#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশি_মনি
#পর্বঃপর্বঃ53
“চুপচাপ এখানে বসে কান্না করবি।এখান থেকে উঠলেই মেরে তোর ঠ্যাং ভেঙে দিবো।”
কথাটা বলেই মিহির গিয়ে দরজাটা খুলে ফেললো।খুলেই রাজ নামের ছেলেটাকে চোখের সামনে দেখে ওর মাথায় রক্ত উঠে গেলো।কিন্তু ‘ও’ যতোটা সম্ভব নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে বেশ শান্ত স্বরেই জিঙ্গেস করলো
“কি ব্যাপ্যার ব্রো?আপনি এখানে?”
ছেলেটা মিহিরের কথায় পাএা না দিয়ে দরজার বাইরে থেকে উকি দিয়ে সাঈফা কে দেখলো।তারপর উদ্দীগ্ন কন্ঠে বললো
“ওর কি হয়েছে?ওভাবে কাদছে কেনো?আর এতোক্ষনই বা এভাবে চিল্লাচিল্লি করছিলো কেনো?”
রাজকে সাঈফার জন্য এতোটা চিন্তিত হতে দেখে মিহিরের ইচ্ছে করছে এখনি রাজের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।মিহির নিজেকে সামলে নিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“আসলে ওর শরীর টা একটু খারাপ তাই ওকে বাইরে যেতে দেইনি।আর এই জন্য বাচ্চাদের মতো কাদছে।”
মিহিরের কথা শুনে রাজ মৃদ্যু চিল্লিয়ে বললো
“হোয়াট?শরীর খারাপ মানে?কি হয়েছে ওর?”
কথাটা বলে রাজ দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই মিহির রাজের সামনে দাড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বললো
“কারো রুমে ঢোকার আগে তার থেকে পারমিশন নিতে হয়,এই টুকুও ভদ্রতা শিখেন নি দেখছি।”
মিহিরের কথা শুনে রাজ একটু পিছিয়ে গেলো।কিন্তু একদম দমে গেলো না।বরং কন্ঠে আরো দৃরতা এনে জোড় গলায় বললো
“ওকে তাহলে আপনি আমাকে ভিতরে ঢোকার পারমিশন দিন।আর তা নাহলে ওকে এখানে আসতে দিন।আমি দেখতে চাই ওর কি হয়েছে।”
রাজের কথা শুনে মিহিরের রাগ টা এবার কন্ট্রোল লেস হয়ে গেলো।’ও’ রাগি কন্ঠে বললো
“না আমি আপনাকে এই রুমে ঢোকার পারমিশন দিবো।আর না সাঈফা রুম থেকে বাইরে বের হবে।আপনাকে কষ্ট করে ওর সমস্যা দেখতে হবে না।ওর সমস্যা দেখার জন্য এই বাড়িতে অনেক লোক আছে।আপনি এখন এখান থেকে আসতে পারেন।”
মিহিরের কথা শুনে রাজ কপট রাগ দেখিয়ে বললো
“হ্যা আমি এখানে থেকে চলে যাবো তবে সাঈফা কে সাথে করে নিয়ে তারপর।আমি জানি ওর কিচ্ছু হয়নি।আপনি ওকে এভাবে আটকে রেখেছেন তাই ‘ও’ কাদছে।এইবার ভালোয় ভালোয় বলছি ওকে আমার সাথে যেতে দিন নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
রাজের কথা শুনে মিহির তাছিল্য হেসে বললো
“খারাপ হয়ে যাবে?কি খারাপ হবে শুনি?”
রাজ দাতে দাত চেপে বললো
“আপনাকে আমি পুলিশে দিবো।এভাবে একটা মেয়েকে আটকে রাখার শাস্তি কি জানেন?”
মিহির রাজের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো
“হ্যা খুব ভালো করেই জানি।কিন্তু আপনি বোধহয় এটা জানেন না আমি কে?জানলে আমার সামনে দাড়িয়ে এসব কথা বলার সাহস পেতেন না।”
রাজ ভ্রু কুচকে বললো
“কে আপনি?”
মিহির একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে।শুধু এটা জেনে রাখুন আজকে আপনি একটা ভয়ংকর অপরাধ করে ফেলেছেন।আমার খুব মূল্যবান একটা জিনিসটা কে স্পর্শ করেছেন।যেটা আমার একদমই সহ্য হয়নি।আপনি অভি ব্রো”র ভাই দেখে আজকে বেচে গেলেন।নাহলে আপনার জায়গায় যদি অন্যকেউ হতো তাহলে এতোক্ষনে তাকে মেরে পার্সেল করে যেখান থেকে এসেছে সেখানে পাঠিয়ে দিতাম।”
মিহিরের কথা শুনে রাজ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।’ও’ এটা মনে করার চেষ্টা করছে কখন মিহিরের মূল্যবান জিনিস স্পর্শ করেছে।ওর সাথে তো মিহিরের দেখাই হলো এইমাএ।
এদিকে ওরা কি বলছে সেদিকে সাঈফার কোনো খেয়াল নেই।কাদতে হঠাৎ ওর চোখ গেলো দরজার দিকে।দরজাটা একদম খোলা আর একপাশে দাড়িয়ে রাজ আর মিহির কথা বলছে।সাঈফা ভাবলো এটাই এখান থেকে পালানোর সবচেয়ে ভালো উপায়।যেই ভাবা সেই কাজ।সাঈফা বসা থেকে দাড়িয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে দিলো এক ভো দৌড়।আর মনে মনে বললো আজ যদি এখান থেকে বেরোতে পারি তাহলে জিবনে আর এই শয়তান টার সামনে আসবো না।
সাঈফা দরজার কাছ থেকে যখন দৌড়ে বেরোচ্ছিলো তখন মিহির ওর হাত ধরে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু সাঈফা বেশ জোড়েই দৌড়ে যাচ্ছিলো তাই ধরতে পারলো না।সাঈফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিহির মৃদ্যু চিল্লিয়ে বললো
“তোর কি মনে হয় তুই এখান থেকে পালিয়ে গেলেই বেচে যাবি?হুহ নেভার!তোকে আমি কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দেবো না।তুই আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিস তাইনা?এবার আমি যদি তোর সুখ,শান্তি কেড়ে না নিয়েছি তাহলে আমার নামও মিহির না।”
কথাটা বলে মিহির রুমের মধ্যে ঢুকে ঠাস করে রুমের দরজাটা আটকে দিলো।আর রাজ সেখানেই বোকার মতো দাড়িয়ে সাঈফার যাওয়ার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।
