#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অধরা দরজা খুলতেই দেখতে পায় দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব। অর্ণব হলো অয়নের কাজিন। অর্ণব সেই যে বিয়ের সময় এখানে এসেছে ছিলো। আর কখনও এমুখো হয়নি। আসলে অর্ণব আমেরিকা থাকে। সেখানেই বিজনেস করে বলে দেশে ফেরা হয় না। অর্ণবকে অধরা ঠিক চিনতে পারলেও একটু না চেনার ভান করলো সে।
— আপনি কে মিস্টার? এখানে কাকে চাই?
অধরার কন্ঠ শুনে অর্ণব চোখের উপর থেকে সানগ্লাসটা নামিয়ে একটু আমতো আমতো করে বলতে লাগলো
— এটা কি অয়ন চৌধুরীর বাড়ি? আসলে আমি অয়নের কাছে এসেছিলাম। ভূল করে বোধহয় এখানে চলে এসেছি।
— এই দাঁড়ান দাঁড়ান। এটা অয়ন চৌধুরীর বাড়ি কিন্তু ভাই আপনি কে? আর অয়নকে কেনো খুঁজছেন?
অধরার কথা শেষ হতেই অর্ণব হাত থেকে লাগেজটা মাটিতে ফেলে দিয়ে একটু রাগি লুক নিয়ে নিজের কোমরে হাত দিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— উফফফ! ভাবী। তুমি আর মানুষ হলে না। এতো দূর থেকে তোমার আদরের দেওর আসছে কোথায় না হাল চাল জ্বিজ্ঞাস করবে। তা না করে আপনি কে?
— হাহাহাহা! হুম আসো ভিতরে সবাই তোমাকে দেখলে একদম সারপ্রাইজড হয়ে যাবে। তবে একটা কথা আসার আগে আমাদের জানালে না কেনো?
— ওমা জানালে আর সারপ্রাইজ থাকতো কি করে?
— হুম।
* অধরা অর্ণবকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসে। সবাই সকাল সকাল অর্ণবকে দেখে ভিশন অবাক হয়ে যায়। সবাই একদম সারপ্রাইজড। অর্ণব অয়নের বাবা মা কে জড়িয়ে ধরলো। আসলে অর্ণবের কাছে পৃথিবী বলতে এরাই আছে।
— স্যার, সকাল হয়ে গেছে?
ওয়েটারের বিরক্তিকর কন্ঠ কানে আসতেই অয়নের ঘোর কাটে। টেবিলের দিক থেকে মাথাটা উঁচু করে ওয়েটারের দিকে দৃষ্টিপাত করলো অয়ন। মৃদু হাসি দিয়ে অয়ন ওয়েটারের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো
— সকাল হয়ে গেছে?
— জ্বি স্যার। প্লিজ উঠুন।
— হ্যাঁ, উঠছি।
অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে একটু বেগ পেতে হলো। সারা রাত বসে থেকে এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে কোমড়ে হালকা টান অনুভব করলো সে। অয়ন টেবিল থেকে উঠে পেমেন্ট দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। চোখ ব্যথা করছে ভিশন। এর আগেও রাত জেগেছি বহুবার কিন্তু কখনও এমনটা হয়নি। আজ হঠাৎ করেই এমন হচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে অয়ন নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো। অফিসে যেতে হবে। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর অধরার কথা ভাবছে। কতটা বাজে ভাবে কাল রাতে ব্যবহার করেছে সে। অধরার কথা মনে পরতেই অয়নের মনে পরে যায় অধরার দেয়া থাপ্পড়ের কথা। অয়ন একটা হাত নিজের গালে রাখলো। এর জবাব হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ি দিতে হবে।
* অফিসে এসে অয়ন নিজের চেম্বারে গিয়ে বসলো। নিজের কেবিনে বসে অয়ন ল্যাপটপ টা অপেন করলো। কিছু ফাইল ডাউনলোড করে নিলো অয়ন। ফাইল গুলো ডাউনলোড হতেই অয়নের চোখ পরলো অর্পার দিকে। অর্পা মনটা বেশ উদাস করে অফিসে প্রবেশ করলো। আসলে উদাস হবে নাই বা কেনো? অয়ন যে এখন আর তার কাছে আসে না। জড়িয়ে ধরে গল্প করে না। দূরে ঠেলে দিয়েছে তাকে। অর্পার নিজের ডেক্সে এসে কাজ করতে শুরু করলো। অয়ন অর্পার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। এভাবে কতজনের মন নিয়ে অয়ন খেলেছে তার হিসেব করা দায়।
