#বীরাঙ্গনা_হইতে_বারাঙ্গনা (২য় পরিচ্ছেদ)
#মম_সাহা
পর্বঃ ১০
প্রকৃতিতে তখন মানুষ বিদায় নেওয়ার মৌসুম। আকাশে, বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া আগরবাতির ঘ্রাণ জানিয়ে দিচ্ছে কেউ একজন আর নেই। চিতায় তখনও আগুনের ছাঁট রয়েছে। প্রিয় মানুষদের চোখে অশ্রুর স্রোত।
অভ্রদাদের বাড়ির উঠানে বসেছে পাড়া-পড়শীর হাট। দুলাল ঠাকুরের দেহখানা চিতায় তুলে আবার সকলে এসেছে তাদের বাড়ি। এই গ্রামে দুলার ঠাকুরদের আপন বলতে যারা আছে তারা হলো দুলাল ঠাকুরের কয়েকজন কাকাতো ভাই এবং ভাইদের পরিবার। তারাও এসেছে আজ আত্মীয়ের এমন শোকে একটু পাশে থাকার জন্য। সকলের মুখেমুখে রটেছে চা বাগানের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা। মুহূর্তেই যেন সে পরিবর্তন হাসিখুশি থাকা ঠাকুর পরিবারটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। প্রথমে এত ভালো ছেলেটা চলে গেলো, তারপর গেলো দুলাল ঠাকুর। পুরো বাড়ি জুড়ে পড়ে রইলো অসহায় মা-মেয়ে। জেঠিমা তো ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছে, আবার মিনিট পেরুতেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। তাকে ধরেই জটলা বেঁধেছে মহিলাদের। পত্র উঠোনের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে পরখ করছে সবটা। হুট করেই সে খেয়াল করলো বিন্নীটা আশেপাশে নেই। পত্র চারপাশে চোখ বুলালো। নাহ্, মেয়েটা উঠোনের কোথাও নেই! তার মা যে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে, সেখানেও মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না। কী অদ্ভুত!
মানুষের সমাগম থেকে সরে পত্র উঠে গেলো অভ্রদা’র বাড়ির দু’তলায়। প্রথমেই সে বিন্নীর ঘরে গেলো। ঘরটা অগোছালো তবে ফাঁকা। বিন্নীটা বরাবরই এমন অগোছালো ছিলো। পত্র চারপাশ খুঁজে বিন্নীকে না পেয়ে চলে গেলো বিন্নীর পাশের ঘরটাতে। অভ্রদা’র ঘর এটা। কাঠের দরজাটা ঠেলতেই কড়মড় শব্দ তুলে খুলে গেলো দরজাটা। রুমটা কী সুন্দর গুছানো! তবে শূণ্যতায় খা খা করেছর চারপাশটা। বারান্দা গলিয়ে একফালি শেষ বিকেলের রোদ এসে পড়েছে ঘরের মেঝেতে। পত্রের হুট করেই অনুভব হলো অভ্রদা’র শূণ্যতা। অভ্রদা যে চিরতরে বিদায় নিয়েছে এ কথাটা পত্রের এই মুহূর্তে এসে মনে পড়লো। সে ধীর পায়ে অভ্রদা’র ঘরে গিয়ে খাটের পাশে দাঁড়ালো। রুমটার চারপাশ থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে পত্রের কানে কেবল একটা কথাই বাজছে “অভ্রদা নেই, নেই এবং নেই”। পত্র বিচলিত হলো। শরীর কাঁপিয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো। এতদিন সে বেমালুম এই কথাটা ভুলে ছিলো। ঠিক ভুলে থাকা না, তাকে কেউ একজন এ কথাটা মনেই করতে দেয় নি। ব্যস্ত রেখেছে নানান অহেতুক কাজে। অথচ এতো বড়ো একটা সত্যি পত্র অনুভবই করতে পারলো না! কীভাবে সে ভুলে ছিল?
