#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_25
সব সিনিয়র ছেলেমেয়ে গুলো দরজার দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওদের চেহারা ফ্যাক্যাশে হয়ে গেলো। ভয়ে ওদের হাত পা কাপাকাপি করছে। ওরা একে একে সবাই বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো। সিনিয়রদের দৃষ্টি অনুসরন করে সাড়িকা সাঈফা সহ ওদের বন্ধুরাও দরজার দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওরা একটা শস্তির নিশ্বাস ফেললো।সাঈফা খুব সাবধানে ওর চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে ফেললো। মিহির আহির আরেকটু দেরি করে আসলেই হয়তো ও ভয়ে আর লজ্জায় মরেই যেতো।
সাড়িকা এতোক্ষন নিশব্দে কাদছিলো। ওরা এসেছে দেখে ও আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। হাউমাউ করে কেদে দিলো । এতোটা অপমানিত জিবনে বোধহয় কখনো হয়নি। বারবার নিজের ভেজা শরীরকে হাত দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করছে আর চোখের পানি মুছছে। আহীর কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা গিয়ে সাড়িকা কে জড়িয়ে ধরলো । সাড়িকা আহিরের বুকে মুখ গুজে আরো জোড়ে কেদে দিলো। আহির একহাত সাড়িকার মাথায় রেখে বললো
“আরে কি হয়েছে কাদছিস কেনো? আমরা এসে গেছি তো। কে কি বলেছে আমাকে বল। ওদের সব গুলোকে কঠিন শাস্তি দিবো। একটাকেও ছাড়বো না।”
সাড়িকা আহীরকে ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে কাদতে কাদতে বললো
“কাউকে কিচ্ছু করতে হবে না । আমি আর এই ভার্ষিটিতেই পড়বো না। সব কিছুর জন্য তুই দায়ি । তুই আর সাঈফা জোড় করে আমাকে এইখানে ভর্তি করিয়েছিস। দরকার হলে সুইসাইড করে মরে যাবো তাও এই ভার্ষিটিতে থাকবো না।”
আহীর এই ভার্ষিটিতে পড়ে বলে এডমিশনের সময় সাড়িকা এখানে ভর্তি হতে চায়নি। আহীর ওকে অনেক কিছু বলে ব্লাকমেইল করে ছিলো,,কিন্তু তাও সাড়িকা এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য রাজি ছিলো না। সাড়িকাকে অনেক বুঝিয়েও যখন লাভ হলো না,, তখন আহীর সাঈফাকে বলে যে সাঈফা আর সাড়িকা যদি আহীরদের ভার্ষিটিতে ভর্তি হয় তাহলে মিহিরকে সব সময় সাঈফা নিজের চোখের সামনে রাখতে পারবে। আর সাঈফা নিজেও মিহিরের কাছাকাছি থাকবে বলে আহীরের কথায় রাজি হয়ে যায়। তারপর আহীর আর সাঈফা দুইজন মিলে এক প্রকার জোড় করে সাড়িকাকে এখানে ভর্তি করিয়েছে।
সাড়িকার মুখ থেকে মরার কথা শুনতেই আহীরের মাথা গরম হয়ে গেলো । ও সাড়িকার কাছে গিয়ে ওর গাল জোড়ে চেপে ধরে বললো
“আর যদি সুইসাইড করা বা মরার কথা বলেছিস তো আমি নিজের হাতে তোকে খুন করে মাটিতে পুতে ফেলবো। আর ভার্ষিটি ছাড়ার কথা ভুলেও ভাবিস না। একবার যখন এখানে এনে ভর্তি করিয়েছি তো এতো তাড়াতাড়ি এখান থেকে যেতে দিচ্ছি না। গট ইট?”
বলেই আহির সাড়িকার গাল ছেড়ে দিলো। তারপর নিজের গা থেকে জ্যাকেট টা খুলে সাড়িকার গায়ে পড়িয়ে দিলো। সিনিয়র ছেলে মেয়ে গুলো এতোক্ষন শুধূ ভয় পাচ্ছিলো। কিন্তু সাড়িকার আর আহীরের কথা শুনে ভয়ের সাথে অবাকও হয়েছে। কারন ভার্ষিটির শুধুমাএ হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া আর কেউই জানে না সাড়িকা আর সাঈফা,,,,সম্পর্কে মেঘ আহির এবং মিহিরের কাজিন হয়। সিনিয়র ছেলে মেয়ে গুলো শুধু মনে মনে একটা কথাই ভাবছে আহীরের সাথে সাড়িকার কি সম্পর্ক?আহীর আর সাড়িকা কি আগে থেকেই একে অপরের পরিচিত? যদি ওরা আগে থেকেই একে অপরের পরিচিত হয়,তাহলে আজকে আহির আর মিহির ওদের সবার কি অবস্থা করবে। সেটা ভেবেই ওরা আৎকে উঠছে।
মিহির নিজের গায়ের জ্যাকেট টা খুলে সাঈফার মুখের উপরে ছুড়ে মারলো। সাঈফা বিরবির করে বললো
“হার্টলেস ছেলে একটা । ওর জন্য এতো কষ্ট করে এই ভর্ষিটিতে ভর্তি হলাম । আজকে এদের কাছে অপমানিত হলাম। আর ইনি আমার উপর জ্যাকেট ছুরে মারছেন! কেনোরে ভাই আহির ভাইয়ার মতো এসে যদি একটু জড়িয়ে ধরতি আর নাহলে অন্তত নিজের গায়ের জ্যাকেট টা সুন্দর করে আমাকে পড়িয়ে দিতি ।তাহলে কোন মহা ভারতটা অসুদ্ধ হতো শুনি।”
