বেপরোয়া ভালোবাসা পর্ব -৪০

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৪০
#লিখনীঃ মনা হোসাইন

বেশ অনেক্ষন পর আদি বাসায় ফিরল। ঘরে ঢুকে কিছুটা অবাকেই হল সে, কারন আদিবা তার বিছানায় বেশ আরাম করে ঘুমাচ্ছে…এই মেয়েটা বেশ অদ্ভুত প্রকৃতির।মাঝে মাঝে সিরিয়াস বিষয়কে গুরুত্ব দেয় না আবার অতিক্ষুদ্র বিষয়কে টেনে হিচড়ে বড় করে।

প্লেনে সারারাত ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছে তারপরেও এত ঘুম?আদি সারারাতে একটুও ঘুমায় নি,কই তার তো ঘুম পাচ্ছে না বরং ইচ্ছে করছে আদিবার সাথে কথা বলতে এই ছয় বছরে কী কী ঘটেছিল জানতে…কিন্তু আদিবার কাছে এসবের গুরুত্ব কোথায়? আদি এতদিন কোথায় ছিল কিভাবে ছিল এসব কিছু কী তার জানার ইচ্ছে আছে? না নেই থাকলে কী এভাবে ঘুমাতে পারত? সে আদিকে এতটুকুও গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেই মেজাজ খারাপ হল আদির. সিধান্ত নিল আবার বাইরে চলে যাবে কিন্তু দরজা পর্যন্ত এসে থমকে দাঁড়াল।

-“আচ্ছা মেয়েটার শরীর খারাপ করেনি তো…? এর আগে কখনো এত দূরের জার্নি করেনি খারাপ লাগারেই কথা। হয়ত মাথাব্যাথা করছে অথবা জ্বর এসেছে..

একবার ভেবে পরক্ষনেই আবার ভাবল।
-“শরীর খারাপ হোক,যা খুশি হোক তাতে আদির কী? যে মেয়ে তাকে ভালবাসে না তার জন্য চিন্তা করার মানেই হয় না।

ভেবে আবারও পা বাড়াল কিন্তু বাইরে যেতে পারল না আটকে গেল,
-“নাহ আমি ওকে এভাবে ফেলে যেতে পারি না। ও আমার বউ,আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষের উপড়ের সারির একজন। আমি ওকে ফেলে যেতে পারি না।

ভেবে ঘুরে ফিরত এসে আদিবার পাশে বসল।নিজের অজান্তেই হাত ছুঁয়াল আদিবার কপালে। সাথে সাথে শক্ত কন্ঠ ভেসে আসল,

-“মরিনি…এমন চুনোপুঁটিকে ফাঁসানোর জন্য আ*ত্মহ*ত্যার মত বৃহৎ ঘটনা ঘটানোর মত বোকা আমি নই।

আদিবা ঘুমায় নি,ঘুমার অভিনয় করছিল বুঝতে পেরে থতমত খেল আদি..তবে সাথে সাথেই নিজেকে সামলেও নিল। এই মেয়ের কাছে নিজের দুর্বলতা স্বীকার করা যাবে না কিছুতেই না তাড়াতাড়ি কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিল।

আদিবাও উঠে আদির মুখোমুখি বসল,

-“কী ভেবেছিলন?মরে গেছি?

-“আজব মরার কথা ভাবব কেন? দেখছিলাম জ্বর এসেছে কিনা..

-“ওহ তাই? কিন্তু এই যে বলছিলেন আপনি আমায় ভালবাসেন না তাহলে আমার জ্বর আসল কী আসল না তাতে আপনার কী..?

-“এখানে আমি ছাড়া আর আছে কে? ইচ্ছে না থাকলেও খেয়াল রাখতে হবে।

-“ভাঙবে তবু মচকাবে না বেয়াদব কোথাকার…

-” বিড়বিড় করে কী বলিস?

-“কিছু না সরুন ফ্রেশ হয়ে আসছি বাইরে এ যাব।

-“মানে…?

-“বাংলা বুঝেন না? বাইরে যাব বলেছি তাইবলে ভাব্বেন না আপনার মত হনুমানের সাথে ঘুরতে যাব। বাজার করতে হবে রুটি খেয়ে কতক্ষন থাকা যাবে?