অনুশোচনায় ঘা হলো পত্রের ভেতর। চোখ টলমল করে অশ্রু ঝড়লো। পত্র বসে পড়লো খাটে। অনুভব করলো পড়ার টেবিলে কেউ একজন বসে আছে। পত্র সেখানে তাকাতেই দেখলো অভ্রদা বসে আছে। খুব মনযোগ সহকারে টেবিলের উপর খাতা রেখে কি যেন লিখছে। পত্র চমকে উঠলো। বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটালো। না, সে তো ভুল দেখছে না। এইতো অভ্রদা সত্যি সত্যি বসে আছে। পত্রের কণ্ঠে তখন শব্দের ভয়াবহ বিপর্যস্ততা। তবুও পত্র ক্ষীণ স্বরে উচ্চারণ করলো,
“অভ্রদা!”
“খবরদার পত্রলেখা, আমায় ডাকিস না ও নামে। তুই যে তোর অভ্রদা’র কেউ না, তুই তা প্রমাণ করে দিলি।”
পত্রের চোখ বেয়ে নোনা অশ্র গড়িয়ে পড়লো। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মিনতি করে বললো,
“আমায় তুমি ক্ষমা করে দেও।”
“ক্ষমা করবো? আমি থাকতে আমায় নিয়ে মেতে ছিলিস, আমি যেতেই বেমালুম ভুলে গেলি আমায়? তোকে তো আমি শিখাতাম কীভাবে ভালো থাকা যায়, ভুলে থাকাটা কোথায় শিখলি পত্রলেখা? তোর অমন দূর্দশা কে করলো রে?”
অভ্রদা’র প্রশ্নে পত্র বাক্যহারা। তার দুর্দশা ঘটিয়েছে তার প্রেম, পত্র তা উচ্চারণ করবে কীভাবে? পত্র চুপ রইলো কিন্তু অপরপাশে বসে থাকা অভ্রদা চুপ রইলেন না। সে আগের ন্যায় ই বলতে লাগলো,
“পত্র, সুন্দর আর চাকচিক্য মানেই সব সঠিক না। চোখ মেলে তাকা, আশপাশ হাতরে দেখ, তোর সর্বনাশ তুই নিজের ঘরে নিয়ে এসেছিস। আমি তো ভালো নেই, অন্তত তুই ভালো থাক।”
পত্র আরও কিছু বলতো কিন্তু হুট করেই সে টেবিলের উপর তাকাতেই দেখলো সেখানে কেউ নেই। শুধু টেবিল কেন, পুরো ঘরটাতেই কেউ নেই। পত্র থমকালো, সবটাই তার মনের ভ্রম ছিলো! সেটাই হবে হয়তো। হয়তো তার মস্তিষ্কে জাগা প্রশ্ন গুলো তাকে কেবল অভ্রদার প্রতিচ্ছবি দেখালো। পত্র বেরুতে যাবে তার আগেই খেয়াল করলো টেবিলের উপর অভ্রদার লাল রঙের মোটা ডায়েরি খানায় ধুলো জমেছে। পত্র সযত্নে ধৃলো পরিষ্কার করার জন্য ডায়েরি টা তুলতেই কতগুলো সাদা পৃষ্ঠা খুলে খুলে পড়লো ডায়েরি থেকে। পত্র হতভম্ব। ডায়েরিটা খুলতেই তার হতভম্ব রেশটা আরও বাড়লো। ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠা গুলো ছেঁড়া। কোনো লেখা পৃষ্ঠা নেই। সে পৃষ্ঠা গুলো ছিঁড়ে ফেলার কারণেই সাদা পৃষ্ঠা গুলো খুলে খুলে পড়েছে। পত্র অবাক হলো। অভ্রদা’র এটা বহু যত্নের ডায়েরি। এমন ছেঁড়া থাকার তো কথা না। আর ছিঁড়লেও অভ্রদা ছিঁড়বে না। কাজটা অন্য কেউ করেছে, কিন্তু কেন?
