#বৈধ_সম্পর্ক
#পর্ব_৯ শেষ পর্ব
Writer: #Saji_Afroz
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
প্রাইভেট কারটি যখন সায়নীর খুব কাছাকাছি চলে আসে তাকে সরাতে গিয়ে কারটির সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মুনিরা।সাথে সাথেই মুনিরার মাথা ফেটে পড়তে থাকে অজস্র ধারায় রক্ত।
ঘটনার আকষ্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় সায়নী।সে নিজে আত্নহত্যা করতে চায়নি।
কেনো যে সে রাস্তার মাঝখানটাই চলে গিয়েছিলো তার নিজেরি জানা নেই।
.
এদিকে আফরান ছুটে আসতেই দেখে সায়নী স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিন্তু মুনিরা মাটিতে পড়ে আছে।
সায়নীকে সে ভালোবাসলেও মুনিরার এমন অবস্থা হোক কখনো সে চায়নি।
.
.
-ডাক্তার মুনিরার কি অবস্থা?
-উনি আপনার কি হন?
ডাক্তারের করা প্রশ্নে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আফরান বলে-
আমার স্ত্রী।
-আচ্ছা।মাথায় আঘাত পেয়েছে।হাতেও সামান্য আঘাত পেয়েছে।তবে ভয়ের কিছু নেই।
-জ্ঞান ফিরেছে?
-না,আপনারা আজ রাত উনাকে এখানে রাখলে ভালো হয়।
-ঠিক আছে।
.
ডাক্তারের কথায় যেনো শরীরে প্রাণ ফিরে পায় আফরান।মুনিরার কিছু হলে নিজেকে সে কখনো ক্ষমা করতে পারতোনা।
.
ঘটনার পর থেকেই সায়নী চুপচাপ হয়ে যায়।
এমন পাগলামি না করলে মুনিরাকে হয়তো বিপদে পড়তে হতোনা।আর মুনিরা!কোন মাটি দিয়ে তৈরি সে!এতো কিছু জানার পরেও প্রথমে আফরানের সাথে থাকতে চেয়েছে তাকে ভালোবাসে বলে।আবার নিজের জীবনের পরোয়া না করে তাকে বাঁচিয়েছে।
মুনিরার জায়গায় সে নিজে থাকলে কি করতো!মরেই যেতে দিতে হয়তো।
-সায়নী?
আফরানের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় সায়নী।
আফরানকে দেখেই সায়নী বলে উঠে-
মুনিরা কেমন আছে?
-ভয়ের কিছু নেই বলেছে ডাক্তার।
স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে সায়নী।
হাসপাতালের করিডোরে রাখা একটি বেঞ্চে বসে ছিলো সে।আফরান তার পাশে বসে ডান হাতটি ধরে বলে-
এ কি!এতো গরম কেনো তোমার শরীর!
সে কথার জবাব না দিয়ে সায়নী বলে-
-আজ যদি মুনিরার কিছু হয়ে যেতো!
-নিজেকে দোষারোপ করছো মনে মনে?
-হুম।
-আসলেই তোমার দোষ।আজ যদি মুনিরা তোমাকে না সরাতো কি হতো?এইরকম পাগলামো কেউ করে!
-তোমার ভাগ কাউকে দিতে পারতাম না আমি।
-আমি কি বলেছিলাম দিতে?
-না।
-দিতে হবেনা কাউকে।
-কিন্তু আমি দিতে চাই।
-মানে?
-মুনিরাকে তুমি ডির্ভোস দিবেনা।
-সায়নী আমি তোমার কথা কিছু বুঝছিনা।
-মুনিরাও তোমার বউ হিসেবে থাকবে।ওতো সব জানার পরেও থাকতে চেয়েছে।
-কিন্তু আমিতো তোমাকে ভালোবাসি।
-মুনিরাকেও বাসবে।
-এসব কি বলছো তুমি!
