#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_29
“নাও এটা খেয়ে নাও। বেটার ফিল করবে।”
মেঘ গ্লাসটা হাতে নিয়ে জোড়ে ফ্লোরে ছুরে মেরে চেচিয়ে বললো
“লাগবে না আমার পানি। আপনার পানি আপনি খান নাহলে আপনার ওই গুনধর ভাইকে খাওয়ান। অসভ্য একটা ছেলে,, দুইদিন ধরে রাত জেগে এ্যাসাইনমেন্ট গুলো করেছি। আর ও সেইগুলো নিয়ে এখানে চলে এসেছে । বলেছে অ্যাস্যাইন মেন্ট গুলো নিতে হলে অফিসে এসে তারপর নিতে হবে। আমি এখানে এসে এনাদের কতো রিকোয়েষ্ট করলাম । কিন্তু এনারা কেউ আমাকে ভিতরে ঢুকতেই দিলেন না,, উল্টে আমাকে অপমান করলেন । সব শেষ হয়ে গেলো ।এখন আর আমার এ্যাসাইনমেন্ট টা জমা দেওয়া হবে না। এতো কষ্ট সব বিফলে চলে গেলো ।আমার এক্সামের মার্কস সবার থেকে কম আসবে। আমি ফেল করবো।”
কথা গুলো বলে মেঘ আবারও ফুপিয়ে কেদে উঠলো। মেঘের কথা শুনে আহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো । ও আগেই বুঝতে পেরেছিলো এখানে কিছু একটা হয়েছে তাই মেঘ এমন করে কাদছে। আহান গম্ভির কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“তোমাকে কে অপমান করেছে মেঘ? আর কেই বা তোমাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি?”
মেঘ কিছু বললো না চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো। আহান বুঝলো মেঘকে জিঙ্গেস করে কোনো লাভ নেই,, ও কিছুই বলবে না । আহান বসা থেকে দাড়িয়ে স্টাফদের দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“ওকে কে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি?”
সবাই চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো। আহান ওদের আরেকটু সামনে গিয়ে বললো
“আপনাদের সবাইকে আমি কিছু জিঙ্গৈস করেছি। ওকে কে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি? ভালোয় ভালোয় অ্যান্সার টা দিয়ে দিন নাহলে সবাইকে শাস্তি পেতে হবে।”
আহানের কথা শুনে সবাই ভয়ে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রইলো । আহান এতোক্ষন এমনিতেই রেগে ছিলো ।এখন এভাবে সবাইকে চুপ থাকতে দেখে রাগটা আরো বেড়ে গেলো। ও জোড়ে চিল্লিয়ে বললো
“আপনাদের সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! আমার প্রশ্ন শুনেও কোনো উওর না দিয়ে এভাবে দাড়িয়ে আছেন? জিবনের প্রতি কি দয়া মায়া সব কমে গেছে?আমি জিঙ্গেস করেছি,,, আমার মেঘ পড়িকে কে ঢুকতে দেয়নি?”
আহানের চিৎকারে মেঘ কেপে উঠলো। ষ্টাফরা সবাই ভয় পেয়ে গেলো। স্টাফদের মধ্যে থেকে একজন লোক ভয়ে ভয়ে সামনে এলো এবং একে একে সব ঘটনা আহানকে বললো। সব শুনে আহানের ইচ্ছে করছে এই সৃষ্টিকে কাচা চিবিয়ে খেতে।
।
।
।
এই দিকে আহির আর মিহির মিটিং শেষ করে ফোন টিপছিলো । তখনই মিহিরের মনে পড়ে ও সকালে মেঘের এ্যাসাইনমেন্টা অফিসে নিয়ে এসেছিলো। আহানের সাথে মেঘের দেখা করনোর জন্য। কথাটা মনে পড়তেই মিহির দ্রুত দৌড়ে ওর কেবিনে চলে যায় । গিয়ে ফাইলটা নিয়ে বাইরের রুমের দিকে পা বারায়। তখনই ওর কানে আহানের চিল্লাচিল্লির শব্দ ভেষে আসে। ওরা দুজন দ্রুত বাইরের রুমের দিকে আসে। ওই লোকটা এতোক্ষন যা যা বলেছে ওরা দুজন সবই শুনেছে।
।
।
।
আহান সৃষ্টি নামের মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই। ওর চোখ পড়ে দরজার দিকে। দেখে মেঘ বসা থেকে উঠে বাইরে চলে যাচ্ছে । আহান দ্রুত দৌড়ে গিয়ে মেঘের হাত ধরে আটকে দেয়। তারপর ব্রু কুচকে জিঙ্গেস করে
“তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
মেঘ নাক টানতে টানতে বলে
“বাসায় যাচ্ছি! এখন আর আমার এ্যাসাইনমেন্টের কোনো প্রয়োজন নেই। অলরেডি এগারোটা বেজে গেছে এখন আর ওটা জমা নেওয়া হবে না।”
আহান মেঘের হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে এসে বললো
“এখন কোথাও যাবে না তুমি । আমি তোমাকে একটু পর তোমাকে তোমার বাড়িতে দিয়ে আসবো ।”
মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে মিহির বললো
“বনু এই নে তোর এ্যাসাইন মেন্টের পেপার।”
মিহিরকে দেখেই মেঘের রাগ উঠে গেলো। ও আহানের হাত থেকে নিজের হাতটা জোড়ে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে হনহন করে মিহিরের সামনে চলে গেলো।তারপর মিহিরের হাত থেকে এ্যাসাইন মেন্টের পেপারটা নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে দাতে দাত চেপে বললো
