#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১১ বোনাস পর্ব
#নবনী_নীলা
রুহি সিড়ি বেয়ে নীচে এসে দেখে আহান আর সামিরা একসাথে সোফায় বসে আছে। দিদা সবাইকে নিচে ডেকেছে সবার সামনে এভাবে বসতে এদের লজ্জা করে না বুঝি বির বির করে বললো রুহি। আহান নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত একটা হাত সোফার উপরে রেখে আরেক হাতের কনুই সোফার হ্যান্ডেল ভর করে ফোন দেখছে আর সামিরা আহানের একদম গা ঘেঁষে বসে আছে।
সামিরা কে বাড়ির সবাই চিনে ওদের যেত রিলেশন ছিল সেটাও সবাই জানে তবে ছোটো থেকে সামিরা কে দেখেছে এরা। সেই সুযোগ নিয়ে দেশে বেড়াবে বলে রয়ে গেছে এ বাড়িতে। সবাই নিচে আছে শুধু আহানের মা নেই। হয়তো আহানের জন্যই আসেনি। এদের মা ছেলের কিসের যুদ্ধ কে জানে?
রুহি একটা মেরুন রঙের থ্রি পিস পরেছে, চুলগুলো খোলা। ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরাতেই রুহির দিকে তাকালো আহান। মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে, এ কেমন অনুভূতি যা আহানকে রুহির দিকে টানে। রুহি চুপ চাপ আহানকে পাশ কাটিয়ে দিদার পাশে গিয়ে বসে পড়লো।
দিদা সামিরার এমন ব্যাবহারের পিছনের উদ্দেশ্য জানা, তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। দিদা একটু কেশে উঠতেই রুহি তড়িঘড়ি করে পানি আনতে গেলো। রুহি দিদাকে পানি খাইয়ে গ্লাস রাখে আসতে গেলো। এর মাঝে দিদা হাতের ইশারায় সামিরা কে ডাকলো। সামিরা একবার আহানের দিকে তাকালো তারপর উঠে দিদার কাছে গেলো। দিদা সামিরার হাত ধরে নিজের কাছে বসিয়ে বললো,” তুমি আমার কাছে বসো। তোমার সাথে তো কথাই হয় নি।” খুব বুদ্ধি খাটিয়ে দিদা সামিরাকে আহানের পাশ থেকে সরিয়ে আনলো।
ফিরে এসে সামিরাকে দিদার পাশে দেখে রুহির মাথা গরম হয়ে গেল। আমার জায়গার উপরে খালি এ মেয়ের নজর। রুহি চোখ বুলিয়ে দেখলো সবটা কোথাও খালি সোফা নেই আর কোথায় গিয়ে বসবে নিশ্চই নিজের শ্বশুরের পাশে গিয়ে বসবে না। বসতে হবে কার পাশে? এই কুম্ভকর্ণটার পাশে!
রুহি মুখ কালো করে বসলো আহানের পাশে, আহানের দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনের দিকে। আহান এমনভাবে ফোনে স্ক্রোল করছে যেনো এই ফোনে পৃথিবীর সব নিয়ে ঘুরছে।
দিদা তখন থেকে শুধু সামিরার সাথে কথা বলে যাচ্ছে রুহির ইচ্ছে করছে এই কুম্ভকর্ণ আর শাকচুন্নি মাথা একত্র করে দুটোর সাথে দুটো বাড়ি দেয়।
কিছুক্ষণ পর দিদা সবাইকে জানালো কি কারণে তাদের ডাকা হয়েছে। দুদিন পর সুপ্রভার জন্মদিন, প্রতিবছর সেটা খুব বড়ো করেই হয়। দিদা চাইছেন এবার আরো বড়ো করে করতে রহমান পরিবারের সব কাছের মানুষদের সেখানে আসতেই হবে, এরপর বিদেশে ট্রিটমেন্ট করতে গেলে হয়তো আর কারোর সাথে দেখা হবে না।
সবাই মিলে সেই আয়োজন নিয়ে কথা বলছিলো আর রুহি চুপ করে সেসব শুনছিল, তাকে যে কেনো এখানে বসিয়ে রাখা হয়েছে সে নিজেও জানে না।
হটাৎ একটা ইদুর দেখে সামিরা লাফিয়ে উঠে পড়লো সোফায় ভাগ্যিস তখন দিদা পাশে ছিলেন না।