_____________________________
আজকে হিয়ান আর আলিশার বিয়ে।সবাই বেশ হাসি খুশী থাকলেও আলিশার বাবা,মায়ের মুখে এক চিলতেও হাসি নেই।আলিশাও সকাল থেকে মনমরা হয়ে বসে আছে।সারাদিনে ঠিকঠাক মতো খাওয়া দাওয়াও করেনি।আলিশার মা কাজের ফাকে ফাকে শাড়ির আচল দিয়ে বারবার নিজের ভেজা চোখ জোড়া মুছছেন।আজকে তার একমাএ আদরের মেয়েটা সারা জিবনের জন্য বিদায় নিয়ে শশুর বাড়িতে চলে যাবে।কালকে থেকে হয়তো আর মেয়েটাকে কাছে পাবেন না।আগের মতো খাইয়ে দিয়ে পারবে না।আগের মতো শাসনও করতে পারবেন না।হয়তো কখনো কখনো মেয়ের সাথে দেখা হবে কিন্তু আগের মতো একসাথে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আর কথা বলতে পারবেন না।এসব ভেবে বারবার ওনার গলাটা আটকে আসছে।ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে কাজ করতে পারছেন না।বারবার কোনো না কোনো কাজে গন্ডগোল করে ফেলছেন।
মেঘরা রেডি হয়ে আলিশার পাশে বসে ওর সাজানো দেখছিলো।তখনই আলিশার কিছু কাজিন এসে জানায় বর পক্ষের লোকেরা এসেছে।সেটা শুনে মেঘ,দিশা,সাড়িকা নিচে চলে যায় গেট ধরার জন্য।কিন্তু সাঈফা সেখানেই বসে থাকে।’ও’কিছুতেই এখন মিহিরের সামনে পড়তে চায় না।তাই যতোটা সম্ভব মিহিরের থেকে দূরে দূরে থাকে।
মেঘ,দিশা,সাড়িকা গেট ধরা, বরের হাত ধোয়ানো,জুতা চুড়ি করা থেকে শুরু করে একটা দুষ্টামিও করা বাদ রাখেনি।তিনজন মিলে পুরো বিয়ে বাড়িটা মাতিয়ে রেখেছে।আর সাথে হিয়ানের পকেটও পুরো খালি করে দিয়েছে।বিয়েটা বেশ ভালোয় ভালোয়ই মিটে গেলো।ওরা সন্ধ্যার একটু আগে চৌধুরী বাড়ির উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়লো।বিদায়ের সময় অভি,আলিশার মা-বাবা,অন্যান্য আত্মীয় স্বজনেরা সবাই ভীষন কান্নাকাটি করেছে।আলিশা কান্না করতে করতে এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।হিয়ান ওকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।তারপর নিজেও গিয়ে ওর পাশে বসে ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বাহুডোরে আগলে রাখে।মেঘ,দিশা,সাড়িকা,সাঈফা বর যাএীর সাথেই চলে আসে। আলিশার কিছু কাজিন আর অভিও আসে কনের সাথে স্পেশাল গেষ্ট হয়ে।
_____________________________
ওরা সন্ধ্যার কিছুক্ষন পর এসে চৌধুরী বাড়িতে পৌছায়।হিয়ানের মা এসে আলিশা কে বরন করে ভিতরে নিয়ে আসে।বাসার ভিতরে এসে মেঘ,আলিশাকে নিয়ে সাড়িকাদের রুমে চলে যায়।সেখানে গিয়ে সবাই ফ্রেস হয়ে নিজেদের ভারি লেহেঙ্গা চেইঞ্জ করে নরমাল ড্রেস পড়ে।তারপর মেঘ,দিশা,সাড়িকা,সাঈফা মিলে আলিশার বিয়ের সাজ উঠিয়ে ফুল সজ্জার জন্য আবার নতুন করে সাজাতে থাকে।সাজানোর এক পর্যায়ে আলিশা বলে বিয়েতে যে জুয়েলারি গুলো পড়েছিলো ওগুলো এখন আর ‘ও’ পড়তে পারবে না।কারন ওই গুলো ভিষন ভারী ছিলো।তাই আলিশার সারা গায়ে র্যাস পড়ে গেছে।এটা শুনে মেঘ,দিশা,সাড়িকা,সাঈফা বেশ টেনশনে পড়ে যায়।নতুন বউয়ের গায়ে যদি কোনো জুয়েলারি না থাকে তাহলে ব্যাপ্যার টা দৃষ্টিকটু লাগে।কিন্তু বাড়ির সবাই এখন নিজেদের কাজে খুব ব্যাস্ত আছে তাই কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।তার উপরে আবার আলিশাকে যে অন্য জুয়েলারি গুলো দেওয়া হয়েছিলো সেগুলো ওর লাগেজের মধ্যে রয়ে গেছে।আর লাগেজ এখন হিয়ানের রুমে আছে।সেখানে আহান,অভি,রিয়ান, আহির,মিহির মিলে ফুলসজ্জার খাট সাজাচ্ছে তাই ওই রুমে এখন কাউকে এলাউ করছে না। এমনকি হিয়ানকেও না।
মেঘ গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন ভাবার পর ওর মনে পড়লো।ওর কাছে কিছূ হালকা টাইপ জুয়েলারি আছে।যেগুলো ‘ও’বিয়েতে পড়ার জন্য এখানে নিয়ে এসেছিলো।কিন্তু বিয়েতে আহান ওকে ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে জুয়েলারিও কিনে দিয়েছিলো।তাই ওর আর সেগুলো প্রয়োজন হয়নি।যেভাবে নিয়ে এসেছিলো এখনো সেভাবে ব্যাগেই পড়ে আছে।মেঘ একটা মুচকি হাসি দিয়ে “এক্ষুনি আসছি” বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
____________________________
মেঘ সাড়িকা সাঈফাদের রুম থেকে বের হয়ে এসে মিড়া রহমানের রুমের সামনে দাড়ায়।অভিদের বাড়িতে যাওয়ার আগে মেঘ ওর লাগেস টা মিড়া রহমানের কাছে রেখে গিয়েছিলো।’ও’ রুমের মধ্যে ঢোকার জন্য দরজা ধাক্কা দিতেই দেখলো দরজাটা ভিতর থেকে লক করা।দরজা লক দেখে মেঘের ভ্রু কুচকে এলো।এখন তো এই রুমে কারো থাকার কথা না।কারন মেঘ যখন কড়িডোর দিয়ে আসছিলো তখন মিড়া রহমান আর আজম রহমান দুজনকেই নিচে ড্রইং রুমে দেখেছে।ওনারা যদি না থাকে তাহলে কে থাকতে পারে?যে থাকে থাকুক তাতে মেঘের কি?’ও’ শুধু ভিতরে ঢুকে জুয়েলারি গুলো নিয়ে আবার চলে যাবে।সেটা ভেবে মেঘ দরজায় নক করলো।
পথম বার দরজায় নক করায় ওদিক থেকে কোনো রেসপন্স এলো না।কিন্তু দ্বীতিয় বার নক করতেই দরজাটা খুলে গেলো।মেঘ তাকিয়ে দেখলো ওর সামনে জেড়িন দাড়িয়ে আছে।জেড়িনের চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ।মেঘ সেদিকে পাএা না দিয়ে বললো
