বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু পর্ব -১৫

#বিবর্ণ_বৈশাখে_রংধনু (২য় পরিচ্ছেদ)
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
আরহান ও রুহানী একে-অপরের দিকে তাকায়। তখনি রাফাত বলে ওঠে,
“একসাথে মা*র*লে অপরজনের প্রতি কষ্ট দেখতে পাব না। এক কাজ করে ব্যাবধানে করি। আগে কে? উম,, আমার ইচ্ছে মত হ্যাঁ? রুহানীকে?”

আরহান তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে ওঠে,
“না! রাফাত তোর মাথা ঠিক নেই। তুই তোর সেন্সে নেই। সবকিছু আরেকবার বিবেচনা করে দেখ। বিবেক দিয়ে বিবেচনা করে দেখ। যা হয়েছে তাতে হাসনেয়ারা আন্টির কোন দোষ ছিল না। আন্টিও তো রবিউল আঙ্কেলকে ভালোবেসেছেন। যেখানে দুই পক্ষের সত্যি ভালোবাসার কাছে নিয়তিতে না থাকলে এক পক্ষের ভালোবাসা হার মানবেই। তোরা আজ এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে তার কারণ তোর বাবা! তিনি তিনটা শিশুকে এতিম করেছেন। আর আমার ও সাফার কথা ধরলে, তুই প্রথম থেকে জানতি আমি সাফাকে কখনোই ভালোবাসার নজরে দেখিনি। আমারা বন্ধু। সবসময় তা থাকব। শত্রুতার মনোভাব ভুলে শান্ত মনে ভেবে দেখ রাফাত।”

রাফাত ক্রোধান্বিত স্বরে বলে ওঠল,
“আমার কিছু ভাবার নেই আরহান। আমি কিছু ভাবতে চাই না। তুই পারবি? আমার বোনের মন আগের মতো করে দিতে? সব কিছু রিবাইসে করে দিতে? পারবি না তো। আলটিমেটলি সবকিছু তো আমিই হারাব! তাই তুই আমাকে কিছু বোঝাতে আসিস না। আমি চাই রুহানীও ঐরকম কষ্টটা পাক। যেই কষ্টটা ভালোবাসার মানুষকে হারালে মানুষ পায়। তার জন্য আমায় আগে আমার নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে মা*রতে হবে! তৈরি হয়ে যা আরহান! আগে তুই। তোর প্রেয়সীর চোখে সেই বিষাদ, যন্ত্রণা, আকুতি দেখার লোভ হচ্ছে রে! এইটুকু আশা আমার পূরণ করে দে!”

এই বলে রাফাত আরহানের দিকে নিশানা করে ব*ন্দুকের ট্রিগারে চাপ দিচ্ছে। আরহান শুধু এটুকু বলে,

“দেখি তুই কীভাবে গু*লি করতে পারিস।”
“আমি আর আগের রাফাত নেই। যতদিন রুহানী ছিল না ততোদিন সব ঠিক ছিল। এখন না।”

রাফাত তাচ্ছিল্য হেসে ট্রি*গার চেপে দিয়ে দিয়েছে। রুহানী দৌঁড়ে সেদিকে যাচ্ছে। তার চোখে হারানোর ভয় ও অশ্রুধারা। কণ্ঠস্বরের জড়তার সাথে প্রতিক্ষণে লড়াই করে চলেছে। অবশেষে সে জয়ী হয়! আরহানের কর্ণকুহরে মেয়েলী স্বরে আতঙ্কিত চিৎকারে নিজের নাম প্রবেশ করতেই সে কিছুটা পাশে সরে এসেছিল যার দরুণ গু*লিটা তার লক্ষ্যচ্যুত হয়ে বাহুতে লেগে বেরিয়ে যায়। আরহান প্রচণ্ড যন্ত্রণা ও র*ক্তাক্ত অবস্থাতেই দুই পা এগিয়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। রুহানী দৌঁড়ে এসে তার পাশে বসে গু*লিবিদ্ধ স্থান চেপে ধরে কাঁদতে থাকে।

