বেটারহাফ পর্ব ৭+৮

#বেটারহাফ
#Nishat_Tasnim_Nishi
#PART_০৭

আকাশে গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকছে।চারপাশ অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি নামবে। ব্যস্ত শহরের অলিগলি তে জমে থাকা মানুষের ভীড় ও উদাহ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

মাত্রই ঝকঝক আওয়াজ করে ট্রেন এসে থামলো স্টেশনে। বৃষ্টি বারবার ঢলে পড়ছে,সাগরের কাঁধে। বমি করে তার অবস্থা কাহিল। লং জার্নি সে আজ প্রথম করেছে সেজন্যই বোধ হয় তার এ অবস্থা। সাগর হয়তো বিষয়টা বুঝেছে তাই সে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। বৃষ্টি যখনই বমি করে ক্লান্ত হয়েছে তখনই সাগর তার মাথা টা টেনে নিজের কাঁধে রেখেছে। তখন এত ক্লান্তির মাঝেও বৃষ্টির মুখে হাসি ফুটে ওঠেছিলো। স্বামীর কাঁধে ঠাই পেয়ে নিজেকে তার ধন্য মনে হচ্ছে। অচেনা আনন্দ বারবার ঢেউ খেলছিলো হৃদয়ে।

.
বৃষ্টিকে একহাতে জড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে ইশারা করে সি এন জি ডাকলো সাগর। বৃষ্টিকে সিটে বসিয়ে সে গিয়ে মালপত্র নামালো।ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তারা পৌঁছে গেলো রেহানা বেগমের বাড়ীতে।

রেহানা বেগম, সাগরকে দেখামাত্রই আহ্লাদী সুরে তাকে বুকে টেনে নিলেন। তিনি তো খুশিতে আটখানা। ভাইয়ের তিন ছেলে। সবার মধ্যে সাগর হলো উনার কলিজার টুকরা। দূরের পথ বলে বেশি যাওয়া আসা হয় না। বাড়ীর পাশে হলে উনি বোধহয় সারাদিন ওই বাড়ীতে পড়ে থাকতেন।

সাগরের পাশে বৃষ্টিকে দেখে উনি ভ্রু কুচকে বললেন,–“ও কে?”

–“আমার বউ।”

রেহানা বেগম ভারী অবাক হলেন। পরক্ষণেই তিনি ভাবলেন হয়তো সাগর তার সাথে মশকরা করছে।
তিনি সাগরের কান টেনে বললেন,–“পাজী।ফুফির সাথে মশকরা? বল ও কে? ”

সাগর সিরিয়াস হয়ে বললো যে বৃষ্টি সত্যিই ওর বউ। রেহানা বেগম কিছু বলতে নিচ্ছিলেন তা দেখে সাগর ইশারায় তাকে বললো সে পরে বলবে। তিনি আর কথা বাড়ালেন না।
দোতলার ব্যালকনিযুক্ত রুমে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।

১২.

শাহিনুর বেগমের সামনে বসে আছে রাত্রি। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে তার। শাহিনুর বেগম বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছেন,তার কোনো জবাব নেই। তিনি নিঃশব্দে কাঁদছেন। রাত্রি হতভম্ভ হয়ে উনার সামনে বসে আছে।

কিছুক্ষণ আগে রাত্রি রুমে আসে। ডুকেই দেখলো তার শাশুড়ি কারো ফটো দেখে বকবক করছে। কৌতুহল নিয়ে চুপিচুপি পা ফেলে উনার পিছনে গিয়ে দাড়ায় সে।

ছবির দিকে রাত্রির চোখ পড়তেই সে চমকে উঠে। অস্ফুটসুরে বলে উঠে,–“বা্ বাবা!”

রাত্রির কন্ঠ শুনে শাহিনুর বেগম চমকে উঠলেন। দ্রুত জামা কাপড় এলোমেলো করে তার নিচে ছবিটা লুকিয়ে ফেললেন।

রাত্রি ভেবে পাচ্ছে না তার বাবার ছবি শাশুড়ি মা কই পেলো? আর তাকে দেখে ছবি লুকিয়ে ফেললো কেনো?হোয়াই?

সে ছবিটা টান মেরে হাতে নিয়ে নিলো, শাহিনুর বেগম হকচকিয়ে গেলেন। তিনি কম্পিত কন্ঠে বললেন,–“ক্ কী করছো ত্ তুমি? দাও, ওটা দাও।”

—” বাবা। এটা তে আমার বাবার ছবি। ”

—“ক্ কী বলছো? তোমার বাবার ছবি হবে কেনো? দাও বলছি।”

—” আশ্চর্য! আমি আমার বাবাকে চিনবো না?”