“আমার কিছু জিনিসপএ এই রুমে রাখা আছে,সেগুলো নিয়েই এখান থেকে চলে যাবো।”
মেঘ কথাটা বলে জেড়িন কে সাইড কাটিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো।রুমের মধ্যে ঢুকেই বেশ অবাক হলো।পুরো রুমটা এলোমেলো হয়ে আছে।রুমের মধ্যে যতো জিনিসপএ ছিলো সব ভেঙে চুড়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।একপাশের দেয়াল ঘেসে আবির মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।এই মুহূর্তে আবির কে দেখে মনে হচ্ছে ওর মতো নিস্পাপ বাচ্চা পৃথিবীতে আরেক টা নেই।মেঘ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে এগুলো জেড়িনের কাজ।হয়তো কোনো একটা বিষয় নিয়ে রেগে গিয়েছিলো তাই সব কিছু ভেঙে ফেলেছে।এগুলো জেড়িনের পুরনো অভ্যাস রাগ উঠলেই ভাঙচুড় করে। এতো লোকের চিৎকার চেচামেচির জন্য বাড়ির কেউ হয়তো এসব ভাঙার সাউন্ড শুনতেই পায়নি।
মেঘ বিরক্তিকর একটা নিশ্বাস ফেলে ফ্লোরে পড়ে থাকা ওর ল্যাগেজ টার কাছে গেলো।তারপর সেটা সোজা করে দাড় করিয়ে টেনে বেডের উপর তুললো।জেড়িন যে এখনো মেঘের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেটা মেঘ ভালো করেই বুঝতে পারছে।কিন্তু ‘ও’ সেদিকে না তাকিয়ে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে।মেঘ যখন ল্যাগেজ টা খুলে সামনের দিকে একটু ঝুকে জুয়েলারি গুলো বের করছিলো তখন অসাবধানতাবশত গলার কাছ থেকে ওর ওড়নারা সরে যায়।আর সাথে সাথে আহানের দেওয়া সেই “A” অক্ষরের লকেট বেড়িয়ে আসে।এটা এতোদিন মেঘ ওড়না আড়ালে লুকিয়ে রাখতো।আর নাহলে লকেট টা ঘুড়িয়ে ঘাড়ের দিকে চুলের নিচে রেখে দিতো।
কাজ করতে করতে যখনই মেঘের খেয়াল হলো ওর লকেক টা বেড়িয়ে গেছে।তখনই ‘ও’ সোজা হয়ে দাড়িয়ে লকেট টা আবার আড়াল করতে নিলেই জেড়িন এসে খপ করে ওর হাত ধরে ফেললো।জেড়িন এসে এভাবে হাত ধরায় মেঘ একটু হকচকিয়ে উঠলো।মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“এটা কোন ধরনের অসভ্যতা?তুই এভাবে আমার হাত ধরেছিস কেনো?”
জেড়িন দাত কটমট করে বললো
“অসভ্যতার তো কিছুই দেখিসনি,এইবার দেখবি।হাত টা সরা,দেখিতো এভাবে চোড়ের মতো কি লুকাচ্ছিলি?”
মেঘ শক্ত কন্ঠে বললো
“যাই লুকাই না কেনো,সেটা আমি তোকে দেখাতে বাধ্য নই।আমার হাত টা ছাড় বলছি।”
বলেই মেঘ জেড়িনের হাতটা ওর হাতের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু সরাতে যাবে তার আগেই জেড়িন লেকেটের উপর থেকে মেঘের হাতটা সরিয়ে ফেললো।আর লকেটের উপর “A” লেখা দেখেই জেড়িন হিংস্র বাঘিনী হয়ে গেলো।মেঘ জেড়িন কে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই জেড়িন ওকে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে একটা ধাক্কা দিলো।এতো জোড়ে ধাক্কা দেওয়ায় মেঘ তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে ভাঙা কাচের উপর পড়ে গেলো।পড়ে গিয়ে ওর মাথা গিয়ে একটা কেবিনেটের সাথে বারি খেলো।সাথে সাথে ওর মাথার এক অংশ কেটে ব্লিডিং হতে লাগলো।জেড়িন চিল্লিয়ে বললো
“নিলজ্জ মেয়ে একটা,তোর লজ্জা করে না অন্যের বরের দিকে নজর দিতে?তোর সাহস হয় কি করে আমার আবির কে রুম ডেটের অফার দেওয়ার?আজকে তো তোকে মেরেই ফেলবো।”
কথাটা বলেই জেড়িন ফ্লোর থেকে ভাঙা কাচের কাচের ফুলদানি উঠিয়ে মেঘের দিকে এগিয়ে গেলো।এদিকে মেঘের মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে।শরীরে ভাঙা চুড়া কাচের অংশ ঢুকে গেছে।ওর দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।তাও জেড়িন কে এগিয়ে আসতে দেখে মেঘ উঠার চেষ্টা করতে লাগলো ঠিক তখনই জেড়িন এসে ওর পিঠের উপর ফুলদানি টা ছুড়ে মারলো।আর মেঘ আবার উপুর হয়ে পড়ে গেলো।ওর মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো।মেঘ আর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে হাউমাউ করে কেদে দিলো।
আবির দূরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বাকা হাসছে।মেঘকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে ওর মনে একটা পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।সেদিনের থাপ্পর গুলোর প্রতিশোধ নিচ্ছে ‘ও’।জেড়িন এসে মেঘের বাহু দাড় করিয়ে বলে
“তোর এই ভালো মানুষির মুখোশ টা আমি সবার সামনে টেনে ছিড়ে ফেলবো।তুই যে কতোটা নোংরা একটা মেয়ে সেটা আজকে সবাই নিজের চোখে দেখবে।”
কথাটা বলেই জেড়িন মেঘের হাত ধরে টেনে হিচরে নিয়ে যেতে লাগলো।রুম থেকে বের হওয়ার আগে জেড়িন ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নিজের হ্যান্ড ব্যাগটা সাথে করে নিয়ে নিলো।আবিরও জেড়িনদের পিছনে পিছনে যেতে লাগলো।মেঘ ঠিক করে দাড়াতেই পারছে না।ওর সারা শরীরে রক্তের দাগ।কপালের কাটা জায়গাটা থেকে রক্ত পড়ে পুরো চেহারাটা লাল হয়ে গেছে।জেড়িন মেঘকে টানতে টানতে সিড়ির কাছে নিয়ে এসে জোড়ে ধাক্কা দিলো।আবির ভাবতেই পারেনি জেড়িন এমন একটা কাজ করবে।’ও’ স্তব্দ হয়ে সেখানেই ধপ করে বসে পড়ে।
