বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব -৩৩+৩৪

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩৩
_________________

একটা বড় রেস্টুরেন্টের জানালার পাশ দিয়ে পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে আহি আর আদ্রিয়ান। কিছুক্ষন আগেই আদ্রিয়ান গাড়ি করে এখানে নিয়ে আসে আহিকে। আহি প্রথমে ভাবে নি আদ্রিয়ান তাঁকে এখানে নিয়ে আসবে। শুরুতে সে যেতে চায় নি কিন্তু পড়ে আদ্রিয়ানের জোরাজোরিতে আসতে হয় তাঁকে। আহির বাহিরের খাবার খুব একটা পছন্দ নয় এমনটা নয় সে একেবারেই পছন্দ করে না। করে অল্প স্বল্প। আদ্রিয়ান আহির দিকে মেনুকাটটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ কি খাবে বলো?’

আহি মেনুকাটের সব খাবারগুলো দেখলো সাথে খাবারের দামও দেখলো। খাবারের দাম দেখে তাঁর চোখ চড়ুইগাছ কারন এক একটা খাবারের দাম প্রায় ২ থেকে ৪ হাজারের উপরে। আহি দাম দেখেই বললো,

‘ এগুলোর তো অনেক দাম আমি এগুলো খাবো না।’

‘ আরে তুমি দাম দেখছো কেন খাবার কোনগুলো খাবে সেটা বলো?’

আহি মেনুকাটে আর একবার চোখ বুলিয়ে মেনুকাটটা আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

‘ না না আমি এসব খাবো না।’

আহির কাজে আদ্রিয়ান কিছুটা হতাশ হয়ে বললো,

‘ আরে তুমি এমন করছো কেন আচ্ছা তোমায় অর্ডার করতে হবে না আমি অর্ডার করে দিচ্ছি?’

বলেই কিছু ভালো ভালো খাবার অর্ডার করলো আদ্রিয়ান। ওয়েটারও আদ্রিয়ানের কথা মতো চলে যায় খাবার আনতে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওয়েটার সব খাবারগুলো এনে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।’

আহি এওতো এওতো খাবার দেখে চোখ বড় বড় করে বলে উঠল,

‘ এত খাবার কে খাবে?’

‘ কেন তুমি?’

‘ আপনার কি আমাকে রাক্ষস মনে হয় যে এতোগুলা খাবার আমি খাবো।’

‘ আগে শুরু তো করো।’

এতটুকু বলে আদ্রিয়ান নিজের খাবার দেখে নিলো। শুরুতে সফট ড্রিংকস দিয়ে শুরু করলো দুজন। তারপর এঁকে এঁকে সব খাবারগুলো খেতে লাগলো আহি আর আদ্রিয়ান। আহি দুই তিনপদ খেয়েই আর পারছে না কারন খাবারগুলো খুব একটা পছন্দ হয় নি তাঁর। যেহেতু আদ্রিয়ান এসব খেতে অভ্যস্ত তাই খুব একটা সমস্যা হয় নি তাঁর।’

অতঃপর খাবার খেয়ে রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে দুজনেই বেরিয়ে পড়লো। রেস্টুরেন্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান আর আহি। আহির মুখে তেমন কোনো কথা নেই। আদ্রিয়ান আহির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি হলো মুড অফ হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন খাবার পছন্দ হয় নি?’

‘ না বিষয়টা তেমন নয় এতগুলো টাকা খরচ করার কি ছিল তাঁর চেয়ে আমাদের ওখানে শাফিন চাচার হাজী বিরিয়ানি খেলেও ভালো হতো অল্প দামে অনেক পাওয়া যেত।’

‘ তোমার এত বড় দামি রেস্টুরেন্টের এতো এতো খাবার রেখে বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করলো এটা আগে বলবে তো এখানেও বিরিয়ানি পাওয়া যায় খাবে?’

‘ না এখানের খাবার ভালো লাগে নি, অন্য এক সময় আপনাকে আমাদের ওখানের শাফিন চাচার হাতে রান্না করা বিরিয়ানি খাওয়াবো। দেখবেন কি মজা?’

‘ ঠিক আছে কোনো এক সময় যাবো এখন বাড়ি যাবে তো রাত কিন্তু প্রায় এগারোটার কাছাকাছি বেজে গেছে।’ (হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে)

ঘড়ির টাইমের কথা শুনতেই আহি চোখ বড় বড় করে বললো,

‘ কি এগারোটা বেজে গেছে তাড়াতাড়ি চলুন আজ মা গায়ে ঝাড়ু ভাংবে আমার।’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে বললো,

‘ তাই?’

