বেলাশেষে পর্ব -০৮

#বেলা_শেষে। [০৮]

হলরুমে বসে মোবাইলে স্কলিং করছিলো আরাভ এমন সময় দিগন্ত আর নওশাদ আসলো ওর কাছে। দিগন্তকে দেখে আরাভ তার মোবাইল রেখে মৃদু হেসে বলল,

-আরে দিগন্ত এসো। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম। হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডসেক করার জন্যে। দিগন্ত আরাভের সাথে হ্যান্ডসেক করে নিলো। তারপর বলল,

-আপনি শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলেন। আমাকে বললেই তো আমি আপনার সাথে দেখা করে নিতাম। দিগন্তের কথার প্রতিউত্তরে মৃদু হাসলো আরাভ। হয়তো তার এই হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে কিছু অনুভূতি। যেগুলো সে ছাড়া আর কেওই অনুভব করতে পারছে না। এই অনুভূতি গুলো নিয়েই #বেলা_শেষে একটা সুখের ঘর সাজানোর স্বপ্ন দেখবে।

-আমাকে কি জন্যে ডেকেছেন ভাই?[ দিগন্ত ]

আরাভ দিগন্ত হাতে কয়েকটা কাগজ ধরিয়ে দিলো। দিগন্ত সেই কাগজগুলো সব উল্টিয়ে দেখে নিলো এটা তো সাদা কাগজ। আরাভ তাকে সাদা কাগজ কেন দিলো সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা দিগন্ত। দিগন্ত উৎসুক দৃষ্টিতে আরাভের দিকে তাকালো। তখন আরাভ বলে উঠলো,

-সাধারণত আমাদের কলেজে নবীন বরণ হয় না। বাট ইট উইল বি দিস ইয়ার। দিগন্ত তুমি সব ইয়ারের স্টুডেন্টদের একটা লিষ্ট করে নাও কে কি পারফরমেন্স করবে। আর হ্যাঁ এবার কিন্তুু তোমাকেই পারফরমেন্স করতে হবে।

-আমি। একটু অবাক হয়ে বলল দিগন্ত।

-ইয়েস। তুমি করবে পারফরমেন্স।

-কিন্তুু,,,,,

-কোন বাহানা শুনবো না আমি ওকে। আমাকে যেতে একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। আরাভ সানগ্লাস চোখে দিয়ে চলে যাওয়ার জন্যে কয়েকটা পা সামনে এগিয়ে আসলো। তারপর কিছু মনে পড়তেই আবার পিছনের দিকে তাকায় সে। পিছনের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় দিগন্ত আর নওশাদ নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। আরাভ মৃদু সুরে দিগন্তকে ডাক দিলো। দিগন্ত আর নওশাদ দুজনেই আরাভের দিকে তাকায়। আর তখন আরাভ বলে,

-কলেজে র্্যগিং হয়, কোথায় থাকো তোমরা।

-কিন্তু আমাদের কলেজে তো আগে থেকেই র্্যগিং হয়। নওশাদের কথায় হালকা মাথা নাড়ালো আরাভ তারপর বলল,

-র্্যগিং এর নামে কাওকে অসম্মান করা যেন না হয়। এখন তো তোমরাই সিনিয়র সবদিকে খেয়াল রাখবে ওকে।

-জ্বি জ্বি ভাই মনে থাকবে। অতঃপর আরাভ চলে যায়। দিগন্ত তার কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে সবাইকে বলে আসে ছূটির পর হলরুমে উপস্থিত থাকার জন্যে। যে যে পারফরমেন্স করবে তারা সকলে এসে হলরুমেই তাদের নাম লেখাবে। এদিকে দিগন্ত যখন ভূমিকার ক্লাসে আসে আর সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলে ভূমিকা গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেই হাসির দিকে। দিগন্তের হাসির মুগ্ধতায় বরাবরই হাড়িয়ে যায় ভূমিকা। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।

ভূমিকা গালে হাত রেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিগন্তের দিকে। দিগন্ত কথা বলার ফাঁকে যখন লক্ষ করলে ভূমিকা তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন দিগন্ত এগিয়ে আসলো ভূমিকার দিকে। ভূমিকার সামনে এসে সে মাথা হালকা ঝুকে ভূমিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

