#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৪
#নবনী_নীলা
আহান রুহির কানের কাছে মুখ এনে বললো,” এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো? লজ্জা পাওয়ার মতন তো আমি কিছু করিনি।”
রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকালো তারপর বির বির করে বললো,” লজ্জা কি জিনিস জানলেই না বুঝবে লজ্জা পাওয়ার মতন কিছু করেছে কি করে নি।”
দিদা ঘরে ঢুকে আহানকে ডাকতেই আহান আর রুহি দুজনেই ছিটকে সরে গেলো। আহান স্বাভাবিক ভাবে দিদার কাছে এগিয়ে এলো।
🍁
রুহি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বসে আছে কারণ তন্বী আর শিফা মিলে তাকে শং সাজাচ্ছে।
তখন থেকে বসিয়ে রেখেছে, সিম্পল মেকআপ করতে নাকি দু ঘন্টা সময় লাগে। রুহি চোখ বন্ধ করে মাথা হেলিয়ে চেয়ারে বসে ছিলো। বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে তাকালো রুহি।
” তন্বী দি তোমার হয় নি। আর কতো? একটু পর আমি ঘুমিয়ে না পড়ি।”,
” হয়ে গেছে এবার তুমি উঠে বসো। তারপর একটু চুলগুলো সেট করে দিবো তারপর তুমি রেডি।”, বলে রুহিকে উঠিয়ে বসালো।
রুহি সামনের আয়নায় নিজেকে দেখলো। বাহ্ ভালোই সাজিয়েছে তাকে তবে তার ঘুম পাচ্ছে। সাজলেই কেনো জানি রুহির অনেক ঘুম পায়। এর মধ্যে শিফা কিছু ড্রেস নিয়ে হাজির হয়ে বললো,” টেন টেনা…. আমি হাজির ড্রেস নিয়ে।”
রুহি শিফার দিকে তাকালো এই মেয়ের হাতে দেখি সব ওয়েস্টার্ন ড্রেস। রুহি ভ্রূ কুচকে শিফার দিকে তাকালো তারপর বললো,” আমি এইগুলো পড়বো? মাথা খারাপ নাকি? নীচে গুরোজনরা আছে না।”
” তো কি হয়েছে আমরা সবাই তো পড়বো। আর আমাদের কাছে এইগুলো নরমাল। আজকে তোমাকে এমন ভাবে সাজাবো সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে আর আহান ব্রো জ্বলবে।”, বোলেই খিল খিল করে হেসে উঠলো শিফা।
” না না, এমন পিঠ খোলা জামা আমি পড়বো না। ওয়েস্টার্ন পড়তে হলে ভদ্র কিছু বের করো।”,
” তো একদিন একটু হট লাগলে কি হবে। তুমি এইগুলোই পড়বে।”, শাসিয়ে বললো তন্বী।
” কিন্তু এইগুলো আমার সাথে যায় না। কেমন নেকী নেকী জামা। আমি পড়বো না।”
” আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা সেটাই পরো। বাপরে আহান ব্রো কিভাবে যে তোমায় হ্যান্ডেল করে কে জানে?”, চোখ বড় বড় করে বললো শিফা।
রুহি নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করতে চলে গেলো।
এদের কি অদ্ভুত পরিবার! নিচে বাচ্চা আর বয়স্কদের জন্য ব্যবস্থা আর ছাদের উপরে বাকিদের জন্য ব্যবস্থা। কি মহা বিপদে পড়েছে, কোথায় যাবে সে? ধুর উপরে কে যায়? এখনেই থাকি। রুহি নীচে এসে সুপ্রভার সাথে দুষ্টুমি শুরু করলো। সুপ্রভাকে পুরো ছোট্ট পরী লাগছে। বন্ধুদের সাথে এদিকে সেদিকে দৌড়াদৌড়ি করছে।
ভাবি রুহির পাশে এসে দাড়ালো।
” রুহি, তোমাকে তো সুন্দর লাগছে। তুমি নীচে বসে আছো কেনো। সবাই তো উপরে, যাও সেখানে।”
” তুমি যাবা না? তোমার সাথে যাবো।”,
” কী বাচ্চাদের মতোন কথা বলছো। আমি তো সুপ্রভার দৌড়াদৌড়ি শেষ হলে, তারপর ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে শাড়ি বদলে যাবো। এই শাড়ি পরে যাবো নাকি? আমার অনেক দেরী হবে তুমি যাও।”
” এটা কেমন গেট টুগেদার? কেউ নীচে কেউ উপরে।”
” আরে বোকা মেয়ে। উপরে ড্রিংস আনা হয়েছে। সবাই ইনজয় করবে। এখন দিদা দাদুর সামনে কি আর এসব হয়? আর দেখো তোমার ভাইয়াও আছে এইখানে। তুমি যাও।”
এর মাঝেই শিফা রুহিকে খুঁজতে চলে এলো। তারপর এসেই টেনে রুহিকে নিয়ে গেলো।
” আরে আমি তো মানুষ গরুর মতো টানছো কেনো শিফা।”, শিফাকে থামিয়ে বললো রুহি।
” ওহ সরি, গাল্টি সে মিসটেক হো গিয়া। তোমায় না অনেক কুল কুল লাগছে কিন্তু আরেকটু হট হলে বেশী ভালো হতো। একদম জমে ক্ষির হয়ে যেতো।”, হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো শিফা।
” তুমি না বড্ড পাকনা।”, রুহির কথায় শিফা হেসে ফেললো।
উপরে উঠে বেশ অবাক হলো। এই বাড়ির ছাদে সে এর আগে কখনো আসেনি। তাই ছাদে যে সুইমিংপুল আছে সেটা জানা ছিলো না। বাম দিকে তাকাতেই একটা ছোট খাটো বার দেখা গেলো। রুহি সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। ভুলেও ঐদিকে যাওয়া যাবে না, ঐদিকে যাওয়া মানেই পাপ।
রুহি একটু ভিতরে আসতেই আস্তে আস্তে সবার নজর কাড়তে শুরু করলো। রুহি এতোটা অপ্রস্তুত এর আগে কখনো হয় নি।আগে এমন ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে তবে এমন জায়গায় সে এর আগে কখনো আসেনি।
রুহি রেগে গিয়ে শিফাকে বললো,” লোকগুলো এমন চোরের মতো তাকাচ্ছে কেনো?”
