#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৪৭
#মনা_হোসাইন
-” আমি এসেছি থেকে যা যা করেছি সব ইচ্ছে করেই করেছি। অযথা আপনাকে জাগিয়ে রাখা, রান্না করানো,বার বার ফোন করে বিরক্ত করা সবি বুঝে শুনে করেছি…আর সবচেয়ে বড় কথা আপনি অফিসে যাওয়ার পর পরেই আপনার আংকেল আর বোনরা এসেছিল। তারা সারাদিন এখানেই ছিল। তাদের সাথে আমি কোন খারাপ আচারন করিনি। ভালভাবে সময় কাটছিল হটাৎ আপনার বোন জেসমিন জানতে চায় আমাদের এভাবে বিয়ে হল কেন? কেন সোজা প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে হল না আপনি এত নাটক করে বিয়ে করলেন কেন ? তখন আমি তাদের সব ঘটনা খুলে বলি। আপনারা বাড়ি ছাড়ার কারন, আমার প্রতি রাগ, এখনকার মনমালিন্য সবকিছুই খোলে বলি। সব শোনে ওরাই প্লেন করে আপনি যেভাবে আমাকে সন্দেহ করে ছয়টা বছর মৃত সেজে পার করে দিয়েছেন আমিও ঠিক সেইম কাজটাই করব। সন্দেহ করে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাব তারপর এক্সিডেন্টের অভিনয় করব আর আপনাকে বুঝাব অতিরিক্ত শাসন করলে কেমন লাগে। করলামও তাই হাসপাতালের সমস্ত ব্যবস্থা আংকেল করে দিয়েছিলেন।
আদিবার কথা শুনে আদি স্থীর চোখে তাকিয়ে বলল,
-“তারমানে তুই আমাকে আমার ভুলের শাস্তি দিতে চেয়েছিলি?
“আমি আপনাকে শাস্তি দিতে চাইনি আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছিলাম।
-” কি বুঝাতে চেয়েছিলি আমি তোকে ভালবাসি না তাই তো…?
-“নাহ ভালবেসেও যে অ*ত্যাচার করা যায় সেটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম। আমি যে সেদিন আপনাকে সারারাত জাগিয়ে রেখেছি জোর করে নয় ভালবেসে… আপনাকে প্রেসার দিয়েছি সেটাও ভালবেসেই। কিন্তু এই ভালবাসায় ভাললাগা ছিল না,ছিল বিরক্তি।
আদিবার কথা আদি একটু হাসল তবে এই হাসি মন খোলা হাসি নয়, তাছিল্যের হাসি।
-“আপনি হাসছেন?
-“মিথ্যা বলব না তোর উপড়ে বিরক্ত হয়নি সেটাও বলব না। তবে আমি যে আদিবাকে ভালবাসি তার উপড় বিরক্ত হয়নি। বিরক্ত হয়েছি বদলে যাওয়া আদিবার উপড়। আমি বদলে যাওয়া বিষয়গুলোকে বড্ড ঘৃনা করি। তুই যদি ছোট থেকেই এমন থাকতি আমি বিরক্ত হতাম না এতদিনে মেনে নিতে শিখে যেতাম। আমি পুরানোতে সীমাবদ্ধ তাই নতুনত্ব আমাকে ছুঁতে পারে না।
-“মানে বুঝলাম না।
-“দেখ আমি ছয় বছর আগেও যে আদি ছিলাম এখনো তাই আছি। এই ছয়বছরে অনেক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে কিন্তু আমি এখনো আদিবাতে আটকে আছি আগেও ছিলাম আমার আচারনে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি বদমেজাজি, জেদি তবে আগের আদিই। তুই ছোট থেকেই চুপচাপ কখনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। আর ভালবাসা সেটা তো আমার জন্য কখনো ছিলই না।আমি যাই করতাম তোর কাছে ভুল মনে হত। তোর কাছে যাওয়াকে তুই ভয় পেতি কিন্তু বিয়ের দিন তুই ইচ্ছে করেই আমাকে নিজের কাছে টানলি। আমি জানতাম এটাও তুই মন থেকে করিস নি। যা করছিস তার পিছনে নিশ্চুই কোন কারন আছে তবে আমার ভুল বোঝানোর জন্য এতটা সেক্রিফাইস না করলেও হতো…
-“ম ম মানে…?
আদিবার কথায় আদি শান্ত চোখে তাকিয়ে জবাব দিল,
-” ঘুরানো ফিরানো কথা আমার পছন্দ না আদিবা তাই সরাসরি বলছি তুই আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিস আমি তোর উপড় অ*ত্যাচার করেছি।আমিও বুঝেছি। তবে এটা আমার সাথে বেড শেয়ার করার আগে সেটা বুঝালে ভাল হত।
যাইহোক ব্যাগ গোছা আমি টিকিট নিয়ে আসছি।
আদির কথা শুনে আদিবা প্রচন্ড অবাক হল। প্রশ্নবোধক চাহনীতে তাকাল।
-” কিসের টিকেট..?
-” চিন্তা করে দেখলাম আমি আসলেই ভুল করেছি।যা করে ফেলেছি সেটা তো আর ফিরে আসবে না তবে তোর জীবনটা নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। একজন ভুলে ভরা মানুষের সাথে জোর করে আটকে রেখে তোর সারাটা জীবন নষ্ট করার মানে হয় না। তাই আমি তোকে মুক্তি দিব। জোর করে আর যাইহোক ভালবাসা হয় না। তাই তোকে দেশে পাঠিয়ে দিব। চিন্তা করিস না আমি তোর ভরণ পোষনের দায়িত্ব এড়িয়ে যাব না। শুধু তোকে আমার শাসন থেকে মুক্তি দিচ্ছি যদি সঠিক কাউকে পাস তার কাছে চলে যাস আর যতদিন না পাচ্ছিস নিজের স্বাধীন মত জীবন কাটা।
বলেই আদি উঠে গেল। আদিবা কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু সুযোগ পাই নি। আদি এই রাতের বেলাতেই বেরিয়ে গিয়েছে আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
আদি ফিরতে ফিরতে ভোর রাত আদি আসতেই আদিবা ছুটে গেল। আদিবা কিছু বলতে যাবে তখনী আদি বলে উঠল,
-“সকাল দশটায় টিকিট রেডি হয়ে নে।
-“বলছিলাম কী…
-“আদিবা ২ দিন হল আমি ঘুমাই না। একটু ঘুমাতে দিবি প্লিজ। তোকে তো একা একা পাঠাতে পারব না গিয়ে দিয়ে আসব।
বলতে বলতে আদি ঘরে গিয়ে দরজা লক করে দিল আদিবা জানলা দিয়ে দেখল আদি সত্যিই ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আদিবার চোখে ঘুম নেই সে তো এমন কিছু চায় নি। শুধু আদিকে তার ভুল গুলো বুঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু আদি তো সব ভুল বুঝল এই ছেলেটা এত ত্যাড়া কেন? কখনো মনের কথা বুঝেনা ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গেল আদিবা বুঝতে পারেনি।
সকালে আদির ডাকে ঘুম ভাংগল আদিবার।
-“আদিবা ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি উঠ…কিরে উঠ।
আদিবা কোন রকম চোখ মেলে তাকাতেই আদি তাকে টেনে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে দিল। সে বিশাল ব্যাস্ত কথা বলারেই যেন সুযোগ নেই। সে নিজেই কথা বলে চলেছে।
-“সোফায় কেউ ঘুমায়? অন্যরুমে ঘুমাতে পারলি না..?
-“বলছিলাম কী…?
-“এখন কিছু শোনার সময় নেই টেবিলে খাবার রাখা আছে গিয়ে খেয়ে নে আমি তোর ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি।যা যা…
আদিবা এবারেও কিছু বলার সুযোগ পেল না।
কিছুক্ষন পরেই আদি এসে আদিবাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আদিবা খায় নি সেটা হয়ত আদি লক্ষ্য করেনি।
আদি ড্রাইভ করছে আদিবা শুধু ছটফট করছে কিছু বলার জন্য কিন্তু আদি একেবারেই সুযোগ দিচ্ছেনা। গাড়ি যতই এগুচ্ছে আদিবার অস্থিরতা ততই বাড়ছে…আদিবার ছটফট দেখে আদি এবার প্রশ্ন করল কিছু বলবি?
