#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_দ্বিতীয়
#দিয়া
নতুন একটি দিনের সূচনা সবকিছুর মাঝেই বিরাজ করছে নতুনত্ব । বিষন্ন মনে রান্নাঘরে সকালের নাস্তা তৈরি করছি।কাল রাতে শুভ্রের কথা শুনে আমার যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি।শুভ্র অবশ্য আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমিই পাত্তা দেইনি।চুপচাপ গিয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পরি।কখন যে ঘুমের জগতে তলিয়ে যাই সেটা আমি জানিনা।ভাগ্যে যা আছে তাই হবে কারণ আমার যে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।বাসায় বৃদ্ধ মা বাবা আর কিশোরী দুই বোন।বাবা মায়ের ঘাড়ে বোঝা হওয়ার থেকে যতদিন টিকে থাকতে পারি নিজের সংসারেই নাহয় টিকে থাকি।এত সব চিন্তা করছিলাম আর পরোটা ভাজছিলাম।কখন যে চুলোর পরোটাটা পুড়ে গিয়েছে বুঝতে পারিনি।আম্মার কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গে,,
এই যে মহারাণী কি চিন্তা করছিলেন আপনি ? এইদিকে যে চুলোয় পরোটা পুড়ে যাচ্ছে সেই খোঁজ কি রাখেন – আম্মা
সরি আম্মা আসলে খেয়াল ছিল না।আমি এখনি জলদি করে সব পরোটা ভেজে দিচ্ছি – বলে আমি জলদি জলদি সব কাজ করতে লাগলাম।
আম্মা ও আর কিছু না বলে নিজের মতো বিরবির করে কিছু একটা বলে রান্না ঘরে থেকে বেরিয়ে গেলেন।সব নাস্তা বানানো শেষে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম ৮ টা বাজে।সবার খেতে আসতে এখনো আধা ঘণ্টার মতো সময় আছে।আমি তাই সবকিছু টেবিলের উপর গুছিয়ে রেখে রুমে চলে আসলাম।রুমে আসার পর প্রথমেই আমার শুভ্রের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।শুভ্রকে দেখে আমি বুঝতে পারলাম ও হয়তো আমাকে কিছু বলতে চায় কিন্তু হয়তো কেনো দ্বিধাদ্বন্দের জন্য বলতে পারছে না।আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাবতে লাগলাম অতীতের স্মৃতিগুলো। শুভ্র আর আমার সম্পর্ক আর ১ বছর আগে ও এমন ছিল না।আমার শশুড় আব্বু নিজে আমাকে পছন্দ করে ছেলের বউ বানিয়ে আনেন।কিন্তু বিয়ের পরেই আমি বুঝতে পারি আমার শাশুড়ী আম্মা আমাকে মেনে নিতে পারেননি।তার কারণটা আমি আজ পযন্ত ও জানিনা।কিন্তু ১ টা বছর আগে ও শুভ্রের সাথে আমার সম্পর্ক টা আর পাঁচ দশটা স্বামি স্ত্রীর মতোই স্বাভাবিক ছিল।শাশুড়ী আম্মা আগে থেকেই এমন নানা কথা শুভ্রকে বানিয়ে বলতো।মাকে কিছু না বললেও শুভ্র বুঝতো আমি এসব করিনি।সে শাশুড়ী আম্মার সব কথা শুনার পর ঘরে এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলতো,
সরি বউজান।আম্মুর কথায় কিছু মনে করোনা। আম্মু বয়স্ক মানুষ এখনো সবকিছু মেনে নিতে পারেনি। একটু সময় দাও সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে – শুভ্র
আমিও শুভ্রর কথামতো সবকিছু মেনে চলতাম।সারাদিনে এতকিছু ঘটনা ঘটার পরেও শুভ্রের ভালেবাসায় নিজেকে জগতের সবথেকে সুখি মানুষ মনে হতো।আহা কত আনন্দের সময়ই না ছিল সেগুলো।কিন্তু এখন সবকিছু বদলে গিয়েছে।১ বছর আগে থেকেই হঠাৎ শুভ্রের মাঝে আমি পরিবর্তন লক্ষ্য করতে থাকি।কেমন জেনো বদলে যেতে থাকে শুভ্র। কোনো একটি কারণে ও আমাকে সহ্যই করতে পারতো না।আমি ওর আশেপাশে আসলেই বাজে বিহেভ শুরু করতো।আম্মার কথা গুলো শুনেও আমার উপর নানান অত্যাচার করতে থাকে।আমি বুঝতে পারিনা এত পরিচিত একজন মানুষ হঠাৎ কিভাবে এতটা অপরিচিত হয়ে গেলো।শুভ্রের পরিবর্তন টা আমাকে আজ ও ভাবায়।অনেক চেষ্টা করেছি এসবের কারণ জানার।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।এই এক বছরে হয়তো একটা ঘন্টা সময় ও আমরা একসাথে বসে গল্প করে কাটাইনি।অনেক দূরত্ব এসে গিয়েছে আমাদের স্বামি স্ত্রীর মাঝে।নিজ ভাবনার জগতে মশগুল ছিলাম আমি। শুভ্রের কথা শুনে ভাবনা জগতে থেকে বেরিয়ে আসলাম,
ঝিলিক – শুভ্র
আমি জবাব দিলাম না।
কিছু কথা ছিল ঝিলিক – শুভ্র
আমি তবুও কোনো জনাব দিলাম না।
এবার শুভ্র কিছু টা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
কিছু বলেছি তোমাকে আমি ঝিলিক – শুভ্র