” তোর এ্যাসাইনমেন্টের গুষ্টি কিলাই। এখন ওটা দিয়ে আমি কি করবো? একটা কাজ কর তুই ওটা ভিজিয়ে ভিজিয়ে পানি খা।”
বলেই মেঘ মিহিরকে এলো পাথারি মারতে লাগলো। বেচারা মিহির মেঘকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না। মেঘ নিজের গায়ের জোড় দিয়ে মিহিরকে কিল ঘুসি যা পারছে তাই দিচ্ছে। আহিরের হাসতে হাসতে রিতীমতো গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা । আহান সেও মুখ টিপে টিপে হাসছে। অফিসের সবাই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আহানদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারন ওরা এতোক্ষনে বুঝে গেছে মেঘ সত্যিই মিহিরের বোন। এতোক্ষন ওরা যেভাবে মেঘকে অপমান করেছে তার পরিনতি যে কতোটা ভয়ংকর হবে সেটা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছে।
সৃষ্টি নামের মেয়েটা মাথা নিচু করে ভয়ে কাপছিলো। তখনই ওর একজন মেয়ে কলিগ এসে সৃষ্টির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো
“মিস সৃষ্টি আপনি তো আজকে শেষ। স্যারেরা আপনার কি অবস্থা করবে ভাবতেও পারছেন না। দেখেই মনে হচ্ছে ওই মেয়েটা ওনাদের খুব আদরের । নাহলে একবার ভাবুন যে আহান খানকে এখন পযর্ন্ত কোনো মেয়েদের দিকে তাকাতে অবদি দেখিনি,, সে এই মেয়েটার সামনে হাটু গেড়ে বসে,, মেয়েটার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেছে। আহির স্যারের কথা তো বাদই দিলাম এতোদিন হয়ে গেলো ওনাকে এখন অবদি একটা মুচকি হাসি দিতেও দেখলাম না। ওনি যে এভাবে হাসতেও পারেন সেটা তো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আর মিহির স্যার অফিসের প্রথম দিন একটা মেয়ের সাথে সামান্য ধাক্কা খেয়ে ছিলেন বলে মেয়েকে অফিস থেকেই বের করে দিলেন। কিন্তু সে এখন এই মেয়েটার হাতে এতো মার খেয়েও উল্টে মেয়েটার গায়ে একটাও আঘাত করছে না। আর তুমি সেই মেয়েটাকে এইসব হাবিজাবি বলে অপমানিত করলে।আপনার কপালে দুঃখ আছে।”
মেয়েটির কথা শুনে সৃষ্টির ভয়টা হাজার গুন বেড়ে গেলো।
।
।
মিহির মেঘকে থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললো
“বনু ওই পেপারটা আমি নিয়ে এসেছি কিন্তু বিস্বাশ কর আইডিয়াটা আহিরের ছিলো। ওই আমাকে বলেছিলো এ্যাসাইনমেন্টটা অফিসে নিয়ে আসতে।”
মিহিরের কথা শুনে মেঘ মিহিরকে ছেড়ে দিয়ে আহির কে গিয়ে মারা শুরু করলো।
আহির মেঘের মার খেয়ে লাফাতে লাফাতে বললো
“বনু ভূল হয়ে গেছে আর কখনো হবে না প্রমিজ। আর এই ধরনের মজা করবো না।”
মেঘ আহিরের চুল ধরে টানতে টানতে বললো
“শয়তান ছেলে,,, তোকে তো আজকে মেরেই ফেলবো। সব সময় মাথায় শুধু বদ বুদ্ধি ঘোড়ে তাইনা! আজকে বাড়িতে গিয়ে পাপাকে সব বলে দিবো। তারপর দেখিস পাপা তোর কি অবস্থা করে।”
আহির মেকি হেসে মেঘের গাল টেনে দিয়ে বললো
“এই না প্লিজ! তুইতো আমার কিউট সোনা বনু তাইনা? বাবাকে কিছু বলিষ না প্লিজ।”
“যতোই ভালো ভালো কথা বলিস না কেনো? আমি আজকে সব পাপাকে বলে দিবো।”
কথাটা বলেই মেঘ আহিরের পিঠে ধরাম ধরাম করে কিল দিতে লাগলো।আহান দেখলো মেঘ থামা-থামির কোনো নামই নিচ্ছে না। ওদের ননষ্টপ মেরেই যাচ্ছে।তাই দ্রুত আহিরের থেকে মেঘকে টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে আসলো। কিন্তু মেঘ বারবার ওদের দিকে তেড়ে যাচ্ছে । তাই আহান মেঘকে টানতে টানতে নিজের কেবিনে নিয়ে ঢুকিয়ে বাইর থেকে আটকে দিলো। মেঘ ভিতর থেকে চেচিয়ে বললো
“এই আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেনো দরজা খুলুন বলছি। নয়তো আপনার ওই দরজা আমি ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিবো। আজকে ওদের আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবে না। ওদের আজকে আমি এই বিল্ডিং থেকে ফেলে ফেলে দিবো।ওদের মাথা একেবারে ফাটিয়ে দিবো।”
মেঘের কথা শুনে আহান ফিক করে হেসে দিলো। আর মনে মনে বললো -মেঘ পড়ি তুমি রেগে গেলে একদম ছোট্ট বাচ্চা হয়ে যাও ।
বলেই আহান আবার বাইরের রুমের দিকে হাটা দিলো। তবে এখন আর আহানের মুখে সেই হাসি টা নেই । চেহারার আদুরে ভাবটাও নেই। ওর চেহারায় স্পষ্ট রাগি ভাব ফুটে উঠেছে। চোখ দুটো ভয়ংকর রকম লাল হয়ে গেছে । বাইরে এসেই সোজা গিয়ে আহির আর মিহিরের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর বললো