-ছেলে দেখলে এভাবেই তাকিয়ে থাকো তাইনা?? লজ্জায় ভূমিকা চোখ মিটমিট করে অন্যদিকে তাকালো, একি ক্লাসে তো কেওই নেই। সবাই কোথায় গেলো?? ভূমিকা এদিক ওদিক তাকিয়ে তার সকল সহপাঠীদের খুজছে বাট কোথাও তাদের দেখা পেল না। তখনি অনুভব তার কোমড় কারো শীতল হাতের স্পর্শ। পাশে ঘুরে তাকাতেই দেখল দিগন্ত ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসছে। তারমানে দিগন্ত,দিগন্ত তার শীতল হাতে ভূমিকার কোমল পেটে স্লাইড করছে। ভূমিকা নিজেকে দিগন্তের থেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। দিগন্ত আরো শক্তকরে ভূমিকার কোমড় চেপে ধরে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। এদিকে ভূমিকা লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হলুদ হয়ে যাচ্ছে। সে কোন রকমে বলল, দিগন্ত কি করছেন ছাড়ুন। ভূমিকার কথায় দিগন্তের কোন হেলদুল হলো না সে আগের ভঙ্গিতেই ভূমিকার কোমল পেটে স্লাইড করতে করতে ভূমিকার কপালের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিলো। তারপর সেখানে তার ওষ্ঠদ্বয় ছোঁয়ালো। ভূমিকার তার দু-চোখ বন্ধকরে দিগন্তের ভালোবাসার পরশ অনুভাব করছে এমনি সময় কেও তাকে ধাক্কা দিলো। নিচে পরে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নেয় ভূমিকা।ঘোর কাটে তার। সামনে তাকাতেই দেখে সবাই তার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দিগন্ত তার আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে সকলের সাথে কথা বলছে। আনমনে কপালে হাত রাখলো ভূমিকা। তারমানে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিলো। আচ্ছা এই স্বপ্নটা কি সত্যি হতে পারে না। নিমিশেই তার মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো। সে কেন এমন স্বপ্ন দেখলো। সত্যিই তো দিগন্ত তো তাকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নেয়নি আর নিবেও না। তাহলে ভূমিকার অবাধ্য মন কেন বারবার দিগন্তের মাঝে হাড়িয়ে যাচ্ছে। মন কে বুঝাতে হবে। ভূমি তুই তো স্ট্রোং মেয়ে তাইনা। তুই যদি এমনটা করিস তাহলে মানায় না। নিজেকে কন্ট্রোল কর ভূমি।

হলরুমের এক কর্নারে বসে আছে ভূমিকা নিতু রাতুল। আর ওদিকে দিগন্ত নওশাদ তপু আর ওদের আরো কয়েকজন বন্ধু যাদের চেনেনা ভূমিকা। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছেলে আর কয়েকজন মেয়ে আছে যারা সব স্টুডেন্ডদের নাম লেখছে ভূমিকার হাতে একটা পানির বোতল। সে একটু পর পর পানি খাচ্ছে আর আড় চোখে দিগন্তের দিকে দেখছে। দিগন্তের সাথে চোখাচোখি হতেই নিজের চোখ নামিয়ে নিচ্ছে ভূমিকা। তখন বেশ অস্বস্তিতে পরে মেয়েটা। মনে হয় লুকোচুরি লেখতে গিয়ে ধরা পরেছে এমন অবস্থা। মুখের রিয়্যাকশন পাল্টে যায় ভূমিকার। এই দৃশ্যটা দিগন্ত খুব উপভোগ করে। ভূমিকাকে অস্বস্তিতে ফেলে তার কেমন শান্তি শান্তি ফিল হয়।

-এভাবে বসে বসে পানি খাবি নাকি ওদিকে যাবি আমাদের নামটাও তো লেখাতে হবে তাইনা। নিতুর কথায় ভ্রু কুচকিয়ে সামনে তাকায় ভূমিকা। হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় বোতলের পানি প্রায়ই শেষের দিকে। এত পানি ভূমিকা খেলো কখন ভেবে পায়না। বোতলের মুখটা লাগাতে লাগাতে বলল,

-তোকে আটকিয়ে রাখছে। তুই যা তোর নামটা লেখিয়ে দিয়ে আয়।

-আর তুই??

