#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৬
#নবনী_নীলা
আহান বিছানায় গা হেলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো তারপর বলল,” কিছু করার নেই এইখানে সব রুমেই এমন বেড। আর এই দুদিন আমাদের বেডটা শেয়ার করতে হবে।”
রুহি আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো কোনো সোফা জাতীয় কিছুই নেই। দেখেই রুহির চোখ কপালে উঠে গেলো।
” এখানে সোফা নেই কেনো?”, বিষ্ময় নিয়ে বললো রুহি।
আহান বিছানা থেকে উঠে বসে বললো,” তোমার কি আমাকে এইখানকার ম্যানেজার মনে হয়? আমি কিভাবে জানবো?”
“মানে কি? এইটুকু জায়গায় দুজনে দূরত্ব বজায় রেখে কিভাবে ঘুমাবো?”, চোখে মুখে এখনো তার বিস্ময় ভাব কাটেনি।
” দূরত্ব বজায় যখন রাখতে চাও এসেছো কেনো আমার সাথে? কোনো বাহানা করে থেকে গেলেই পারতে? নাচতে নাচতে তো চলে এসেছো।”,
” দিদা বলেছে, আমার কি দোষ? আপনি আরেকটা রুম নিলেই তো পারেন?”, রাগ দেখিয়ে বললো রুহি।
” এই রুমটা কে বুক করেছে জানো? দিদা করেছে। যাও পারলে গিয়ে নিজের জন্য রুম নেও। যাও সব সময় তো বড়ো বড়ো কথা বলো যাও গিয়ে করে দেখাও।”, আহান এতটুকু বলতেই দরজায় নক পড়লো। আহান ঘাড় কাত করে দরজার দিকে তাকালো তারপর উঠে গিয়ে দরজটা খুললো।
এখানকার একজন স্টাফ ওয়েলকাম জানতে ফুল, পারফিউম আর কিছু জিনিস নিয়ে রুমে এলো। বেশ আলুর মতন চেহারার একজন। লোকটা ভিতরে যাচ্ছিলো আহান তাকে সেখানেই দাড় করালো।
” ওয়েট, কোথায় যাচ্ছো? আর এইগুলো কি নিয়ে এসেছো?”, ভ্রু একবার উপর নিচ করে বললো আহান।
” স্যার এইটা আমাদের ওয়েলকাম জানানোর পদ্ধতি।”, বিনয়ী ভঙ্গিতে বলল লোকটা।
” আচ্ছা ওয়েলকাম জানানোর পদ্ধতি? ফুল পারফিউম ঠিক আছে, এইটা কি? ডিড আই আস্ক ফর ইট?”, বেশ রেগে গিয়ে বললো আহান।
” স্যার এই রুমটা তো হানিমুন প্যাকেজে বুক করা হয়েছে। তাই সবাইকে যেভাবে ওয়েলকাম জানানো হয় আপনাদের ও।”, ভয়ে ভয়ে এতটুকু বোলেই লোকটা থেমে যায়।
আহান অগ্নি দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” জাস্ট গেট আউট।”
লোকটা চলে যাবে সময় রুহি লোকটাকে থামতে বললো তারপর এগিয়ে এসে ট্রে থেকে হলুদ গোলাপের গুচ্ছটা হাতে নিলো। হলুদ গোলাপ রুহির অনেক পছন্দের, তাই ফুল নিয়ে লোকটাকে চলে যেতে দেখে থামালো। লোকটাও সুযোগ পেয়ে থেমে গেলো। আহান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,” কি করবে তুমি এটা দিয়ে?”
” হলুদ গোলাপ আমার অনেক পছন্দের কি করবো এটা আবার কেমন প্রশ্ন?”, আহান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফুলগুলোকে ধরে দেখতে লাগলো রুহি।
আহান লোকটাকে চলে যেতে বলবে এমন সময় রুহি একটু এগিয়ে এসে বলল,” এখানে এগুলো কি?”