—“তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। ছবি টা দাও বলছি। ”

দুজনেই ছবি টা টানাটানি করছে। রাত্রি অবাক হয়ে শাহিনুর বেগমের দিকে তাকাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না তার শাশুড়ি কাঁপছে কেনো? আর উনার মুখে ভয়ের ছাপ কেনো? সে এর আগে কখনো উনার মুখে ভয়ের রেশও দেখেনি। আচমকা শাহিনুর বেগম জোর করে ছবি টান দিতেই সেটা ছিঁড়ে দুই টুকরো হয়ে গেলো। দুজনেই বিস্ফোরিত চোখে নিজেদের হাতে থাকা ছেঁড়া ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইলো। শাহিনুর বেগমের চোখে জল চলে আসলো। তিনি টলমলে চোখে বললেন,–“এটা কী করলে?”

রাত্রি নিজেও নির্বাক। সে অপরাধী মুখে উনার সামনে দাড়িয়ে রইলো। বুকটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো। শাহিনুর বেগম রক্তিম চোখে তার দিকে তাকালো। সে আমতা আমতা করে বলে উঠলো, “আমি ইচ্ছে করে করি নি। ”

তিনি কিছু বলার আগেই রাত্রি প্রসঙ্গ বদলে প্রশ্ন করে উঠলো, —” আমার বাবার ছবি আপনার কাছে কেনো? আপনি কী আগে থেকেই আমার বাবাকে চিনতেন? কারন ছবি টা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা অনেক পুরানো। ”

শাহিনুর বেগম সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে ফেললেন। তিনি রাত্রির হাত থেকে অর্ধেক ছবিটি ছোঁ মেরে নিয়ে গেলেন। দুটো ছবি একত্রে করে উনার সন্দুকে রেখে দিলেন। শাড়ির আঁচল থেকে চাবি টা নিয়ে তালা বদ্ধ করে ফেললেন সন্দুক। পায়ের কাছে পড়ে থাকা পুরানে ওড়না দুটো নিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিলেন। এরপর সন্দুক টি ঠেলে বিছানার নিচে রেখে দিলেন।

রাত্রি অবাকের উপর অবাক হয়ে চেয়ে দেখছিলো উনার কান্ড। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে এর আগে এতটা চমকায় নি কখনও।

সে যতটুকু জানে তা হলো তার বাবা আর শাশুড়ি মায়ের কখনও দেখা হয় নি। সেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিয়ে হওয়ার পর একদিন তার বাবা এ বাড়ীতে এসেছিলো আর তখন ই তাকে বলা হয়েছিলো যে যদি নিজের মেয়েকে শশুড় বাড়ীতে দেখতে চায় তাহলে যেনো উনি দ্বিতীয়বার না আসে। রায়হান সাহেব চোখভর্তি জল নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলেন বাড়ী থেকে।
সেদিন রাত্রি কেঁদেছিলো। খুব কেঁদেছিলো। পৃথিবীতে তার বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। তার অল্প বয়সেই মা চলে গিয়েছিলো। কই গিয়েছিলো?কেনো গিয়েছিলো তার কিছুই সে জানে না। তার মাবাবার প্রতিদিন ঝগড়া হতো। দুজনে প্রতি রাতে প্রচুর ঝগড়া করতেন। সপ্তাহে একদিন ও তাদের মিল থাকতো না। রাগ করে দুজনেই না খেয়ে আলাদা রুমে দরজা লাগিয়ে শুয়ে থাকতো। সে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতো। কেঁদে কেঁদে বাবা-মা দুজনকেই বলতো মারামারি না করতে। কেনো তারা এমন করে? তার বান্ধবীদের বাবামা তো এমন করে না। তখন দুজনে বলতো, “আমি ঝগড়া করছি? ও আগে ঝগড়া শুরু করেছে?”

–“কী?আমি আগে করেছি? তুমি আগে আমাকে খোঁচা মেরে কথা বলেছিলে।”

এ বলে দুজনে আবার লাগালাগি শুরু করে দিতো। এরপর থেকে রাত্রি আর ওদের থামাতো না। কারন সে থামাতে গেলেই ঝগড়া আরো বেড়ে যেতো। তাই সে চুপচাপ অন্য রুমে গিয়ে বসে থাকতো। এভাবেই চলতো তাদের দিন, রাত্রি ধীরে ধীরে এতে অব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো।