” আহ রেট আই হেট রেট! এটাকে তাড়াও তোমরা প্লীজ। হেল্প মি আমাকে বাঁচাও।”, বোলে চেঁচাতে লাগলো। আহান বিরক্তির চোখে সামিরার দিকে তাকালো, সে বরাবরই এমন। তারপর নিজের পাশে রুহির দিকে তাকালো রুহি দুই হাটু তুলে তাদের জড়িয়ে ধরে বিস্ময় নিয়ে সামিরাকে দেখছে। রুহির মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আহান নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেললো।
তারপর হাবু কাকা এসে বুঝিয়ে সুজিয়ে সামিরাকে নামলো সোফা থেকে, তারপর সামিরা পালাই পালাই করে নিজের রুমে চলে গেল।
আজব ইদুরের কি ডানা আছে যে উড়ে উড়ে এই মেয়ের কাছে যাবে। ভয় লাগলে পা তুলে রাখলেই হয়। ইদুরের যেদিকে যাওয়ার সেদিকেই যাবে। ইদুর নিশ্চই মানুষকে কামড়াতে আসবে না।
রুহির মুখে অদ্ভুত এক এক্সপ্রেশন আহান হাতের উপর গালের ভর দিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। সামিরা চলে যাবার পর রুহি আহানের দিকে তাকাতেই দেখলো আহান রুহির দিকেই তাকিয়ে আছে।
রুহি একটু এগিয়ে গিয়ে আহানকে বললো,” যেই মেয়েরা ইদুর দেখে লাফালাফি করে তাদেরকে আপনার অনেক পছন্দ তাই না?”, বলেই ঠোঁট চিপে হাসলো রুহি।
আহান সোফার উপরের হাতটা আস্তে করে রুহির ঘাড়ে ছোঁয়াতেই রুহি ভয়ে কেঁপে উঠলো। সাড়া শরীর শিউরে উঠলো তার। আহান একটু এগিয়ে এসে বলল,” না আমার সাহসী মেয়ে পছন্দ। আমি বাঘ হলে আমার পার্টনারকেও তো বাঘিনী হতে হবে।”, রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো আহান। তারপর উঠে চলে গেলো। ” অসভ্য লোক একটা।”, বির বির করে বললো রুহি।
রাতে রুহি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে কারণ সে ঘুমে একেবারে ঢুলে পরে যাচ্ছিলো। আহান বরাবরের মতোই দেরী করে ঘুমাতে যায় আজও তাই। সব কাজ শেষ করে ঘুমাতে যাবার আগে এসে রুহির সোফার সামনে বসে রইলো কিছুক্ষণ। আহানের ইচ্ছে করছে রুহিকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়। পাহাড়ের সেই দুইরাত কতোটা সুন্দর ছিলো। আহান নিশ্চুপে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহির ঠোঁটের দিকে তাকালেই সে রাতের ঘটনাটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। কি যেনো একটা হয় আহানের। এর আগে এমন অনুভূতি সে আর কারোর জন্য অনুভব করে নি। এই মেয়েটি আহান রহমানকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।
🍁🍁🍁
পরেরদিন সন্ধ্যায় আহান কিছু লোক আনিয়ে সোফাটা বিদেয় করে দিলো। নিজের ইচ্ছেই করেছে সেটা আহান। রুহি রাতে ঘুমানোর সময় এসে সোফা না দেখে অবাক হয়ে গেলো।
” সোফাটা কোথায় গেলো? হায় হায়!”, বোলেই আহানের দিকে তাকালো রুহি।
আহান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো,”ঐ ডিজাইন পুরোনো হয়ে গেছে তাই পাল্টাতে দিয়েছি। আমার নতুন ডিজাইন লাগাবে।”
রুহির মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো। ভাবখানা দেখো যেনো নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধর। ” মানে কি আমি ঘুমাবো কোথায়?”