এক ঝাঁক প্রশ্ন নিয়েই পত্র অভ্রদা’র রুম ত্যাগ করলো। মাথায় প্রশ্নদের ছড়াছড়ি। পত্র আরেকটু এগুতেই লাইব্রেরিটা চোখে পড়লো যার দরজা ভেজানো কিন্তু বেশ বোঝা যাচ্ছে ভেতরে কেউ আছে। পত্র উঁকি দিলো। লাইব্রেরীর বা’দিকের তাক টার পাশে দাঁড়িয়ে আছে বিন্নী। তার হাত বিভিন্ন বই ছুঁয়ে দিচ্ছে বারবার। পত্র অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো বিন্নীর দিকে। যে মেয়েটা ভাইয়ের মৃত্যু শোক সইতে না পেরে হাউমাউ করে কেঁদেছিল, নিজের সকল হাসি ভাসিয়ে দিয়েছে মন খারাপের স্রোতে, সে মেয়েটা কিনা বাবার মৃত্যুতে নিরুদ্বেগ! পত্র আর ডাকলো না বিন্নীকে। কেবল চুপচাপ দেখলো মেয়েটার কাণ্ড। নিচ থেকে তখন পরিচিত কণ্ঠ ভেসে আসতেই পত্র উঁকি মারে উঠোনে। আতসের চিন্তিত চেহারা ভেসে উঠে। লোকটা বিন্নীর বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েই বোধহয় ছুটে এসেছে। কিন্তু এতটা উৎকণ্ঠা তো তার চোখেমুখে থাকার কথা না। তবে কেন এত উৎকণ্ঠা? কিসের চিন্তা তার? বিন্নীর জন্য ই কী সে চিন্তা!
–
পদ্মের আশীর্বাদের তারিখটা সকলে পিছাতে বললেও ছায়া তা করলেন না। নিজের কথায় সে অটুট রইলো। সন্ধ্যার দিকে পদ্মের আশীর্বাদ হয়ে গেলো বেশ সাদামাটা ভাবেই। যদিও পদ্মের মুখে আনন্দের ছিটেফোঁটা ছিলো না কিন্তু ছায়া ছিলো প্রচণ্ড খুশি। তার মুখ থেকে এক সেকেন্ডর জন্যও যেন হাসি সরে নি। সে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে এমন তা করে দেখিয়েছে। গ্রামবাসী কয়েকজন তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছে, কেউবা ধিক্কার দিয়েছে আবার কেউ প্রশংসাও করেছে।
দেখতে দেখতে সকল ব্যস্ততা কাটিয়ে রাত নেমেছে প্রকৃতির বুকে। পরেশ মামা বসে আছেন উঠোনের মধ্যিখানে কাঠের চেয়ারে। ছায়া রান্নাঘরেই টুকটাক কাজ সারছেন। পরেশ মামা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তৃপ্তির শ্বাস ফেললেন। তার আবার সময়-অসময়ে চা খাওয়ার অভ্যেস। উঠোনে আপাতত কেউ নেই। সমিরবাবু কেয়ারটেকারের কাজটা ছেড়ে দিয়েছেন কয়েকদিন আগেই। তাই আজকাল নতুন কাজের সন্ধানে থাকেন। পুষ্প আজও অভ্রদা’র বাড়িতে চলে গেছে। গ্রামের আরও কয়েকজন মহিলা অবশ্য সেখানে আছে, সাথে পুষ্পও থাকবে। পত্র বাড়ির কথা ভেবে আর যায় নি। বর্তমানে সে নিজের ঘরে কিছু একটা করছে আর পদ্ম শুয়ে আছে নিজের ঘরের বিছানায়।
পরেশ চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুকটা দিয়ে খানিক গলা পরিষ্কার করে ছায়ার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলো এবং সক্ষমও হলো। ছায়া নীরব দৃষ্টিতে তাকালো পরেশের দিকে, ধীর কণ্ঠে বললো,
“কিছু বলবেন?”
“তুই এখনও পত্রের সাথে খারাপ আচরণ করিস কেন?”
