ভালোবাসার অনুভূতি পর্ব -২৭+২৮

#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ27

আহান মেঘকে ছেড়ে দিয়ে চেচিয়ে বললো

“হোয়াট!”

আহান এতো জোড়ে কথা বলায় মেঘ ভয় পেয়ে গেলো। ও কাচুমাচু করে নিজের মাথাটা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো। আহান কিছুক্ষন মেঘের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হাহাহা করে হেসে দিলো। আহানকে এভাবে হাসতে দেখে মেঘ ভ্রু কুচকে আহানের দিকে তাকালো । ও বুঝতে পারছে না হঠাৎ এমন হাসার কি আছে। আহান মেঘের কাছে গিয়ে আবারও দেয়ালের দুইপাশে হাত রেখে একটা ঝুকে বললো

“তুমি আমাকে সবার সামনে ক‍্যারেক্টারলেস প্রমান করতে চেয়েছিলে? তাও আবার তোমার পায়ে শ্লাইড করেছি সেটা ভেবে? আবার ভিডিও করেছো? তোমাকে নিয়ে আর পারা গেলো না? ভেবে ছিলাম বড় হয়ে গেছ,, কিন্তু না এখনো সেই পিচ্চিই আছো!”

মেঘ বোকার মতো চাহনি দিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহান মেঘের নাক টিপে দিয়ে বললো

“ওরে পিচ্চি সেদিন রির্সোটে তুমি আমাকে কি বলেছিলে মনে আছে? যখন তুমি আমাকে সহ‍্য করতে পারো না,, তাও আমাকে এতো বিশ্বাস করো, তাহলে ভাবো যারা আমাকে ভালোবাসে তারা আমাকে কতোটা বিশ্বাস করে। আর তুমি আমাকে ক‍্যারেক্টারলেস প্রমান করার জন‍্য যে ভিডিওই দেখাও না কেনো কেউ বিশ্বাস করবে না ।উল্টৈ সবাই ভাববে,, ওইগুলো তুমি এডিট করে এনেছো। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি আমার সাথে নিচে চলো,, ওখানে গিয়ে সবাইকে তোমার যা খুশি আমার নামে বলতে পারো। আর আমিও তুমি যা বলবে তাই স্বীকার করে নিবো ।তাও দেখবে তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।”

মেঘ গাল ফুলিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো ।কারন মেঘ নিজেও জানে যে আহানের ব‍্যাপ‍্যারে বাসার কেউ কোনো উল্টাপাল্টা কিছু বিশ্বাস করবে না।সবাই আহান কে চোখ বন্ধ করে ভরষা করে। আহান মেঘের দিকে আরেকটু ঝুকে ওর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো

“আরেকটা কথা কি জানো মেঘ পড়ি? তুমি কষ্ট পাও বা সবার সামনে লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে পড় এমন কাজ আমি কখনো করবো না। তোমাকে কক্ষনো কারো সামনে ছোট হতে দেবো না। এতোদিন যেভাবে দূরে থেকেও তোমাকে আগলে রেখেছি এখনও ঠিক সেভাবেই আগলে রাখবো। তোমার গায়ে কেউ একটা আচোড়ও দিতে পারবে না।”

বলেই আহান মেঘের ঘাড়ে মুখ খুজলো। তারপর শক্ত করে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে নিলো।মেঘ চোখ বন্ধ করে জামার দুই কোনা খামচে ধরে মুঠোবন্ধি করে আছে। ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করছে,, নিশ্বাস দ‍্রুত উঠানামা করছে। আহান বারবার আলতো করে মেঘের ঘাড়ে ,,গলায়,, কানের লতিতে ঠোট ছোয়াচ্ছে। আহানের ঠোট যতোবার মেঘের শরিরকে স্পর্শ করছে মেঘ ততোবারই কেপে কেপে উঠছে। লজ্জা,, ভয় ,,ভালো লাগার সংমিশ্রন একটা অনূভুতি কাজ করছে ওর মনে। ও জানে না,,এই অনূভুতিকে কি নাম দিবে? আর জানতেও চায় না। শুধু জানে আজ কাল এই লোকটাকে বড্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। মনে হয় এই পৃথিবীতে যদি কারো কাছে মেঘ সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকে তাহলে সে হচ্ছে আহান। কেনো এরকম মনে হয়? কেনো এই লোকটার প্রতি এমন অদ্ভুত অনূভুতি কাজ করে? কিচ্ছু জানে না । তবে মেঘ এই অনুভূতি গুলোকে মনের মাঝে প্রশয় দিতে চায় না। এই পৃথিবীর মানুষ গুলো যে বড্ড সার্থপর। এরা মুখে সবসময় বিশ্বাস আর ভালোবাসার কথা বললেও সময় আসলে ঠিক ইউজ করা টিস্যুর মতো ছুড়ে ফেলে দেয়। যেমনটা জেড়িন করেছিলো। নিজের সার্থের জন‍্য একমাএ বেষ্ট ফ্রেন্ড, বোনকে সবার সামনে ক‍্যারেক্টারলেস বানিতেও দ্বিতীয় বার ভাবেনি ।চার বছর আগের মতো আরেক বার কাউকে বিশ্বাস করে ঠকতে চায় না ও। একবার যে যন্ত্রণা সহ‍্য করেছে আরেকবার সেই যন্ত্রণা সহ‍্য করার ক্ষমতা ওর মধ‍্যে অবসিষ্ট নেই ।নিজের লোক গুলো যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন যে খুব কষ্ট হয়। ইচ্ছে হয় নিজের শরীরটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর হাতিয়ারটা দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে নিজেকে একটা কঠিন শাস্তি দিতে ।

এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আহান ওর বুকে ভেজা কিছু অনুভব করতেই মুখ তুলে মেঘের দিকে তাকালো। তাকিয়েই দেখলো মেঘের চোখ থেকে অর্নরগল পানি পড়ছে । ও চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে রেখেছে। আহান দ্রুত মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো। তারপর হন্তদন্ত হয়ে বললো

“সরি! সরি! সরি! আ’ম সো সরি মেঘ পরি! আমি বুঝতে পারিনি ,আমি তোমাকে টাচ করায় তুমি এতোটা কষ্ট পাবে। প্লিজ কেদো না। আর এমনটা হবে না। আমি আর কখনো তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে টাচ করবো না। দরকার হলে আমি তোমার আশে পাশেই কখনো আসবো না । তাও তুমি এভাবে কেদো না প্লিজ। কান্না বন্ধ করো আমি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাচ্ছি । মেঘ আমি তোমার থেকে সাড়া জিবন দূরে থাকতে রাজি আছি কিন্তু আমি কাছে আসায় তোমার চোখ থেকে যদি এক ফোটা পানিও ঝড়ে তাহলে আমি সেটা সহ‍্য করতে পারবো না। দরকার হলে তোমার খুশির জন‍্য সারা জিবনের মতো তোমায় ছেড়ে দূরে চলে যাবো।”

বলেই আহান মেঘকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে দ্রুত বেগে চলে গেলো। একবারের জন‍্যও পিছনে ফিরলো না। ফিরলে হয়তো ওর চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মেঘ দেখে নিতো।

মেঘ বোকার মতো আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। কি ভেবে কাদছিলো আর আহান কি বুঝে চলে গেলো।
_________________________