বলতে দেরি হলেও আদিবার উত্তর দিতে দেরি হল না।
-“আমি ফিরে যাব কেন..? আপনি আমাকে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
-“তুই এখানে কার কাছে থাকবি আমি ছাড়া কাউকেই তো চিনিস না।
-“আমি অন্য কারো সাথে থাকব কেন? আমাদের বিয়ে হয়েছে আমরা একসাথে থাকব তাই না?
আদি একবার আদিবার দিকে তাকাল,
-“দুজন মানুষের মনে কোন মিল নেই শুধুমাত্র বিয়ে হয়েছে বলে সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে এর কোন মানে নেই। তুই তোর মত করে জীবনটা সাজিয়ে নে। যেভাবে থাকতে ইচ্ছে হয় যা যা করতে ইচ্ছে হয় তাই কর। তোর জীবন যাপনের জন্য যত টাকা প্রয়োজন আমি দিব।
-“আমি কি বলেছি আমি দেশে ফিরে গিয়ে স্বাধীনভাবে জীবন কাটাতে চাই..?
-“বলিস নি তবে আমার ভুল গুলো চোখে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিস।
-“ভাইয়া হাজার হোক আমাদের বিয়ে হয়েছে…
আদি কোন উত্তর দিল না । আদিবা তাকে এত করে বুঝানোর ট্রাই করল তবুও কাজ হল না।আসলে আদি খুবি ত্যাড়া টাইপের ছেলে নিজে যা বুঝে সেটাই করে। কোন কারনে তার সিধান্ত বদলায় না।
।
।
।
।
আদি আদিবারা বাসায় পোঁছাল রাতের বেলা। তাদের দেখে বাসার সবাই অবাক। আদিবার চোখ মুখে বিষন্নতা থাকলেও আদির আচারনে কোন রকম কষ্টের ছাপ নেই। সে বাসায় ঢুকেই বলল,
-“আমি খুব ক্লান্ত কেউ আমাকে বিরক্ত করো না প্লিজ।
আদির কাছে পাত্তা না পেয়ে সবাই আদিবাকে ঝেঁকে ধরল কি হয়েছে আদিবা কিছু বলতে পারছে না তার শুধু কান্না পাচ্ছে। সে বেশ জোরেই কেঁদে ফেলল। আদি বিরক্তিভরে পিছনে ঘুরল,
-“কি হচ্ছে কী মা? ওর কাছে এভাবে জবাবদিহি চাইছো কেন? নিজের বাসায় কী আসতে পারবে না নাকি? ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে এতে এত প্রশ্নের কী আছে?যাইহোক আদিবা তুই আমার সাথে আয় যা বলার সকালে বলো।
আদিবা এই সুযোগটা মিস করতে চায় না তাই আদি বলার সাথে সাথে আদির ঘরে চলে গেল।
আদি ড্রেস চেঞ্জ করছে আদিবা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আদি বিষয়টা লক্ষ্য করা একটু থেমে বলল,
-“লাজ লজ্জা কী সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিস..?
-“আ আ আমি মানে…
-“ঘটনা কি বলতো…? যা বলার সরাসরি বল।
-“আপনি সত্যি আমাকে রেখে চলে যাবেন?
-“কেন তোর কি মনে হয় তামাশা করার জন্য একদিনের ব্যবধানে দেশে এসেছি।
আদিবা আবারো কেঁদে দিল।
-“আশ্চর্য তুই এত কাঁদুনি হলি কবে থেকে.? সমস্যাটা কোথায় সেটা বল।
আদিবা কেঁদে কেঁদেই বলল,
-“বিয়ের দিন আ আ আপনি বলেছিলেন যাই হয়ে যাক আমাকে কখনো ডিভোর্স দিবেন না। জোর করে আটকে রাখবেন। তাহলে আজ কেন বদলে গেলেন?
-“তারমানে আমার বদলে যাওয়াটা তুই মেনে নিতে পারছিস না.? কেন পারছিস না? আমি যা করছি তোর ভালর জন্যই করছি। জোর করা ছেড়ে দিয়েছি এটা তো তোর জন্য সুখবর..
-“আমি কি আপনাকে জোর করা ছেড়ে দিতে বলেছি..?
-“তুই তো বড্ড ঝামেলার মেয়ে যখন জোর করতাম তখনো আপত্তি ছিল এখন জোর করব না বলছি তাতেও আপত্তি তাহলে আমি করব টা কি?
-“আপনি আগে যেমন ছিলেন তেমনি থাকুন বদলে যাবেন না প্লিজ।
আদি এবা ভিলেনি হাসি দিয়ে বলল,
-” তুই কি বুঝতে পারছিস তুই নিজের মুখে স্বীকার করছিস তুই আমার জোর করাটাকে পছন্দ করিস..?
।
।#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৪৮
#লেখনীঃ মনা হোসাইন
আজ বেশ বেলা করেই ঘুম ভেঙেছে আদিবার। এই দুদিনে যে ধকল গেল ঘুমিয়ে বেশ ফ্রেশ লাগছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল সে, সাথে সাথেই চারপাশে চোখ বুলিয়ে অবাক হল আদিবা। তার স্পষ্ট মনে আছে গতরাতে সে আদির ঘরে ঘুমিয়েছিল তাহলে এখন নিজের ঘরে আসল কি করে..? তবে কি আদি তাকে রেখে গিয়েছে? কিন্তু কেন? তবে কি আদির রাগ এখনো ভাংগেনি ..?
আদিবা তাড়াতাড়ি উঠে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আসল। নিচে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে তবে আদি বাদে কেউ খাচ্ছে না। সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছে আর আদি মনযোগ দিয়ে আপন মনে খেয়ে চলেছে।আদিবা নিচে নামতেই সবাই আদির দিক থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকাল।
এমনভাবে তাকাল যেন পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমায় বিশেষ চরিত্রের আগমন ঘটেছে। আদিবা ইতস্ততা নিয়ে এগিয়ে আসতেই আদি খাবারে মনযোগ রেখেই পা দিয়ে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” বস…
সবাই রাগী চোখে তাকাল আদির দিকে।আদিবাও হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আদি খেতে খেতে শক্ত কন্ঠে বলল
-“কিরে আদিবা তোকে কি ভাল করে কথা বললে গায়ে লাগে না?বসতে বল্লাম না?
আদিবা বিচলিত হয়ে আদির পাশে বসল আদি এখনো খাবার প্লেটেই মনযোগ আটকে রেখেছে আদিবা বসার পর সে মুখ তুলে তাকাল।আর বলতে শুরু করল,
-“জানি আমার এমন সিধান্তে সবাই অবাক হয়েছো সাথে রেগেও গিয়েছো কিন্তু কি করব বলো ভাগ্যের লিখন কখনো বদলানো যায় না। আমাদের ভাগ্যে এমনটাই লিখা ছিল তাই এমন হলো…
আদির বাবা এবার রেগে বললেন,
-“ভাগ্যের দোহাই দিও না আদিত্য, জীবনটা ছেলে খেলা নয়। তুমি যখন আদিবার সাথে সংসার করবেই না তখন আদিবার জীবনটা নষ্ট করলে কেন? ও তোমায় বিয়ে করতে চায়নি তবুও জোর করে বিয়ে করে কোন অপরাধের সাজা দিলে?
-“আমি ওকে সাজা দেয়ার জন্য বিয়ে করিনি বাবা। একসাথে থাকার জন্যই বিয়ে করেছিলাম কিন্তু ওকে যখন হাসপাতালে দেখলাম তখন মনে হল এই দিনটা সত্যি আসার আগে আমার ওকে মুক্তি দেয়া উচিত। মানুষ নিজের স্বভাব যতই বদলানোর চেষ্টা করুক পুরোপুরি বদলাতে পারে না আমিও হয়ত পারব না। তখন দেখা যাবে আদিবা আমার হাত থেকে বাঁচতে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সিধান্ত নিল তখন..?
-“তারমানে তুমি সিধান্ত নিয়ে নিয়েছো…?
