ভালোবাসার তৃষ্ণাতে তুমি পর্ব -০৯

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

*কথাটা শেষ করার সাথে সাথে অয়ন বসা থেকে দুম করে উঠে দাঁড়িয়ে অধরাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে বলল

— একদম চুপ। নেকামি হচ্ছে এখানে? ভালোবাসা গড়াগড়ি খাচ্ছে তাই না। ব্লাডি স্টুপিট মেয়ে একটা।

কথাটা শেষ করতেই অয়ন অধরাকে এক ধাক্কা দিয়ে নিজের অধরার সামনে‌ থেকে‌ সরে যায়। অধরা থ মরে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার। অয়ন অধরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— এখানে এখনও দাড়িয়ে কি শুটিং দেখা হচ্ছে? যেতে বললাম না। কথা কানে যায় না? যাও অর্ণবের সাথে বসে ডিনার করো। ওকে‌ গিয়ে বলো খাবার দিবে কি না। নেকমি যত্তসব।

অয়নের ধমক খেয়ে অধরা নিজের রুমে চলে এলো। বিছানায় বসে অয়নের কথার মানে খুঁজতে লাগলো সে। আপন মনে ভাবছে অধরা “এই সাইকো মার্কা লোকটা এমন করছে কেনো? সবাইকে নিজের মতো ভাবে। তা না হলে অর্ণবকে নিয়ে এতোটা রেগে যেতো‌ না। ভালো কথা বলেছি দোষ হয়ে গেছে। আজব” অধরা বিছানা ঠিক করে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। অয়ন ব্যল্কনিতে বসে রইল। অধরার সাথে অর্ণবকে দেখার পরে শরীরের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠে তার। যদিও অধরাকে সে ভালোবাসে না। তবে কেনো অধরার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না সে? অয়ন অনেক কিছু চিন্তা করতে করতে কখনও যে সোফার উপর বসে ঘুমিয়ে গেছে তা‌ মনে নেই।

*অয়নের ঘুম ভাঙ্গে অধরার মিষ্টি সুমধুর কন্ঠে। অধরা ঘুমন্ত অয়নের বুকের উপর হাত রেখে পরম আবেশে অয়নকে ডাকছে।

— অয়ন। ওঠো সকাল হয়ে গেছে। অফিসে যাবে না?

— উহু….!

— ওকে ঠিক আছে।

কথাটা বলা শেষ করতে করতে অধরা অয়নের পাশ থেকে উঠে চলে যেতে নিলো। অয়ন কোনো অধরাকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অধরা হাত দুম করে চেপে ধরলো। অধরা মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে অয়নের দিকে তাকানোর সাথে সাথে অয়ন অধরাকে হেঁচকা টান দিলো। অধরাকে হেঁচকা টান দিতেই অধরা তাল সামলাতে না পেরে অয়নের বুকের উপর এসে পরলো। অয়ন অধরার হাত ছেড়ে দিয়ে অধরার কপালের উপর এলোমেলো চুল গুলো সযত্নে ঠিক করে দিতে লাগলো। অধরা‌ নিজের চোখ জোড়া বড়বড় করে অয়নের চোখ বরাবর দৃষ্টি রাখলো। অয়নের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি একটা হাসি উঁকি দিচ্ছে। অয়ন প্রতিটা স্পর্শে অধরার বেশ অবাক হচ্ছে। এক রাতের মধ্যে হঠাৎ করে কি এমন হলো যে অয়নের ব্যবহার এতোটা বদলে গেলো? কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অয়ন অধরার কানের পিছনে নিজের হাত গুজে দিয়ে অধরার ঠোঁট জোড়া নিজের দিকে টানছে। অয়নের নাকের গরম নিঃশ্বাস অধরার মুখের উপর পরছে। অধরা বুঝে উঠতে পারছে না এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত! অধরার চেহারায় বিরক্তি স্পষ্ট। অয়নের সেই দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। অয়ন অধরার ঠোঁট জোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া এক করবে ঠিক এমন সময় অধরা অয়নের বুকের উপর ভর করে নিজেকে অয়নের থেকে আলাদা করে নিলো। অয়নের বুকের উপর থেকে অধরা সরে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে আছে। অধরা উঠে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। হাত পা কাঁপছে অধরার। অয়ন শোয়া থেকে উঠে বসলো। অধরা‌ অয়নের দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলো না। হনহন করে সে চলে যায় ব্যল্কনির দিক থেকে। অয়ন মাথাটা নিচু করে বসে আছে। আপন মনে অয়ন নিজের দিকে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিলো। “যত ভাবি নিজের দিকে অধরাকে টেনে নিবো। অনেক ভালোবাসা দিবো। কিন্তু ততই অধরা আমাকে প্রমান করে দেয় আমার জায়গাটা কোথায়। বেহায়া, নির্লজ্জের মতো বার বার নিজেকে ওর কাছে বিলিয়ে দিয়ে আমি এটাই প্রমান করি তাকে ছাড়া আমার চলে না। নিজের থেকে বেশি গুরুত্ব অন্য কাউকে দিলে এমনটাই হবে”। অয়ন সোফা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