সন্ধ‍্যার পর সবাই মেঘদের বাসার ছাদের চেয়ার টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। এখানে আহান, অভি, হিয়ান, আহির, মিহির, সাড়িকা,সাঈফা, আলিশা সবাই আছে। আজকে সবাই মিলে ডিসিশন নিয়েছে ওরা সবাই এই বাড়িতেই থাকবে। বিকালে হিয়ান গিয়ে আলিশাকেও এখানে নিয়ে এসেছে । আহাদ খানও অফিস থেকে সোজা রাতে এখানেই ফিরবেন। মেঘ আর দিশা উপরে ছাদে নেই । ওরা দুজন নিচে মোনা খান আর মিরা রহমানকে স্নাক্স বানাতে হেল্প করছে। আহান এক পাশে মন খারাপ করে বসে ফোন টিপছে। ওর চেহারায় প্রতিদিনের মতো হাসি খুশি উচ্ছ্বাস ভাবটা নেই। ও দুপুরে তখনই এই বাসা থেকে চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মিরা রহমান অনেক বকাঝকা করে জোড় করে ওকে এখানে রেখে দিয়েছেন। আহির আর মিহির দুইজনের হাতে দুইটা গিটার ।ওরা মাঝে মাঝে গিটার দিয়ে টুং টাং শব্দ করছে আর এক কলি, দুই কলি, গান গাইছে। আহির গিটার নিয়ে নাড়তে চাড়তে হঠাৎ চোখ গেলো আহানের দিকে। দেখলো আজকে আহানকে কেমন বিষন্ন লাগছে। আহির একটু মজার ছলে বললো

“ব্রো কি খবর? এমন দেবদাসের মতো বসে আছো কেনো? কোন পারু তোমায় ছ‍্যাক‍্যা দিয়ে গেলো।”

আহান কপাল কুচকে বিরক্তি ভঙ্গিতে আহিরের দিকে তাকিয়ে বললো

“ফালতু কথা না বকে যা করছিলিস তাই কর ।”

আহির মুখটা একটু সিরিয়াস করার ভান করে বললো

“ওকে! গাইস আমি কি যেনো করছিলাম? হ‍্যা গান গাইছিলাম। তো আমি এখন একটা গান গাইবো। গানটি লিখেছে আহির। সুর করেছে আহির । আর গাইবেও আহির। কিন্তু গানটা ডেডিকেটেড করবো আমার দেবদাস ব্রো কে। তাহলে শুধু করা যাক,,,,,,”

ওওওও আহান ভাইয়ায়ায়ায়ায়া,,, তোমাকে ছ‍্যাক‍্যা দিলো একটা অর্নাস থার্ড ইয়ারের মাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া,,,,

আহির গানটা এতোটাই বেশুরো গলায় গাইলো যে সাড়িকার হাত থেকে ওর ফোনটা ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো। আহান একটা ধমক দিয়ে বললো

“শাটআপ! কি ছাগলের মতো ব‍্যা ব‍্যা করছিস । আর এটা গান? মনে হচ্ছে মাথার উপর 1844 সালের ফ‍্যান ঘুড়ছে ।”

আহির একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো

“ওহ পছন্দ হইনি তাহলে আরেকটা শোনাচ্ছি,, ওয়েট।”

বলেই আহির আবারো বেশুরো গলায় গাইলো

“ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া রেএএএ,,,
তুমি গেলা দেবদাস হইয়া রেএএএ,,,,

দেবদাস হইয়া তুমি তুমি আছো ছ‍্যাক‍্যা খোরদের মতো বইয়া রেএএএএএএএ,,,,”

আহিরের এমন ক‍্যাবলা কান্ত মার্কা গান শুনে সবাই হাহা করে হেসে দিলো। আহান বসা থেকে দাড়িয়ে একটা চেয়ার উপরে লাওি দিয়ে ফেলে দিলো।

“ধ‍্যাত তোদের এসব ফালতু কথা শোনার জন‍্য আমার হাতে টাইম নাই । আমি আসছি।”

বলেই আহান যেতে নিলেই অভি আহানের হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো

“আরে ধুর বসতো । ও তোর সাথে যাষ্ট একটু মজা করেছে।”

“তোরা জানিস না?আমার এই ধরনের মজা একদম পছন্দ নয়।”

বলেই আহান অভির হাত ছাড়িয়ে যেতে নিলো । কিন্তু অভি ওকে টেনেটুনে জোড় করে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিলো। আহির এবার সিরিয়াস মুখ করে বললো

“সরি ব্রো। আর এমন হবে না। তুমি বসো প্লিজ”

আহিরের কথা শুনে আহান কিছু না বলে আবার গম্ভির মুখে বসে ফোন টিপতে লাগলো। অভি কথা ঘোড়াতে আলিশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“এই পেত্নি তুই এখানে বসে আছিস কেনো ? যা নিচে যাহ। এটা না তোর আরেকটা শশুর বাড়ি? এখানে এসে তুই কাজ না করে আড্ডা মারছিস? তোর মতো ছেলের বউকে তো চুল ধরে দেওয়া উচিৎ । বাড়ির মেয়েরা কাজ করছেন আর উনি এসে এখানে বসে গপ্প গিলছেন।”

আলিশা একটু ইতস্তত করে বললো

“আসলে ভাইয়া আমি কিচেনে আন্টিদের হেল্প করতে গিয়েছিলাম । কিন্তু আন্টিরা আমাকে ধমক দিয়ে এখানে পিঠিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন আমি নাকি ওনাদের বাড়ির বউ না মেয়ে হই । তাই ওনারা যতোদিন বেচে আছে ততোদিন আমাকে কোনো কাজ করতে দিবেন না।”

অভি মুখ বাকিয়ে বললো

“আন্টিরা বললো আর তুই চলে আসলি? নেহাত ওনারা ভালো শাশুরি তাই তোকে কিছু বলে না। অন‍্যকেউ হলে না,,,, তোকে দিয়ে ঘর ঝাট দেওয়ানো থেকে শুরু করে বাসন মাজা পযর্ন্ত সব করাতো। আর তোর মতো কাম চোর বউদের জন‍্য তো সিরিয়ালের জল্লাদ শাশুরিদের লাগবে। যারা উঠতে বসতে বাড়ির বউদের চুল ধরে পেটায়। ”

অভির কথায় আলিশার চেহারাটা মন খারাপের অন্ধকার মেঘে ঢেকে গেলো। অভি ধমক দিয়ে বললো

“কিরে এখনো এখানে বসে আছিস কেনো? যাহ এখান থেকে।”

আলিশা চেয়ার থেকে উঠে যেতে যাবে তার আগেই ছাদের দরজা দিয়ে দিশা ঢূকতে ঢুকতে বললো

“কাউকে কোথাও যেতে হবে না।”

দিশা এসে হাতে থাকা স্নাক্সের ট্রে টা টেবিলের উপরে রাখলো। ওর পিছনে পিছনে মেঘও আসলো। মেঘের হাতেও একটা নাস্তা ভর্তি ট্রে। ওর সাথে দুইজন সর্ভেন্ট মহিলা ওনারা এসে হাতে থাকা ট্রে গুলো একে একে টেবিলের উপরে রেখে নিচে চলে গেলেন।মেঘও ওর হাতের ট্রে টা টেবিলে রেখে সবাইকে খাবার সার্ভ করতে লাগলো। দিশা অভির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ব‍্যাঙ্গ করে বললো

