয়ে গেলো তার কেবিনে। কেবিনের দরজায় নক করে বলে,
– আসবো?
– এসো।
ইতি রোদের জন্য আনা খাবারটা দিয়ে দিলো। খাবার দেখে রোদ জিজ্ঞেস করে,
– এসব কি??
– লাঞ্চ
– আমি কি তোমাকে বলেছি লাঞ্চ দিতে? নাকি বউ হবার চেষ্টা করছো? কোনটা?
এটা কি বলল রোদ। ইতি যেন আকাশ থেকে পরল। তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
– না মানে আসলে….
– আর আসলে আসলে করতে হবে না। আমি এসব আদিখ্যেতা একদম পছন্দ করি না। আর হ্যাঁ একদম আমার বউ হবার চেষ্টা করবে না। তুমি আসতে পারো এখন।
ইতি আর কিছুই বলক না সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। রোদ পিছন থেকে ডাকলো,
– ইতি
ইতি থেমে গেলে রোদ বলে,
– যাবার সময় ডোরটা ভালোভাবে লক করে দিয়ে যেও।
ইতি- আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করল না। দৌড়ে পালিয়ে গেলো রোদের সামনে থেকে। রোদ এভাবে অপমান করল মেয়েটাকে।
.
.
.
চলবে……..

আগের লেখা ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। <3

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here