মিহির নিজের হাত থেকে ঘড়িটা খুলে ওর এক বন্ধুর হাতে দিলো,,তারপর একটা এ্যাংড়ি লুক নিয়ে ছেলেমেয়ে গুলোর সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো
“দুই বছর আগের একটা কাহিনি তোদের মনে আছে? তখন তোরা মনে হয় অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়তি। ভার্ষিটির কয়েকটা ছেলে মিলে ফাষ্ট ইয়ারের একটা মেয়েকে ভির্ষিটির পিছনে নিয়ে গিয়ে র্যাগিং এর নামে গায়ে হাত দিয়েছিলো। আর ঠিক ওই ঘটনার ছয় ঘন্টা পর ওই ছেলে গুলোকে পাশের একটা জঙ্গল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ভার করা হয়েছিলো।”
পিছন থেকে আহির ওর এক বন্ধুর হাত থেকে একটা হকি ষ্টিক হাতে নিয়ে ঘুড়াতে ঘুড়াতে ছেলে গুলোর সামনে এসে দাড়িয়ে বললো
“শুধু কি তাই? ওদের হসপিটালে ভর্তি করার পর ডাক্তার বলেছিলেন ওদের হাত পায়ের হাড্ডি একদম গুড়ো করে দেয়া হয়েছে। রড দিয়ে মাথার পিছনে মেরে একদম থেতলে দেওয়া হয়েছে। জিবনে আর হাটতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। আর জানিস ডাক্তারের কথাই সত্যি হয়েছে। ওরা এখনো ঠিকঠাক মতো দাড়াতেই পারে না। ”
মিহির গিয়ে আহিরের এক কাধের উপর নিজের হাত রেখে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে আহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“বাড্ডি,, আমরা ওদেরকে এসব কেনো বলছি বলতো! সেদিন ওই ছেলে গুলোকে ভার্ষিটির মাঠ থেকে যখন টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন এরাও তো এই ভর্ষিটিতেই উপস্থিত ছিলো তাইনা। শুধু এরা কেনো টিচার্স রাও উপস্থিত ছিলো,,কিন্তু সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিচ্ছু করতে পারেনি। আচ্ছা তোরা সব কিছু জেনেও এতো বড় ভুলটা কি করে করলি বলতো? ”
আহীর বললো
“এই তোদের র্যাগিং করার সময় একবারও মনে পড়লোনা আমরা যখন র্যাগিং এর কথাটা জানতে পারবো তখন তোদের সাথে ঠিক কি কি করবো?”
ওদের দুজনের কথা শুনে সেই ছেলে মেয়ে গুলোর হাত পা কাপছে। ভয়ে সবাই জড়োসড়ো হয়ে গেছে । সবার মনে পড়ছে দুই বছর আগের সেই ভয়ংকর দিনের কথাটা । কিভাবে আহির , মিহির আর ওদের বন্ধুরা মিলে সেই ছেলে গুলোকে জানোয়ারের মারতে মারতে এখান থেকে নিয়ে গিয়েছিলো। আর পরে যখন ছেলে গুলোকে পাওয়া যায় তখন ওদের সারা শরীর পুরো ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিলো । সেসব ভাবতেই ওদের শরীর শিওরে উঠলো।
সাড়িকা সাঈফাও ওদের কথা শুনে ভিষন ভয় পেয়েছে। কারন ওরা এসব বিষয়ে কিছুই জানতো না। ইনফ্যাক্ট মেঘও এই বিষয়ে কিছুই জানে না। যেদিন এই কাহিনি হয়ে ছিলো সেদিন মেঘ ভার্ষিটিতেই আসেনি। আর পরে আহির আর মিহির সবাইকে বলে ছিলো মেঘ যেনো এই বিষয়ে কিচ্ছু না জানতে পারে । যদি কেউ মেঘকে এই বিষয়ে কিছু জানায় তাহলে তাকে আর এই ভার্ষিটিতে পড়তে দেওয়া হবে না। সাড়িকা কাদতে কাদতে ফিসফিস করে সাঈফাকে বললো
“সাঈফু আমি আর এই গুন্ডাদের ভার্ষিটিতে পড়বো না । এখানের সব গুলা গুন্ডা । দরকার হলে লেখা পড়া বন্ধ করে দেবো তাও আমি আর এইখানে আসবো না । এ্যা এ্যা এ্যা এ্যা…..”
সাঈফা চোখ রাঙানি দিয়ে বললো
“এই সাড়াদিন এতো ফ্যাচফ্যাচ করে কাদবি নাতো বিরক্ত লাগে। নিজের মুখটা বন্ধ করে এখানে চুপচাপ দাড়িয়ে থাক।”
একটা ছেলে অনেকটা সাহস জুগিয়ে একটু সামনে এসে মিহির আর আহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ভাই আপনারা যেমনটা ভাবছেন এখানে তেমন কিছুই হয়নি। আমরা তো যাষ্ট ওদের সাথে একটু মজা করছিলাম ।”
ছেলেটার কথা শুনে আহির আর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। হকি ষ্টিক দিয়ে ছেলেটার পায়ের উপরে জোড়ে একটা বারি মারলো সাথে সাথে ছেলেটা একটা চিৎকার দিয়ে হাটু ভেঙে বসে পড়লো । মিহির ছেলেটার বুকে একটা লাওি মেরে বললো
“মজা করেছিস তাইনা? কোনো মেয়েদের গায়ে পানি ঢালা,, একটা রুমে বন্ধ করে অশ্লিল কথা বলা,, ইচ্ছের বিরুদ্ধে নাচতে বলা,, শরীর থেকে ওড়না হিজাব খুলে ফেলতে বলা, এইগুলো তোদের কাছে মজা মনে হয়? কোনো মেয়েদেরকে অপমান করাকে কোথাকার মজা বলে?”