মেঘের আসতে দেড়ি হচ্ছে দেখে সাঈফা রুমের বাইরে এসেছিলো মেঘকে খোজার জন্য।ঠিক তখনই দেখলো মেঘের নিস্তেজ শরীর টা সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে।সাঈফা জোড়ে আপি বলে একটা চিৎকার দিলো।ওর চিৎকারে পুরো বাড়ি সুদ্ধ মানুষ সব স্তব্দ হয়ে গেলো।সাঈফা চিৎকার টা দিয়েই জোড়ে দৌড় দিলো মেঘকে ধরার জন্য।কিন্তু ‘ও’ সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামার আগেই মেঘের রক্তাক্ত শরীর টা গিয়ে হিয়ানের পায়ের সামনে পড়লো।হিয়ান সিড়ি দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে উপরে উঠছিলো।মেঘকে এভাবে পড়তে দেখে ওর হাত থেকে ঠাস করে ফোনটা পড়ে যায়।আর ও বাকশূন্ন হয়ে হাটু ভেঙে মেঘের সামনে বসে পড়ে।
সাঈফা জোড়ে দৌড় দেওয়ার কারনে অর্ধেক সিড়ি আসতেই ব্যালেন্সলেস হয়ে নিজেও সিড়ি দিয়ে পড়ে যায় ।ওর মাথার পিছনে আঘাত লেগে করে রক্ত বের হতে থাকে।বাড়ির সব মানুষ স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কি থেকে যে কি হয়ে গেলো কেউ বুঝতে পারলো না।সবাই শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না।
এদিকে সাঈফার চিৎকার শুনে আহান,মিহির,আহির,অভি,রিয়ান রুম থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে আসে।ওরা সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে যাবে তার আগেই ওদের পা থেমে যায়।ওদের সামনে সাঈফা আর মেঘের রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে।দুজনের রক্তে পুরো ফ্লোর ভেষে যাচ্ছে।আহান মেঘ পরী বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে নিচে মেঘকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দেয়।
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ54
রাতঃ12 টা
পুরো বাড়িটা নিস্তব্দ হয়ে আছে।একটা মানুষের মুখের টু শব্দও শোনা যাচ্ছে না।সবার মধ্যে কেমন একটা গুমোট ভাব।বেডের উপর মেঘের নিস্তেজ শরীর টা পড়ে আছে।ওর মাথায় ব্যান্ডেজ করা।হাতে পড়ানো ক্যানোলা দিয়ে স্যাল্যাইন এবং ব্লাড দেওয়া হচ্ছে।ফেইস,গলা,হাত, পায়ে কাটা ছেড়ার দাগ।ঠোট একদম শুকিয়ে শুস্ক হয়ে গেছে।শরীরের কোনো অংশ বিন্দু পরিমানও নড়ছে না।মনে হচ্ছে একটা পুতুল শুয়ে আছে।
প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ধরে মেঘ অজ্ঞান হয়ে আছে।তখন সিড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মেঘ সেন্সলেস হয়ে যায়।সবাই ওকে আর সাঈফা কে ধরাধরি করে উপরে রুমে নিয়ে আসে।তারপর মোনা খান,মিরা রহমান আর সাঈফার বাবা-মা মিলে মেঘ আর সাঈফার ট্রিটমেন্ট করেন।সাঈফার তেমন একটা কিছু হয়নি।শুধু মাথার পেছনে একটু কেটে গেছে আর পায়ে ব্যাথ্যা পেয়েছে।কিন্তু মেঘের কপাল টা অনেক খানিই কেটে গিয়েছে তাই অনেকটা ব্লাড লস হয়েছে।তাছাড়া ওতো উপর থেকে পড়ায় মাথায় বেশ ভালোই আঘাত পেয়েছে।তার উপর ভাঙা কাচের টুকরোয় শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে গেছে।শুরুতে অনেক ব্লিডিং হচ্ছিলো।সবাই ভেবে ছিলো মেঘকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।কিন্তু মোনা খান আর মিড়া রহমান মিলে অনেক কষ্টে ব্লিডিং হওয়া টা বন্ধ করেছে।আপাততো মেঘ আউট অফ ডেনঞ্জার।ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে তাই এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।সাঈফা কেও ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ওর রুমে রেখে আসা হয়েছে।
মেঘের বেডের এক পাশে বসে নিশব্দে কাদছেন মোনা খান আর মিড়া রহমান।একটুর জন্য আজকে ওনাদের মেয়েটা মরতে মরতে বেচে গেছে।নাহলে যতোটা উপর থেকে পড়ে ছিলো তাতে এদিক ওদিক কিছু একটা হয়ে গেলে নির্ঘাত মেঘের মিত্যু হতো।মিড়া রহমান যখন মেঘের ড্রেস চেইঞ্জ করছিলেন তখন মনে হয়েছিলো কেউ ওনার কলিজা টেনে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে।নিজের মেয়ের শরীরের এমন ক্ষত বিক্ষত অবস্থা দেখে ওনার মাথা ঝিম দিয়ে উঠেছিলো।ভেবে ছিলেন এখনি হয়তো ওনার প্রানটাও বেড়িয়ে যাবে।কিন্তু তবুও উনি বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছেন।মেয়ের প্রান বাচানোর জন্য উনি যে মেঘের মা সেটা ভুলে গিয়ে একজন ডাক্তারের ধর্ম পালন করেছেন।মেঘের ট্রিটমেন্ট করার সময় ওনি চোখের কোনে এক ফোটা পানিও আসতে দেননি।যথা সম্ভব নিজেকে শক্ত রেখেছেন।
মিড়া রহমান এক ধ্যানে মেঘের চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।তখনই মোনা খান ওনার কাধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললো
“বাইরে চল,দেখে আসি ওদের এখন কি অবস্থা!ওদেরও তো গিয়ে বলতে হবে আপাততো মেঘ সুস্থ আছে।জানিনা একেক জনের এখন কি হাল হয়েছে।”
মিড়া রহমান ভাঙা গলায় বললেন
“আমরা চলে গেলে মেঘের কাছে কে থাকবে?”