‘ তাই নয়তো কি আপনি জানেন না আমার মা কতটা ডেঞ্জারাস এমনিতেও রাত করে হসপিটাল থাকি বলেও তাঁর হাজার সমস্যা চলুন চলুন তাড়াতাড়ি যাওয়া যাক।’

বলেই এই প্রকার দৌড়ে গাড়িতে বসলো আহি। আহির কাজে আদ্রিয়ানও আর বেশি কিছু না ভেবে হাসতে হাসতে চলে যায় গাড়ির কাছে তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললো তাঁরা নিজেদের গন্তব্যের দিকে।’

_____

হসপিটালের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে রিনি আর রিনির মা বাবা সাথে সোহানের কিছু ফ্রেন্ড। সবার চোখে মুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ,সোহানের মা তো অলরেডি কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে।’

কারন কিছুক্ষন আগেই বাসায় আসতে গিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করেছে সোহান। খুব গুরুতরভাবে মাথায় আর হাতে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে সে। খুব শীঘ্রই অপারেশন করতে না পারলে সোহানকে বাঁচানো যাবে না।’

এরই মধ্যে গায়ে কমলা রঙের টিশার্ট সাথে সাদা শার্ট পড়ে হতভম্ব হয়ে দ্রুত ভিতরে ঢুকলো শুভ। কারন কিছুক্ষন আগেই সে জেনেছে কেউ একজন বাইক এক্সিডেন্ট করে হসপিটালে ভর্তি হয়েছে আর এক ঘন্টার মধ্যেই তাঁকে অপারেশন করাতে হবে। শুভ হলো একজন ডাক্তার। ৬ মাসই হয়েছে সে এখানে জয়েন্ট হয়েছে।’

এদিকে এরই মধ্যে রিনি ওদের সামনে আসলো আর একজন সাদা এপ্রোন পরিধিত ডাক্তার। যিনি বর্তমানে সোহানকে দেখছেন। ওনাকে দেখেই রিনিসহ রিনির বাবা মা এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ কেমন আছে আমার ছেলে ডক্টর?’

‘ দেখুন ওনার সিচুয়েশন খুবই কিটিকাল, এই মুহূর্তে শুধু এতটুকুই বলতে পারি টেনশন নিবেন না আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই ওনাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হবে।’

ডাক্তারের কথা শুনে রিনির বাবা বলে উঠল,

‘ যত টাকার লাগবে নিন ডক্টর কিন্তু আমার ছেলেকে শুধু বাঁচিয়ে দিন?’

‘ দেখুন বাঁচা মরা সবই আল্লাহর হাতে আর ওনার যে অবস্থা তাতে বাঁচার চান্স খুবই কম, তবে টেনশন নিবেন না আমাদের এখানে সুযোগ্য একজন ডাক্তার আছে যিনি এইসব বিষয়ে খুবই ভালোভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে। আমরা ফোন করেছি ওনাকে কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়তো চলে আসবে..

বলতেই বলতেই সামনে দিক দিয়ে শুভকে নিজের দিকে আসতে দেখে বলে উঠলেন সেই ডাক্তার,

‘ ওই তো শুভ চলে এসেছে।’

‘শুভ’ নামটা কানে আসতেই কিছুটা অবাক হয়ে তাকালো রিনি সামনের ছেলেটির দিকে এই ডাক্তার শুভই ওই শুভ দেখেই চোখ ছানাবরা রিনির। ওই ভীতু মার্কা সহজ-সরল ছেলেটা একজন ডাক্তার। ভাবতেই কেমন লাগলো রিনির। আর সে কিনা সেদিন ভার্সিটি বসে এই ছেলেটার রাগের চোটে কলার চেপে ধরেছিল।’

রিনির ভাবনার মাঝেই শুভর সাথে কথা হয় রিনির বাবা মায়ের। শুভও বলে ফেলে,

‘ টেনশন নিবেন না আল্লাহ উপর ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।’

হঠাৎই শুভর চোখ যায় রিনির দিকে। এতক্ষণ সে খেয়াল করেনি রিনিকে। শুভ রিনিকে দেখে বলে উঠল,