-” খাওয়া পরে হবে আগে বল তুই আমায় কী বললি …?

-“আপনার কী মনে হয় উদাহরন টা যুক্তিযুক্ত হয় নি? হনুমানের বদলে ডাইনোসর বলব…?

-“সাহস বেড়ে গিয়েছে নাকি? অতীত মনে করাতে হবে..

-“ওয়েট ওয়েট আমি কিছুই ভুলি নি কিন্তু আপনি ভুলে যাবেন না আমরা এখন দেশে নেই তাও ভুলেও রেগে যাবার মত ভুল করবেন না। করলে ফেঁসে যাবেন।

-” মানে কী? কি বলতে চাইছিস তুই?

-“আপনার রাগ মানেই তো ওয়াশরুমে নিয়ে আটকে রাখা। আমার অবশ্য আপত্তি নেই এতদিন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে কিন্তু ধরুন আপনি আমায় আটকে রেখে বাইরে চলে গেলেন এসে দেখলেন পা পিছলে পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙে গিয়েছে। কি সাংঘাতিক কান্ড হবে ভাবুন তো।

-“সাংঘাতিক হবে কেন বরং ভালই হবে।

-“জ্বি না আমি আমার কথা ভাবছি না এখানে তো আর কেউ নেই তাই আমার কিছু হলে দ্যা গ্রেট ত্যাড়া আদিকে আমার যত্ন নিতে হবে। খায়িয়ে দিতে হবে,কাপড় চোপড় ধুতে হবে,ঘর পরিষ্কার করতে হবে মোটকথা আমার সমস্ত কাজ করে দিতে হবে ব্যাপার টা সাংঘাতিক হবে নাকি ভাল হবে?

-“তুই দেখছি একদিনেই পকপক করা শিখে গেছিস আমাকে ত্যাড়া বলার সাহস পাস কোথায়..?

-“পকপক আমি আগে থেকেই পারি। কিন্তু আগে লোকের বাসায় আশ্রিতা থাকতাম তাই পকপক করার সাহস পেতাম না সংকোচ হত।

-“দাঁড়া তোর পকপক করা বের করছি

বলেই আদি এগিয়ে আসতে নিল সাথে সাথে আদিবা উঠে একছুটে ওয়াশরুমে চলে গেল… আদি বাইরে থেকে চেঁচিয়ে উঠল,

-“পালাবি কোথায়? ওয়াশরুমে কতক্ষন থাকতে পারবি…বের হতে হবে না? দেখবনি কে বাঁচায় তোকে?

আদিবা দরজার অপরপাশ থেকে জবাব দিল
-“আমি কী আপনাকে ভয় পাই নাকি? ত্যাড়া,অস*ভ্য,বদমাইশ ছেলে একটা…

-“কী বললি তুই..?

-“একদম ধমক দিবেন না।

-“একবার বের হ মে*রে ছাতু বানাব তোকে…

-“উস্টা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিব আপনাকে। ভুলে যাবেন না এটা আমার শ্বশুরবাড়ি। আমি আর আশ্রিতা নই এটা আমারো বাড়ি।

আদিবার কথাটা কী আদির মন কাড়ল? হয়ত ! তাই তো বকা দেওয়ার বদলে মুচকি হেসে বলল,

-“ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় …আমি গাড়ি বের করছি।




আদিবা ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখল আদি সত্যিই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে..আদিবা গিয়ে আদির পাশে সিটে বসল। আদি ড্রাইভ করছে। আদিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশটা দেখছে আদিবার চোখ মুখে খুশি চিকচিক করছে…আদিবা কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে আশ পাশটা দেখে হটাৎ প্রশ্ন করল

-“তা আপনি এখানে আসলেন কী করে?

আদি ড্রাইভে মনযোগ রেখেই জবাব দিল।
-“যাক আপনার তাহলে জানতে ইচ্ছে হল?

-“হবে না? আমি বাড়ি থেকে বেত হয়ে স্টেশনেও জায়গা পেলাম না আর আপনি বিদেশে চলে আসলেন। আসলেন তো আসলেন আবার বাড়ি গাড়িও করে ফেলেছেন। আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন নাকি?