গু*লি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় রাফাত আবারও ব*ন্দুক তাক করলে পেছন থেকে পাওয়া পাথুরে আ*ঘাতে ভূমিতে লুটিয়ে পরে। ব*ন্দুক ছিঁটকে খানিক দূরে চলে যায়। পেছন থেকে সাদমান এসে ব*ন্দুকটাকে লা*থি দিয়ে আরও দূরে সরিয়ে আরহান ও রুহানীর দিকে ছুটে যায়। রাফাত কোনোমতে উঠার চেষ্টা করলে আহান ওর মা*থায় আরেকটা বা*ড়ি দেয়। তৎক্ষণাৎ রাফাত উঠার শক্তি হারিয়ে মুখ থুবড়ে পরে। আহান পাথর ফেলে দ্রুত ওদের কাছে যায়। রুহানী ভাঙা স্বরে বলে,

“আরহান, আরহানকে হসপিটাল…”

আহান ও সাদমান অবাক হয়ে একত্রে বলে,
“ফাইনালি রুহানী কথা বলতে পারছে।”
সাদমান আরহানকে বলে,
“আরহান, ওর গলার স্বর ফিরে এসেছে। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।”

হাতের যন্ত্রণার মধ্যেও আরহান ব্যাথাতুর হাসি হেসে বলে,
“আমিও অবাক ভাই। ওর গলার স্বর যে এভাবে ফিরবে আমি কল্পনাও করতে পারিনি। ওর চিৎকার শুনে আমি সরে আসাতেই গু*লিটা হাতে লেগেছে। নয়তো…”

আহান আরহানের হাতে ধরে দেখে বলল,
“গু*লিটা বেরিয়ে গেছে ব্রো। এখন তাও ফার্স্টএইড করতে হবে। আগে আমাদের এখান থেকে নামতে হবে।”

“হ্যাঁ। আহান, তুমি ও আমি আরহানকে ধরে ধরে নিয়ে যাই। রুহানী, তুমি একা চলতে পারবে না?”

রুহানী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়। তার যে গলায় ব্যাথা হচ্ছে তা প্রকাশ করে না। ওরা ধীরে ধীরে সাবধানে নামতে শুরু করে তখন সাদমানের মনে পরে।

“রাফাতকে নামাব না?”

“আমি বর্ডারগার্ডদের জানিয়েছি। উনারা ওকে নিয়ে যাবে।”

“তাহলে জাওয়াদ, কবিরদের কল করে বলো যাতে বর্ডার গার্ডদের আসতে বলে।”

আহান ফোন বের করে দেখে নেটওয়ার্ক নেই বললে চলে। সে বলে,
“নেটওয়ার্ক নেই। তাছাড়া রাফাত উঠতে পারবে না। সে সেন্সলেস। আমরা নিচে নেমেই বলতে পারব।”

সাদমান মাথা নাড়ায় তারপর রুহানীকে সামনে সামনে হাঁটতে বলে ওরা নামতে শুরু করে।

_______

নিচে নেমে ওরা বর্ডারগার্ডদের বললে উনারা পাহাড়ে গিয়ে রাফাতকে নিয়ে এসে নিজেদের কাস্টাডিতে রাখে। আরহানের ফার্স্টএইড করে সবাই ফেরার জন্য রওনা করে। আরহান সিটে গা এলিয়ে রেখেছে। হাতের ক্ষতের কারণে বেশ ক্লান্তও লাগছে। রুহানী বেশ সাবধানে বসেছে যাতে হাতে চাপ না পরে। গাড়ি তার নিজের গতিতে চলমান। সারি সারি বৃক্ষরাজিকে পেছনে ফেলে ছুটে চলেছে ওরা। আরহান মৃদু স্বরে বলে,

“সাইফুল আঙ্কেলকে কল করো কেউ। সাফার কী খবর জানতে হবে।”

রাইদা সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“হঠাৎ? এখানে তো ঠিকভাবে নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। ফিরে গিয়ে নাহয় কল করব।”

আরহান বাঁধা দেয়। সে বলে,
“এখনই কল কর। সাফার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল। ডাক্তার বলেছে বেশি সময় নেই। ”

আরহানের মুখ নিঃসৃত শব্দ শুনে তন্নি, রাইদারা বি’স্ফোরিত নয়নে চাইলো। রাইদা আঁতকে উঠে বলে,
“হোয়াট? কী বলছিস এসব? দুইদিন আগেও তো আমি আন্টির সাথে কথা বললাম, তখন তো বলল যেমন আছে তেমনটাই।”