‘ উনি,

শুভর কথা শুনে রিনির বাবা বলে উঠল,

‘ ও আমার ছোট মেয়ে মানে পেসেন্টের ছোট বোন।’

‘ ওহ।’

এতটুকু বলে শুভ চলে যায় ভিতরে তাঁকে তৈরি হতে হবে।’

অতঃপর কিছুক্ষনের মধ্যেই গায়ের পোশাক চেঞ্জ করে গায়ে ডাক্তারি পোশাক পড়ে হাতে মাস্ক নিয়ে বেরিয়ে আসলো শুভ। শুভকে দেখে জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রিনি তাঁর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না শুভ একজন ডাক্তার। তারপর কিছুক্ষনের মধ্যেই সোহানকে নিয়ে ঢোকা হলো অপারেশন থিয়েটারে। শুভ ভিতরে ঢোকার আগে একপলক রিনির দিকে তাকিয়ে চটজলদি মুখে মাস্ক পড়ে ঢুকে পড়লো ভিতরে। সবাই ঢুকতেই থিয়েটারের দরজা বন্ধ করে বাহিরের দেয়ালের উপরে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো লাল বাতি।’

খুব টেনশন মাখা মুখ আর অস্থিরতা নিয়েই বসে আছে সবাই। রিনিরও কান্না পাচ্ছে ভিষন, ভাইটার হুট করে এমন কিছু হবে ভাবতে পারে নি রিনি। ভাইয়ের সাথে কাটানো ছোটবেলার মুহূর্তগুলোর কথা বার বার মনে পড়ছে তাঁর। রিনি বসে থাকতে না পেরে উঠে চলে যায় অন্যদিকে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তাঁর।’

___

আহিদের বাড়ি সামনে এসে গাড়ি থামালো আদ্রিয়ান। আহিও হাসিমুখে আদ্রিয়ানকে বিদায় সাথে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যায় ভিতরে। আর আদ্রিয়ানও বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে চলে যায় তাঁর নিজের বাড়ির দিকে। আজ তাঁর ভীষণ ভালো লাগছে। ইদানীং আহির সাথে সময় কাটাতে ভীষণ ভালো লাগে আদ্রিয়ানের। আনমনেই মুচকি হেঁসে বললো আদ্রিয়ান,

‘ আমি কি তবে আহিকে পছন্দ করতে শুরু করেছি?’

কথাটা মাথায় আসতেই কেমন একটু লাগলো আদ্রিয়ানের। নিজের কথা শুনে নিজেই যেন অবাক আদ্রিয়ান। পরক্ষণেই নিজের মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ ধুর! কিসব উল্টো পাল্টা জিনিস ভাবছি আমি?’

বলেই আহিকে নিয়ে আর কিছু না ভেবে চললো আদ্রিয়ান গাড়ি নিয়ে।’

অন্যদিকে,

বাড়ির কলিং বাজাতেই আহির ফোনটা বেজে উঠল উপরে রিনির নাম্বার দেখে ফোনটা তুলে বললো আহি,

‘ হুম বল?’

উওরে অপরপাশে রিনির কান্না ভেঁজা কন্ঠের কথা শুনে থমকে গেল আহি। আহি হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ তুই টেনশন করিস না আমি এক্ষুনি আসছি?’

এরই মধ্যে আহির মা এসে দরজা খুলে দিল আহিকে কিছু বলবে তাঁর আগেই আহি বলে উঠল,

‘ তোমার কথা পড়ে শুনবো মা, সোহান ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।’

‘ কি করে হলো?

‘ তোমায় সব পড়ে বলবো মা।’

বলেই দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আহি। আর আহির মা কিছু বলতে চেয়েও আর বলতে পারলো না।’
_____

ঘড়ির কাঁটায় প্রায় একটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। এখনো অপারেশন চলছে ভিতরে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে সবার। যদিও সেটা কেউ বাহিরে বের করছে না সবাই নিজেকে সামলে নিয়ে শক্ত হয়ে বসে আছে। আর রিনিও সবার থেকে কিছুটা দূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।’

এরই মধ্যে অপারেশন থিয়েটারের লাইট অফ হয়ে গেল। লাইট অফ হতেই সবাই একপ্রকার দৌড়ে দাঁড়ালো থিয়েটারের সামনে। না জানি ডাক্তার বেরিয়ে এসে কি বলবে তাদের।’

বলতে না বলতেই ধীরে ধীরে বের হলো শুভসহ বাকি সবাই। খুব যত্নসহকারেই পুরো কাজটা করেছে তাঁরা। সবার মুখে সাকসেসফুল হওয়ার হাসি। রিনির মা শুভর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ কেমন আছে আমার ছেলেটা বাবা?’