“মিঃ অভি,, বাড়ির বউ হলেই যে তাকে বাড়ির সব কাজ করতে হবে এই কথা আপনাকে কে বলেছে। আপনার কথা বার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে আপনি সিরিয়ালের সাশুরিদের চেয়েও ভয়ংকর । আপনাকে যদি মেকআপ আর সাড়ি চুড়ি পড়িয়ে জল্লাদ শাশুরির এ‍্যাক্টিন করানো হয় তাহলে তো আপনি অস্কার পাবেন।”

দিশার কথা শুনে সবাই হাহা করে হেসে দিলো। অভি রাগি কন্ঠে বললো

“ইউ মিস বিষা তোমাকে তো আমি——-”

অভি কথার মাঝেই দিশা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো

“ইমহুহ বিষা না ওটা দিশা হবে। পরেরবার থেকে যদি আমাকে বিষা ডেকেছেন তো আপনার গায়ে আমি সত‍্যি সত‍্যি বিষা ছেড়ে দিবো।”

দিশার কথা শুনে আরেক দফা হাসির রোল পড়ে গেলো। হিয়ান মিহিরের হাত থেকে গিটার টা নিয়ে দিশার হাতে দিয়ে বললো

“দিশা তুমি নাকি খুব ভালো গান গাও। নাও একটা গান গেয়ে শোনাও।”

অভি মুখ বাকিয়ে বললো

“হুহ ও আবার গান জানে নাকি? ”

দিশা অভিকে একটা ধমক দিয়ে বললো

“ইউ ভাংগা টেপ রেকর্ডআর নিজের মুখটা বন্ধ রাখুন। দিশা কি জানে আর কি জানৈ না,,,সেই বিষয়ে আপনার বিন্দুমাত্রও ধারনা নেই।”

হিয়ান বিরক্তি হয়ে অভিকে উদ্দেশ‍্য করে বলল

“এই তুই থামবি নাকি তোকে পুলের মধ‍্যে নামিয়ে দুইটা চুবান দিবো।”

“ওকে আর কিছু বললাম না।”

বলেই অভি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। হিয়ান দিশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“দিশা শুরু করো ।”

দিশা গিটার টা হাতে নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো

ভাইয়া আমি নাহয় অন‍্য কোনো একদিন শোনাবো।আজ মেঘ গান গেয়ে আপনাদের শোনাবে। দিশার কথায় সবাই অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকালো।আহানও ফোন থেকে চোখ তুলে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালো। সবাই শুধু ইচ্ছুক দৃষ্টিতে মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে। যেই মেয়েকে এই চার বছরে কখনো গুনগুন করতেই শোনা যায়নি সে নাকি আজকে গান গাইবে। এটাও কি কখনো সম্ভব? মেঘ অবাক কন্ঠে বললো

“আমি গান গাইবো মানে কি?”

দিশা বললো

“মানে তুই এখন আমাদের গান গেয়ে শোনাবি।”

“পাগল হয়েছিস নাকি ? আমি গান গাইতে পাড়ি না।”

“মেঘ তুই না কখনো মিথ‍্যা কথা বলিস না?তাহলে কেনো বলছিস তুই গান পাড়িস না?”

মেঘ বিরক্ত কন্ঠে বললো

“আরেহ ধুর কবে না কবে গান গেয়েছি,,ওই গান এখনো মনে আছে নাকি? আর এতো বছর কোনো রেওয়াজ করিনি এখনতো মনে হয় সুর তাল সব গুলে খেয়ে ফেলেছি। ”

দিশা মেঘের দিকে তাকিয়ে ম্লানো হেসে বললো

“মানুষ নিজের কাজকে ভুলে যেতে পারে কিন্তু প‍্যাশন কখনো ভুলে না। গান গাওয়া তোর প‍্যাশন ছিলো তুই ওটা শখের জন‍্য গাইতি। তাই তুই জিবনেও সুর তাল গুলিয়ে ফেলবি না । একবার চেষ্টা কর দেখবি ঠিক গাইতে পারবি।”

“না ইয়ার আমার দ্বারা গানটা আর হবে না।”

বলেই মেঘ হাতে থাকা গিটারটা ফ্লোরে রেখে চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লো।

আহান বসা থেকে দাড়িয়ে তাছ‍্যিল‍্য ভরা কন্ঠে বললো

“ছাড়ো দিশা ওকে বলে লাভ নেই । ওর দ্বারা গানটা হবে না। ও এতোটাই দূর্বল ছিলো যে,, জেরিনের মতো সামান‍্য একটা মেয়ে ওকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়ে গেছে ।যেটা আমরা সবাই মিলে এতো ভালোবাসা দিয়ে চার বছর ধরেও জুড়তে পাড়িনি। ও কক্ষনো ওর অতীত থেকে বের হতে পারবে না । ওর সেই ইচ্ছা শক্তি টূকুই নেই । আমরা হাজার চেষ্ট করলেও ও ওর অতীত আকরে ধরেই বাচবে। তাই ওকে গান গাওয়ার জন‍্য ফোর্স করার কোনৌ দরকার নেই।”

বলেই আহান সামনে এগিয়ে হাটা দিলো । সাদের দড়জার কাছে আসতেই আহানের কানে গিটারের টুং টাং ধ্বনি ভেষে এলো। ও ঘুড়ে পিছনে তাকাতেই দেখলো মেঘ হাতে গিটার নিয়ে চোখ বন্ধ করে বাজাচ্ছে। আহান একটা বাকা হাসি দিলো,, ও জানে কাকে কি ডোজ দিলে সেটা কাজে দিবে । মেঘ গাইলো,,.

Main jaan ye vaar doon
har jeet bhi haar doon
keemat ho koi tujhe
beinteha pyaar doon..2

sasri hadein meri
ab maine tod di
dekar mujhe pata
awaargi ban gaye..

Haan hasi ban gaye
haan nami ban gaye
tum mere aasmaan
meri zameen ban gayi

aao….aaa

(বাকিটা সবাই নিজ দ্বায়িত্বে শুনে নিবেন)

মেঘ গানটা শেষ করে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো সবাই মুগ্ধ আর অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।দিশা মেঘের কাছে গিয়ে বললো

“তোকে বলেছিলাম না মানুষ কাজকে ভুলে গেলেও, প‍্যাশন কখনো ভুলে না। দেখ সেই আগের মেঘের কন্ঠ সুর আর এই মেঘের কন্ঠ সুরের মধ‍্যে কোনো পার্থক্য নেই।”

মেঘ কিছুই বললো না শুধু একটা শান্তির হাসি দিলো। আজকে ওর মনে অদ্ভুত এক খুশি এসে ভর করেছে মনে হচ্ছে অনেক দিন পর নিজের প্রানটা ফিরে পেয়েছে। ওর চোখে মুখে অদ্ভুত এক তৃপ্তির হাসি ফুটে আছে। মেয়েটাকে দেখে একদম প্রানোবন্ত লাগছে। মেঘের হঠাৎ চোখ গেলো আহানের দিকে। আহানদের চোখে মুখে ফুটে রয়েছে মুগ্ধতার ছাপ ঠোটে ঝুলে আছে কোনো কিছুর জিত হাসিল করার আমায়িক হাসি। মেঘ আহানের কাছে গিয়ে একটা ম্লানো হাসি দিয়ে বললো