-“হ্যা আর আমার সিধান্ত কোন কারনেই বদলাবে না। তবে তোমাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদিবাকে প্রেসার দিও না। সবারেই নিজের মত করে বাঁচার অধিকার আছে। তাছাড়া আদিবার কোন কিছুর অভাব আমি রাখব না মাস শেষ হওয়ার আগেই ওর প্রয়োজনীয় সব কিছু পৌঁছে যাবে তাই তোমাদের উপড় বোঝা হয়ে থাকবে এটা ভেবো না। কাকিমনি তোমাকে বলছি আদিবা বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের নিজের ভাললাগা খারাপ লাগা প্রকাশ করতে পারেনা তাই ইতিমধ্যে অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই তোমাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব ওকে আর নতুন করে কষ্ট দিও না।ওকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি মানে এই না যে আমি ওর উপড় অসন্তুষ্ট,ওর বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ আছে।আদিবার উপড় আমার সত্যিই কোন অভিযোগ নেই।আমি কথা দিচ্ছি আমি ওর সমস্ত ভরণ পোষনের দায়িত্ব নিব। তাই দয়াকরে এই নিয়ে ওকে দোষারোপ করে ওর উপড় অ*ত্যাচার করো না. ছয় বছর তো অনেক অত্যা*চার করেছো আর না।
-“আদি তুমি তোমার পাগলের সংলাপ বন্ধ করো যাকে ছেড়ে দিচ্ছো তার প্রতি আর দরদ নাইবা দেখালে।
-“বাবা আবারও উল্টা পাল্টা কথা বলছো আমি ওকে ছাড়ছি না মুক্তি দিচ্ছি। যাইহোক শেষ একটা কথা বলি তোমরা যদি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করো তাহলে ওকে অন্য কোথাও রাখব তবে ওকে যদি বাসা ছাড়তে হয় তাহলে আমিও এই বাসার সাথে কোন সম্পর্ক রাখব না। বলেই আদি হাত ধুয়ে নিল। আমার ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে আমাকে বের হতে হবে..
বলতে বলতে আদি উঠে গেল সে নিজের ঘরে যেতেই আদিবাও গিয়ে হাজির হল,
আদি শার্ট চেঞ্জ করছিল আদিবাকে দেখে থেমে গেল, -“কিছু বলবি..?
আদিবা এবার আর সহ্য করতে পারলনা কেঁদে ফেলল,
-“আজব কাঁদছিস কেন..?
আদিবা কেঁদে কেঁদে বলল,
-“আমাকে এতবড় শাস্তি দিবন না প্লিজ।
আদি লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
-“আমি জানি তুই কিসের জন্য এত অস্থির হচ্ছিস কিন্তু আদিবা যা হওয়ার সেটা তো হয়ে গিয়েছে আমি চাইলেই তোর সতীত্ব ফিরিয়ে দিতে পারব না। তুই সেদিন কেঁদেছিলি কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি আমি ভুলে গিয়েছিলাম জোর করে সব করা উচিত না। আমি তোর উপড় অতিরিক্ত অধিকার দেখিয়ে ফেলেছি তার জন্য আমি দুঃখিত।তবে আমি আর কখনো এই ভুল করব না দেখ গতরাতে তোর সাথে কিছু করা তো দূর তোর সাথে থাকিনি পর্যন্ত।ঐ দিনের জন্য তুই আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ আর শুধুমাত্র এই কারনে নিজেকে আমার সাথে থাকার জন্য ফোর্স করিস না। জীবন তো একটাই সমাজ কিংবা পরিবার কি বলবে সেভেবে নিজেকে কষ্ট দিস না। এসব কোন ব্যাপার না কিছুদিন পরেই ভুলে যাবি।
-“আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি কি বলছেন..?
আদি এবার এগিয়ে গিয়ে আদিবার হাত ধরে এনে নিজের কাছে বসাল।
-“আদিবা,আমি কোনদিনি তোর ক্ষতি চাইনি যেকোন সম্পর্কে তিনটা শর্ত থাকে
মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া অথবা ছেড়ে দেওয়া
আমি সবগুলো ধাপেই ট্রাই করেছি প্রথমে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছি সেজন্য তোর থাকে নিজেকে এত বছর দূরে রেখেছি যাতে আস্তে আস্তে তোর চালচলন মেনে নিতে পারি । বিশ্বাস কর মেনে নিতে শিখেওছিলাম, যেদিন আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল তুই সেদিন নীলয়ের সাথে ফিরেছিলি আমি জেনেও রিয়েক্ট না করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার মেনে নেওয়াটা তোর কাছে যথেষ্ট ছিল না। তারপর চেষ্টা করলাম মানিয়ে নেওয়ার তোকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, জোর করে মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম তাই জোর করে বিয়ে করলাম কিন্তু তাতেও ব্যার্থ হলাম তুই মেনে নিতে পারলি না তাই এবার ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। আমরা দুজন দুমেরুর বাসিন্দা আমরা একসাথে থাকলে দুজনের কারোর বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।তাই এখন এই একটা পথই খোলা আছে।
আদিবা আদির কথার কোন জবাব দিতে পারছে না। ভিতরটা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।মনের মাঝে হাজার কথা জমা থাকলেও গলায় এসে আটকে যাচ্ছে কিছু বলতে পারছে না। তবে আদির অনর্গল বলে চলেছে,
-“আর একটা কথা তুই যে অযথা সন্দেহের নাটক করছিলি আমি সেটা জানতাম আমি তোর হাত কা*টার কারন জানার জন্য যখন সিসিটিভি চেক করেছিলাম তখনী দেখেছিলাম আংকেলরা এসেছে তাই তুই যে অযথা সিনক্রিয়েট করছিস জানতাম সেই জন্যেই তোর সাথে এত রুড বিহেভ করেছিলাম। এসব আমাকে সন্দেহ করার জন্য ছিল না তুই ভুল করছিস সেটা বুঝানোর জন্য ছিল। কিন্তু তুই যখন হারিয়ে গেলি বুঝলাম আমার রুড বিহেভ করাটা উচিত হয়নি তারপর তোকে যখন হাসপাতালে দেখলাম আমি ভেবেছিলাম তুই সত্যিই এ*ক্সিডেন্ট করেছিস আমি সেটা মেনে নিতে পারিনি।তখন নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি তোর যা করার কর আমি আর তোর জীবনে ঢুকব না। তুই বেঁচে আছিস এটাই আমার কাছে অনেক। ।আমি কখনো তোর ক্ষতি চাইনি সেই ছোটবেলা থেকেই তোকে ভালবাসতাম তাই যে বিষয়গুলো তোর জন্য ক্ষতিকর সেখান থেকে তোকে বিরত রাখার চেষ্টা করতাম।তুই ব্যাথা পেলে শাস্তি দিতাম যাতে পরেরবার আরও সাবধান হোস। সে যাইহোক আমার ভালবাসার পদ্ধতিটা ভুল ছিল তাই এখন থেকে দূর থেকে চাইব তুই ভাল থাক।
বলে আদি ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল আদিবা বুঝতে পারল আদি তার আচারনে কষ্ট পেয়েছে আর আদির সিধান্ত কোন কারনেই বদলাবে না। আদি রেডি হয়ে বের হয়ে আসল,
আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে দেখে
আদি এগিয়ে এসে আদিবার মাথায় হাত বুলিয়ে মলিন হাসল তারপর কারো কাছে কোন বিদায় না নিয়েই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল…
আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আদি দ্বিতীয়বার ঘুরে তাকায় নি আদি বের হতে না হতেই অরিন ছুটতে ছুটতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
-“আদিবা আদিবা….ভাইয়াকে তুই যেতে দিস না ওকে তুই আটকা যেকরেই আটকা…আদিবা একবার বাইরের দিকে আবার অরিনের দিকে দেখছে ..
-“তাকিয়ে কী দেখছিস মুখপুড়ি? ভাইয়া আজ তোকে ছেড়ে নয় এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার বের হয়ে গেল।
অরিনের কথা শুনে আদির মা এগিয়ে এসে বললেন
-“কিসব আবল তাবল বকছিস অরিন?
