বাগান বিলাস পর্ব -০৩

#বাগান_বিলাস
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃতিন [কলংক]

–“কি হলো, বিহান তুমি এত রাতে আমার ঘরে ?”

–” আস্তে, আস্তে ভাবী! এত কথা বলছো কেন? এত জোরে কথা বললে সবাই কি ভাববে? ভাই নেই এখন যদি তুমি এত রাতে চিৎকার চেচামেচি করো মানুষ কি ভাববে?
আর তাছাড়া নিজের দেবরের সঙ্গে এক রুমে!”

–” কি বলতে চাইছো তুমি?”

–” ভাবী তুমি এখনো বুঝতে পারছো না? আচ্ছা বুঝিয়ে দেই তোমাকে। ভাইয়া মারা গিয়েছে আজ কয় বছর?
একবছর হলো এই এক বছরে এমন নয়তো তুমি বিয়ে করেছো আর না কারোর সঙ্গে নিজের কথা শেয়ার করেছো। যারা ছিল তাদের মধ‍্যে একাংশ ছিল অফিস কলিগ। আচ্ছা তোমার ইচ্ছে হয় না কখনো কোন সঙ্গীর?
আইমিন, কিছু, উফফ ভাবী তুমি এত বোকা।

স্মৃতির কানের কাছে এসে বিহান এমন কিছু কথা বলল।
স্মৃতি আর চুপ থাকতে পারল না বিহানের গালে একটা চড় মেরেদিল সে। রাগে থরথর কাপঁতে লাগল সে।

–” তুমি এত নিচ বিহান? এত নিচ? তোমার ভাইয়ের স্ত্রী আমি। আমি তোমার ভাবী হই, আমাকে নিয়ে তুমি এই ধরণের কুৎসিত চিন্তাভাবনা করতে পারলে?
তোমার একবার ও হৃদয় কাপলো না? আচ্ছা তোমাকে তো আমি ভাই ভেবেছিলাম?”

–” আরে রাখ তোর ভাই, তোর চরিত্র যে কত ফুলের মত পবিত্র জানা আছে। কি ভাবছোস? জানিনা আমি?
ঐ হারামজাদা শৌখিনের সঙ্গে তোর সম্পর্ক ছিল না?
বলমু আমি সবাইরে? দাড়া আমি আজ তোর সবকিছু জানামু!”

বিহান স্মৃতির দরজা খুলে ধরাম করে বারি দিয়ে চলেগেল। আর স্মৃতি ধপ করে বসে পরল খাটে বিছানার পাশে শুয়ে থাকা বর্ষা জেগে গিয়েছে ততক্ষণে। স্মৃতির কাছে ভয়ে সে লেপ্টে গিয়েছে। স্মৃতি মেয়েকে বুকে টেনে নিল। এখনও ঘোর কাটেনি তার, এ কেমন জীবন তার?
কেন এসব হচ্ছে তার সাথে?”
__________________________

সুপ্তির বাবা নিয়াজ হোসেন মেয়েকে প্রশ্ন করে চেয়ে রইলেন। কিন্তু সুপ্তি একটা কথা ও বলল না। চুপ করে সে বসে রইল। ব‍্যাংকার নিয়াজ সাহেব এমনিতেই ক্লান্ত ছিলেন। মেয়ের কি মান ভাঙ্গাবেন, মেয়েকে কাছে টেনে বুকের কাছে নিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তিনি নিজেই ঘুমিয়েগেছেন সুপ্তির রাগ ভাঙ্গাতে এসে তার বাবা নিজেই সুপ্তির বিছানায় সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরেছে। সুপ্তি বাবার বুকে মাথা রেখে আছে। বাবার দিকে একবার মুখ তুলে চেয়ে আবার বুকের উপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরল সে। আজ আর মায়ের সামনে যায়নি সে। মায়ের উপর রাগটা তার খুব, বারবার মা তাকে বাধা দেয়। আর সে মায়ের কাছে যাবেনা। কখনো যাবেনা!”

