#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ41
পাচ দিন পর,,,,
দুপুরবেলা মেঘ সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে জামাকাপড় গুলো ব্যালকনিতে শুকাতে দিয়ে,রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে টাওয়েল দিয়ে চুল শুকাতে লাগলো।ঠিক তখনই মেঘের ফোনে টুং করে একটা নোটিফিকেশন আসলো।মেঘ একহাতে টাওয়েল টা নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা ওপেন করলো।মেসেজটা ওপেন করতেই মেঘ খুশীতে “ইয়াহুউউউ” বলে একটা চিৎকার দিলো।কারন মেসেজটা সাঈফা করেছে,,আর ওতে লেখা ছিলো,,,
‘আপি আজকে বড়রা সবাই আলিশা আপিদের বাড়িতে যাবে হিয়ান ভাইয়া আর আলিশা আপির বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে।’
মেঘ ফোনটা বেডের উপরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে,নিজেও বেডের উপর উঠে খুশীতে লাফাতে লাগলো।তখনই কেউ ওর রুমের দরজাটা ঠাস করে ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো।দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মেঘ লাফানো থামিয়ে ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকালো।দেখলো,,,মিহির রুমের মধ্যে ঢুকে দরজাটা লক করে দিয়ে,রাগে ফুসতে ফুসতে এসে বেডের উপরে ধপ করে বসে পড়লো।মেঘ মিহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো,মিহিরের গায়ে এখনো পাঞ্জাবী,পায়জামা আর টুপি পড়ে আছে।ও বুঝতে পারলো মিহির মসজিদ থেকে জুমা’র নামাজ পড়ে সোজা ওর রুমে এসেছে।কিন্তু হঠাৎ কেনো এতো রেগে আছে সেটা মেঘ কিছুতেই বুঝতে পারলো না।ও বেড থেকে এক লাফ দিয়ে নিচে নেমে এসে মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“কিরে তোর চোখ মুখ এমন টুকটুকে লাল হয়ে আছে কেনো?কেউ কি তোর চেহারায় মরিচের গুরোড় ফেইস প্যাক লাগিয়ে দিয়েছে নাকি?”
মিহির রাগি চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দেই।”
মেঘ দুহাত নিজের কোমরে রেখে বললো
“কিন্তু কেনো?ওহ আচ্ছা,,তোকে মনে হয় আজকে মসজিদ থেকে জিলাপি দেয়নি তাইনা?”
মেঘের কথা শুনে মিহিরের রাগ টা আরো দুগুন বেড়ে গেলো।ও মেঘের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু চিল্লিয়ে বললো
“ইউ শাটআপ!কি মনে করে কি ওরা নিজেদের,,ওদের যখন যাহ ইচ্ছে ওরা তাই করবে,,,”
মিহিরের কথার মাঝে মেঘ ওকে থামিয়ে দিয়ে ওর কথার রেশ ধরে নিজেও সুর টেনে বললো
“ঠিকই তো,,কি মনে করে ওরা নিজেদের?আমার ভাইকে সামান্য একটা জিলাপি খেতে দিলো না?ওরা জানে না,,আমার ভাই চাইলে জিলাপির পুরো একটা দোকান কিনে নিতে পারে!শুধু কিনতেই পারেনা,,আমার ভাই নিজেও খুব সুন্দর জিলাপি বানাতে পারে!এর প্রমান আমি নিজেই।কারন আমি আমার ভাইয়ের হাতের বানানো জিলাপি খেয়ে,টানা এক ঘন্টা বমি করেছি।ইনফ্যাক্ট এখনো ওই দিনের জিলাপির টেষ্ট টা মনে পড়লেই বমি চলে আসে।ওহ আল্লাহ টেষ্ট টা কি দারুন ছিলো।একদম মনে রাখার মতো।”
মিহির বেড থেকে একটা বালিশ নিয়ে মেঘের দিকে ছুড়ে মেরে বললো
“ষ্টপ ইট মেঘ!আমি কিন্তু এই মুহূর্তে ভিষন রেগে আছি।তুই যদি আর একটাও উল্টাপাল্টা কথা বলেছিস তাহলে তোকে আমি বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলবো।”
মিহিরের কথা শুনে মেঘ অবাক হওয়ার ভান করে বললো
“ওহ মাই আল্লাহ!সামান্য জিলাপি খেতে পারিসনি তাই নিজের বোনকেই মেরে ফেলবি?”
মেঘের কথা শুনে মিহিরের মনে হচ্ছে ওর গায়ে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।ও একটা খেয়ে ফেলা লুক নিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।রাগে ওর সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে।মেঘ আবারও একই ভঙ্গিতে বললো
“কালকে সকালের ব্রেকিং নিউজ!জুমা’র দিন মসজিদ থেকে এক তরুন কে জিলাপি না দেওয়ার জন্য,তরুনটি রেগে নিজের বোনকে বালিশ চেপে হত্যা করেছে।যুবকটির বাসার পাশের লোকজন বলাবলি করছে,,যুবকটি একজন টুরু জিলাপি খোর ছিলো।”
এতোক্ষন মেঘের কথা গুলো মিহির চুপচাপ সহ্য করলেও এইবার আর সহ্য করতে পারলো না।ও বসা থেকে দাড়িয়ে মেঘের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড় করিয়ে ওর গালাটা চেপে ধরলো।তবে এমন ভাবে চেপে ধরেছে যাতে মেঘের একটুও ব্যাথ্যা না লাগে।মিহির মেঘের দিকে তাকিয়ে রাগে কটমট করতে করতে বললো
“মানা করার পরেও কখন থেকে জিলাপি জিলাপি করে আমার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিস তোকে তো আজকে মেরেই ফেলবো।”
মেঘ একটু কান্নার অভিনয় করে বললো
“হায় আল্লাহ এই দুঃখ মুই কারে দেখামু!মোর নিজের মায়ের পেটের ভাই মোরে সামান্য একঠা জিলাফির লইগা খুন করতে চাইতাছে।ওরে কেউ মোরে একটা কচু গাছ দিলানা কেন?এই দিন দেহার আগে মুই কচু গাছে ফাস দিয়া মইরা যাইতাম।”
মেঘের কথা বলার ষ্টাইল দেখে মিহির ফিক করে হেসে দিলো।ও মেঘের গলা থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে গিয়ে বেডের উপর বসে পরলো।তারপর হাসতে হাসতে ধপ করে বেডের উপর শুয়ে পড়লো।মিহিরকে এভাবে হাসতে দেখে মেঘ মুচকি একটা হাসি দিলো।কারন ও এতোক্ষন মিহিরকে হাসানোর জন্যই এইসব আজগুবি কথা গুলো বলছিলো।ও জানে মিহিরের রেগে গেলে একদম মাথা ঠিক রাখতে পারে না।যখন তখন উল্টাপাল্টা কাজ করে ফেলে।
মেঘ ধীর পায়ে মিহিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়লো।তারপর কোমল স্বরে জ্বিঙ্গেস করলো
“রাগ কমেছে?এইবার বল হঠাৎ এতো রেগে গেলি কেনো?বাসা থেকে যখন বের হয়ে ছিলি তখন তো ঠিকই ছিলি।”
মেঘের কথাটা কানে আসতেই মিহিরের হাসি থেমে গেলো।ও মেঘের দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব এনে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“আবিররা সবাই আমাদের বাড়িতে কি করছে?ওদের সাহস হয় কিভাবে আমাদের বাড়িতে আসার?এতো কিছুর পরেও ওরা কোন মুখে আমাদের বাড়িতে আসে?”