আহির গিয়ে আরেকটা ছেলের পিঠের উপরে হকিষ্টিক দিয়ে আঘাত করে সেই ছেলেটা উপুর হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আহির ছেলেটার মাথার উপরে একপা দিয়ে চেপে ধরে বলে
“তোদের যদি এটা মনে হয়? আমরা এখন ভর্ষিটিতে বেশি একটা আসি না তাই এখানের কোনো খবরই রাখি না? তাহলে বলবো তোদের ভুল মনে হয় ,, আমরা এখানে আসি বা না আসি,, এই ভার্ষিটির কোথায় কি হয় সব খবর আমরা রাখি।”
তারপর আহির সেই মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো
“তোদের লজ্জা করে না তাইনা? নিজেরা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে এভাবে বাজে কথা বলছিস। ছিহ। নেহাত আমরা মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না,,নাহলে সবার আগে তোদের মতো ডাইনিদের মেরে হাত পা ভেঙে দিতাম। তবে চিন্তা করিস না তোরা যাতে এই ভার্ষিটিতে না পড়তে পারিস সেই ব্যাবস্থাই করবো।”
বলেই আহির,, মিহির আর ওদের বন্ধুরা মিলে ছেলে গুলোকে বেধড়ক মারতে লাগলো । এক পর্যায়ে ওদের মারতে মারতে ক্লাস রুম থেকে বের করে ভার্ষিটির মাঠে নিয়ে আসলো।
_________________________
ক্যান্টিনে বসে মেঘ আর দিশা পকোড়া খাচ্ছিলো আর ফোন টিপছিলো। মেঘ ফোনটা টেবিলের উপরে রেখে কপাল কুচকে বললো
“এই রিজাটা কোথায় গেলো বলতো? দশ মিনিটের কথা বলে বিশ মিনিটেও আসছে না। এতোক্ষন ওয়াশ রুমে বসে কি করে?”
দিশা মুখ থেকে একটা বিরক্তিকর চ শব্দ উচ্চারন করে বললো
“আরে ছাড়তো ওর কথা। লেইট লতিফ মেয়ে একটা । সব সময় সব কিছুতে ও লেইট করবে। কোনো জায়গায় আজ অবদি টাইম মতো পৌছাতে পেরেছে? যাহ গিয়ে দেখ হয় ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে মেকআপ করছে ,,নাহয় জিসান ভাইয়ার সাথে প্রেম করছে। আর এই জিসান ভাইয়াটাও বা কেমন সারাদিন বাসায় বসে রিজার সাথে গুজুর গুজুর ফুষুর ফুসুর করে তাও মন ভরে না । ভার্ষিটিতে এসেও এরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে প্রেম করে । আমি বুঝি না সারাদিনে এরা এতো কি কথা বলে?”
(জিসান হচ্ছে দিশার খালাতো ভাই)
মেঘ হাসতে হাসতে বললো
তোর মতো সিঙ্গেল বাচ্চারা এসব বুঝবেও না। একটা প্রেম কর তাহলে এমনিতেই জেনে যাবি সারাদিন ওরা কি কথা বলে।”
“মাফ কর বইন। যেনে শুনে বাশ খাওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। সিঙ্গেল আছি ভালো আছি। এইসব বয়ফ্রেন্ডের প্যার্যা নিতে চাই না। আর তুই এমন ভাবে বলছিস যেনো তোর প্রেম করার খুব এক্সপেরিয়েন্স আছে!”
মেঘ হাসতে হাসতে বললো
“না আমার এসব বিষয়ে কোনো এক্সপেরিয়েন্সও নাই আর ইন্টারেষ্টও নাই। আমি সব সময় করলা ভাজি আর বয়ফ্রেন্ড দুটোর থেকেই সোস্যাল ডিসটেন্স বজায় রাখি।”
দিশা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
“আমিও এই অসাস্থ্যকর জিনিস দুইটা থেকে একশো হাত দূরে থাকি। এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।”
ওদের কথার মাঝেই কোথা থেকে রিজা দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বললো
“গাইস প্লিজ তাড়াতাড়ি চল। আহির ভাইয়া, মিহির ভাইয়া, জিসান আর ওদের বন্ধুরা মিলে অর্নাস ফাইনাল ইয়ারের ছেলেদের মারছে।”
মেঘ আর দিশা বসা থেকে দাড়িয়ে একসাথে বললো
“হোয়াট!”
দিশা চিন্তিত ভঙ্গিতে জিঙ্গেস করলো
“কিন্তু কেনো?”