-কেনো?এমন কি হয়না!সামর্থ্য থাকলে একাধিক বউ রাখা যায়।
-কিন্তু ভালোবাসা যায়না।
-এটা ভূল ধারণা।আস্তে আস্তে একসাথে থাকতে থাকতে ভালোবাসাটাও তৈরী হবে।
-আবেগ নিয়ে এসব বলছো তুমি সায়নী।
বাদ দাও এসব এখন।
-কি করে বাদ দিবো!ওই মেয়েটা আমার জন্য মরতেও ভয় করেনি।আর বলতে গেলে শুধু আমার জন্য নয়।তোমার ভালোবাসাকে বাঁচাতেও।
-আমরা দেখেশুনে ভালো জায়গায় না হয় বিয়ে দিবো ওর।
-যতটা সহজ ভাবছো ততটা সহজ নয়।একটা ডির্ভোসী মেয়ের স্থান সমাজের কোন পর্যায়ে থাকে তুমি জানো!একবার বিয়ে ভেঙেছে আর এখন তুমিও যদি ছেড়ে দাও সবাই কোন চোখে দেখবে ওকে বুঝতে পারছো?
-ওর সাথে আমার শারীরিক কিছু হয়নি।
-সেটা তুমি,আমি আর ও ছাড়া কেউ জানেনা।
-তাই বলে….
-আজ ওর কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না আফরান।আমি এতোটা স্বার্থপর যে কোনোদিন ওর কথা ভাবিনি।দুঃখী মেয়েটার পরিণতি কি হবে চিন্তা করিনি,শুধু নিজের চিন্তায় মজে ছিলাম।ডির্ভোসের পর তার কি হবে তাও ভাবিনি।তুমি বলো আমাদের ভূলের মাশুল ও দিচ্ছেনা আজ?
-সায়নী প্লিজ শান্ত হও।
-আমি চাইলে ওকে সবটা শুরুতেই জানাতে পারতাম।কিন্তু বলিনি।ওর যে একটা মন থাকতে পারে সেটা ভাবিনি।একটা আঘাত না সারতেই আরেকটা আঘাত দিতে তৈরি ছিলাম।আফরান আমি আসলেই খারাপ।
-ভূলতো মানুষ করে সায়নী।তাই বলে…
-আমার মনের সব হিংসে চলে গিয়েছে।
মুনিরা যদি পারে আমিও কেনো পারবোনা!আমি না হয় তোমার গোপন বউ-ই থাকবো।
.
আফরান খেয়াল করে সায়নী হাপিয়ে উঠেছে।
কথা বলার সময় সে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে।
সায়নীর মাথা নিজের বুকে নিয়ে বলে সে-
এসব দেখা যাবে।এতো চিন্তা করোনা।
-হু।
-এখন চলো তোমাকে ডাক্তার দেখায়।অনেক দূর্বল দেখাচ্ছে তোমাকে।
-পরে….
-কোনো পরে টরে না,অনেক অবহেলা হয়েছে চলো এখন।
-হুম।
.
.
বসা থেকে উঠতেই দেখা পায় তারা মিশিকার।
-সায়নী তুই এখানে?
-হুম,মুনিরার জন্য।
-কেনো?
-এক্সিডেন্ট করেছে সে।
-কি বলিস!এখন ঠিক আছে সে?
-ডাক্তার বলেছেন ভয়ের কিছু নেই।
-তোর এই অবস্থা কেনো?চোখের নিচে কালি,মুখ ফ্যাকাসে,মনে হচ্ছে এখুনি পড়ে যাবি।
কথাটি শুনে আফরান বলে উঠে-
পড়েতো কয়েকবার গিয়েছিলো।বুমিও করেছে অনেকবার।এখন দেখি শরীর টাও গরম।
তাই তোমার বান্ধবীকে ডাক্তার দেখাতে বলছিলাম।
-আরে আফরান ভাই আমাকে বললে আমি দেখে আসতাম বাসায় গিয়েই।
-হুম ভূল হয়ে গিয়েছে।
সায়নীর দিকে তাকিয়ে মিশিকা বলে-
মাথা কি ব্যথা করে তোর?
-হুম।
-এখন যখন এসেই পড়েছিস কিছু টেস্ট আর সিটি স্ক্যান করিয়ে নে।
আফরান বলে উঠে-
-তুমি ডাক্তার,যা বুঝো করো।
-ঠিক আছে।চলো আমার সাথে।
মিশিকার সাথে যেতে যেতে আফরানকে সায়নী বলে-
খালুর সাথে কে আছেন?
-হাসির মা আর তার স্বামীকে বলেছি থাকতে।
-আমাদের কি থাকতে হবে আজ?