” শুধু লোকেরা না মেয়েগুলোও দেখছে তোমায়।”, ঈশারায় বললো শিফা।
” কেনো?”, প্রশ্ন করলো রুহি।
” ছেলেগুলো তোমায় কেনো দেখছে এটা খুবই স্বাভাবিক তবে মেয়েগুলোর হিংসে হচ্ছে তাই তাকাচ্ছে।”, বলেই হেসে উঠলো শিফা।
রুহির শিফার কথা বিশ্বাস করলো না। এর মাঝে তন্বী এসে বললো,” শিফা আরাফ ভাইয়া এসেছে। আর সিমন চুপ চাপ হয়ে বসে আছে একপাশে।”
” ও মেয়ে জীবনে কথা বলেছে বলেও সন্দেহ আছে। এদের একটা বেবস্থা করতে হবে তন্বী দি।”, কথা বলতে বলতে শিফা আর তন্বী চলে গেলো। মাঝে মাঝে রুহির এই দুটোকে নিউজ চ্যানেল মনে হয় সব তথ্য এদের কাছে, তবে আরাফ আর সিমনের কাহিনী আবার কি?
রুহি এগিয়ে সামনে গেলো, আহান কোথাও নেই। কিন্তু কোথায় সেই কুম্ভকর্ণ। রুহি সামনে গিয়ে চশমা পরা একটা মেয়েকে চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। এই মেয়েটি সিমন নাতো? হতেই পারে। রুহি এগিয়ে গিয়ে বললো,” তোমার নাম কি সিমন?”
সিমন মাথা নিচু করে বসে ছিলো রুহির কথায় সে মাথা তুলে রুহির দিকে তাকালো তারপর হা সূচক মাথা নাড়ল।
” তুমি আমাকে চিনো?”, সিমন রুহিকে প্রশ্ন করলো।
” নাহ্ গেস করেছি, আমি রুহি। তুমি এভাবে এক কোনে চুপ চাপ বসে আছো কেনো?”, রুহির প্রশ্নে সিমন একটু হেসে চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো,” আমার এসব পছন্দ না। আর অপরিচিত মানুষের মাঝে আমি আনইজি ফিল করি।”
” হ্যা এইটা সত্যি বলেছ নিজেকে এলিয়েন এলিয়েন মনে হয়।”, রুহির কোথায় সিমন আবার হেসে ফেললো।
সিমন আর রুহি কথা বলছিলো তখন আহান উপস্থিত হয়। রুহিকে বার বার ফোন দিচ্ছিলো কিন্তু এই শব্দের মাঝে রুহি বুঝতে পারে নি। তারওপর ফোন সাইলেন্ট করা।আহান ফোন করতে করতে ভিতরে এলো। সামিরা আহানকে দেখে আহানের কাছে যাচ্ছিলো যাওয়ার সময়ে ইচ্ছে করে রুহিকে ধাক্কা দিয়ে গেলো। রুহি পরে যাবার আগে সিমন ধরে ফেললো তারপর বললো,” তুমি ঠিক আছো?”
রুহি হা সূচক মাথা নাড়ল। সিমন রাগী চোখে সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো,” এই মেয়েটাকে আমার একদম অপছন্দ।”
” কে সামিরা? আমারও তেমন একটা পছন্দের না।”, বলে দুজনেই বিরক্তি মুখে হাইফাইভ করলো।
সামিরা আহানের সামনে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে এমন সময় আহান বললো,” রুহিকে দেখেছিস?”