শুভ মুচকি হেঁসে রিনির মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ সব ঠিক আছে পেসেন্ট এখন বিপদমুক্ত। কাল সকালেই আপনারা ওনার সাথে দেখা করতে পারবেন।’

‘ থ্যাংক ইউ ডাক্তার। (রিনির বাবা)

‘ ইট’স ওকে আঙ্কেল।’

বলেই চলে যায় শুভ। এবার আর রিনির দিকে তাকায় নি শুভ। শুভর কথা শুনে রিনির কান্না ভেঁজা মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো আহি। রিনিসহ সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো সে,

‘ রিনি?’

আহির কন্ঠ কানে আসতেই রিনি তাকালো আহির দিকে তারপর ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ দোস্ত তুই এসেছিস?’

‘ হুম কেমন আছে সোহান ভাইয়া?’

‘ হুম ভালো। ডাক্তার বলেছে কাল সকালেই ভাইয়ার সাথে দেখা করা যাবে।’

এতক্ষণ পর যেন রিনির কথা শুনে সস্থির নিশ্বাস ফেললো আহি। রিনি আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ জানিস ভাইয়ার অপারেশন কে করেছে?’

‘ হুম শুনবো তাঁর আগে মাকে একটা ফোন করে নেই বুঝলি, টেনশন করছে হয়তো?’

বলেই মোবাইল হাতে অন্য সাইডে চলে যায় আহি। আর রিনিও পাল্টা কিছু না বলে চলে যায় তাঁর মায়ের কাছে।’

_____

সূর্যের কড়া রোদ্দুরের মাঝে জানালার পাশে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে অথৈ। হঠাৎই মনে পড়লো তাঁর কালকের দুপুরের কথা নীরবকে দেখেছে সে। চোখের সামনে ভেঁসে আসলো তাঁর সেই কালকের সাইকেল নিয়ে নীরবের পড়ে যাওয়ার দৃশ্য।সাথে ভার্সিটি বসে নীরব তাকে প্রপোজ করছে তাঁর দৃশ্য, আহির কান্না ভেঁজা চেহারার কথা ভাবতেই হকচকিয়ে উঠল অথৈ।’
!#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩৪
_________________

আজ লিলির গায়ে হলুদ। পুরো বাড়ি জুড়েই যেন বিয়ে বিয়ে গন্ধ বেরিয়ে গেছে। আজ সন্ধ্যায় হলুদ হবে আর কাল দুপুরে বিয়ে। বর্তমানে পুরো বাড়ি সাজগোছের তোড়জোড় পড়ে গেছে। সাধারণত বাড়ির সামনের বড় মাঠে প্যান্ডেল সাজানো হবে। বর্তমানে সেটা করতেই ব্যস্ত সবাই।’

‘এলেমেলোভাবে খোলা চুলে,সাদা রঙের থ্রি-পিচ সাথে চোখে চশমা পড়তে পড়তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে অথৈ। সকালের ঘুমের রেশটা এখনো কাটে নি তাঁর। মাত্রই ঘুম থেকে উঠে হাল্কা ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয় অথৈ। পুরো বাড়িটাতে ফুলের সুবাসে ভরে আছে সাথে পুরো বাড়ি জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফুল। সিঁড়ির রেলিংগুলোকেও সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। অথৈ নিচে নেমে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো তাঁর মাকে। কিন্তু কোথাও তাঁর মা নেই হঠাৎই চোখ যায় অথৈর লিলির ছোট বোন নিলুর দিকে। অথৈ ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ নিলু মা কোথায় রে?’

ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলা করছিল নিলু হুট করেই অথৈর কথা শুনে বললো সে,

‘ কাকিমা তো আম্মুর সাথে বাহিরে গেছে?’

‘ কি কেন?’

‘ ওই আপুর বরের জন্য কি জানি আনা হয় নি সেটাই আনতেই গেছে।’

‘ আর লিলি আপু কোথায়?’