রুহি এগিয়ে যাবার আগে আহান রুহির হাত ধরে পিছনে নিয়ে এলো। এর মাঝে লোকটা বলে উঠলো,” ম্যাডাম এইটা হানিমুন প্যাকেজ।”
আহান প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল,” বললাম না তোমার এই হানিমুন প্যাকেজ আমাদের লাগবে না। জাস্ট গেট আউট।” বলেই লোকটার মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিলো আহান।
রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকালো তারপর প্রশ্ন করলো,” আপনি এমন ব্যাবহার করলেন কেনো লোকটার সাথে? কি সুন্দর ফুল, আরো কি কি নিয়ে এসেছিলো। আপনি কি মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারেন না? ”
” কি নিয়ে এসেছিলো জানো?”, রেগে গিয়ে বললো আহান।
” কি এনেছিলো?”, কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো রুহি।
” জাস্ট শাট আপ।”, ধমক দিয়ে আহান ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
“কথায় কথায় খালি মেজাজ দেখায় অভদ্র কুম্ভকর্ণ কোথাগার!”, গাল ফুলিয়ে বললো রুহি।
🍁🍁🍁
বিকেলে কটেজের সামনের খালি জায়গাটায় আহান আর অফিসের বাকিরা মিলে মিস্টার ফাহাদের সাথে জায়গাটার ব্যাপারে আলোচনা করছিলো। অবশ্যই রুহির সেখানে যাওয়া নিষেধ। গেলেই রেগে বসবে লোকটা। রুহি তাই করিডোরে দাড়িয়ে আছে। চুলগুলো তার খোলা বাতাসে উড়ছে। সূর্য আস্তে আস্তে অস্ত যাচ্ছে। কি অপূরূপ দৃশ্য!
করিডর থেকে নিচের সবাইকে দেখা যাচ্ছে। আহানের সামনের মিস্টার ফাহাদ বসে আছে ওনার ডান পাশে ওনার ম্যানেজার।
আর আহান তাদের সাথে কথা বলছে আর বাকিরা সাথেই বসে আছে। উপর থেকে আহানের চেহারা দেখা যাচ্ছে না সাইড প্রোফাইল দেখা যাচ্ছে শুধু আর মিস্টার ফাহাদকে দেখা যাচ্ছে। রুহি কিছুক্ষণ ওদের দেখলো তারপর দৃষ্টি সামনে স্থির রাখলো।
নীচ থেকে রুহিকে দেখা যাচ্ছে। মিস্টার ফাহাদের চোখ বার বার রুহির দিকে যাচ্ছে। ওনাদের বিসনেস নিয়ে কথা আজকের মতন শেষ যতটুকু দরকার ছিলো তারা করে নিয়েছে। এখন সবাই বসে অন্যান্য কথা বলছে।
” এই জায়গাটা নিয়ে আপনার মতামত কি? আই থিঙ্ক উই গেট হোয়াট উই ওয়ান্ট।”, আহানকে উদ্দেশ্য করে বলল মিষ্টার ফাহাদ।
” হুম, জায়গাটা ভালো কিন্তু সমস্যা অনেক আছে। লেটস ট্রাই আওয়ার বেস্ট।”, বলে মিষ্টার ফাহাদের দিকে তাকালো আহান। মিষ্টার ফাহাদের দেখে মনে হচ্ছে মুগ্ধ হয়ে কিছু দেখছেন। কি দেখে তিনি এতো মুগ্ধ হয়ে আছে। আহান ঘাড় বাঁকিয়ে এদিক সেদিক তাকালো আহানের দৃষ্টি আটকে গেলো রুহির দিকে গোধূলির আবছা হলুদরেখা এসে পরেছে তার মুখে অপরূপা লাগছে তাকে। আহান ঘাড় ফিরিয়ে একবার মিস্টার ফাহাদের দিকে তাকালো। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তিনি রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে জানে না কেনো তবে মিষ্টার ফাহাদের এভাবে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকাটা আহানের পছন্দ হয়নি। আহানের চোখ মুখ শক্ত করে কিছুক্ষণ মিস্টার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর রাগ সামলাতে না পেরে। কলম দিয়ে সামনের টি টেবিলটায় শব্দ করলো। মিস্টার ফাহাদ চোখ সরালো এবং দৃষ্টি আহানের দিকে রেখে তাকালো। হটাৎ এতো গম্ভীর ভাবে আহান তার দিকে তাকিয়ে আছে কেনো? তিনি বুঝতে পারছেন না।
” কি দেখছেন আপনি?”, সরাসরি প্রশ্ন করে বসলো আহান। মিস্টার ফাহাদের দিকে তাকালেই তার রাগ হচ্ছে তার।
আহানের প্রশ্নে মিস্টার ফাহাদ হেসে ফেললো তারপর ইশারায় রুহিকে দেখিয়ে বললো,” হুম, শি ইজ বিউটিফুল।”
আহান নিচের ঠোঁট কামড়ে রাগ সামলাচ্ছে তারপর মাথা নেড়ে নেড়ে বললো,” ইয়াহ, শি ইজ! ….. মাই ওয়াইফ।”, এতটুকু বোলেই নিজের রাগ সামলাচ্ছে আহান।
অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে মুখ ফাটিয়ে দিতো আহান। এতো রাগের কারন সে নিজেও বুঝতে পারছেনা।
” নো ওয়ে! অ্যাম রিয়েলি রিয়েলি সরি মিস্টার আহান। আপনি বিয়ে করে ফেলেছেন? কিন্তু কবে ? ইনভিটেশন পেলাম না যে। এভাবে বলার জন্য রিয়েলি সরি।”, কথাগুলো বলতে থাকা অবস্থায় আহান এক্সকিউজ মি বলে উঠে চলে গেলো।
রুহি করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে অনেক্ষন হলো কিন্তু তার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। এতো সুন্দর জায়গা এদের বুঝি ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে না?
“রুহি”, হটাৎ করে আহানের কণ্ঠ শুনে রুহি ভয় পেয়ে গেলো। বুকে হাত দিয়ে পিছনে ফিরলো সে। আহান এগিয়ে এসে রুহির সামনে দাড়ালো দুই হাত পকেটে ভরে। শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো,” কি করছো?”
রুহি নিজের দিকে আঙুল করে বললো,” আমি?”
” তুমি ছাড়া আশে পাশে কেউ আছে?”, আশে পাশে তাকিয়ে বললো আহান।
” না, আপনি এতো নরম গলায় বলছেন তো তাই ঠিক হজম হচ্ছে না।”, আহানের দিকে তাকিয়ে বললো রুহি।
” হজম না হলে হজমের ওষুধ খাও।”, বলে আহান রুমে চলে এলো। আহানকে আজ রুহির অদ্ভূত লাগছে। রুহি আহানের পিছু পিছু রুমে আসলো তারপর ক্ষীণ গলায় বললো,” আপনার কি কিছু হয়েছে?”
আহান দাড়িয়ে গিয়ে রুহির দিকে তাকালো তারপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে বললো,” বুঝতে পারছি না।”
রুহি নির্বুদ্ধিতার মতন তাকিয়ে রইলো। রুহি কিছুই বুঝলো না তারপর করিডোরের দিকে পা বাড়াতেই আহান শক্ত গলায় বলল,” থামো।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকালো। এর ভিতরের অগ্নিমূর্তি আবার জেগে উঠেছে।
” কেনো থামবো কেনো?”