সামিরার হাসি মুখ রাগে ফুলে উঠলো। তারপর হাত নামিয়ে রেখে বললো,” না রুহি নেই এইখানে। নীচে হয়তো। চল নীচে নেমে দেখি।”আহানকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো।
” না না, আমি নিচে খুজে এলাম ওকে। ভাবি বললো উপরে এসেছে। আচ্ছা আমি খুজছি ওকে।”, বলে রুহি যে পাশে সেদিকে যেতে নিলো। সামিরা আহানকে থামিয়ে বললো,” আমি ওদিক থেকেই আসলাম আমি দেখিনি ওকে। চল অন্যদিকটায় যাই।”, মিথ্যে বলে আহানকে উল্টো দিকে নিয়ে গেলো সামিরা।
আহান রুহিকে ফোন দিতে ব্যস্ত। এই মেয়েটা যে কোথায়? এতো কেয়ারলেস?
সিমন আর রুহি ভালোই কথা বলছিলো। সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরা সুদর্শন একজন এগিয়ে এলো ওদের দিকে। এসে সিমনের পিছে দাড়ালো। হটাৎ সিমনের সামনে এসে দাঁড়াতেই সিমন চমকে তাকালো। আরাফ দাড়িয়ে আছে। সিমন এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,” তুমি এখানে?”
” তোমায় সারপ্রাইজ দিতে এসেছি।”, আরাফের কথায় সিমন লজ্জা পেয়ে হাসলো।
আরাফ রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” হেলো রুহি।” রুহি আর সিমন একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর সিমন প্রশ্ন করলো,” তুমি ওকে চিনো?”
” না, তন্বী বললো ও আহানের ওয়াইফ।”,আরাফের কথায় সিমন রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” সত্যি! তুমি আমাকে এতক্ষণ বললে না কেনো?”
রুহি এই সিচুয়েশন থেকে বেরিয়ে আসতে হালকা হাসলো। এর মাঝেই আরো জোড়ে মিউজিক বাজতে লাগলো। কাপল ড্যান্স চলছে। রুহির দেখতে বেশ ভালোই লাগছে, তাও ভালো এরা মাতাল হয়ে নাচানাচি করছে না। পরিবেশটা এতটাও খারাপ না যতটা খারাপ রুহি ভেবেছিলো। আরাফ একটু কেশে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” ক্যান আই?” বলে মিষ্টি করে হাসলো আরাফ। সিমন হেসে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলো। তখন সিমনের হাতের আংটি দেখে রুহি পুরোটা বুঝলো এরা তাহলে এনগেজড। কি কিউট একটা কাপল!
এদের দেখে রুহির আহানের কথা মনে পড়লো। তার কপালে এমন আনরোমান্টিক জামাই আর না চাইতে একটা সতিন জুটেছে। রুহির গলা শুকিয়ে গেছে কিন্তু এইখানে ভালো কিছু আছে বলে তো তার মনে হচ্ছে না। রুহি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে একটা ছেলে হটাৎ রুহির দিকে এগিয়ে এলো। তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” লেটস ড্যান্স।” রুহির এমন ফালতু ছেলে একদম ভালো লাগে না। কিন্তু হতে পারে এদের কোনো আত্মীয় তাই রুহি একটু হেসে বললো,” আমি পারি না এসব।”
” ইটস ওকে আমি শিখিয়ে দিবো, ডার্লিং।”, ছেলেটার মুখে এই কথা শুনার পর রুহির ইচ্ছে করছে ঠেলা মেরে সুইমিং পুলে ফেলে দেয় এই বদমাইশটাকে। রুহি কিছু বলার আগে তার কোমরে কারোর স্পর্শে পেয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো আহান শক্ত চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের রাগ তুঙ্গে উঠে আছে এই ছেলেটা এইখানে এলো কি করে? এই ছেলেটাকে তো সে আগে কখনো দেখেনি।
” হোয়াট ডিড ইউ জাস্ট সেয়?”, আহানের রাগ মিশ্রিতকণ্ঠ শুনে ছেলেটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ছেলেটা কিছু বলার আগেই আহান বলে উঠলো,” হূ দা হেল উ আর?”। আহানের হাত এখনো রুহির কোমড়ে আছে রুহি একবার সেদিকে তাকালো তারপর একটা ঢোক গিললো। এই লোকটা হুট করে রেগে উঠে খালি। সামিরা ঘটনাটা খেয়াল করে ছুটে আসে তারপর আহানকে বললো,” ওয়েট কি হয়েছে?”, ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,” জিসান কি হয়েছে কি?”
” তুই ওকে চিনিস?”, শক্ত চোখে তাকিয়ে বলল আহান।
” ও আমার ফ্রেন্ড, কেনো কি হয়েছে!”,
” ওকে বের হয়ে যেতে বল এখান থেকে।”, সিরিয়াস হয়ে বললো আহান। রুহি চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। ওরে বাপরে কুম্ভকর্ণ দেখি ক্ষেপেছে।
জিসান মানে ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে বললো,” হোয়াট?”
” জাস্ট গেট আউট ফ্রম মাই হাউস।”, ছেলেটার মুখের উপর বলল আহান।
ছেলেটা রেগে বেড়িয়ে গেলো। সামিরাও প্রচুর রেগে গেলো শেষে রাগ দমিয়ে আহানকে প্রশ্ন করলো,” কেনো করলি তুই এইটা?”