অরিন এবার চোখের পানি ছেড়ে বলল,
-“আমি আবল তাবল বকছি মা দেখো ও চিরকুট লিখে গিয়েছে।
বলে অরিন একটা চিরকুট এগিয়ে দিল আদির মা সেটা পড়তে শুরু করল,
-“মা বাবা তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার মুখ আমার নেই।আমি জানি না চিরবিদায় কী করে নিতে হয় তাই কাউকে বিদায় জানাতে পারলাম না। আর আদিবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সাহস আমার নেই এই মুখের দিকে তাকিয়ে বিদায়ের কথা বলার হিম্মত আমার কোনদিন হবে না তাই এভাবে বিদায় নিচ্ছি।
-‘যাই রে আদিবা… হয়ত আর কোনদিন আর দেখা হবে না তবে আমি যেখানেই থাকি না কেন সবসময় চাইব তুই ভাল থাক। দোয়া করি সুখী হ.. আমার জন্যেও দোয়া করিস এপাড়ে তো আমার বেপরোয়া ভালবাসা পূর্ণতা পেল না. ওপাড়ে যেন পূর্ণতা পায়।
।
।#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৪৯
#লেখনীঃ মনা হোসাইন
আজকাল প্রতিটা সকাল উৎকণ্ঠার ভেতর কাটে আদিবার। উৎকণ্ঠা সাথে চাপা উদ্বেগ। অল্পতেই অস্থির হয়ে পড়ে সে। গেটে সামান্য শব্দ হতেই ছুটে যায় কান খাড়া শোনে কেউ এসেছে কিনা।দিনদিন কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে মেয়েটা। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে বড্ড উদাসীন ভাব দেখাচ্ছে। খেতে চায় না বললেই চলে। আগে চুপচাও থাকলে বাসার কাজ করাতে বেশ আগ্রহ ছিল কিন্তু আজকাল কোন ব্যাপারে কোন উৎসাহ নেই, কিন্তু গেট খোলায় খুব আগ্রহ। সে বারবার হাসিমুখে গেটের কাছে যায় আর ফিরে আসে মলিন মুখে।
আদিবার এমন আচারনের কারন বাসার সবাই বুঝে। কেটে গেছে দুই দুটি মাস আদি চলে গিয়েছে। ফোন করে জানিয়েছে সে ভাল আছে আর কখনো বাসায় ফিরবে না সেটাও জানিয়েছে।
কিছুদিন যাবৎ শরীর বিশেষ ভাল যাচ্ছে না আদিবার। পেটে একটা চাপা ব্যথা অনুভব করছে। এই উপসর্গটি তাঁর নতুন। কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত হলেই পেটে তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা হতে থাকে। ডাক্তার-টাক্তার দেখানো দরকার বোধ হয়। কিন্তু সময় করে যাওয়া হচ্ছে না। যাওয়া হচ্ছে না বললে ভুল হবে সে নিজেই যাচ্ছে না।
প্রতিদিনের মত নতুন একটা সকালের সূচনা হল। ভোর ৭ টার কাছাকাছি সবাই ঘুমুচ্ছে শুধু ঘুম নেই আদিবার চোখে। আদিবা উঠে শাড়ি গায়ে দিল,চুল আঁচড়াল গায়ে পাতলা চাদর জড়িয়ে ঘরে ছেড়ে বের হতেই মা অবাক হয়ে বললেন,
-“কোথায় যাচ্ছিস তুই?
আদিবা অস্বস্তি নিয়ে জবাব দিল
-” এই একটু রাস্তায়।
-“রাস্তায় কী?
-“কিছু না। একটু হাঁটব আর কি।
-“শরীর ভাল না বলছিলি..? বাইরে বেশ ঠান্ডা এখন কোথাও যেতে হবে না।
আদিবা কি মায়ের কথা শোনল না নাকি ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেল বুঝলেন না শাহানা বেগম। মেয়ে ধীর পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল। আজ বহুদিন পর আদিবা ভোরের আলো দেখল। কতদিন বাসার বাইরে যাওয়া হয়না। সূর্য্য কেবল উঁকি দিচ্ছে চারদিকে কেমন কুয়াশা কুয়াশা ভাব সবকিছুই ঝাপসা দেখাচ্ছে। রাস্তা ফাঁকা একটা রিক্সাও নেই আদিবা পা বাড়াল। অন্যসময় হলে লোকজনের জন্য হাঁটাই মুসকিল হয়ে যেত তবে এখন ফাঁকা। রিক্সা পেলে আদিবা হয়ত রিক্সাতেই যেত। আদিবা হাঁটছে গন্তব্য পাশের পার্ক। পার্কে ঢুকে এগিয়ে গিয়ে বসল কংক্রিটের তৈরি বেঞ্চটাতে।
কিছুক্ষন জিরিয়ে দম নিয়ে ফোন হাতে নিল আদিবা।হাত পা কাঁপছে। ফোন করার সাহস হচ্ছেনা তবুও আজ সে আদিকে ফোন করবে বলে মনস্থীর করেছে। সেজন্যই এখানে আসা বাসায় সবার সামনে মন খোলে কিছু বলা যায় না।
অবশেষে সকল জড়তা ভেঙে আদিবা ফোন করেই ফেলল। কিন্তু অপরপাশ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।বেশ কয়েকবার ফোন করার পর কেউ একজন ফোন ধরল,
– হ্যালো….
কন্ঠটা শোনে ভিতরটা ধ্বক করে উঠল থমকে গেল আদিবা । কতদিন পর আদির গলা শোনল কিন্তু নিজের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। অপরপাশ থেকে আবারো বলল,
-“কে বলছেন?
আদিবা এবারও উত্তর দিতে পারল না।
-“কথা যখন বলবিই না তখন ফোন করেছিস কেন?
আদিবা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
-“অবশেষে তাহলে দয়া হলো ফোনটা ধরার?আমি ফোন করেছি দেখেও ধরলেন না?
আদিবার কথা শোনে ফোনের অপরপাশ কিছুক্ষন নীরব রইল তারপর উত্তর আসল,
– আমি ফোনের কাছে ছিলাম না। তাই ধরতে পারিনি।
– সেদিন যে সারারাত কল দিলাম, সেদিন ধরেন নি কেন?
– ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
– মিথ্যে বলবেন না প্লিজ।
– সত্যি বললে কী তোর ভাল লাগবে?যাইহোক এসব ছাড় কী বলবি বল আমার একটু তাড়া আছে।
– এখনো এত রেগে আছেন..?
-“রাগ আমার ছিল, আর সেই রাগের জন্য কি কি হারিতেছি তুই ভাল করেই জানিস তাই এখন আর রাগ টাগ করিনা তাই শুধু শুধু ভুলভাল কথা বলিস না। তাছাড়া তুই আমার রাগের হিসেব নিতে ফোন করিস নি নিশ্চয় তাই কি বলবি সেটা বল।
-“আমি মানে…
-“ডিভোর্সের ব্যাপারে কিছু বলবি?
চমকে উঠল আদিবা,ডিভোর্স?কিসের ডিভোর্স আদি কী তাহলে তাকে ডিভোর্স দেওয়ার সিধান্ত নিয়েছে?
-“ডি ডি ডিভোর্স মানে?
-“কেন বাবা তোকে কিছু বলে নি?
-‘কি বলবে..?
-“ভেবে দেখলাম ডিভোর্স দিতে ৬ মাসের বেশি সময় লাগে দেখা গেল তোর কাউকে পছন্দ হল কিন্তু ডিভোর্স এর জন্য বিয়ে করতে পারছিস না তাই ভাবছি আগেই ডিভোর্সটা করে রাখি। বাবাকে বলেছি তোর জন্য ভাল একটা ছেলে দেখতে।
আদির কথায় চোখের কোন বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। আদিবা ফুঁফিয়ে কাঁদছে কিন্তু আদিকে বুঝতে দিতে চায় না।
– তুই কী কাঁদছিস আদিবা?
-“ক ক কই নাতো..
-“আমাকে তুই কোনদিনি ফাঁকি দিতে পারিস নি তাই আজ অযথা এই অসম্ভব চেষ্টাটা নাইবা করলি। আজাইরা কারনে কান্নাকাটি করা তোর বদঅভ্যাস।অভ্যাস টা এবার বদলানো উচিত চোখের জল এত সস্তা নাকি যে কথায় কথায় ঝড়াতে হবে?
– চোখের জল কী বাজারে বেচা-কেনা হয়? তাহলে সেটা সস্তা নাকি দামি বিচার করলেন কিভাবে?
-“তুই কি কি কারনে কতটা কাঁদতে পারিস তা অন্তত আমার চেয়ে ভাল আর কেউ জানেনা। এখন নিশ্চয় ভাবছিস আমি খুব মহান হয়ে গিয়েছি, তাই তোর সব ইচ্ছে এত সহজে পূরণ হতে দিচ্ছি সেই আনন্দেই কাঁদছিস তাই না? কিন্তু আমি শুধু তোর জন্য না নিজের জন্যেও এই সিধান্ত নিয়েছি। আমি এই দায়বদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে আর থাকতে চাইনা।
– আপনি কি বলছেন বুঝতে পারছেন?
– দিন বদলেছে তো। আজকাল কাউকেই অত বুঝিনা। বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি বোধহয়।
– এত কঠিন হওয়ার ভান কেন করছেন?
