#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব৩৯
সকাল থেকে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা পেতে পেতে অস্থির জেরিন।বন্ধুরা টাইম লাইন ফাটিয়ে দিচ্ছে শুভেচ্ছায়।বাড়িতেও সবার শুভেচ্ছা।কিন্তু গত কাল রাত এবং এই সকালে তার প্রিয়তমর কাছ থেকেই সেরা শুভেচ্ছা পেয়েছে।বাসায় গলার চেইন দেখে মুগ্ধ।স্পর্শের পছন্দ সত্যি অসাধারণ। ঘুম থেকে চোখ মেলেই স্পর্শের মিষ্টি ভালবাসার ছোঁয়াতে জীবনের ১৯তম জন্মদিন পালনের শুভেচ্ছা পেলো জেরিন।গত বছর এই দিনেই স্পর্শের বুক থেকে মাথা তুলে পালিয়ে এসেছিল সকালে সে।নতুন জীবনেই আগমন হয়েছিল পাশে থাকার এক মায়া জ্বাল।সকালে জেরিনের পছন্দের নাস্তাও বানিয়ে দেওয়া হলো।কিন্তু জেরিন শুধু তৃপ্তি করে স্পর্শের হাতের বানানো পায়েস খেলো।এই মানুষটার মাঝে কী আছে জানা নেই তবুও,ভালবাসার শেষ নেই।
অফিসে সবাইকে আজ অবাক করে ব্যস্ত থাকা স্পর্শ বোনাস দিলো।স্টাফরা অবাক হয়ে ভাবতে লাগে কী হলো আজ? পি এ সাদ উৎসাহিত হয়ে বলে,
—-“আজ আমাদের ম্যাডাম মানে স্যার এর স্ত্রীর জন্মদিন।”
সবাই অবাক হয়ে যায়।স্যার বোনাস ও দিতে পারে? কই তার জন্ম দিনে তো বোনাস দেয় না।সাদ কে কোনো ভাবে কাজ বুঝিয়ে স্পর্শ কেবিনে বসে বলে,
—-“আজ অনেক এর্যাঞ্জমেন্ট বাকি আছে সাদ।জেরিনের জন্মদিন আজ সেই সাথে বিবাহ বার্ষিকী। আমার লাইফে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন আজ।”
সাদ বেশ লাজুক ভাব নিয়েই বলে,
—-“জানি স্যার, সেদিনের কথা আমার ও মনে আছে।ভাগ্যের কী খেলা দেখুন, আগের দিন আমি জানতে চাইলাম প্রেমিকার কথা আর পরের দিন সোজা বউ নিয়ে এলেন আপনি।”
সাদ এর কথায় স্পর্শ মৃদু শব্দ করে হাসে।কিছু ফাইল চেক করে বলে,
—-“ভুল বলোনি তুমি! আমার মনে হয় তোমাকেও আমার ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।দেখো হঠাৎ এমন প্রশ্ন না করলে আমার ও এমন ভাবনা আসতো না।আকাশ থেকে এমন পরি ও নামতো না।”
সাদ আবার ও লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।মৃদু হেসে বলে,
—-“কী কী এর্যাঞ্জমেন্ট করবো স্যার আপনি বলুন।”
—-“আমি ক্যাফে বুক করে রেখেছি।জেরিনের বন্ধুরা সবাই আসবে এবং জেরিনের পছন্দের কেক আনবে।সুন্দর ভাবে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিও সাথে কিছু ক্যান্ডেলা আর বেলুন।”
সাদ সম্মতি জানালো।স্পর্শ আজ খুব দ্রুত কাজ শেষ করল।জেরিনের জন্ম দিনে কী করবে ভেবেই অস্থির সে।বাসায় যাওয়ার সময় একটা শাড়ি আর কিছু জুয়েলারি কিনে নিলো স্পর্শ। নিজ হাতে সাজাবে তার পরিকে আজ।
.
.
.
.
দরজায় বেল বাজতেই কাজের মেয়ে খুলে দিলো।আশরাফ মেহরাব পরিবার নিয়ে এসেছে জেরিন কে শুভেচ্ছা দিতে।জেরিন মাথায় ওড়না পেচিয়ে ড্রয়িংরুম আসতেই স্নেহা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে।জেরিন নম্রভাবে বলে,
—-“কেমন আছেন ভাবি?”