“তোদের অতিরিক্ত পাকামো করতে বারন করেছিলাম না? তারপরেও তোরা এটা কেনো করলি? আমি তোদের কিছু করতে বলেছি? আর করেছিসই যখন তাহলে এটা মনে রাখবিনা যে ও এখানে আসতে পারে।”
মিহির অপরাধী ভঙ্গিতে বললো
“সরি ব্রো আসলে হঠাৎ করে মিটিং টা ডেকেছিলে তো তাই ওর কথাটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।”
আহান একটা বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে বললো
“এখন যাহ ভির্ষিটিতে গিয়ে এইগুলো জমা দিয়ে আয়।”
“আহির বললো তা তো যাবোই। তার আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর থেকে একটা অটোগ্রাফ নিয়ে নেই। কি বলিস মিহির।”
“হুমম অবশ্যই ! আমিও একটু দেখি অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট দেখতে কেমন। ভাব আমরা কতো লাকি শয়ং প্রেসিডেন্ট মহাশয় আমাদের অফিসে চাকরি করেন। আর আমরা তো এতোদিন ওনাকে চিনতাম না, তাই খাতির যত্ন টা করতে পারিনি। আজকে যখন ওনি নিজেই আমাদের আমদের ওনার পরিচয়টা দিলেন তাহলে এখন ওনার খাতির যত্নটা করেই ফেলি। ”
কথা গুলো বলেই আহির আর মিহির গায়ের কোর্ট টা খুলে শার্টের হাতাটা ফোল্ড করে সেই ছেলে দুটোকে মারতে লাগলো। মারতে মারতে ছেলে দুটোর নাক মুখ থেকে রক্ত বের হতে লাগলো। কিন্তু আহির মিহিরের সেদিকে কোনৌ ভ্রূক্ষেপ নেই। ওরা নিজেদের রাগ সব ছেলে দুটো গায়ে ঝারছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই চার জন লেডি বডিগার্ড ভিতরে প্রবেশ করলো আহান তাদের ইশারা করে সৃষ্টিকে দেখিয়ে দিলো ওরা এসে সৃষ্টিকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো। সৃষ্টি অনেক চেচামেচি করে হাত পা ছুড়েও কিছু করতে পারলো না। মেয়েগুলো সৃষ্টিকে একটা গাড়িতে করে নিয়ে চলে গেলো। কেউ ওকে বাচানোর জন্য ভয়ে সামনেও এগিয়ে এলো না।
আহির মিহির ছেলে দুটোকে মারতে মারতে একদম হাত পা মুখ থেতলে দিলো। তারপর গার্ডদের দিয়ে ওদের হসপিটালে ভর্তি হওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরাও ভার্ষিটিতে চলে গেলো।
ওরা যেতেই আহান অফিসের ম্যানেজারকে ডেকে বললো
“ম্যানেজার সাহেব অফিসের সিসি ক্যামেরাটা ভালো ভাবে চেক করুন তারপর কে কে ওই সময় হেসে ছিলো তাদের সব গুলোকে স্যাল্যারি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিন। আর নতুন লোক এপাউন্ট করেন।”
ম্যানেজার বোকার মতো আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর মনে মনে বললো -সামান্য একটু হেসেছে তাই এতোগুলো লোককে অফিস থেকেই বের করে দিবে! আজব এটা কেমন কথা।
_________________________
মেঘ গাল ফুলিয়ে আহানের কেবিনের মধ্যের একটা চেয়ারে বসে আছে। ও কতোক্ষন দরজা ধাক্কাধাক্কি করেছে কিন্তু কেউ দরজাটা খুলে দেয়নি। তাই বিরক্ত হয়ে এখানে এভাবে নাক ফুলিয়ে বসে আছে। পেটে ভিষন খিদে পেয়েছে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে মেঘ ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালো । দেখলো আহান ভিতরে প্রবেশ করছে সাথে খাবারের ট্রে হাতে একটা ছেলেও আছে। ছেলেটা টেবিলের উপরে খাবারের ট্রে টা রেখে চলে গেলো। আহান ভিতরে ঢুকে কেবিনের দরজাটা লক করে দিলো। মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে ঝাড়ি মেরে বললো
“দরজাটা লক কেনো করলেন?”
আহান কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো
“তোমাকে রেপ করবো তাই!”
“হোয়াট? কি সব বলছেন ?মাথা ঠিক আছে আপনার?”
“তো আর কি বলবো? তুমি এমন ভাবে প্রশ্নটা এমন ভাবে করলে,, মনে হলো আমি তোমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করতে এসেছি।”
মেঘ বিরক্তির স্বরে বললো
“ওকে ভূল হয়েছে আমার এখন দরজাটা খুলে দিন আমি বাসায় যাবো।”
“চুপচাপ ওখানে বসে থাকো।সময় হলে আমি নিজেই দিয়ে আসবো।”
“না,, আমি এক্ষুনি যাবো।”
আহান ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে বসতে বলেছি না? চুপচাপ বসো? নাহলে মাথায় তুলে একটা আছাড় মারবো। যখন ওই মেয়েটা তোমাকে অপমান করছিলো তখন ওই টুকু পুচকে মেয়েকেই কিছু বলতে পারলে না,, এখন এসেছো আমার কথার অমান্য করতে! ভালোভাবে বসো নাহলে মেরে পা ভেঙে এখানে বসিয়ে রাখবো।”
মেঘ রাগে ফুসতে ফুসতে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। তারপর নাক ফুলিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“আই হেট ইউ!”