সাদমান হতাশ স্বরে বলে,
“পাহাড়ে উঠতে উঠতে আমরা পুরোটাই শুনেছি। আমার আন্দাজ হচ্ছিল এমনটাই কিছু। কিন্তু সাফার জন্য খুব খারাপ লাগছে। ও ওর অন্তরের চঞ্চলতা, বিশুদ্ধতা দিয়ে আমাদের কলিগ সম্পর্কটাকে ভাই-বোনের সম্পর্কে রূপান্তরিত করে দিয়েছিল।”

তন্নি বিমর্ষ হয়ে বলে,
“তোমরা বলার আগে থেকেই আমি জানতাম যে ওরা ভাই-বোন। রাফাতের সাথে শেষবার যখন ফিরছিলাম তখন বলেছিল। যে সাফা ওর বোন। ছোটোবেলায় নাকি হারিয়ে গিয়েছিল। তারপর সাফার হাতের চিহ্ন দেখে চিনতে পেরেছে তারপর নাকি ডিএনএ টেস্টও করিয়েছে। এখন সাফা কোথায় লাপাত্তা তা জানার চেষ্টা করছে। আসলে তখন সাফা ও রুহানী দুজনেই নিঁখোজ ছিল। আমি ওকে ওয়াদা করেছিলাম কাউকে বলব না সাফা যে ওর বোন। ও নিজেই ওয়াদা করিয়েছিল, কারণ সাফা জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।”

অভীক বলে,
“তোমাকে বলে ও হালকা হতে চাইছিল। সে মেন্টালি স্টেবল ছিল না। স্টেবল হলে নরমাল বিষয়টাকে এতো জটিল করত না। বুঝতো সবটা।”

“সেসব বাদ দাও। সাফার খবর নিতে হবে। রাইদা, আন্টিকে কল করো।”

জাওয়াদের কথা শুনে রাইদা নেটওয়ার্ক একটু ঠিক হলে কল করে। কল করে যা জানতে পারে তাতে যাত্রাপথেই সবাই বিষাদের চাদরে মুষড়ে পরে। সাফা আর নেই! খবরটা যেন সূর্যকে কালো মেঘের আড়ালে ঢেকে দেওয়ার মতোই বেদনাদায়ক। গাড়ি একপাশে থামিয়ে রাখা হয়েছে। সবার চোখে জলধারা। সাফার লা*শ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে না। সাফার বাবা-মায়ের সিঙ্গাপুরের গ্রিনকার্ড আছে। সাথে সাফারও। ওরা সাফাকে ওখানেই দা*ফন করবে।

সবাইকে শোক সামলানোর জন্য সেরিনা বলে,
“সাফা এই পেইন থেকে ফ্রি হয়েছে। কোমাতে প্যাশেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য চলে যায়। ইয়াহ, হোপ থাকে বাট উই ডোন্ট নো, প্যাশেন্ট উইল কাম ব্যাক অর নট। প্লিজ গাইজ প্রে ফর হার। নাও উই ক্যান প্রে ফর অ্যা বিউটিফুল সোল এন্ড হার ফ্যামিলি।”

“তুমি ঠিক বলেছ সেরিনা। আমরা এখন শুধু সাফার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করতে পারি। সেই সাথে আঙ্কেল-আন্টি যেন শোক কাটিয়ে উঠতে পারে। সাফা তার জীবনের কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে।”

সেরিনা কবিরের সমর্থনে হাসলো। তারপর আবার সবাই গাড়িতে ওঠে বসে। গাড়ি আবারও তার গতিতে চলছে। রুহানী একদম নিরব হয়ে জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে বাহিরে চেয়ে আছে। আরহান পাশে বসে ঠিক বুঝল রুহানী মানতে পারছে না। ও নিজেকেই দোষী ভাবছে। ও সবকিছু বুকের মধ্যিখানে চেপে রেখেছে। এসব বুঝাতে রুহানীকে সময় দিতে হবে। হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়ল আরহান।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
সবাই রেসপন্স করবেন। গল্প যে শেষের দিকে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
রিচেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here