মিড়া রহমানের কথা শুনে মোনা খান চোখ দিয়ে সামনে ইশারা করলেন।ওনার ইশারা অনুসরন করে মিড়া রহমান সামনে তাকাতেই দেখলো দুইজন নার্স দাড়িয়ে আছেন।ওনাদের দেখে মিড়া রহমান একটু অবাক হলেন।ওনি ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিলেন যে কখন এরা এই রুমে এসেছে সেটাই ওনি টের পাননি।মোনা খান বসা থেকে দাড়িয়ে বললেন
“মেঘের জ্ঞান ফেরা না পযর্ন্ত ওকে প্রত্যেকটা সেকেন্ড অবজারব করতে হবে।তাই ওনাদের হসপিটাল থেকে ফোন করে আনিয়েছি।চল আমরা এখন ওদিক টা দেখে আসি।এখানে কোনো সমস্যা হলে ওনারা আমাদের ডেকে দিবে।”
কথাটা বলে মোনা খান বাইরে যাওয়ার উদ্দ্যেশে পা বাড়ালেন।ওনার পিছনে পিছনে মিরা রহমানও আসলেন।ওনারা রুমের দরজা খুলে বাইরে বের হতেই ওনাদের কলিজা ধক করে উঠলো।কারন রুমের দরজার সামনের ফ্লোরে আহান হাটু ভেঙে বসে আছে।ওর থেকে কিছুটা দূরে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে আহির আর মিহির দাড়িয়ে আছে।ওদের সোজাসুজি অভি আর হিয়ান দাড়িয়ে আছে।সবাই একদম এলোমেলো আর বিধ্বস্ত হয়ে আছে।প্রত্যেকের চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে।
__________________________
মেঘ যখন সিড়ির নিচে পড়েছিলো তখন আহান গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিয়েছিলো।চারপাশে কি হচ্ছিলো সেদিকে আহানের কোনো খেয়ালই ছিলো না।’ও’ শুধু মেঘকে বুকের সাথে চেপে ধরে কেদে যাচ্ছিলো।আহির আর মিহির সিড়িতেই হতবম্ভ হয়ে বসে পড়েছিলো।মেঘের রক্তাক্ত শরীর দেখে ওরা আর মেঘের কাছে আসার সাহসই পায়নি।ওদের চোখ দিয়ে নিঃশব্দে পানি গরিয়ে পড়ছিলো।শব্দ করে কান্না করার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছিলো না।
এদিকে বাড়ির সবাই মিলে আহান কে মেঘের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আহান ওকে এতোটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে কেউ ছাড়াতেই পারছে না।রিয়ান আর অভি মাঝ সিড়িতে দাড়িয়ে আছে। ওরা কি যে করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।একদিকে আহান পাগলের মতো করছে।আরেক দিকে আহির আর মিহির স্টাচু হয়ে গেছে।তার উপর সাঈফাও ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।অবশেষে ওরা দৌড়ে নিচে চলে গেলো।তারপর দুজন আহানকে জোড় করে টেনে মেঘের থেকে দূরে সরালো।সেই সুযোগে হিয়ান মেঘকে কোলে তুলে নিয়ে উপরে রুমে চলে আসলো।সাঈফার বাবা সাঈফাকেও কোলে করে ওই রুমে নিয়ে আসলেন।মোনা খান,মিড়া রহমান আর সাঈফার মা-বাবা ওই রুমে ঢুকে ভিতর থেকে রুমের দরজা লক করে দিলেন।
অভি আর রিয়ান আহান কে কয়েক মিনিট আটকে রাখতে পেরেছিলো।তারপর আহান ওদের দুজন কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে উপরে চলে যায়।ওর পিছনে পিছনে অভি আর রিয়ানও দৌড়ে যায়।আহান ওই রুমের সামনে গিয়ে হাটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়ে।আর “মেঘ পরী” “মেঘ পরী” বলে জোড়ে চিল্লিয়ে কান্না করতে থাকে।
অভি,রিয়ান,হিয়ান ওরা তিনজন মিলেও আহান কে শান্ত করতে পারছে না।ওদের চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়ছে।একদিকে ওরা আহান কে সামলানোর চেষ্টা করছে অন্যদিকে নিজেদের কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।মোনা খান,মিরা রহমান ওনারা সবাই রুমের মধ্যে বসে আহানের চিৎকার শুনেছে।আহান বারবার চিল্লিয়ে বলেছিলো
“আম্মু,মামনি প্লিজ আমাকে একটা বার মেঘের কাছে যেতে দাও।দরজাটা একটু খোলো প্লিজ।আমি ওকে একটু খানি দেখেই চলে আসবো।তোমরা একটু খানি দরজাটা খুলে দাও প্লিজ।”
আহানের এই চিৎকার গুলো সবাই শুনেছে।কিন্তু কারোরই কিছু করার ছিলো না।কারন রোগির ট্রিটমেন্ট করার সময় বাইরের কাউকে এলাউ করলে কাটা ছেড়া জায়গায় ইনফেকশন হওয়ার চান্স থাকে।আহান এভাবে অনেকক্ষন চিল্লাচিল্লি করার পর এক সময় চুপ হয়ে যায়।দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ ফ্লোরে বসে পড়ে।হিয়ান আর অভি গিয়ে আহির আর মিহির কে সিড়ি দিয়ে টেনে তুলে এখানে নিয়ে আসে।তার কিছু সময় পর সাঈফার বাবা-মা ওকে নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়।দুজন কে এক রুমে রাখলে সমস্যা হবে এইজন্য।সাঈফা কে যখন নিয়ে যাচ্ছিলো তখন একটু সময়ের জন্য দরজাটা খুলেছিলো।কিন্তু আহান এক বারের জন্যও ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করেনি।যেখানে যেভাবে বসা ছিলো চুপচাপ সেখানে সেভাবেই বসে রইলো।ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো’ও’ যেনো একটা পাথর হয়ে গেছে।
____________________________
মোনা খান আর মিরা রহমানকে বের হতে দেখে সবাই উদ্দীগ্ন চাহনিতে ওনাদের দিকে তাকালো।আহান বসা থেকে দাড়িয়ে মোনা খান কে উদ্দ্যেশ্য শান্ত কন্ঠে বললো
“মা মেঘের এখন কি অবস্থা?”
আহানের এমন শান্ত স্বরের প্রশ্ন শুনে মিরা রহমান আর মোনা খান দুজনেই বেশ অবাক হলেন।ওনারা ভেবেই পাচ্ছেন না,যে ছেলে এতোক্ষন এতো চিল্লাচিল্লি করেছে।সে হঠাৎ করে এতোটা শান্ত স্বরে কথা বলছে কিভাবে?তাহলে কি এটা ঝড় আসার আগের নিস্তব্দতা?ওনাদের এভাবে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আহান বললো
“কি হলো মা?কথা বলছো না কেনো?”
আহানের কথায় ওনাদের দুজনের হুশ ফিরে আসে।মোনা খান একটু মলিন হেসে বলে
“আল্লাহর অশেষ রহমতে মেঘ এখন আউট অফ ডেনঞ্জার।আপাততো আর লাইফ রিস্কটা নেই।”
মোনা খানের কথা শুনে সবাই একটা শস্তির নিশ্বাস ফেললো।মিড়া রহমান আহানের কাছে এগিয়ে এসে ভাঙা গলায় বললেন
“বাবাই ভিতরে গিয়ে মেঘকে দেখে আয় যাহ।কিন্তু কোনো কথা বলবি না।ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।’ও’ এখন ঘুমাচ্ছে।”
মিড়া রহমানের কথাটা কানে আসতেই আহানের চেহারায় স্পষ্ট রাগের ছাপ ফুটে উঠলো।’ও’ কাঠ কাঠ গলায় বললো
“আমি এখন মেঘের সামনে যাবো না মামনি।আমার পরীটার গায়ে যারা আঘাত করার স্পর্ধা দেখিয়েছে তাদের আগে উচিৎ শিক্ষাটা দিয়ে আসি।তারপর আমি আমার মেঘের সামনে যাবো।”
কথাটা বলেই আহান সামনের দিকে হাটা দিলো।ওর পিছনে পিছনে আহির,মিহির,অভি,হিয়ান ওরাও গেলো।মিড়া রহমান ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফোস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লেন।উনি জানেন আহান এখন জেড়িন আর আবিরের সাথে কি করতে যাচ্ছে।অন্য সময় হলে হয়তো উনি আহান কে আটকে দিতেন।কিন্তু আজকে আহান কে আটকাবেন না।কারন জেড়িন এতোদিন যতো ভূল করেছে সব উনি মাফ করে দিয়েছেন।ভেবেছেন অল্প বয়স তাই হয়তো না বুঝেই ঝোকের বসে ভুল গুলো করে ফেলেছে।কিন্তু ভুল করতে করতে জেড়িন কিনা শেষ পযর্ন্ত ওনার মেয়েটাকে মেরেই ফেলতে চাইলো?ছোট বেলা থেকে উনি জেড়িন কে এতো স্নেহ,আদর, যত্ন দিয়ে বড় করলেন।অথচ জেড়িন এতো আদর,যত্ন,ভালোবাসার প্রতিদান কিনা ওনার মেয়ের রক্ত ঝড়িয়ে দিলো?