মেঘ মিহিরের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো
“কুল ডাউন ব্রো!এতে এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।আবির আর জেড়িন আমার সাথে এতো বড় একটা অন্যায় করার পরেও যখন বাবাই, মাম্মাম ওদের মাফ করে দিয়ে সেদিন বিয়েতে যেতে পেরেছিলো।তাহলে জেড়িন আমার গায়ে সামান্য একটা ফুলদানি মেরেছিলো,এই জন্য ওকে মাফ করা কি এমন ব্যাপ্যার!এটা তো একদিন হওয়ারই ছিলো।কোনো একদিন জেড়িন এসে বাবার সামনে ন্যাক্যা কান্না কাদতো আর বাবাই সব কিছু ভুলে ঠিক ওকে মাফ করে দিতো।”
মিহির শোয়া থেকে উঠে বসে বললো
“আমি ওদের সাথে এক মুহূর্তেও এখানে থাকতে পারবো না।ওদের আমার চোখের সামনে দেখলে আমি কিছুতেই নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করতে পারি না।ইচ্ছে করে সব গুলোর মাথা কেটে ফুটবল খেলি।”
মেঘ মিহিরের একহাত নিজের দুইহাতের মধ্যে নিয়ে মৃদ্যু একটা হাসি দিয়ে বললো
“নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে শেখ।এই ভাবে হুটহাট রেগে গিয়ে উল্টাপাল্টা কাজ করা একদম ভালো কথা নয়।তুই যদি রেগে গিয়ে এই মুহুর্তে ওদের উল্টাপাল্টা কিছু বলিস তাহলে মাম্মাম বাবাই তোকেই বকা দিবে।আর ওরাও তোকে গুন্ডা,রাস্তার ছেলে এইসব বলে তোকে কথা শোনাবে।তাছাড়া ওরা যেহেতু আমাদের মেহমান তাই ওদের কিছু বলে অপমান করা মানে মাম্মাম বাবাইকেও অপমান করা।সবাই বলবে আমাদের মা-বাবা আমাদের শিক্ষা দিতে পারেনি।তার থেকে কয়েকটা দিনেরই তো ব্যাপ্যার একটু দাতে দাত চেপে সহ্য করে নে।”
মিহির অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।ও ভাবতেও পারেনি মেঘ এই ব্যাপ্যারটা এতোটা হালকা ভাবে নিবে।ও অবাক কন্ঠে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“আবির আর জেড়িন ওদের ফেমিলির লোকেরা ওদের সবাইকে দেখলে তোর কষ্ট হয়না?ওরা আমাদের সাথে কি কি করেছে সেই কথা গুলো মনে পড়েনা?”
মেঘ একটা মলিন হাসি দিয়ে বললো
“এখন আর এসব আমার কাছে ম্যাট্যার করে না।একটা সময় ছিলো যখন এসব ভেবে খুব কষ্ট পেতাম।কিন্তু এই শহরে এসে লাষ্ট চার বছরে সবার থেকে এতো এতো ভালোবাসা পেয়েছি যে ওদের দেওয়া কষ্ট গুলো এখন তুচ্ছ মনে হয়।যেখানে ওরা কোনো দিন আমাদের মানুষ বলেই মনে করেনি,, সেখানে এই মানুষ গুলো সব সময় মিহির আর মেঘকে সবার আগে প্রায়োরিটি দিয়েছে।আজ অবদি এনারা কেউ আমাদের একটা ধমক দিয়েও কথা বলেনি।কখনো এমন কোনো কথা বলেনি যাতে আমরা হার্ট হই।সব সময় আমাদের খুশী রাখার চেষ্টা করেছে।আর এতো মানুষের ভালোবাসার কাছে ওদের দেওয়া কষ্ট গুলো এখন আর মনে পড়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
মেঘের কথা শুনে মিহির মেঘের চেহারার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।ওর বোনটা সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে।কথায় কেমন বড়দের মতো ম্যাচুরিটি এসেছে।মিহির মেঘের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আচ্ছা বনু আবির আর জেড়িনকে এক সাথে দেখলে তোর কষ্ট হয়না?”
হঠাৎ মিহিরের এমন প্রশ্নে মেঘ ভরকে গেলো।ও অবাক চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“হোয়াট?হোয়াই?ওদের দুজন কে দেখলে আমার কোন দুঃখে কষ্ট হবেরে ভাই?”
মিহির একটু মজা করে বললো
“নাহ মানে,,যতোই হোক আবির তোর উডবি হাসবেন্ট ছিলো।জেড়িনের জায়গায় এখন তোর থাকার কথা ছিলো।তাই জিঙ্গেস করছিলাম আরকি এখন ওদের দেখে তোর জেলাস ফিল হয় না?”