রিজা বললো
“আমি কিচ্ছু জানিনা। করিডোর দিয়ে এখানে তোদের কাছে আসছিলাম তখন দেখি ওরা কয়েকজন মিলে অর্নাস ফাইনাল ইয়ারের কয়েকটা ছেলেকে মারছে। কেনো মারছে আমি জানিনা।”
মেঘ বিরক্তি নিয়ে বললো
“ওদের কাউকে মারতে আবার কোনো কারন লাগে নাকি । ওরা তো যখন তখন যাকে খুশি মারে। গুন্ডার দল কোথাকার। ”
দিশা নিজের ফোনটা রিজার হাতে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে যেতে যেতে বললো
“ওহ আটআপ মেঘ! ওরা কাউকে অকারনে কখনো মারে না। নিশ্চয়ই ওই ছেলে গুলো কোনো অন্যায় করেছে তাই মারছে। আর আমরা সবাই জানি অর্নাস ফাইনাল ইয়ারের কয়েকটা ছেলে আছে যারা মাএা অতিরিক্ত অসভ্য। ভাইয়ারা ওদের মারছে তারমানে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে। এবার ফালতু কথা না বলে তাড়াতাড়ি চল ওদের থামাতে হবে।”
_________________________
মেঘ, দিশা ,রিজা এসে দেখে মিহিররা ছেলে গুলোকে মারতে মারতে প্রায় আধমরা বানিয়ে ফেলেছে। সব ষ্টুডেন্ট টিচার্সরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে মারামারি দেখছে।কেউ এসে মিহিরদের থামানোর চেষ্টা করছে না। মেঘ, দিশা গিয়ে কোনো ভাবে মিহির আর আহিরকে ঝাপটে ধরে মারামারি ধামানোর চেষ্টা করছে । মেঘ আহিরকে ধরে টানছে আর দিশা মিহিরকে ধরে টানছে ।কিন্তু ওদের শক্তির সাথে ওরা পেরে উঠছে না। রিজা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে। মারামারি থামানো তো দূরের কথা মারামারি দেখলেই ওর আত্মারাম খাচা ছাড়া হয়ে যায় । মেঘ আহির কে টানতে টানতে বললো
“ওরে আমার রাক্ষস ভাইটা থাম প্লিজ। এবার ওদের ছেড়ে দে।বেচারারা মরে যাবে তো। দেখ ওরা মরে গেলে ওদের ভবিষ্যৎ বউরা বিধবা হয়ে যাবে । ”
আহির চেচিয়ে বললো
“মেঘ ছাড় আমাকে আর যা এখান থেকে।তোর লেগে যাবে। ”
কে শোনে কার কথা মেঘ শক্ত করে ধরেই আছে। মেঘের কথা শুনে দিশার ইচ্ছে করছে মেঘকে পানিয়ে চুবানি দিতে । এরকম সিরিয়াস একটা মূহুর্তে কি সব আজাইয়া কথা বলতেছে। হঠাৎ ভার্ষিটির গেট দিয়ে দ্রুত বেগে একটা কালো রঙের গাড়ি ভিতরে ঢুকলো। গাড়িটা থামতেই ওটার মধ্যে থেকে অভি,,হিয়ান আর আহান বেড়িয়ে এলো। ওরা তিনজনই দৌড়ে মিহিরদের কাছে আসলো। আহান গিয়ে একটানে মেঘকে আহিরের থেকে ছাড়িয়ে আনলো। তারপর দিশারও হাত ধরে টান দিয়ে মিহিরের থেকে ছাড়িয়ে আনলো। আহির আর মিহির আহানদের দেখতেই মারামারি থামিয়ে ফেললো। ওদের থামতে দেখে ওদের বন্ধুরাও থেমে গেলো।
আহান দিশা আর মেঘকে ধমক দিয়ে বললো
“তোমাদের দুইজনের মাথায় কি গোবর ভরা। এই ভাবে কেউ মারামারি থামাতে যায়? যদি লেগে যেতো তখন কি হতো? কমনসেন্স নেই তোমাদের? দুইজন মেয়ে এতোগুলো ছেলেকে থামাতে গিয়েছিলে? যেখানে টিচারেরা অবদি মারামারির চারপাশেও আশে নি সেখানে তোমরা দুজন কোন সাহসে ওখানে গিয়েছিলে? কি হলো এখন চুপ করে আছো কেনো? অ্যান্সার মি?”
আহানের ধমকে দিশা আর মেঘ কেপে উঠলো। অভি ওদের কাছে এসে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো
“ওদের এসব বলে লাভ নেই । ওরা এইভাবে বুঝবে না ।দুইটাকে দুইটা দুইটা চারটা করে ঠাটিয়ে কানের নিচে দে তাহলে যদি ওদের আঙ্কেল দাত ওঠে। ইডিয়েটস কোথাকার!”
