বালির সংসার পর্ব ১২

#বালির_সংসার(১২)
.
.
রুপ কে দেখে অর্থির কলিজায় পানি ফিরে এলো৷
আদিত্যর এমন ব্যবহারে অর্থি মোটেও অভ্যস্ত নয়৷
চিন্তা করতেই ভয় লাগছে। এই কি সেই আদিত্য? ভাবতেই ঢুকরে কান্না করে উঠে অর্থি।
রুপ কাছে এসে বসতেই অর্থির কান্নার বেগ বেড়ে যায়।
অর্থির হাত দুটো কাপছে। রুপ খুব যত্ন করে জড়িয়ে নিলো।
হালকা ভাবে জড়িয়ে রুপ অর্থির মাথায় হাত রেখে বলে
– পাগলি! কি হয়েছে? কাদছো কেনো?
অর্থির গলায় মনে হচ্ছে কেউ অদৃশ্য হাত দিয়ে চেপে ধরেছে।
খুব কষ্ট হচ্ছিলো। ও যে রুপ কে ঠকিয়েছে। ইচ্ছে করে না হলেও তো। এখন ওর উপর শুধুই রুপের অধিকার।
আদিত্যদা অতীত। সে নিজে ছেড়েছিলো অর্থি কে।
আজ কেনো অধিকার দেখাতে আসছে।
যেখানে অধিকার নেই সেখানে কেনো জোড় করছে।
.
কিছুটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর অর্থি কিছুটা শান্ত হয়।
রুপ ছাড়ে না। চুপচাপ ধরেই রাখে।
অর্থি আধো আধো গলায় বলে
– ক্ষিধে পেয়েছে।
এবার রুপের হাসি পেলো।
রুপ- এই জন্যই বুঝি কাদছো? ঠিক সেদিনের মতো?
অর্থি- কোন দিনের মতো?
রুপ- কন্সিভ করার ২৩ দিন পর রাতে ফুসকা খাওয়ার জন্য কেদেছিলে মনে আছে? রাত দুটোর সময় ফুসকা এনে দিতে হয়েছিলো।
অর্থি- ও এখন খোটা দেওয়া হচ্ছে?
রপ- রানী সাহেবা খোটা দিতে পারি? তাহলে তো গর্দান যাবে।
.
অর্থি এবার হাসলো। হুম অর্থি এই মানুষ টাকে ভালোবাসে। না! এর ভালোবাসা,দায়িত্ব, কেয়ার কে ভালোবাসে।
সে যে অতীত হাতড়ে মরতে চায় না।
স্বামী সন্তান নিয়ে বাঁচতে চায়।
.
.
রুমে এসে আদিত্য কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিলো না।
রাগ,জেদের বসে সে এসব কি করেছে?
পিচ্চির সাথে এতটা খারাপ ব্যবহার?
সেই মেয়েটাকে জোড় করে অধিকার খাটিয়েছে যে মেয়ে আদিত্য কে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে?
কতই তো আদিত্যর রুমে এসে ঘুমিয়ে থাকতো মেয়েটা। কত ঝড়ের রাত অর্থি আদিত্যর বুকে কাটিয়েছে। তখন আদিত্যর ভিতরে বাহিরে সমান তালে ঝড় বয়ে গেছে।
কই তখন তো আদিত্য এমন করেনি?
নিজের প্রতি বড্ড ঘেন্না হচ্ছে। কেনো পারলো আদিত্য নিজের ভিতরের জানোয়ার টা কে আটকে রাখতে? জানোয়ার? হ্যাঁ! তাই।
কোন মুখে যাবে অর্থির সামনে?
অর্থির কান্না দেখে আদিত্য বেশ বুঝে গিয়েছিলো যে আদিত্যর কাজের জন্যই অর্থি কাদছিলো।
যে আদিত্য সব সময় চাইতো অর্থি কে পবিত্র রাখতে আজকে তার জেদ, রাগ, অপেক্ষা নিয়ে সে নিজেই কি অর্থি কে অপবিত্র করে দিলো?
