#বেস্টু
#পর্ব_১৮
#Ariyana_Nur
আমি চিৎকার দিয়ে বললাম….
—আরহাম….
দেখ আমি তোমার সব কথা শুনবো।তুমি যেভাবে বলবে আমি সেভাবেই চলবো।তোমাকে আর একটুও জ্বালাবো না।প্লিজ…আমাকে ছেড়ে যেওনা।
আমি আরহাম এর নিথর দেহটা ধরেই কান্না করছি।কিন্তু যার জন্য কান্না করছি সে কোন সাড়া শব্দই করছে না।
হঠাৎ করেই তাহিয়া ধাক্কা দিয়ে বলল….
—মানহা….
কি হয়েছে তোর তুই এমন করছিস কেন???সেই কখন থেকে তোকে ডাকছি।কোন খারাপ সপ্ন দেখেছিস??
আমি আসতে আসতে চোখ খুললাম।চোখ খুলে দেখি আমি আমার বেডে শুয়ে আছি।আমার চোখ দিয়ে এখনও পানি পরছে।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তাহিয়া বলল….
—কি হয়েছে তোর???কি সপ্নে দেখেছিস???এমন করছিলি কেন???
আমি কিছু না বলে তাহিয়াকে ধরে কাদতে লাগলাম।তাহিয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।হাত বুলাতে বুলাতে বলল..
—খারাপ সপ্ন দেখেছিস???
—হুম…
—কি দেখেছিস????
আমি কাদতে কাদতে ওকে সব বললাম।
সব শুনে ও বলল…
—আরে পাগলি ওটা সপ্ন ছিল।তুই সুধু সুধুই এমন করছিস।ও আমাকে এটা সেটা বলে বুঝাচ্ছে।কিন্তু আমি তো আমিই কান্না করেই যাচ্ছি।
একটু পর দরজা খোলার শব্দ হল।সামনে তাকিয়ে দেখি নিহাদ ভাইয়া আর উনি দাড়িয়ে আছে।আমি তাকে দেখেই আমার সপ্নে তার রক্তাক্ত সেই চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। আমি বেড থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম।
তিনি অমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল…
—কি হয়েছে তোমার এমন কান্না করছো কেন???
আমার মুখ দিয়ে যেন কথাই বের হচ্ছে না।আমি সেই আগের নেয় অঝরে কান্না করেই যাচ্ছি।
“সপ্ন” একটা দেখানো হয় আল্লাহ্ পক্ষ থেকে আরেকটা দেখানো হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। আরেকটা দেখি সারাদিন যা নিয়ে কল্পনা করি বা চিন্তা করি তা থেকে।আমরা সপ্নে যা দেখি সব সময় তা সত্যি হয় না।কিন্তু তারপরেও আমাদের মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে।না জানি সপ্নের দেখা সত্যি না হয়ে যায়।
বেডের মধ্যে কাচুমাচু করে উনার হাত ধরে বসে আছি।কেন জানি উনাকে ছারতে মন চাচ্ছে না।অনেক কষ্টে তারা আমার কান্না থামিয়েছে।তারপরেও একটু পর পর ফুপিয়ে উঠছি।আমাকে এভাবে কাদতে দেখে নিহাদ ভাইয়া বলল…
—ঐ তুই থামবি।আগে তো কান্দুনি ছিলিই এখন দিন দিন আরো বেশি হচ্ছিস।আর ভালোই হইছে আজকে আমাদের কে ভাইয়া যেতে দেয় নাই।তা না হলে আরহাম তোকে এই রাত তিনটা বাজে তোর বউ এর কান্দন থামানোর জন্য আসতে হত।
তাহিয়া শুর টেনে বলল…
—আহা…কি দৃশ্য…. কি দৃশ্য….
আগে যদি জানতাম এমন একটা দৃশ্য দেখতে পাব তাহলে আরো আগেই তো ফোন দিয়ে ভাইয়াকে এই রুমে আসতে বলতাম।আর বেবি এবার তো ভাইয়াকে ছাড়।তোর জামাইরে কেউ নিয়ে যাইব না।
আমি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইলাম।কিছু বলার মত মুড নাই।
________________________
নিধি সকাল থেকে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।কেননা তার শাশুড়ি মা তাকে একটা কাজ ও করতে দিচ্ছে না।নিধি আস্তে আস্তে কিচেনে গিয়ে বলল….
—এটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না মা।তুমি আমাকে কিছুই করতে দিচ্ছ না।
মা হাতের কাজ করতে করতে বললেন…
—তুই আবার এখানে এসেছিস।তোকে না বারন করেছি এখানে আসতে।মার না খেতে চাইলে যা এখান থেকে।
নিধি এবার নেকা কান্না করতে করতে বলল…
—তুমি আমাকে বকছো তাও আবার ঐ পুচকোর জন্য।এজন্যই লোকে বলে আসলের থেকে সুদের দাম বেশি।যে এখন অব্দি পৃথিবীতে আসেই নি তার জন্য এখন আমার উঠতে বসতে কথা শুনতে হবে।
মা মিস্টি হেসে বলল…
—কে বলল আমি আমার মেয়েকে বকছি।একটুও নাহ। দাড়াও…
তিনি কিছু ফল আর গ্লাসে দুধ নিয়ে বললেন…
এবার আমি আমার মেয়েকে আদর করে এইগুলো সব খাওয়াবো।
নিধি চোখ বড় বড় করে বলল…
—ইয়াক আমি এগুলো খাবো না।তার চেয়ে বড় আমি এখান থেকে চলে যাই।
নিধি চলে যেতে নিলেই মা নিধির হাত ধরে বলল….