– আমি ভান টান করিনা আমি এমনই আর তুই সেটা জানিস।
– আমাদের একসাথে কাটানো সময়গুলো ভুলে গিয়েছেন ?
– ভুলিনি কিছুই তবে ভোলা উচিৎ, এসব মনে রেখে কোন লাভ তো নেই। তাই ভোলার চেষ্টা করছি।
– পারবেন ভুলতে?
– না পারার কি হলো? মানুষ পারেনা এমন কোন কিছুই নেই পৃথিবীতে।
-“আমরা কী একসাথে থাকতে পারিনা?
আদি হাসল, চাপা কন্ঠস্বরে জবাব দিল
-“পারি বলছিস? তুই বড্ড আবেগী আদিবা কখন কি বলিস নিজেই জানিস না। এখন এমনভাবে কথা বলছিস যেন তোকে আমি ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু সত্যিটা তো এমন না। সত্যিটা হল আমি তোকে ছাড়িনি বরং জোর করে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি তোর যোগ্য ছিলাম না তাই ধরে রাখতে পারিনি। তাহলে এখন আমায় অপরাধী বানাতে চাইছিস কেন? যদি বলিস আমি অপরাধী হ্যা আমি অপরাধী। ভালবাসার অপরাধে আমি অবশ্যই অপরাধী। একজনকে বেপরোয়া ভাবে ভালবেসেছিলাম তাই আমার ভালবাসা পূর্নতা পায় নি।ভালবাসার বিনিময়ে শরীর পেয়েছি কিন্তু মনটা অধরায় রয়ে গেল এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে? এই অপরাধে আরো শাস্তি দিতে চাস?
কোন উত্তর দিল না আদিবা।
-“আদিবা আমার একটু তাড়া আছে এখন রাখি?
-“রাখবেন…?
-‘হুম..
ছটপট উত্তর দিয়ে ফোন কেটে দিল আদি। আদিবার মনটা নিমেষেই দ্বিগুণ খারাপ হয়ে গেল আদির আজকাল তার সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে হয় না যতবার কল করে,হয় ধরে না। নাহলে দু একটা কথা বলেই ব্যাস্ততার দোহাই দিয়ে কেটে দেয়। আদি এত বদলে গেছে ভেবেই কান্নার গতি বেড়ে গেল সাথে সাথে পেটের একপাশে তীক্ষ্ণ ব্যাথা শুরু হল। মাথাও ধরেছে আদির কথা ভাবলেই আজকাল শরীর খারাপ করছে এখন আর কথা বলা সম্ভব না। তাই ফোন রেখে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা দিল। কিন্তু শরীর সায় দিল না আবারো বেঞ্চটায় বসে পড়ল। ঢিপ ঢিপ করে ব্যাথা বাড়ছে আদিবা জানে কিছুক্ষন পর এই ব্যাথা কমে যাবে তাই ওখানেই বসে রইল। ধীরে ধীরে ব্যাথা কমল,বেলা বাড়ল। আদিবা আবারো আদিকে ফোন করল কিন্তু ফোন বন্ধ।
আদি তার দিক থেকে সকল মায়া কাটিয়ে দিয়েছে বুঝতে বাকি রইল না। হতাশ আদিবা ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে বাসায় ফিরে আসল। শরীর খারাপ লাগছিল তাই কিছু খায়নি। মেডিসিন বক্স থেকে ২ টা ট্যাবলেট নিয়ে এক নিমিষে গিলে ফেলল সে তারপর দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।
যখন ঘুম ভাংগল বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা। আদিবা পেইন কিলারের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিল তাই এতক্ষন ঘুমিয়েছে।আজকাল আদিবা প্রায়ই ঘুমের ট্যাবলেট খায় কারন ঘুম পাখী তাকে বিদায় জানিয়েছে অনেক আগেই।
মাথা ভারি ভারি লাগছে আদিবা নিজেই এক কাপ চা করে নিয়ে ছাদে গেল। সারাদিনে খাওয়া বলতে এই চা টুকুই। সবাই ডেকেছিল কিন্তু কারোর ডাকেই ঘুম ভাংগেনি তার। চা হাতে চেয়ে আছে বিশাল আকাশের দিকে আসলে সে নিজের জীবনের সমীকরন মিলানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু এই সমীকরনের সমাধান নেই তাই কিছুক্ষন পর নিচে নেমে আসল। খাবার টেবিলে তার ডাক পড়ল,
-“আদিবা খেয়ে যা…
-“আমার ক্ষিধে পায়নি তোমরা খাও।
-“তা পাবে কেন? আমার ছেলেটাকেই তো খেয়েছিস আর ক্ষিধে পাবে কেন?
কটমট করে বলল আদির মা। আদিবা মাথা নিচু করে নিজের ঘরে ফিরে আসল আবারো কান্না পাচ্ছে। আদিবা ফোন হাতে নিয়ে আদিকে একবার কল দিল কিন্তু ফোন টা আবারো বন্ধ দেখাল।
।
।
।
।
রাত বাড়ছে সবাই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে আদিবা বসে বসে বই পড়ছে হটাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। আদিবা ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়ালে টাংগানো ঘরিটার দিকে তাকাল। ঘড়ির কাঁটায় রাত ২ টা বেজে ৪০ মিনিট ।এত রাতে কে আসবে? নিশ্চিত মনের ভুল আদিবা আজকাল প্রায়ই ভাবে কলিং বেল বাজছে কিন্তু দরজা খোলে দেখে কেউ নেই মনের ভুল তাই গুরুত্ব দিল না। আবারো বেজে উঠল কলিং বেল পরপর কয়েকবার বাজার পর আদিবা নিচে গিয়ে দরজা খুলল সাথে সাথে সারা শরীর কেঁপে উঠল, চোখ দুটি চিকচিক করে উঠল। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে পা দুটি যেন আটকে গেছে মনে হচ্ছে। আদিবা তাকিয়ে আছে তখন বাইরে থেকে শক্ত কন্ঠ ভেসে আসল,
-“ভিতরে কী ঢুকতে দিবি? ঠান্ডায় তো এবার জমে যাব।
আদিবার মুখে কথা ফুটল না চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল। নীরব কান্না হাওমাও কান্নায় রুপ নিল আদিবা কোন কিছু না ভেবে বেরিয়ে গিয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।আদি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
-“কী হচ্ছে কী আদিবা? আমি বাইরে থেকে এসেছি গায়ে কত জীবানু থাকতে পারে ছাড় বলছি…
আদিবা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল,
-“আরে কি হচ্ছে কি এত কান্নার কি হল বলবি তো..
আদিবা এবারেও কিছু বলতে পারল না।আদি তাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে অন্যহাতে ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকল। সান্তনা দিতে দিতে নিজের ঘরে নিয়ে গেল আদিবাকে…
-“দেখি চোখ মুছ বোকা মেয়ে এভাবে কেউ কাঁদে…
কে শুনে কার কথা আদিবা কেঁদেই চলেছে আদি এবার ধমক দিল,
-“কান্না বন্ধ করতে বললাম না? বেয়াদব মেয়ে কথা শুনিস না কি জন্যে?
আদি নিজেই এবার আদিবার কান্না মুছে দিল।
-“চল চোখে মুখে পানি দিয়ে দেই।
-“ল ল লাগবে না..
-“বেশ তাহলে তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-‘বাসার সবাইকে ডাকব?
-“দরকার নেই সকালে তো সবার সাথে দেখা হবেই এখন কাউকে ডেকে তুলার প্রয়োজন নেই।
বলে আদি ওয়াশরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে তখন আদিবা বলল,
-“আপনি হটাৎ আসলেন..?
-“কেন আমার আসা নিষেধ?
-“আমি তা বলি নি। সকালে তো বললেন না আসবেন।
-“বলেছিলাম আমার তাড়া আছে..ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছিল।
-“ওহ…
-“বাই দ্যা ওয়ে যে জন্যে এসেছি তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
-“স স সারপ্রাইজ?
-‘হুম ওয়েট দেখাচ্ছি…
বলে আদি গিয়ে ব্যাগ খুলল কে যেন আদিবার ভয় লাগছে। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল আদি ব্যাগ হাতে নিয়ে এসে আদিবার সামনে বসে একটা কাগজ বের করে দিল আদিবার হাতে।
-“এ এ এটা কিসের কাগজ?