মিহিরের কথা শুনে মেঘ বোকার মতো মিহিরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ওর হাতের উল্টোপিঠ মিহিরের কপালে ঠেকিয়ে চিন্তিত হওয়ার ভান করে বললো
“এই ভাইয়া তোর গায়ে আবার জ্বর টর আসেনি তো?নাকি মসজিদ থেকে আসার সময় তোকে পাগলা কুকুরে কামরে দিয়েছে তাই এসব ভুলভাল বকছিস।আবির আর জেড়িনকে একসাথে দেখে আমি কেনো জেলাস ফিল করবো?আমি কি আবিরকে ভালো বাসতাম নাকি?আরে ভালোবাসা তো দূরের কথা ও তো কোনোদিন আমার ক্রাশ,ব্রাশ, টুথপেষ্ট,শ্যাম্পু কিচ্ছু ছিলো না।ইনফ্যাক্ট আমি কোনোদিন ওর দিকে ভালো করে তাকাইও নি।কারন ব্যাট্যাকে আমার ছোট বেলা থেকেই কেমন লুচ ক্যারেক্টার টাইপের মনে হতো।”
মেঘের কথা শুনে মিহির ফিক করে হেসে দিলো।তারপর বসা থেকে দাড়িয়ে বললো
“যাষ্ট কিডিং!তুই এতোক্ষন আমার সাথে জিলাপি নিয়ে মজা করলি তাই আমিও একটু তোর সাথে মজা করলাম।এইবার নিচে চল নাহলে মা আবার বকা দিতে দিতে আমাদের কানের পোকা মেরে ফেলবে।”
মেঘও হেসে দিয়ে বললো
“তুই যা আমি নামাজ টা পড়ে আসছি।”
“একদম না!তুই আমার সাথে যাবি।আমি রুম থেকে ড্রেস চেইঞ্জ করে আসতেছি, তুই ততোক্ষনে নামাজ টা পড়ে নে।খবরদার আমার দেড়ি হলেও আমাকে ছাড়া একা একা একদম নিচে যাবি না।”
মিহিরের কথায় মেঘ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।মিহির মেঘের সম্মতি পেয়ে দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়ে আবার বাইর থেকে দরজাটা টেনে দিয়ে চলে গেলো।
___________________________
মিহির আর মেঘ নিচে এসে দেখলো মেহমানরা সবাই লাঞ্চ করতে বসে গেছে।এখানে মেঘের ফুপিরা, চাচ্চুরা,কাজিনরা সবাই আছে।মিড়া রহমান আর কিছু সার্ভেন্ট মিলে সবাইকে খাবার সার্ভ করছে।আজম রাহমানও ওনাদের সাথেই বসেছে।মিহির দাতে দাত চেপে বিরবির করে বললো
“কথা নেই, বার্তা নেই, চৌদ্দ গুষ্টি শুদ্ধ সব এসে হাজির হয়েছে।”
কথাটা আর কেউ শুনতে না পেলেও মেঘ ঠিকই শুনতে পেয়েছে।ও মিহিরের হাতে আস্তে করে একটা চিমটি কেটে জোড় পূর্বক ঠোটের কোনে একটা হাসি ঝুলিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“বিহেইব ইউর সেলফ!এখানে বড়রা সবাই আছে।শুনে ফেললে কি ভাববে।”
মিহির একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো
“তাতে আমার কি?এটা তাসনিধ সায়াজ মিহিরের বাসা।এই জন্য মিহির এখানে যাহ খুশী তাই বলবে।কে কি ভাবলো তাতে মিহিরের কিচ্ছু যায় আসে না।”
“হি হি হি এটা এখনো আজম রহমানের বাসা।তাই যাহ বলবি ভেবে চিন্তে বলিস।বেশি উল্টাপাল্টা বললে বাবাইয়ের তোকে বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে এক মিনিটও লাগবে না।”
“শাটআপ!ইউ পুচকি মেয়ে।সব সময় বেশি কথা বলিস।”
“একি তোমরা দুজন ওখানে দাড়িয়ে ফিসফিস করে কি কথা বলছো?এখানে খেতে চলে আসো?”
আজম রহমানের কথা শুনে মিহির আর মেঘ সামনে তাকালো।দেখলো,,সবাই ওদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে।আজম রহমান ওদের চোখ দিয়ে ইশারা দিয়ে চেয়ারে বসতে বললেন।ওরাও দুজন গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।মেঘ একে একে মেহমানদের সবাইকে সালাম দিলো।সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।কিন্তু মিহির কারো সাথে কোনো কথাই বললো না।কারো দিকে একটা বারের জন্য তাকালো অবদি না।ও হু কেয়ারস একটা ভাব নিয়ে বসে বসে ফোন টিপতে লাগলো আর খেতে লাগলো।মেহমানরাও কেউ সাহস করে মিহিরের সাথে কথা বললো না।কারন ওরা আগে থেকেই জানে মিহির ছোট বেলা থেকেই রগচটা স্বভাবের।তার উপর এই কয়েক বছরে মিহির আগের থেকে অনেক চেইঞ্জ হয়েছে।এখন ওকে দেখতে আগের থেকে আরো বেশি রাগি মনে হয়।
মিহিরকে ফোন টিপতে দেখে মেঘ ওর হাত থেকে ফোন টা টান দিয়ে নিয়ে বললো
“খাবার সময় ফোন টিপতে হয় না,,জানিস না?”
মিহির মুখ থেকে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ উচ্চারণ করে বললো
“কাজ করছি তো মেঘ,,ফোনটা নিয়ে নিলি কেনো?”
“খাবার টা শেষ করেও কাজটা করা যাবে।আগে লাঞ্চ কম্পিলিট কর তারপরে কাজটা করিস।”
বলেই মেঘ ফোনটা ওর পাশে টেবিলের উপর রেখে দিলো।তখনই ফোনের রিং বেজে উঠলো।মেঘ ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো “আহান ব্রো” লেখা টা জ্বলজ্বল করছে। মেঘ ফোনটা মিহিরের দিকে এগিয়ে দিলো।মিহির ফোনটা হাতে নিয়ে ব্রু কুচকে ফেললো।এই মুহুর্তে আহানের কল দেওয়ার কারন বুঝতে পারলোনা ও। মিহির ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো তারপর তড়িঘড়ি করে বললো
“সরি!সরি!সরি ব্রো,,আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি।আমার একদম মনে ছিলো না।বিলিভ মি আমার সত্যিই মনে ছিলো না।”#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ42
মিহির ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো তারপর তড়িঘড়ি করে বললো
“সরি!সরি!সরি ব্রো,,আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি।আমার একদম মনে ছিলো না।বিলিভ মি আমার সত্যিই মনে ছিলো না।”
মিহির কথা গুলো এতোটাই জোড়ে বললো যে সবাই খাওয়া রেখে হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।আবিরেরা সবাই এটাই ভাবছে,যে ছেলেটা এতোক্ষন এতোগুলো মানুষকে পাএা না দিয়ে নিজের মতো খাচ্ছিলো হঠাৎ কে এমন ফোন করলো যে তার কথা শুনেই এতোটা ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
মিহির ঘাড়টা একটু বাকা করে ফোনটা কাধের সাথে চেপে ধরে হাত ধুতে ধুতে বললো
“চিল ব্রো,,আমাকে যাষ্ট পনেরো মিনিট টাইম দেও আমরা তার মধ্যেই আসছি।”
কথাটা বলতে বলতে মিহিরের হাত ধোয়া হয়ে গেলো।ও ফোনটা হাতে নিয়ে কেটে পকেটে পকেটে ঢুকিয়ে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে ব্যাস্ত কন্ঠ বললো
“বনু হাত ধুয়ে নে আর খেতে হবে না।আমরা এখন একটা জায়গায় যাবো।”
মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“এই সময়ে আবার কোথায় যাবো?আর কেনোই বা যাবো?”