—এখন আর কাজ হবে না।আমি যখন বকেছি তখন আমিই আদর করবো।এবার চুপচাপ এগুলো খাবি।চল…
নিধিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওকে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসল।
___________________________
সকালে ঘুম থেকে জেগে ঘুম ঘুম চোখে ফোন হাতে নিয়ে দেখি ১১টা বাজে।আমি তো লাফ দিয়ে উঠে হা করে বসে রইলাম।কেননা এতো বেলা হয়ে গেছে আর আমার মাদার বাংলাদেশ একবারো আমাকে ডাকলো না।আমি ভালো করে চোখ ঢলে আবার ফোনের দিকে তাকালাম।নাহ টাইম তো ঠিকই আছে।টাইম দেখে ফোন রাখতে নিয়ে দেখি মিঃ খচ্চরের মেসেজ।
তার নামটা দেখেই আমার কালকে রাতের কথা মনে পরে গেল।কি কান্ড টাই না করেছি কাল।কালকে তো ওমন কান্ড করার সময় হুসে ছিলাম না।এখন কি হবে আমার।আমাকে তো সবগুলোতে মিলে পচাবে।আল্লাহ দড়ি ফালাও উঠে যাই।যাই হোক মেসেজ ওপেন করে দেখি তাতে লেখা…..
—ব্যেড মনিং….
এজন্য যে তোমার সাথে দেখা হয় নি।আমার একটা জরুরি মিটিং ছিল তাই তারাতারি চলে এসেছি।তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে তাই ডাকিনি আর আমার শাশু মাকেও ডাকতে নিষেধ করেছি।আচ্ছা একটা কথা বলো তো কাল ওমন করলে কেন???আর আমার জন্য এতো দরদ করে হলো???হুম…
তার মেসেজ পরে আমার মাথাটাই গরম হয়ে গেল।আরে ভাই আমার জামাই এর জন্য আমার দরদ থাকবো না তাহলে থাকবো কার জন্য অন্য মানুষের জামাই এর জন্য।হুহ….
#বেস্টু
#পর্ব_১৯
#Ariyana_Nur
কালেজ গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি।কেননা আজ নিহাদ ভাইয়া আমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবে সাথে ট্রিট দিবে।এমন তেমন ট্রিট না আনলিমিটেড ফুচকা ট্রিট🤣
আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করছি একটুপর দেখি নিহাদ ভাইয়া বাইক নিয়ে আমাদের সামনে আসলো।ভাইয়াকে দেখেই আমার মেজাজ টা গরম হয়ে গেল।এমনি আমি একাই বাইকে বসতে পারি না।তার উপরে আবার আমরা দুইজন।আমি ভাইয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললাম…..
—ঐ তোমার কি মাথা গেছে।তুমি বাইক নিয়ে এসেছো কেন???আমি তোমার এই খাটারা বাইকে যাব না।
ভাইয়া হেলমেট খুলে বলল…
—ঐ আমার বাইককে খাটারা বলবি না।আর আমার বাইকে তোর যেতেও হবে না।
—তাহলে আমি যাব কিভাবে???
ভাইয়া হাত দিয়ে ইশারা করে বলল….
—সামনে তাকিয়ে দেখ।
আমি তো সামনে তাকিয়ে পুরো হা হয়ে গেলাম।কেননা তিনি পুরো হিরো স্টাইলে বাইক নিয়ে আমাদের সামনে আসলেন।আমি এখনো হা করে চেয়ে আছি।দিনদিন মনে হচ্ছে তিনি আরো সুন্দর হয়ে যাচ্ছে।তিনি আমার সামনে এসে চুটকি বাজাতেই আমার হুস এল। আমি নিজেকে সামলিয়ে ভাইয়াকে বললাম….
—এতই যখন তোমার আমাকে নিতে সমস্যা ছিল তাহলে বললে কেন আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে???
ভাইয়া অবাক হয়ে বলল…
—মানে???
—এখন মানে মানে করছো কেন।নিজে না নিতে পারলে না করে দিবে আরেক জনকে ভারা করতে গেছো কেন??
—ঐ আরেক জন কই তোর জামাইরেই তো খবর দিছি।তুই যেমনে বলছিস মনে হচ্ছে আমি তোর জামাই রাইখা অন্য কারোর সাথে যেতে বলছি।
আমি মুখ গোমরা করে বললাম….
—আমি যাব না।তোমরা যাও।আ….
আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে উনি বললেন…
—নিহাদ গিরগিটি চিনস???