‘ লিলি আপু, তা তো জানি না।’

‘ ওহ ঠিক আছে।’

‘ হুম।’

বলেই বাচ্চাদের সাথে খেলায় মেতে উঠলো নিলু। নিলুর কাজ দেখে অথৈও আর কিছু না বলে বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে চললো বাহিরের দিকে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে তাঁর। এই জন্যই অথৈ কোথাও আসতে চায় না। বেশি মানুষদের ভিড়ে নিজেকে কেমন যেন এলিয়েন এলিয়েন আর একা একা মনে হয় অথৈর। অথৈ গায়ের ওড়নাটা মাথায় জড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হলো। বাহিরে প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে। অথৈ আশেপাশে দু’পলক তাকিয়ে হাতে থাকা ফোনটা নিয়ে মাকে একটা ফোন করলো প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে তাঁর। এরই মাঝে বাহিরে লাউডে গান বাজতে শুরু করলো। এতে যেন বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে অথৈ। গান বাজনা বিয়ে এইসব একদমই পছন্দ করে না অথৈ। কেমন যেন অস্থিরতা আর বিরক্ত লাগে তাঁর। অথৈ বুঝে উঠতে পারে না গায়ে হলুদ সেই সন্ধ্যাবেলা আর এখন কেবল সকাল দশটা না এগারোটা বাজে এখনই কেনো লাউডে গান ছাড়া লাগে। অথৈ লাউডস্পিকারের দিকে একপলক তাকিয়ে মোবাইল হাতে হাঁটতে হাঁটতে একদম প্যান্ডেলের মাঝখানে চলে যায় তাঁকে কেন্দ্র করেই উপরে প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে যেটা আপাতত খেয়াল করে নি অথৈ। প্রথম কলে মা ফোন না তুললেও দ্বিতীয় কল তুলতেই অথৈ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো,

‘ আম্মু কোথায় তুমি? আমায় কিছু না বলেই চলে গেলে আমায় নিয়ে যেতে পারতে তো?’

অথৈর কথা শুনে অপরপাশে অথৈর মা বলে উঠল,

‘ আরে তুই তো ঘুমিয়ে ছিলি তাই তো ডাকি নি, তবে চিন্তা করিস না আমাদের হয়ে গেছে এক্ষুনি ফিরছি আমরা। তোর ব্রেকফাস্ট রান্নাঘরে রাখা আছে খেয়ে নিস।’

‘ ব্রেকফাস্ট লাগবে না তুমি আগে এখানে আসো আর লিলি আপু কো…

আর কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে গেল অথৈর। একদিকে লাউডে মিউজিকের কারনে ঠিকমতো তেমন কিছু শুনতে পেলো না অথৈ তারওপর ফোন কেটে গেল রাগে যেন মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো তার। অথৈ রেগেমেগে এইবার লিলিকে কল করলো সকাল সকাল গেল কই মেয়েটা?’

এমন সময় বাড়ির গেটের ভিতর ঢুকলো নীরব আর রবিন। নীরবের পরনে ব্লাক কালার শার্ট আর ভিতরে ওয়াইট টিশার্ট সাথে ব্লাক জিন্স, চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে সাজানো, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। নীরবকে দেখেই আশেপাশের কিছু মেয়েরা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।তবে সেসবের দিকে নীরবের কোনো হুস নেই কারন তাঁর চোখ তো খুঁজছে অথৈকে। অথৈর চিন্তায় কাল রাতে ঘুম হয় নি নীরবের। হঠাৎই রবিন সামনের দিকে হাত দেখিয়ে বলে উঠল,

‘ ওই তো অথৈ চল সবার আগে তোকে অথৈর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই?’

রবিনের কথা শুনে নীররও তাকালো সামনে, এলেমেলো ভাবে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। অথৈর চেহারা দেখে নীরব বুঝতে পেরেছে কোনো কারনে অথৈ বিরক্ত। নীরব রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এখন লাগবে না পড়ে কথা বলবো ওর সাথে?’

‘ কিন্তু এখন করলে কি সমস্যা দেখতে হবে না অথৈর তোকে মনে আছে কি না?’

‘ এখন দরকার নেই আমার মনে হয় ও কোনো কারনে ডিপ্রেসড।’

‘ আরে কিছু হবে না চল..