-আমি কোন পারফরমেন্স করবো না রে। আড় চোখে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে বলল ভূমিকা। কিন্তুু দিগন্তকে দেখতে পেলো না সে। দিগন্ত সেখানে ছিলো না। ভূমিকা এদিক ওদিক উকি দিকে দিগন্তকে খুঁজার চেষ্টা করছে। তখনি দিগন্ত ভূমিকার সামনে এসে দাঁড়ালো আর ওকে টেনে দাঁড় করালো। ঘটনার আকস্মিক ভূমিকা কিছু বুঝে উঠার আগেই দিগন্ত ওর হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। হলরুমে উপস্থিত সকলের নজর এখন দিগন্ত আর ভূমিকার দিকে। দিগন্তের এমন কাজে ভূমিকা এতটাই শকড্ যে শুধু তাকিয়ে আছে দিগন্তের মুখপানে। কিছুটি বলতে পারছে না। অন্যসময় হলে ভূমিকার ভাষন শুনে বিরক্ত হয়ে যেত দিগন্ত। কিন্তু এখন ভূমিকা কিছুই বলছে না। শুধু বুঝার চেষ্টা করছে দিগন্তের হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারন। সকলের দিকে নিরবে চোখ বুলিয়ে নিলো ভূমিকা। তখন চোখ পড়লো রুমের এক সাইডে মাহিন দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ খিচে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় দিগন্ত তার পাকা ধানে মই দিয়েছে।ভূমিকার আর বুঝতে বাকি রইলো না দিগন্ত হঠাৎ করে রেগে গেল কেন? হয়তো মাহিন কিছু বলেছে। যাই হোক মাহিন যদি কিছু বলেও থাকে তাতে দিগন্তের কি যায় আসে। সে তো আর ভূমিকাকে নিজের স্ত্রী হিসাবে মানে না। তাহলে কেন?? সেদিন যদি বন্ধুদের সামনে ভূমিকাকে নিজের স্ত্রী হিসাবে পরিচয় কিরিয়ে দিতো তাহলো আজ মাহিনের বাজে দৃষ্টি ভূমিকার উপর পড়তো না। এক আকাশ অভিমান এসে ভর করলো ভূমিকার মনে। ছলছল দৃষ্টিতে দিগন্তের দিকে তাকালো। দিগন্ত এখন ক্রোধান্বিত হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। দু-চোখ বন্ধকরে বড় করে শ্বাস নিলো ভূমিকা। তারপর একটু নিচের দিকে ঝুকে ব্যাগটা উঠিয়ে সেটা কাদে ঝুলিয়ে নিঃশব্দে সেখান থেকে প্রস্থান করলো সে। ভূমিকা চলে আসাতে দিগন্ত যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বড় করে শ্বাস ত্যাগ করলো সে। তারপর দ্রুত পায়ে মাহিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। দিগন্তকে দেখে মাহিন স্মিত হাসলো। তারপর বলল,

-একটা কাজের মেয়ের প্রতি এত কেয়ার? ওয়াও মিস্টার দিগন্ত তালুকদার। নাকি অন্যকোন রহস্য আছে??

-দেখ মাহিন তোকে লাষ্ট বারের মতো ওয়ার্নিং করছি, ফের যদি ভূৃমির দিকে বাজে নজর দিস তাহলে আমি ভুলে যাব তুই আমার বন্ধু। দিগন্তের কথায় পৈশাচিক হাসি দিলো মাহিন। হাত দিয়ে নিজের চাপ দাড়িয়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

-ভূলে যা, তোকে মনে রাখতে বলেছে কে?? শুন দিগন্ত ভূমির উপর যখন আমার নজর পড়েছে তাহলে তো ওকে আমার চাই।

-চেষ্টা করে দেখতে পারিস। যদিও জানি সফল হবিনা কখনো।তারপর দুজনের মধ্যে অনেক কথাকাটি হওয়ার পর মাহিন চলে যায় আর দিগন্ত সে তার কাজে মন দেয়।

ড্রয়িংরুমে বসে জুতা খুলেছে আর নিজের রুমের দিকে উকি দিচ্ছে দিগন্ত। তখন ভূমিকার সাথে ওই রকম রুড বিহ্যাভ করাটা ঠিক হয়নি। দিগন্তের ও বা কি করার ছিলো। মাহিনটা কেমন ললাসুদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে ভূমিকার দিকে। দেখেই দিগন্ত গা জ্বলে যাচ্ছিলো। দিগন্তের উকি ঝুকি দেখে মাশহুদ চায়ের কাপ রেখে বলল,

-কি বারবার উকি দিচ্ছিস বলতো। রুমে যা, গিয়ে দেখ বৌমা কি করতাছে। দিগন্ত মাশহুদের দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে তাকালো, অতঃপর বলল,

-বাড়িতে সব ঠিকঠাক আছে তো??

-হ্যাঁ, কি আর ওইবো। সব ঠিকই আছে। তুই এহন তোর ঘরে যায়। হাতমুখ ধুইয়া আয়। তারপর সবাই মিলে একসাথে খাইতে বসুম।

আরে আব্বা ঘরে যাই কেমনে বলো। তোমার ঘুণধর বৌমার যে ঝাজ সেটা তো তোমারা জানো না। এখন ঘরে গেলে আমার উপর দিয়ে যে কি ঝড় বইবে সেটা শুধু আমিই জানি। কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করলেও সেটা মুখে প্রকাশ করলো না দিগন্ত। সে তার বাবার দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো রুমে আসবে বলে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুমের ভেতরে উকি দিলো। রুম দেখি ঠান্ডা আছে। তাহলে কি ধানিলঙ্কা ঘুমাচ্ছে। বুকের উপর থুঁ থু্ঁ দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো দিগন্ত।এদিকে ছেলের কান্ড দেখে হাসছে মাশহুদ ও তার অধাঙ্গিনী।

চলবে,,,,,,

#লেখিকা- মাহফুজা আফরিন শিখা ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here