হুট করেই একদিন তার মা কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। রাত্রি আর তার বাবা প্রচন্ড শক খেয়েছিলো। শফিক সাহেব তো সেদিন ই স্ট্রোক করেন। বাবার আদরের মেয়ে রাত্রি। কোলে পিঠে মানুষ করেছিলেন তিনি। ইট, সিমেন্টের বিশাল দালান ছাড়া তার আর কিছুই নেই উনার। একসময় প্রচুর সম্পদ ছিলো, যার অহংকার তার রগে রগে থাকতো। সেই অহংকার চুরমার করে দিলো তার ছেট ভাই। বিশ্বাসঘাতকতা করে সব সম্পত্তি বিক্রি করে সে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে দিলো। সেদিন উনি দ্বিতীয়বারের মতো স্ট্রোক করেন। সে দিন টা ছিলো বাবা-মেয়ের জন্য সবচেয়ে অসহায়ের দিন। সাহায্যের জন্য তাদের পাশে কেউ এসে দাড়ায় নি। কারন হলো রাত্রির বাবার অহংকার। টাকার অহংকারের জন্য উনি কাউকে পাত্তা দিতেন না। সবার মনে আঘাত দিয়ে কথা বলতেন। বিপদের সময় তার কোনো বন্ধুই এগিয়ে আসে নি। কারন কেউ কখনো তার সত্যিকারের বন্ধু হয় নি। সবাই ছিলো তার টাকাপয়সার বন্ধু। আফসোস আর আফসোসের ঝুলি নিয়ে হাসপাতালের বেডে যান তিনি।

“অহংকার পতনের মূল।” দুঃসময়ে রাত্রির বাবা সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন। কত অন্যায় করেছিলেন তিনি। যার ফল একটু একটু করে পেয়েছেন।

বিছানায় বসে ছিলেন শাহিনুর বেগম। মিনিট খানেক থেকে রাত্রি উনাকে জেরা করছে ছবির ব্যাপারে। সে বারবার বলছে, “আপনার কাছে বাবার ছবি কেনো?আপনি কী চিনেন?”

শাহিনুর বেগম কোনো জবাব দিলেন না। তিনি রাত্রিকে বললেন,–“বেশি কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়।”

রাত্রি নাকচ সুরে বললো,–” আগে আপনি বলুন আপনি কী চিনতেন বাবাকে? আপনার সাথে বাবার কিসের সম্পর্ক?”

শাহিনুর বেগম এবার ক্ষেপে গেলেন। সিংহের মতো গর্জে ওঠে বললেন,—“হ্যা, চিনতাম আমি। সে আমার প্রাক্তন প্রেমিক তাকে কেনো চিনবো না?”

রাত্রি নির্বাক! সে হতভম্ভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাশুড়ির দিকে। তার কানে বাররবার কথাটি বেকে উঠছে। শাহিনুর বেগম বিছানার সাথে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলেন। নাকমুখ দিয়ে এক উত্তপ্ত নিঃশ্বাস উপছে পড়ছে। মষ্তিষ্কে পুরানো স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠলো। মনের ভেতর জমে থাকা ক্ষতগুলো তাজা হয়ে উঠলো।

.#বেটারহাফ
#Nishat_Tasnim_Nishi
#পর্ব_০৮

রাত্রি নির্বাক! সে হতভম্ভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাশুড়ির দিকে। তার কানে বাররবার কথাটি বেজে উঠছে। শাহিনুর বেগম বিছানার সাথে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলেন। নাকমুখ দিয়ে এক উত্তপ্ত নিঃশ্বাস উপছে পড়ছে। মষ্তিষ্কে পুরানো স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠলো। মনের ভেতর জমে থাকা ক্ষতগুলো তাজা হয়ে উঠলো।

জীবনের প্রথম প্রেম ছিলো রায়হান। বড় বোনের বিয়ে বাড়ীতেই তাদের পরিচয় হয়। সেদিন শাহিনুরের রায়হানকে ভালো লোগে যায়। সেই ভালোলাগা ভালোবাসা অবধি গড়ায়। তখন কেউ কারো মনের কথা ব্যক্ত করে নি। বছরখানেক পর আবারো তাদের দেখা হয়। শাহিনুর তখন মনের অব্যক্ত কথা গুলো তার কাছে ব্যক্ত করে। সে দেখতে শুনতে ভালো হলেও তার একটা খুত রয়েছে। সেটা হলো তার বাম চোখ ট্যারা। সোজা তাকালে মনে হবে ডানদিকে তাকিয়ে আছে। রায়হানের অবশ্য এ নিয়ে কোনো সমস্যা ছিলে না তখন। দুজনেই আসক্ত হয়ে যায় প্রেমে। প্রেমের বছর খানেক ঘুরে আসতেই শাহিনুর বেগম কন্সিভ করেন। তিনি এ খবর যখন রায়হান কে জানাবেন তখন ই শুনে যে রায়হান তাকে ধোকা দিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। সে অনেক বড় ধাক্কা খায়। তবুও সে প্রেমের দাবী নিয়ে উপস্থিত হয় রায়হানের সামনে। রায়হান সেদিন শাহিনুরকে বাজেভাবে অপমান করে বিশেষত তার ট্যারা চোখের জন্য। অপমানে মুখ লাল হয়ে যায় শাহিনুরের। মুখে ওড়না গুঁজে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে সে ওই স্থান ত্যাগ করে।