ছায়ার ব্যস্ত, কর্মঠ হাতটা থেমে গেলো পরেশের প্রশ্নে। বার দুয়েক পলক ফেলে তাকালো আঁধারে বসে থাকা মানুষটার দিকে। অতঃপর গোপনে একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“তেমন কিছুই না।”
“তুই চোখ ফাঁকি দিতে চাস আমার?”
ছায়া জবাব দিলেন না। নিচের দিকে তাকিয়ে আপন মনে নিজের কাজ করতে থাকলেন। পরেশও আর কিছু বললেন না। অলস হাতে নিজের চা টুকু শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। চায়ের কাপটা রান্নাঘরের দরজার সামনে রেখে ধীর কণ্ঠে বললেন,
“তোর সাথে সরলার সম্পর্কও আমি দেখে ছিলাম। এতটা বদলানোর কোনো কারণ ছিলো না, তবুও তুই বদলেছিলি, কেন?”
“তারও কোনো উত্তর নেই।”
ছায়ার একরোখা উত্তরে তপ্ত শ্বাস ফেললো পরেশ। ক্ষীণ স্বরে বললো,
“আমি একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি।”
“আপনি তো শহরে থাকেন, বিয়ে করেন নি কেন?”
“তারও উত্তর আমার কাছে নেই।”
বাক্য টুকু শেষ করেই পরেশ তৎক্ষণাৎ প্রস্থান নিলো। ছায়া তাকালো না অব্দি সে দিকে। সে যেন জানতো এমন একটা উত্তর দিবে পরেশ। তার ঠিক কিছুক্ষণ বাদেই পদ্ম ঘর থেকে ছুটে এলো হুড়মুড় করে। কল পাড় অব্দি এসেই বমি করে ভাসিয়ে দিলো। পদ্মের বমির শব্দে পত্রও ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ছায়া নিজেও রান্নাঘর থেকে উঠে গিয়ে পদ্মের পাশে দাঁড়ালো। পত্রের চোখ-মুখে বিচলিত হাবভাব দেখা গেলেও ছায়ার অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন ছিলো না। সে নিরুত্তর চেয়ে রইলো। পদ্ম বমি করতে করতে ক্লান্ত হতেই তার চোখ-মুখে জলের ঝাপ্টা দিলো ছায়া। মাথায় খানিক জলও ঢাললো। তারপর আবার নিজের আঁচল দিয়ে মুছে দিলো সে জল। পদ্ম ততক্ষণে প্রায় নেতিয়ে গেছে। পত্র চিন্তিত কণ্ঠে বললো,
“কী হয়েছে বড়দি তোমার? মা, কী হয়েছে গো? হুট করে বমি করলো?”
“অবেলায় খেয়েছে তো, তাই বোধহয় বদহজম হয়ে গেছে। তুই যা নিজের ঘরে, আমি আছি ওর সাথে।”
মায়ের স্বাভাবিক উত্তরটাও অস্বাভাবিক লাগলো পত্রের। সে ভ্রু কুঁচকে বললো,
“খেয়েছে তো অল্প একটু। তাছাড়া আজকাল তো বড়দি খেতেই চায় না, তুমি বরং একটু ডাক্তার দেখাও বড়দিকে। নিশ্চয় কিছু হয়েছে ওর।”
“তোমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেছে? যেতে বলেছি না এখান থেকে? যাও বলছি।”
মায়ের ধমকে কিঞ্চিৎ থতমত খেয়ে গেল পত্র। মা যখন অনেক গম্ভীর হয়ে যান তখন কেমন তুমি, তুমি করে কথা বলে। মায়ের আচরণে বোঝা গেলো মা এখনও গম্ভীর হয়ে গেছেন। কিন্তু পত্রের সন্দেহ মিটলো না। সে নিজের ঘরে যেতে যেতে মায়ের চাপা ধমক শুনলো। মা কেমন তাচ্ছিল্য করে বলছে,