-একরাত থাকলে ভালো হয় আর কি।মুনিরার অবস্থা স্বাভাবিক হয় কিনা…
-বুঝেছি।ঠিক আছে।
.
.
পরেরদিন দুপুরে….
মুনিরাকে নিয়ে বাসায় ফিরে সায়নী আর আফরান।মুনিরার মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
.
.
বাসায় ফিরেই মুনিরা দেখা করতে যায় আফজাল খানের সাথে-
বাবা আসবো?
-আসো মা।
মুনিরা তার পাশে গিয়ে বসতেই তিনি বলে উঠেন-
কি করে হলো এসব?
-আমার অসাবধানতার জন্য।
-বাইরে কেনো গিয়েছিলে?
মুনিরা হঠাৎ তার এমন প্রশ্নে জবাব দিতে পারেনি।
মুনিরাকে চুপ থাকতে দেখে আফজাল খান বলেন-
তোমার আম্মাদের খবর দিবো?
-জ্বী না,দুশ্চিন্তা করবেন তারা।তেমন কিছু হয়নি আমার।
-ঠিক আছে।যাও এখন আরাম করো।
.
আফজাল খানের রুম থেকে বের হয়ে মুনিরা আফরানের পাশের রুমে গিয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো।
সেই সময় দরজায় এসে সায়নী বলে-
আসবো মুনিরা?
শোয়া থেকে বিছানায় বসতে বসতে মুনিরা বলে-
আপু আসো।
মুনিরার পাশে বসে সায়নী বলে-
তুমি শোয়া থেকে উঠতে গেলে কেনো!
-সমস্যা নেই আপু।
-হুম।
-আমি দুঃখিত আপু।
-কেনো?
-তোমাদের মাঝে আসতে চেয়েছিলাম।অথচ তোমার দিকটা আমি ভাবিনি।তুমি কি করে নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখতে এতোদিন!আর আমি যখন সবটা জানলাম বেহায়ার মতো বললাম আমাকেও রাখো তোমাদের সাথে।আমার কারণে তুমি রাগ করে বেড়িয়ে পড়েছিলে।একটা বড় বিপদ হতে পারতো।
-তুমি হতে দাওনিতো।
-যদি হতো আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।আমি চলে যাবো আপু।ডির্ভোস পেপারটা দিও,সই করে দিবো।
-তুমি চলে গেলে যে আমিও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
-মানে?
-আমি চাইনা তুমি এই বাড়ি ছেড়ে যাও।সবার চোখে যেমন তুমি বউ ছিলে,তেমনি থাকবে।
আমি না হয় আফরানের গোপন বউ হিসেবেই থাকবো।
-আপু!
-তুমি যদি নিজের স্বামীর ভাগ দিতে পারো আমি কেনো নয়!
মৃদুু হেসে মুনিরা বলে-
তা হয়না আপু।
-কেনো হয়না?
-তুমি কষ্ট পাবে।
-বিশ্বাস করো আমার মনে কোনো হিংসে নেই আর।
-শুধু তা নয়।উনি আমাকে ভালোবাসেনা।
কিসের জোরে থাকবো আমি বলতে পারো?
-বৈধ সম্পর্কের জোরে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুনিরা বলে-
সম্ভব না আপু।বাবাকে এবার সব জানিয়ে দাও।উনি নিশ্চয় মেনে নিবেন।তোমার টাও বৈধ সম্পর্ক,তুমি কেনো গোপন বউ হয়ে থাকবে!
-কিন্তু…
-আমাকে আর এই বিষয়ে কিছু বলোনা আপু।পেপারটা দিও।আমি থাকতে চাইনা এখানে।চলে যেতে চাই।প্লিজ আর বলোনা এসব।
.
সায়নী আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় মুনিরার রুম থেকে।
.
.
রাত ৮টা…
কলিং বেল এর শব্দ হতেই সায়নী এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখতে পায় মিশিকাকে। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
-আরে মিশি তুই এই সময়ে!ভেতরে আয়।
-ভেতরে ঢুকার আগেই মিশিকা জিজ্ঞেস করে-
আফরান ভাই কোথায়?
-আমাকে ফেলে আফরানকে কেনো!পাবেল কে বাদ দিয়ে এখন কি তোর আফরানের প্রতি…
-ধ্যাত ঢুকতে তো দিবি!