মিহির মেঘের হাত ধরে টান দিয়ে দাড় করিয়ে বললো
“একটা কাজ আছে তাই যাবো।যাহ রেডি হয়ে আয়।”
মেঘ মিহিরের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে হাত ধুয়ে উপরে রেডি হতে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।ওরা দুজন সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে যাবে তার আগেই ওরা শুনতে পেলো জেড়িনের মা (বড় ফুপি)বলছেন
“হ্যা রে আজম এখানে এসেও ছেলে মেয়ে দুটো কে ঠিক ভাবে শিক্ষা দিতে পারলি না?দুটোই এখনো সেই আগের মতোই বেয়াদপ রয়ে গেছে।আমরা গুরুজনরেরা সবাই এখানে বসে আছি আর ওরা আমাদের পারমিশন না নিয়েই ড্যাং ড্যাং করে এই ভাবে উঠে চলে গেলো?মা-বাবার পারমিশন অবদি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না।এতো বড় হয়ে গেছে অথচ এখনো ঠিকঠাক মতো আদব কায়দাটাও শিখাতে পারলি না।”
কথাটা কানে আসার সাথে সাথে মেঘ আর মিহির দাড়িয়ে গেলো।মিহিরের রাগে কপালের রগ ফুলে উঠলো।শীতল চোখ জোড়া মুহূর্তের মধ্যে ভয়ংকর লাল হয়ে গেলো।ও ওর হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো।
মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে মিহিরের দিকে তাকালো।দেখলো মিহির রাগে সাপের মতো ফোসফোস করছে।ও মনে মনে বললো,,ফুপি মনি আমাকে তো আমার মাম্মাম-বাবাই আদব কায়দা শিখায়নি।কিন্তু তোমার মা-বাবা তো তোমাকে কোথায় কি বলতে হয় সেটাও শিখায় নি।বাঘের লেজ ধরে নাড়া দিয়েছো এবার ঠ্যাল্যা সামলাও।
মেঘ ভয়ে ভয়ে মিহিরের এক হাত জড়িয়ে ধরে ধীর কন্ঠে বললো
“ভাইয়া কুল ডাউন!সব সময় সব কথা কানে নিতে হয় না।চল তাড়াতাড়ি আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।”
মিহির শান্ত ভঙ্গিতে বললো
“তুই গিয়ে রেডি হয়ে নে,আমি আসছি।”
বলেই মিহির মেঘের হাত টা ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে ডানিংয়ের দিকে চলে গেলো।মেঘ ওখানেই ঠায় দাড়িয়ে ভীত চোখে মিহিরৈর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
মিহির গিয়ে ওর হাত দুটো ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে ভর দিয়ে একটু ঝুকে জেড়িনের মাকে উদ্দ্যেশ্য করে শান্ত স্বরে বললো
“মাই ডিয়ার ফুপি মনি, আপনি এখানে বেয়াদবির কি দেখলেন?এতো টুকুতেই আমাদের বেয়াদব বলে দিলেন?আর আমাদের আদব-কায়দা নেই কে বললো?যদি আদব-কায়দা নাই থাকতো তাহলে আপনি এখনো এখানে সোজা হয়ে বসে থাকতে পারতেন না।হাত পা ভাঙা অবস্থায় ফ্লোরে পরে থাকতেন।তাই বলছি পরের বার থেকে আমার বোনের সম্পর্কে কিছু বলার আগে অন্তত একশো বার ভেবে বলবেন। নাহলে আমি যে কতোটা বেয়াদব সেটা হারে হারে টের পাবেন।”
মিহিরের কথা শেষ হতেই মিরা রহমান মিহিরকে ধমক দিয়ে বললো
“শাটআপ মিহির,,গেষ্ট দের সাথে কেউ এই ভাবে কথা বলে?ভুলে যেও না, ওনি তোমার বড় ফুপি হয়।তাই ওনাকে রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলো।আর এক্ষুনি সরি বলো ফুপিকে।”
মিহির তাছিল্য হেসে মিরা রহমানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“হুহ সরি বলার প্রশ্নই উঠে না।আর ওনাকে তো আরোই বলবো না।তুমি বরং তোমার সো কল্ড ননদকে নিজের মুখটা সামলে কথা বলতে বলো।নাহলে আমি ভুলে যাবো উনি আমার বাবার বড় বোন হন।”
কথাটা বলেই মিহির আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওখান থেকে উপরে চলে গেলো।যাওয়ার সময় মেঘকেও সাথে করে নিয়ে গেলো।
ছেলের এমন ব্যাবহারে মিড়া রহমান বেশ লজ্জায় পড়ে গেলেন।তাও অনেকটা সংকোচ নিয়েই আবার মেহমানদের পরিবেশন করায় মনোযোগ দিলেন।
জেড়িনের মা রাগে ফুসতে থাকলো।এই টুকু একটা পুচকে ছেলে ওনাকে সবার সামনে এই ভাবে অপমান করে গেলো সেটা যেনো উনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।রাগে ওনার মাথা ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু তবুও উনি যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।
আজম রহমান চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছেন।ওনারও ইচ্ছে করছে ওনার বোনকে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে।কিন্তু নেহাত বড় বোন তাই চেয়েও কিছু বলতে পারছেন না।
___________________________
আজম রহমানেরা সবাই লাঞ্চ শেষ করে ড্রইং রুমের সোফায় বসে টুকিটাকি কথা বলছিলেন।তখনই কারো হাসির শব্দ শুনে সবার চোখ যায় সিড়ির উপর।সিড়ির উপর তাকিয়েই সবার চোখে আটকে যায় মিহির আর মেঘের উপর।
মেঘ কালো রংয়ের লং একটা গাউন পড়েছে।গাউন টার উপরে গোল্ডেন সুতো দিয়ে গরজিয়েস ডিজাইনস করা।মাথায় গোল্ডেন কালারের হিজাব পড়া।ওরনাটা কাধের এক সাইডে ফেলে রাখা।চেহারায় হালকা সাজ।এক হাতে সিলভার কালারের মুঠো চুড়ি আর অন্য হাতে গোল্ডেন কালরের একটা ব্যাঙ্গেল।পায়ে হাই পেন্সিল হিল পড়া।
মিহির হোয়াইট শার্ট আর ব্লাক জিন্স পড়া।শার্টের সামনের দিক থেকে দুটো বোতাম খুলে রাখা।হাতে কালো বেল্টের একটা ওয়াচ,,চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা।পায়ে কালো রঙের এক জোড়া কেটস।ঠোটের কোনে মুচকি একটা হাসি ঝুলানো।সব মিলিয়ে দুজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সবাই অপলক দৃষ্টিতে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অজান্তেই ওর এক হাত বুকের বা পাশে চলে গেলো।ওর কয়েকটা হার্টবিট মিস করে গেলো।ও নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।ওর মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে এটা যেনো কোনো একটা মায়া রাজ্যের মায়াপরী।