আহান ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে রুহির দিকে তাকালো তারপর বললো,” এতো বড়ো বিছানাটা আছে কি করতে? যতদিন অন্য ব্যাবস্থা হচ্ছে না এতেই কাজ চালাতে হবে।”
” নাহ্ কখনোই না, যেখানে আমার নিজের উপরেই বিশ্বাস নেই সেখানে আপনাকেও আমি বিশ্বাস করতে পারবো না। এই রিস্ক আমি নিচ্ছি না।”,
” রিস্ক নিচ্ছ না মানে? তুমি কি বলতে চাইছে আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমালে তুমি নিজেকে আমার কাছে আসা থেকে আটকাতে পারবে না?,”লেপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একটু হেসে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আহান।
মুখের উপর আহান এমন কথা শুনাবে সেটা রুহি ভাবতেই পারে নি, কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো রুহ তারপর বললো,” মোটেই আমি সেটা বলিনি। আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার কাছে যাওয়ার জন্য পাগল হব। কি ভেবেছেন কি আপনি আমাকে আমি কি আপনার প্রেমিকার মতন যখন তখন আপনার গায়ে ঢলে পড়ি, নাকি?।”
আহান লেপটপ বন্ধ করে উঠে এসে রুহির সামনে দাঁড়ালো তারপর বললো,” সামিরা আমার এক্স।”
” ওহ তাই বুঝি? আসলে আমি কারোর এক্সকে এভাবে অষ্টে পিষ্ঠে একে অপরের সাথে লেগে থাকতে দেখিনি কখনো। তা আপনার কয়টা এক্স?”, আর চোখে তাকিয়ে বলল রুহি।
” তোমার এতো ইন্টারেস্ট কিসের?”, দুই হাত বুকের কাছে ভাজ করে বললো আহান।
” নাহ্ ঠিক ইন্টারেস্ট নেই তবে ভাবুন আপনার সবগুলো এক্স এসে একটা আরেকটার মাথার চুল ছিঁড়ছে।”,বলেই মুখ টিপে হাসতে হাসতে কাবাড থেকে নীচে ঘুমানোর ব্যাবস্থা করার জন্য কিছু খুঁজছে।
” ওসব উসলেস জিনিষ তুমিই ভাবো। আর তুমি করছো কি? কি খুজছো?”, রুহির হাত ধরে রুহিকে টেনে তুলে বললো আহান।
” আরে ছাড়ুন, আমি নীচে ঘুমানোর জন্য ব্যাবস্থা করছি কিন্তু কিছু পাচ্ছি না তো।”, এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে খুঁজতে বোলো রুহি।
” তার মানে তুমি বিছানায় ঘুমাবে না এইতো? এটাই ফাইনাল।”, শক্ত চোখে বললো আহান।
” হ্যা।”, মুখ বাঁকিয়ে বললো রুহি।
” আরেকবার ভাবার সময় দিচ্ছি। “,
” এতো সময় দিয়ে লাভ নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে একপাও নড়ছি না।”
” এখন আমি যা করবো তার জন্য দায়ি থাকবে তুমি কারণ ভদ্র ভাবে বলেছিলাম তুমি শুননি। তোমার তো আবার অভদ্র ভাষা বেশী ভালো লাগে,” বোলেই রুহির কোমড় ধরে কাছে নিয়ে এলো। রুহির কোমড়ে আহানের ঠান্ডা হাতের স্পর্শে সারা শরীর কেপে উঠলো রুহির। আহান রুহির ডান হাতটা নিজের কাধের উপরে রেখে রুহিকে কোলে তুলে নিলো।
রুহি পরে যাবার ভয়ে চোখ বন্ধ করে আহানে শার্ট চেপে ধরলো। তারপর আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই দেখলো আহান তার দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো তারপর লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো,” কি করছেন? ছাড়ুন আমাকে।”
” ছাড়ার জন্যতো তো ধরিনি।”, বোলে রুহিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিতেই চোখে পড়লো দুজনের। রুহি সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে আহানের শার্ট ছেড়ে দিয়ে হাত নামিয়ে রাখলো। কিন্তু আহান সরছে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে। রুহির বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। ঘামতে শুরু করেছে,এতো নার্ভাস সে এর আগে কখনো হয়নি। রুহি আহানকে সরে যেতে বলতে গিয়ে আহানের দিকে তাকালো। আহান এগিয়ে আসছে তার কাছে আহানের দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে রুহির দিকে,রুহি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আহান রুহির কানের কাছে মুখ নিয়ে দুষ্টুমি করে বললো,” বাহ্ তুমি তো দেখি লজ্জাও পাও।” কথাটা রুহির কর্নগোচর হতেই চোখ বড়ো বড়ো করে আহানের পাশে মুখ ঘুরাতেই দুজনের মাঝে দুরত্ব আরো কম গেলো। আহানের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে রুহির গলায়। শরীরের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে বার বার। রেগে গিয়েও রাগ ধরে রাখতে পারলো না। শেষমেশ চোখ বন্ধ করে আহানকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো,”তো আমি কি আপনার মত নিলজ্জ?”