-আরে মজা করছিলাম।ভেতরে আয় আমি আফরান কে ডেকে দিচ্ছি।
.
.
আফরানকে নিয়ে সায়নী ড্রয়িংরুমে আসতেই মিশিকা বলে উঠে-
আজ কিন্তু আমি রাতের খাবার এখানে খাবো।
মুচকি হেসে সায়নী বলে-
তুই না বললেও না খেয়ে যেতে দিতাম না।
-তাহলে যা এখন।রান্না শুরু করে দে।তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে আমাকে।
-আজ এখানে থেকে গেলেই পারিস।
-নারে,আরেকদিন আসবো।
-আচ্ছা,ঠিক আছে।
সায়নী রান্নাঘরের দিকে এগুতে থাকে।
আর আফরান সোফায় বসতে বসতে বলে-
মিশিকা আমি তোমাকে এমনিতেই ফোন দিবো ভাবছিলাম।সায়নীর রির্পোটের জন্য।
-আমি ওটা নিয়েই এসেছি।
-তাই নাকি!দাও দেখি।
-দেখলে সহ্য করতে পারবেতো?
-বুঝলাম না মিশিকা।
ছলছল চোখে আফরানের দিকে তাকিয়ে মিশিকা বলে-
সায়নীর ব্রেইন টিউমার হয়েছে।
মিশিকার মুখে এমন একটা কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় আফরান।
মিশিকা ব্যাগ থেকে রির্পোট-টা বের করে আফরানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে-
ভেঙ্গে পড়োনা।শক্ত থাকতে হবে।তুমি ভেঙ্গে পড়লে সায়নীর কি হবে বলো!
.
আফরানের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা।শুধু চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।
আফরানকে চুপ থাকতে দেখে মিশিকা আবার বলে-
সায়নীর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করো।খুব বেশি দেরী হয়নি।
চোখ দুটো মুছে মিশিকার দিকে তাকিয়ে আফরান বলে-
ঠিক হয়ে যাবেতো সায়নী?
-হুম।
-গ্যারান্টি নেই?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিশিকা বলে-
আর দেরী করা ঠিক হবেনা।
-তুমি আমার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছো মিশিকা।
তার মানে গ্যারান্টি নেই।
-আল্লাহ্ এর রহমত আর উন্নত চিকিৎসা পেলে সায়নী ঠিক হয়ে যাবে।আর ঠিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
-আমি ওকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চাইনা।দেশের বাইরে ওর চিকিৎসা করাতে চাই।কোন দেশে নিয়ে গেলে ভালো হবে?
-সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে পারো।
-ঠিক আছে।
রাত ১১টা……
রাতের খাবার খেয়ে ড্রয়িংরুমে আফরানের পাশে বসে টিভি দেখছে সায়নী।কিন্তু ছলছল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে আফরান।
-এভাবে হা করে কি দেখছো?
-তোমাকে।
-আমাকে হা করে দেখার কি আছে?
-তুমি বুঝবেনা।
-ঠিক আছে।মিশিকা কি বলেছে তোমাকে?রির্পোট এনেছে আমার?
.
সায়নীর করা প্রশ্নে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফরান বলে-
বেশি চিন্তা করেছো তুমি ইদানিং তাই শরীর দূর্বল।আর কিছুন।
.
হঠাৎ মুনিরা এসে আফরানের উদ্দেশ্য বলে-
ডির্ভোস পেপারটা দিতে পারেন।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি চলে যেতে চাই।
.
আফরান কিছু বলার আগেই সায়নী বলে-
কোথায় যাবে?
-সেটা আমার বিষয়।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সায়নী বলে-
আজকের রাতটা ভেবে দেখো।
এপর্যায়ে মুনিরা কড়া গলায় বলে উঠে-
আমি কারো দয়া আর চাইনা।আজ এখুনি ডির্ভোস চাই।
সায়নী কিছু বলার আগে আফরান বলে-
নিজের রুমে যাও।আমি পেপার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
হনহন করে হেটে মুনিরা নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
এদিকে আফরান,সায়নীর হাত ধরে বলে-
পাগলামি করেনা,আমার শুধু তোমাকেই লাগবে।পেপারটা তোমার কাছেনা?যাও ওর কাছে নিয়ে যাও।
সায়নী সোফা ছেড়ে উঠে এগিয়ে যায় সরাসরি মুনিরার রুমের দিকে।
মুনিরাকে বিছানায় বসে কাঁদতে দেখে তার পাশে বসে বলে-
মনের বিরুদ্ধে গিয়ে এই কাজ করাটা কি খুব দরকার?
