#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব৩
#নবনী_নীলা
আহান রুহির চোখে চোখ রেখে বলে,” চুপ। এতো রাগ কিসের?”বোলেই রুহির গালের পাশে ঝুলে থাকা চুলগুলো কানের কাছে গুজে দিলো আহান।
রুহি পুরো হা করে তাকিয়ে আছে। কি হলো এইটা? রুহি রসগোল্লার মতোন চোখ করে তাকিয়ে আছে।
আহানের চোখে মুখে কোনো রাগ বা বিরক্তির ছাপ নেই। এটা দেখে রুহি আরো অবাক হয়ে বললো,” আপনি কি আসার সময় কোথাও বাড়ি খেয়ে মেমোরি লস করেছেন? নাকি আপনি আমায় চিনতে পারছেন না? নাকি আপনার উপর জ্বীন ভর করেছে?”
এতো কিছু শোনার পরেও আহান কিছু বলতেও পারছেনা। রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” একটু চুপ থাকতে পারো না তুমি?” বাচ্চাদের মাথায় যেভাবে হাত বুলিয়ে দেওয়া হয় আহান ওভাবেই রুহির মাথায় হাত বুলাচ্ছে। রুহি একবার আহানের হাতের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আহানের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
” আপনি কি আমায় চিন্তে পারছেন না? আরে ভুলে গেলেন আমি সেই বিরিক্তর মেয়ে, আমার জন্যই তো কালকে রাতে আপনায় সোফায়….”, বলে বাকিটা শেষ করবে এমন সময় আহান রুহির মুখ চেপে ধরে।
দরজার ওপাশে আহানের মনে হচ্ছিলো দিদা দাড়িয়ে আছে। তবে সে নিশ্চিত ছিলো না। তাই কোনো ভাবে রুহির বক বক বন্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আহান সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে দিদা দাড়িয়ে আছে। তাই রুহিকে চুপ করাতেই হবে। এ মেয়েটা একটা না একটা গন্ডগোল করেই ছাড়বে। ওর এসব উদ্ভট কথা শুনে নিয়েছে নাকি কে জানে?
আহান রুহির মুখ চেপে রেখে ওর কাছে গিয়ে নিচু স্বরে বললো,” বাহিরে দিদা দাড়িয়ে আছে। একটাও যদি গণ্ডগোল করেছো। তোমায় আমি…”, বাকিটা বলে শেষ করবার আগেই রুহি আহানের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। বেশ ভালোই ব্যাথা পেয়েছে আহান, দাতে দাঁত চিপে হাত সরিয়ে নেয় সে।
রুহি নিচু স্বরে বললো,” আচ্ছা তাহলে এইগুলো অভিনয় ছিলো। আগে বলবেন না? আরেকটু হলেই আমার হার্ট এ্যাটাক হয়ে যেতো। আমি তো ভেবেছিলাম আমি বোধয় নিজেই পাগল হয়ে গেছি। রাতের বেলায় ভুল ভাল স্বপ্ন দেখছি।”
আহান রাগী চোখে দরজার দিকে ইশারা করলো। এখনও এই মেয়ে বক বক করেই যাচ্ছে। দিদা শুনলে তো হলো!