স্নেহা আনন্দিত গলায় বলে,
—-“অনেক ভালো আছি আমি।তোমার জন্মদিন অথচ স্পর্শ একবার ও বলেনি।তবে আমি শুনেই দ্রুত গিফট কিনে ফেলেছি।”
জেরিন হেসে বলে,
—-” এগুলোর কোনো দরকার ছিল না। আপনার মুখের হাসিটাই অনেক শান্তি দিচ্ছে।”
মহিনি মেহরাব মাথায় হাত রেখে বলেন,
—-“জন্মদিনের শুভেচ্ছা মা।”
জেরিন পায়ে ধরে সালাম করে।আশরাফ মেহরাব কেও করে।নাজমুন বেগম ব্যস্থ হয়ে পরেন আপ্যায়ন করতে।জসীম সাহেব দ্রুত বাজার থেকে দই, মিষ্টি কিনে আনেন।সোফায় স্তির হয়ে বসে আছে সবাই।জেরিন টেবিলে থাকা মিষ্টির ট্রে এগিয়ে দিলো আশরাফ মেহরাব কে।জসীম সাহেব বেশ আনন্দিত গলায় বলে,
—-“এত কিছুর কী দরকার ছিল বলুন তো? মেয়ে তো আপনাদেরই এখন।”
আশরাফ মেহরাব রসিকতা করে বলেন,
—-“ভাই সাহেব দুদিন পর মেয়েটা আমার তাই বলে কিন্তু মেয়ের প্রতি কিপটামি চলবে না।”
সবাই শব্দ করে হেসে দিলো।শুভ উৎসাহি হয়ে বলে,
—-“আংকেল,আমার কোনো বোন নেই সবাই জানেন।জেরিন আমার একমাত্র বোন সো, ওর জন্য আমাদের সব হাজির।স্নেহার ও কিন্তু বোন নেই,বড় ভাই ছাড়া।”
জেরিন মাথা নিচু করে লজ্জিত হাসি দিলো।নাজমুন বেগম অবাক হচ্ছেন।এত ভালো পরিবার তার মেয়ে পাবে? সেলিনা কিছু নাস্তা এগিয়ে দিতেই মহিনি মেহরাব শান্ত গলায় বলেন,
—-“ব্যস্ত হবেন না আপা, আমরা এখন পরিবারের লোক।ফর্মালিটি কিন্তু আমি আর নিবো না।আমিও তো আপনাদের সাথে হেসে চলতে পারি নাকি?”
________________________
—-“জানো,আজ মা -বাবা ভাইয়া – ভাবি সবাই এসে ছিল।অনেক গিফট দিলো আমায়।”
জেরিনের কথায় স্পর্শ মুচকি হাসি দিলো।অফিস থেকে একটু আগেই এসেছে সে।শুভ জানিয়েছে তারা দেখে এসেছে জেরিন কে।স্পর্শ খুবই খুশি তার পরিবার সহজেই জেরিন কে আপন করে নিয়েছে।ভেজা টাওয়াল বারান্দায় রেখে বিছানায় পা তুলে বসে থাকা জেরিনের কোলে এসে মাথা রাখে স্পর্শ। নিমিষেই সব কথা বন্ধ তার।স্পর্শ দুহাতে কোমর জড়িয়ে বলে,
—-“কী হলো ম্যাডাম,কথা বন্ধ কেনো?”
জেরিন কেপে উঠে খানিক।নিচুস্বরে বলে,
—-” এমনি।”
স্পর্শ আলতো করে কামিনের ভিতর হাত দিয়ে পিঠ ছুতেই জেরিন রোবট হয়ে গেলো।স্পর্শ তা দেখে মুচকি হেসে দিলো।বহু কষ্টে কাপা কাপা কন্ঠে জেরিন বলে,
—-“আপনি ইচ্ছে করে এমন করছেন তাই না?”
—-“কী করছি শুনি ম্যাডাম?”
জেরিন লজ্জায় চোখ বন্ধ নিলো।স্পর্শ আদুরে গলায় বলে,
—-“এভাবে লজ্জা পেলে তো আর বাবা ডাক শুনতে পাবো না আমি।”
জেরিন লজ্জায় বলে,
—-“আপনি অনেক অসভ্য হয়ে গেছেন।”
স্পর্শ শব্দ করে হেসে দিলো।ইদানিং জেরিন কে জ্বালাতন করতে বেশ মজা পাচ্ছে স্পর্শ। ভালবাসার প্রতিটা প্রহর সে লিখে রেখেছে মন গহীনের অনুভবে।
.