মিহির সবাইকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেও কোনো রিয়্যাক্ট করলো না। মেঘের হাত ধরে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে সোজা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।
___________________________
মেঘ অনেকক্ষন যাবৎ গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসে মাথা নিচু করে গায়ে পড়ে থাকা ওড়নাটার এক কোনা নিয়ে আঙুলে পেচাচ্ছে আবার খুলছে।লজ্জায় ওর গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে।ওর পাশেই আহান ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে আর আর সামনে থাকা লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে মেঘের লজ্জা মাখা চেহারা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।মেঘ যখনই চোখ তুলে সামনের দিকে তাকায় তখনই আহান কে ওর দিকে তাকাতে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
সেদিন আহানকে ভালোবাসি কথাটা বলার পর থেকে মেঘ ভুলেও আহানের ধারে কাছেও যায়নি।যখন হিয়ানদের বাসায় ছিলো তখন আহান কয়েকবার মেঘের সাথে কথা বলতে ওর রুমে এসেছিলো। কিন্তু মেঘ ওর সাথে কথা বলা তো দূরের থাক, ওর দিকে তাকায়ও নি।উল্টে আহানকে রুমে ঢুকতে দেখলেই মেঘ দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে।তাই আহানও আর জোড় করে ওর সাথে বেশি দেখা করার চেষ্টা করেনি।মেঘকে ওর সাথে স্বাভাবিক বিহেব করার জন্য একটু সময় দিয়েছে।
মেঘ হিয়ানদের বাসা থেকে নিজেদের বাসায় আসার দিনও আহানের থেকে পালিয়ে এসেছে।এক বারের জন্যও ওকে বলে আসেনি।আহানকে ভালোবাসার কথাটা বলার পর থেকে মেঘের কেনো যেনো আহানের সামনে আসতেই লজ্জা লাগে।তাই ও ভেবে ছিলো এক বছরেও আর আহানের সামনে আসবে না।কিন্তু মিহির আহিরদের সাথে ওদের গাড়িতে চলে গেলো। আর ওকে বাধ্য হয়ে আহানের সাথে আহানের গাড়িতে আসতে হলো।
ওরা সবাই মূলত আলিশাদের বাড়িতে যাচ্ছে।সেখানেই সবাই আজকে দুপুরে লাঞ্চ করে বিয়ের দিন তারিখ একদম ঠিক করে তারপর ফিরবে।আজম রহমান আর মিরা রহমান ছাড়া সবাই যাচ্ছে ওই বাড়িতে।ওনাদেরও যাওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু হঠাৎ মেঘের চাচ্চুরা এসে পড়ায় ওনারা যাওয়াটা ক্যান্সেল করে দিয়েছেন।আর মিহিরেরও মনে ছিলো না আজকে ওদের আলিশাদের বাড়িতে ইনভিটেশন আছে।আহান কল করে ধমক দেওয়ার পরে মনে পড়েছে।আর মেঘও জানতো না আজকে সবার আলিশাদের বাড়িতে যাওয়ার প্লান আছে।একটু আগেই সাঈফা মেসেজ দিয়ে যখন জানালো তখনই জানতে পারলো।তবে ও ভেবেছিলো শুধুমাত্র বড়রা সেখান যাবে।কিন্তু মিহির একটু আগেই বললো ছোট্টরাও সবাই সেখানে যাচ্ছে।বলেই মেঘকে দাড় করিয়ে রেখে নিজে গিয়ে আহিরদের গাড়িতে উঠে চলে গেলো।
।
মেঘ নিচের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজ করছিলো তখনই হঠাৎ করে আহান গাড়িটা ব্রেক করে।এই ভাবে আচৎমকা গাড়িটা থেমে যাওয়ায় মেঘ চমকে উঠে আহানের দিকে তাকায়।দেখে আহান সোজা হয়ে বসে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ আশেপাশে তাকিয়ে দেখে গাড়িটা রাস্তার এক সাইডে দাড় করানো।এখন দুপুরের টাইম হওয়ায় রাস্তাটা একদম নিরিবিলি।আলিশাদের বাসা এখান থেকেও অনেক দূরে।মেঘ একটু ইতস্তত করে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“হঠাৎ এভাবে মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাড় করালেন কেনো?গাড়িতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”
এতোক্ষন আহান সামনের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।মেঘের প্রশ্ন শুনে ঘাড় ঘুড়িয়ে মেঘের দিকে তাকালো তারপর একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বললো
“নো সুইটহার্ট,,গাড়ি একদম ঠিক আছে।কিন্তু গাড়ির মালিকের অনেক প্রভলেম হচ্ছে।কিছুতেই ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিতে পারছে না।না চাইতেও বারবার পাশের সিটে বসে থাকা এঞ্জেলের দিকে দৃষ্টি চলে যাচ্ছে।শত চেষ্টা করেও এঞ্জেলটার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।তাই গাড়ির মালিক আগে তার পাশে বসে থাকা এঞ্জেলটা কে মন ভরে দেখবে তারপর আবার গন্তব্যে উদ্দ্যেশে রওনা দিবে।”
আহানের কথা শুনে মেঘ আবার লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করতে লাগলো।আহান নিজের সিটবেল্ট টা খুলে মেঘের দিকে একটু ঝুকে ওর সিটবেল্ট টাও খুলে দিলো।তারপর এক হাত মেঘের কোমরে রেখে হেচকা টান দিয়ে মেঘকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েজে বললো
“আমার সামনে এই ভাবে বারবার লজ্জা পেও না সুইটহার্ট।তোমাকে লজ্জা পেতে দেখলেই আমার ইচ্ছে করে চকলেটের মতো টুকুস করে এক কামর দিয়ে তোমাকে খেয়ে ফেলতে।”