মেঘ মাথা নিচু করে আছে। দিশা বিরবির করে বললো
“ব্যাট্যা উজবুক তোকে যদি আমি দুইটা কানের গোড়ায় দেই তুই তিনদিন ননষ্টপ ফ্যানের মতো ঘুড়বি।”
“অভি ধমক দিয়ে বললো
এই মেয়ে বিরবির করে কি বলছো? যা বলার জোড়ে বলো।”
দিশা রাগি চোখে তাকিয়ে মনে মনে বললো,, তোর মাথা।#ভালোবাসার_অনূভুতি
#তানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_26
মেঘের রুমের খাটের উপর বসে প্রায় এক ঘন্টা যাবত কেদে যাচ্ছে সাড়িকা। যাকে বলে কুমিড়ের কান্না । শুধু নাক টানছে আর মুখ এ্যাএ্যাএ্যা শব্দ করছে। চোখ দিয়ে একটুও পানি পড়ছে না কিন্তু তাও বারবার ওড়নার আচল দিয়ে চোখ মোছার নাটক করছে। ওর সামনে বসে দিশা আর মেঘ সেই কখন থেকে ওর দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে। আর মাঝে মাঝে হাতে থাকা চিপসের প্যাকেট থেকে একটু দুইটা করে চিপস মুখে দিচ্ছে।ওদের দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে ওরা দিন দূনিয়া ভূলে থিয়েটারে বসে মুভি দেখছে। সাঈফা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে হাতে থাকা তোয়ালে টা ছুরে সাড়িকার মুখে মারলো। তারপর বিরক্তি কন্ঠে বললো
“এই একদম রাম ছাগলের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কাদবি না তো। কি এমন হয়েছে যে এমন মরা কান্না জুড়ে দিয়েছিস? এমন ভাবে কাদছিস দেখে মনে হচ্ছে তোর বর মারা গেছে।”
সাড়িকা তোয়ালে টা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে আরো জোড়ে ব্যা ব্যা ব্যা করে কেদে দিলো। তারপর দিশা আর মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দেখেছো আপ্পি! এই রাক্ষসিটা সব সময় আমার সাথে এমন করে। ওকে দেখে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ও ওই আহিরের বাচ্চার ফিমেল ভার্ষন। দুইটাই একদম একরকম । সব সময় আমার পিছনে লাগা ছাড়া এদের আর কোনো কাজ নেই ।”
সাঈফা তেড়ে গিয়ে বললো
“সাড়িকার বাচ্চা একদম বাজে বকবি না । আমার আর আহির ভাইয়ার নামে উল্টাপাল্টা কিছূ বললে মেরে তোর দাত ভেঙে দিবো। গবেট কোথাকার।”
সাড়িকা আবারও জোড়ে ব্যা করে কেদে দিয়ে বললো
“ওরে বাবাগো এই মেয়ে ওই গুন্ডাদের ভার্ষিটিতে যেতে যেতে নিজেও গুন্ডা হয়ে গেছে । আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছে। ওরে এবার থেকে তো আমার নিজের ঘড়ে থাকতে হলেও সাথে বডিগার্ড রাখতে হবে। বলা তো জায়না কখন মেরে উপরে পাঠিয়ে দেয়। ”
“শাটআপ! গবেট একটা। ইচ্ছে তো করছে তোকে ব্যালকনি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই। সারাক্ষন শুধু সিরিয়ালের ন্যাক্যা নাইকাদের মতো ন্যাক্যা কান্না কাদে। ধ্যাত আমি এই রুমেই থাকবো না। এর এই ফ্যাচ ফ্যাচানি আমার একদম দেখতে ইচ্ছে করছে না।”
বলেই সাঈফা রুম থেকে গটগট করে বড়িয়ে গেলো। সাড়িকা আরো জোড়ে ব্যা ব্যা করে কেদে দিলো। তারপর দিশা আর মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা দুজন ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সাড়িকা বললো
“এতো বড় হা করে আছো কেনো ? মুখটা বন্ধ করো নাহলে মশার পুরো গুষ্টি তোমাদের মুখের মধ্যে ঢুকে যাবে। ”
দিশা একটা চিপস মুখে ঢোকাতে ঢোকাতে বললো
“বইন তোর এই ব্যা ব্যা শোনার চেয়ে মশা খেয়ে মরে যাওয়া ভালো। তোর এই বেশুরো গলার চিৎকার শুনতে শুনতে আমার কানের পার্সপাতি সব ঢিলা হয়ে গেছে বিশ্বাস কর।”
সাড়িকা নাক টেনে টেনে বললো
“তুমিও আমাকে এই ভাবে বলতে পারলে আপুই । অবশ্য বলবে নাই বা কেনো,, তুমি আমার কষ্টটা কি বুঝবে বলো। জানো তখন গালটা আহির ভাইয়া যেভাবে চেপে ধরেছিলো মনে হচ্ছিলো আমার দাত গুলো খুলে এখনি হাতে চলে আসবে । ইনফ্যাক্ট দুইটা দাত এখনো ঠকঠক করে নড়ছে । যদি আমার দাত দুটো পড়ে যায় তাহলে কি হবে ? আমাকে নিশ্চয়ই দেখতে একদম বুড়ি বুড়ি লাগবে। আমাকে আর কেউ বিয়েও করবে না।”
সাড়িকার কথা শুনে মেঘ আর দিশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। মেঘ অবাক কন্ঠে বললো
“তারমানে তুই এতোক্ষন কাদছিলি তোর দাত না থাকলে, বিয়ে হবে না তার জন্য ! আর আমরা এক ঘন্টা যাবত কতো কি ভেবেছি। বেয়াদপ মেয়ে তোর বিয়ে করার শখ আমি সারা জিবনের জন্য গোচাচ্ছি। দিশা ষ্ট্রোর রুম থেকে আমাদের আতুর টা নিয়ে আয় তো। আজকে আমি ওর সব দাত আতুর দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিবো।”