বলেই চললো নীরব আর রবিন অথৈর দিকে।

রবিনকে যেতে দেখে নীরবও আর বেশি না ভেবে চললো অথৈর দিকে হয়তো এটাই সুযোগ অথৈর সাথে কথা বলার। আনমনেই এগোচ্ছে নীরব অথৈর দিকে আর তাঁর পাশেই রবিন।’

এদিকে লিলি ফোন না তোলাতে বিরক্তি নিয়ে উল্টোদিকে ঘুরলো অথৈই পরক্ষণেই নীরব আর রবিনকে তাঁর দিকে আসতে দেখে হাল্কা থমকে গেল সে। নীরব তাঁর দিকেই আসছে, কেমন যেন হার্টবিট বেড়ে গেল অথৈর। হুট করে কেমন কেন লাগছে বুঝতে পারছে না অথৈ, নীরবকে তো সে প্রথম দেখছে না তাহলে। হয়তো নীরব তাকে প্রপোজ করেছিল তাঁর জন্যই এমন হচ্ছে।’

‘ আচ্ছা নীরব কি বলার জন্য এখানে আসছে? যদি প্রশ্ন করে আমি ভার্সিটি ছেড়ে চলে কেন এসেছি তাহলে? বা সবার সামনে যদি উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করে বসে তখন?’

এরকম হাজারো কথা মাথায় এসে আঁটকে যাচ্ছে অথৈর। অথৈ আনমনেই একটু পিছিয়ে গেল। কেমন যেন হাল্কা ভয় লাগছে তাঁর।’

রবিন আর নীরব হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলো একদম অথৈর সামনে। অথৈ বরিনকে দেখে হাল্কা হাসলো কিন্তু কিছু বললো না। রবিন অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কিরে সারাদিন কোথায় থাকিস বল তো, তোকে তো খুঁজে পাওয়াই যায় না?’

‘ কোথায় আর থাকবো বাড়িতেই থাকি।’

‘ হুম বুঝতে পারছি,

এতটুকু বলে নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো রবিন অথৈকে,

‘ মিট আমার ছোট বেলার বন্ধু নীরব।’

রবিনের এবারের কথা শুনে এবার কি বলবে অথৈ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। হাল্কা অসস্থিতা ফিল হচ্ছে অথৈর। অথৈর অবস্থা বুঝতে পেরে নীরব নিজেই বলে উঠল,

‘ কেমন আছো?’

নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা কেঁপে উঠলো অথৈই। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,

‘ জ্বী ভালো আপনি?’

‘ হুম ভালো।’

ওদের দুজনের কথা শুনে রবিন বলে উঠল,

‘ কি আপনি আপনি করছিস তুই জানিস ও কে?’

এবার বেশ অবাক হয়েই বললো অথৈ,

‘ কে উনি?’

‘ আরে ওই যে ছোট বেলায় তুই আর ও

আর কিছু বলার আগেই ডাক পড়লো রবিনের লিলির বাবা ডাক দিয়েছে তাঁকে। চাচার ডাক শুনে রবিনও আর কিছু বলতে না পেরে বলে উঠল,

‘ কাকা ডাকছে তোরা দুজন কথা বল আমি এক্ষুনি আসছি?’

উওরে অথৈকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় রবিন। অন্যদিকে নীরব নীরবেই তাকিয়ে আছে অথৈর মুখের দিকে। নীরবের চোখের দিকে একপলক তাকিয়েও তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেললো অথৈ। অথৈর কাজে হাল্কা হেঁসে বললো নীরব,

‘ আমার চোখের দিকে তাকাতেও কি ভয় হয় নাকি তোমার?’

নীরবের কথা শুনে হাল্কা ঘাবড়ানো মাখা কন্ঠ নিয়ে বললো অথৈ,

‘ ভয় হবে কেন?’

‘ তাহলে তাকাচ্ছো না কেন?’

নীরবের এবারের কথা শুনে নীরবের চোখে চোখ রাখলো অথৈ তারপর বললো,

‘ আহি কেমন আছে?’

‘ মন ভেঙে দিলে কি কেউ আর ভালো থাকে।’ ( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে )

নীরবের ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথা বলাটা ঠিক পছন্দ হচ্ছে না অথৈর। অথৈ নিজেও সোজাসাপ্টা বলে দিল,

‘ মন ভাঙলে যখন কেউ ভালো থাকে না তাহলে মন ভাঙলেন কেন?’

‘ তুমি কেন ভাঙলে?’