” আমি বলেছি তাই থামবে। আমার ফোনটা খুঁজে পাচ্ছি না। একটু খুজে দেও।”, অর্ডারের মতন করে বললো আহান।
” আমাকে কি নিজের বউ ভাবতে শুরু করেছেন? এসব কাজ বউদের হয় জামাইয়ের ঘড়ি খোজা, ওয়ালেট খোজা এসব আমি করবো না।”, ডাট দেখিয়ে বললো রুহি।
আহান এবার এগিয়ে আসতে লাগলো, রুহি পিছাতে পিছাতে একদম দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো।
” তুমি খুজে দিবে নাকি ড্রাইভারকে বলে এক্ষুনি বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো।”, ভয় দেখানোর জন্যে সিরিয়াস হয়ে বললো আহান। রুহি ভয় পেলেও বটে আহানকে মুখ বাঁকিয়ে সে ফোন খুঁজতে লাগলো। আহান একটা চেয়ার টেনে বসে রুহির খোজা খুজি দেখতে লাগলো।
” অলসের ঢেঁকি একটা। নিজের ফোন নিজে খুঁজে নিতে পারছে না। সাধে কি আর কুম্ভকর্ণ বলি?”, বির বির করে বলতে লাগলো রুহি।
রুহি অনেক্ষন খুঁজলো কোথায় পেলো না আসলে ফোন আহানের কাছেই আছে। রুহিকে করিডোরে যাওয়া থেকে আটকাতেই এই কান্ড করছে আহান। আহানের কাছে মনে হচ্ছে সে একটা মেয়েকে প্রোটেক্ট করছে এর চেয়ে বেশি কিছু না। যদি তাই হবে রুহির চোখে এভাবে হারিয়ে যায় কেনো? উত্তর তার জানা নেই।
অনেক্ষন খুঁজে রুহি বেশ বিরক্ত হয়ে গেলো। ফোন সাইলেন্ট করা দেখে কল করলে বাজছে না।
” ধুর ছাই আমি আর খুজতে পারবো না আপনার ঐ কুফা ফোন।”, রেগে গিয়ে বললো রুহি।
আহান পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে উঠে দাড়িয়ে বললো,” দরকার নেই পেয়েগেছি।”
এতোক্ষণে রুহির বুঝতে বাকি রইলো না যে আহান ইচ্ছে করে এমন করেছে। রুহি রেগে গিয়ে আহানের দিকে বিছানা থেকে একটা বালিশ ছুড়ে মারলো। আহান এক হাতে বালিশটা ধরে ফেললো। ” আপনি হলেন একটা.. , অসভ্য লোক। রক্ত চোষা রক্কোস।”, রাগে গজগজ করে বললো রুহি।
” আগে তুমি এটা ঠিক করো আমি মানুষ নাকি রাক্ষস? তারপর আমি তোমায় বোঝাবো আমি অসভ্য নাকি রক্ত চোষা।”, এগিয়ে আসতে আসতে বললো আহান।
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৭
#নবনী_নীলা
” আগে তুমি এটা ঠিক করো আমি মানুষ নাকি রাক্ষস? তারপর আমি তোমায় বোঝাবো আমি অসভ্য নাকি রক্ত চোষা।”, এগিয়ে আসতে আসতে বললো আহান। তারপর হাতের থাকা বালিশটা রুহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। রুহি ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে রাগ কমাচ্ছে।
রাতে খাওয়া শেষ করে রুহি তাড়াতাড়ি রূমে এসে বিছনায় শুয়ে পড়লো। যদিও এতো তাড়াতাড়ি সে ঘুমায় না তাও এসে শুয়ে পড়লো। বিছানা দখল করতে হবে বলে কথা। সে এমন ভাবে শুয়ে আছে যেনো ঘুমে তলিয়ে গেছে। আহান রুমে এসে রুহিকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করছে রুহি আদোও ঘুমিয়েছে নাকি ঘুমানোর ভান করছে। আহানের বুঝতে বেশি দেরী হলোনা যে এইসব নাটক। জেগে জেগে ঘুমানোর ভান হচ্ছে। ঠিক আছে কতক্ষণ এই নাটক চলে সেও দেখবে। হাত পা ছুরে পুরো বিছানাটা দখল করে আছে। এই মেয়ের নাটক শেষ হয়না।
আহান ফোন, ওয়ালেট এগুলো টেবিলে রেখে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। আহানের যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুহি উঠে বসল।
” ধুর ছাই এতক্ষণ কি এইভাবে মরার মতন পরে থাকা যায় নাকি? সবে তো সাড়ে দশটা বাজে।”, রুহির বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো কি করা যায়। কিন্তু মাথায় কিছু এলো না। তারপর কাথাটা গায়ে মুড়িয়ে শুয়ে রইলো তবে তার চোখে খোলা। মাথায় তার নানা চিন্তা সাত মাস পর কি হবে? লোকে তাকে কি বলবে? যদি নানু জানতে পেরে যায় এইসব? নানু তো সহ্য করতে পারবে না।