দুপুরের দিকে অয়ন লাঞ্চ করার জন্য নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে ক্যান্টিনে চলে আসে। ক্যান্টিনে আসার সময় অর্পাকে কোথাও দেখা গেলো না। অয়ন ক্যান্টিনে আসতেই দেখতে পেলো সবাই খাবার খাচ্ছে। আশে পাশে ফাঁকা সিট বলে কোথাও কোনো জায়গা নেই। অয়ন ভালো করে তাকাতেই দেখতে পেলো অর্পাকে। একা বসে আছে চুপ চাপ। অয়ন একটু থমকে থেকে কিছু একটা ভেবে অর্পার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। অয়ন অর্পার টেবিলের সামনে আসতেই অর্পা অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অয়নের দিকে তাকাতেই অর্পার চোখ জোড়া ছলছল হয়ে আসে। অয়নের সেই দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অয়ন অর্পার সামনে বসে লাঞ্চ করতে লাগলো। অয়ন খাবার খাচ্ছে। অর্পা কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। কিছু সময় নিরব থেকে অর্পা আর নিরব থাকতে পারলো না। মুখ ফুটে বলে ফেললো
— কেমন আছেন? সব ঠিক তো?
অয়ন অর্পার কথা শুনে মুখ তুলে অর্পার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিলো
— আমি ভালো আছি। তুমি থেকে আপনি করে বলার কারন কি?
— উহু অধিকারের পাতা সিমাবদ্ধ। মানুষের মিছক প্রতারনাকে সত্যি ভালোবাসা ভেবে ঠকে গেছি আমি।
— এই ওয়েট ওয়েট ঠকেছো মানে? আমি তোমার সাথে এমন কিছু করি নাই যাকে ঠকানো বলে।
— ভালোবাসার অনুভূতি মনের মধ্যে জাগিয়ে দূরে ঠেলে দেয়াকে কি বলে তা আমার জানি নাই।
— হুম। খাবার খাও।
— গলা দিয়ে নামছে না।
— ওহহহ, তাই। কোনো এক সময়ে আমারও সেম এমনি অবস্থা হয়ে ছিলো। কিন্তু নাউ আমাকে দেখো। একদম ঠিক ঠাক।
— হুম।
অর্পা অয়নের সামনে থেকে উঠে চলে যায়। বেশ কষ্ট হচ্ছে অয়নের কথা গুলো শুনে। অয়নের কোনো পাত্তা নেই। অয়ন খাবার শেষ করে নিজের কেবিনে ফিরে এসে আবার কাজ করতে লাগলো। কিছু সময় কাজ করতেই অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রাজ কল করেছে। অয়ন কলটা পিক করলো না। কারন কাল রাজ অয়নের মনে আঘাত করেছে। অয়ন আবার কাজে মন দিলো।
* রাতে কাজ শেষ করে অয়ন নিজের গাড়ির দিকে চলে আসে। বাড়ি যেতে হবে। অয়ন গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে এসে অয়ন গাড়িটা পার্ক করে বাড়ির ভিতরে চলে আসে। বাড়িতে এসে অয়ন নিজের রুমের দিকে চলে আসে। রুমের দরজার সামনে আসতেই অয়ন থমকে যায়। রুমের ভিতর থেকে অধরার হাসির শব্দ ভেসে আসছে। অয়ন দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি কারনে অধরা এতো হাসছে? কাল রাত থেকে আমি বাড়ি ফিরি নাই। বেঁচে আছি কিনা তা জানার জন্য হলেও একটা কল করা আবশ্যক ছিলো। কিন্তু অধরা একটা কল ও করেনি। হুম, প্রয়োজন পরেনি। প্রয়োজন পরলে অবশ্যই করতো। তাছাড়া আমি বেঁচে থাকলেও অধরার কিছু রায় আসে না। আর মরে গেলেও না।
* অয়ন দরজার বাহির থেকে নিজের রুয়ে ঢুকতেই একটু অবাক হয়ে যায়। অধরা আর অর্ণব পাশাপাশি বসে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে। অয়ন কে দেখতে পেয়ে অর্ণব বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের দিকে ছুটে চলে আসে। অয়নকে জড়িয়ে ধরে অর্ণব হাস্যজ্বল মুখে বলতে লাগলো
— কিরে অয়ন কেমন আছিস? অবাক হয়ে গেছিস আমায় দেখে? আরে তোকে সারপ্রাইজ দিতেই তো না বলে আসা।
— হুম। কখন এসেছিস?