রুহি পরেছে মহা বিপদে সে নিজেও চায় দিদা যেনো তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করাতে রাজি হয়ে যায়। এভাবে চললে ওনার অবস্থা আরো খারাপ হবে। কিন্তু সে কি করবে? দিদা উকি মেরে দেখছে। রুহি উপায় না পেয়ে আহানের গলা জড়িয়ে ধরে আহানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। আহান রুহির কাণ্ডে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
” এভাবে চেহারাটা হুতুম পেঁচার মতন করে রাখবেন না তো। পকেট থেকে হাত বের করে দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরুন।”, ফিস ফিস করে বলল রুহি।
” হোয়াট? দূরত্ব বজায় রেখে জড়িয়ে ধরবো? তা সেটা কিভাবে করে?”, একটা ভ্রু তুলে আবার নামিয়ে বললো আহান।
” ধুর ছাই! কিছুই দেখি বুঝেনা। কিছু করতে হবে না আপনার শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাকিয়ে থাকতে পারেন তো নাকি সেটাও পারেন না?”, দাতে দাঁত চিপে ফিস ফিস করে বলল রুহি।
” সেটা তো পারবো। কিন্তু এবার যদি তুমি চোখ বন্ধ করে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে বলো। সেটা তো সম্ভব নয় যেমন দূরত্ব বজায় রেখে জড়িয়ে ধরা।”
দুজনে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্ত চোখে মুখে তাদের প্রচন্ড বিরক্ত। টেলিভিশনে যখন অতিরিক্ত অ্যাড দেয় আর আপনিই আপনার প্রিয় অনুষ্ঠান দেখতে বসেন কিন্তু অ্যাড আর শেষ হয় না। তখন যেই দৃষ্টিতে আমরা টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকেন এরাও এভাবেই একে অপরকে দেখছে।
দিদা উকি ঝুঁকি মেরে যা দেখেছে সেটায় সে কিছুই বুঝে নি। মনে সন্দেহ নিয়ে তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন।
দিদা চলে যাচ্ছে খেয়াল করে আহান বিরক্তি চোখে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” চলে গেছে দিদা।”
বলার সাথে সাথে রুহি আহানের গলা থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে একটু দুরে সরে দাড়ালো। আহান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,” দিদা নিশ্চয় কিছু সন্দেহ করেছে। সব হয়েছে তোমার জন্য একটু চুপ করে থাকতে পারো না।”
” পানি ঢেলে ঘুম থেকে তুলবেন আপনি, ধাক্কা মেরে ফেলে চলে যাবেন আপনি আর কিনা চুপ করে থাকবো আমি?”, মুখ ফুলিয়ে বললো রুহি।
” এই কথাগুলো একটু আগেই তো বললে আবার শুরু করেছো?”, গলার টাই টা খুলে রেখে বললো আহান।
” হ্যা আবার বলবো। এই কথাগুলোর শুনিয়ে শুনিয়ে আপনার কানের মাছি তাড়িয়ে দিবো।”, রাগে গজগজ করে বললো রুহি।
আহান মাছির নাম শুনে নিজের দুপাশে তাকালো তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো,” মাছি?”
রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকালো। আহান বুঝতে পারলো যে কোনো সময় এ মেয়ে আবার শুরু করবে এখান থেকে যাওয়াই তার জন্য ভালো।
আহান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
🍀🍁🍀🍁
রাতে রুহি ঘুমাতে এসে দেখে আহান বিছনায় শুয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি তীক্ষ্ম চোখে আহানের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আহান খেয়াল করেছে ব্যাপারটা কিন্তু তাকায় নি। রুহি ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করেছে যে আজ হয়তো তাকে সোফায় ঘুমাতে হবে।