_____________________________
আহাদ খান,আজম রহমান সহ প্রায় সব আত্মীয় স্বজনেরা ড্রইং রুমে বসে আছে।সন্ধ্যা থেকে ওনাদের কারো পেটে এক ফোটা পানিও পড়েনি।মেঘের টেনশনে সবাই খাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছেন।এইমাএ মোনা খান আর মিড়া রহমান এসে জানালেন মেঘ এখন সুস্থ আছে।সেটা শুনে সবার টেনশন অনেকটা কমলো।আহাদ খান আর আজম রহমান বসা থেকে উঠে দাড়ালেন।উদ্দেশ্য মেঘকে দূর থেকে একবার দেখেই চলে আসবেন।ওনারা সামনে এগিয়ে গিয়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে যাবেন তার আগেই ওনাদের কানে চিৎকার চেচামেচির শব্দ ভেষে এলো।ওনারা চমকে সামনে তাকাতেই দেখলেন মিহির জেড়িনের চুলের মুঠি ধরে টেনে হেছড়ে নিচে নিয়ে আসছে।তার পিছনে আহির আবিরের কলার চেপে ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে আসছে।আর ওদের পিছনে পিছনে নামছে হিয়ান,আহান আর অভি।আহানের হাতে একটা রিভলবার।ড্রইং রুমে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলেন।মিহির আর আহির নিচে নেমে সবার সামনে আবির আর জেড়িনকে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।
জেড়িনের মা চিল্লিয়ে বললো
“এসব কি হচ্ছে?তোমরা কোন সাহসে আমার মেয়ে জামাইয়ের গায়ে হাত দিয়েছো?তোমাদের তো আমি পুলিশে দিবো।”
কথাটা বলে জেড়িনের মা দৌড়ে এসে জেড়িন কে ধরতে যাবে তার আগেই অভি এসে ওনার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে দূরে ছুড়ে মারলো।তারপর দাতে দাত চেপে বললো
“যেখানে আছেন সেখানেই দাড়িয়ে থাকুন।একদম সামনে এগোনোর চেষ্টা করবেন না।”
অভি জেড়িনের মাকে এতোটাই জোড়ে ছুড়ে মেরেছে যে উনি ফ্লোরে পড়ে গিয়ে কোমরে ভিষন ব্যাথ্যা পেয়েছেন।উনি কোমরে হাত দিয়ে আজম রহমান কে উদ্দ্যেশ্য করে কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“আজম এসব কি হচ্ছে?তোর সামনে ওরা আমাকে মারছে,আমার মেয়েকে মারছে আর তুই দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিস?ওদের কিছু বলছিস না কেনো?”
ওনার কথাটা শেষ হতেই আহান রেগে চিল্লিয়ে বললো
“আজকে কেউ কিচ্ছু বলবে না।অনেক শুনেছি সবার কথা।আজকে আমি বলবো আর সবাই আমার কথা শুনবে।সবাই নিজেদের জায়গায় দাড়িয়ে যেটা হচ্ছে চুপচাপ দেখে যাও।যদি কারো মুখ থেকে একটা টু শব্দও বেড়িয়েছে তাহলে সেটাকে এখানেই জ্যান্ত পুতে ফেলবো।”
আহানের চিৎকারে ওখানে উপস্থিত সব মানুষ কেপে উঠলো।সবার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।ওকে আগে কক্ষনো কেউ এতোটা রেগে যেতে দেখেনি।আহানের রাগ বেশি হলেও ‘ও’ সহজে নিজের রাগ প্রকাশ করে না।অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও ‘ও’ নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারে।তবে একবার রেগে গেলে কাকে কি বলে নিজেরই হুস থাকে না।
অবির আর জেড়িন যেখানে পড়ে আছে আহান সেখানে গিয়ে ঠিক ওদের দুজনের মাঝখানে দাড়ালো।তারপর শান্ত স্বরে বললো
“তো মিসেস রহমান এন্ড মিঃ রহমান তখন ওই রুমে কি কি হয়েছিলো সবটা শুরু থেকে আমাকে বলুন।”
জেড়িন কিছু বলার আগেই আবির কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“তেমন কিছুই হয়নি।আসলে ওই একটু আরকি!”
আবির কথাটা শেষ করতে পারলো না তার আগেই আহান জোড়ে ওর পেটে একটা লাথি মারলো।তারপর দাতে দাত চেপে বললো
“তেমন কিছুই হয়নি তাহলে ওর গায়ে এতোগুলো মারের দাগ আসলো কোথা থেকে?কে মেরেছে ওকে তুই?”
বলেই আহান আবিরের কলার ধরে দাড় করিয়ে ওর নাকের উপর পরপর দুইটা ঘুসি মারলো।তারপর চেচিয়ে বললো
“আজ অবদি আমি যার গায়ে একটা ফুলের টোকাও দেইনি,তুই কোন সাহসে তাকে এতোটা আঘাত করলি?”
আহান আবার মারতে যাবে তার আগেই আবীর চেচিয়ে বললো
“মেঘনা কে আমি মারিনি।ওকে জেড়িন মেরেছে।আর সিড়ি দিয়ে থাক্কাটাও জেড়িন দিয়েছিলো।”
আবিরের কথা শুনে কয়েকজন ছাড়া সবাই বেশ অবাক হলো।মেঘকে তখন ধাক্কা টা জেড়িন মেরেছিলো সেটা অনেকেই দেখেছে।কিন্তু এতো হুড়োহুড়ির মধ্যে ব্যাপ্যার টা সবার মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো।
রুমের মধ্যে যা যা হয়েছিলো সব কিছু শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত আবির গরগর করে বলে দিলো।মানে বলা যায় যে এক প্রকার জেড়িনের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে দিলো।সবটা শুনে আহান আবির কে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে জেড়িনের দিকে একপা একপা করে এগিয়ে যেতে লাগলো।আহান কে এগিয়ে আসতে দেখে জেড়িন বসা অবস্থায়ই পিছাতে পিছাতে বললো
“আমি শুধু শুধু মেঘকে মারিনি।মেঘ অন্যায় করেছে তাই ওকে মেরেছি।”
জেড়িনের কথা শুনে আহানের পা দুটো থেকে গেলো।’ও’ জেড়িনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো
“মেঘ অন্যায় করেছে মানে?”