আহান গিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললো
“আই হেট ইউ টু! এবার চুপচাপ ওখানে বসে থাকো।”
আহানের কথা শুনে মেঘের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। মানুষকে আই লাভ ইউ টু বলতে শুনেছে কিন্তু কখনো কাউকে আই হেট ইউ টু বলতে শোনেনি। ইনফ্যাক্ট এটাও জানে না যে আই হেট ইউ টুর কোনো অর্থ আছে কিনা ।
আহান টেবিলের উপরে থাকা খাবারের বাটি থেকে খাবার প্লেটে বারতে বারতে বললো
“ব্রেকফাস্ট তো মনে হয় না করেই চলে এসেছো?”
মেঘ ব্রু কুচকে জিঙ্গেস করলো
“আপনাকে কে বললো?”
“তোমার এই শুকনো মুখটা বলে দিয়েছে। আর আমি জানি তুমি অতিরিক্ত টেনশনে থাকলে খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দেও। বিশেষ করে যখন কোনো এক্সাম আসে তখন।”
“আপনি কিভাবে জানলেন?”
“সেটা তোমাকে না জানলেও চলবে। চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো খাবারটা খেয়ে নাও,, অলরেডি সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। নিশ্চয়ই তোমার খুব খিদে পেয়েছে।”
“হুমম,, খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু খাবো না। আগে বলুন ওই কথা গুলো আপনাকে কে বলেছে।”
আহান একটু রাগি গলায় বললো
“সময় হলে এমনিতই জানতে পারবে । এখন জেদ না করে চুপচাপ খেয়ে নাও।”
মেঘ চেয়ার থেকে দাড়িয়ে দরজার দিকে হাটা দিয়ে বললো
“বলবেন না তো? ওকে বলা লাগবে না,,আমি এক্ষুনি বাসায় চলে যাবো।”
আহান নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে মেঘকে টেনে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো
“তোমার সাহস হয় কি করে আমার অনুমতি ছাড়া এখান থেকে যেতে চাওয়ার। কেনো সব কিছু জানার এতো আগ্রহ তোমার? আর কি জানতে চাও তুমি? তোমার ব্যাপ্যারে ওই সব কিভাবে জানি? তাহলে শোনো আমি তোমার ব্যাপ্যারে সব কিছু জানি। এই চারটা বছরে তোমার প্রত্যেকটা দিনের, প্রত্যকটা ঘন্টার,, প্রত্যেকটা সেকেন্ডের হিসেব রেখেছি আমি। তুমি কোথায় যাও,, কি করো,, কি খেতে পছন্দ করো,, কি খেলে তোমার সাইড এফেক্ট হয়,, কোন পরিক্ষায় কি মার্কস পেয়েছো,, কোন সাবজেক্টে বেশি ভালো,, কোনটায় বেশি খারাপ সব কিছু আমার নখ দর্পনে আছে।ইনফ্যাক্ট তোমার টোট্যাল কয়টা ড্রেস আছে ,,কয় জোড়া জুতা আছে ,,সেগুলো কি কি কালারের সব জানা আছে আমার। ”
মেঘ আহানের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। ও বুঝতে পারছে না আহান কি সত্যি বলছেন নাকি মিথ্যা।মেঘের হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ওর মুখটা কালো অন্ধকার মেঘে ঢেকে গেলো। মেঘ একটু অভিমানী গলায় বললো
“এতোই যখন জানেন তাহলে সেদিন আমাকে ভূল বুঝে চলে এসে ছিলেন কেনো। কেনো বুঝতে পারেননি আমায়?”
আহান ভ্রু কুচকে বললো
“মানে,,,,,?”
“মানে আমি সেদিন আপনি টাচ করেছেন এইজন্য কাদিনি বরং আমার পুরোনো একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেছিলো তাই কেদেছিলাম।”
আহান অসহায় কন্ঠে বললো
“কি করবো মেঘ পড়ি বলো? তোমার চোখের পানি আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। তোমাকে কাদতে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে। সেদিন যখন তুমি কেদে দিয়েছিলে তখন আমার মাথায় শুধু একটা কথাই আসছিলো। আমার জন্য আমার মেঘ পড়ি কেদেছে । আমি তাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ।আমি তোমাকে ভূল বুঝিনি বিশ্বাস করো,, শুধু চেয়ে ছিলাম তুমি আমার কারনে যাতে কোনো কষ্ট না পাও। তাই এতো গুলো দিন তোমার ধারে কাছেও যাই নি।”
আহানের কথায় মেঘের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। এই লোকটা সব সময় ওর কথা কতো ভাবে ও কিনা বারবার নিজের বোকামির জন্য এই লোকটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলে। মেঘের ভাবনার মাঝেই আহান সন্ধিহান কন্ঠে বললো
“মেঘ পড়ি তুমিতো আমাকে একদমই পছন্দ করো না তাইনা? তাহলে আমি তোমাকে ভুল বুঝলাম কিংবা ঠিক বুঝলাম তাতে তো তোমার কিছু আসা যাওয়ার কথা না? তাহলে তুমি আমাকে এই কথা গুলো বলে কৈফিয়ত কেনো দিচ্ছ?”