এদিকে বিহান নিজের মত করে স্মৃতির নামে যত কথা সব তার মা রোজিনার কাছে সাজিয়ে বলতে লাগল।
রোজিনা বেগমের স্মৃতির প্রতি চাপা রাগছিল বহু আগে।
বর্ষণের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে যে রাগছিল তা কিছুটা কমলেও।
বর্ষণ মারা যাওয়ার পর তার রাগ আরও বেড়ে গিয়েছিল।
আর এখন তো বিহান আরও বেশি বাড়িয়ে দিল।
রোজিনা বেগম এগুলো শুনে যেন একদম তেতেঁ উঠেছেন।

স্মৃতি বর্ষাকে বুকে নিয়ে ঘুম পারানোর চেষ্টা করছে। ঘুম আসছেনা মেয়েটার। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে বর্ষা।
স্মৃতি বর্ষাকে বিছানায় শুইয়ে দরজা বন্ধ করতে গেলেই।

কোথা থেকে শাশুড়ি মা এসে পরলেন। স্মৃতির গাল ধরে ঠাস! ঠাস করে চড় দিয়ে দিলেন। ধুম ধুম করে দুটো কিল বসিয়ে দিলেন স্মৃতির পিঠে। স্মৃতি যেন অবাক হয়েগেল হঠাৎ এমন আক্রমণে কি হয়েছে। কেন হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। বশির সাহেব মারের শব্দ পেয়ে এসে স্মৃতিকে সরিয়ে দিতে চাইলেন। ছোট্ট বর্ষা বিছানায় বসে মায়ের উপর হওয়া নির্যাতন দেখে হেঁচকি দিয়ে কাদছে।

–” ছাড়ো, হাত ছাড়ো, ছি! ছি! গলায় দড়ি দিয়া মরতে পারোস না? কালনাগিনী! তোর শরীরে বিষ বেশী?
ঐ *** বাহির হও, তুই আমার ছেলেরে শেষ করছোস।
তুই এখন আমার এই ছেলেরে ও তুই ধরার চেষ্টা করতাছোস? বেশ** করতে গেলে বাহিরে কর আমার ঘরে কি?”

রোজিনা বেগমের মার খেয়েই পরে আছে স্মৃতি। একটা উত্তর ও সে দেয়নি। চুপ করে মুখ বুজেই সব আঘাত নিরবে সয়েগেল সে। রোজিনা বেগম স্মৃতির চুলের মুঠি ধরে ঘরের দরজার সামনে নিয়ে এসে বললেন-

–” অনেক সহ‍্য করছি, আর করবোনা, বাহির হয়ে যা।
এতদিন আমি মুখ বুজে সহ‍্য করছি শুধু ছেলের কথা চিন্তা করে। আর স্মামীর কথা শুনে, আজ থেকে তো আমি সহ‍্য করবত না। এমন কালনাগিনী আমি ঘরে রাখবো না!”
প্রতিবেশিরা স্মৃতিকে ধরতে এলে রোজিনা বেগম তাদের কতগুলো কথা শুনিয়ে দেন। আর স্মৃতির চরিত্রের দোষ আছে বলেদেন। স্মৃতির শশুর কিছু বলতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে রোজিনা বেগম তাকে তার ছোটছেলের সঙ্গে স্মৃতির অবৈধ সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা তিনি বলেদেন। সবাই স্মৃতিকে দিক্কার দিতে লাগল। স্মৃতি কি বলবে? কে তার হয়ে এই সমস‍্যার সমাধান করবে? কে এই কালিমা থেকে তাকে বাচাবে? স্মৃতি বর্ষাকে নিতে চাইলে রোজিনা বেগম স্মৃতির কাছে বর্ষাকে দিলেন না। বর্ষার কেদেঁ কেদেঁ মায়ের কাছে আসতে চাইছে, তাও তিনি দিলেন না।

রাত ১২:০০ বেজে গেছে। কুকুর বেড়ালের ও একটা যাওয়ার জায়গা থাকে স্মৃতির নেই! বাবা মার কাছে সে কিভাবে যাবে? মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন সুখের জন‍্য।
সেই মেয়ের কুকির্তী যদি রাত বিরাতে শুনতে হয় তাহলে তাদের মানসম্মান ধুলোয় মিশে যাবে। স্মৃতির পা চলছে না, বুকের মানিকটাকে ও হাতের কাছে পেল না। আচ্ছা বিধাতা কি সব সময় অসহায় মানুষদের উপরই এমন কষ্ট দেয়?” স্মৃতি মনেমনে আবার বলে উঠলো-