এবার যেন সত্যি সত্যি থমকে গেল অথৈ। তারপরও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললো অথৈ,

‘ কারনটা তো আপনাকে আগেই বলেছি?’

‘ এই যে আহি আমায় ভালোবাসে তাই?’

‘ না শুধু আহি ভালোবাসে তাঁর জন্য নয় আমি নিজেও আপনাকে ভালোবাসি না।’

‘ হুম জানি কিন্তু এর পিছনে কারন কি শুধু আহি?’

‘ না আহি কেন হতে যাবে।’

‘ তাহলে?’

‘ আমি আপনাকে এত প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো কেন? আপনাকে আমার ভালো লাগে না এটাই হলো আসল সত্যি।’

‘ বলেই নীরবকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় অথৈ। এরই মাঝে ঘটলো আর একটা ঘটনা হুট করেই পায়ে কিছু বাজতে অথৈ গিয়ে পড়তে নিলো নীরবের গায়ের ওপর, নীরবের পাশ দিয়েই ঝুলে ছিলো একটা দঁড়ি যেটা পুরো স্টেজের প্যান্ডেলটাকে কভার করে আছে। অথৈ নিজেকে বাঁচাতে সেই দড়ি ধরে দিলো টান। সাথে সাথে স্টেজ জুড়ে সাজানো প্যান্ডেলের কাপড় খুলে পড়লো সোজা নীরব আর অথৈর ওপর। হুট করে এমন কিছু হওয়াতে অথৈ নীরব দুজনেই পুরো হা হয়ে গেল। নীরব তো বুঝতেই পারলো না কি হলো এইমাত্র। অতঃপর নীরব অথৈকে সামলাতে না পেরে প্যান্ডেল সমেত অথৈকে নিয়ে পড়ে গেল নিচে। নীরব নিচে তাঁর ওপরে অথৈ আর তাদের উপরে বিয়ের প্যান্ডেল। আশেপাশের লোকজনও পুরো অবাক কেউ কিছু বুঝতে পারে নি কি হলো এইমাত্র আর কি করেই বা হলো এমন।’

হা হয়ে তাকিয়ে আছে নীরব অথৈ একে অপরের দিকে। হুট করে এমন কিছু হওয়ার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না তেমন। এমন একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দুজনের মধ্যে যে অথৈ চাইলেও উঠতে পারছে না নীরবের উপর দিয়ে। যতবারই উঠতে যাচ্ছে ততবারই প্যান্ডেলের ভাড়ে আবার গড়িয়ে পড়ছে নীরবের উপর। নীরব অথৈর কাজ দেখে বলে উঠল,

‘ কুলডাউন আমি দেখছি?’

বলেই আস্তে আস্তে তাঁর হাত দিয়ে তাদেরকে জড়িয়ে থাকা প্যান্ডেলটাকে সরাতে লাগলো নীরব। অন্যদিকে অথৈর এখন কান্না পাচ্ছে ভিষন কারন বার বার অথৈর ঠোঁট নীরবের গালকে স্পর্শ করছে। এই মুহূর্তে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে অথৈর কি কারনে সে ওই দড়িটা ধরতে গেল। সে ভেবে ছিল ওটা ধরলে হয়তো সে নীরবের উপর পড়বে না। কিন্তু হলো কি পড়লো তো পড়লোই এখন ওটার ভাঁড়ে নিজেকে ছাড়াতেও পারছে না। ভিষনভাবে কান্না পাচ্ছে অথৈর। জীবনে কখনো এইরকম বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হয় নি তাঁকে।’

অবশেষে ধীরে ধীরে নীরব খুঁজে পেলো প্যান্ডেলের মাথা এরই মধ্যে আশেপাশের লোকজনও এসে উঠালো নীরব আর অথৈকে। অথৈ তো উঠেই আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা চলে গেল বাড়ির ভিতরে। এতক্ষন যেন বুক ধরফর করছিল তাঁর। অন্যদিকে নীরব কিছুক্ষন অথৈর যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাল্কা হাসলো। এরই মধ্যে প্যান্ডেল বাঁধানো একজন লোক এসে বললো,

‘ সরি স্যার আসলে হুট করে টান পড়াতে আর আমরা কেবলই ওটাকে বাঁধতে নিয়েছিলাম তাই হাত থেকে ছুটে।’

উওরে লোকটিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো নীরব,

‘ ইট’স ওঁকে।’

এরই মধ্যে যেখানে দৌড়ে আসলো রবিন। নীরবের সামনে এসে বললো সে,

‘ তুই ঠিক আছিস তো?’