.
কালো রঙের শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করে গুঁজে দিলো স্পর্শ। জেরিন চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।স্পর্শ নিজ হাতে সাজিয়ে দিচ্ছে আজ।চুলে খোপা করে বেলি ফুলের মালা পরিয়ে হাতে কাচের চুড়ি পরিয়ে দিলো।আয়নার সামনে এনে পিছন থেকে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে,
—-“এবার চোখ খুলে দেখো তো!”
জেরিন ধিরে ধিরে চোখ খুলে আয়নায় তাকালো।সবার আগে পিছনে থাকা কালো শার্ট গায়ে স্পর্শের উপর চোখ গেলো।হায়! আবারো ক্রাশ জেরিন।স্পর্শ মুচকি হেসে বলে,
—-” আমাকে না তোমাকে দেখো।”
জেরিন লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।নিজেকে একবার দেখেই স্পর্শের দিকে ফিরলো।স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে বলে,
—-“ভালো লাগেনি,একবার দেখেই ফিরে গেলে?”
জেরিন আলতো কন্ঠে বলে,
—-“তুমি শাজিয়েছ মানে দুনিয়ার সব থেকে সুন্দর আমাকেই লাগছে।আমাকে তাই আয়না দেখতে হয় না প্রিয়।তোমার স্পর্শের আমি প্রতিদিন সজ্জিত হচ্ছি।তোমার মুখে হাসিই আমাকে রোজ বলে দেয়,আমাকে বিষণ সুন্দর লাগছে।”
স্পর্শ স্তির চোখে তাকিয়ে জেরিন কে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।শিতল গলায় বলে,
—-“জানি না কী করেছি যে তোমায় পেলাম।আমি একটা তারার খোজে ছিলাম যে,আমাকে বদলে দিবে।আমাকে আলোকিত করবে।তুমি হলে সেই তারা যাকে ভালবেসে স্পর্শ মেহরাব অপরিচিত মানুষদের হাসাতে শিখেছে।সবার কথা মুখ বুঝে শুনাত ক্ষমতা পেয়েছে।যস কী না শুধু কাজ নিয়ে ছিল সে আজ প্রিয়তম হতে পেরেছে তোমার।আমার আর কাউ কে চাই না,তুমি আছো তো আমার!”
জেরিন নিশ্চুপে প্রতিটা কথা অনুভব করল স্পর্শের।চোখে তার স্বস্তির পানি।জীবনে কাঙ্ক্ষিত উপহারের থেকে অনাঙ্কির উপহার সত্যি অসম্ভব আনন্দ নিয়ে আসে।জেরিনের জীবনেও তেমন এক উপহার স্পর্শ। স্পর্শ সোজা করে দাড় করিয়ে জেরিন কে একবার দেখে নিলো।দুজনে শেষ বিকেলে বেড়িয়ে পরে নির্দিষ্ট স্থানে যেতে।
___________________________
ছাদে বেলুন, ফুল দিয়ে সাজাচ্ছে রিয়া এবং নাজমুল।সাথে স্পর্শের কিছু বন্ধু।যার মাঝে রেহান ও আছে।স্পর্শ জেরিন কে বাইরে থেকে নিয়ে আসলেই রাতের বার্থডে পার্টি শুরু হবে।যেখানে স্পর্শের বন্ধুরা এবং পরিবারের লোক থাকবে।বেলুন ফুলাতে ফুলাতে গাল ব্যথা হয়ে গেছে রিয়ার।রেহান টেপ হাতে ফুরফুরে মনে ছাদের মাঝে রিয়ার কাছে এলো।চোখ ছোট ছোট করে বলে,
—-“গাল তো ব্যথা হয়ে গেছে বেয়াইন সাব।আমি একটু সাহায্য করি?”
রিয়া ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
—-“খুব দরদ না?”