রুহি ভেবেছিলো কিছু বলবে পরে আর তার ইচ্ছে হলো না। সেই সকাল আটায় উঠেছে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে চোখ। আজ এইখানেই শুয়ে পড়াই ভালো এমনিতেও এই লোক ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। রুহি উঠে গিয়ে আহানের পাশের বালিশটা নিয়ে সোফায় চলে এলো। এতো ভদ্র হয়ে যাওয়ায় আহান আড় চোঁখে তাকালো।
কি হলো ব্যাপারটা? কিছু হলেই হাজারটা কথা শুনিয়ে দেয় সে কিনা চুপ চাপ গিয়ে সোফায় শুয়ে পরেছে। আহান একটু কেশে বললো,” আমরা পালা করে বিছনায় ঘুমালে ব্যাপারটায় একটা জাস্টিস থাকবে নাহলে ইনজাস্টিস হয়ে যাবে। সো কালকে তুমি বিছনায় ঘুমাতে পারবে।”
আহান ভেবেছিলো রুহি এসেই তাকে বিছানায় দেখে কিছু বলবে তখন তাকে এই সিদ্ধান্ত জানাবে কিন্তু রুহি কিছু না বলেই সোফায় শুয়ে পড়লো। একটা মেয়ে সবসময় সোফায় ঘুমাতে যাবেই বা কেনো। ব্যাপারটা আহানেরও ভালো লাগে নি।
রুহি হাই তুলতে তুলতে চোখ খুলে আহানের দিকে তাকালো তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমে মনোযোগ দিলো।
রুহি সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে পড়লো। ভয়েই উঠে গেলো আবার পানি ঢেলে দিলেই হয়েছে কাজ। পানি ঢেলে ঘুম ভাঙ্গানোর বুদ্ধিটা খুবই বাজে। রুহি ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ চুপ করে সোফায় পা তুলে বসে ছিলো। রুহি একবার বিছানার দিকে তাকালো আহান চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।
রুহি গিয়ে গোসল সেরে নিলো। চুলের পানি নিতে নিতে বের হয়ে দেখে আহান এখনো ঘুমাচ্ছে। রুহি ঘড়ির দিকে তাকালো ৭ টা বেজে ৪৫ মিনিট। এইতো আজ প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো। প্রথমে কয়েকবার ভালো করে ডাকবো উঠলে বেচেঁ যাবে নইলে এক বালতি পানি দিয়ে একে আজ নাকানি চুবানি খাওয়াবো নইলে আমার নামও রুহি না।
রুহি ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি নিয়ে এলো। পানির বালতি বিছানার পাশে রেখে ডাকতে শুরু করলো,” এই যে জনাব কুম্ভকর্ণ, জনাব কুম্ভকর্ণ!”
আহান দু একবার নড়ে চড়ে এক চোখ আবছা খুলে রুহির দিকে তাকালো তারপর কপাল ভাজ করে বললো,” কি চাই তোমার জ্বালাচ্ছ কেনো?”
” কি চাই মানে? সকাল ৭টা ৫০ বাজতে চললো। আপনারা না এ্যারলি টু বেড অ্যান্ড এ্যারলি রাইজ প্রথা অনুসরণকারী। এখন উটছেন না কেনো? আর একবার ডাকবো, না উঠলে এই এক বালতি পানি রাখা আছে একে বারে আপনাকে নাকের জলে চোখের জলে করাবো।”, শাসিয়ে বললো রুহি।
” জাস্ট শাট আপ। আজ দাদা নেই তাই সবাই দেরিতে উঠবে। সকাল সকাল উপদ্রপ শুরু করেছো কেনো? “, বলে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে রইলো আহান।
রুহির মেজাজ গেলো আরো বিগড়ে, আজ দেরিতে উঠবে সবাই তাকে আগে বললেই পারতো। সে আরেকটু ঘুমিয়ে নিতো। রাগে গজগজ করতে লাগলো রুহি।
” আমি ঘুমাতে পারিনি, আমি আপনাকেও ঘুমাতে দিবো না।”, বলে আহানের গায়ের চাদর ধরে টানতে লাগলো।
আহান চাদরের আরেকটা ভাগ শক্ত করে ধরে বললো,” কি শুরু করেছো রুহি?”
” আজ সবাই দেরিতে উঠবে আমায় আগে বলেন নি কেনো? আমি ঘুম নষ্ট করে এতো সকালে উঠলাম। ইচ্ছে করে বলেন নি ঠিক বুঝেছি আমি।”, বলে চাদর ধরে টানছে।
আহান রেগে গিয়ে চাদর ধরে টান দিতেই রুহি ব্যালান্স হারিয়ে পরে যেতে নেয়। আরেকটু হলেই ব্যাথা পেতো রুহি, আহান হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো। আহান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” হয়েছে এবার শান্তি? আমার ঘুম হারাম করে শান্তি পেয়েছো? নাকি নিজের মাথাটা ফাটাতে পারলে বেশি খুশি হতে?”
[ চলবে ]
( বাকিটা কাল বলবো। ┌(・。・)┘♪)