#বেটারহাফ
writer:#Nishat_Tasnim_Nishi
পর্ব_৫
জীবনের তেইশ বসন্ত পেরিয়ে রাত্রি এসেছিলো তার জীবনে। বসন্তের রঙ্গিন ফুল আর তাজা হাওয়ার মতো আসেনি তার জীবন রঙ্গিন করত! এসেছিলো কালবৈশাখী ঝড়ের মতো,তার জীবন এলোমেলো করতে।
ব্যালকনিতে বসে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে করতে সে ইতোমধ্যে এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করে ফেলেছে। আজ আর তার ঘুম হবে না, কাটিয়ে দিলো সিগারেটের সাথে রাত।
৮.
জ্বরের ঘোরে কাঁপছে রাত্রি। তার পাশেই শুয়ে আছেন শাহিনুর বেগম। না চাইতে উঠে রাত্রিকে জলপট্টি দিতে লাগলেন। রাত্রি ঘুমের ঘোরে মা বলে কেঁদে উঠলো। শাহিনুর বেগম স্পষ্ট শুনলেন সে কন্ঠ। তবুও তিনি কোনো রিয়েক্ট করলেন না। রাত্রিকে শুইয়ে দিয়ে অপরপাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন। রাত্রির চেহারা ও তিনি দেখেন না। এই চেহারা দেখলেই তার পুরানো ক্ষত তাজা হয়ে উঠে।
কি মাসুম চেহারা। দেখলেই মায়া চলে আসে। শাহিনুর বেগমের একফোঁটাও মায়া আসে না। তিনি এ চেহারার মায়ায় একবার পড়েছিলেন। যার শাস্তি আজীবন পেয়ে যাচ্ছেন। মেয়েটা দেখতে হুবহু তার বাবার মতো। চরিত্র রাও কি তেমন? কই এত দিনেও তো তার মনে হয় নি। তবুও কেনো তিনি মানতে পারেন না? কেনো রাত্রিকে কষ্ট দিলে তিনি আনন্দিত হন?
রাত্রির গায়ে কাঁথা টা টেনে দিয়ে উঠলেন তিনি। সিন্দুক খুলে সব জামাকাপড়ের নিচ থেকে পুরানো আলব্যাম বের করলেন। ছবির দিকে তাকিয়ে তিনি উচ্চ সুরে হাসলেন,হেসে বললেন–” আমার সামান্য ত্রুটির জন্য কত অপমান করেছিলে? আর আজ দেখো তোমার মেয়ে সবার কাছে বারবার অপমানিত হচ্ছে। ”
এক হাতে আয়না নিয়ে মুখের সামনে এনে বাম চোখে হাত বুলালেন। তার এই টেরা চোখের জন্য সে একদিন কত অপমানিত হয়েছিলো। আজ আবার মনে পড়তেই চোখ দুটো জ্বলে ভিজে উঠলো। তিনি চোখের জল মুছে ফেললেন আজ আর কাঁদবেন না। আজ তার খুশির দিন, তিনি প্রতিশোধ নিতে পেরেছেন।
গুন গুন করে গেয়ে উঠলেন,
ভেজা ভেজা স্বপ্ন গুলো আধো ঘুমোঘোর
দক্ষিণ হাওয়া ঢাকছে গায়ে মেঘের চাদর ।
বৃষ্টি ফোঁটা মিষ্টি সুরে ঝরলে অবিরাম
স্বপ্ন চোখে তোমায় ঘিরে ভিজবো অবিশ্রাম ।
ভেজা ঘাসে বাজিয়ো নুপুর রিনিঝিনি ঝুম
জুড়িয়ে আসুক বৃষ্টি ভেজা স্বপ্নমাখা ঘুম ।।
(চন্দ্রগুপ্ত)
৯.
সেদিনের পর দিন দুয়েক কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে বহু জিনিস পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। সাগর শব্দবিহীন ভাবে বৃষ্টিকে সাহায্য করেছে। ওর ঔষধ,খাওয়া দাওয়া সবকিছুই নিজ হাতে করেছে। বিনিময়ে বৃষ্টির চোখে একরাশ ঘৃণা আর ভয় দেখেছে। এ নিয়ে সে কোনো অভিযোগ করে নি, চুপচাপ নিজের মতো কাজ করেছে। সে বারবার চেষ্টা করছে বৃষ্টির সাথে মিশতে। কিন্তু বৃষ্টি ততই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। সে ভেবে পাচ্ছে না কীভাবে বৃষ্টির সাথে সম্পর্কটা এগুবে সে?