রেহান মুচকি হাসলো! ঘাড় কাত করে বলে,
—-“দরদা না,ভালবাসা।”
রিয়া স্তির হয়ে রেহানের দিকে তাকায়।হাতের বেলুন টেবিলে রেখে নজর এড়াতে কেচি নিয়ে ফিতা কাটতেই ডান হাতের আঙুল কেটে যায় সামান্য।রিয়া মুখ দিয়ে আর্তনাদ করতেই রেহান ব্যস্ত হয়ে রিয়ার হাত ধরে নিলো।সব সময় সেফটির জন্য ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ পকেটেই রাখে সে।রিয়ার হাতে ব্যান্ডেজ লাগাতে লাগাতে বলে,
—-“মন কোথায় থাকে শুনি? এতটাও বেখেয়ালি হওয়া ভালো না রিয়া।”
রিয়া হঠাৎ মুগ্ধকর চাহনিতে তাকালো। সামনে থাকা যুবকটা হঠাৎ অসম্ভব সুন্দর হয়ে গেলো।শ্যাম বর্ণের লম্বা , মায়াবি চোখের এই ছেলেটা খুব আপন মনে হলো।রেহান চোখ তুলে তাকাতেই রিয়া চোখ নামিয়ে নিলো,
—-“ভাইয়ের শালি বেয়াইন সাব, প্রেমে পড়েছে।”
রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।রেহান মুচকি হেসে চলে গেলো নিজের কাজে।পাশ থেকে নাজমুল কাশি দিয়ে বলে,
—-“প্রেম প্রেম ভাব মনে হচ্ছে।”
রিয়া চোখ পাকিয়ে বলে,
—-“চাচ্চু এমন কিছুই না।”
নাজমুল হেসে দিলো।মৃদু কন্ঠে বলে,
—-“ছোট বেলা থেকেই জেরিনের সাথে তুমি,এবার ও মনে হয় এক সাথেই থাকবে।”
রিয়া লজ্জায় নাজমুলের পিঠে আঘাত করে বলে,
—-“ধ্যাত! যতসব কথা তোমার।”
.
.
.
.
আকাশ রেলিঙে ফুল লাগাচ্ছে।নীল টেপ লাগিয়ে ফুল গুলো সেট করে দিচ্ছে।কিছু কালার ফুল কাপড় লাগাচ্ছে সাথে।রেহান কাছে এগিয়ে আসতেই আকাশ সুর তুলে বলে,
—-“কি হচ্ছে এখানে বন্ধু?আমার বেয়াইন সাব কে কেড়ে নেওয়ার চিন্তা?”
রেহান হাই তুলে বলে,
—-“বেয়াইন সাব যাকে চায় সে তার।আমি তো প্রথম দেখাতেই মন দিয়েছি, এখন মন নেওয়ার পালা।”
নীল মুচকি হেসে বলে,
—-“বন্ধু সাবধানে, প্রলয় কিন্তু এখনো বাশ খাচ্ছে।”
রেহান মাথা নিচু করে হেসে দিলো।ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ব্যস্ত রিয়াকে দেখে নিলো সে।কী সুন্দর মেয়েটা! একদম চোখের ভিতর বসে আছে।
__________________________
বন্ধুরা অপেক্ষায় আছে জেরিনের।আসলেই চেঁচিয়ে উঠবে সবাই।রাফি বাইরে চোখ রেখে সবাইকে বলে,
—-“এই জেরিন চলে এসেছে, রেডি তোরা?”
শাওন সবাইকে ডেকে এক সাথে দাঁড়ায়।বেলুন আর বার্থডে স্প্রে নিয়ে সবাই রেডি।স্পর্শ কালো কাপড় দিয়ে জেরিনের চোখ বেধে দিয়েছে।স্পর্শ কোলে তুলে চারতলা ক্যাফে এনে কাচের দরজা পি এ সাদ খুলে দিলো।কোল থেকে নামাতেই চেনা সেই মধুর কন্ঠ গুলো কানে এলো জেরিনের।সবাই চেঁচিয়ে বলে,
—-“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে আওয়ার বেবি গার্ল!”
স্পর্শ চোখের কাপড় খুলে দিয়ে কানের কাছে মুখ এনে শিতল গলায় বলে,
—-“হ্যাপি বার্থডে মেরি জান এন্ড হ্যাপি এনিভার্সিরি। ”
জেরিন অবাক চোখে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে।পাশে থাকা স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-“থ্যাংক ইউ সো মাচ স্পর্শ। ”
স্পর্শ হেসে দিলো।জেরিন বন্ধুদের কাছে যেতেই সবাই এক সাথে জড়িয়ে ধরলো।স্প্রে আর বেলুন ফাটার সেই কি এক শব্দ।জেরিন উৎসাহিত কন্ঠে বলে,
—-“এত কিছু, আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।”
শাওন জেরিনের কাধে হাত রেখে মৃদু কন্ঠে বলে,
—-“এই সব কিছু ভাইয়ার প্ল্যান পাগলি!”