জেড়িন মনে একটু সাহস জুগিয়ে বললো
“মেঘ আবির কে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে।বলেছে আবির আমাকে ডিবোর্স দিয়ে যেনো ওকে বিয়ে করে।আবির সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি তাই মেঘ ওকে চারটা চড়ও মেরেছে।শুধু তাই নয় আপনার ছোট ভাইয়ের সাথেও মেঘের অবৈধ সম্পর্ক আছে।”
জেড়িনের কথা শুনে আহান হো হো করে হেসে দিলো।হাসতে হাসতে গিয়ে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো।ওকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ ওর সামনে এই বছরের সেরা জোকস টা বলে দিয়েছে।আহান কে এভাবে হাসতে দেখে জেড়িন একটু ভ্যাবাচ্যাগা খেয়ে গেলো।’ও’ ভেবেছিলো আহান হয়তো মেঘকে ভুল বুঝবে।কিন্তু তা না করে উল্টে এভাবে পাগলের মতো হাসছে?
জেড়িন বসা থেকে দাড়িয়ে আহানের সামনে গিয়ে বললো
“আপনার আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তাইতো?এক মিনিট ওয়েট করুন,আমি আপনাকে প্রুফ দিচ্ছি।আমি নিজের চোখে সবকিছু দেখেছি আর পিকও তুলেছি।”
কথাটা বলেই জেড়িন আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক দৌড়ে উপরে চলে গেলো।আহিরের ইচ্ছে করছে এক্ষুনি জেড়িনের কলিজাটা টেনে ছিড়ে ফেলতে।শেষ পযর্ন্ত ওর কলিজার টুকরো বোনটার সাথে ওর নামের বাজে কথা রটাচ্ছে।এই মেয়েকে তো ‘ও’ আজকে কিছুতেই ছাড়বে না।
জেড়িন যেভাবে দৌড়ে গিয়েছিলো সেভাবেই আবার দৌড়াতে দৌড়াতে ফিরে এলো।ওর হাতে একটা লেডিস হ্যান্ড ব্যাগ।জেড়িন এসে আহানের সামনে দাড়িয়ে ব্যাগ টা খুলে কিছু পিক বের করে সেগুলো আহানের হাতে দিলো।পিক গুলো দেখে আহানের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।’ও’ বসা থেকে দাড়িয়ে একটা একটা করে সব পিক দেখতে লাগলো।আহান কে এভাবে রেগে যেতে দেখে জেড়িন একটা বাকা হাসি দিলো।ওর ঔষধে কাজ দিয়েছে তাহলে।জেড়িন ওর চেহারার এক্সপ্রেশন টা অসহায়ের মতো বানিয়ে বিনয়ী কন্ঠে বললো
“দেখলেন তো আমি মিথ্যা কথা বলছিলাম না।মেঘ সত্যিই একটা বাজে মেয়ে।আমি নিজে ওইদিন ওকে আবিরের সাথে দেখেছি।তবে ওদের থেকে অনেক টা দূরে দাড়িয়ে ছিলাম তাই ওরা কি কথা বলেছে সেটা শুনতে পাইনি।মেঘ রুম থেকে বের হওয়ার পর আমি ওর পিছু নেই, এসে দেখি ও আপনার ভাইকে জড়িয়ে ধরে আছে।তার আগে আমি ওকে আপনার সাথেও ক্লোজ অবস্থায় দেখেছিলাম।সেই পিক গুলোও ওখানে আছে চেক করুন।তখন বিয়ে বাড়িতে অনেক লোক ছিলো তাই আমি নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে নিয়েছিলাম।কিন্তু আজকে সন্ধ্যায় আবির যখন আমাকে ডিবোর্সের কথা জানায় তখন আমার ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে গেছিলো।আমি রেগে গিয়ে ভাঙচুর শুধু করি।তখন আবির আমাকে বলে এগুলো নাকি মেঘ ওকে বলতে বলেছে।মেঘ নাকি ওকে হুমকি দিয়েছে।বলেছে যে আবির যদি আমাকে ডিবোর্স না দেয় তাহলে ‘ও’ সুইসাইড করবে।”
জেড়িনের কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেছে।জেড়িন কথা গুলো এমন ভাবে বলেছে যে কেউ কথা গুলো বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে।আহান এখনো পিক গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।জেড়িন আবারও বললো
“আবিরের কথা প্রথমে আমার একদম বিশ্বাস হয়নি।কিন্তু মেঘের গলায় A অক্ষরের লকেট দেখে আমি ওর কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য হই।তাই রাগের মাথায় মেঘকে মেরে ছিলাম।তখন কি করেছি আমি নিজেই জানি না।আর আপনি একবার এটা ভাবুন একটা মেয়ে কতোটা বাজে হলে একসাথে তিনটা ছেলের সাথে রিলেশন রাখতে চায়?”
জেড়িন কথাটা শেষ করার সাথে সাথে আহান ঠাটিয়ে জেড়িনের গালে একটা চড় মারলো।আচৎমকা এভাবে চড় মারায় জেড়িন ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যায়।আহান রেগে চিল্লিয়ে বলে
“তোর সাহস হয় কি করে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার মেঘকে বাজে মেয়ে বলার?তোকে তো আজকে,,,,,”
কথাটা বলেই আহান জেড়িনের দুই পায়ে দুটো শুট করলো।জেড়িন যন্থনায় চিৎকার করছে।ওর মা-বাবা দূরে দাড়িয়ে কাদছে।রক্তে ফ্লোর ভেষে যাচ্ছে।সবাই সবটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে কিন্তু কারোরই কিছু করার নেই।আহান চিল্লিয়ে বললো
“ওই A অক্ষরের লকেট আবিরের নামের নয় ওটা আমার নামের লকেট।ওই লকেট টা আমি মেঘকে কিনে দিয়েছিলাম।আর তুই কিছু না জেনে,না বুঝে আমার মেঘকে আঘাত করে ফেললি?এতো বড় কলিজা তোর?”