মেঘের কথাটা বলতে দেরি হয়েছে,, কিন্তু সাড়িকার পালাতে দেরি হয়নি। সাড়িকা সোজা খাট থেকে নেমে এক দৌড়ে রুমের বাইরে চলে গেছে।
_________________________
দুপুর আড়াইটার দিকে মিড়া রহমান সবাইকে খাওয়ার জন্য নিচে ডাকলেন। ওনি আজকে হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় এসে পড়েছেন। কলেজের প্রিন্সিপাল ওনার কাছে ফোন দিয়ে আহির মিহিরদের মারামারি খবরটা দেন । ওনি কি করবেন বুঝতে না পেরে দ্রুত আহানকে ফোন দেন। আহান,, হিয়ান,, অভি তিনজন একসাথেই ছিলো। ওদের কাছে ফোনটা আসার সাথে সাথে ওরা দ্রুত ভর্ষিটির উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়ে। তারপর ওখানের ঝামেলা মিটিয়ে সবাই সোজা এই বাড়িতে চলে এসেছে। আর ওদের আসার কথা শুনে মিরা রহমানও বাড়িতে চলে এসেছেন,,সাথে জোড় করে মোনা খানকেও নিয়ে এসেছেন। আহাদ খান আর আজম রহমান এখনো মারামারির বিষয়ে কিচ্ছু যানে না। আর জানলেও কিছু বলবে না। কারন আহির আর মিহির হচ্ছে বিশ্ব ঘাড়ত্যাড়্যা ওদের সারাদিন গালি দিলেও তাতে ওদের কিচ্ছু আসে যায় না। উল্টে ওদের বেশি গালি দিলে ওরা বেশি ক্ষেপে যায়। আর যেগুলো মানা করা হয় সেগুলো আরো বেশি বেশি করে ।
সবাই এসে একসাথে খাবার টেবিলে বসলো। একপাশে আহান, অভি, সাড়িকা ,সাঈফা , হিয়ান বসেছে। আরেক পাশে দিশা , মেঘ, মিহির, আহির বসেছে। মিড়া রহমান আর মোন খান দাড়িয়ে দাড়িয়ে সার্ভ করছেন। মেঘ খেতে খেতে হঠাৎ অনুভব করলো ওর পায়ে কেউ শ্লাইড করছে। আচৎমকা এমনটা হওয়ায় ওর বিষম লেগে গেলো। ও তাড়াতাড়ি একগ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওর মাথায় রাগ উঠে গেলো। কারন ওর ঠিক সামনে টেবিলের ওপর পাশের চেয়ারে আহান বসে আছে। মেঘ বুজলো এটা আহানের কাজ। তবে আহানের ফেইজ রিয়্যাকশন একদম শান্ত। ও চুপচাপ মাথা নিচু করে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে।
মেঘ মনে মনে বললো,, ব্যাট্যা চিন্দি চোর তোর এতো বড় সাহস তুই আমার সাথে অসভ্যতা করিস? আমাকে কি তোর ওই বিদেশি ছ্যাচরা গার্ল ফ্রেন্ডদের মতো মনে হয় ? ইচ্ছে তো করছে তোকে ঝোলের বাটিতে চুবিয়ে মারি। বাট আফসোস তোর মতো একটা হাতিকে ওতোটুকু একটা বাটিতে ধরবে না। দাড়া দেখাচ্ছি মজা আমার সাথে লুচুগিরি করার ফল হারে হারে টের পাবি । বলেই মেঘ ওর ফোনটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে হাতে নিলো। তারপর ফোনের ক্যামেরাটা অন করে খুব সাবধানে সেটাকে টিবিলের নিচে ধরলো। মেঘকে এভাবে ক্যামেরা অন করে টেবিলের নিচে ধরতে দেখে দিশা মেঘের কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো
“ওই কি করছিস এসব। হঠাৎ ক্যামেরা অন করে টেবিলের নিচে ধরলি কেনো।”
মেঘ ফিসফিস করে বললো
“চুপকর ভিডিও করছি।”
“তা টেবিলের নিচে কার ভিডিও করছিস শুনি?তোর জামাইয়ের?”
“চুপ কর তো,, শান্তি তে কাজটা করতে দে।”
দিশা বিরক্ত হয়ে বললো
“আরে ধুর কি করছিস বলবি নাকি সবাইকে তোর এই আজগুবি কান্ডের কথা বলে দিবো।”
মেঘ ফিসফিসিয়ে ঝাড়ি দিয়ে বললো
“ওই আহানের বাচ্চা আমার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আমি এখন ওর ভিডিও করে সবাইকে দেখাবো। সবাই ওকে সব সময় খুব আদর্শ ছেলে ভাবে তাইনা? আজকে দেখুক তাদের আদর্শ ছেলে কতোটা অসভ্য। ”
“হোয়াট! তুই এই সব ভিডিও সবাইকে দেখাবি? তোর মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি? সবাই কি ভাববে বলতো? ”
“শাটআপ নিজের মুখটা বন্ধ রাখ। নাহলে লাওি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দিবো।”
খেতে খেতে হঠাৎ আহানের অবচেতন মন বললো ওর দিকে কেউ তাকিয়ে আছে। ও খাওয়া বন্ধ করে সামনে তাকাতেই দেখলো মেঘ ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে আহানকে হাতের কাছে পেলে এখনি কাচা চিবিয়ে গেয়ে ফেলবে। হঠাৎ মেঘের এমন আজব রিয়্যাকশন দেখে আহান বোকা বনে গেলো। ও ড্যাবড্যাব করে মেঘের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে মেঘ হঠাৎ কেনো এভাবে রেগে গেলো?
