#বৃষ্টি_থামার_আগে
#পর্ব_০২ (অন্তিম পর্ব)
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
পরিবারের সাথে কাটানো সময়গুলো খুব দ্রুতই চলে যায়। আজ মিরার হলুদ সন্ধ্যা। সকাল থেকেই সবাই বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যস্ত আর পুতুলের মতো মিরা বসে আছে। মিরা কিছু ধরতে গেলেই ওকে ঠেলে পাঠিয়ে দিয়েছে এতে মিরা বেশ বিরক্ত!সবাই এমন ভাব করছে যেনো ধরলেই ওর হাত পুড়ে যাবে। মিরা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মিহি এসে বলে,”কি হয়েছে তোর আপু?মন খারাপ করে বসে আছিস কেনো?”
তখন ওদের এক কাজিন মিহির কানের কাছে কিছু একটা বলল মিহি হেসে বলে,”আরে এই ব্যাপার?তুই কাজ করতে চাস?একটু পর পার্লারের মহিলারা আসবে তখন সাজবি এটাই অনেক বড় কাজ তোর জন্য বুঝলি।’
মিরা ছোট ছোট চোখ করে মিহির দিকে তাকালো,বলল,”এখন এইখান থেকে যাবি তুই?”
মিহি আর ওর কাজিন হাসতে হাসতে চলে গেলো। বিকালে পার্লারের মহিলারা মিরাকে সাজাতে আসলো। তারা মিরাকে সাজিয়ে চলে গেলো মিরার মনে হচ্ছে ওর মুখে কেউ আলগা কলপ লাগিয়েছে বিরক্তির সহিত বসে ছিলো তখন মিহি কানের দুল পড়তে পড়তে এগিয়ে এসে বলে,”দেখ আমিও রেডি?”
মিরা মিহিকে খোচা মেরে বলল,”কাজ শেষ তোর?তুই তো আবার অনেক কর্মঠ!”
মিহি এক গাল হাসলো,বলল,”আজকে সবাই হলুদ লাগাতে লাগাতে দেখিস তুই এমনেই হাঁপিয়ে উঠবি। বুঝলি আপু।”
মিহির কথায় কোনো পাত্তা দিলো না মিরা। আসলে ও মিহির কথার আসল মানেই বুঝলো না। সবার রেডি হতেই মিরাকে নিয়ে আস্তে আস্তে সবাই ছাদে উঠলো৷ মিরাকে স্টেজে বসানো হলো। হলুদ আয়োজন শুরু হয়েছে সবাই মিরাকে হলুদ দিচ্ছে মিরা এখন হাঁপিয়ে উঠেছে সত্যিকারে এখন বুঝতে পারছে মিহির বলা কিথাটা তিতা হলেও সত্য। বেশকিছুক্ষন পর মিরার ফোনে একটা মেসেজ এলো মিরা সবার অগোচরে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রাদ মেসেজ দিয়েছে রাদের মেসেজ দেখে আনমনেই মুচকি হাসলো মিরা। এই কয়েকদিন এই বিয়ে নিয়ে অনেক চিন্তা করেছে পরেই ভেবেছে এতো চিন্তা করে লাভ নেই কপালে যা আছে তাই’ই হবে।
মিরা মেসেজ ওপেন করে দেখলো রাদ নিজের ছবি দিয়েছে। মিরা কি দিবে বুঝতে পারছিলো না কিছু লিখতে যাবে তখনই কারোর ডাকে ভুলবশত ছবিতে লাভ রিয়েক্ট পড়ে যায়। কি এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কি না কি ভাবলো রাদ?নিশ্চয়ই ভাববে মিরা দিয়েছে কিন্তু আসলে যে এটা ভুলবশত পরে গিয়েছে তা ও কিভাবে বুঝবে।
মিরাকে হলুদ দেওয়ার সময় অনেকেই তার কানে কানে অনেক কথা বলল মিরা তা পাত্তা দিলো না। হঠাৎ মিহি এসে বলে,”আপু একটু তাকা।”
মিরার তাকাতেই ঝপাঝপ মিহি একটা ছবি তুলে নিলো। দাঁত কেলিয়ে হেসে মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,”ভাইয়া চেয়েছিলো তোর ছবি তাই তুললাম হিহি।”
মিরা থামাতে যেয়েও পারলো না তার আগেই মিহি দৌড় দিয়ে চলে গেলো। মিরা দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো কাছে পেলেই মিহিকে চিবিয়ে খাবে পারলে। দীর্ঘ অনেকটা সময় হলুদ প্রোগ্রাম চলল। গান বাজনায় মিরার মাথা ধরে গিয়েছে। সবাই যার যার মতো মজা করছে মিরা কাউকে ডাকতেও পারছে না। কিছুক্ষন পর মিহি এসে বলে,”কি হয়েছে তোর আপু?”
মিরা বলল,”মাথা ধরেছে অনেক। আচ্ছা তোরা নাঁচ আমি যাই?”