আহান উল্টো দিকে ফিরে কানের উপর বালিশ চাপা দিয়ে হাত নাড়িয়ে বললো,” গুড নাইট।”
রুহির শরীর রাগে গজগজ করছে। কানের উপর বালিশ চাপা দিয়েছে যেনো আমার কথা না শুনতে হয়। অসভ্য লোক একটা।আপনাকে ধরে বেধে রাখা উচিৎ জোড়ে জোড়ে কথাটা বলে আহান থেকে চাদরটা টান মেরে নিয়ে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো রুহি।
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১২
#নবনী_নীলা
রুহি ব্লাউজের ফিতাটা কিছুতেই লাগতে পারছে না। উফ অসহ্য লাগছে তার। গোসল সেরে ভেজা চুলে সেই তখন থেকে আয়নার সামনে দাড়িয়ে ফিতাটা লাগানোর চেষ্টায় আছে কিন্তু এই শেষের দুইটা ফিতা কিছুতেই লাগাতে পারছে না। ফিতাও দেখি তার সাথে মশকরা শুরু করেছে।
আহান ঘরে ফাইল ফেলে গেছিলো, সেটা নিতে এসে দেখে রুহি দরজা খোলা রেখে ব্লাউজের ফিতা ঠিক করছে। আহানের মেজাজ চড়ে বসলো। সে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে বললো,” তোমার কি কমন সেন্সের অভাব। এভাবে দরজা খোলা রেখে কি করছো?”
আহানের গলার আওয়াজে রুহি লাফিয়ে উঠে ব্লাউজের পিছনের অংশ শক্ত করে চেপে ধরে ঘুরে দাড়ালো। রুহি বেশ অসস্তিতে পরে গেলো। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,” আপনি এভাবে রুমে এসেছেন কেনো?”
” এভাবে আসলাম মানে? আবার আমাকে প্রশ্ন করছো। তোমার কোনো সেন্স আছে কি নেই? নিচে ডেকরেশনের কাজ চলছে কতো স্টাফ এসছে, আমার জায়গায় অন্য কেউ যদি রুমে এসে পড়তো। এতোটা কেয়ারলেস কি করে হলে?”, রুহিকে ইচ্ছা মতন বকাবকি করলো আহান।
রুহি মাথা নিচু করে ব্লাউজের বাকি অংশ চেপে দাড়িয়ে আছে। সে দরজা খোলা রাখেনি দরজা চাপানো ছিলো, কখন বাতাসে দরজা খুলে গেছে রুহি খেয়াল করেনি। মুখ কালো করে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে সে। কথা গুলো শুনে হয়তো ঘাবড়ে গেছে রুহি। রুহির নিরবতা দেখে আহান রাগ কমিয়ে নিলো।তারপর রুহিকে বললো,” দেখি পিছনে ঘুরো।”
আহানের কথা শুনে চোখ বড় করে আহানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেললো রুহি। সে কেনো পিছনে ঘুরবে।
আহান বুকের কাছে হাত ভাজ করে বললো,” কি বললাম শুনতে পাও নি? পিছনে ঘুরো।”
রুহি দু পা পিছিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ঘেঁষে দাড়ালো। বুকের ভেতরে কেমন করছে। রুহি কাপা কাপা গলায় বললো,” আমি ভাবিকে ডেকে নিবো।”
” আচ্ছা তাই বুঝি? ভাবি সুপ্রভাকে নিয়ে স্কুলে গেছে। দিদা আছে শুধু, তুমি নিশ্চয় দিদাকে নিচ থেকে উপরে উঠাবে না।”, আহান ঘাড় কাত করে রুহিকে দেখছে।
রুহি জানে আহানের হেল্প নেওয়া ছাড়া তার কাছে কোনো উপায় নেই। এটা ভেবেই সে মাথা নিচু করে আছে। রীতিমতন ঘামছে সে।
” আচ্ছা হেল্প না লাগলে আমি চলে যাচ্ছি তবে একটু পর কিন্তু নিচের লোকগুলো উপরটা সাজাতে আসবে।”, বলে আহান বেরিয়ে যেতে নিলো।