— এই তো সকাল বেলা। এসে শুনলাম তুই নাকি অফিসের জন্য চলে গেছিস। তাই আর বিরক্ত করি নাই
— ওহহ। আচ্ছা রাত অনেক হয়েছে যা রেস্ট করে নে।
— এতো বছর তো ঘুমিয়েছি ভাই। আজ নো ঘুম যাস্ট আড্ডা হবে।
— সরি। আমার ইচ্ছে নেই। ঘুম পাচ্ছে আমার।
অয়ন কথাটা শেষ করে অর্ণবকে একটু সাইড করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। অয়নের ব্যবহারে অর্ণব বেশ অবাক হলো। “অয়ন তো কখনও এমন করেনি। বেশ হাসি খুশি একটা ছেলে। আড্ডা মারার কথা শুনতেই যার মনে লাড্ডু ফুটে যায়। সেই অয়ন আমাকে এড়িয়ে গেলো”? আপনমনে কথাটা ভাবছে অর্ণব। অধরা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণবের উপস্থিতি অয়নের পছন্দ হয়নি তা অধরা বেশ বুঝতে পারছে। অর্ণব অধরার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা একে বলে উঠলো
— আচ্ছা ভাবী অয়ন মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত। আমি এখন আসি। আড্ডা কাল দিবো ওকে।
— জ্বি, ঠিক আছে।
অর্ণব চলে গেলো। অয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করতে লাগলো। অধরা সোফায় বসে ছিলো। পিছন থেকে অয়নকে উদ্দেশ্য করে অধরা বললো
— অর্ণবের উপর রাগ থাকতে পারে। কিন্তু ছেলে টাকে ভালো করে দু চারটা কথা বললে হয়তো ওর ভালো লাগতো।
অধরার কথার কোনো জবাব অয়ন দিলো না। নিশ্চুপ হয়ে নিজের কাজ করছে সে। অধরা আবারও কথাটা রিপিট করতেই অয়ন ফোঁস করে পিছন ফিরে তাকিয়ে বলতে লাগলো
— আমি কেনো সবার ভালো লাগা খারাপ লাগা দেখবো? অদ্ভুত। রাত জেগে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করলে তুমি দিতে পারতে তো? আমি বারন করি নাই। আর আমার বারন যে কতটা কার্যকর হবে তা আমার জানা আছে। বাই দ্যা ওয়ে আমি এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।
* অধরাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না অয়ন। নিজের কথা শেষ করে ব্যল্কনির দিকে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে খেতে লাগলো সে। অধরা কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। অয়ন অনেকটা সময় ব্যল্কনিতে থাকার পরে অধরা চুপটি করে ব্যল্কনির দিকে চলে আসে। অয়ন আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবনায় মগ্ন। অধরা অয়নের পাশে দাঁড়িয়ে নম্ন গলায় অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— খাবার দিবো কি?
কথাটা শেষ করার সাথে সাথে অয়ন বসা থেকে দুম করে উঠে দাঁড়িয়ে অধরাকে………………………
#চলবে……………………….