মুনিরা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ দুটো মুছে বলে-
পেপার এনেছো?
-এতো তাড়া কিসের?
-আপু প্লিজ আর কোনো কথা না বলে পেপারটা দাও আমায়।আমি থাকতে চাইনা এখানে।তোমার সংসার তুমি সামলাও।
-আমি না থাকলে যে তোমাকে বড় দরকার এই সংসারে।আর কাউকে আমি ভরসা করতে পারবোনা মুনিরা।
-মানে?
লম্বা একটা দম ফেলে সায়নী বলে-
আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে।
.
সায়নীর কথা যেনো বিশ্বাস-ই হচ্ছেনা মুনিরার।
ছলছল চোখে সায়নীর দিকে তাকিয়ে বলে-
কি বলছো তুমি এসব!
-যা বলছি সত্যি।
-মজা নিচ্ছো তাইনা তুমি আমার সাথে?
-মৃত্যু পথযাত্রী কখনো মিথ্যে বলেনা মুনিরা।
-আপু!
-আফরানকে এটাই বলতে এসেছিলো মিশিকা।আমাকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে নিয়েছি।
.
মুনিরাকে চুপ থাকতে দেখে সায়নী বলে-
আমি খালুর সাথে অন্যায় করেছি,তাকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেছি।
ফুফুর বিশ্বাস ভেঙেছি।
পাবেলকে ঠকিয়েছি,ওকে কষ্ট দিয়ে শান্ত হয়নি আবার খালুকে বলতে বলেছি আমাকে বিয়ে করতে সে পারবেনা বলার জন্য।এসব শুনে খালু অসুস্থ হয়ে যায়।আমি তোমার সাথেও অন্যায় করেছি মুনিরা।শুরু থেকে তোমাকে সবটা জানায়নি, তোমারো মন বলতে কিছু আছে তা ভাবিনি।ডির্ভোসের পর তোমার কি হবে তাও ভাবিনি।শুধু নিজেরটাই ভেবে গিয়েছি।যার শাস্তি স্বরুপ আল্লাহ্ আমাকে ব্রেইন টিউমার দিয়েছে।এতো গুলো মানুষকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকা যায়না,আসলেই না।
.
সায়নীর পাশে এসে মুনিরা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে-
আপু তোমার কিচ্ছু হবেনা।তুমি অনেক ভালো।তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও তুমি যা করেছো তাই করতো।
মুনিরাকে ছাড়িয়ে তার চোখের পানি হাত দিয়ে মুছতে মুছতে সায়নী বলে-
তুমি হলে মোটেও করতেনা।আমার একটা কথা রাখো বোন।
-কি?
-ডির্ভোস দিওনা আফরানকে।আমিতো অসুখ ধরা পড়ার আগেই তোমাকে থাকতে বলেছি।আমি সত্যি চেয়েছি তুমি থাকো।কিন্তু এখন আরো বেশি চাই।আমি মরে গেলে তোমার চেয়ে বেশি এদের কেউ ভালো রাখতে পারবেনা।
-আপু এসব বলবেনা।চুপ করো।
-জানো অনেক ইচ্ছা ছিলো,আমার ধুমধাম করে বিয়ে হবে।সবার চোখে আমি আফরানের বউ হবো।কিন্তু স্বপ্নটা পূরণ হলোনা।খালুকে সবটা বলার ইচ্ছে থাকলেও বলবোনা আর।মরার আগে আর কষ্ট দিতে চাইনা।আর যদি বেঁচেও যাই আফরান কে ছাড়তে না পারলেও ওর গোপন বউ হয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবো।
-আপু তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
-হলেও আমি চাই তুমি থাকো।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মুনিরা বলে-
উনি আমাকে ভালোবাসেনা আপু।কিসের জোরে থাকবো আমি?
মৃদুু হেসে সায়নী বলে-
বৈধ সম্পর্কের জোরে।
.