নিহাদ ভাইয়া একটু ভেবে বলল…
—হুম চিনি তো।দুদিন আগেও ক্রিশ 3 সিনেমায় দেখলাম।মাইয়া টা যেই সুন্দর।আম…
তাহিয়া ভাইয়ার দিকে কটমট করে তাকাতেই ভাইয়া চুপ করে রইল।
উনি আবার বলল…
—আরে শালা আমি তো সিনেমার গিরগিটির কথা বলি নাই।সামনে থাকতে তুই আতো দুরে যাস কেন।গিরগিটি যেমন খনে খনে রং বদলায় তোর বোন হইল তেমন।দুদিন আগে কি দরদ আমার জন্য আর আজকে আমাকে চিনেইনা।
আমি তেড়ে গিয়ে বললাম….
—আমি গিরগিটি না???খনে খনে রং বদলাই তাহলে যান না ভালো যে তার কাছে যান।আমাকে নিয়ে যেতে হবে না।
আমি চলে যেতে নিলেই তাহিয়া আমার হাত ধরে বলল…
—প্লিজ…বেবি এমন করিস না।তুই না গেলে আমাদেরও যাওয়া হবে না।
—তোরা যা আমি যাব না।
ও কাদো কাদো হয়ে বলল….
—তুই এটা কোন কথা বললি।তোকে ছাড়া আমি কখন গিয়েছি যে আজ যাব।
—আতো ভাব নিয় না।ঐদিন কে গেছিল ভাইয়ার সাথে ফুচকা ঠুসতে আমি??
ও মাসুম চেহারা বানিয়ে বলল….
—আরে ওটা তো এমনি একটু।প্লিজ চল।আর না করিস না।
ওর ওই মাসুম চেহারা দেখে আমি গলে গেলাম।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম….
—ঠিক আছে যাব।কিন্তু আমি ভাইয়ার সাথে বসব।
উনি আমার দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বলল…
—কোন কথা না বলে তারাতারি বাইকে উঠো।তানা হলে….
আমিও তার ধমকে সুরসুর করে তার তার বাইকে উঠে গেলাম।এই লোকটার রাগি চেহারা দেখলে কেন যে এতো ভয় পাই।আর যাই হোক পানিতে নেমে তো কুমিরের সাথে পারবো না।
______________________________
বিছানায় শুয়ে শুয়ে আজকের দিনের কথা মনে করছি।কেমন সব কিছু আমার জীবনে সপ্নের মত হয়ে গেল।মিস থেকে কিভাবে যে মিসেস হয়ে গেলাম তা বুঝতেই পারলাম না।আজ সারাদিন আমরা অনেক ঘুরাঘুরি করেছি। রাতে ভাইয়া আর উনি আমাকে বাসায় পৌছিয়ে দিয়ে গেছে।এতো হাসি খুশি এতো সুখ আল্লাহ্ আমার কপালে রেখেছেন এসব সইবে তো।ঘুরে ফিরে আমার সেই সপ্নের কথা মনে হয়।জানিনা ভাগ্যে আল্লাহ্ কি লিখেছেন।সবাই বলে বেশি হাসলে নাকি কাদতে হয়।আসলেই কি কথাটা সত্য????
____________________________
রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছি।একটু পর আহাদ হাপাতে হাপাতে সামনে এসে বলল….
—সরিরে..সুমুকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল।
—কোন সম্যসা নেই।এতোক্ষন জানু ছিল।ঐ ডাইরিয়ার রুগির সরীর অসুস্থ লাগছে তাই আমিই চলে যেতে বলছি।
ও হাসতে হাসতে বলল…
—হা হা হা তুই পারিস ও বটে।বেচারিরে ডাইবেডিসের রুগির থেকে ডাইরিয়ার রুগি বানিয়ে দিলি।
—আচ্ছা শোন…ভালোই তো আমার ননদীর সাথে ঘুরছো।কেউ যদি দেখে ফেলে তখন???
.
—বাহ্ বাহ্ আমার ভাইকে পাত্তা দেয় না আবার আসছে ননদী বলতে।
—হুহ বয়েই গেছে উনাকে পাত্তা দিতে।হুহ…
—ও…তাই….আর শুনেন মাই ডিয়ার ভাবীজী আপনার উনি না আমার আর সুমুর কথা জানে।আর তার পারমিসন পেয়েই আমি সুমুর সাথে যোগাযোগ রাখছি।
—বাহ্ বাহ্ কি সুন্দর কাহিনী।এমন ভাই তো ঘরে ঘরে থাকা দরকার।
ও ভাব নিয়ে বলল….
—আরে দেখতে হবে না ভাইটা কার।
ও কথা বলে দুজনি হাসতে লাগলাম।
আমরা কথা বলছি আর রাস্তা দিয়ে হাটছি।হঠাৎ করে আহাদ আমাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার অপর পাশে ফেলে দিল।আমি তাল সামলাতে না পেরে পরে গেলেম।সামনে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার পুরো দুনিয়া ঘুরতে লাগলো।সামনে তাকিয়ে দেখি আহাদ মাটিতে রক্তাত্ব অবস্থায় পরে আছে।আমি কিছুক্ষন থ মেরে বসে থেকে চিৎকার দিয়ে বললাম….
—মনু…..
#চলবে
(
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)