অন্যদিকে রাত্রিকে দেখতে না পেয়ে তার অবস্থা খারাপ হয়ে আছে। চোখ দুটো ভীষণ ছটফট করছে রাত্রিকে দেখার জন্য। বহু চেষ্টা করেও দু দন্ডের জন্যেও তাকে দেখতে পায় নি। তার সবসময় চিন্তা হয় রাত্রির জন্য, মেয়েটার খুব বড় একটা সমস্যা। কিছু হলেই সুইসাইডের চেষ্টা করবে। মাঝে মাঝে এজন্য তার প্রচুর রাগ হয় রাত্রির প্রতি।
রাত্রি বিহীন খাবার টেবিলে বসে আছে পুরো পরিবার। সবাই নিজের মতো খাচ্ছে। কারো কোনে মাথা ব্যাথা নেই এ নিয়ে। কিন্তু একজনের এ নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। সে হলো সাগর। সে রাত্রির কথা জিজ্ঞেস করতেই ফিহা ফট করে বলে উঠলো,–” ছোট আম্মু কিচেনে বসে খাচ্ছে।”
ব্যাস! সাগরের আর খাওয়া হলো না, সে চুপচাপ না খেয়ে উঠে গেলো। বাকিরা একপলক তাকিয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এ বাড়ীর কেউ সাগর আর শাহিনুর বেগমের বিষয়ে কথা বলেন না। এটাই নিয়ম। সাগরের বিষয় শাহিনুর বেগম ছাড়া কারো অধিকার নেই কথা বলার। যে যার মতো খেয়ে কাজে চলে যেতে লাগলো।
শফিক সাহেব বেঁচে থাকতে তিনিও কখনো সাগরের ব্যাপারে কথা বলে নি। সাগরের সবকিছুতে শাহিনুর বেগমের অধিকার সবচেয়ে বেশি। সব ছেলে মেয়ে এমনকি ছোট মেয়ে শিফার থেকেও সাগরের উপর আলাদা টান শাহিনুর বেগমের। এর পিছনেও কারণ রয়েছে।
১০.
তিক্ত মেজাজ নিয়ে ইজি চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে সাগর। ইদানীং সিগারেট ছাড়া তার আর কিছুই ভালো লাগে না। নারী নামক বস্তু টি তার জীবনে প্রবেশ করার পরেই আগমন ঘটে এই নেশার। জীবন টা ছারখার হয়ে গিয়েছে তার। না পারছে মরতে আর না পারছে শান্তিতে বাস করতে। সবকিছু গলায় ঝট পাকিয়ে আটকে আছে। সে গিলতেও পারছে না ফেলতেও পারছে না। মায়ের জেদের জন্য তার জীবনে দু দুটো নারী আটকে আছে। কাকে ছাড়বে আর কাকে ধরবে সে ভেবে কূল পায় না! তার লাইফ ই কেনো এমন? কোন জন্মের পাপের শাস্তি পাচ্ছে সে?
এমন সময় চা নিয়ে আসে বৃষ্টি। থরথর করে কাঁপছে তার হাত। সাগর বুঝলো বৃষ্টি নিজ থেকে নিয়ে আসে নি তার মা পাঠিয়েছে। সে পাশের চেয়ার টা পা দিয়ে ঠেলে বৃষ্টির সামনে দিয়ে বললো,–“বসো।”
বৃষ্টি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,–“চ্ চা চা টা নিন।”
সাগর মাথা নাড়িয়ে বললো,–“রাখো টেবিলে। আর বসো এখানে।”
বৃষ্টি ভয়ে ভয়ে বসলো। সে প্রচন্ড ভয় পায় সাগরকে। ভাবীদের কাছে সাগরের রাগের ব্যাপারে শুনেছে। কিন্তু সেদিন সে নিজে সাক্ষী হয়ে গিয়েছে। একদিনের মার খেয়েই তার জ্বর উঠে গিয়েছে। সে খুব ভয় সাগরকে,তার মুখের উপর কোনো কথাই বলে না সে। সে ভাবে যত কম কথা তত তার জন্যই মঙ্গল।
সে ভয়ে চোখ মেলেও তাকাচ্ছে না সাগরের দিকে। বসে বসে দুই হাত কচলাচ্ছে। সাগর বুঝলো বৃষ্টি কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না।
সাগর ভাবছে, কী এমন বলবে যার জন্য বৃষ্টি এত ভয় পাচ্ছে? মা কী বলতে বলেছে ওকে?