আজ আবার তার সেসব কথা মনে পড়ে গেলো। নিজের জীবনের অভিশপ্ত এই কালো অতীত এতকাল তিনি বুকে চেপে রেখেছিলেন। ওড়না দিয়ে চোখের কোনে জমে থাকা জল মুছে ফেলে রাত্রিকে সব বললেন।

রাত্রি অবাক হয়ে সব শুনতে লাগলো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার বাবা এমন। বিচ্ছেদের জন্য এতকাল মা কে দোষারোপ করে এসেছিলো সে। আজ সে বুঝতে পারলো বাবামায়ের এত ঝগড়ার কারণ হলো তার বাবার অবৈধ সম্পর্ক।

শাহিনুর বেগম কাঁদছেন। রাত্রি নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছে।মানুষের দুঃখ কষ্টের কিছু শুনলেই তার কষ্ট হয়। ভীষণ কষ্ট হয়। আচ্ছা তার কষ্ট শুনলেও কী মানুষের কষ্ট হয়? রাত্রির মষ্তিষ্ক তাকে জানান দিলো,
“সবার কাছে সবার কষ্ট গুলো বড়,অন্যের কষ্ট সামান্য! ”

রাত্রির মনে প্রশ্ন জেগে উঠলো,বাচ্চার কী হয়েছে? কিন্তু মুখ ফুটে আর বললো না। না বুঝেই শাশুড়ির মনে এমনিতেই সে আঘাত করে ফেলেছে। এখন এ প্রশ্ন হয়তো শাশুড়িকে খুব বেশি দূর্বল করে ফেলবে। সে মনে মনে এমনটা ভাবলেও বিষয়টা মোটেও এমন নয়। সে ভয় পাচ্ছে শাশুড়িকে। এ প্রশ্ন আবার তার জন্য কাল না হয়ে দাড়ায়। তাই সে চুপ করে আছে। মানুষ বড়ই বিচিত্র। মুখে এক কথা মনে অন্য কথা।

১৪.
আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমে এলো।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তুমুল গতিতে শিলা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

সাগর জানালার পাশে বসে একমনে সিগারেট খাচ্ছে। ফুফির সাথে কিছুক্ষণ আগেই সব কথা বলেছে সে। রাত্রির কথা উঠতেই তার বুক টা জ্বালা করে উঠে। কতদিন প্রেয়সীর মুখ দেখে নি সে। চোখ দুটো প্রিয় মুখ দর্শনের আশায় চাতক পাখির মতো হয়ে আছে। বুক টা হাহাকার করছে। এ কষ্ট কীভাবে কমাবে সে?
জীবন কেনো স্বপ্নের মতো হয় না? যেখানে ইচ্ছামতো চলা যাবে।কোনো ধরাবাঁধা থাকবে না। এমন কেনো হয় না?

ইশশ! জীবন কলমের মতো জটিল না হয়ে যদি পেন্সিলের মতো সহজ হতো। তাহলে ককেমন হতো? কলমের ভুল মিটানো যায় না কিন্তু পেন্সিলের ভুল রবার দিয়ে মিটানো যায়।

সাগর চায় তার জীবন পেন্সিলের মতো হোক। তাহলে সে তার জীবনের ভুলগুলো মিটিয়ে ফেলতে পারবে। সে অনুভব করলো তার কষ্টগুলো কমানো খুব দরকার। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে তার । সিগারেটের নেশাও তার ধরছে না। হাতে অর্ধ খাওয়া সিগারেট বাহিরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে।

বৃষ্টির পানি দিয়ে চোখমুখ ধুয়ে সে রুমে প্রবেশ করলো। রুমে এসেই সে বড় ধাক্কা খায়। পুরো রুম জুড়ে মোমবাতি আর মোমবাতি। নিচে মোমবাতির ছোট ছোট প্রদীপ বিছানো। সতর্কতার সহিত পা ফেলে সে বিছানার কাছে গেলো। পুরো বিছানা জুড়ে গোলাপের পাপড়ি আর পাপড়ি। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোলাপের সুভাষ! সাগর অবাক চোখে চোখ বুলাচ্ছে সবদিকে। ডেকোরেশন দেখে সে ধারনা করলো এ কাজ এখকার নয়, ঘন্টাখানেক আগে থেকেই সাজানো। সবকিছু একদম পরিপাটি। কোনো কিছুই আগোছালো নয়।

সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে সব দেখছিলো, হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় বৃষ্টির দিকে। মাত্রই সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। সাগর দু সেকেন্ড তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে গেলো। বৃষ্টি হাটুর উপর অবধি স্লিভলেস টপস পরেছে।

অন্যদিকে ফিরে সে বলে,–“এটা কী পরেছো তুমি?”