” দাড়ান।”, নিচু স্বরে বলে পিছনে ঘুরলো রুহি। চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে সে। আয়নায় দেখা যাচ্ছে তাকে আহান এগিয়ে এসে রুহির কাছে দাড়ালো। রুহি এখনও শক্ত করে ব্লাউজের শেষের অংশ চেপে ধরে আছে। আহান রুহির হাতের দিকে তাকালো তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে রুহির হাতটা ধরে নিচে নামালো। রুহি চোখ খুলে সামনে তাকাতেই আয়নায় আহানকে দেখলো সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে ফেললো। আহান রুহির ব্লাউজের ফিতা লাগাতে গিয়ে রুহির পিঠের তিলটার উপর চোখ পড়লো, সঙ্গে সঙ্গে সে চোখ নামিয়ে নিলো। তবে দ্বিতীয়বারের মতন আবারও চোখ পড়লো।
আহান খুব সাবধানে ফিতা লাগিয়ে সরে এলো। নইলে লংক্কা কান্ড লাগিয়ে দিবে রুহি। রুহি সঙ্গে সঙ্গে সামনে ফিরলো।
আহান একবার রুহির দিকে তাকিয়ে নিজের ফাইল খুজতে লাগলো। বেডের পাশের ড্রয়ারে পেয়ে গেলো। যাবার আগে রুহি দিকে তাকালো মুখটা লাল হয়ে আছে রুহির, দেখতে ভালোই লাগছে তবে আরেকটু লাল করে দিলে ভালোই হয়। আহান রুহির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও রুহি বেশ টের পাচ্ছে যে আহান তার দিকেই এগিয়ে আসছে। রুহি দু হাতে শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আহান রুহির কানের মুখ নিয়ে বললো,” তোমার পিঠের তিলটা অনেক অ্যাট্রাক্টিভ।”
কথাটা শুনে রুহির পিলে চমকে উঠলো। চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো রুহি তারপর প্রচন্ড রেগে বলল,” আপনার চোখ এতো খারাপ কেনো? অসভ্য লোক একটা।”বোলেই চোখ সরিয়ে নিলো আহান থেকে।
” ঠিক বলেছো আমার চোখ আসলেই খারাপ কেনো জানো ? কারণ আমার নজর যার উপর একবার পরে যায়, সেটা শুধু আমারই হয়। হোক সেটা কোনো জিনিষ কিংবা মানুষ।”, রুহির মুখের সামনে এসে চোখে চোখ রেখে বললো আহান।
তারপর রুহির কোমড় জড়িয়ে একদম নিজের কাছে এনে চোখে চোখ রেখে বললো,” আর অসভ্য? আমি যদি অসভ্য হতাম না তাহলে রাতের পর রাত তুমি আহান রহমানের ঘরে টিকতে পারতে না।”বলেই রুহিকে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ শক্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে গেলো আহান।
রুহি একটা ঢোক গিলে, কপালের ঘাম মুছলো।
_____________________________
রুহি সারাদিন চুপ চাপ ছিলো। তার মাথায় শুধু সকালের কথাগুলো ভন ভন করে ঘুরছে। আহান বিকেলে বাড়ি ফিরেছে আসার পর রুহি একবারও তার সামনে যায় নি আর রুমেও আসেনি। সে তন্বীর সাথে গল্প করছে নিচে বসে। তন্বী আগেই চলে এসেছে। রুহি অনেক কিউরিসিটি থেকে তন্বীকে জিজ্ঞেস করলো,” আচ্ছা আমার শাশুরি এভাবে এক ঘরে থাকে কেনো? মানে ওনাকে খুব একটা দেখি না।”
” আসল ঘটনা আমিও জানি না তবে শুনেছিলাম উনি যৌবনে অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন। আহানের যখন দুবছর তখন কাউকে কিছু না জানিয়ে উনি পালিয়ে বিদেশে চলে যান। তবে কাকুর সাথে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। এইজন্যেই আহানের এতো রাগ ওনার উপরে। ওনাকে এ বাড়িতে কেউই দেখতে পারে না কিন্তু প্রকাশে কেউ বলে না। এই যে সামিরা দা ঢং ঐটাকেও কাকিমা নিয়ে এসেছেন।”