একমাস প্রায় শেষ হয়ে এসেছে আর মাত্র ছয়মাস।
তাকে কেউ অনেক ভালোবাসবে এই স্বপ্নটা হয়তো কোনদিন পূরণই হবে না তার। অবশ্য যার মা যাকে ভালোবাসে নি তাকে অন্য কেউ যে তাকে ভালোবাসবে সেটা ভাবা সম্পূর্ণ বোকামি সেটা সে জানে। সে জেনে শুনে তার মায়ের পথটাই বেছে নিয়েছে। কিন্তু তার পরিণতি তার মায়ের মত হবে না সেটা সে জানে, সে একই ভূল করবে না। এতোটা বোকা সে নয়,
এইসব ভাবতে গিয়ে রুহির মন খারাপ হয়ে গেলো। তারপর চোখ বন্ধ করতেই ঘুমে তলিয়ে গেলো।
আহান মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো। তারপর কফি নিয়ে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর পর রুহিকে দেখলো। এভাবে শুয়ে আছে কিভাবে এতক্ষণ ধরে?
আহান কাজ শেষে ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘুমাতে এসে দেখে রুহি আহানের বালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আহান আস্তে করে বালিশটা রুহির থেকে সরিয়ে আনলো তারপর একপাশে বালিশটা রেখে আস্তে করে শুয়ে পড়লো। বালিশে মাথা রাখতেই আহানের চোখ গেলো রুহির দিকে কি শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। সামনের ছোটো ছোটো চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের সামনে এসে পড়েছে। আহান নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়ে মুখের সামনে থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিলো। তারপর রুহির থেকে চোখ সরিয়ে এনে চোখ বন্ধ করতেই হটাৎ কারোর স্পর্শে চোখ খুললো আহান। চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো রুহি তার ডান হাতটা জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। হাতটাকে বালিশ ভেবেছে হয়তো। আহান হাতটা সরিয়ে নিতে চাইলো নাহলে আহানকেই সকালে কথা শুনবে এই মেয়ে। আহান হাত সরিয়ে নিতেই রুহি আবার জড়িয়ে ধরলো হাতটা। আহান রুহির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো তারপর আর হাতটা সরালো না। কেনো জানি সরাতে ইচ্ছেও করছে না তার।
সকালে রুহির ঘুম ভাঙ্গার আগেই আহানের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু রুহি হাত ধরে আছে বলে সে উঠতে পারছে না। তারপর শেষে উপায় না পেয়ে আস্তে করে হাতটা সরাতে গেলো আহান। তখন রুহি নড়ে চড়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলতে লাগলো। আহান হাত সরাতে গিয়ে থমকে গেলো। ঘুম ভাঙ্গলেই এলাহি কাণ্ড করে ছাড়বে। রুহি চোখ খুলে কিছুক্ষণ আহানের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থেকে নিজের দিকে তাকাতেই রুহি আহানের হাত ছেড়ে দিয়ে লাফিয়ে উঠে বসলো। আহান কাধ ধরে হাতটা নাড়াচাড়া করতে লাগলো।
ঘুম থেকে উঠে মারাত্মক শক খেয়েছে রুহি। তারওপর প্রচন্ড রাগ লাগছে রুহির।
” কি করেছেন কি আপনি আমার সাথে। আপনার কত…….”, রাগে বাকিটুকু বলতেই পড়লো না রুহি।
” এক্সকিউজ মি! এই প্রশ্নটা আমার তোমাকে করা উচিৎ। আমার হাতের তো বারোটা বাজিয়ে দিয়েছ।”, হাতটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলল আহান।
রুহি বড় বড় চোখে আহানের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি করেছি মানে? আমি কি করেছি? আপনি ঘুমের মধ্যে আমার সুযোগ নিয়েছেন। এবার আমাকে দোষ দিচ্ছেন।”, চোখ লাল করে বললো রুহি।
আহান রুহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,” তাই বুঝি? সারারাত তুমি আমার হাত জড়িয়ে ঘুমালে এখন আমাকে বলছো আমি তোমার সুযোগ নিয়েছি।দিস ইজ রেডিকুলাস”, বলতে বলতে আহান উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