মিহি কিছুক্ষন ভেবে বলল,”আচ্ছা ঠিকাছে।”
মিরাকে মিরার রুমে দিয়ে আসলো মিহি। মিরার রুমে আসার পর আরো অনেকক্ষন গান বাজনা চলছিলো। মিরা কোনোদিক তোয়াক্কা না করে ফ্রেশ হয়ে এসে একটা মাথা ব্যথার ওষুধ খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সাথে সাথে ঘুমের দেশে তলিয়ে। ক্লান্তি মাখা শরীর নিয়ে ঘুমালে দুই মিনিটও সময় লাগে না ঘুমাতে এটাই স্বাভাবিক।
পরেরদিন_
সকালে উঠে মাথা অনেক ভার ভার লাগছিলো মিরার। হালকা হালকা চিনচিন ব্যথা এখনো আছে। সবাই কাজ করতে ব্যস্ত তারউপর তাকে আবার জানানো হয়েছে ওকে সাজাতে মেকাপ আর্টিস্ট আসবেন বারোটার দিকে ও যেনো শাওয়ার নিয়ে রেডি থাকে।
মিরা নেহার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছিলো শাওয়ার নিয়ে। নেহাও বিয়েতে দুইদিন ধরে ওদের বাড়িতে আছে,এক মাত্র বান্ধুবির বিয়ে বলে কথা,নিজে কাজ না করলে কেমন দেখায়!ওরা গল্প করছিলো ঠিক সেই সময় অর্থাৎ দুপুরের দিকে মেকাপ আর্টিস্ট আসলেন মিরাকে সাজাতে। সাধারণত সবাই পার্লারে যেয়ে সাজে কিন্তু মিরার বোন মিহির তাদের বাসায় এসে সাজাতে বলেছিলো তাই তারা মিরাকে বাসায় এসে সাজাবেন।
মিরাকে সাজিয়ে তারা চলে যান। মিরা নিজেকে আয়নায় দেখলো একবার কেমন আলাদা আলাদা লাগছে তাকে দেখতে। সবার রেডি হতেই আস্তে ধীরে ওরা সেন্টারের উদ্দেশ্যে বের হয়।রাদরা আগেই এসে পরেছিলো মিরাকে রাদের পাশে বসানো হয় মিরা কেনো জানি সবার মাঝে লজ্জাবোধ করছিলো কিছুটা। আজ ওর বিয়ে তাও আবার রাদের সাথে।
কিছুক্ষন পর কাজী এসে তাড়া দিয়ে বিয়ে পড়ানো শুরু করার অনুমতি চাইলেন সবাই কিছুক্ষন ভেবে দিয়েও দিলো। উনি বিয়ে পরানো শুরু করলেন প্রথমে রাদকে বলতে বললে সে বিনা দ্বিধায় কবুল বলে দেয়। মিরাকে বলতে বললে সে কিছুটা সঙ্গকোচ বোধ করে কিন্তু সবার তাড়া দেওয়াতে সেও কাঁপা গলায় বলে দেয়। অতঃপর তারা এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। এমন বন্ধন যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসাথে রাখে।
মিরাকে বিদায় দেওয়ার সময় মিহি অনেক কেঁদেছে একমাত্র বোনের বিদায় না কাঁদলে পারে?মিরার বাবা-মাও মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছেন মিরাও। বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যের বাড়ি যাবে কাঁদারই কথা। মিরাকে বিদায় দেওয়ার আগে মিরার বাবা-মা রাদকে বলেন,”বাবা অনেক আদরের মেয়ে মিরা আমাদের। ওকে কোনোরকম কষ্ট দিও না দয়া করে।”
রাদ মুচকি হেসে বলে,”চিন্তা করবেন না মিরাকে আমি সুখি রাখবো।
২.
মিরার বিয়ের কিছুমাস কেটে গিয়েছে সাথে কেটে গিয়েছে অনেক কিছুই। সবচেয়ে বড় কথা মিরা মন থেকে রাদকে মেনে নিয়েছে। মিরা বিয়ের প্রথম আজ রাদদের ছাদে উঠলো। বর্ষার মাস, ঝুম বৃষ্টি পড়ছে চারদিকে মিরা খুশিতে লাফাতে লাফাতে ছাদে গেলো। বৃষ্টি ওর খুব ভালো লাগে ইনফ্যাক্ট ও নিজেও বৃষ্টির দিনে হয়েছিলো।
মিরাকে ছাদে আসতে দেখে রাদও মিরার পিছে পিছে ছাদে আসে। আজ ভার্সিটি ছুটি যার জন্য রাদ যায়নি মিরার সাথে বাসায় আছে। রাদ ছাদে এসে দেখলো মিরা এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি ওকে ছুয়ে ছুয়ে মাটিয়ে পড়ছে খুব আকর্ষনীয় লাগছে মিরাকে। রাদ যেনো এক অজানা ঘোরের মধ্যে ডুব দিলো। ধ্যান ভাঙলো মিরার চিৎকারে। ভয় পেয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টিতে মিরা এতোই খুশি যে ও খুশিতে রীতি মতো বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে যেনো এক গাল হাসলো রাদ মেয়েটা অনেকটা বাচ্চা বাচ্চা টাইপ,হয়তো বাচ্চামো করতে বেশি’ই পছন্দ করে। রাদ কিছুক্ষন ভেবে মিরাকে ডাকলো। মিরাকে তাড়া দিয়ে বলল,
“মিরা চলে এসো!জ্বর এসে পড়বে নাহলে।”
মিরা সরু দৃষ্টিতে রাদের দিকে তাকালো। মিরার এই দৃষ্টিটা রাদের কাছে বড্ড প্রিয়। মিরা বলল,”আরেক রাদ স্যার। #বৃষ্টি_থামার_আগে মন ভরে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই।”
মিরার দিকে তাকিয়ে রাদ এগিয়ে এসে বলল,”#বৃষ্টি_থামার_আগে আমিও তোমার সাথে সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই মিরা।”
#সমাপ্ত