“থ‍্যাংক্স আপনার জন‍্যই গানটা আবার আমার লাইফে ফিরে এলো।তবে আপনি একটা কথা ঠিকই বলেছিলেন জেড়িনের মতো একটা সামান‍্য মেয়ে আমাকে ভেঙে এতোটাই টুকরো টুকরো করেছে যে সেটা আপনাদের এতো ভালোবাসা দিয়েও জোড়া লাগানো যাবে না। জানেন তো? মানুষের মনটা আয়নার মতো হয় একবার ভেঙে গেলে যতো দক্ষ কারিগরই হোক না কেনো হাজার সাধনা করেও আর আগের মতো জোড়া লাগাতে পারে না।”

বলেই মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে চলে গেলো। আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিরবির করে বললো

“আমি ওই ভাঙা আয়নাটাকে জোড়াবো না মেঘ পড়ি । ওটাকে ভেঙে গুড়ো করে,, ওই কাচের টুকরো দিয়েই আরেকটা নতুন আয়না বানাবো।”

আহানের ভাবনার মাঝেই দিশা এসে বললো

“কি খবর জিজ? কি এতো বিরবির করছো?”

আহান দিশার নাক টেনে দিয়ে বললো

“সেটা জেনে তুমি কি করবে দিশা বুড়ি ।আগে বলো তোমার কি গিফট চাই?”

“আমার কিচ্ছু চাই না। ”

“সেটা বললে কি করে হয় তুমি আজকে আমার এতো বড় একটা কাজ করে দিলে। তোমার তো একটা গিফট অবশ‍্যই পাওনা আছে।”

“আরে ধুর ভাইয়া আমি তো কিছুই করিনি। সব কিছু তো আপনিই মেসেজে বলে দিলেন। তাও যখন এতো করে বলছেন তাহলে চকলেট কিনে দিয়েন তাহলেই হবে।”

আহান মুচকি হেসে বললো

“ওকে ।কালকে তোমার জন‍্য তোমার সব পছন্দের চকলেট নিয়ে আসবো।”

আহান তখন ওখানে বসে দিশার সাথে ফোনে চ‍্যাটিং করছিলো। দিশাকে আর হিয়ানকে আহান আগে থেকেই গানের কথাটা শিখিয়ে দিয়েছিলো। আর ওরাও সেই প্লান অনুযায়ী কাজ করেছৈ।
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_28

মিহির ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ঘুমের জন‍্যে পিপারেশন নিচ্ছিলো তখনই ওর রুমের দরজা খুলে সাঈফা প্রবেশ করে। আহির রুমের বাইরে ছিলো তাই দরজাটা মিহির আহিরের জন‍্য খোলাই রেখেছিলো। সাঈফা এসেই সোজা ধরাম করে বিছানার উপরে শুয়ে পড়ে। মিহির কোমরে হাত দিয়ে বিরক্তির স্বরে বলে

“এতো রাতে এখানে কি চাই? আর আমার রুমে পারমিশন না নিয়ে ঢুকেছিস কেনো ? যা বের হ!”

সাঈফা টানটান হয়ে শুয়ে হাই তুলতে তুলতে বললো

“আমি আজকে রাতে তোমার সাথে ঘুমাবো। তাই এখানে চলে আসলাম।”

মিহির কোমর থেকে হাত নামিয়ে মৃদ‍্যু চেচিয়ে বললো

“হোয়াট! মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? আমার সাথে ঘুমাবি মানে কি? আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিস আর বুদ্ধি সুদ্ধি সব লোপ পাচ্ছে তাইনা? যাহ এক্ষুনি বের হ আমার রুম থেকে।”

সাঈফা পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো

“আমার মাথা আর টাথা দুইটাই ঠিক আছে। আর আমি তোমার সাথেই ঘুমাবো। বেশি কথা না বলে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ো।”

সাঈফার কথায় মিহিরের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। ও গিয়ে সাঈফাকে এক টানে বিছানা থেকে উঠিয়ে দাড় করালো। তারপর নিজের গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সাঈফার গালে পরপর দুইটা থাপ্পর মারলো । এরপর রেগে দাতে দাত চেপে বললো

“তোর লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই তাইনা?যদি থাকতো তাহলে এতো রাতে একটা ছেলের রুমে এসে তার সাথে ঘুমাতে চাইতি না। ক‍্যারেক্টার লেস নিলজ্জ মেয়ে একটা। একবারও ভেবে দেখলি না,,আমি চাইলে তোর সাথে ঠিক কি কি করতে পারি? মনের মধ‍্যে নিজের মান সম্মান হারানোর ভয় ডর একটুও নেই তোর তাইনা ? কিভাবে থাকবে যতো দিন যাচ্ছে ততো তুই একটা নোংড়া মেয়ে হয়ে যাচ্ছিস ।যাহ এক্ষুনি বের হ আমার রুম থেকে ।নাহলে তোর এমন অবস্থা করবো কালকে সকালে কাউকে মুখ দেখানোর মতো অবস্থায় থাকবি না।”

সাঈফা গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে একবার চোখের পলক ফেলতেই টুপ করে অশ‍্রু কনা গুলো গালে গড়িয়ে পড়বে। তবে ও থাপ্পর খাওয়ার জন‍্য কাদছে না । মিহিরের এমন জঘন‍্য কথা গুলো শুনে কাদছে । ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে এভাবে জঘন‍্য নোংরা কথা গুলো শোনার থেকে হয়তো মরে যাওয়া অনেক ভালো। সাঈফা তো শুধু একটু মিহিরকে জ্বালাতে এসেছিলো,, কিন্তু মিহির যে সেটাকে এতোটা সিরিয়াসলি নিবে সেটা ও ভাবতেও পারেনি। মিহির এসে সাঈফার গাল চেপে ধরে বললো

“এই চারটা বছরে তোর অনেক জ্বালা সহ‍্য করেছি। ভালোবাসার নাম করে সারাক্ষন আই লাভ ইউ বলা,, জান বলা,, যখন তখন এসে জড়িয়ে ধরা এটা সেটা গিফট করা সব কিছু মেনে নিয়েছি । বড় দের কাউকে এই বিষয়ে কক্ষনো কিছু বলিনি। ভেবেছি তুই এখনো অনেক ছোট, তাই হয়তো এই বাচ্চামো গুলো করিস। কিন্তু না,, তুই তো এই গুলো ইচ্ছে করে করিস। আসলে কি বলতো তুই মাএা অতিরিক্ত ছ‍্যাচরা আর বাজে একটা মেয়ে,, ছেলে দেখলেই গায়ে পড়ে অসভ‍্যতামী শুরু করে দিস । আর তোর কি মনে হয়? আজকে দুপুরে ডাইনিং টেবিলে কি হয়েছে সেটা আমি জানি না? সব জানি,, আমি মেঘ আর দিশার সব কথা শুনে ছিলাম শুধু সবার সামনে রিয়‍্যাক্ট করবো না বলে কিছু বলিনি। আর কি বা বলবো ?তোর তো লজ্জা শরম বলতে কিচ্ছু নেই,,তোকে কিছু বললেও তোর গায়ে লাগে না । আর এখনো এখানে শংয়ের মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো? যাহ এক্ষুনি বের আমার রুম থেকে নাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোকে রুম থেকে বের করে দিবো।”