-“নিজেই দেখ…
আদিবা মনযোগ দিল কাগজে সাথে সাথে মাথা চক্কর দিল হাত থেকে কাগজটা পড়ে গেল সাথে আদিবাও আদি তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে ধরল তাকে।
-“আদিবা,আদিবা কি হয়েছে তাকা আমার দিকে..আরে এসব কি ধরনের মজা চোখ খোল।
আদি অস্থির হয়ে আদিবার চোখে মুখে পানি দিল কিন্তু তাতেও জ্ঞান ফিরল না আদিবার। আদি এবার পুরোপুরি অস্থির হয়ে পড়ল। আদির চিৎকারে ঘুম ভাংগল সবার। আদিবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল….
।
।#বেপরোয়া_ভালবাসা
#লেখনীঃ মনা হোসাইন
#পর্বঃ ৫০
আদিবার শরীর ভয়ঙ্কর খারাপ করেছে। রক্তে সুগার ওঠানামা করছে। হার্টবিট মিস করছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জ্ঞান ফিরার কোনো সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না. মনে হচ্ছে যেন পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে।
অসুস্থ মস্তিষ্ক স্বপ্নহীন হয় তাই জ্ঞান হারালে আমরা স্বপ্ন দেখিনা। কিন্তু আদিবা দেখছে, ভয়ঙ্কর এক স্বপ্ন। আদি জোর করে তাকে দিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করিয়ে নিচ্ছে অথচ সে সাইন করতে চায় না। আদিবা চিৎকার করে বলছে আমি সঁই করব না কিন্তু কেউ তার কথা শোনছে না। আদিবার দম আটকে আসছে, কষ্ট হচ্ছে সে কাঁদছে কিন্তু কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছেনা।
তীব্র যন্ত্রনা নিয়ে আদিবা জেগে উঠল আর বাচ্চামেয়েদের মতো চেঁচিয়ে বলল,
-“ভাইয়া কই? আমি ভাইয়ার কাছে যাব।
নার্স-ডাক্তার ছুটে এল। বাসার সবাইকে ভিতরে আসার অনুমতি দেয়া হল আদিকেও ভিতরে আসতে বলা হল। বেডে আধশোয়া হয়ে বসে আছে আদিবা হাতে স্যালাইন লাগানো। সাবার সাথে আদি এগিয়ে এসে বেডের পাশে দাঁড়াল। মুখে কোন কথা নেই। ডাক্তার আদিবার হার্টবিট পরীক্ষা করে বিদায় নিলেন। আদি এখনো মুখ কালো করে ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। আদিবা এবার প্রশ্ন করল,
-“ক ক কিছু কি হয়েছে ভাইয়া..? আপনি এমন মুখ কালো করে রেখেছন কেন?
আদি মুখ তুলে তাকাল চোখ দুটি লাল হয়ে আছে তার চোখে মুখে হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে…আদিবা হতভম্ব হল সাথে সাথে আদি চেঁচিয়ে উঠল,
-“কাকিমণি তোমার মেয়েকে চুপচাপ থাকতে বলো তানাহলে আমি ওকে খু*ন করে ফেলব। ইচ্ছে তো করছে এখনী করে ফেলি বলে আদি এগিয়ে গেল আদিবা অবাক হওয়ার সাথে ভয়ও পেল তাই একটু পিছিয়ে গেল।
-“শান্ত হ আদি ও হয়ত বুঝতে পারেনি।
বললেন আদিবার মা…সাথে সাথে আদি আবারো চেঁচিয়ে উঠল,
-“বুঝতে পারেনি মানে? ও কী ছোট বাচ্চা যে বুঝবে না? আদিবা তোর এত সাহস হল কী করে? আমার এত বড় ক্ষতি করতে কলিজা কাঁপল না?
-‘ক ক কী করেছি আমি..?
-“আবার প্রশ্ন করছিস? ওই কে ম*রেছিল যে তুই একদম নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সন্ন্যাসী হতে চেয়েছিলি? বাচ্চার কথা নাইবা ভাবলি নিজের কথা তো একটাবার ভাবা উচিত ছিল। এটা জানার পর যে আমি তোকে মা*রতে মা*রতে হাড় হাড্ডি সব গুড়া করে দিব জানতি না?
-“ব ব বাচ্চা…? কিসের বাচ্চা?
-“মুরগীর বাচ্চা..এমন একটা ভাব নিচ্ছিস যেন তুই কিছুই জানতি না? কিরে তুই মা হতে যাচ্ছিস জানার পরেও প্রতিদিন পেইন কিলার সাথে আবার ঘুমের ট্যাবলেট কী করে খেলি? জবাব দে…বাচ্চা পেটে পেইন কিলার খাওয়া যায় না জানিস না? বাচ্চার কত ক্ষতি হয়েছে জানিস ?
আদিবা কিছু বলতে পারল না সে এমন কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না তাই আদির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
-“মুখ টা দেখো যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। একটা কথা কান খোলে শোনে নে আদিবা আমার বাচ্চার যদি কিছু হয় তোকে আমি ছাড়ব না।
-“আ আপনি এসব কি বলছেন তারমানে আমি মা হতে চলেছি..?
-‘নাহ আমি বাবা হতে চলেছি। ওই বাচ্চা শুধু আমার। কথা ছিল তোকে আমি মুক্তি দিব বাচ্চা দেয়ার কথা তো ছিল না তাই বাচ্চা শুধুই আমার। তাছাড়া যে মা দুই মাসেই বাচ্চার খেয়াল রাখতে পারেনা সে সারাজীবনের দায়িত্ব কি করে নিবে..?
বলে হন হন করে বেরিয়ে গেল আদি।আদিবা এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
-“মা উনি এসব কি বলে গেলেন?
সাথে সাথে শাহানা বেগম উত্তর দিলেন,
-“ডাক্তার বলেছে তুই শারীরিক ভাবে বাচ্চার জন্য ফিট না। নিয়মিত খাবার না খাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছিস তাছাড়া তোর রক্তে পেইন কিলার পাওয়া গিয়েছে যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর সেটা শোনেই আদি ক্ষেপে গিয়েছে। আমাদের সবাইকেও অনেক কথা শোনিয়েছে কেন তোকে ডাক্তার দেখাইনি ওকে কেন জানাইনি…
-“কিন্তু বাচ্চা…?
-“কোথা থেকে এসেছে বুঝতে পারছিস না তো? আমি বলে দিচ্ছি উড়ে উড়ে এসেছে তোর পেটে বাচ্চা উড়ে এসেছে তাই তুই বুঝতে পারিস নি।
আদির কথায় আদিবা বিরক্ত চোখে দরজার দিকে তাকাল আদি আবারো এসে তার পাশে দাঁড়াল সাথে সাথে আদিবা বলল,
-“আপনি কী ভাল করে কথা বলতে পারেন না? সবসময় ত্যাড়া ব্যাকা কথা বলেন কেন? তাছাড়া বাচ্চা নিয়ে এত মাতামাতি করছেন কেন? এই বাচ্চা তো পৃথিবীতে আসবে না।
আদি জ্বলন্ত কন্ঠে বলল,
-“মানে..?কী বললি তুই?
-“খবরদার গায়ে হাত তুলবেন না। যাকে ডিভোর্স দিচ্ছেন তার কাছে বাচ্চা আশা করেন কিভাবে..?
-“ওহ তাই নাকি?
-“হ্যা তাই।
-” পেটে যদি বাচ্চা না থাকত এই কথাটার জন্য তোর কি অবস্থা করতাম শুধু উপড়ওয়ালা জানে.. যাইহোক তোকে ডিভোর্স দিব বলেছিলাম বাচ্চাকে দিব বলিনি তাই বাচ্চা আমার…
-“বাচ্চা যেহেতু আমার পেটে তখন তার উপড় সম্পূর্ন অধিকারো আমার।
-“সেই হিসেব করতে গেলে তো আরও অনেক কিছু হিসেব করতে হবে। কে কতটা পরিশ্রম করেছে সে হিসেব মিলালেই কার ভূমিকা কতটা বুঝা যাবে..
-“চুপ করবেন আপনি! সবার সামনে কিসব বলছেন?
-“আমি শুরু করেছি নাকি তুই?