” আমি আমার কাজের এক্সপ্লেনেশন কাউকে দেই না।”, বলে রুহির হাত ধরে ছাদের উল্টপাশের ফাকা জায়গাটায় নিয়ে এলো।
রুহির বুকের ভিতরটা ধক ধক করছে। আহান শক্ত চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলো। আহান রুহির দিকে এগিয়ে এসে রেলিংয়ের দুপাশে হাত রাখলো। দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমে গেছে।
” তোমার ফোনের কি হয়েছে? নাকি ইচ্ছে করে আমার কল ধরছিলে না। “,গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো আহান। আহানের দৃষ্টি রুহির দিকে। রুহি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ফোন তো সাইলেন্ট করা ছিলো। তাই হয়তো বুঝতে পারেনি। এবার কি বলে রুহি?
” ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো”, এলো মেলো দৃষ্টিতে বললো রুহি।
আহান আরেকটু ঝুকে এসে রুহির চোখের দিকে তাকালো। আহান নিশব্দে তাকিয়ে আছে। রুহি আহানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
” আমার তৃষ্ণা পেয়েছে।”, এলোমেলো দৃষ্টিতে বললো রুহি।
” আমারও।”,আহান রুহির আরো কাছে এসে বললো।
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৫ ( প্রথম অংশ)
#নবনী_নীলা
” আমার তৃষ্ণা পেয়েছে।”, এলোমেলো দৃষ্টিতে বললো রুহি।
” আমারও।”,আহান রুহির আরো কাছে এসে বললো। রুহির বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। আহানের দৃষ্টি একদম রুহির দিকে স্থির। রুহির অস্থিরতা দেখতে মজাই লাগছে আহানের। আহান আরো কাছে আসতেই দূরত্ব একেবারেই
কমে গেলো।
আহানের আচরণ রুহির কাছে বেশ অন্যরকম লাগছে। রুহি একটা ঢোক গিলতেই আহান রুহির ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে দিলো। কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেললো রুহি। আহান একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।
রুহির আরো কাছে আসতেই হটাৎ আরাফের কণ্ঠ পেয়ে আহান শক্ত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে বামদিকে তাকালো। আরাফ আহানকে খুজতে এসেছিলো কিন্তু এদিকে এসে এমন অপ্রস্তুত হতে হবে তাকে সে সেটা ভাবেনি।
আহানের শক্ত চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভুল টাইমে চলে এসেছে আরাফ।
” অ্যাম রিয়েলি সরি ফর ইস্পইলিং ইউর মোমেন্ট! ব্রো আমি জেনে শুনে কিছু করিনি।”, তারপর দুই হাত তুলে উল্টো ঘুরে চলে গেলো।
আরাফের কণ্ঠ শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো রুহি। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো আরাফ চলে যাচ্ছে। তারপর সামনে তাকাতেই আহানকে এতো কাছে দেখে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেলো রুহির। রুহি নিজের ঘাড় থেকে আহানের হাত নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,” আপনি সরুন।”
” কেনো?”, কথার পিঠে কথা বললো আহান। তারপর বাতাসে উড়ে আসা চুল গুলো রুহির কানের পাশে গুঁজে দিলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহান। রুহির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কি করে এবার সে বের হবে। এতো কাছে দাড়িয়ে আছে যে তাকালেই চোখে চোখ পড়ে তখন বুকের ভিতরটা আরো অস্থির হয়ে উঠে।
রুহি চুপ করে আছে। রুহিকে আর অপ্রস্তুত করা ঠিক হবে না। তাই আহান রুহির দুপাশ থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল। রুহি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তারপর দৌড়ে যেতে নিলো কিন্তু আহান হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,” এতো সহজ না আহান রহমানের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া। ”
রুহি মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকালো। আহান ঝুকে এসে বললো,” এতো সাহস ভালো না পস্তাতে হতে পারে।”
রুহি আহানের কথা শুনে মুখ বাকালো। আহান রুহির হাত ধরে আবার ভিড়ের মাঝে এলো। এবার আর সে হাত ছাড়েনি। রুহির আস্তে আস্তে করে কেনো জানি এই কুম্ভকর্ণটাকে ভালোলাগতে শুরু হয়েছে। যতোটা খারাপ ভেবেছিলো এতোটা খারাপও না। তবে বদমেজাজি একটা। রুহি আহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো অজান্তেই মুখে হাসি ফুটলো রুহির। আহান একটা গ্লাস রুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” নাও।”সঙ্গে সঙ্গে রুহি চোখ সরিয়ে নিলো।
” কি এটা? “, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো রুহি। তারপর গ্লাসটা হাতে ধরে নেড়ে দেখতে লাগলো।
” কি করছো এসব? এটা অরগ্যানিক জুস।”, আহানের কথা শুনে রুহি ও শব্দ করলো। তারপর এক চুমুক দিয়েই চোখ মুখ কুচকে ফেললো। ” এটা কী? এটা মানুষ খায়?”, ঠোট ভিজিয়ে বললো রুহি।
” নাহ্। এটা হাস মুরগি খায়।”, আড় চোখে তাকিয়ে বললো আহান।
” একদম ফালতু কথা বলবেন না। আপনি এটা খেয়ে দেখুন কেমন খেতে? না মিষ্টি না টক যেনো মনে হচ্ছে গরুর ভুষি খাচ্ছি।”,
আহান আড় চোখে তাকিয়ে রইল তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” এখানে থাকো আমি আসছি।” বলে আহান পানি আনতে গেলো। রুহি ঘুর ঘুর করছে মিষ্টি কিছু খাওয়া গেলে ভালো লাগতো। রুহি বারের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো,” এইখানে মিষ্টি জাতীয় কিছু পাওয়া যাবে?”