মিহিরের কথা শুনে সাঈফার চোখ থেকে আপনা আপনি পানি পড়তে লাগলো। জিবনে এতোটা অপমান বোধহয় ওর শএুও ওকে করেনি যতোটা আজকে ওর ভালোবাসার মানুষটা ওকে করলো।সাঈফা হাতের উল্টোপিট দিয়ে চোখের পানিটা মুছে ,,মিহিরের একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে ঠোটের কোনে একটা তাছ‍্যিল‍্য হাসি ঝুলিয়ে বললো

“অনেক অপছন্দ করো আমাকে তাইনা? হয়তো খুব ঘৃনাও করো । কিন্তু আমি কেনো পারিনা বলো তো। কেনো এতো অপমান করার পরেও বারবার তোমার কাছেই ফিরে আসি। কেনো হাজার চেষ্টা করেও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারিনা? কেনো আমি এতোবার চেষ্টা করেও তোমাকে ভূলে যেতে পারলাম না ।”

মিহির অবাক চোখে সাঈফার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন এই মেয়েটাকে ওর কাছে বড্ড অচেনা লাগছে । একটু আগেও যে মেয়েটার চঞ্চলতা দেখে ও বিরক্ত হয়েছিলো,, হঠাৎ করেই যেনো সেই মেয়েটার সব চঞ্চলতা ভাব চলে গিয়ে মেয়েটার মধ‍্যে একদম শান্ত চলে এসেছে । সাঈফা মিহিরের আরেকটু কাছে গিয়ে ভাংগা গলায় বললো

“জানো,, তোমাকে যখন ফাষ্ট টাইম হসপিটালে দেখে ছিলাম,, তখনই তোমার উপর বড়সড় একটা ক্রাশ খেয়ে ছিলাম। অবশ‍্য তখন ক্রাশ ,প্রেম ,ভালোবাসা কাকে বলে সেটাই জানতাম না । তবে তোমায় খুব ভালো লেগে ছিলো ।আর সেই ভালো লাগাটা আস্তে আস্তে কবে যে ভালোবাসায় রূপ নিলো আমি নিজেও জানতে পারলাম না । আর তোমাকে ভালো বাসাটাই আমার জিবনের সব থেকে বড় অন‍্যায় ছিলো। আমি সেই অন‍্যায়ের শাস্তিও এতো গুলো দিন ধরে পেয়েছি। আমি তোমার কাছে যতোবার ভালোবাসার কথা বলেছি, তুমি ততোবার আমাকে চড় মেরেছো, অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছো। তাও আমি বারবার তোমার কাছে ছূটে এসেছি একটা বার তোমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা শোনার জন‍্য।কিন্তু দিনশেষে আজকে আমি ছ‍্যাচরা ক‍্যারেক্টালেস মেয়ের উপাধি পেলাম।

একটু থেমে আবার বললো

আমি তো তোমাকে ছাড়া আর কোনো ছেলের দিকে কখনো তাকাইনি তাহলে তুমি কেনো বললে আমি ছেলে দেখলেই তাদের গায়ের উপর ঢলে পড়ি? কেনো আমাকে ক‍্যারেক্টার লেস বললে । আজকে কেনো আমাকে এভাবে অপমান করলে? আমি তো শুধুমাত্র তোমার সাথে একটু মজা করতে চেয়ে ছিলাম। আর তুমি আমাকে—-যাই হোক অপমানটা করে ভালোই করেছো। যদি আজকের পর এই নিলজ্জ মেয়েটার একটু লজ্জা হয়। আর তোমার পিছনে ছ‍্যাচরার মতো পিছু করা বন্ধ করে দেয় ।”

বলেই সাঈফা এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সাঈফা যেতেই মিহির ধপ করে খাটের উপর বসে পড়লো। আজকে সাঈফার বলা কথা গুলো ওর ভিতরটা নাড়িয়ে দিয়েছে ।মনে হচ্ছে মারাত্মক কিছু একটা ভূল করে ফেলেছে। আর এই ভূলের মাশুল হয়তো খুব খারাপ ভাবে ওকে গুনতে হবে।
_________________________

সকালে মেঘ ঘুম থেকে ওঠার আগেই আহান অফিসের জরুরী কাজের বাহানা দেখিয়ে চলে গেলো। মেঘ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে এসে দেখলো আহান ছাড়া সবাই ব্রেকফাস্ট করার জন‍্য বসে আছে । মেঘ ভাবলো আহান হয়তো একটু পরে আসবে তাই ও চুপচাপ খেতে বসে পড়লো। আহানের সাথে ওর কথা বলাটা খুবই জরুরী। কালকে যে মেঘ আহানের টাচ করার জন‍্য কাদেনি সেটা আহানকে বলে আহানের ভূলটা ভাঙাতে হবে। মেঘ নিজেও জানে না ও কেনো আহানকে এতোটা প্রায়ওটি দিচ্ছে । শুধু জানে আহান ওকে কোনো বিষয় নিয়ে ভূল বুঝুক সেটা ও কিছুতেই চায় না।

মিহির খাওয়ার মধ‍্যে বারবার সাঈফার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু সাঈফা ওর দিকে ভূলেও তাকাচ্ছে না । চুপচাপ নিজের মতো করে খাবার খেয়ে যাচ্ছে । ওর চোখের নিচে একদম কালি পড়ে গেছে । চোখ দুটোও ফুলে গেছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে হয়তো সারা রাত ঘুমায়নি। অন‍্যদিন গুলোর মতো আজকে চেহারায় কোনো সাজগোজ নেই,, মুখটা একদম মলিন করে রেখেছে। মিহিরের কেনো যেনো সাঈফাকে এই ভাবে দেখতে খারাপ লাগছে। মনে মনে একটা গিলটি ফিল হচ্ছে । ওর মনে হচ্ছে হয়তো কালকের ওই ব‍্যাবহারটার জন‍্যই আজকে সাঈফার এমন অবস্থা ।কিন্তু ও’ই বা কি করতো সাঈফার কথা গুলো শুনে ওর ভীষন রাগ উঠে গিয়েছিলো তাই মুখে যা এসেছে তাই বলে দিয়েছে।

মেঘ ব্রেকফাস্ট শেষ করে অনেকক্ষন টেবিলে বসে থাকলো,, কিন্তু আহানের আসার কোনো নাম গন্ধও নেই । তাই ও উপরে গিয়ে ভার্সিটির জন‍্য রেডি হয়ে তারপর আবার নিচে আসে । নিচে এসে জানতে পারে আহান আগেই চলে গেছে। মেঘের এবার ভিষন কান্না পাচ্ছে । আহান ওকে এভাবে ভূল বুঝেই চলে গেলো । এবার কি হবে ? কিভাবে আহানের ভূলটা ভাঙাবে? মেঘের মনে বেশ অভিমান জমা হলো আহানের প্রতি।এইভাবে ওকে কিছু না বলে কেনো চলে গেলো তার জন‍্যে।

মেঘ মনে মনে বললো,, সব সময় তো আমি কোনো কিছু না বলতেই বুঝে যান,, আর আজকে বলে বুঝাতে চাইলাম,,, কিন্তু আপনি না শুনেই চলে গেলেন। আপনি এতো অদ্ভুত কেনো বলুনতো? আপনি কাছে আসলে সহ‍্য করতে পারি না,,আর এখন দূরে চলে গেছেন সেটাও মেনে নিতে পারছি না ।
_________________________