“এখন বুজছো তো, ভুল আবেগে গা ভাসালে কী হয়? যে তোমার এসবের জন্য দায়ী সে কোথায় আজ? পিঠ বাঁচিয়ে তো ঠিক চলে গেলো। তুমিই এখন ফেলনা যাবে সমাজের কাছে। তাই যা বলছি তা-ই করো। রাতুল ছেলেটা বেশ ভালো। ও তোমাকে ভালো রাখবে। ওর পরিবার বলতে তেমন কেউ নেই। তোমাকে নিয়ে সদরে চলে গেলে আর কলঙ্কের ভয় নেই৷ আমি তোমার ভালো চাই।”
মায়ের কথা শেষ হতেই পদ্ম হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো মাকে জড়িয়ে। পত্রেরও যেন হিসেব মেলাতে সুবিধা হয়ে গেলো। সে বুঝতে পারছে বড়দির কালো অধ্যায়ের কথা। এবার সরাসরি জিজ্ঞেস করলে সে তার উত্তর পেয়ে যাবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। মা যখন বড়দিকে নিয়ে ঘরে শুয়ে আসলো পত্র তখন নিজের ঘরে সুযোগের অপেক্ষা করছিল। ছায়া পদ্মের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে যেতেই পত্র হাজির হলো বড়দির ঘরে। পদ্ম তখন কপালে হাত ঠেকিয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর তার শরীর কাঁপছে। খুব সম্ভবত কান্নার দাপটে কেঁপে কেঁপে উঠছে। পত্র সেদিকে তাকিয়ে নিজেকে তৈরী করলো, অতঃপর বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“বড়দি, আমি যদি খুব ভুল না হই তবে তোমার সর্বনাশের কারণ বিপ্লব ভাই, তাই না?”
পদ্ম চমকে উঠলো। তৎক্ষণাৎ তার চোখের উপর থেকে হাতটা সরে গেলো। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো ছোটো বোনের দিকে। পত্র এগিয়ে এলো, বাঁকা হেসে বললো,
“পুকুরপাড়ে তার সাথেই তো গভীর প্রেমে মত্ত হতে। সেই প্রেমেরই ফল এটা? সত্যি বলছি না?”
পদ্মের যেন উত্তর দেওয়ার আর ভাষা নেই। পর পর এভাবে ধরা পড়ে যাবে সে ভাবতেই পারে নি। চোখে-মুখে অবিশ্বাসের উপচে পড়া ঢেউ। পত্র তা দেখে জলচৌকিতে বসলো। তাচ্ছিল্য করে বললো,
“বিপ্লব ভাই কে তো আজকাল আর দেখা যাচ্ছে না। সেদিন মায়ের জ্বরের ওষুধ দিতে এলো এরপর তার আর দেখা নেই। কী ব্যাপার বলো তো?”
পত্রের প্রশ্নের বেড়াজালে হাসফাস করে উঠলো পদ্ম। উপায় না পেয়ে শেষমেশ কেঁদে উঠলো। দু’হাতে মুখ ঢেকে বললো,
“কাপুরুষ ও, কাপুরুষ ছিলো। ভুল প্রেমে মত্ত হওয়া জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাপ ছিলো। ওরে বিশ্বাস করে আমি জীবনের সবটা দান করেছি অথচ ও আমাকে শেষ করে দিলো পত্র। একবারে শেষ করে দিলো। আমাকে ডুবিয়ে ও পালিয়েছে এখন। কথা রাখে নি ও।”
পত্র ক্রন্দনরত বোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার ভেতরে প্রশ্নরা হামাগুড়ি খাচ্ছে। সেই প্রশ্নদের দমিয়ে রাখতে না পেরে অবশেষে সে প্রশ্ন করেই বসলো,
“আমি তোমাকে দেখেছিলাম সন্ধ্যাবেলা পুকুর পাড়ে। বিন্নী দেখিয়েছিল। এতদিন সঠিক সুযোগের জন্য বলি নি। আবার তুমি অস্বীকার করবে তাই বলি নি। কিন্তু মা জানলো কীভাবে এসব? তবে কী বিন্নী বললো?”
#চলবে