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের তারা দেখছে আফরান।একদিন হয়তো এই তারার সাথেই কথা বলে সময় কাটাতে হবে।
নাহ কি ভাবছে সে!সায়নীর কিছু হবেনা।এই আর তেমন কি রোগ!ভালো হয়ে যাবে সে।
কিন্তু এসব হওয়ার কি খুব বেশি দরকার ছিলো!তার যে ভয় করছে ভীষণ।
হয়তো এতো গুলো মানুষের সাথে অন্যায় করার কারণে শাস্তি পাচ্ছে সে।কিন্তু নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস আছে তার।
সায়নীর কিছু হবেনা।
.
.
মুনিরার রুম থেকে সায়নী চলে যেতেই মুনিরা নীরবে কিছুক্ষণ কাঁদতে থাকে।
সায়নীর শরীর খারাপ,মাথা ব্যথা,বুমি,অজ্ঞ
ান হওয়া এসব দেখে ভেবেছিলো সে মা হতে চলেছে।কিন্তু মেয়েটা যে এতো বড় রোগ নিয়ে ছিলো কেউ বুঝতেই পারেনি।
তাদের ছেড়ে সত্যি-ই কি সে চলে যাবে!নাহ সায়নী সুস্থ হয়ে যাবে।তার সব স্বপ্ন পূরণ হবে।
আর সে স্বপ্ন পূরণ করবে মুনিরা।
চোখ দুটো মুছে মুনিরা এগুতে থাকে আফজাল খানের রুমের দিকে।
.
.
তারা দেখতে দেখতে কখন যে তারা গোনা শুরু করে দিয়েছে আফরান নিজেই জানেনা।
-আকাশের তারা গোনার বৃথা চেষ্টা করছো কেনো?
সায়নীর গলার স্বরে তার দিকে তাকিয়ে আফরান বলে-
কাজ হয়েছে?
-কি কাজ?
-ডির্ভোস।
-হবেনা।
-মানে?
-এতো অবাক হওয়ার কি আছে!তোমার দাদা ৩টা বিয়ে করেছিলো আমি জানি।উনি ৩জন বউকেই সমানভাবে ভালোবাসতো।
-হাহাহা!উনিতো প্রথম জনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেনি।
-আমরাও কোথায় প্রেম করলাম!হুট করেই বিয়েটা হয়েছে।
-ভালোবাসতাম তো।
-আবার বাসতে পারবে।
-কি যে বলোনা তুমি! **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
-শুধু একটা আফসোস থেকে যাবে।খালুকে কিছু জানাতে পারলাম না,তার কাছ থেকে স্বীকৃতি নিতে পারলাম না।
-আচ্ছ কাল সকালেই বাবাকে আমি সব বলবো।
-না,এখন তো একদমই না।
-বাবার শরীর খারাপ বলে?
মৃদু হেসে আফরানের কাছে গিয়ে সায়নী বলে-
বুকে নিবে আমাকে একটু?
-কেনো নিবোনা!
সায়নীকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে সে বলে-
এত শান্তি কেনো তোমার বুকে আফরান?
-হেহে।
-আফরান আমি বাঁচতে চাই।
সায়নীর মুখে এই কথাটি শুনে থমকে যায় আফরান।
সায়নী আবার বলতে শুরু করে-
হুম আমি সবটা জানি।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আজ যদি এতোগুলো মানুষকে কষ্ট না দিতাম তাহলে আমায় এই শাস্তিটা পেতে হতোনা।তোমার কাছে একটাই চাওয়া,আমি যদি মরে যাই মুনিরাকে মেনে নিও।
আর যদি বেঁচে থাকি তবুও ওকে যেতে দিওনা।আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।আমার জায়গা তুমি কাউকে দিতে পারবেনা।কিন্তু নতুন করে জায়গাতো বানাতে পারবে।হুম পারবে,বৈধ সম্পর্কের জোরে তুমি পারবে।
.
সায়নীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে আফরান-
কিচ্ছু হবেনা তোমার কিচ্ছুনা।মিশিকা বলেছে….
-কিছু বলোনা এখন।জড়িয়ে ধরে রাখো আমায়।
.
.
আফরানের দরজার পাশে এসে মুনিরা বলে-
তোমরা কি আছো?