সাগরের আওয়াজ পেয়ে বৃষ্টি চমকে সামনে তাকায়। হকচকিয়ে গিয়ে সে সেখান থেকে সরে পর্দার ভাঁজে মুড়িয়ে ফেললো নিজেকে। শরমে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,–” একদম পেছনে তাকাবেন না। প্লিজ প্লিজ!!”

সাগর মাথা দুলিয়ে সায় দেয়।

–“কখন এসেছেন আপনি?”

সাগর মৃদু হেসে বললো,–“মাত্রই।”

বৃষ্টি মিনমিন করে বলে,–” আপনি কিছু মনে করবেন তার আগেই বলি আমি এসব কিছুই করি নি। আপনার ফুফাতো বোন মাহি এসব করেছে। সে আমাকে জোর করে এ ছোট জামা পরিয়েছে। আমার সব জামা ওর রুমে নিয়ে গেছে। এটা পরা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না আমার। ”

সাগর উল্টো দিকে তাকিয়ে হাসলো। বৃষ্টি যে ভয় পাচ্ছে সেটা সে না তাকিয়ে বুঝতে পারছে। এসবের পেছনে কে রয়েছে সে ভালো করেই জানে। তার মা হয়তো মাহিকে এসব বলেছে। এত ডেকোরেশনের কথা না বললেও হয়তো ওকে ইশারায় কিছু বুঝিয়েছেন না হলে ওই পুচকে মেয়ের এত সাহস নেই। আসার পরে তো একবারও তার সামনে আসে নি।
মডার্ন মেয়ে তাই হয়তো তার চিন্তা এতদূর গড়িয়েছে। মা হাত ধুয়ে তার পেছনে পড়েছে। সে বুঝলো এর থেকে তার নিস্তার নেই।

এক মিনিট দাড়িয়ে সে নিজের মনে ছক কষলো। কোনো মিল মাথায় ধরলো না। চোখের সামনে বৃষ্টির কিছুক্ষণ আগের দৃশ্য ভেসে উঠছে।

সাগর বৃষ্টির দিকে ঘুরলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো বৃষ্টির দিকে। বৃষ্টি পর্দার আড়ালে ভয়ে ঠোঁট চেপে জড়োসড়ে হয়ে দাড়িয়ে রইলো।

হাটতে হাটতে সাগর একদম ওর কাছে চলে গেলো। এক এক করে শার্টের সবগুলো বোতাম খুলে ফেললো । শার্টের ভেতর রয়েছে সাদা পাতলা কাপড়ের সেন্টো গেঞ্জি।বৃষ্টি লজ্জায় মাথা নুয়ে নিলো। শার্ট টা খুলে সে বৃষ্টির সামনে ধরলো।

বৃষ্টি প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকাতেই সাগর বললো,–“নাও।”

বৃষ্টি এবার আরো অবাক হলো।সে বলে,–“এটা দিয়ে কী করবো?”

—” পরে নাও। তাহলে অস্বস্তি হবে না।”

বৃষ্টি হাত বাড়াতেই, সাগর ঠোঁট কামড়ে জামার দিকে তাকিয়ে বলে, এটা হবে তো?

পরক্ষণেই নিজেই বলে উঠে, “তোমার যে সাইজ এটা তোমার হাটু ছাড়িয়ে যাবে। ”

সাগরের কথা শুনে বৃষ্টি লজ্জা পেলো। সে কী ভাবলো আর কী হলো? হাত বাড়িয়ে ছোঁ মেরে শার্ট নিয়ে নিলো। সাগর উল্টো দিকে ঘুরতেই সে ফটাফট জামা টা পরে নিলো।

চলবে!

[ ছোট বলবেন না কেউ, এ পর্ব লিখতে আমার অনেক সময় লেগেছে।রিচেক করা হয় নি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
চলবে?

[নোটঃ ইনশাআল্লাহ! পর্ব_৮ রাত দশটা অথবা এগারোটায় দেওয়া হবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here