আহানের কথা শুনে মেঘের লজ্জা টা আরো বেড়ে গেলো।ও আহানের হাতটা ওর কোমর থেকে সরানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগলো, কিন্তু ও যতো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ততো আহান ওর কোমর আরো শক্ত করে চেপে ধরছে।মেঘ অনেকক্ষন চেষ্টা করার পরেও আহানকে নিজের থেকে একটুও দূরে সরাতে পারলো না, তাই বাধ্য হয়ে ছটফট করা বন্ধ করে দিয়ে আহানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।মেঘকে এভাবে তাকাতে দেখে আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“একি এতো তাড়াতাড়ি গিভআপ করে নিলে?আরেকটু ছটফট করতে,আমিও দেখতাম তোমার গায়ে কতোটা জোড় আছে।”
মেঘ অসহায় কন্ঠে বললো
“আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে সবাই আমাদের জন্য চিন্তা করবে।তাড়াতাড়ি চলুন প্লিজ।”
আহান মেঘের দিকে আরেকটু ঝুকে ওর নাকের সাথে নিজের নাক ঘসে দিয়ে বললো
“সব সময় আমার থেকে এতো পালাই পালাই করো কেনো মেঘ পরী?তোমাকে কতো বার বলবো আমি না চাইলে তুমি আমার থেকে কোথাও যেতে পারবে না।আর একবার যখন নিজের মুখে স্বীকার করেই ফেলেছো তুমি আমাকে ভালোবাসো।তখন তো তোমাকে দূরে যেতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”
মেঘ চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে।ওর ঠোটদুটো বারবার কেপে কেপে উঠছে।চোখের পাপড়ি গুলো পিটপিট করছে।আহানের গরম নিশ্বাস মেঘের চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।ওর শরীর মৃদ্যু কাপছে।ভয় লজ্জার অস্বস্তির সংমিশ্রন একটা অনুভূতি কাজ করছে ওর মধ্যে।
আহান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।ওর মেঘকে দেখে মারাত্মক নেশা লেগে যাচ্ছে।এমন ভয়ংকর নেশা যেটা হয়তো যেকোনো এ্যালকোহলের কাছেও হার মেনে যাবে।মেঘের কম্পিত ঠোট জোড়া বারবার ওকে বেসামাল করে দিছে।পিটপিট করা চোখের ঘন পাপড়ি গুলো বাধ্য করছে সমস্ত সীমা অতিক্রম করতে।আহান আবেশে দুচোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে মেঘের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর দুচোখে পাপড়ি তে আস্তে করে ঠোট ছোয়ালো।আহানের ছোয়ায় মেঘের শরীর মৃদ্যু কেপে উঠলো।শীরদ্বারা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।হৃদ স্পনদনের গতি আরো চার গুন বেরে গেলো।মনের মাঝে অদ্মুত ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করতে লাগলো।আহান একে একে মেঘের দু-গালে,কপালে ঠোট ছোয়ালো।তারপর মেঘের কোমরে চাপ দিয়ে মেঘকে আরেকটু নিজের কাছে টেনে এনে ওর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দিলো।আহানের এমন কান্ডে প্রথমে মেঘ কিছুক্ষন ফ্রিসড হয়ে বসে থাকলেও পরে নিজেও আহানের সাথে রেসপন্স করতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর আহান আস্তে আস্তে মেঘের ঠোট দিয়ে ওর কপালে গভীর ভাবে একটা চুমু গেলো।তারপর মেঘের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে নেশাতুর কন্ঠে বললো
“মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছে করে সম্পূর্ন ভাবে তোমার অস্তিত্বে মিশে যেতে।সব বাধার অবজ্ঞা করে তোমাকে পুরোটা নিজের করে নিতে।কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখি কারন আমি চাই না,আমার জন্য আমার মেঘ পরীর চরিএে কোনো দাগ লাগুক।লোকে আমার মেঘ পরীর নামে উল্টাপাল্টা কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাক।আমি সেইদিনই নিজেকে তোমার অস্তিত্বে বিলীন করবো যেদিন তুমি আমার বেটার হাফ হয়ে আমার কাছে আসবে।সেদিন তুমি হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে আমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারবে না।আর না আমি তোমাকে নিজের করার জন্য কোনো অনুমতি চাইবো।”
মেঘ ওর জামার দুই পাশ শক্ত করে খামচে ধরে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।আহানের বলা প্রত্যেকটা শব্দ ওর হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করছে।আহানের কথা শুনে মেঘের মনে যেমন ভালোলাগার একটা অনূভুতি কাজ করছে তেমনি আহানের প্রতি সম্মান টাও বাড়িয়ে দিয়েছে।এই লোকটা বারবার সুযোগ পেয়েও কখনো ওকে অসম্মান করার চেষ্টা করেনি,ওর দূর্বলতার কখনো সুযোগ নেয়নি।এসব ভেবে মেঘ মুচকি হাসলো।আহানকে অপছন্দ করতে করতে কখন যে নিজের অজান্তেই ওকে ভালোবেসে ফেলেছে,মেঘ সেটা নিজেও জানে না।শুধু জানে ও আহানের প্রতি এতোটাই দূর্বল যে আহানকে ছাড়া বেচে থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।
হঠাৎ আহানের ফোন বেজে ওঠায় ফোনের শব্দে দুজন একে অপরকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো।এতোক্ষন কি হয়েছে সেটা ভেবেই মেঘ লজ্জায় নিজেকে গুটিয়ে নিলো।এই মুহূর্তে আহানের দিকে তাকানোর সাহস ওর নেই।তাই নিজেকে লজ্জার হাত থেকে বাচতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
আহান মেঘকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে ঠোট চেপে হাসলো।তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মিহির কল করেছে।আহান ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে বললো
“কি হলো তোরা পৌছে গেছিস?”
ফোনের ওপাশ থেকে মিহির বললো
“না আমরা এখনো পৌছাই নি।তবে কাছাকাছি এসে পড়েছি।আসলে তোমাকে একটা কথা বলতে ভূলে গিয়ে ছিলাম।কথাটা তোমাকে জানানো খুবই ইম্পরটেন্ট তাই কল করলাম।”
আহান বললো
“ওহ আচ্ছা,,কি বলবি বল?সিরিয়াস কোনো কথা?”
