#বাসন্তীগন্ধা
| ০৭ |
লাবিবা ওয়াহিদ
——————-
অস্থিরতায় কিছুটা ঘেমে গেছে মেহের। বিছানায় বারবার এপাশ ওপাশ করতে ব্যস্ত সে। কিছুতেই চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না। চোখে সামনে এক নাগাড়ে ভেসে চলেছে সেই দৃশ্যটুকু। সারিমের বক্ষের উষ্ণতা তাকে বড্ড উদগ্রীব করে তুলেছে। এভাবে কেন তখন সারিম তাকে জড়িয়ে নিয়েছিলো তা মেহেরের অজানা। সেই সাথে এই উষ্কখুষ্ক ভাবটাও তাকে ভীষণ জ্বালাতন করছে। এক নাম না জানা অনুভূতি তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মস্তিষ্কে তরঙ্গিত হচ্ছে তাঁর সেই সহপাঠীর ভালোবাসার গল্প। মেয়েটার মামাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। বেশ কিছু গল্প করেছে সেই ছেলেকে নিয়ে। যা মেহেরের কানে ভালো ভাবেই প্রবেশ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে মেহের ভীষণ অস্থিরতায় ভুগছে। নাহ, তাকে শান্ত হতে হবে। শান্ত হওয়ার জন্যে এখন কী জরুরি? অন্য ছেলেকে নিয়ে ভাবা? কিন্তু মেহের তো কখনোই প্রেম অথবা সম্পর্কে জড়ায়নি।
এসব নানান ভাবনায় তাঁর অর্ধেক রাত পার হয়ে গেলো। ফজরের আযানের কিছু সময় আগে মেহের ঘুমের কোলে ঢলে পরে। সকালে সামিরা তাকে ঘুম থেকে ওঠায়। মেহের চোখ কচলাতে কচলাতে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিচে গিয়ে দেখে শুধু সারিম, মাহিম এবং সাইরা খাবার টেবিলে বসে আছে। মেহের বিনা-বাক্যে সামিরার পাশে গিয়ে বসলো। অথচ সারিম তাঁর পাশের চেয়ারটা খালি রেখেছিলো মেহেরের জন্যে। মেহের ওদিকে বসতেই সারিম গম্ভীর গলায় বললো,
–“কোনোরকম ত্যাড়ামি শুনছি না। দ্রুত আমার পাশে এসে বোস! কাম!”
মেহের ভীত চোখে সামিরার দিকে তাকালে সামিরা ইশারায় সারিমের পাশে গিয়ে বসতে বলে। মেহের হালকা শুকনো ঢোঁক গিলে বাধ্য মেয়ের মতো সারিমের পাশের চেয়ারটায় বসে। এমনিতেই গতকাল রাত থেকে সারিমের গতিবিধি ভালো নেই। মূলত মেহের হাত পোড়ানোর পর থেকেই খিটখিটে আচরণ করছে সে। এজন্যে মেহেরও আজ সারিমের মুখের ওপর কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। মেহের বসতেই সারিম মেহেরের মুখের সামনে ব্রেড তুলে দিয়ে বললো,
–“হা কর!”
মেহের সাহস সঞ্চার করে আমতা আমতা করে বললো,
–“আ..আমি খেতে পারবো!”
সারিম এবার অগ্নিময় চাহনি নিক্ষেপ করলো। মেহের মুখ ভোঁতা করে বললো,
–“কবজির নিচে পুড়েছে, হাত তো পুড়েনি!”
সারিম মেহেরের কথার তোয়াক্কা না করে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
–“হা করবি নাকি গাল লাল করবো?”
মেহের সঙ্গে সঙ্গে হা করলো। সারিম জোর করে পুরোটা মুখে পুরে ফেললো। হঠাৎ এরকম হওয়ায় মেহের কাশতে শুরু করলো। সারিম সেদিকে লক্ষ্য না করে মাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“তোর দেড় মিনিটের ছোট বোনকে পানি খাইয়ে উদ্ধার কর। আর খবরদার যদি মেহেরকে ফেলে কলেজ গিয়েছিস তো! মেহেরকে নিয়ে যাবি, নয়তো তোর অহংকারের বাইক আমি রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলব!”
বলেই সারিম এক মুহূর্ত না বসে বেরিয়ে গেলো। সামিরা দ্রুত মেহেরকে পানি দিলে মেহের ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে নিলো। খেয়ে কিছুটা শান্ত হতেই মেহের সামিরার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
–“তোমার ভাই এত পা!ষাণ কেন আপু? এখন যদি আমি দম আটকে মা* যেতাম?”
সামিরা হেসে বললো,
–“খুব সম্ভবত গলায় পাউরুটি আটকাতো, কিন্তু ম*বি না। আমার ভাইয়ের তোকে মে* জেলে যাওয়ার কী দরকার?”
মেহের মুখ বাঁকালো সামিরার কথা শুনে। মাহিম এবার মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বললো,
–“এই মেয়েটার জন্যে ভাইয়া আমাকে এত বড়ো হুমকি দিয়ে চলে গেলো? আল্লাহ্, আমার গার্লফ্রেন্ডদের জায়গায় কেন এই পাগলটা বসবে? তুমি কেন এই পাগলটারে ছেলে না বানিয়ে মেয়ে বানালা!? অন্তত ঘাড়ে বসে ঝুলতো না!”