” ম্যাডাম ড্রিংকস হবে।”, লোকটা একটা গ্লাস সামনে এগিয়ে দিলো।
” এইটা কি ভালো? নাকি উল্টা পাল্টা কিছু আছে?”, আস্তে করে বললো রুহি।
” সরি ম্যাডাম বুঝলাম না।”,
রুহি একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে বললো,” এটা কী দিয়ে বানিয়েছেন?”
” ম্যাডাম এইটা গ্রেপ জুস।”
” ও আচ্ছা, তাহলে তো ঠিক আছে।”, বলে এক ঢোক পুরোটা শেষ করলো রুহি। কেমন যানি টেস্ট ছিলো তাও ঐ আগের টা থেকে বেটার। এবার শান্তি লাগছে। আহান একটা পানির বোতল হাতে রুহির কাছে এলো তারপর বোতলটা খুলে রুহির দিকে এগিয়ে দিলো। রুহি হেসে বলল,” আপনাকে ধন্যবাদ।”
আহান কিছু বললো না রুহির খাওয়া শেষে পানির বোতলটা লাগিয়ে একপাশে রাখলো। রুহি আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” কেউ ধন্যবাদ দিলে কি বলতে হয় আপনি জানেন না?”
আহান একটা ভ্রু তুলে বললো,” ওয়েলকাম।”
” না না, আমি তো থাংকস বলিনি আমি ধন্যবাদ জানিয়েছি।”,
” আচ্ছা, তো? দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি?”
” অনেক বড় পার্থক্য আছে। কেউ ধন্যবাদ বললে বদলে বলতে হয় তোমাকেও ধন্যবাদ।”
আহান বিরক্তি নিয়ে রুহির দিকে একবার তাকাল কিন্তু কিছু বললো না। রুহি আহানের হাত ধরে টেনে বললো,” দিন দিন আমাকে ধন্যবাদ দিন।”
” এইসব আমি বলতে পারবো না। আর তুমি এভাবে হাত ধরে টানছ কেনো?”, রুহির দিকে রাগী চোখে তাকালো আহান।
” কেনো বলতে পারবেন না কেনো? আপনি কি মহাকাশ থেকে এসেছেন? বলুন বলুন আপনার মুখ থেকে ধন্যবাদ বের করেই ছাড়বো।”
” তুমি পারবে না। এসব বন্ধ করো।”,
” নাহ্ করবো না।”, বলেই আহানের হাত শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছে রুহির। আহান একবার রুহির দিকে তাকালো তারপর একটু হাসলো।
এদিকে সামিরা প্রচন্ড রেগে নিচে আহানের রূমে আসলো। বড়ো একটা প্ল্যান নিয়ে এসেছে সে। প্রথমেই আহানের কাবাড খুলে আহানের কিছু জামা বের করলো তারপর আরো কিছু খুজতে লাগলো খুজতে খুজতে খাটের পাশের ড্রয়ার খুলতেই কিছু পেপার সামিরার হাতে পড়লো। সামিরা ভালো করে দেখলো সেগুলো। আহান আর রুহির এগ্রিমেন্টের কিছু কপি ছিলো সেখানে। সবটা পরে সামিরা বাকা হাসি দিয়ে বললো,” বাহ্, আমাকে তো দেখছি কিছুই করতে হলো না। সামিরা কি জিনিস এবার তুমি বুঝবে, শুধু সাত মাস শেষ হতেই দেও রুহি।
আহান তো আমারই থাকবে।” তারপর চটজলদি জামা কাপড় গুলো ঠিক জায়গায় রেখে। একটা এগ্রিমেন্ট কপি নিজের সাথে নিয়ে গেলো। সবাই এতো ব্যাস্ত তাই কাজটা করতে সামিরার খুব বেশি কোনো অসুবিধে হয় নি।
রুহির আচরণ কেমন জানি হচ্ছে। আহান বিষয়টা অনেক্ষন ধরে খেয়াল করছে। পরে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর, বার বার আহান ধরছে।
” কি হয়েছে রুহি? এমন করছো কেনো। সোজা হয়ে দাড়াও।”, আহান রুহির দুই বাহু ধরে বললো। ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,” কেমন জানি সবটা ঘুরছে।”
” ঘুরছে মানে।”, রুহির দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না আহানের যে রুহি ওয়াইন বা ড্রিংকস জাতীয় কিছু খেয়েছে।
” কি খেয়েছ তুমি? রুহি আমার দিকে তাকাও।”, রুহি সোজা হয়ে দাড়াতে পর্যন্ত পারছে না। তাও চোখ একটু একটু খুলে বললো,” গ্রেপ জুস, আঙ্গুরের জুস। বুঝলেন?”