মেঘ আহানের এমন ইনোসেন্ট লুক দেখে মনে মনে বললো এ্যাহ ভাব দেখো,,, দেখে মনে হচ্ছে যেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা।সব সময় সবার সামনে একটা ইনোসেন্ট ভদ্র লুক নিয়ে থাকা তাইনা।আজকে সবার সামনে আপনার সেই ইনোসেন্ট সেজে থাকার মুখসটা খুলে ফেলবো। সবাইকে বলবো আপনি কতো বড় নাটকবাজ।বলতে বলতে মেঘ ওর ফোনটা হাতে নিয়ে ভিডিওটা সেইভ করে আবার প্লে করলো। সাথে সাথে মেঘের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। দিশা ভিডিওটার দিকে তাকাতেই শকড খেলো। ওরা দুজন হা করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। দিশা অবাক কন্ঠে আস্তে করে বললো
“ওই এটা তো আহান ভাইয়ার পা নয়। দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো মেয়েদের পা। পড়নে লাল প্লাজো পড়া। ”
“হ্যা ইয়ার এটা তো কোনো মেয়েদের পা। কিন্তু কা—-”
কথাটা শেষ করার আগেই মেঘের চোখ যায় আহানের পাশে বসে থাকা সাঈফার দিকে। সাঈফা মিহিরের দিকে তাকিয়ে ব্লাশিং হচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে। কিন্তু মিহিরের সেই দিকে বিন্দু মাএও খেয়াল নেই ।ও নিজের মতো করে খাওয়ায় ব্যাস্ত। মেঘকে সামনের দিকে ওভাবে তাকাতে দেখে দিশাও মেঘের দৃষ্টি অনুষরন করে সামনে তাকালো। তাকিয়েই ও যা বোঝার বুঝে গেলো। দিশার ইচ্ছে করছে এখানে হেসে গড়াগড়ি খেতে। মেঘের ইচ্ছে করছে সাঈফাকে মাথায় তুলে একটা আছাড় মারছে। দিশা কোনো রকম হাসি আটকে সাড়িকার দিকে তাকিয়ে বললো
“সাড়িকা যদি কেউ চোর ধরতে গিয়ে নিজেই রাম ছাগলে প্রমানিত হয় তখন বিষয়টা কেমন হয় বলতো ?”
এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে সবাই সবার কাজ করছিলো। দিশার কথা শুনে সবাই দিশার দিকে তাকালো। কিন্তু কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না। মেঘ দাতে দাত চেপে সাঈফার দিকে তাকিয়ে সাড়িকাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“সাড়িকা,, যদি কেউ ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মেইল আর ফিমেইলের মধ্যে গুলিয়ে ফেলে তো?”
মেঘের কথাটা আর কেউ বুঝতে না পারলেও সাঈফা ঠিকই বুঝতে পারলো। ও তাড়াতাড়ি নিজের পা মেঘের পায়ের উপর থেকে সড়িয়ে আনলো। তারপর চোখ মুখ খিচে ছোট্ট করে দাত দিয়ে জিভ কাটলো।
আর মনে মনে বললো যদি কেউ ক্রাশকে ছেড়ে ক্রাশের বোনের পায়ে শ্লাইড করে তো? এই জন্যই তো বলি গবেটটার কোনো রিয়্যাকশন নেই কেনো। আর পা টাও বা এতো নরম নরম লাগছে কেনো? এবার কি হবে আমি কিভাবে আপিকে ফেইজ করবো? আল্লাহ মাফ করো।
সাড়িকা কনফিউশন হওয়া কন্ঠে দিশা আর মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আপিরা,, যদি কেউ দুই ফ্রেন্ডের কোড ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝতে না পারে তো? তোমার কি বলছো সব আমার মাথার এক হাত উপর দিয়ে চলে গেছে।”
মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“যে বোঝার সে ঠিকই বুঝেছে তাইনা রে সাঈফা?”
সবাই বোকার মতো মেঘ, দিশা, সাড়িকা আর সাঈফা কে দেখছে।
চার জনের ফেইজের এক্সপ্রেশন চার রকমের।সাঈফা অপরাধি ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে আছে। মেঘ রেগে বোম হয়ে সাঈফার দিকে তাকিয়ে আছে।দিশা কোনো রকম নিজের হাসি চেপে রেখে মেঘকে দেখছে। সাড়িকা কনফিউশন হয়ে হা করে মেঘ আর দিশার দিকে তাকিয়ে আছে।
_________________________
মেঘের রুমের ফ্লোরে বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সাড়িকা আর দিশা। ওরা কোনো রকম খেয়ে চারও জন উপরে চলে এসেছে। উপরে এসে যখন দিশা সাড়িকাকে সবটা বলেছে বেচারি তখনই হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়েছে । এখন দুইজন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাঈফা মাথা নিচু করে বসে আসে। মেঘ গিয়ে সাঈফা কে ধমক দিয়ে বললো
“এই তোর কমন সেন্স নেই ? এতো বড় হয়ে গিয়েছিস অথচ কোনটা মিহির ভাইয়ার পা,, আর কোনটা আমার পা,, তার মধ্যে তফাৎ খুজে বের করতে পারিস না?”