সে নরম গলায় ডাক দিলো, –“বৃষ্টি।”
বৃষ্টি অন্য মনষ্ক হয়ে ভাবতেছিলো, সাগরের ডাকে তার হুশ ফিরে। সে সাথে সাথে হু হু করতে লাগলো।
–“তুমি কি কিছু বলবে?”
বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বললো যে হ্যা সে বলবে।
সাগর অভয় দিয়ে বললো,–“তোমাকে বলতে হবে না আমি বুঝেছি কী বলবে।”
বৃষ্টি অবাকের সুরে বললো,–“কী বুঝেছেন?”
–“মা, তোমাকে বাচ্চা বিষয় বলতে বলেছে তাই তো?”
বৃষ্টি দ্রুত গাড় হেলিয়ে বললো,–” না,না।”
সাগর ভ্রু কুচকে তাকালো বৃস্টির দিকে। সোজা হয়ে বসে ওর দিকে তাকালো। ইশারায় তাকে জিজ্ঞেস করলো তাহলে কী?
.#বেটারহাফ
#Nishat_Tasnim_Nishi
#পার্ট_০৬
সাগর ভ্রু কুচকে তাকালো বৃস্টির দিকে। সোজা হয়ে বসে ওর দিকে ঘুরলো। ইশারায় তাকে জিজ্ঞেস করলো তাহলে কী?
বৃষ্টি কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার গলায় কথা আটকে আছে সে বলতেও পারছে না। তার ধারনা কিছু বললেই হয়তো সাগর তাকে মেরে ফেলবে।
বৃষ্টি কিছু বলছে না দেখে সাগর বললো,–“আচ্ছা,কিছু বলতে হবে না। আমি মায়ের থেকে জেনে নিবো।”
বৃষ্টি কিছুটা ভয় পেলো। কারন শাশুড়ি মা তাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন সে নিজে বলে উনার কাছে খবর নিয়ে যায়।
বৃষ্টি সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে বললো,–“না,না।আমিই বলছি।”
–“তাহলে বলো।”
বৃষ্টি মিনমিন গলায় বললো যে সাগরের বড় ফুফি অসুস্থ। তাদের বাড়ী থেকে ফোন এসেছে।এখন সাগর আর বৃষ্টি যেনো রেডী হয়ে থাকে। তাদের সহ একটুপর শাহিনুর বেগম রওনা দিবেন।
কথা টা শুনেই সাগর সাথে সাথে দাড়িয়ে যায়। বৃষ্টিকে কোনো জবাব না দিয়ে সরাসরি মায়ের রুমে চলে যায়। শাহিনুর বেগম বিছানায় বসে পান খাচ্ছিলেন এমন সময় সাগর এসে দরজায় টোকা দেয়। সাগরকে দেখেই তিনি বললেন,–” ভেতরে আসো।”
সাগর রুমে ডুকে আশেপাশে তাকালো, কাউকেই দেখতে পায় নি। রুমে তার মা একা, তার মানে বৃষ্টি কিচেনে। সে সোজা গিয়ে মায়ের সামনে দাড়িয়ে বললো,–“মা,বৃষ্টিকে কী বলেছো তুমি?”
শাহিনুর বেগম আয়েশি ভঙ্গিতে পা তুলে বসে পান মুখে দিলেন। যেনো তিনি জানতেন সাগর এই প্রশ্নই করবে। তিনি সোজা সহজ ভাষায় বললেন,–“কেনো?বৃষ্টি বলে নি?”
–“মা তুমি ভালো করেই জানো ফুফির বাড়ী কোথায়? ওখানে যেতেই বারো ঘন্টা লাগে আসার কথা বাদই দিলাম।”
–“তাহলে তুই তোর ফুফিকে ফোন দিয়ে বল,ফুফি আপনাদের বাড়ী অনেক দূর আমি আসতে পারবো না।”
সাগরের রাগ উঠে গেলো। মা কী বলছে?কেনো বলছে তার মাথায় ডুকছে না। হঠাৎ তার মা এত দূরের পথে যেতে বলছে,কিন্তু কেনো? রাত্রির সাথে এরমধ্যে কিছু করে ফেলবেন না তো?
–“মা,আমি সোজাসুজি কথা পছন্দ করি। কী চলছে তোমার মাথায়?কেনো আমাকে আর বৃষ্টিকে দূরে পাঠাতে চাইছো?”