—-“আমরা ভাগ্য করে এমন দুলাভাই পেয়েছি বস।”
নিলয়ের কথায় স্পর্শ হেসে বলে,
—-“একদমই না! আমি ভাগ্য করে তোমাদের পেয়েছি।”
জেরিন নিঃশব্দে হেসে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে ড়ইল।সবাই এক সাথে কেক কাটলো। হইচই করে প্রাণ খুলে হাসলো সবাই।স্পর্শ এই প্রথম এমন হইচই করছে। তার মতো শান্তশিষ্ট ছেলেও হইচই করতে পারে।
.
.
.
বাসার নিচে এসে দুজন চুপ করে দাঁড়ায়।স্পর্শ স্তির চোখে জেরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।জেরিন হাজার হাজার ধন্যবাদ নিয়ে স্পর্শের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মাথা নিচু করে জেরিন বলে,
—-“কীভাবে বলবো জানি না, অনেক বছর পর এমন বার্থডে উপহার পেলাম।”
স্পর্শ মুচকি হেসে বলে,
—-“এতেই এমন করছেন? এর পর যা হবে তা দেখে কী করবে শুনি?”
জেরিন ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
—-“মানে?”
—-“এসো আমার সাথে।”
স্পর্শ হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেলো।চোখ চেপে ধরে ছাদের মাঝে এনে ছেড়ে দিলো।বিস্মিত চোখে চারপাশে তাকিয়ে দেখে।ফুল আর রঙিন কাপড়ে সাজানো চারপাশ।বেলুনের ছড়াছড়ি। মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেরিন।সবাই এক সাথে আবারও শুভেচ্ছা দিলো।রিয়া এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো জেরিন কে।স্পর্শের উপর এক সমুদ্র ভালবাসা নিয়ে তাকিয়ে আছে জেরিন।স্পর্শের স্নিগ্ধ চাহনি বুকের ভিতর সব তোলপাড় করে দিচ্ছে।ইচ্ছে করছে এখনি সবার বলে দিতে, আমি শুধু তোমাকেই চাই।
—-“চোখের সামনে কীভাবে তুই বড় হয়ে গেলি।”
রিয়ার কথায় হেসে দিলো জেরিন।বাবা- মা মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিলো।স্পর্শের বন্ধুরাও শুভেচ্ছা দিলো।কেক কেটে সবাইকে খাওয়ালো জেরিন।রাত ৯টায় সবাই আড্ডার আসর বসালো ছাদে।বড়রা নিচে চলে গেছে।পাশা-পাশি বসে আছে স্পর্শ আর জেরিন।রেহান রিয়ার বরাবর বসে মুচকি হাসছে।আকাশ তা দেখে বেদনার সুরে বলে,
—-“ভাবি,একটাই সুন্দরী কাজিন তোমার? রেহান একাই বেয়াইন সাব কে পটাচ্ছে। এ ব্যথা প্রাণে নাহি সয়।”
সবাই শব্দ করে হেসে উঠে।রিয়া ভেঙচি কেটে বলে,
—-“বললেই হলো, আপনার বন্ধু একটা উল্লুক। ”
স্পর্শ হাল্কা হেসে বলে,
—-” এটা ভুল শালিকা,রেহান কিন্তু অনেক ভালো গিটার বাজাতে পারে।ভার্সিটি লাইফে সবাই ওর গিটার্র ফ্যান ছিল।”
রিয়া হেসে বলে,
—-” তা সুইচ কোথায় ছিল?”
সবাই আরেক দফা হেসে দিলো।রেহান আহত গলায় বলে,
—-“এভাবে বলো না প্লিজ, বুকে লাগে আমার।”
রিয়া মুখ বাকিয়ে বলে,
—-“তাহলে স্টোক করুন।”
জেরিন মৃদু হেসে বলে,
—-“স্টোক করলে তোর কী হবে?”
—-“আরে আমি আছি না ওর জন্য।”
আকাশ হাত তুলে কথাটা বলতেই রেহান জোরেশোরে একটা কিল বসিয়ে দিলো পিঠে।সবাই হু হু করে হেসে উঠে।আকাশ আহত কন্ঠে বলে,
—-“প্রেম না হতেই বন্ধুকে খুন করতে চাইছিস,প্রেম করলে তো লাশ গুম করে দিবি।”
চলবে….