এদের পরিবারে কি ঝামেলা রে বাবা! মনে মনে বললো রুহি।
সামিরা দরজা দিয়ে ঢুকে ওদের দিকেই আসছে মনে হচ্ছে। তন্বী সামিরাকে দেখে বলল,” ঐ যে দেখো শয়তানের নাম নিয়েতেই শয়তান হাজির।”
সামিরা রুহি আর তন্বীর সামনে এসে দাড়ালো তারপর রুহিকে উদ্দেশ্য করে বললো,” তুমি রুহি রাইট? আমি একটু আহানের কাছে যাচ্ছি তুমি একটু আমাদের জন্য কফি বানিয়ে আনতে পারবে? আমি দেখতাম তুমি কেমন কফি বানাও।”
রুহির মাথায় যেনো শক্ত কিছুর বারি পড়লো। সে বানবে কফি? পানি গরম ছাড়া আর কিছুই সে পারে না। রুহি তড়িঘড়ি করে বললো,” কিন্তু আমি…”
” না না কোনো কিন্তু না। তুমি নিয়ে এসো।”, বলেই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। রুহির মেজাজ গেলো বিগড়ে।
” তুমি এ ঢংয়ের জন্য কফি বানাবে?”, মুখ কালো করে বললো তন্বী।
” তুমি খালি দেখো আমি কি করি। ফলো মি।”, বলে দুজনেই কিচেনে ঢুকলো।
আহান করিডোরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো। সামিরা ঘরে এসে তাই বিছানায় বসে আহানের কথা শেষ হবার অপেক্ষা করছিলো। ঘরের সোফাটা কোথায় সামিরা সেটাই ভাবছিলো। কথা শেষে আহান রূমে এসে সামিরাকে দেখে বললো,” তুই কখন এলি?”
সামিরা আহানের দিকে তাকালো তারপর হেসে বলল,” এইতো এই মাত্র। আচ্ছা? তোর ঘরের সোফাটা কোথায়?”
আহান সামিরার পাশে বসলো তারপর বললো,” তেমন কিছু না। কি জন্যে এসেছিস সেটা বল।”
” আমার কি এ রূমে আসতে কারণ লাগবে?”, কথাটা হেসে হেসে বলল সামিরা।
” আমি সেটা বলিনি। ইম্পর্ট্যান্ট কিছু বলবি কিনা সেটা জানতে চেয়েছি।”,
” তুই তো আমার কাছে সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট।”, আহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল সামিরা।
” এসব ছাড়া আর কিছু বলার থাকলে বলতে পারিস। আমি আগেই বলেছি সবটা শেষ।”, স্পষ্ট ভাবে বললো আহান।
” একবার বললেই সবটা শেষ হয়ে যায় না। আমি তোকে কখনো ভুলতে পারবো না।”, বলেই আহানের হাত ধরলো সামিরা।
এমন সময়ে কফি নিয়ে রুমে এলো রুহি। এভাবে হাত ধরে বসে থাকতে দেখে রুহির কেনো জানি খুব রাগ হচ্ছে। এই গরম কফি যদি এদের ধরে থাকা হাতের উপর ফেলে দেওয়া যেতো, খুব ভালো হতো। রুহি থমথমে মুখে দুটো কফি নিয়ে ওদের সামনে রাখলো।
” থ্যাংকস রুহি।”, হেসে উঠে বললো সামিরা তারপর কফির মগটা হাতে নিলো।
আহান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে বললো,” তুমি কফি বানিয়েছো।”,
রুহি হা বা না কিছুই বললো না। আহান কিছুক্ষণ কফির দিকে তাকিয়ে রইলো দেখতে কেমন অদ্ভুত লাগছে কফিটা। তাও হাতে নিলো আহান। সামিরা একটু মুখে দিয়েই কাশি দিতে শুরু করলো। রুহি মনে মনে বলল আমাকে অর্ডার দেওয়ার আগে এই কফির টেস্ট যেনো মনে থাকে। সামিরা কাশতে কাশতে বললো,” এটা কি বানিয়েছ তুমি?”