আহানের কথা শুনে মেঘের চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।ও অস্থির হয়ে বললো
“জানি না,,, আমি কিচ্ছু জানি না। বিশ্বাস করুন আমি এসব কেনো করছি,,কি জন্য করছি আমি বুজতে পারছি না। শুধু জানি আপনি আমাকে ভূল বুঝলে আমার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছি।প্লিজ আপনি আমাকে কখনৌ ভুল বুঝবেন না।”
মেঘ হিচকি তুলে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলো। আহান মেঘের চোখের পানিটা হাত দিয়ে আলতো করে মুছিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললো
“ইনশাআল্লাহ মেঘ পড়ি,, পৃথিবীর সব মানুষও যদি একজোট হয়ে আমায় তোমার বিপক্ষে শাক্ষী দেয় তাহলেও আমি কখনো তোমাকে অবিশ্বাস করবো না।”
বলেই আহান মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেঘও চুপটি করে আহানের বুকে মুখ গুজে রইলো। আহানের ঠোটের কোনে অদ্ভুত পাপ্তির এক হাসি। ওর মন আর মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি ওর সেই কাঙ্ক্ষিত জিনসটি ওর হতে চলেছে।#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_30
ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে রিহারসার্ল রুমের ফ্লোরে বসে আছে দিশা,, রিজা,, মেঘ। পচন্ড রোদের তাপে তিন জনেরই প্রায় নাজেহাল অবস্থা ।বাইরে একফোটা বাতাশের ছিটে ফোটাও নেই। মাথার উপর ঘুড়তে থাকা ফ্যানটার বাতাসও গরম লাগছে।ওরা তিন জনই কাজ করতে করতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেছে। কালকে ওদের ভার্ষিটিতে নবিন বরনের অনুষ্ঠান। আজকে পুরো ভার্সিটি ডেকারেশন করা হচ্ছে। কে কি পার্ফরমেন্স করবে সেটা নিয়ে সবাই ব্যাস্ত আছে। আর দিশা,,মেঘ,রিজা ওদেরকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ দেওয়া হয়েছে ওরা সবাইকে কাজ করার জন্য ইনট্রাকশন দিতে দিতেই অসুস্থ হয়ে গেছে।কাউকে কাজ করতে বললে কেউ ঠিকটাক মতো কাজটা করে না।ওরা বলে একরকম সবাই করে আরেক রকম।দিশা খিটখিটে মেজাজে বললো
“বিশ্বাস কর এখন ওই গর্দভ দুইটাকে যদি সামনে পেতাম তাহলে ওদের কাচা খেয়ে ফেলতাম।শয়তান দুইটা আমাদের ফাসিয়ে দিয়ে,,নিজেরা আনন্দ করছে।”
রিজা কনফিউজড হয়ে বললো
“কার কথা বলছিস বলতো?”
মেঘ বিরক্তির স্বরে বললো
“বুঝতে পারছিস না,, কার কথা বলছে?ওইযে সব মেয়েদের ক্রাশ, ফাটা দুইটা বাশ ওই দুইটার কথা বলছে।”
মেঘের কথা শুনে দিশা আর রিজা ফিক করে হেসে দিলো।মেঘ চোখ মুখ কুচকে বললো
“হাসিস না তো বিরক্ত লাগে!অসভ্য দুইটার জন্য আজকে আমাদের এই অবস্থা।কাজ করতে করতে প্রায় আধমরা হয়ে গেছি।এখন যদি ওদের একটাকেও হাতের কাছ পেতাম তাহলে,,,,,”
মিহির দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো
“তাহলে কি করতি শুনি?”
মিহিরের কন্ঠ শুনে দিশা,রিজা,মেঘ দরজার দিকে তাকালো,দেখলো মিহির,আহির আর ওদের পুরো বন্ধুদের গ্যাং নিয়ে ভিতরে ঢুকছে।
মেঘ বসা থেকে উঠে গিয়ে মিহিরের পিঠে একটা ধরাম করে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো
“তাহলে তোকে এইভাবে কয়েকটা কিল দিতাম।”
বলেই মেঘ আরো পাচ ছয়টা কিল মিহিরের পিঠে বসিয়ে দিলো।বেচারা মিহির ব্যাথ্যায় পিঠে হাত দিয়ে ডলছে।আহির ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।কারন ও জানে ওর পিঠেও এখন তাল পড়তে চলেছে।ওর ভাবনার মধ্যেই মেঘ এসে ওর পিঠে ধরাম ধরাম করে আট দশটা কিল বসিয়ে দিলো।তাও আবার গায়ের জোড়ে।আহির ব্যাথ্যায় চোখ মুখ কুচকে দাড়িয়ে আছে।মিহির আর আহিরের বন্ধুরা মুখ টিপেটিপে হাসছে।ওরা জানে এখানে মেঘের জায়গায় অন্য কেউ যদি আহির আর মিহিরকে এভাবে মারতো তাহলে ওরা তাকে মেরে হাত পা ভেঙে এতোক্ষনে হসপিটালে পাঠিয়ে দিতো।কিন্তু মেঘ যদি ওদের মেরেও ফেলে তাও ওরা মেঘের গায়ে একটা ফুলের টোকাও দিবে না।মেঘের কান্ড দেখে দিশা রিজা হা হা করে হেসে দিলো।আহির আর মিহির গিয়ে ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়লো।আহির মেঘের দিকে চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে বললো
“রাক্ষুসি মেয়ে একটা,, সব সময় আমাদের মতো কিউট সুইট বাচ্চা ছেলেদের মারবে।আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোর কোনোদিন বিয়ে হবে না।”
মেঘ মুখ বাকিয়ে বললো
“আমি কি বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছি নাকি?বিয়ে যদি না হয়,তাহলে না হবে তাতে তোদের কি?যাহ ফোট এখান থেকে,,গিয়ে নিজেদের চরকায় তেল দে।”
আহির বললো
“যাবোনা এখানেই থাকবো তোর কি?”