আহান চোখ বন্ধ করে মাথা ঠান্ডা করলো। হয়েছে আজ রাত জ্বালিয়ে মারবে রুহি। রুহির এইখানে থাকাটা ঠিক না তাই আহান আস্তে করে রুহির দুইহাত ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসে রুহি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো, সে আর হাঁটবে না।
” আপনি এমন এমন কেনো? কেনো! মুভিতে দেখেন না হিরোরা কিভাবে কোলে তুলে নিয়ে যায়। আমি আমি ওভাবে যাবো।”, বাচ্চাদের মতন জিদ করে বললো রুহি।
” হ্যা এইসব খেলেই তোমার আমায় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে আমার কোলে উঠতে ইচ্ছে করে। আর অন্যসময় আমি কাছে এলেই সরুন। আমি অভদ্র অসভ্য হয়ে যাই।”, রুহির দিকে ঝুকে এসে প্রশ্ন করলো আহান।
রুহি ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলে বাচ্চাদের মতো হাত মেলে দাড়ালো যাতে তাকে কোলে নেওয়া হয়। আহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে রুহির কোমড় জড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। তারপর রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” ভালোই টর্চার শুরু করেছো তুমি আমায়।” রুহি বাচ্চাদের মতন হাসলো। তারপর আহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৫ ( শেষ অংশ)
#নবনী_নীলা
আহান রুহিকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। রুহি আহানের গলা থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি শুরু করেছে। আহান নীল রঙের ব্লেজারটা একপাশে রাখলো। তারপর হাতের ঘড়ি খুলছিলো। রুহি গড়াগড়ি বন্ধ করে চিৎ হয়ে শুয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কালো শার্ট আর নীল রঙের প্যান্টে তাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আহান ঘড়িটা খুলে রেখে, রিমোট দিয়ে এসি বাড়িয়ে দিলো।
তারপর রুহির দিকে তাকালো, আপাদত সে চুপ চাপ হয়ে আছে। আহান শার্টের হাতা ভাজ করে কিছুটা উপরে তুলতে তুলতে রুহিকে দেখছে। রুহির গাল দুটো লাল হয়ে আছে। হটাৎ এমন শান্ত হয়ে আছে কেনো কে জানে।
শার্টের হাতা উপরে তুলে আহান রুহিকে ধরে বসালো। রুহি আহানের বুকে হেলান দিয়ে বসলো। রুহির গায়ের জ্যাকেটটা খুলে একপাশে রেখে দিলো আহান। এটা পরে ঘুমিয়ে গেলে, তখন অসস্তি হতে পারে। জ্যাকেটের ভিতরে ক্রপ টপ থাকায় আহান এসি আরো বাড়িয়ে দিয়ে রুহির কোমরে পাশটায় পাতলা একটা কম্বল দিয়ে রাখল। রুহি আহানের বুকে হেলান দিয়ে আছে। আহান রুহিকে বালিশে শুইয়ে দিতে চাইলো কিন্ত রুহি সেখানে যাবে না। আহানের বুকে মাথা রেখে বসে আছে।
” তুমি কি সারারাত এইভাবে বসে থাকবে?”, রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আহান। রুহি আহানের কোলের ভিতরে ঢুকে বসে পড়লো তারপর সামনে থাকা বাল্বটার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললো,” দেখুন কি সুন্দর চাঁদ!”
যেহেতু ঘোরের সব জানালা বন্ধ তাই ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকালো। পুরো মাথা গেছে, আগে যাও একটু ছিলো এসব খেলে অতটুকুও কাজ করে না।
” রুহি ওটা বাল্ব।”, শান্ত গলায় বললো আহান।
” নাহ্ ওটা চাঁদ আপনি ভালো করে দেখুন।”, বাল্ববের দিকে আবার আঙ্গুল দেখিয়ে বলল রুহি। বোঝাই যাচ্ছে ওটাকে চাঁদ না বলা পর্যন্ত এ মেয়ে শান্ত হচ্ছে না। আহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” হুম্ ওটাই চাঁদ।”
” দেখলেন তো আমি বলেছিলাম ওইটা চাঁদ, আপনিই বিশ্বাস করেন নি। এবার বিশ্বাস হলো তো।”, মুখে জড়তা নিয়ে কথাটা শেষ করলো রুহি। রুহির চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়েছে। আহান সেগুলো পিছনে নিতে ব্যাস্ত। রুহি এবার আঙ্গুল দিয়ে টেবিল ল্যাম্পটাকে দেখিয়ে বলল,” ওই..টা ও..ইটা সূর্য।”