মিহির প্রথমে একটু আমতা আমতা করলেও,পরে একে একে সব আহানকে বলে দিলো।আবিরদের বাসায় আসার কথা, দুপুরে ডাইনিং টেবিলে যা হয়েছে সবটা।মিহিরের কথা শেষ হতেই আহান রেগে চিল্লিয়ে বললো
“হোয়াট!এতো কিছু হয়ে গেলো আর তুই আমাকে এখন এই সব জানাচ্ছিস?”
আহানের এতো জোড়ে চিল্লানি শুনে মেঘ ভয়ে লাফিয়ে উঠলো।ও তড়িঘড়ি করে ঘুরে আহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাগে আহানের মাথার রগ ফুলে উঠেছে।চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে গেছে।মেঘ এতোক্ষন মিহিরের বলা কথা গুলো শুনতে না পেলেও এই মুহূর্তে আহানের অবস্থা দেখে ভালোই আন্দাজ করতে পারছে আহান কেনো এতোটা রেগে গেছে।
মিহির ওপাশ থেকে মিনমিনে গলায় বললো
“আমি এসবের কিছুই জানতাম না ব্রো।আজকে নামাজ পরে এসে দেখি পুরো গুষ্টি সুদ্ধ সবাই আমাদের ড্রইং রুমে বসে আছে।রেগে কিছু বলতে যাবো তার আগেই মা এসে জানালো মেঘ অসুস্থ সেই জন্য ওরা সবাই মেঘকে দেখতে এসেছে।আর জেড়িন নাকি ওই দিনের ঘটনাটার জন্য বাবার কাছে কল করে ক্ষমা চেয়েছে।অনেক কান্নাকাটি করেছে তাই বাবাও ওকে মাফ করে দিয়েছে।আর ওরা নাকি আমাদের বাড়িতেই থাকবে কয়েকদিন।এর মধ্যে যদি আমি ওদের কিছু বলি তাহলে নাকি মা ভুলে যাবে আমি ওনার ছেলে হই।”
এই টুকু শোনার সাথে সাথে আহান ফোনটা কেটে দিলো।রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে।ও ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার মেঘের দিকে তাকালো।মেঘের দিকে তাকানোর সাথে সাথে মেঘ ভয়ে আৎকে উঠলো।এই মুহুর্তে আহানকে দেখতে একদম হিংস্র পশুর মতো লাগছে।মেঘকে ভয় পেতে দেখে আহান গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে গিয়ে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।দরজা লাগানোর শব্দে মেঘ কেপে উঠলো।আহান গাড়ির যে পাশ থেকে নেমেছে মেঘ সেই পাশের জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।দেখলো,,আহান রাগে চোটে জোড়ে জোড়ে গাড়ির কাচের সাথে হাত দিয়ে পাঞ্চ করছে।আহানকে এইরকম করতে দেখে মেঘের কলিজা কেপে উঠলো।কারন আরেকটু সময় এই রকম জোড়ে জোড়ে পাঞ্চ করতে থাকলে গাড়ির কাচ ভেঙে আহানের হাতে ঢুকে যাবে।
মেঘ দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে আহানের কাছে গেলো।তারপর আহানের হাত ধরে শক্ত করে ধরে ওকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু আহান থামার বদলে আরো জোড়ে জোড়ে পাঞ্চ করতে লাগলো।মেঘ অসহায় কন্ঠে বললো
“কি করছেন টা কি?নিজেকে কেনো এভাবে হার্ট করছেন?”
আহান রাগে ফুসতে ফুসতে বললো
“মেঘ প্লিজ যাও এখন থেকে,রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।কখন ভুলে তোমাকেও হার্ট করে ফেলবো নিজেও জানি না।তাই প্লিজ তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।”
“হুমম যাচ্ছি,,আপনিও আমার সাথে চলুন।দেখুন এইভাবে নিজেকে হার্ট করবেন না প্লিজ।”
আহান দাতে দাত চেপে বললো
“আমাকে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না।তোমাকে যেতে বলেছি তুমি যাও এখান থেকে।”
“দেখুন এটা পাবলিক প্লেস এখানে এই রকম করলে লোকে আপনাকেই পাগল বলবে।প্লিজ গাড়িতে উঠুন।”
মেঘের কথাটা শেষ হতেই আহান রেগে মেঘকে গাড়ির সাথে চেপে ধরে বললো
“কে কি বললো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না।আর এই রকম শুনশান রাস্তায় লোক পেলে কোথায় তুমি?”
মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো
“না মানে কেউ যদি এসে পড়ে তাহলে আপনাকে এই রকম করতে দেখে হাসবে।”
আহান ধমক দিয়ে বললো
“হাসুক,,হু কেয়ারস!তোমাকে এতো ভাবতে কে বলেছে?আমাকে নিয়ে কেউ ভাবে না,আর কাউকে ভাবতেও হবে না।”
মেঘ আহানের কথায় স্পষ্ট অভিমানের ছাপ খুজে পাচ্ছে।এই মুহুর্তে ও আহানকে ভয় পেলেও, মনে সাহস জুগিয়ে কাপাকাপা কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“সামান্য একটা কারনে আপনি এতোটা রেগে যাচ্ছেন কেনো?এটা তো একদিন হওয়ারই ছিলো।বাবাই কখনো ওদের উপর সারা জিবন রেগে থাকতে পারতেন না।এক দিন না,এক দিন ওদের এমনিতেই ক্ষমা করে দিতেন।তাহলে এটা নিয়ে এতো রিয়্যাক্ট করার কি আছে?”
