#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_৮
#Saji_Afroz
.
.
.
আদুরের জোরাজুরিতে তৈরী হয়ে নিলো আবেশ, বাণির বাসায় যাবার জন্য। কিন্তু ‘আয়না’ নামটা শোনার পর থেকেই মাথার মেজাজটা অন্যরকম হয়ে আছে তার। পুরোনো সব স্মৃতি ভেসে আসছে চোখের সামনে।
যেসব মনে করতে আবেশ একেবারেই চায়না সেসব কেনো আবারো মনে পড়ছে তার!
আয়না নামটি শুনেছে বলে?
এতো ধাপাচাপা দেওয়ার পরেও কেনো মাঝেমাঝেই অতিতের সম্মুখিন হতে হয় তাকে!
.
-এই? হলো তোমার? সন্ধ্যে হয়ে গেলো তো।
.
আদুরের ডাকে নিজের মনে কথা বলা বাদ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আবেশ বললো-
না গেলে নয়?
-কেনো যাবোনা? তুমিই বলেছো যাওয়া যায়। তাইতো আমি তৈরী হয়ে নিলাম। এখন এমন প্রশ্ন?
.
কিছু বলতে চেয়েও বললো না আবেশ।
আদুরে তার দিকে তাকিয়ে বললো-
ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলছি।
.
.
.
লামিয়া তার মায়ের সাথে চেঁচানোর পর থেকেই একেবারেই চুপচাপ হয়ে আছেন তিনি।
রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেও বৃথা হলো লামিয়া। এদিকে আয়ানের ফোন এখনো বন্ধ। আপদবিপদ কিছু হলো ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেমন যেনো মুচড়ে উঠলো লামিয়ার।
ফোনটা হাতে নিয়ে সে আবারো ডায়াল করলো আয়ানের নাম্বারে। বরবরের মতো ফোনের ওপাশ থেকে বললো-
আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। অনুগ্রহ পূর্বক…
.
নিজের মোবাইলটি বিছানার একপাশে ছুড়ে মারলো লামিয়া।
আয়ানের জন্য তার কখনো এভাবে অস্থির লাগেনি। তার সাথে কথা বলতে এভাবে ছটফট করেনি। তার একটু খবর পাবার জন্য এভাবে ব্যকুল হয়ে উঠেনি। এটাই কি তাহলে ভালোবাসা!
.
মাথায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে লামিয়া। চোখ দিয়ে পড়ছে তার অনবরত পানি।
এমন সময় লামিয়ার মা ললিতা আহসান এসে তার পাশে বসে বললেন-
কি হয়েছে লামি?
.
মায়ের করা প্রশ্নে ডুকরে কেঁদে উঠলো লামিয়া। মাকে জড়িয়ে ধরে সে বলতে লাগলো-
সে ফোন খুলছেনা মা। আমি তাকে খুব ভালোবাসি। এতোদিন বুঝতে পারিনি। তাকে বলোনা মা ফোনটা খুলতে। নাহয় চিন্তায় আমি পাগল হয়ে যাবো।
.
অবাক কণ্ঠে ললিতা আহসান বললেন-
কে?
-আয়ান।
-কে এই আয়ান!
.
.
.
-তো ভাই? বাচ্চা কাচ্চার প্লানিং কেমন চলছে?
.
বাণির স্বামীর মুখে বাচ্চা কাচ্চার কথা শুনতেই সেই পরিচিত ভয়টা কাজ করতে শুরু করলো মনের মাঝে।
ফ্যানের নিচে বসে আছে সে। তবুও গরম লাগছে আবেশের খুব।
শার্টের কলার ঠিক করতে করতে জবাব দিলো সে-
মাত্রই বিয়ে করলাম। দেখি…
-আরে দেখি ফেকি কিসের! বউ কিছুদিন পর প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবে টেরই পাবেন না। মেয়েরা তো এমনি হয়। বিয়ে ঠিক হবার সাথে সাথেই বাচ্চা নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করে। যদি বাসর রাতেই বাচ্চা নেবার পদ্ধতি চালু হতোনা? তবে তারা নিয়েই ফেলতো। তারা ভাবে এই বাচ্চার মাধ্যমেই স্বামীর ভালোবাসা আরো বাড়বে।
.
লোকটির কথা শুনে আবেশের কপালে চিন্তার ছাপ পড়লো।
আচ্ছা! আদুরেও কি এমনটাই ভাবে? বাচ্চা না হলে কি ভালোবাসা কমে যায়?
চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো আবেশ।
.
.
বাণির মেয়ে আয়নাকে কোলে তুলে আদুরে এদিক ওদিক করতে থাকলো। খুঁজে চলেছে সে আবেশকে।
বাণি তার অবস্থা বুঝে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো-
আবেশ ভাইয়াকে ওই দিকের খোলা বারান্দাতে যেতে দেখলাম।
.
মিষ্টি হেসে বাণির উদ্দেশ্যে আদুরে বললো-
তুই কিভাবে বুঝছিস আমি ওকে খুঁজছি?
-আমিও ওভাবে আমার জামাইকে খুঁজি তাই।
.
হেসে উঠলো আদুরে। হাসতে হাসতেই বললো-
আমি কি আয়না কে নিয়ে যেতে পারি ওর কাছে? দেখাবো আয়নাকে।
-নিশ্চয়।
.
.
আবেশের কাছে এসে আদুরে বললো-
কি করছো?
.
আদুরের দিকে তাকাতেই তার কোলে বাচ্চা দেখতে পেয়েও কোনো প্রতিক্রিয়া করলোনা আবেশ।
শান্ত গলায় জবাব দিলো-
দাঁড়িয়ে আছি।
-দেখো আয়নাকে। কি সুন্দর হয়েছে তাইনা?
-হু।
-নামটাও সুন্দর তাইনা?
-হু।
.
আবেশের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো আদুরে কোনো কারণে তার মনটা ঠিক নেই। তাই তার মন ভালো করতেই আদুরে বলে উঠলো-
এই যে? এমন একটা আয়না আমাদেরও হবে তাইনা? আচ্ছা আমরা আমাদের মেয়ের নাম কি দিবো? ওহহো! ছেলেও হতে পারে। একটা কাজ করি। ছেলে মেয়ে দুজনের নামই ঠিক করে রাখি। কি বলো?
-উফ….! কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছো তুমি! বাচ্চা ছাড়া মানুষ বাঁচেনা? আর এই আয়নাকে আমার সামনে এনে কি প্রমাণ করতে চাইছো তুমি?
.
আবেশকে এভাবে কথা বলতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো আদুরে। চোখ দুটো তার মুহূর্তেই টলমল করে উঠলো। সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে আবেশ বললো-
হবেনা আমাদের কোনো বাচ্চা। শুনেছো তুমি? হবেনা। বাচ্চার জন্য আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? যাও তবে।
.
কথাটি বলেই বারান্দা থেকে বেরিয়ে পড়লো আবেশ। আদুরে তাকিয়ে থাকলো তার পথের দিকে।
.
(চলবে)