এক মাস পর……

সেদিনের পর আহানের সাথে আর মেঘের দেখা হয়নি। মোনা খান, আহাদ খান, আহির তিন-চার মেঘদের বাসায় এসেছে কিন্তু আহান এক বারের জন‍্যও আসেনি। মেঘেরও বাসা টু ভার্ষিটি ছাড়া আর কোথাও যাওয়া হয়নি । সামনে ওদের ভার্ষিটিতে নবীন বরন অনুষ্ঠান ।তাই এতোদিন ক্লাস শেষে রিয়‍্যারসাল তারপর অনুষ্ঠানের সব কিছুর এ‍্যারেজমেন্ট এই সব নিয়ে ওরা সবাই ইদানিং খুব ব‍্যাস্ত ছিলো। অনুষ্ঠান ম‍্যানেজ মেন্টের কাজ এখন অনার্স থার্ড ইয়ারের ষ্টুডেন্টদের দেওয়া হয়েছে । তার মধ‍্যে সবচেয়ে বেশি দ্বায়িত্ব মেঘ, দিশা আর রিজাকেই দেওয়া হয়েছে। সবার পার্ফরমেন্সের লিষ্ট, অ‍্যানকারিং করা,, সাজানোর জিনিস পএ অর্ডার করা সব কিছু ওদেরই দ্বায়িত্বে আছে । বেচারীরা রীতিমতো খাওয়া গোসল বাদ দিয়ে সারাদিন এই কাজই করে । অবশ‍্য ওদের এভাবে ফাসানোর পিছনে মিহির আর আহিরের হাত আছে। ওরাই মেঘদেরকে এই দ্বায়ীত্ব গুলো দিয়েছে। তিনজন মাঝে মাঝে কাজ করতে করতে যখন বিরক্ত হয়ে যায় তখন ইচ্ছে মতো মিহির আর আহিরকে বকা দেয়। যদিও সামনা সামনি দেয় না,, সব আড়ালে বসে দেয়। তবে ওরা যে গালি গুলো দেয় সেইগুলো যদি কখনো মিহির আর আহির শোনে তাহলে নির্ঘাত তিনদিন অঙ্গান হয়ে থাকবে।




সাঈফার মধ‍্যে আজকাল অনেক চেইঞ্জ এসেছে ।মিহিরের সাথে ভূলেও কথা বলে না। কথা বলা তো দূরের কথা ফিরেও তাকায় না। মিহির যেই রাস্তা দিয়ে যায় সাঈফা সেই রাস্তা থেকে একশো হাত দূর থেকে যায় । মিহির ব‍্যাপ‍্যার গুলো খেয়াল করেও একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে । ও এমন ভাবে চলে যেনো সাঈফাকে কখনো দেখেইনি আর চিনেও না।
_________________________

মেঘ সকলে ঘুম থেকে উঠেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আটটা দশ বাজে। ওহ চিল্লিয়ে বললো

“ওহ শীট এতো দেরি কিভাবে হয়ে গেলো? আমি তো সাড়ে ছয়টার এলার্ম দিয়ে ছিলাম। আর এই নন্সেস ঘড়িটা আটটা দশে এর্লাম দিচ্ছে।”

মেঘ এর্লাম ঘড়িটা হাতে নিয়ে বললো

“ব‍্যাট‍্যা বদের হাড্ডি আরেকটু তাড়াতাড়ি বাজতে পারলি না? এতো লেইট করে কেনো বাজলি? জানিস না দশটার মধ‍্যে এ‍্যাসাইনমেন্ট টা জমা দিতে না পারলে ওই টাকলু ভুড়ি ওয়ালা স‍্যার আমার ক্লাস টেষ্টের রেজাল্ট থেকে মার্কস মাইনেজ করে দিবে।টাইমটা ঠিক করে দিলাম তাও সঠিক টাইমে বাজতে পারলি না। তুই একটা গাধা কমনসেন্স হীন ঘড়ি । কালকেই তোকে ফেড়ি ওয়ালার কাছে বেচে দিবো দেখে নিস।”

মেঘ কথা গুলো বলেই বেডের উপর এর্লাম ঘড়িটাকে ছুড়ে মারলো। তখনই মিরা রহমান রুমে প্রবেশ করতে করতে বললেন

“মেঘ,,, বদের হাড্ডিটা ঠিক টাইমেই বেজে ছিলো।শুধু ও একা না আরো চার পাচটা বদের হাড্ডি একসাথে সকাল থেকে বেজেছে। ওদের চিৎকারে সাড়া বাড়ি সুদ্ধ মানুষ জেগে গেছে। কিন্তু বেচারারা এতোক্ষন বেজেও তোমার ঘুম ভাঙাতে পারেনি। কারন তুমি হচ্ছো একটা শয়তানের হাড্ডি। তাই বদের হাড্ডি গুলো শয়তানের হাড্ডির ঘুমের কাছে হেরে গেছে।লাষ্টে বেচারারা বাজতে বাজতে ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে গেছে। ”

মেঘ অসহায় কন্ঠে বললো

“মা এর্লাম নাহয় বন্ধ হয়ে গেছে তুমি তো ডাকতে পারতে?”

মিরা রহমান বিরক্তির স্বরে বললো

“অলরেডি তিন বার ডেকে গেছি । এই নিয়ে চতুর্থ বার আসলাম । এইবার আমি যাই মামনি,, অলরেডি অনেক লেইট হয়ে গেছে। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে চলে যেও। ”

বলেই মিড়া রহমান রুম থেকে চলে গেলেন।মেঘ তাড়াতাড়ি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

মেঘ ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ঝটফট করে রেডি হয়ে নিলো । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পোনে নয়টা বাজে তাই সিন্ধান্ত নিলো ব্রেকফাস্ট না করেই বের হবে । ভার্ষিটিতে গিয়ে এ‍্যাস‍াইনমেন্ট জমা দিয়ে তারপর একসাথে ভার্ষিটির ক‍্যান্টিনে কিছু একটা খাবে। সব ঠিকই ছিলো কিন্তু বিপওি বাধলো বইপএ গোছানোর সময়। সাড়া রুমে কোথাও অ‍্যাসাইনমেন্টের পেপার গুলো নেই ।মেঘ পুড়ো রুম তন্নতন্ন করে খুজে ফেললো কিন্তু কোথাও পেলো না।অথচ ওর স্পষ্ট মনে আছে কালকে রাতে ও ওইগুলো রিডিং টেবিলের উপরই রেখে ছিলো। হঠাৎ মেঘের চোখ গেলো ড্রেসিং টেবিলের আয়নার উপর সেখানে পিংক কালারের চিড়কুট টাইপ কিছু একটা আয়নার সাথে আটকানো। মেঘ দ্রুত গিয়ে চিড়কুট টা ছুটিয়ে হাতে নিলো। চিড়কুটটার উপরে কালো কালি দিয়ে লেখা।

–মাই ডিয়ার পেত্মি,, তোর অ‍্যাস‍্যাইমেন্টের কাগজ গুলো আমি নিয়ে যাচ্ছি। ওই গুলো যদি ঠিক টাইমে জমা দিতে চাস তাহলে গাড়িটা নিয়ে সোজা আহান ব্রোর নিউ অফিসে চলে আয় । আর যদি না আসতে চাস তাহলে সোজা ভার্ষিটিতে চলে যা। তারপর ওই শালা টাকলুর বিদেশি ষ্টাইলের বকা গুলো শোন।,,,