মেঘের কথা শুনে আহান আরো রেগে গেলো।ও মেঘকে আরো শক্ত করে গাড়ির সাথে চেপে ধরে বললো
“কোনটা তোমার কাছে সামান্য কারন মনে হচ্ছে?ওরা তোমার মাকে এতো গুলো বছর দিনের পর দিন অপমান করেছে সেইটা?নাকি তোমার বোন তোমাকে পুরো বিয়ে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে ক্যারেক্টারলেস বানিয়েছে সেইটা?নাকি আবির তোমাকে সবার সামনে চড় মেরেছে সেইটা?আই অ্যাম সরি টু সে,,এই গুলো তোমার কাছে সামান্য কারন হলেও আমার কাছে নয়।ওদের কিছুতেই আমি তোমার চারপাশে থাকতে দিবো না।বিশেষ করে ওই আবিরকে,,ও তোমার আশে পাশে কিছুতেই থাকতে পারবে না।যদি ভুলেও ও তোমার সাথে কথা বলতে গিয়েছে তাহলে ওর আমি কি অবস্থা করবো সেটা আমি নিজেও জানি না।”
আহানের কথা শুনে মেঘ ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো।আবির যদি ভুলেও ওর সাথে কথা বলতে আসে তাহলে যে কতো বড় একটা অনর্থ হবে সেটা ভেবে মেঘের এখনি ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
আহান রাগ আর অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে আবারও বললো
“ওরা সবাই এতো বড় অন্যায় করার পরেও তোমার বাবা ওদের সবাইকে ক্ষমা করে দিতে পারে।সবার প্রতি ওনার দয়া হয় শুধু আমার প্রতিই ওনার দয়া হয় না।তুমি জানো,,চার বছর আগে আমি ওনার পায়ে ধরে ছিলাম।ওনার থেকে তোমাকে ভিক্ষা চেয়ে ছিলাম।শুধু চেয়ে ছিলাম আমি লন্ডনে যাওয়ার আগে উনি যেনো আমাদের এঙ্গেজমেন্ট টা করিয়ে রাখেন।কতোবার অনুরোধ করেছি কিন্তু ওনি আমার অনুরোধ টা রাখেনি।উনি বলেছেন তুমি সবেমাএ এতো বড় একটা শকড থেকে বের হয়েছো,এখন উনি আর তোমার উপরে কোনো মানষিক চাপ দিতে চান না।আমি ওনাকে এটাও বলে ছিলাম, দরকার হলে আমি তোমারও পা ধরে তোমার থেকে আমার ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবো।কিন্তু আমার মা-বাবা আর তোমার মা-বাবা সবাই মিলে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে যাতে আমি এই বিষয়ে তোমার সাথে কোনো কথা না বলি।যদি আমি চার বছর তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারি তাহলেই ওনারা তোমার সাথে আমার বিয়ে দিবেে।আবিরকে বিশ্বাস করে ওনারা একবার যে ভুল করেছে সেই ভুল নাকি ওনারা আর দ্বীতিয় বার করতে চান না।মিহির,আহির, অভি,হিয়ান,রিয়ান ওরা সবাই মিলে তোমার বাবা-মা কে বুঝিয়ে ছিলো শুধুমাত্র এ্যাঙ্গেজমেন্ট টা করে রাখার জন্য তাও ওনাদের মন একটুও গলেনি।ওনারা ওনাদের কথায় অটুট ছিলেন।আর ওনাদের সাথে আমার বাবা-মাও তাল মিলিয়ে ছিলেন।”
আহানের কথা শুনে মেঘ হতবম্ভ হয়ে গেছে।আহান ওকে চার বছর আগে থেকে ভালো বাসে?শুধুমাএ ওর সাথে এজ্ঞেজমেন্ট করার জন্য ওর বাবার পায়ে ধরেছে?অনুরোধ করেছে?আর এতো কিছু হয়ে গেছে তাও ও কিচ্ছু জানতে পারলো না!সবাই সবটা জেনেও ওকে কিছুই বললো না!
আহান হঠাৎ করেই মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে বললো
“জানো,, আমি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম।তোমাকে ছাড়া এতো টা দূরে কিভাবে থাকবো সেটা ভাবলেই আমার দম আটকে আসতো।ভেবে ছিলাম তোমাকে খুজে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলবো।তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন কতোটা কষ্ট হয়েছে বলে বোঝাতে পারবো না।আমার কষ্ট গুলো আমি সবাইকে বলেও বোঝাতে পারিনি।আমাকে তীলে তীলে শেষ হয়ে যেতে দেখেও ওদের আমার উপর একটুও মায়া হয়নি।এই চারটা বছর আমি কতোটা যন্ত্রণায় ছিলাম সেটা শুধুমাত্র আমি জানি।ওরা সবাই শুধুমাত্র মুখেই বলে আমাকে ওরা ভালোবাসে আসলে ওরা কেউ আমাকে ভালোবাসে না।ভুলটা আবির করেছিলো আর সবাই মিলে শাস্তি আমাকে দিয়েছে।”
শেষের কথাটা বলার সময় আহানের গলাটা ধরে এলো।মেঘের গাল গড়িয়েও পানি পড়ছে।এই লোকটা ওকে এতোটা ভালোবাসতো আর ও শুধুমাত্র ওকে এতোগুলো দিন কষ্টই দিয়ে গেছে।বার বার অবহেলা করে গেছে।আহান ওকে ভালোবাসে বুঝতে পেরেও সব সময় না বোঝার ভান করেছে।মেঘের নিজের প্রতি নিজেরই ভিষন রাগ লাগছে।কেনো ও আহানকে এতোটা কষ্ট দিয়েছে সেটা ভেবে।মেঘ কান্না জড়িত কন্ঠে বললো
“আই অ্যাম সরি!আমিও আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাইনা?প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।”
বলেই মেঘও শক্ত করে আহানকে জড়িয়ে ধরলো।মেঘের কথার প্রতি উওরে আহান কিছুই বললো না,,শুধু আরো শক্ত করে মেঘকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে একটা চুমু খেলো।
মেঘের হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ও থমকে গেলো।আহান বলেছিলো,,”ভেবে ছিলাম তোমাকে খুজে পেয়েও হারিয়ে ফেলবো!”
হ্যা এই রকম কথা আহান আগেও কয়েকবার ওকে বলেছে যে ছয় বছর আগে থেকে আহান ওকে ভালোবাসে!তারমানে কি আহান ওকে আরো থেকেই চিনতো?কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?আহান ওকে আগে থেকে কিভাবে চিনবে?মেঘ কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে আহানকে জিঙ্গেস করলো
“আচ্ছা আপনি কি আমাকে আরো আগে থেকেই চিনতেন?আমাদের কি আগেও কোথাও দেখা হয়েছিলো?কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?আমার তো কিছু মনে পড়ছে না?”
মেঘের প্রশ্ন শুনে আহান মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে একটা রহস্য জনক হাসি দিয়ে বললো
“আজকে এমনিতেই অনেক কিছু বলে ফেলেছি।বাকিটা নাহয় অন্য একদিন বলবো।সঠিক সময় আসুক তখন সবটা জানতে পারবে।আপাততো গাড়িতে ওঠো আমাদের অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
বলেই আহান গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে মেঘকে ইশারা করলো ভিতরে উঠার জন্য।মেঘও আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।
চলবে,,,,,,,,,