-“নাহ আমি যখন বাসা থেকে বের হয়েছিলাম আমিও স্টেশনেই থাকতাম আর স্টেশনে লোকের মালামাল আনা নেয়ার কাজ করতাম। একদিন রাতে ট্রেন থেকে মাল আনতে গিয়ে দেখলাম একজন মধ্যবয়স্ক লোক সিটে বসে আছে। গিয়ে বললাম স্যার আপনার কী কোন ব্যাগ আছে? উনি জবাব দিলেন না ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছেন আমি জাগানোর চেষ্টা করতেই ঢলে পড়লেন বুঝতে পারলাম উনি অসুস্থ তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। উনার সাথে কোন টাকা পয়সা ছিল না ট্রেনে কেউ উনাকে নেশা জাতীয় কিছু খায়িয়ে সব নিয়ে নিয়েছে। উনি হার্টের রোগী ছিলেন তাই এতে মারাত্নক অসুস্থ হয়ে পড়েন। উনার জ্ঞান ফিরছিল না সাথে ফোনও ছিল না তাই উনি কে কোথায় থাকেন কিছুই জানতে পারি নি। তাইবলে একজন মানুষ টাকার অভাবে চিকিৎসা পাবে না মানতে পারি নি। তুই হয়ত জানিস আমার একটা চেইন ছিল আমি সেটা বিক্রি করে উনার চিকিৎসা করি।
উনি যখন সুস্থ হলেন আমাকে কিছুতেই ছাড়তে চাইলেন না। নিজের বাসায় নিয়ে গেলেন। আমি রাজি ছিলাম না তাই তখন বললেন স্টেশনে কাজ না করে উনার বাসায় কাজ করতে। কারন আংকেল আন্টির বয়স হয়েছে তাছাড়া উনাদের ছেলে নেই তাই ব্যাংকের কাজ,বিল দেয়া এগুলো করার জন্য হলেও যেন থাকি আমি রাজি হলাম বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলাম।কিন্তু কয়েকমাস পরেই উনাদের দেশের বাইরে আসার সময় হয়ে গেল কারন তারা এখানেই স্যাটেল ছিলেন দেশে মাঝে মাঝে যেতেন। আংকেল আমাকে রেখে আসতে চান নি কোন মতেই। তাই তিনি লিগ্যালি আমাকে দত্তক নিলেন যেন তাদের ছেলের পরিচয়ে এদেশে সিটিজেনশীপ পাই। তারপর চলে আসলাম। পড়াশোনা শেষ করলাম কিছুদিন আগে আংকেল অফিসের সমস্ত দায়িত্ব আমায় বুঝিয়ে দিয়ে অবসর নিলেন। বললেন এখন থেকে আমি যেন সবকিছুর দেখাশোনা করি আর তাদের দায়িত্ব নেই। এসব সবকিছু আংকেল আন্টির আমি শুধু পাহারাদার। আমি অফিস জয়েন করেছি তিন মাস হয়েছে এর মধ্যে দেশে গিয়ে এক মাসের বেশি সময় থেকেছি। কাল থেকে অফিস জয়েন করতে হবে। অফিসের মালিক হিসেবে এত উদাসীন হওয়া ঠিক না।আংকেল অনেক আশা নিয়ে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

-“হাহ সবি কপাল…🥱

-“মানে..?

-“আপনি বাসা থেকে বের হয়েও কতকিছু পেলেন আর আমি সবকিছু হারালাম,না করতে পারলাম পড়াশোনা না হতে পারলাম কারো প্রিয়।

-“পড়াশোনা তুই কোনদিনি করতে চাস নি তোর উদ্দেশ্যই ছিল ঢং করা।

-“বাজে কথা বলবেন না। আপনি নিজে একটা ঢংবাজ আমি না। সারাক্ষন বাজে কথা বলতে থাকেন অসহ্যকর ছেলে একটা…

– “কী বললি তুই..?

বলেই আদি গাড়ি থামিয়ে দিল সাথে সাথাই আদিবা চোখ বন্ধ করে বলল,

-” দুঃখিত আপনার কাংখিত ব্যক্তি এই মুহূর্তে ঘুমিয়ে আছে অনুগ্রহ করে কিছুক্ষন পর আবার ট্রাই করুন।



চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here