সায়নী নিজেকে আফরানের কাছ থেকে সরিয়ে বলে-
দাঁড়াও আসছি।
সায়নী আর আফরান বারান্দা থেকে বের হতেই মুনিরা বলে উঠে-
বাবা তোমাদের ডাকছেন।
.
তারা মুনিরার সাথে আফজাল খানের রুমে যায়।তিনি বিছানায় বসে ছিলেন।মুনিরাদের দেখে তিনি বলেন-
সবাই এসে আমার পাশে বসো।
তারা সবাই আফজাল খানের পাশে বসতেই তিনি সায়নীর উদ্দেশ্যে বলেন-
আমি কি খুব খারাপ?
খালুর প্রশ্নে চমকে গিয়ে সায়নী উত্তর দেয়-
মোটেও না খালু।এসব কেনো বলছো?
-নিশ্চয় খারাপ।নাহলে তুই যে অনেক আগে থেকেই আফরানকে ভালোবাসিস আমাকে বলিস নি কেনো?
.
এবার বড়সড় একটা ধাক্কা খায় সায়নী আর আফরান।দুজনি চোখ বড় বড় করে তাকায় আফজাল খানের দিকে।
তাদের চুপ থাকতে দেখে তিনি সায়নীর দিকে তাকিয়ে বলেন-
মুনিরা আমাকে সবটা বলেছে।ভূল মানুষ করে তাই বলে মনে এতো বড় পাথর রেখে দিবি তুই?
-খালু….
-তোর কিছু হবেনা মা।তুই যে মুনিরাকে মেনে নিয়ে ওর অধিকার থেকে ওকে বঞ্চিত করতে চাসনি সেটার জোরেই তোর কিছু হবেনা।সুস্থ হয়ে যাবি তুই।
-খালু তুমি আমাকে মেনে নিয়েছো?
-সেটা আগে বললে মানতাম।কিন্তু মুনিরার সাথে আফরানের বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর আমি অবশ্যই মানতাম না।এখন যেহেতু মুনিরা তোকে মেনে নিয়েছে,
তুইও তাকে মেনে নিয়েছিস আমার কি বলার থাকে বল!
-খালু আমার ভূল হয়ে গিয়েছে।
-একটা ভূল তুই সংশোধন করেছিস,কিন্তু আরেকটা যে বাকি আছে।
-কি?
-আমি তোর আর আফরানের আবার বিয়ে দিবো।সবার চোখে তুইও আফরানের বউ হবি।তোকে গোপন বউ হয়ে থাকতে হবেনা।আমাদের ধর্মে সামর্থ্য থাকলে ২টা বউ রাখা যায়।
-খালু!
আফজাল সাহেব খেয়াল করেন তার ছেলের চোখে পানি।তিনি তার দিকে তাকিয়ে বলেন-
এই যে গাঁধা যা হবার হয়েছে,চোখ মুছ দেখি এখন।
-বাবা তোমার কিছু হয়ে যাবে বলে আমি বলতে পারিনি এতোদিন।
-ভূল করেছিস।সেই ভূলটা শুধরে দিয়েছে মুনিরা।
-হুম।
-এখন এসব বাদ।
সায়নীর চিকিৎসা কোথায় করবি ঠিক করেছিস?
-সিঙ্গাপুর।ওখানে আমার বন্ধু দুলাল তার বউ নিয়ে থাকে।
ওর বাসায় উঠবো ভাবছি।
-ঠিক আছে।যাওয়ার ব্যবস্থা হতে হতে এখানেও চিকিৎসা চালিয়ে রাখিস।তোরা ফিরে আসার পরে আমি তোদের আবার বিয়ে দিবো।সায়নী আর তোর গোপন বউ থাকবেনা।
.
মুনিরার পাশে গিয়ে সায়নী তাকে জড়িয়ে ধরে বলে-
এতোদিন খালুকে কিছু বলতে পারিনি,আর হয়তো বলতে পারতাম না।তার স্বীকৃতি ছাড়া
মরেও শান্তি পেতাম না।
-আরেকবার মরার কথা বললে আমি কিন্তু চলে যাবো বলে দিলাম।
.
মুনিরার কথাটি শুনে সায়নীসহ সকলে উচ্চশব্দে হেসে উঠে।
.
.
.
সিঙ্গাপুর যাওয়ার দিন….
-আপু সব নিয়েছো?