” আমি জানি না প্রথমবার বানালাম। আসলে একবার রান্না ঘরে গিয়ে রান্না ঘর পুড়িয়ে ফেলতে গিয়েছিলাম তারপর নানু আর আমায় সে ঘরে যেতে দেয় নি।” রুহির কথা শুনে আহান ঠোঁট চেপে হাসলো।
সামিরার কাশি থামছে না তাও সে বললো,” সেটা আগে বলবে না?”
” বলতেই গেছিলাম আপনিই তো বললেন, কোনো কিন্তু নয়।”
সামিরা ঠান্ডা পানির জন্য রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। রুহি সামিরার যাওয়া দেখে হাসতে লাগলো। আচ্ছা শিক্ষা দিয়েছি। শাকচুন্নি একটা। তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আহান কোনো অভিযোগ ছাড়াই কফিটা খাচ্ছে। রুহি আড় চোখে তাকিয়ে বলল,” আপনি এটা খাচ্ছেন কি করে?”
আহান কফি হাতে উঠে দাঁড়ালো তারপর কফিতে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললো,” এটার টেস্ট আমার পছন্দ হয়েছে।”
” এটার টেস্ট পছন্দ হয়েছে! কেমন টেস্ট এটার।”, বিস্ময় নিয়ে বললো রুহি।
আহান কফিতে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললো,” ঠিক তোমার মতন।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে বললো,” মানে?”
” মানে তোমার বুঝতে হবে না। সাড়া বিকেল কোথায় ছিলে তুমি?”, রুহির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আহান।
” জাহান্নামে ছিলাম আপনার কি?”, রেগে বলল রুহি।
” তোমার বক বক শুনে ওখান থেকেও বের করে দিয়েছে বুঝি?”, রুহির দিকে তাকাতে তাকাতে কফিতে আরেকটা চুমুক দিলো আহান। কফি পাউডার বেশি দিয়ে দিয়েছে রুহি।
” আপনার সমস্যাটা কি? “, গাল ফুলিয়ে বললো রুহি।
” আমার সমস্যাটা কি আমি জানি না, তবে সমস্যার সমাধানটা তুমি।”, কফির গ্লাসটা টেবিলে রাখলো আহান।
” মানে? এটা আবার কেমন সমস্যা।”, আড় চোখে তাকিয়ে বলল রুহি।
” সে মানেটা তুমি বুঝলে তো হতোই। আমি শুনেছিলাম কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে ভালোবাসলে একটা মেয়ে সেটা অনুভব করতে পারে। তোমার মনে হয় সে অনুভব ক্ষমতা কাজ করে না।”, বলে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো আহান।
রুহি হা করে তাকিয়ে রইল আহানের দিকে তারপর ভ্রু কুঁচকে মুখ দিয়ে শুধু কি? বের হলো রুহির। কারণ আহানের কথা তার মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে গেছে।
আহান রুহির দিকে একটু এগিয়ে এসে আদুরে ভঙ্গিতে বলল,” বোঝনি? বুঝিয়ে বলবো।”
রুহি কিছু বলার আগেই তন্বী রুহিকে ডাকতে ডাকতে রূমে ঢুকলো। আহান আড় চোখে তন্বীর দিকে তাকিয়ে রইলো। তন্বীটা সবসময় ভুল টাইমে ঘরেআসে।তন্বী এসেই রুহির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। যাবার আগে রুহি পিছনে আহানের দিকে তাকালো।
[ চলবে ]
[ চলবে ]
[ Don’t be a silent reader]🙅