মেঘ ভেংচি কেটে বললো
“আমার কিছুই না।ইচ্ছে হলে থাক নাহলে ভাগ। শুধু শুধু কানের কাছে বসে আমার মাথা খাস না।”
মিহির ধমক দিয়ে বললো
“এই তোরা ধামবি নাকি দুইটাকে দুইটা চড় মারবো?আজকে অনেক কাজ আছে তাই ফালতু কথা বাদ দিয়ে সবাই কাজের কথা বল।”
মিহিরের ধমকে আহির আর মেঘ একটু দমে গেল। মিহির সিরিয়াস মুখ করে দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দিশা অ্যারেজমেন্টের লিষ্টটা একটু দেখা তো?দেখি ওখান থেকে কি কি ব্যাবস্থা তোরা এখনো করতে পারিস নি।সেগুলো আমরা করে নেবো।”
মিহিরের কথায় দিশা সম্মতি জানিয়ে ওর ব্যাগ থেকে লিষ্ট টা বের করে দিলো।মিহির লিষ্ট টা খুলে দেখছিলো তখনই মেঘ মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এই ভাইয়া এইবার চিফ গেষ্ট কারা কারা আসছে।”
মিহির কাগজের দিকে চোখ রেখেই বললো
“তা জেনে তোরা কি করবি?কালকে আসলেই তো দেখতে পাবি।”
দিশা মুখ থেকে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ উচ্চারন করে বললো
“যতোবার জিঙ্গেস করেছি ততোবার এই একই কথা বলেছিস!ওনাদের নাম বললে কি আমরা ওনাদের খেয়ে ফেলবো?আজব!”
আহির মুখ বাকিয়ে বললো
“তোরাই বা এতো আগ্রহ কেনো দেখাচ্ছিস?চিফ গেষ্ট যেই হোক তাতে তোদের কি?”
মেঘ ঝাড়ি মেরে বললো
“একটা সামান্য কথা বলতে তোরাই বা এতো পেচাচ্ছিস কেনো?”
আহির পকেট থেকে ফোনটা বের করে টিপতে টিপতে বললো
“একশো বার পেচাবো!তোরা’ই বা কারন ছাড়া এতোবার জিঙ্গেস করছিস কেনো?”
মেঘ কোমরে হাত দিয়ে বললো
“ওকে বলবি না তো?তাহলে আমরাও চিফ গেষ্টকে মালা আর ব্যাজ পড়াবো না।যাকে চিনিনা জানিনা তার গলায় মালা পড়াবো?হুহ ইমপসিবল! অন্য কাউকে খুজে নে ওনাদের মালা পড়ানোর জন্য।”
বলেই মেঘ ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো।ওর পিছনে পিছনে দিশা আর রিজাও চলে গেলো।
_________________________
পরেরদিন সকালে……
মেঘ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে শাড়ি পড়ছে।কিন্তু এতোবার চেষ্টা করেও কুচি দিতে পারছে না।কুচি দিতে গেলেই বার বার হাত থেকে শারীটা ছুটে পড়ে যাচ্ছে।মিরা রহমান রুমে এসে মেঘের এমন অবস্থা দেখে হেসে দিলেন।তারপর নিজে গিয়ে সুন্দর করে মেঘকে শারিটা পড়িয়ে দিলেন।এরপর উনি মেঘের থেকে বিদায় নিয়ে অফিষে চলে গেলেন।মেঘ মাথায় হিজাব টা বেধে হালকা একটু মেকআপ করলো।এক হাতে ঝুড়ো চুড়ি অন্য হাতে ঘড়ি পড়লো।শারির সাথে ম্যাচিং করে কালো হাই হিল পড়লো।ওর শারিটা কালো রঙের। শারির পারে গোল্ডেন কালারের লেজ এবং তার উপরে ষ্টোন বসানো।আচলটা সিম্পলের মধ্যে গরজিয়েজ করে ষ্টোন বসানো।
মেঘ রেডি হয়ে কয়েকটা পিক তুলে নিলো।তারপর বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা দিশাদের বাড়ির সামনে চলে গেলো সেখান থেকে প্রথমে দিশাকে পিক করলো। তারপর সাড়িকা সাঈফাদের বাড়িতে গিয়ে ওদের দুজনকে পিক করলো।রিজা আরো পরে যাবে রিজার বফ এসে ওকে নিয়ে যাবে।
_______________________
ভার্ষিটির সামনে এসে গাড়ি থামতেই মেঘ,দিশা, সাড়িকা,সাঈফা একে একে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।ওরা চারজনেই আজকে শাড়ি পড়েছে। শুধু ওরা চার জনেই নয় ভাষিটির সবাই আজকে শাড়ি পড়েছে।সাড়িকা সাঈফা পিংক কালারের সেইম ডিজাইনের শাড়ি পড়েছে।মেকআপ থেকে শুরু করে ওদের সবকিছু একদম এক রকমের,,কেউ ওদের দেখে সহজে বুঝতেই পারবে না,, কে সাড়িকা আর কে সাঈফা। দিশা হালকা নীল রঙের একটা জামদানি শাড়ি পড়েছে,,সাথে ম্যাচিং হিজাব আর হাই হিল।এই গুলো ওরা আগেই প্লান করে রেখে ছিলো সবাই এক রকমের সাজবে।
ভার্ষিটির গেটের সামনে মেঘদের ব্যাজের কিছু স্টুডেন্টরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফাষ্ট ইয়ারের ষ্টুডেন্টদের হাতে একটা করে গোলাপ দিচ্ছিলো।আহির মিহির ওরাও সবাই ওখানেই দাড়িয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা কারো জন্য অপেক্ষা করছে।
মেঘ গেট দিয়ে ঢুকেই মিহিরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ওকে পিন্স করে বললো
“কিরে তোরা কি আমাদের ওয়েলকাম করার জন্য এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওয়েট করছিস?”