ইতি
দ‍্যা গ্রেট
তাসনিধ সায়াজ মিহির,,,,

মেঘ চিড়কুট ছুড়ে মেরে একটা চিৎকার দিয়ে বললো।
“কশ্চপের বাচ্চা আজকে যদি অ‍্যাস‍াইনমেন্ট জমা দিতে না পারি তাহলে তোকে দ‍্যা গ্রেট থেকে দ‍্যা ব্রেড বানিয়ে দিবো। আর সেই ব্রেডকে টোষ্ট মেকারে দিয়ে টোষ্ট করে খাবো।”
_________________________

মেঘ অনেকক্ষন যাবত অফিসের ওয়েটিং রুমে বসে আছে। টেনশনে ওর গলা শুকিয়ে রীতিমতো কাঠ হয়ে গেছে। ভীষন ক্ষিদেও পেয়েছে । বারবার হ‍্যান্ড ওয়াচের দিকে তাকিয়ে সময় দেখছে। এখন 9:45 বাজে,, দশটা বাজতে মাএ পনেরো মিনিট বাকি আছে। এর মধ‍্যে যদি পেপার টা না জমা দিতে পারে তাহলে ওর ক্লাস টেষ্টের মার্কস কম হয়ে যাবে। এতো কষ্ট করে খেটে খুটে এ‍্যাস‍্যাইনমেন্ট গুলো করেছে সব বিফলে চলে যাবে। মেঘের খুব কান্না পাচ্ছে। এখানে এসেই ও রিসিভশনিষ্ট কে অনেক রিকোয়েস্ট করেছে মিহিরের সাথে দেখা করতে দেওয়ার জন‍্য,, কিন্তু উনি কিছুতেই মেঘকে ভিতরে যেতে দেয়নি।

বলেছে -আহান নাকি কোনো একটা প্রভলেমের কারনে হঠাৎই একটু আগে মিটিং ডেকেছে । আর বলেছে বাইরের কাউকে যাতে ভিতরে যেতে না দেওয়া হয় । আহির মিহিরও সেই মিটিংয়েই আছে। মেঘ অনেক বার বলেছে -ও মিহিরের বোন হয়,, কিন্তু মেয়েটি ওর কথা একটুও বিশ্বাস করেনি। উল্টে মেয়েটি ভেবেছে মেঘ মিহিরের সাথে দেখা করার জন‍্য মিথ‍্যা বলছে। এই অফিসটা একদম নিউ। মাএ কয়েকদিন আগেই এটা উদ্ভোদন করা হয়েছে। এখানের স্টাফরাও সব নিউ তাই মেঘকে কেউই চিনতে পারছে না। আর তাড়াহুড়োর চোটে ফোনটাও আনতে ভুলে গেছে । ফোনটা নিয়ে আসলে অন্ততো মিহির বা আহিরকে একটা কল করা যেতো। অথবা একটা ফেমিলি পিক রিসিভশনিষ্ট কে দেখালেই হয়তো ভিতরে যেতে দিতো।

মেঘ ঘড়ির দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেলো,, 09:50 বাজে। আর মাএ দশ মিনিট বাকী আছে। এখন কি হবে! কখন পেপারটা নিবে আর কখনই বা এখান থেকে যাবে। এখান থেকে ভার্ষিটিতে যেতেও তো অনেক সময় লাগবে। মেঘ তাড়াতাড়ি দৌড়ে আবার রিসিভশনে বসে থাকা মেয়েটার কাছে গেলো।অনুনয়ের স্বরে মেয়েটাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“আপু প্লিজ আমাকে ভিতরে যেতে দিন। আমি মিটিং রুমের চারপাশেও যাবো না,, আমি শুধু মিহির ভাইয়ার কেবিনটা একটু চেক করবো। আমার মনে হয়, আমার পেপার গুলো ওর কেবিনেই আছে।দরকার হলে আপনিও আমার সাথে কেবিনের মধ‍্যে চলুন,, বিশ্বাস করুন আমি কোনো জরুরি কাগজ পএে হাত দিবো না,, শুধু আমার অ‍্যাস‍্যাইনমেন্ট গুলো পেলেই ওইগুলো নিয়েই চলে যাবো।দেখুন ওই গুলো যদি ঠিক সময়ে জমা দিতে না পারি তাহলে আমার অনেক বড় সমস‍্যা হতে পারে । ”

মেয়েটি কপাল কুচকে চোখে মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো

“আজব মেয়েতো আপনি! বারবার এভাবে বিরক্ত করছেন কেনো? প্লিজ চুপচাপ গিয়ে ওখানে বসে থাকুন । স‍্যারেরা মিটিং থেকে বের হোক তারপর আপনি যা বলার ওনাদের সাথে বলে নিবেন। অবশ‍্য ওনারা যদি সুযোগ দেয় তবে বলতে পারবেন। আরে ওনাদের সাথে সামান‍্য দেখা করতে গেলেও ,, আগে থেকে ডেট ফিক্স করে আসতে হয়। সেখানে আপনি এসে এভাবে হুট করে বললেই তো আর ওনারা আপনার সাথে কথা বলতে চলে আসবে না। আর মিহির স‍্যারের কেবিনে তো দূরের কথা,, আপনাকে এখান থেকে ভিতরেই ঢুকতে দিবো না।”

মেঘ কাদো কাদো গলায় বললো

“আচ্ছা ভিতরে নাহয় নাই ঢুকতে দিলেন । মিহির ভাইয়ার কাছে একটা কল দিয়ে বলুন মেঘ এসেছে তাহলেই হবে।”

“আমি কল দিতে পারবো না। আপনি নাকি ওনার বোন হন,, তাহলে নিজের ভাইকে নিজেই ফোন দিন।”

বলেই মেয়েটি মুখ বাকিয়ে একটা হাসি দিলো। মেঘ বেশ বুঝতে পারছে মেয়েটি মেঘকে টন্ট করে কথাটা বলেছে। তাও মেঘ সেসবের তোয়াক্কা না করে বললো

“আপু আমি তাড়াহুড়োতে আমার ফোনটা বাড়িতে ফেলে এসেছি। নাহলে আগেই করতাম। প্লিজ তাড়াতাড়ি ভাইয়াকে ফোনটা করুন।”

মেয়েটি একটা ঝাড়ি মেরে বললো

“এইসব অজুহাত নিজের কাছেই রাখুন। আপনার কি মনে হয়,, আপনি যা বলবেন আমরা তাই বিশ্বাস করে নিবো? বোকা পেয়েছেন আমাদের? যে কেউ এসে নিজেকে মিহির স‍্যারের বোন বললেই সে মিহির স‍্যারের বোন হয়ে যাবে? এখনো ভালোয় ভালোয় বলছি বিরক্ত না করে চুপচাপ গিয়ে বসে থাকুন ,,নাহলে গার্ডসদের দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বের করে দিবো।”

মেয়েটি হঠাৎ এতো জোড়ে কথা বলায়। অফিসের ষ্টাফরা সবাই ওদের দিকে তাকালো । সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘ ভিষন লজ্জায় পড়ে গেলো ।ওর ইচ্ছে করছে মাটিতে মিশে যেতে । এখানে এসে এভাবে অপমান হতে হবে ও সেটা ভাবতেও পারেনি। দুটো ছেলে নিজেদের ডেস্ক থেকে উঠে এসে মেঘদের কাছে দাড়ালো। ওদের মধ‍্যে একটা ছেলে রিসিভশনিষ্ট মেয়েটিকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“কি হলো সৃষ্টি এভাবে চেচাচ্ছো কেনো? কোনো সমস‍্যা?”