রুহি হা করে বসে রইলো। তারপর নিজের দিকে তাকালো কিছু করেছে বলে তো তার মনে হচ্ছে না। নিজের ভুল বুঝতে পেরে রুহি থ মেরে বসে রইলো।
🍁🍁🍁
বিকেলে আহান রাতুল মানে অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজারের সাথে খোলা জায়গাটায় কিছু পেপার নিয়ে কথা বলছিলো। কন্ডিশন গুলো আহান পড়ছিলো এমন সময় বাম দিকে তাকাতেই দেখলো রুহি হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে।
” রাতুল ওদিকে খেয়াল রাখো যতক্ষণ না আমি কন্ডিশনগুলো পড়ে শেষ করছি।”, আহান রাতুলকে বললো।
” ম্যাডামের দিকে নজর রাখবো স্যার?”, হাসি মুখে প্রশ্ন করলো রাতুল।
আহান পাতা উল্টাতে উল্টাতে হা সূচক মাথা নাড়ল। রাতুল রুহিকে চোখে চোখে রাখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর হটাৎ রাতুল স্যার স্যার বলে চেঁচিয়ে বললো,” ম্যাডামকে দেখতে পাচ্ছি না। জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে মনে হলো।”
আহান ফাইলটা রেখে হুড়মুড়িয়ে দাড়িয়ে পড়লো তারপর বামদিকে তাকাতেই দেখলো ফাকা কেউ নেই।
” কোনদিকে যেতে দেখেছো? “, বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো আহান।
” স্যার বাম দিকে সোজা গিয়ে জঙ্গলের ভিতরে চলে গেলো।”, আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো রাতুল।
আহান ছুটে সেদিকে গেলো বাম দিকে । এগিয়ে গেলো চারিদিকে দেখলো কোথাও নেই। জঙ্গলে যাওয়ার কি প্রয়োজন পড়লো এই মেয়ের। আহান অস্থির হয়ে উঠলো। কোনোকিছু না ভেবেই সে জঙ্গলের ভিতরে চলে এলো। চারিদিকে শুধু গাছপালায় ভরা। এ জঙ্গলে রুহিকে এবার সে কোথায় খুঁজবে? কিছুক্ষণ পর পর পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। জঙ্গলের ভিতর সে শব্দ ভয়ানক লাগছে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নামবে তখন কিভাবে খুঁজবে সে রুহিকে। অজানা ভয়ে অস্থির হয়ে উঠলো আহান। রুহি রুহি বলে ডাকতে লাগলো সে। কোনো সাড়া নেই। নিস্তব্ধ জঙ্গল আশে পাশে থাকলে অবশ্যই সাড়া পাওয়া যেতো কিন্তু কোনো সাড়া নেই তাহলে কি আরো গভীরে চলে গেছে রুহি।
এদিকে রুহি ভয়ে শেষ পেঁচার ডাক, শিয়ালের ডাকে ভয়ে তার আত্তা কেপে উঠছে। কোনদিক দিয়ে এসেছিলো তার মনে নেই। তার মনে হচ্ছে সে হারিয়ে গেছে এবার কি চিল শকুনের খাবার হতে হবে ভেবেই চোখে পানি চলে এসেছে।
সন্ধ্যা হয়ে এলো। চারিদিক অন্ধকার এর মাঝে শুধু আকাশের দিকে তাকাতেই চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছে। চাঁদের ঝাপসা আলোয় চারিদিকটা আরো ভয়ে ভরিয়ে দিয়েছে। রুহি ভয়টা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। মনোবল সে এখনো হারায়নি। গলা শুকিয়ে গেছে তার। হটাৎ দূর থেকে একটা আলো দেখতে পেলো সে। রুহি উঠে দাঁড়ালো, ভয়ে ভয়ে সেই আলোর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। একটু কাছে যেতেই আহানের অবয়ব দেখতে পেলো সে। এইবার নিজেকে সুরক্ষিত মনে হচ্ছে তার। আহানকে দেখে রুহির চেহারায় একঝিলিক হাসি ফুটে এলো। রুহি ছুটে গিয়ে আহানকে জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকে। আহান ফোনের টর্চ দিয়ে পাগলের মতন খুঁজছিলো রুহিকে। হটাৎ পিছন থেকে কেউ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরায় আহান থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। আহানের বুঝতে দেরী হলোনা এটা রুহি। আহান মাথা নিচু করে একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললো তারপর রুহির জড়িয়ে রাখা মুষ্টি বন্ধ হাতের উপর হাত রাখলো।
রুহি হাপাতে হাপাতে বললো,” আপনি কি আমার কুম্ভকর্ণ?”