–” না না, বিধাতার দোষ দিচ্ছি কেন? আমারই দোষ আমিই মনে হয় উপরওয়ালার কাছে কিছু চেয়ে আসিনি।”

ক্লান্ত স্মৃতি হাটতে পারল না আর খুব কষ্ট করে অনেক ভেবে সে তার ছোটভাইকে ফোন করে জানালো তাকে যেন নিয়ে যায় রাস্তা থেকে। প্রায় আধঘন্টা পর নাঈম তার বাইক নিয়ে এসে দেখে স্মৃতি মাঝরাস্তায় টলতে টলতে হাটছে। নাঈম স্মৃতির কাছে এসে দাড়িয়ে বলল এত রাতে সে একা এই রাস্তায় কেন? প্রতিউত্তরে স্মৃতি কিছুই বলল না। ছোট ভাইয়ের বাইকে করে স্মৃতি তার বাবার বাড়িতে চলে এলো।

স্মৃতির বাবা-মা কেউই স্মৃতিকে এত রাতে আশা করেনি।
স্মৃতি তাদের উত্তর না দিয়ে নিজের পুরোনো রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। ভিষণ খারাপ লাগছে তার।
ঘোলা ঘোলা চোখ নিয়ে সে আর দাড়াতে পারল না ঠাস করে সেখানেই ফ্লোরে পরেগেল!

স্মৃতির বাবা-মা আর ভাই মিলে স্মৃতির রুমে গিয়ে দেখল স্মৃতি ফ্লোরে সেন্সলেস হয়ে পরে রয়েছে। স্মৃতির শশুর বাড়িতে ফোন করে তারা এই বিষয়ে স্মৃতির বাবা কিছু জানতে চাইলে রোজিনা বেগম বলে উঠলেন –

–” ও মরেগেছে? মরে তো আর যায়নি, এমন মেয়ে জন্ম দিয়েছেন। মরে গেলেই তো বাচবেন। ”

–” বেয়ান কি সমস‍্যা হইছে? আপনি অসুন্তষ্ট হয়েছেন রেগে আছেন তা আপনার কথায় বেশ বুঝতে পারছি।
কিন্তু কেন রেগে আছেন তা অন্তত বলবেন!”

–” ও শুনেন নাই? কিছুই বলেনি আপনাকে? তাহলে শুনেন আপনার মেয়েকে আমি আমার বাড়িতে আর রাখব না। আপনার মেয়ে একটা চরিত্রহীনা। সে আমার ছোটছেলের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিল।
আমার ছেলে এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি বলে সে আমার ছেলেকে ভয় দেখিয়েছে আমার ছেলেকে সে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে। তাই আমি নিজেই এর বিহিত করলাম ওকে আমার বাড়ী থেকে বের করে দিলাম। লাগবে না আমার এমন চরিত্রহীন বউয়ের। আমার নাতনি আমার কাছে থাকবে। আপনারা আপনাদের মেয়েকে রেখে দিন।”

স্মৃতির বাবা এসব কথা আর সহ‍্য করতে পারছেন না। মেয়ের শশুর বাড়ি থেকে এই ধরনের কথা কোন বাবাই মনে হয় শুনতে চায় না। তিনি হঠাৎ বুক চেপে ধরে বসে পরলেন। তিব্র ব‍্যাথায় তার বুকটা ভারী হয়েগেল।
_____________________________

লাশের খাটিয়া ধরে আছে শৌখিন। যে মানুষটাকে সে ভালোবাসত সে মানুষটা তার হলো না। কোন আফসোস হয়নি তার কিন্তু এই মানুষটা আবার এভাবে চলে যাবেন তা ভাবেনি সে। মানুষ মারাগেলে বাড়ীগুলো এমন ভয়ানক রুপ ধারণ করে যে তখন শরীর খুব হিম হয়ে যায়।
প্রতেকের দিকে একবার তাকিয়ে সে স্মৃতির ভাইয়ের দিকে তাকালো ছেলেটার বয়সই বা কত? এতটুকু ছেলেটা কিনা এখন আপন মানুষ হারানোর শোকে কাতরাচ্ছে।

চলবে।
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here