মেয়েটি বললো

“দেখুন না স‍্যার,, এই মেয়েটি কখন থেকে উল্টোপাল্টা কথা বলে আমার মাথা খেয়ে যাচ্ছে। ও নাকি মিহির স‍্যারের বোন হয়! স‍্যারের কাছে নাকি ওর কোনো পেপার আছে! সেগুলো নিতে ও স‍্যারের ক‍েবিনে যেতে চায়। আমি যেতে দেবো না বলেছি। তাই ও আমাকে স‍্যারের কাছে কল দিতে বলছে। ওর ফোন নাকি ও ভুলে বাড়িতে ফেলে এসেছে।নাহলে নাকি ও নিজেই দিতো।”

মেয়েটির কথা শেষ হতেই ছেলে দুটো হো হো করে হেসে দিলো। বাকিরা সবাই তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তো আবার মুখ টিপে টিপে হাসছে।সৃষ্টি নামের মেয়েটা বললো

“আর হাসবেন না স‍্যার । আমার তো রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে । কোথা থেকে যে এইসব পাগল ছাগল গুলা আসে!”

সেই ছেলেটা মেঘের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো

“হ‍্যালো! তুমি মিহির স‍্যারের বোন তাইনা? তুমি যদি মিহির স‍্যারের বোন হও তাহলে আমি হচ্ছি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। কামঅন আমার সাথে হ‍্যান্ডশেক করো। ”

ছেলেটাকে এভাবে হাত বাড়াতে দেখে মেঘ দু’পা পিছিয়ে গেলো। মেঘকে এভাবে পিছিয়ে যেতে দেখে সৃষ্টি নামের মেয়েটা বললো

“স‍্যার উনি তো মিহির রহমানের বোন তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে হ‍্যান্ডশেক করতে চান না।”

বলে মেয়েটিও হাহা করে হেসে দিলো। এদের কথা শুনে মেঘের ভিষন কান্না পেলো। ও মাথা নিচু করে ঠৌট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।

হঠাৎই সবার হাসি থেমে গিয়ে পরিবেশটা একদম নিস্তব্দ হয়ে গেলো। সবাইকে এভাবে হঠাৎ থেমে যেতে দেখে মেঘ মাথা তুলে সামনে তাকালো। তাকিয়েই দেখলো আহান একটা ফাইলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে আর হাটছে। ওর পিছনে চার-পাচ জন লোক হেটে আসছে। সবাই ফরর্মাল গেটাপে। আহানকে আসতে দেখে সব ষ্টাফরা একে একে দাড়িয়ে গেলো। মেঘ আর ওখানে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। দৌড়ে গিয়ে সোজা আহানকে জড়িয়ে ধরলো। এভাবে হঠাৎ করে মেঘ এসে জড়িয়ে ধরায় আহান স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো। ওর হাত থেকে ফাইটা টুপ করে নিচে পড়ে গেলো।আহানের মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। নাহলে হঠাৎ করে এতো দিন পর কথা নেই বার্তা নেই মেঘ এখানে কেনো আসবে। মেঘ আহানের বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। সৃষ্টি নামের মেয়েটি দৌড়ে এসে রাগি কন্ঠে বললো

“এই মেয়ে কি করছো এসব? স‍্যারকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছো কেনো? ছাড়ো ওনাকে!”

বলেই মেয়েটি ওর ডেক্সের উপরে থাকা একটা বেল বাজায়। বেলটি বাজানোর সাথে সাথে তিনজন গার্ড ভিতরে ঢোকে । মেয়েটি ওদের উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলে

“এই মেয়েটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দেও।”

গার্ড গুলো মেঘের দিকে দু’পা এগিয়ে আসতেই । আহান অগ্নি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো

“এই ভূলটা ভূলেও করো না। যেখানে আছো সেখানেই দাড়িয়ে যাও। আর এক পা সামনে এগোলে এখান থেকে কেউ প্রান নিয়ে ফিরতে পারবে না।”

আহানের কথা শুনে গার্ড গুলো ভয়ে পিছিয়ে গেলো। অফিসের সবাই অবাক চোখে আহানের দিকে তাকালো। আহান মেঘকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে এতোক্ষন মেঘ যেখানে বসে ছিলো সেখানে বসালো।তারপর মেঘের সামনে হাটু গেড়ে বসে ওর দু গালে আলতো করে হাত রেখে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে মৃদ‍্যু স্বরে জিঙ্গেস করলো

“কি হয়েছে মেঘ পড়ি ? হঠাৎ এখানে কেনো এসেছো?”

মেঘ আহানের কথার কোনো জবাব দিলো না। ও ওর মতো মাথাটা নিচু করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেই যাচ্ছে। আহান আবারো বললো

“এই ভাবে কাদছো কেনো? কেউ কিছু বলেছে? কে কি বলেছে আমাকে বলো?”

মেঘ এবারেও চুপ করে রইলো। অফিসের সবাই অবাক চোখে আহান আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। যে ছেলে ভালো করে কারো সাথে কথা অবদি বলে না । কখনো হাসে না। সব সময় চেহারায় গম্ভির একটা ভাব ফুটিয়ে রাখে,, সে আজকে এইটুকু একটা মেয়ের সামনে এভাবে হাটু গেরে বসে আদুরে গলায় কথা বলছে।এটাও যে কোনোদিন দেখতে পাবেন,, সেটা ওনারা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।

“না বললেও বুঝবো কি কিভাবে তোমার কি হয়েছে। প্লিজ বলো তোমার কি হয়েছে।”

আহানের কথা শুনে মেঘের কান্নার বেগ আরো বেরে গেলো। আহান তড়িঘড়ি করে বললো

“ইটস ওকে! ইটস ওকে! তোমাকে কিচ্ছু বলতে হবে না । কেদো না প্লিজ! আচ্ছা একটু পানি খাবে?”

মেঘ হ‍্যা না কিছুই বললো না। আহান ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালো। তাকাতেই ওখানে উপস্থিত সবার আত্মা কেপে উঠলো। এতোক্ষন যে লোকটা খুব শান্ত আর আদুরে গলায় মেয়েটার সাথে কথা বলছিলো । ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতেই সেই শান্ত চেহারাটা ভয়ংকর হয়ে গেলো। আহান একজন ষ্টাফের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ম চাহনি দিয়ে শান্ত স্বরে বললো

“একগ্লাস পানি নিয়ে আসুন। ”

আহানের বলতে যতোটা দেরি হয়েছে লোকটার যেতে এক সেকেন্ডও লাগেনি।লোকটা দ্রুত গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে আহানের হাতে দিলো। আহান পানিটা মেঘের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো

“নাও এটা খেয়ে নাও। বেটার ফিল করবে।”

মেঘ গ্লাসটা হাতে নিয়ে জোড়ে ফ্লোরে ছুরে মেরে চেচিয়ে বললো

#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here