আহান এই সিচুয়েশনে দাড়িয়ে নিঃশব্দে হেসে ফেললো রুহির কথা শুনে তারপর নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে রুহির দিকে ফিরে বললো,” হুম। তুমি ঠিক আছো?” বলে রুহির দিকে টর্চ মারতেই চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো।
আহান আরেক হাত দিয়ে রুহির মুখটা ভালো করে দেখতে লাগলো। কিছু কামড়ায় নি তো। রুহি হাত দিয়ে টর্চ মুখের সামনে থেকে সরিয়ে বললো,” আরে আলো চোখে লাগছে তো?”
আহান রুহিকে দেখে অবাক হচ্ছে মেয়েটা এতো সাহসী। দেখে মনে হচ্ছে মেলায় হারিয়ে গিয়েছিল। আহান তো ভেবেছিলো কেঁদে কেটে হয়তো বন্যা করে দিয়েছে। চোখের কোনে জল ছল ছল করছে ঠিকই কিন্তু তেমন কান্না করেনি রুহি।
” তোমার ভয় করেনি?”, আশে পাশে তাকিয়ে বলল আহান।
আহান রুহির হাত শক্ত করে ধরে আছে।
” হ্যা করেছিলো, পেঁচার ডাকে বাতাসে পাতা নড়ার শব্দে পরে ভাবলাম ভয় পেয়ে করবো টা কি? যা কপালে আছে তো হবেই। নিজেকে না বিয়ার গ্রিলস মনে হচ্ছিলো। খালি কোনো ক্যামরামান ছিলো না সাথে।”, স্বাভাবিক ভাবেই বললো রুহি।
আহানের বিস্ময়ের সীমা রইলো না তারপর আহান একটা ভ্রু তুলে প্রশ্ন করলো,” এখন ভয় করছে না?”
” না এখন তো আপনি আছেন ভয় কেনো পাবো?”, হেসে আহানের দিকে তাকাতেই একটু ভয় পেয়ে দূরে সরে এলো রুহি।
তারপর সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,” আপনি কি আসলেই আহান নাকি আহানের রুপ ধরে এসেছেন আপনি জ্বীন না তো?” বোলেই আহান থেকে টর্চ টা টেনে নিলো রুহি।
তারপর আহানের দিকে টর্চ মারলো আহানের ছায়া পড়ছে কিনা দেখতে ছায়া দেখতে পেয়ে হেসো হাসো চেহারায় টর্চ আহানের হাতে দিয়ে আগের জায়গায় ফিরে এসে আহানের হাত ধরে দাড়ালো।
আহান বিরক্তি নিয়ে রুহির দিকে তাকালো তারপর বলল,” তুমি কোনোদিন সুধরাবে না তাই না?”
রুহি চুপ করে রইলো বেশি কথা বললে তার কপালে খারাপ আছে সে জানে। এর মেজাজ বিগড়ে গেলে যখন তখন জঙ্গলে রেখে চলেও যেতে পারে।
[ চলবে ]
আজ ছোটো করে দেওয়ার জন্যে দুঃখিত।🙏
[ চলবে ]