–” সোজাসুজি শুনতে চাস তো?”
সাগর মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যা। শাহিনুর বেগম সোজা হয়ে বসে কড়া ভাষায় বললেন,–“আমি চাই তুই বৃষ্টিকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও যা,তাহলে হয়তো তোদের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হবে। আর এরজন্য তোর ফুফির বাড়ী পারফেক্ট।”
—“মা,আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না। আমার হাতে কতগুলো প্রজেক্টের কাজ রয়েছে। সেগুলো কমপ্লিট করা ছাড়া কোথাও যেতে পারবো না।”
–“আমি জানতাম। জানতাম আমি যে তুই এমন কিছু বলবি।”
সাগর কোনো জবাব না দিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো। শাহিনুর বেগম পেছন থেকে বলে উঠলো, –“সাগর দাড়াও,আমার কথা শেষ হয় নি।”
সাগর ঘুরে দাড়ালো।শাহিনুর বেগম বললেন,–“তোমার অফিস থেকে আমি সোহেলকে দিয়ে ছুটি নিয়েছি। তোমাদের জন্য আজ বিকালের ট্রেনের টিকেট কাটা হয়েছে। আমার কথা শেষ পালন করা তোমার ব্যাপার।”
সাগর হনহন করে বের হয়ে গেলো। শাহিনুর বেগম হাসলেন, তিনি জানেন তার ছেলে যাবে।
শিফাকে দিয়ে বৃষ্টিকে ডেকে আনলেন। বৃষ্টিকে ইশারায় বিছানায় বসতে বললেন তিনি।
বৃষ্টির সামনে এগিয়ে এসে বসে বললেন,–“বউমা,আমি কিছু কথা বলবো মনোযোগ দিয়ে শুনবা।”
বৃষ্টি মাথা নাড়ালো। শাহিনুর বেগম কথা শুরু করার আগেই রাত্রি কিচেন থেকে ফিরে আসলো। বৃষ্টিকে আর শাশুড়িকে একসাথে দেখে সে তাদের দেখার আগে নিজেকে আড়াল করো ফেললো। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে সে তাদের কথোপকথন শুনার জন্য কান পাতলো।
শাহিনুর বেগম প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়ে বললেন,
–” তুমি তো জানোই রাত্রি সাগরের প্রথম স্ত্রী! ”
বৃষ্টি মুখ নিচু করে মাথা নাড়ালো।
শাহিনুর বেগম কথাটা জেনেছেন বৃষ্টির মায়ের কাছ থেকেই। তিনি গত পরশু কাঁদতে কাঁদতে ফোন দিয়েছিলেন তার মেয়ের সাথে কথা বলবেন বলে কিন্তু বৃষ্টি কথা বলে নি। উনিই বলেছিলেন কথা আর তখনই জেনেছেন যে বৃষ্টি সব জেনেছে।
বৃষ্টির উত্তর শুনে তার চোখেমুখে খুশির জ্বলক ফুটে ওঠলো। তিনি সুর টেনে বৃষ্টিকে বললেন,–” সাগর যে রাত্রিকে কতটা ভালোবাসে সেটাও জানো?”
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়।
–“তার মানে রাত্রির অধিকার তোমার চেয়ে বেশি। ”
বৃষ্টি অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। তার মাথায় ডুকছে না কী বলছেন তিনি।
—“তোমার কষ্ট হয় তাই না যখন সাগর রাত্রির কাছে যায়?”
বৃষ্টি এবারও মাথা নাড়ায়।
–” তুমি যদি আমার কথা শুনো তাহলে তোমার এ কষ্ট হবে না।”
–“কীভাবে?”