-“অসভ্য ছেলে একটা…
-“ওই…
আদি,আদিবার কথা শোনে মুচকি হাসলেন আদির বাবা আর বললেন,
-“আদিবা তো এখন সুস্থ আছে চলো সবাই আমরা যাই।
-“কিন্তু ভাইজান…
-“আহ আদিবার মা মেয়ে, মেয়ে জামাইকে একটু একা থাকতে দাও চলো…
সবাই হাসতে হাসতে বিদায় নিল।আদিবা গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। সবাই বের হতেই আদি আদিবার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল আদিবা ভ্রু কুচকাল,
-“ক ক ক কী ব্যাপার আপনি হাসছেন কেন?
-“ভাবছি…
-“কি ভাবছেন..?
-“উপড়ওয়ালা তোর কপালে সুখ লিখে নাই. আমার হাত থেকে তোর মুক্তি নেই সেটাই ভাবছি এই আর কী?
-“মানে?
-“খুব তো মুক্তি চেয়েছিলি এবার কী করবি?
-“বাচ্চা থাকলে বন্দী থাকব কে বলল? বরং আমাকে আর একা একা থাকতে হবে না কেউ একজন অন্তত পাশে থাকবে…
-“কিন্তু বাচ্চা তো আমার সে তোর সাথে থাকবে কেন?
-“আমার পেটে বাচ্চা, তাহলে আপনার হল কি করে? শোনোন আপনার মত বজ্জাতের সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখব না তাই বাচ্চার কথা ভুলে যান।
-“দরকার হলে আমি কেস ফাইল করব তবুও বাচ্চাকে ছাড়ব না।
-“তাহলে আপনার বাচ্চা আপনি নিয়ে যান আমি আপনার বাচ্চা পেটে ধরব না।
-“তবে রে….দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
-“খবরদার বলছি কাছে আসবেন না।
আদি আদিবার চেঁচামেচি শোনে ডাক্তার ছুটে আসল,
-“কী হচ্ছে কী আপনারা এসব কি করছেন..?
-“ওহ ম্যাডাম আপনি আসছেন ভালই হয়েছে আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন বাচ্চার উপড় মায়ের অধিকার বেশি নাকি আমার মানে বাবার অধিকার বেশি…?
-“এটা কেমন প্রশ্ন? বাচ্চার উপড় দুজনের অধিকারেই সমান।
-“কিন্তু আমার বাচ্চার মা সেটা মানতে নারাজ এখন আমার কি করা উচিত?
-“আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
-“বুঝবেনও না ম্যাডাম এই সা*ইকোর কথা কেউই বুঝে না আপনিও বুঝবেন না। যাইহোক আপনি আমার কথা শোনোন আসলে ইনি মানে আমার বাচ্চার বাবা আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ছেড়ে দিতে চায় কিন্তু বাচ্চাকে ধরে রাখতে চায় তাই আমি বলেছি আমি বাচ্চা জন্ম দিব না এই নিয়ে ঝামেলা।
-“আজব তো আপনিই বলুন ম্যাডাম এটা কেমন বিচার ওর আমাকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে ছেড়ে দিক তাইবলে আমার বাচ্চা দিয়ে যাবেনা? দশটা না পাঁচটা একটামাত্র বাচ্চা আমার প্রথম বাচ্চা… এমনিতেই আজেবাজে ওষুধ খেয়ে অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে।
আদি আর আদিবার কথা শোনে ডাক্তার হেসে ফেলল,
-“আচ্ছা আপনি বাইরে যান আমি আমার স্ত্রীয়ের সাথে একটু কথা বলি।
-“তা বলুন কিন্তু ও আমার স্ত্রী না জোর করে বিয়ে করেছিলাম তাই স্ত্রী বলবেন না বলুন আমার বাচ্চার মা।
-“আচ্ছা আপনার বাচ্চার মায়ের সাথেই একটু কথা বলি..
-“বলুন আমি যাচ্ছি।
বলে আদি চলে গেল। ডাক্তার ম্যাম এসে আদিবার পাশে বসল,
-“এবার বলতো কি সমস্যা?
-“আসলে….কিভাবে যে বলব, উনি আমাকে একটুও ভালবাসে না শুধু বাচ্চার জন্য আমাকে ব্যবহার করতে চাইছে তাই আমি এবরশন করে ফেলব মানে ওকে বলব বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছি তারপর অনেক দূরে চলে যাব। সেখানে গিয়ে বাচ্চা নিয়ে থাকব।উনি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে এবার উনার পালা।
-“কিন্তু উনার কথায় তো তা বুঝা যাচ্ছে না বরং মনে হচ্ছে বাচ্চার খবরে খুব খুশি হয়েছেন।
-“তাত হবেই বাচ্চাকে তো ভালবাসবেই কিন্তু আমাকে বাসে না জানেন দুমাস আমার সাথে কোন কথা বলেনি।
-“আপনাকে ভালবাসে না কে বলল?যে ছেলে সন্তানকে ভালবাসে সে অবশ্যই তার স্ত্রীকে ভালবাসে।
আদিবা এবার কিছু বলল না তাকিয়ে আছে ডাক্তারের মুখের দিকে।
-“বোকা মেয়ে দূরে গিয়ে কষ্ট দিতে হবে কেন? বরং তুমি চাইলে এই বাচ্চার দোহাই দিয়ে তোমার বরকে দিয়ে যা খুশি করিয়ে নিতে পারো। তাছাড়া বাবা মায়ের আলাদা আলাদা প্রয়োজনীয়তা আছে একার পক্ষে সেই প্রয়োজনীয়তা মিটানো সম্ভব না।আপনি উনার সাথে থাকুন বাচ্চা পৃথিবীতে আসুক তারপর যা সিধান্ত নেয়ার নিবেন তাছাড়া এই অবস্থায় ডিভোর্স হবে না।
-“এভাবে তো ভাবিনি..? আপনি ঠিকি বলেছেন আমি এতদিন যা যা করতে পারিনি এই বাচ্চাকে দিয়ে তো সব করাতে পারব।
-“এই তো বুদ্ধিমতির মত কথা…আমি এবার আসি তাহলে কিছুক্ষন পর তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
-‘অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ডাক্তার মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল আর বারান্দায় আদির সাথে দেখা হল। আদি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল তাকে দেখে ডাক্তার বলল,
-“আপনার স্ত্রী, ও না সরি স্ত্রী না আপনার বাচ্চার মায়ের দিকে খেয়াল রাখবেন উনি কিন্তু বাচ্চার জন্য ফিট না। কোনমতেই মেন্টাল প্রেসার দিবেন না। হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।
আদি মাথা নাড়ল। সন্ধ্যায় আদিবাকে বাসায় নিয়ে আসা হল আদি তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেল।
-“এই রুমে নিয়ে আসলেন কেন? আমি আমার রুমে যাব।
-“যান তবে বাচ্চাকে আমার ঘরে রেখে যান। আমি আমার বাচ্চার সাথে ঘুমাব।
-“আজব তো বাচ্চাকে রেখে যাব কি করে?
-“সেটা আমি কি করে বলন সেটা তো আপনি জানেন।
-“আপনার সাথে আমি পারব না জানি। কিন্তু মিস্টার বাচ্চার বাবা কান খোলে শোনে নিন আমার সাথে একদম উচ্চস্বরে কথা বলবেন না ডাক্তার বলেছে এমন করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে।
-“ঠিক আছে বলব না। আমার বাচ্চার জন্য আমি সব বদঅভ্যাস বদলাতে পারি।
-“আমার বাচ্চা,আমার বাচ্চা এমনভাবে বলছেন যেন আপনার একার বাচ্চা।
-“আমার একার বাচ্চাই…
-“আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বললেন..?আহ পেটে ব্যাথা হচ্ছে আর মনে হয় বাঁচব না।
-“ঢংগি মেয়ে কোথাকার (মনে মনে)
আমি তো জোরে কথা বলিনি।
-“বলেছেন, এখনী ক্ষমা চান না হলে ব্যাথা কমবে না।
-“বুঝেছি আমার কপালে দুঃখ লিখা হয়ে গিয়েছে যাইহোক সরি বাচ্চাটাকে প্রেসার এভাবে দিয়েন না…
-“এভাবে বললে হবে না কান ধরে বলুন।
-“মানে কী..?