আহান আড় চোখে টেবিল ল্যাম্পটার দিকে তাকালো। রুহির নিজের মতো কথা বলে যাচ্ছে।
” ওটা হ হলো চাঁদ, এইটা কি জানি? হ্যা সূর্য। আর আম….রা আছি মঙ্গলগ্রহে।”, বোলেই খিল খিল করে হেসে উঠলো রুহি।
” হুম আর তুমি আমি এলিয়েন।”, বিরক্তি নিয়ে বললো আহান। আহানের কথা শুনে রুহি হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
হটাৎ হাসি থামিয়ে রুহি বিছানায় উঠে দাড়ালো। আহান বুঝতেই পারছেনা এ মেয়ে কি করতে চাইছে।
” রুহি উঠে দাঁড়িয়েছ কেনো?”,
” আচ্ছা আমরা যেহেতু স্পেসে আছি তার মানে আমি হাওয়ায় ভাসতে পারবো।”, উৎসক চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো রুহি। আহান ভেবেই পাচ্ছে না সে কি বলবে।
” রুহি শুনো আমরা না কোনো মগলগ্রহে আছি না স্পেসে, আমরা পৃথিবীতে আছি।”, রুহির হাত ধরে বসানোর চেষ্টা করে বললো আহান।
” আপনি আবারও আমায় অবিশ্বাস করছেন। আমি এক্ষুনি এখান থেকে লাফ দিবো দেখবেন আমার কিছু হবে না।”, বলে সত্যি সত্যি রুহি লাফ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আহান উপায় না পেয়ে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে এনে বসিয়ে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখলো।
” সমস্যা কি তোমার? চুপ করে বসে থাকো। এটা নাকি স্পেস, এইখান থেকে একবার পড়লে বুঝতে মজা।”, রুহিকে একটু বকা দিলো আহান। রুহি রেগে গেলো, গাল ফুলিয়ে আছে। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আহানের গলায় কামড় বসিয়ে দিলো। আহান ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। বেশ জোরেই কামড় বসিয়ে দিয়েছে রুহি। কামড় দিয়ে রাগ কমিয়ে সরে এলো রুহি। আহান ব্যাথা আস্তে করে উফফ শব্দ করলো। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো আহান। আহানের গলার দিকে তাঁকিয়ে রুহির খারাপ লাগছে এখন। আহান চুপ করে আছে দেখে আরো খারাপ লাগছে তার, রুহি বাচ্চাদের মত কাদো কাদো গলায় বললো,” সরি।”
আহান রুহির দিকে তাকালো। রুহির কর্মকাণ্ডে সে বাকরুদ্ধ। কি বলবে সে নিজেও জানে না। আহান বিস্ময় নিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি উঠে আহানের গলা জড়িয়ে ধরলো। আহানের বিস্ময়ের মাত্রা বেড়েই চলেছে। তারপর রুহিকে জড়িয়ে ধরে হেসে ফেললো আহান। রুহি আহানের সামনে এসে আবারো বললো,” সরি”। আহান ঠোঁটে এক চিলতে হাসি দিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আহান একটু বাকা হেসে বললো,” ব্যাথা দিলে শুধু সরি বললে হয় না।”
রুহি মুখটা কালো হয়ে গেলো তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” কি করতে হয়?”
” আদর করে দিতে হয়।”, আহান মজা করে কথাটা বললেও সে মুহূর্তে মজা বোঝার ক্ষমতা রুহির নেই। আহানের কথাটা সত্যি মনে করে রুহি এগিয়ে এসে আহানের গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আহান বিস্ময়ের চরম মাত্রায় পৌঁছে গেলো। রুহি ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়া চোখ গুলো নিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষমেষ ঘুমে পরে যেতে নিলে আহান ধরে ফেলে। এর মাঝেই দরজায় নক পড়লো। আহান রুহিকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো। বার বার খালি দরজায় টোকা পরছে। এ সময় আবার কে এলো। আহান এগিয়ে গিয়ে এক হাত দরজায় অন্যহাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে দাড়ালো। আরাফ দাড়িয়ে আছে।
“হুট করে চলে এসেছিস যে? সব ঠিক আছে?”, বলে আহানের দিকে তাকাতেই ঠোঁট চেপে হাসলো আরাফ।
” হোয়াট সো ফানি?”, একটা ভ্রু তুলে বললো আহান।
” না না কিছু না, এখণ আমি সবটা বুঝেছি। অ্যাম সরি অ্যাগেইন। হুম্ সো মাচ লাভ ইন দা এয়ার।”
আরাফের কথায় আহান বিরক্ত হয়ে বলল,” কি সমস্যা?”