এবার শাহিনুর বেগম সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলেন,–” তোমাকে রাত্রির জায়গা নিতে হবে। সাগরের মনে জায়গা করে নিতে হবে তাহলেই সব তোমার হবে। এ বাড়ী, গাড়ী, সব কিছুই তোমার হবে। সবচেয়ে বড় কথা তোমার স্বামী,সাগরও তোমার হবে। আর এসব সম্ভব একমাত্র বাচ্চার মাধ্যমেই। মানে হলো তোমার বাচ্চা হলেই সাগর ও তোমার হাতের মুঠোয় আবার তার সবকিছুও তোমার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। আর বাচ্চা হয়ে গেলে সাগরও তোমাকে কিছু বলতে পারবে না বাচ্চাটার জন্য।”
বৃষ্টি মাথা নাড়ালো। সে ভাবলো সত্যিই তো, বাচ্চা হলেই তো সবকিছু তার হয়ে যাবে। বাচ্চা না হওয়ার কারণেই তো রাত্রির সবকিছু হয়েও হলো না।
শাহিনুর বেগম আড় চোখে বৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করলেন। বৃষ্টিকে ভাবতে দেখে তিনি ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। মনে মনে ভাবলেন তার উদ্দেশ্য সফল হতে চলেছে।মেয়েটা ভারী বোকা, তিনি এমন বোকা মেয়েই চেয়েছিলেন তার ছেলের জন্য। তাইতো এত এত মেয়ে থাকতে বৃষ্টিকেই তার ছেলের জন্য বাছাই করেছিলেন।
বৃষ্টির ভাবনাচিন্তার মাঝেই তিনি আবারো তাকে বললেন তারা এখন বাহিরে যাচ্ছে আর এটাই তার সুযোগ। বৃষ্টি ও ঘাড় হেলিয়ে উনার সাথে সুর মিলালো। এদিকে দরজার আড়ালে সব শুনে ফেলেছে । সেখানে আর সে দাড়াতে পারলো না, দৌড়ে চলে যেতে লাগলো ছাদের উদ্দেশ্য। নিজের উপর তার হাসি আসছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে হেসে উঠলো,হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে সে কেঁদে দিলো।
১১.
বিকালের দিকেই সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা দেয় সাগর আর বৃষ্টি। বৃষ্টির মুখে লেগে আছে অচেনা হাসি। যার অর্থ সে নিজেও জানে না। সাগর চুপচাপ বসে আছে। কয়েকদিনের ধকলেই সে একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গর্ত হয়ে গিয়েছে। চেহারায় এখন আর আগের মতো লাবণ্য নেই। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে করে সব কিছু ছেড়ে দূরে কেথাও চলে যেতে। খুব ইচ্ছে হয় মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে। কিন্তু সে পারে না, তার কাঁধে যে দায়িত্ব নামক বোঝা রয়েছে।
কিছুক্ষণ পর সে পাশ ফিরে বৃষ্টির দিকে তাকায়। কি নিষ্পাপ মুখশ্রী! তার জন্যই একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেলো। নিজের প্রতি তার একরাশ ঘৃণা এসে জন্মায়। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।এভাবে এত অপরাধবোধ নিয়ে শান্তিতে বাঁচতে পারছে না সে। চোখ দুটো বন্ধ করে ঘাড় এলিয়ে দেয় বাসের সিটে। সে ক্লান্ত,ভীষণ ক্লান্ত। ঘুম আসবে কী না জানে না সে।
১২.
জানার গ্রিল ধরে বাহিরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাত্রি । কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টিকে নিয়ে চলে গিয়েছে সাগর। তখন থেকেই সে তাদের দিকে চেয়েছিলো। এখনও তাকিয়ে আছে। তার ধারনা তার যে সাগর চলে গিয়েছে সে সাগর আর আসবে না। আসবে অন্য কোনো সাগর। যে বৃষ্টির প্রেমে মাতাল হয়ে থাকবে রাত্রির প্রেমে নয়। যে আর ভালোবেসে রাত্রিকে কাছে টেনে নিবে না, যে খোঁজ নিয়েও দেখবে না রাত্রি নামের মানুষ টা বেঁচে আছে কী না।
চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে রাত্রি আনমনে গুনগুন করে গেয়ে উঠলো,
এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনা তো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।।
যুঁথী বনে ঐ হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া।
হায় হায়রে দিন যায়রে
ভরে আঁধারে ভুবন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।।
শুধু ঝরে ঝর ঝর
আজ বারি সারাদিন
আজ যেন মেঘে মেঘে
হলো মন যে উদাসীন।
আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
কি যে ভাবি আনমনে।
তুমি আসবে ওগো হাসবে
কবে হবে সে মিলন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।।
.
চলবে?
[রিচেক করা হয় নি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।আর আজকের পর্ব কেমন হয়েছে মতামত জানাতে ভুলবেন না।]
চলবে?
[সরি, সরি! ছোট আর লেইট বলে। বাম হাত ফুলে গিয়েছে, এক হাতে ফোন ধরে টাইপ করা টা টাফ! এটুকুই লিখতে পেরেছি।সেজন্য এতগুলো দুঃখিত। ]