সাঈফা মাথা নিচু করে বললো
“সরি আপি ভুল হয়ে গেছে।”
“যদি কানের গোরায় একটা দেই তাহলে পরের বার থেকে আর ভূল হবে না।”
সাঈফা বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললো
“না আপি মেরো না প্লিজ।আর এই ভূল হবে না। ইনফ্যাক্ট আমি আর কারো পায়ে কখনো শ্লাইডই করবো না। শুধু তাই নয় আমি আর তোমার ভাইয়ের উপর ক্রাশই খাবো না। দরকার হলে জিবনে কোনোদিন বিয়েই করবো না। তাও আমার মতো নিষ্পাপ বাচ্চাকে মেরো না।”
“এই বারের মতো ছেড়ে দিলাম । পরের বার একই ভুল করলে একটা আছাড় দিবো। একবার ভেবে দেখেছিস আজকে আমার জায়গায় যদি বড়রা কেউ থাকতো তখন কি হতো?”
“সরি আপি।”
“ইটস ওকে।”
বলেই মেঘ রুম থেকে হনহন করে বিরিয়ে গেলো। রুমের বাইরে এসেই ও ফিক করে হেসে দিলো। প্রথমে আহান করেছে এটা ভেবে মেঘের রাগ রাগলেও পরে সাঈফা করেছে এটা জেনে ওর খুব হাসি পাচ্ছিলো। এতোক্ষন অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে মুখৈ একটা সিরিয়াস ভাব এনে রেখেছিলো।মেঘ হাসতে হাসতে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। হঠাৎ কেউ এসে মেঘের দুইপাশে হাত রেখে মেঘকে আটকে দিলো। মেঘ তাকিয়ে দেখলো আহান। আহানকে দেখেই মেঘের হাসি পালিয়ে গেলো। আহান একটু মেঘের দিকে ঝুকে বললো
“তখন ওভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে কেনো?”
মেঘ কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“ক-কখন?”
“একটু আগে খাবার টেবিলে বসে। ”
মেঘ একটা জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে বললো
“কই না তো! আপনার নিশ্চয়ই কোথায় ভূল হচ্ছে।”
আহান মেঘের দিকে আরেকটু ঝুকে বললো
“ওমা তাই নাকি? আমার বুঝতে ভূল হচ্ছে? কেনো এমন ভূলটা হলো বলোতো? আমার কেনো মনে হলো তুমি আমার দিকে রাক্ষসির মতো তাকিয়ে আছো? ”
মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“কি আমি রাক্ষসির মতো তাকিয়ে ছিলাম? আপনি আমাকে রাক্ষসি বললেন? আমি যাষ্ট একটু খানি রেগে তাকিয়ে ছিলাম তাতেই আপনার আমাকে রাক্ষসি মনে হচ্ছে?”
আহান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো
“হেই কাম ডাউন মাই এ্যাংড়ি বার্ড। আমি তো তোমাকে রাক্ষশি বলিনি। আমি বলেছি আমার কেনো মনে হলো তুমি আমার দিকে রাক্ষসীর মতো তাকিয়ে ছিলে। এনি ওয়ে সব তো নিজের মুখেই গড় গড় করে বলে দিলে। এবার রেগে কেনো তাকিয়ে ছিলে সেটা বলো।”
মেঘের ইচ্ছে করছে দেয়াদের সাথে বাড়ি দিয়ে নিজের মাথাটাকে ফাটিয়ে ফেলতে। ও মনে মনে বললো,,, গরু,,গাধি,, আহমোক কি করে ভূলে গেলি ইনি আহান খান। মানুষকে কথার জালে ফাসানো এনার বাম হাতের খেল। ইনি চোখের নিমিষেই যে কাউকে বোকা বানিয়ে ফেলতে পারে। সেখানে তুই তো এনার কাছে পানি ভাত।
আহান মেঘের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো
“কি হলো কোন ভাবনায় ডুবে গেলে। বলো কেনো আমার দিকে রেগে তাকিয়ে ছিলে। তাড়াতাড়ি বলো নাহলে সেদিনের মতো কিস করবো। ”
আহানের কথা শুনে মেঘ ভয় পেয়ে গেলো। ও হাত দিয়ে নিজের ঠোট চেপে ধরলো। আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“হাত দিয়ে ঠোট চেপে ধরলে কিছুই হবে না। সত্যি কথাটা বলো তাহলে এমনিতেই ছেড়ে দিবো।”
মেঘ কিছু না বলে শক্ত করে ঠোট চেপে ধরে রেখেছে।আহান মেঘের হাত দুটো দেয়ালে চেপে ধরলো।
“বুঝেছি তুমি ভালো কথার মেয়ে না। তোমাকে ভালোভাবে জিঙ্গেস করলে তুমি এমনিতেও বলবে না।”
বলেই আহান নিজের মাথাটা মেঘের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। মেঘ আহানকে নিজের দিকে ঝুকতে দেখে ভয়ে গরগর করে বললো
“সাঈফা মিহির ভাইয়াকে ভেবে আমার পায়ে শ্লাইড করছিলো আর আমি ভেবে ছিলাম ওটা আপনি ছিলেন। তাই ভিডিও করে সবাইকে দেখাতে চেয়ে ছিলাম আপনি একটা ক্যারেক্টার লেস ছেলে।”
আহান মেঘকে ছেড়ে দিয়ে চেচিয়ে বললো
“হোয়াট!”
চলবে,,,,,,
#চলবে,,,,,,,