ও আচ্ছা আমাকে বলেছো।বুঝতে পারেনি আসলে। দুঃখিত – আমি
না বুঝতে পারার কারণ ? – শুভ্র
আমি মনে হয় কারণ টা হয়তো তোমার অজানা নয় – আমি
আমি তেমার কাছে জানতে চেয়েছি – শুভ্র
আগে কখনো তো আমাকে ঝিলিক বলোনি তাই বুঝিনি।তুমি তো সবসময় আমাকে বউজান বলেই ডাকতে – আমি
নিজের দোষে আজকে তুমি সেই ডাকটি শুনতে পারছো না – শুভ্র
কি দোষ আমার বলো তো শুভ্র আমি জানতে চাই কোনো দোষের শাস্তি তুমি আমাকে এত কঠোর ভাবে দিচ্ছো। – আমি
শুভ্র নিশ্চুপ
বলো শুভ্র বলো আমি আর পারছি না শুভ্র এভাবে তোমার এত অবহেলা অত্যাচার নিয়ে বেচে থাকতে শুভ্র। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে শুভ্র। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে শুভ্র। ভিতরে ভিতরে সেই এক বছর আগেই আমি শেষ হয়ে গিয়েছি।হয়তো খুব জলদি দেহের ভিতরে থেকে প্রাণ পাখিটা ও উড়ে যাবে।মরার আগে জেনে তো যাই কোন দোষের শাস্তি তুমি আমাকে এত জঘন্য ভাবে দিচ্ছো।কোন দোষের কারণে আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। আজকে তুমি বলেই দাও শুভ্র। আমি আর পারছি না এভাবে চলতে – বলতে বলতে আমি কান্না করে দিলাম।
সবসময় চোখের সামনে যা দেখা যায় তা সত্যি হয়না।প্রত্যেক সত্যির গভীরে আরো একটি সত্যি বিদ্যমান থাকে।পারলে সেটা খুঁজে বের কর – বলে শুভ্র বারান্দা থেকে চলে আসলো।আমি ডুবে গেলাম ভাবনার অতল সাগরে।
এভাবেই নানা ব্যস্ততায় কাজের মধ্যে দিয়ে সারাদিন কেটে গেল।সন্ধ্যার দিকে আবারো মা ফোন করলো।আমি ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই মা বলে উঠলো,
ঝিলিক – আম্মু
হ্যা আম্মু বলো – আমি
তোর আব্বার অবস্থা ভালো না।তাকে কিছুক্ষণ আগে প্রতিবেশিরা মিলে গ্রামের হসপিটালে নিয়ে আসছে।তুই একটু আসার চেষ্টা কর মা।লোকটা বার বার শুধু তোর নামটা বলছে – ভেজা কন্ঠে বললো আম্মু
আম্মু কোনো টেনশন করোনা আমি এখনি শুভ্রের সাথে কথা বলছি।তুমি আব্বুর সাথে থাকো।আব্বুকে দেখে রেখো আমি জলদিই আসছি – আমি
হুম – বলে আম্মু কল কেটে দিল।
আমি রুমে চলে গেলাম।কিছুক্ষণ আগেই শুভ্র হসপিটাল থেকে ফিরেছে।আমি শুভ্রের কাছে গিয়ে বলতে লাগলাম,
শুভ্র – আমি
হুম বলো – শুভ্র
আব্বুর শরীরটা অনেক খারাপ।কিছুক্ষণ আগে তাকে গ্রামের হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। বার বার আমার নাম বলছে আর আমাকে দেখতে চাচ্ছে। প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো – বলতে বলতে আমি কান্না করে দিলাম।
কারণ গত এক বছরে হাজার বার অনুরোধ করার পরেও শুভ্র আমাকে একবারো বাবার বাসায় যেতে দেয়নি। তাই আমি আন্দাজ করে ছিলাম এবার ও শুভ্র মানবেনা।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভ্র বলে উঠলো,
রেডি হয়ে এসে আমরা এখনি বের হবো।- শুভ্র
শুভ্রের কথা শুনে আমি কোনোমতে বাসায় পরা থ্রিপিস টি চেঞ্জ করে অন্য একটা জামা পরে আসলাম।তারপর বের হয়ে পরলাম দুইজনে গ্রামের উদ্দেশ্য। শাশুড়ী আম্মা অনেক রাগ করেছিলেন আমাদের আসতে মানা করেছিলেন।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভ্র শাশুড়ী মাকে বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে আসে।শুভ্রের একের পর এক আজব কর্মকান্ডে আমি অবাক হচ্ছি।আজকে আবার শুভ্রের মাঝে আমি সেই একবছর আগের শুভ্রের প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করছি।রাত ২ টার দিকে আমার বোন আমাকে ফোন করে জানায় আব্বুকে নিয়ে সবাই বাসায় এসে পরেছে আমরা যেন সোজা বাসায় যাই।আমিও ওর সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেই।
সকাল সাড়ে ছয়টা
বাড়ির সদর গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই উঠানে অনেক মানুষের শোরগোল আমার নজরে পড়ে।বেশিরভাগই গ্রামের মুরব্বিরা। কিন্তু তাদের এখানে থাকার কারণ আমি বুঝতে পারছিনা।হয়তো আব্বু অসুস্থ তাই।কিন্তু ঘরে প্রবেশ করতেই আমি চমকে উঠি।একি একজন মৃত ব্যক্তির লাশের পাশে বসে আমার আম্মু আর রিনি মিনি কান্না করছে।আমি হয়তো বুঝতে পারছি সবটা।আতঙ্কে আমার বুকটা কেপে উঠলো
চলবে💓