মিহির একটা ধমক দিয়ে বললো
“শাটআপ!তোদের ওয়েলকাম করার জন্য কোন দুঃখে অপেক্ষা করতে যাবো শুনি?চিফ গেষ্টের জন্য ওয়েট করছি।আর তোদের না আরো আগে আসতে বলে ছিলাম?তাহলে এতো দেড়ি করে কেনো আসলি?”
মেঘ বললো
“আরো আগে কোন দুঃখে আসতে যাবো শুনি?আগে এসে আমাদের এখানে কাজ কি?”
মিহির দাতে দাত চেপে বললো
“তোদের বলে ছিলাম না? চিফ গেষ্টকে তোরা ওয়েলকাম করবি!”
মেঘ ভেংচি কেটে বললো
“তোকেও বলেছিলাম না?নাম না বললে কিছুতেই ওয়েলকাম করবো না।”
“নাম জানার কি আছে শুনি,,একটু পরেই তো দেখতে পাবি।”
“এখন আমি দেখতে চাই না!যখন তোমার কাছে নাম জিঙ্গেস করে ছিলাম তখন নামটা বলোনি এখন ওনাদের নামও শুনতে চাই না,দেখতেও চাই আর ওয়েলকামও করতে চাই না।”
মিহির রাগি স্বরে বললো
“দেখ মেঘ,, ওয়েলকাম টা তোকেই করতে হবে।একদম বাড়াবাড়ি করবি না।”
“হুহ,করবো না,মানে কিছুতেই করবো না।তোদের ইচ্ছে হলে তোরা কর গিয়ে।”
বলেই মেঘ ঘুড়ে চলে আসতে নিলেই মিহির মেঘকে থামিয়ে দিলো।মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“আবার কি হলো?”
মিহির মেঘের কাছে এসে আস্তে করে বললো
“দেখ তুই যদি ওয়েলকাম টা না করিস তাহলে তোর ওই কিউট,সুইট সিষ্টার সাঈফা ওর গায়ে এখন ময়লা পানি ঢেলে দিবো।ভাব,,এতো সুন্দর করে সেজে গুজে এসেছে এখন যদি সবার সামনে ওর গায়ে পচা ময়লা পানি ফেলি তাহলে বেচারি ভার্ষিটির সবার সামনে কতোটা অপমানিত হবে।অবশ্য তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।ওকে অপমান করতে আমার বেশ ভালো লাগে।”
মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“এবার কিন্তু তুই বাড়াবাড়ি করছিস ভাইয়া।”
“কিচ্ছু বাড়াবাড়ি করছি না মেঘ দেখবি এক্ষুনি গিয়ে ওর মাথায় ময়লা পানি ঢেলে আসবো।”
কথাটা বলে মিহির যেতে নিলেই মেঘ ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো
“ওকে!আমি ওয়েলকাম করবো।”
মিহির মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো
“এইতো মাই কিউট সিষ্টার।”
মেঘ রাগি কন্ঠে বললো
“তোর মতো অসভ্য আমি জিবনে দুইটা দেখিনি।নিজের বোনকে ব্লাক মেইল করিস?লজ্জা করে না তোর?”
মিহির একটু ভাব নিয়ে বললো
“আমি হচ্ছি দ্যা গ্রেট তাসনিধ সায়াজ মিহির আমার মতো আর কেউ নেই তাই দেখিসনি।আমি একদম ইউনিক পার্সোন।আর আমার একদমই লজ্জা করে না কারন আমার লজ্জা নামের বস্তুটা নেই।”
মেঘ মিহিরের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বললো
“ডেবিল একটা!”
কথাটা বলেই ঘুড়ে যেতে নিলেই আহিরের সাথে মেঘের ধাক্কা লাগে।মেঘ আহিরের দিকে তাকিয়ে ঝাড়ি মেরে বলে
“এই ডেবিল নাম্বার টু, চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুড়িস?”
আহির ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো
“সরি!সরি! আমি দেখতে পাইনি।”
“সারাদিন মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকলে কেমনে দেখতে পাবি?যাহ সর চোখের সামনে থেকে।”
আহির বোকার মতো মেঘের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মেঘকে যাওয়ার জন্য সাইড দিলো।মেঘ ঘটঘট করে সেখান থেকে চলে গেলো।আহির বিরবির করে বললো
“বনু তুই রেগে যাস এক জনের উপর আর সব সময় ঝারিস আরেক জনের উপর।কেনো বলতো?”
_________________________
মেঘ আর দিশা সেই কখন থেকে হাতে ফুল নিয়ে ভার্ষিটির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু গেষ্টেদের আসার কোনো নামই নেই।মেঘ আস্তে করে দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“উফফ আর কতো ওয়েট করবো?এরা এখোনো আসছে না কেনো?এদের কি কোনো কান্ড ঙ্গান নেই নাকি?কোথাও গেলে যে সময় মেইনটেন যেতে হয় সেটা কি ওনারা জানেন না?”