উওরে নীরব রবিনের গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হুম আমার আবার কি হবে?’

নীরবের কাজে রবিন অবাক হয়ে বললো,

‘ না ওই যে শুনলাম প্যান্ডেল খুলে পড়েছে নাকি তাই ভাবলাম তোদের ওপর পড়লো নাকি তুই আর অথৈ তো ছিলি প্যান্ডেলের মাঝখানে তাই আর কি?’

রবিনের কথা শুনে নীরব তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়েই বললো,

‘ ওহ হুম তেমনটাই কিছু হয়েছিল?’

‘ যাক বাদ দে তুই ঠিক আছিস আর অথৈকেও তো দেখলাম বাড়ির ভিতরে যেতে চল তোর সাথে বাড়ির সবার পরিচয় করিয়ে দেই।’

বলেই চললো রবিন নীরবকে নিয়ে। নীরবও বেশি কিছু না ভেবে চললো রবিনের সাথে। কিছুক্ষন আগে ঠিক কি কি হলো ঠিক মাথা থেকে যাচ্ছে না নীরবের। আনমনেই হেঁসে ফেললো সে।’

_____

হসপিটালের করিডোরে থাকা চেয়ারের বসে আছে আহি আর তাঁর কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রিনি। কাল শেষ রাতের দিকেই ঘুমিয়েছে দুজন। কাল বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় আহি আর যায় নি বাসায় হসপিটালেই থেকে যায়। আহি তো কাল রাতে শুভকে দেখে চরম অবাক সেও ভাবতে পারে নি শুভ একজন ডাক্তার হবে। প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণে খুশি হয়েছে সে। আহিও এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল জাস্টই ঘুম ভাঙলো তাঁর। এরই মাঝে ফোনটা বেজে উঠলো আহির উপরে মায়ের নাম্বার দেখে ফোনটা তুললো সে। তারপর বললো,

‘ তুমি টেনশন নিও আমি এক্ষুনি আসছি?’

এতটুকু বলে ফোনটা কেটে দেয় সে। আহির কন্ঠ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় রিনির আস্তে আস্তে আহির কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে সোজা হয়ে বসে সে। সারারাত একদিকে থাকার কারনে তাঁর ঘাড় ব্যাথা করছে। রিনির তাঁর মাথাটাকে এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে বললো,

‘ বাসায় যাবি এখন?’

‘ হুম তুই তো জানিস আমায় আবার হসপিটালে যেতে হবে।’

‘ হুম যা গিয়ে ফোন দিস?’

‘ হুম আমি আবার রাতে আসবো আনে।’

‘ ঠিক আছে।’

উওরে আহিও আর কিছু না বলে সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় বাসার উদ্দেশ্যে। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় দুপুর বারোটার কাছাকাছি বেজে গেছে।’

____

অফিসে নিজের রুমে বসে আছে আদ্রিয়ান। চোখের সামনে বার বার তাঁর আহির সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাসছে। আহিতে এতটাই মগ্ন যে, তার সামনে নিলয় ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছে এটাই বুঝতে পারে নি আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের কাজে নিলয় জাস্ট হা হয়েই তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের দিকে। কারন কম হলেও নিলয় ১০ বার বলেছে আদ্রিয়ানকে এই ফাইলগুলোতে তাঁর কিছু সাইন লাগবে কিন্তু আদ্রিয়ানের যেন নিলয়ের কথা কানেই পৌঁছায় নি। নিলয় আদ্রিয়ানের কানের কাছে তাঁর মুখ নিয়ে বললো,

‘ স্যার আপনার সাইন লাগবে?’

সাথে সাথে যেন আদ্রিয়ান চমকে উঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো সে,

‘ হুম কি?’

বলেই তাকালো আদ্রিয়ান সামনেই নিলয়কে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,

‘ তুই, তুই কখন এলি?’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে নিলয়ের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। সেই কখন থেকে সে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের সামনে আর আদ্রিয়ান কি না তাঁকে এতক্ষণ দেখতেই পায় নি? অবাক কান্ড আদ্রিয়ানের সাথে কাজ করে এতবছরে যেন আজ প্রথম এত অবাক হলো নিলয় আদ্রিয়ানের কান্ড দেখে।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here