-“বলবেন না তাই তো..? দেখেছো বাবু তোমার বাবা তোমাকে একটুও ভালবাসে না তুমি ব্যাথা পাচ্ছ জেনেও ক্ষমা চাইবে না।
-“হয়েছে হয়েছে বাচ্চার কাছে আমাকে অপরাধী বানাতে হবে না এই যে কান ধরছি।
আদি কানে ধরতেই আদিবা খিল খিল করে হেসে উঠল নিস্তব্ধ রাতে সেই হাসি বড্ড মিষ্টি শুনাল। হাসিতে গড়িয়ে পড়ছে আদিবা তার হাসি পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে। আদিবার হাসির শব্দে মুচকি হাসলেন আদির বাবা।
-“যাক ডাক্তার ম্যামকে যেভাবে বলেছিলাম ওদের সেভাবেই বুঝিয়েছেন।
আদির মা ভ্রু কুচকে বলল,
-“মানে? কি বলেছো তুমি ডাক্তারকে?
-“ওদের ব্যাপারে সবি বলেছি আর বলেছি দুজনকে যেন একসাথে থাকার পরামর্শ দেন।
বাচ্চা হতে হতে একসাথে থাকতে থাকতে ওদের সম্পর্কটা যদি একটু স্বাভাবিক হয়।
এদিকে আদিবা হাসছে তো হাসছেই আদি সেই ফাঁকে উঠে গিয়ে আবার ফিরে আসল এসেই আদিবার হাত টেনে ধরল,সাথে সাথে আদিবার হাসি থেমে গেল কিছুটা ভয়ও পেল ভাবল আদি হয়ত বরাবরের মত রেগে গিয়েছে তাই ভয়ে ভয়ে বলল,
-“ক ক কী করছেন।
আদি আদিবার হাত টেনে একটা বালা পরিয়ে দিল।আদিবা অবাক হয়ে বলল,
-“এটা..?
-“বাচ্চা হলে গিফট দিতে হয় এটাই নিয়ম।
-“এই নিয়ম আবিষ্কার করেছে কে?
-“অবশ্যই আদিত্য চৌধুরী।
আদিবা আবারো হাসল।
-“বালাটা সুন্দর সে যাইহোক এসবে আমাকে ভোলানো যাবে না। মাথা ধরেছে টিপে দিন ঘুমাব।
-“কী আমি তোর মাথা টিপে দিব..?
-“আমার বাচ্চার বাবা যেন কে..?বেশি কথা বললে পাও টিপাব।
-“বুঝেছি বুঝেছি কী আর করা যাবে দিচ্ছি আপনি শুয়ে পড়ুন আসছি…
আদি দরজা লক করে এসে আদিবার মাথায় হাত বুলিতে শুরু করেছে আদিবা সাথে সাথে বলে উঠল
-“উফফ হচ্ছে না সুন্দর করে দিন।
দিচ্ছি বলেই আদি অসম্ভব এক কান্ড ঘটিয়ে বসল আদির কান্ডে আদিবা পুরো জমে গেল। গাঁয়ে কাঁটা দিল। আদি একটানে আদিবার শাড়িটা সরিয়ে তার পেটে মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে।
-“কী করছেন এসব? কি ধরনের অসভ্যতা এটা?
-“অসভ্যতা হতে যাবে কেন আমি আমার বাচ্চাকে আদর করছি এতে কারো কিছু বলার নেই। আমার যতক্ষন ইচ্ছে ততক্ষন আদর করব। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আদর করব বলে আদি আবার নিজের কাজে মনযোগ দিল।
-“ভ ভ ভাইয়া এমন করবেন না আমার কেম যেন লাগছে…
-“ভাইয়া…? কে কার ভাইয়া?
-“ফালতু প্রশ্ন আর ফালতু কাজ দুটোই বন্ধ করুন
আদিবার কথা আদির কানে ঢুকল না সে আবারো নিজের কাজে মন দিল।এবার শুধু পেটে না আদিবার সারা শরীরময় বিচরন করছে সে। আদিবা চাপা কন্ঠে বলল,
-“কী করছেন..?ছাড়ুন।
আদি বাঁকা হেসে উত্তর দিল,
-“বাচ্চা যখন আমার বাচ্চার মাও আমার। আমার বাচ্চার মাকে আমি আদর করব তাতে তুই আদিবা বাঁধা দেয়ার কে?
আদিবা উত্তর দিল না কিন্তু তার ফুঁপানো কান্না আদির চোখ এড়াতে পারল না। আদি উঠে এসে সযত্নে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
-“দেখি তাকা আমার দিকে,কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
আদিবা চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে মুখ করে আছে।চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।
-“এত অভিমান আমার উপড়..?
-“আ আ আ আপনি আমায় একটুও ভালবাসেন না।আজ যদি বাচ্চা না আসত আমায় ডিভোর্স দিয়ে দিতেন।
-“তোর তাই মনে হয়?
-“ডিভোর্স পেপারো তো নিয়ে এসেছেন তাই না?
-“তাই নাকি..? তুই পেপার টা ভাল করে দেখেছিলি?
আদিবা চোখ খুলল,
-“মানে..?
-“ওটা ডিভোর্স পেপার ছিল না। ওটা আমার প্রত্যয়ন পত্র ছিল যার মানে আমি আর কখনো বিদেশে যাব না এখন থেকে এখানেই থাকব। আর এই সিধান্ত আমি দুমাস আগেই নিয়েছিলাম।
আদিবা অবাক চোখে তাকাল আদির দিকে আদি হাসল,
-“বিয়ের দিন বলেছিলাম আমি বেঁচে থাকতে কোনদিন তোকে ডিভোর্স দিব না। দরকার হলে আরও তিনটা বিয়ে করব তবুও তোকে ছাড়ব না মনে আছে কথাটা?
-‘কিন্তু এই দুমাস..?
-“তোকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছে আমার ছিল না। সব কাগজ পত্র আর অফিস গোছাতে আমার একটু সময় লাগত সেজন্যেই তোকে রেখে গিয়েছিলাম। মিথ্যা বলব না আসলে তুই যে আমায় ভালবাসিস সেটা বুঝানোর জন্যই এভাবে রেখে গিয়েছিলাম তবে বিশ্বাস কর তুই প্রেগনেন্ট জানলে এমন করতাম না। আমি ভেবেছিলাম আমাকে হারিয়ে তুই আমার প্রতি ভালবাসাটা বুঝবি তুই এত কষ্ট পাবি বুঝতে পারিনি রে। আমাকে তুই ক্ষমা করে দে আদিবা।
-“আ আ আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন?
-“যাকে ভালবাসি তার কাছে ক্ষমা চাইতে পারব না? আমি তোর জন্য কি কি পারি আজও বুঝলি না পা*গলি? সারা পৃথিবী যদি এক পাশে আর তুই অন্য পাশে থাকিস আমি আদি তোকেই বেঁচে নিব। তোর মত করে কেউ কখনো আমার মন ছুঁতে পারেনি। জানিস তো একজনে আসক্ত ভালবাসা সবসময় সুন্দর হয়। আমি জন্ম জন্মান্তর এই আদিবাতেই আসক্ত থাকতে চাই। তুই ছিলি আছিস আর শুধু তুইই থাকবি।
-“এত ভালবাসেন আমায়..?
-“সন্দেহ আছে..?
-‘উহু.. আমার উপড় আপনার কোন রাগ নেই?
-“যাকে ভালবাসা যায় তার উপড় রাগ করা যায় না। আলী (রাঃ) বলেছেন যদি কাউকে সারাজীবনের জন্য বন্ধু বানাতে চাও তবে মনের মাঝে একটা কবর খুঁড়ে নাও যেখানে তার করা ভুলগুলো করব দিতে পারবে। কারন মানুষ মাত্রই ভুল করবে। আমি সেই কবরটা ছয় বছর আগেই খুঁড়ে ফেলেছি যদিও তুই কখনো ভুল করিস না। আচ্ছা আদিবা তোর মনে আমাকে একটা কবর খুঁড়ার জায়গা দিবি প্লিজ? যেখানে আমার ভুল গুলোকে ছুড়ে ফেলতে পারব।
আদিবা উত্তর দিতে পারল না আবারো কেঁদে ফেলল।
-“উম একদম কাঁদবি না বলে দিলাম। কাঁদলে কিন্তু ওয়াশরুমে আটকে রাখব।
আদিবা চোখ মুছতে মুছতে জবাব দিল,
-“আমি তো আটকেই থাকতে চাই।আদির বেপরোয়া ভালবাসার মায়ার জন্ম জন্মান্তর আটকে থাকতে চাই। রচনা করতে চাই বেপরোয়া ভালবাসার নতুন অধ্যায়…দিবেন সেই সুযোগ আমায়?
।
।
।
সমাপ্ত
(