দিশা চোখ মুখ কুচকে বললো
“ইয়ার এবার আমারও কিন্তু বিরক্ত লাগছে।তবে আমার কি মনে হচ্ছে জানিস?কোনো দেশের প্রিন্স কে হয়তো নৌকায় করে নিয়ে আসছে তাই এতো দেরি লাগছে।”
দিশার কথা শুনে মেঘ হা হা করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতেই হঠাৎ মেঘের খেয়াল হলো ওদের সামনে দুটো গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি দুটো দেখেই মেঘের ভ্রু কুচকে গেলো। গাড়িটা একদম আহানের গাড়ির মতো দেখতে।মেঘের ভাবনার মাঝেই পিছনের গাড়ি থেকে দুইজন গার্ড নেমে এসে সামনের গাড়ির পিছনের ছিটের দরজা দুটো খুলে দিলো। দরজা খুলতেই আহান আর অভি গাড়ির দুইপাশ থেকে নেমে এলো।
আহান কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট,আর শার্টের উপরে কালো কোর্ট পড়া।চুল গুলো স্পাইক করা,,চোখে সানগ্লাস পড়া ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলানো। সব মিলিয়ে আহানকে অসাধারন লাগছে।কিছু কিছু মেয়েরা আহানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।অভিও আহানের মতো সেইম গেটাপেই সেজেছে শুধু অভির ড্রেসের কালারটা ভিন্ন।ও ব্লু রঙের প্যান্ট আর ব্লু রঙের কোট পড়েছে।
আহান আর অভি সামনে এগিয়ে আসতেই প্রিন্সিপাল গিয়ে ওদের সাথে কুশল বিনিময় করলেন।আহির আর মিহির গিয়ে ওদের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।
মেঘ এতোক্ষন হা করে আহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।আহানের হাটা চলা সবার সাথে আন্তরিক ভাবে কথা বলা সব মেঘ খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো।ছেলেটার সব কিছুই যেনো অদ্ভুত রকমের সুন্দর। চেহারায় একটা মায়াবি ভাব।মেঘ বারবার চেষ্টা করেও আহানের থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।ও একটা ঘোড়ের মধ্যে চলে যাচ্ছে।হঠাৎ দিশার ডাকে মেঘ ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।দিশা মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে মেঘকে ধমক দিয়ে বললো
“জেগে জেগে ঘুমাচ্ছিস নাকি?কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?চল প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন।”
মেঘ একটু ইতস্তত করে বললো
“ওই আরকি,,কিছু একটা ভাবছিলাম।বাদ দে স্যার ডাকছেন,,চল।”
মেঘ আর দিশা গিয়ে আহান আর অভির সামনে দাড়ালো।দিশা জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে হাতে থাকা তোড়াটা অভির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
“ওয়েলকাম টু আওয়ার ভার্ষিটি স্যার।”
অভি একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“থ্যাংক্স মিস!”
মেঘ আহানের দিকে তোড়াটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“ওয়েলকাম স্যার।”
বলেই মেঘ আহানের মুখের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ও অবাক হলো।আহানের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে।ও তীক্ষ্ণ চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ বুঝতেই পারছে না আহানের হঠাৎ কি হলো?এতোক্ষন তো বেশ হাসি খুশি দেখাচ্ছিলো ওকে তাহলে এখন হঠাৎ কি এমন হলো যে আহানের ফেইজের এক্সপ্রেশন এভাবে চেইঞ্জ হয়ে গেলো। আহান মেঘের হাত থেকে তোড়াটা নিয়ে গম্ভির স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“থ্যাংক্স!”
বলেই আহান হাতে থাকা তোড়াটা পাশে থাকা গার্ডের হাতে ধড়িয়ে দিয়ে হনহন করে ভিতরে চলে গেলো।মেঘের দিকে ফিরে একটা বার তাকালো না পযর্ন্ত।
_________________________
মেঘ ভার্ষিটির একদম শেষ প্রান্তের কড়িডোরে একা একা দাড়িয়ে আছে।ওর মনটা আজকে ভিশন খারাপ কোথায় চেয়েছিলো আজকে সবার সাথে খুব আনন্দ করবে মজা করবে তা না করে এখন মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।মন খারাপের কারনটাও মেঘের অজানা।ওর মনে হচ্ছে এখন চিৎকার করে কাদতে পারলে হয়তো ওর মনটা হালকা হতো।
মেঘ একটু আগে আহানকে ব্যাজ পড়তে গিয়েছিলো।আহান চেয়ারের উপর বসা ছিলো তাই মেঘ একটু আহানের দিকে ঝুকে ব্যাজটা পড়াচ্ছিলো আহান মেঘকে ওর দিকে ঝুকতে দেখেই নিজের মাথাটা অন্য দিকে ঘুড়িয়ে নিয়েছে।এমন একটা ভাব করেছে যেনো ও মেঘকে চিনেই না।
আহানের হঠাৎ এমন ব্যাবহার মেঘকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে।কেনো এতোটা কষ্ট হচ্ছে ও নিজেও জানে না।এসব ভাবতে ভাবতে মেঘের চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।মেঘ দ্রুত হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানিটা মুছে ফেললো।হঠাৎ কেউ পিছন থেকে মেঘের বাহু ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে একটা ক্লাস রুমের ভিতর জোড়ে ছুড়ে মারলো। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো যে মেঘ ব্যাক্তিটিকে দেখার সময়ই পেলো না।সেই ব্যাক্তিটি মেঘকে ছুড়ে মেরে রুমের ভিতরে ঢুকে ঠাস করে দরজাটা দিয়ে দিলো।মেঘ ফ্লোরে উপুর হয়ে পড়ে আছে।ও এতো জোড়ে পড়ে যাওয়ায় হাতে আর হাটুতে প্রচণ্ড ব্যাথ্যা পেয়েছে।ব্যাথ্যায় মাথা তুলে তাকাতে অবদি পারছে না। তবে বুঝতে পারছে ব্যাক্তিটি আস্তে আস্তে ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।মেঘ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে পিছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো।তাকিয়েই ও বড়সড় একটা ঝটকা খেলো।
#চলবে,,,,
#চলবে,,,