জেড়িনের পায়ের যেখানে গুলি লেগেছে আহান নিজের পা দিয়ে সেখানে চেপে ধরে বললো
“তোর কি আমাকে আবিরের মতো বলদ মনে হয়?যে তুই যা বলবি আমি তাই বিশ্বাস করে নেবো।চার বছর আগে তুই আমার মেঘকে সবার সামনে অপমান করেছিলি।কতোগুলা এডিট করা পিক দেখিয়ে মেঘকে দুশ্চরিএা প্রমান করেছিলি।আর সবাই তোর কথা বিশ্বাস করেছিলো।একটা বারও কেউ খোজ নিয়ে দেখার প্রোয়জন মনে করেনি যে ওই পিক গুলো আসল নাকি নকল?আর আবির তো আমার মেঘের গায়ে হাত পযর্ন্ত তুলেছিলো।তবে বিশ্বাস কর সে সবের জন্য তোদের দুজনকে আমি মাফ করে দিতাম।কিচ্ছু বলতাম না তোদের।কারন তোদের জন্যই আমি আমার মেঘ পরী কে আবার খুজে পেয়েছিলাম।কিন্তু তারপর তোরা যা যা করেছিস তার জন্য তোদের ক্ষমা করার প্রশ্নই উঠে না।আর কালকে তো সব লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস।লাইফের সব থেকে বড় ভুলটা কালকে করে ফেলেছিস।আর এর জন্য তো তোদের শাস্তি পেতেই হবে।”
জেড়িন পায়ে ব্যাথ্যায় চিল্লিয়ে কাদছে।আহান ওর পায়ের উপর থেকে নিজের পা সরিয়ে আহিরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর শক্ত কন্ঠে বললো
“জেড়িন যে পিক গুলো আমাকে দিয়েছিলো ওগুলো একদম রিয়েল। আর আবিরের সাথে কথা বলে রুম থেকে বের হবার পর মেঘ সবার প্রথমে তোর সাথে কথা বলেছে।তার মানে ওইদিন আবিরের সাথে মেঘের কি কথা হয়ে ছিলো সেটা তুই কিছুটা হলেও জানিস।আর পিক গুলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তুই কিছু একটা নিয়ে ভিষন রেগে আছিস।এইবার বল ওই দিন কি হয়েছিলো।দেখ আমি মেঘকে অনেক বিশ্বাস করি।আমি জানি ‘ও’ কখনো কোনো ভুল কাজ করতে পারে না।কিন্তু এখানের কোনো মানুষ যাতে আমার মেঘের দিকে আঙুল তুলতে না পারে তাই সত্যিটা সবার শোনাটা জরুরি।”
আহানের কথা শুনে সেদিন যা যা ঘটেছিলো সবটা আহির বলে দিলো।সবটা শোনার পর আহান আরো রেগে গেলো।’ও’ আবিরের কাছে গিয়ে ওকে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো।তারপর ওর গার্ড কে ফোন করে এনে আবির আর জেড়িন কে নিয়ে ওদের গোডাউনে চলে গেলো।সাথে মিহির,আহির,অভিও গেলো।
____________________________
সারা রাত কেউ ঘুমাতে পারেনি।সবাই ড্রইং রুমেই ওভাবে বসে ছিলো।সকাল সাতটার দিকে আহান,আহির,মিহির আর অভি বাড়িতে ফিরে এলো।এসেই আহান কোনো কথা না বলে টিভি অন করলো।টিভি অন করতেই সবার কানে ভেষে এলো
“ভোর চারটার সময় পুলিশ একটা গোডাউন রেড দিয়ে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ড্রাগস আটক করে।সাথে অবৈধ আর্মস আর বোম বানানোর ফর্মূলাও ছিলো।গোডাউন টা আর কারো নয় বিজনেস ম্যান আবির রহমানের।গোপন সূএে জানা গেছে আবির রহমান এবং তার স্থী বহু বছর ধরে ওই গোডাউনে বসেই ওনাদের অবৈধ বিজনেস চালাতেন।কালকে রাতে পুলিশের কাছে সব প্রমান আসার পর ওনারা গিয়ে গোডাউনে অ্যাট্যাক করেন। আবির আর ওনার স্থী পুলিশের হাত থেকে পালাতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার আগেই পুলিশের গুলিতে ওনারা আহত হন।পুলিশ এখনো ইনবেষ্টিকেশন চালিয়ে যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারা যাবে এর সাথে আর কারা কারা যুক্ত ছিলো।”
এইটুকু শোনার পর সবাই টিভির স্কিনের দিকে চোখ রাখলো।দেখলো জেড়িন আর আবিরকে ষ্ট্রেচারে করে এ্যাম্বুলেন্সে উঠানো হচ্ছে দুজনের অবস্থাই ভিষন খারাপ।ওদের সারা শরীরে মারের দাগে পুরো নীল হয়ে গেছে।ওদের দেখে সবাই আৎতকে উঠলো।এই টুকু সময়ে কি অবস্থা হয়েছে দুজনের।আবির মা আর জেড়িনের মা হাউমাউ করে কেদে দিলেন।আহান টিভি টা অফ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
“হয়তো তোমাদের মনে হতেই পারে ওদের আমি ফাসিয়েছি।হ্যা এই সব কিছু আমার করানো কিন্তু ড্রাগসের ব্যাপ্যারটা একদম সত্যি।”
আহানের কথা শুনে সবাই অবাক চোখে ওর দিকে তাকালো।আহান বললো
“আবিরের উপরে আমার অনেক আগে থেকেই টার্গেট ছিলো।আমি যাষ্ট ওর থেকে ছোট খাটো একটা প্রতিশোধ নিতে চেয়ে ছিলাম।তাই ওর পিছনে লোক লাগিয়ে ছিলাম।কিন্তু এভাবে কেচো খুরতে যে কেউটে বেড়িয়ে যাবে সেটা একদমই ভাবিনি।কিছুদিন আগে আমার লোকেরা এসে জানায় আবির চার বছর ধরে ড্রাগসের বিজনেস করছে।বাহিরের দেশ থেকে ড্রাগস এনে এই দেশে সাপ্লাই করে।এন্ড এইসব কিছুর সাথে জেড়িনও যুক্ত আছে।তারপর থেকে আমি ওদের বিরুদ্ধে প্রমান যোগার করতে থাকি।আর একে একে সব কিছু পেয়েও যাই।ভেবেছিলাম সব প্রমান সহ ওদের দুজনকে পুলিশে দিয়ে দিবো।কিন্তু ওরা এমন একটা কান্ড করে ফেললো যে ওদের না মেরে পাড়লাম না।”
আহানের কথা শুনে সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো।ওরা দুজন মিলে এতোবছর ধরে এসব করে যাচ্ছে আর ওনারা কেউ কিছু জানতেই পারলেন না?আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“বাই দা ওয়ে আর্মস এবং বোমের ফর্মুলা গুলো আমার সাজানো।আসলে ভাবলাম ওরা ড্রাগসের ব্যাবসা করে এতো মানুষের ক্ষতি করেছে।কতো মায়ের কোল খালি করেছে।কতো শতো ষ্টুডেন্টদের জিবন ধংস করে দিয়েছে।ওদের সামান্য কয়েক বছর জেল খাটালে কিছু হবেনা।তাই ট্রেরোরিষ্ট সাজিয়ে জাবত জিবনের জন্য কারাগারে পাঠানোর ব্যাবস্থা করলাম।”
#চলবে,,,,,,,,,,,,,