” নাহ্ কোনো সমস্যা নেই আমি চলে যাচ্ছি। বাই দা ওয়ে গলার দাগ জানি না কি করবি তবে গালেরটা মুছে বের হোস।”, বোলে মূচকি হেসে চলে গেলো।
আহান বিরক্তি নিয়ে দরজাটা বন্ধ করলো তারপর আয়নার দিকে তাকাতেই তার ডান গালে লিপস্টিকের দাগ স্পষ্ট। আচ্ছা এই জন্য আরাফ এমন করছিলো। আহান রুহির দিকে তাকালো শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে। নড়াচড়ায় রুহির টপ টা উপরে উঠে গেছে। আহান এগিয়ে এসে দ্বিধা ছাড়াই টপটা নামিয়ে দিয়ে রুহির গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে রুহির পাশে শুয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বরাবরের মতই রুহির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। কিন্তু এবারের দৃশ্যটা আলাদা। আহান রুহিকে জড়িয়ে রুহির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে আছে। বিষয়টা বুঝে উঠতে রুহির কিছুক্ষণ সময় লাগলো। তারপর আহানের দিকে ফিরতে গেলেই আহান নড়ে চড়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আহানের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে রুহির গলায় আর ঘাড়ে। বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে রুহির। মাথার ঝিম ঝিম থেকেই অনেকটা আন্দাজ করতে পারছে রুহি।
একটু সাহস করে আহানের দিকে তাকালো রুহি। আহানের গলায় চোখ পড়তেই দুইহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো রুহি। এর মাঝেই আহানের চোখ খুললো। আহান রুহির বিস্মিত চেহারার দিকে তাকালো। তারপর সবটা বুঝলো। দুজনেই চুপ করে আছে কিছুক্ষণ।আহান জানে রুহির কিছুই মনে নেই তাও মজা করে বললো,” তুমি কি জানো ওটা কি?” বাল্বটা দেখিয়ে বললো আহান।
রুহি ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকালো। এমনেই তার গলা শুকিয়ে গেছে তার উপর সকাল সকাল রসিকতা শুরু করেছে এই লোকটা। তার সাথেই কেনো এসব হয়। রুহি কাদো কাদো চেহারায় বাল্বের দিকে তাকিয়ে আছে।
আহান রুহির নিরবতা দেখে নিজে থেকেই বললো,” চিনতে পারছো না ওটা চাঁদ।”
রুহির আহানের উপর প্রচুর বিরক্ত লাগছে। রসিকতা করার জায়গা পায় না। রাগে ফুলে যাচ্ছে রুহি।
” ওটা দেখছো না ওটা ল্যাম্প না ওটা সূর্য।”, আহানের কথা শুনে রুহির মেজাজ পুরো বিগড়ে গেলো। রুহি উঠে বসে রেগে বলল,” আপনি আমার সাথে রসিকতা করছেন? এমনেই চিন্তায় মরে যাচ্ছি।”
আহান উঠে বসলো,” কাল রাতের কথা চিন্তা করছো? আরে আমি হেল্প করছি তোমায়।” রুহি ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকিয়ে রইল।
” কাল রাতে ওটা চাঁদ ছিলো। এটা সূর্য ছিলো, আর আমার রুমটা স্পেস ছিলো। তুমি আর আমি এলিয়েন ছিলাম। মনে পরছে না তোমার?”, রুহি হতবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। পাগল হয়ে গেছে নাকি লোকটা।
” কিছু মনে পড়ছে না? আচ্ছা আর এটা?”, বলে নিজের গলার দিকে ইশারা করলো। সঙ্গে সঙ্গে রুহির পিলে চমকে উঠলো।
” হতেই পারে না আমি এটা করতে পারি না। আপনি মিথ্যে বলছেন”, গর গর করে চেঁচিয়ে বলে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো রুহি।
” এটাই বিশ্বাস হচ্ছে না পরের টা কিভাবে বিশ্বাস করবে।”, রুহিকে ভয় দেখিয়ে বললো আহান।
রুহির আত্মাটা যেনো বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। রুহি উঠে নিচে নেমে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর বললো,” আমি কিছু শুনতে চাই না। যা হওয়ার হয়ে গেছে ভুলে যান। মনে করুণ আমাকে আপনি চিনেনই না”, কাপা কাপা গলায় বললো রুহি। আহানের প্রতি প্রথম থেকেই একটা কারণে দুর্বলতা ছিলো রুহির। কিন্তু সে কখনই সেটা প্রকাশ করেনি। একজনের সাথে মিল পেয়েছে রুহি কিন্তু ঘোরের মধ্যে কি করেছে বা কি বলেছে সেটা জানতেই ভয় লাগছে। নিশ্চই ভয়াবহ কিছু করেছে তাই রুহি শুনতে চাচ্ছে না।
” এতো সহজে কিভাবে ভুলে যাই? চাইলেও কি ভোলা যায়।”, বোলেই নেমে এলো আহান। রুহি ঘাড়ের পিছনে হাত ডলতে লাগলো। তারপর সাহস করে বললো,” আপনি কি করেছেন? আপনি যে আমায় ওভাবে ধরে ছিলেন। ” নার্ভাস হয়ে বললো রুহি।
” সো হোয়াট? এট লাস্ট আমি তোমার মতো অস্বীকার করছি না।”, রুহীর কাছে এগিয়ে এসে বলল আহান। রুহি চুপ করে আছে।
” তুমি বলেছো আমার চোখ নাকি তোমার খুব চেনা। এর আগে কি কোথাও আমাদের দেখা হয়েছে।”, শক্ত চোখে প্রশ্ন করলো আহান। আজ সব প্রশ্নের উত্তর চায় আহান।
আহানের কথা শুনে রুহি ঘামছে। ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যায়।
” আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।”, রুহির কথায় রেগে আহান রুহির হাত ধরে টেনে নিজের সামনে দাড় করালো। আজ সবটা না জেনে আহান রুহিকে ছাড়ছে না।
[ চলবে ]
[ চলবে ]
❄️