তার স্পর্শ যে অর্থি কে দগ্ধ করেছে খুব ভালোভাবে সে বুঝছিলো।
সব টা ওই রুশার জন্য। ওর কথায় অর্থি নার্ভাস হয়ে গেছিলো আর অর্থির কথায় আদিত্যর মাথা।
নিজের অনুশোচনা বোধ তাকে এতটাই শেষ করছিলো যে নিজে দেয়ালে কয়েক বার হাত বাড়ি মারে।
গ্রিলে লেগে হাত বেশ নীল হয়ে গেছে।
.
একের পর এক সিগারেট শেষ করছে আদিত্য।
সে নিজেও বুঝছে না অর্থির সাথে এখন কি করা উচিৎ?
একটু অবিশ্বাস তার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে।
কিন্তু সে যে অর্থি কে রুপের সাথেও দেখতে পারছে না।
.
.
ফ্ল্যাটে এসে ফোন টা জুড়ে ছুড়ে মারলো রুশা। কি কি না করেছে আদিত্য কে পাওয়ার জন্য।
কিন্তু আদিত্য ফিরেও তাকায়নি। শুধু অর্থি, অর্থি আর অর্থি। অসহ্য লাগছে। এত কস্টের পর আদিত্য কে সে পেতে যাচ্ছিলো আবার সেই মেয়েই।
না! আগে বাড়ি থেকে সম্পত্তি থেকে আদিত্যর জীবন থেকে সরিয়েছিলো এবার দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিবে।
.
.
রুপ যেনো বারবার মরে যায় অর্থির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে।
কিছু তো আছে যে মেয়েটাকে তার দিকে টানে।
এমন সময় নিশি এসে ঢুকে। হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে যায়।
.
নিশি- একটু আদর কর না!
রুপ- মাথা খারাপ তোর? তুই এখানে কেনো?
নিশি- ভালোবাসতে এসেছি। জড়িয়ে ধর আমি চলে যাবো। না হলে অর্থি উঠলে কিন্তু দোষ তোর।
.
রুপ কোন উপায় না দেখে নিশি কে জড়িয়ে ধরে।
এই মেয়েটা কেনো ওকে এত ভালোবাসে রুপ বুঝে না। ওর কোন কমতি নেই। তবুও কেনো বারবার অপমান হতেই ফিরে আসে?
নিজের অজান্তেই কপালে চুমু দেয়।
নিশি- ঠোঁটে দিলে কি ফুরিয়ে যাবে?
কথা বলে এক সেকেন্ড দেরি করে না সে।
.
.
আদিত্য রকিং চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। শেষ কথাটা শুনে চমকে উঠে।
.
কিছুক্ষণ আগে তো সে অর্থির ঠোঁট ছুয়েছিলো বলে এত কান্না করলো আর এখন রুপ কে বলছে?
এতটাই পর সে? হুম্ম। এখন সে সত্যি পর।
.
কিছুক্ষণ পর আদিত্য এসে অর্থির রুমে নক করে। ইচ্ছে করে করেনি। বাধ্য হয়েই করেছে।
.
দরজায় নক শুনে রুপ নিশিকে ছাড়িয়ে নেয়।
দরজা খুলে দেখে আদিত্য। ততক্ষণে নিশি বারান্দায় সরে গিয়েছে।
আদিত্যর কথায় অর্থি জেগে উঠে। রুপ বেরিয়ে যেতে নিয়ে ফিরে এসে অর্থির কপালে চুমু দেয়।
অর্থিকে আবার ঘুমোতে বলে। মেয়েটা এতটাই দুর্বল যে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
.
আদিত্য – আমাকে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। আপনি….
রুপ- আই নেভার কিসড হার লিপস বিকজ?
আদিত্য – মানে?
রুপ- স্ত্রীর অধিকার দিলেও ওই ঠোঁটের অধিকার নেই। চাইয়ো না। কারণ রানী সাহেবা বলে ভালোবাসার বিশুদ্ধ প্রকাশ কপালের চুমুতেই হয়।
.
আদিত্যর মাথায় শুধু ঘুরতে থাকে তাহলে কিছুক্ষণ আগে যা শুনলো তা কি? কিছু দূর এগিয়ে যেতেই দেখলো কেউ একজন দ্রুত পায়ে অর্থির রুম থেকে গেস্ট রুমের দিকে যাচ্ছে।
.
.
চলবে
.
.
Sabiya moon.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here