-হুম নিয়েছি মুনিরা,সব নিয়েছি।
-শুনো আপু একদম ভাববেনা চিকিৎসা করতে গিয়েছো।
-কি ভাববো?
-হানিমুনে গিয়েছো।
-ওরে দুষ্টু….. **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
-নিজের যত্ন নিবা কেমন।
-তুমিও।বাবার খেয়ালও রেখো।
-হুম।
-মুনিরা আমি মরতে চাইনা।তোমাদের সাথে বাকি জীবনটা পার করতে চাই।
-তাই হবে আপু।
-তুমি আমার কথায় এই সংসার ছেড়ে যাওনি।
আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আফরানের মনে তোমার জন্য আলাদা একটা জায়গা বানাতে আমি সাহায্য করবো।আর যদি আমার কিছু হয়ে যায়….
-কিছু হবেনা তোমার।
.
.
লাগেজ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে যেতেই সায়নী দেখতে পায় তার ফুফু,পাবেল আর মিশিকাকে।
ফুফুর কাছে গিয়ে সালাম করে সায়নী মাফ চাইতেই তিনি বলেন-
সুস্থ হয়ে ফিরে আয় মা।মনে কোনো ক্ষোভ নেই তোকে নিয়ে।
.
পাবেলের দিকে এগিয়ে যেতেই পাবেল হেসে বলে-
মিশিকার মতো কেউ একজন কে আমার লাইফে এনে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সায়নী মৃদুু হেসে পাবেল আর মিশিকার উদ্দেশ্যে বলে-
আমি খুব খুশি হয়েছি তোদের জন্য।ভালো থাক এভাবে।
.
আফজাল খান এখন অনেকটায় সুস্থ।
সোফায় বসে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন তিনি।সায়নী তার পাশে বসে বলে-
আমি সুস্থ হয়েই ফিরে আসবো বাবা।
তিনি সায়নীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন-
তাই যেনো হয়।
আফরান নিজের রুম থেকে এসে বলে-
হলো তোমাদের?আমাদের ফ্লাইট এর টাইম হয়ে গিয়েছে।
সায়নী তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে-
হুম হুম হয়েছে,চলো।
আফরান সবাইকে বিদায় দিয়ে লাগেজ হাতে নিয়ে সায়নীর সাথে পা বাড়ায় দরজার দিকে।হঠাৎ পেছনে ফিরে মুনিরার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে-
বাবা আর নিজের খেয়াল রেখো।পৌঁছে দুলাল থেকে ফোন দিবো তোমাকে।
যখন খুশি তার নাম্বারে ফোন দিও।
.
আফরান তাকে ফোন দিতে বলেছে!এটা কি সেই আফরান যে কিনা তাকে প্রয়োজনেও ফোন দিতে নিষেধ করেছিলো?
মুনিরাকে চুপ থাকতে দেখে সায়নী বলে উঠে-
ওই কিছু বলো?
মুচকি হেসে মুনিরা বলে-
ঠিক আছে।
.
সায়নীকে নিয়ে বের হয়ে যায় আফরান।
মনে তার একটায় আশা,তার ভালোবাসা সায়নীর যেনো কিছু না হয়।
.
সায়নীর এখন আর কোনো চিন্তা নেই।সবই পেয়েছে সে।এখন শুধু সুস্থ হয়ে ফিরে আসার অপেক্ষা।যদিও সে আফরানের ভাগ কাউকে দিবে কখনো ভাবেনি।কিন্তু মুনিরাকে দিতে তার কোনো সমস্যা নেই।আর সে জানে আফরানও মুনিরাকে একদিন ভালোবাসতে পারবে।
.
মুনিরার বিশ্বাস সায়নী ঠিক সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।কিন্তু সে জানেনা সে কখনো আফরানের ভালোবাসা পাবে কিনা।তবে সায়নী বলেছে বৈধ সম্পর্কের জোরে একদিন আফরান তাকেও ভালোবাসবে।আর এই বৈধ সম্পর্কের জোরেই তারা সুখে শান্তিতে সংসার করবে।
.
.
বি:দ্র: ওরা যখন একসাথে থাকতে চাইছে কি আর করার!
দোয়া করবেন সায়নী যেনো সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারে।।(খুব শীঘ্রই সিজন ২ আসছে তাই পাশে থাকার অনুরোধ)