মেহের টেবিলের নিচে দিয়ে জোরে পারা দিলো মাহিমের পায়ে। মাহিম আর্তনাদ করে উঠলে মেহের দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“এখন থেকে ভাইয়া না বললেও আমি তোর বাইকে গিয়ে বসে থাকবো। তোকে রেগুলার বিভিন্ন মেয়ের হাতে থাlপ্পড় খাওয়াবো! তখন ঘুরিস ভালোমতোন, গালে আঙুলের সাইন নিয়ে!”
মেহেরের কথা শুনে সামিরা হেসে দিলো। হাসতে হাসত্র বললো,
–“সিরিয়াসলি মেহের, মাহিম চড় খেয়েছে? কিন্তু কবে?”
মেহের এবার সামনের কপাট দাঁত বের করে বললো,
–“তোমার ফাউন্ডেশন উধাও হয়ে গেছিলো না?”
–“আরে হ্যাঁ। আবার ঘন্টাখানেক পর একই জায়গায় পেয়েছিলাম। এর মানে কী….?? মাহিম, তুই!”
এবার হাসি যেন থামতেই চাইলো না সামিরার। মাহিম এবার চোখ-মুখ লাল করে চাইলো মেহেরের দিকে। মেহের চোখ টিপ মে* হেসে দিয়ে বলে,
–“রিভেঞ্জ!”
মাহিম কলেজের সামনে বাইক থামাতেই মেহের দেখলো গেটের সামনে সোহা দাঁড়িয়ে। নিশ্চয়ই মেহেরের জন্যে দাঁড়িয়ে আছে। মেহের বাইক থেকে নামলে সোহা এগিয়ে এসে অবাক হয়ে দুই ভাই-বোনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে,
–“ও মাই গড! চেহারার কত মিল! মেহের এটাই তোর জমজ ভাই?”
মেহের কোণা চোখে একপলক মাহিমের দিকে তাকিয়ে ইতিবাচক মাথা নাড়ায়। মাহিমও হেসে বলে,
–“ইয়েস। ইয়্যু আর রাইট সুইটি! বাই দ্য ওয়ে তোমার নাম?”
–“সোহা। তোমার?”
সোহার মুখে “তুমি” সম্বোধন শুনে মাহিম অমায়িক হাসি দিলো। হেসে বললো, “মাহিম!”
পরমুহূর্তে মাহিম আবার বলে ওঠে,
–“আজকের এই সুন্দর ওয়েদারটা কী তোমার জন্যে উৎসর্গ করা সুইটি?”
সোহা হেসে বলে,
–“আমার জন্যে হবে কেন?”
–“আমার তো তাই মনে হচ্ছে। দেখছো না, কি সুন্দর নীল আকাশ। নীল আকাশের মাঝে খন্ড খন্ড মেঘের বিচরণ…”
মাহিম পুরোটা শেষ করার আগে বললো,
–“তোমার গায়ে তো আমাদের কলেজের শার্ট। এর মানে তুমি আমাদের কলেজেই ফাস্ট ইয়ারে পড়ছো? কিন্তু কেন?”
মাহিম ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
–“ইচ্ছে করে এক বছর গ্যাপ দিয়েছি বুঝলে? একচুয়ালি আমার ফ্যামিলিতে একটা ইন্সিডেন্ট হয় যার জন্যে আমি সেবার ফাইনাল ইক্সাম দিতে পারিনি!”
সোহা আবার হেসে বলে,
–“মেহের তো ঠিকই দিয়েছে!”
–“মেহের এন্ড আমি ডিফারেন্ট! আন্ডার্স্টেন্ড?”
মেহের এবার মাহিমের পিঠে এক ঘা বসিয়ে দিয়ে বলে,
–“তোর ফ্লার্ট শেষ হলে বিদায় হ!”
মাহিম মেহেরের দিকে গরম চোখে চেয়ে বললো,
–“কাবাবের হাড্ডি একটা!”
–“গেট আউট!”
–“তোর ঘাড়ে বসে আছি? নাকি এই রাস্তা তোর রুম মনে হয়?”
মেহের জু* দেখিয়ে সোহাকে নিয়ে হনহন করে ভেতরে চলে গেলো। সোহার তো হাসি-ই থামছে না। মেহের সোহার দিকে সেভাবে খেয়াল করছে না। সোহা হাসতে হাসতে মেহেরকে বলে,
–“তোর ভাই তো পুরাই আগুন! কেমনে এই বয়সে ফ্লার্টের ডিগ্রী করে বসে আছে?”
মেহের ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
–“ওটা ও আর আল্লাহ্ ভালো জানেন!”
–“তোর ভাইয়ের তো তাহলে অনেকগুলো গার্লফ্রেন্ড।”
মেহের এবার সত্যিটা বলে,
–“ওর কাজ শুধু মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করা আর পটানো। কখনো কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায়নি।”
–“শিওর হয়ে কীভাবে বলছিস?”
মেহের হেসে বলে,
–“আমার জমজ ভাই বলে কথা। ওর কর্মকান্ড আমার জানা আছে।”
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।
বিঃদ্রঃ কথা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আশা করছি আপনারাও গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। লেখালেখিতে আবার পুণরায় ফিরে আসার জন্যে হলেও আপনাদের মন্তব্য জরুরি। কারণ, আমি লেখালেখি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।