“কেনো আমি অয়নের স্পর্শ অনুভব করতে পারি না? যখন ওর খুব কাছে থাকি তখন কেনো আমার অসহ্যকর লাগে? আমিতো ওকে ভালোবাসি। তবে কেনো মন‌ থেকে ওকে মেনে নিতে পারি না? অয়নের অতিতের কথা গুলো মনে পরতেই অয়নের প্রতি তীব্র ঘৃণা কাজ করে। ওর চোখে আমি ভালোবাসা দেখতে পাই না। ওর চোখে আমি দেখতে পাই সেই এক অমানুষিক ব্যক্তিত্ব। যেই ব্যক্তিত্ব আমাকে ঠকিয়ে। যে ব্যক্তিত্ব আমার প্রতি আসক্ত নয়”। রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে রান্না করছে অধরা। রান্নার প্রতি তার কোনো মনোযোগ নেই। অয়নের কথা গুলো মনে পরতেই চোখের কোনে জল চলে আসে। সেই সাথে ঘৃণা।

— পেঁয়াজের ঝাঁজ কি চোখ থেকে নাকে এসে পরেছে?

অর্ণবের মৃদু কন্ঠে অধরার কানে ভেসে আসতেই অধরা নিজের চোখের জল আড়াল করে ফেললো। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি এঁকে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল অধরা

— আরে কোথায় পেঁয়াজ আর কোথায় আমার চোখ! পেঁয়াজের সাথে আয়ার চোখের সম্পর্ক অনেক আগেই ছিন্ন হয়েছে। এখন আর পেঁয়াজের ঝাঁজ আমার চোখকে স্পর্শ করে না।

— যদি তাই হয় তবে চোখে জল কেনো ভাবী?

— আরে চোখে জল থাকবে এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে তর্ক করার মানে হয় না।

— হুম। পেঁয়াজের মতো করে চোখে জল আসার সম্পর্ক গুলোর সাথেও চিরতরে বিচ্ছেদ করে দিতে পারতে হয়। তা না হলে চোখের জল সর্বদা তারা করে বেরাবে।

— মানে…!

* অর্ণবের কথার মানে অধরার বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়। অধরা বেশ বুঝতে পারছে অর্ণব অয়নের সাথে অধরার সম্পর্কে কথা বলছে। অধরা অর্ণবের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অধরা বেশ অবাক হয়ে যায়। অর্ণবের পিছনে অয়ন দাড়িয়ে আছে। অধরা অর্ণবের কথাতে যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকেও কয়েক গুণ বেশি অবাক হয়েছে অয়নের উপস্থিতিতে। অয়নকে দেখে অধরা‌ খুব বুঝতে পারছে অয়নের কান‌ এই কথাটা এড়িয়ে যায় নি। অয়ন অর্ণবের পিছন থেকে অধরার দিকে কিছু সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে যায়। অধরা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব অধরাকে নিশ্চুপ দেখে আবারও বলতে লাগলো

— যেটা আমি বলেছি এটাই করা উত্তম। আমি জানি অয়নের সাথে আপনার ভালো সম্পর্ক নেই। সব দিক থেকে বিচার করলে এটা বোঝা যায় যে অয়নের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলাতেই মঙ্গল। অয়নের মতো নিচু চরিত্রের একটা……….

— ঠাসসসসসস, ঠাসসসসসস। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি অর্ণব। অয়ন আর আমার মাঝে কি সম্পর্ক আছে! কেনো আছে? কি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে? কি করি আমাদের জন্য মঙ্গলময়? সেটা আমরা দুজন ডিসাইট করবো। নিজের ভাইয়ের বিষয়ে বাজে মন্তব্য করে তুমি ভদ্রতার চরম সিমা লংঘন করেছো। আশা করি এই থাপ্পড়টা লাইফে সেকেন্ড বার এই ভূল করা থেকে তোমাকে সাবধান করবে।

* অধরা রাগে ফেটে পরেছে অর্ণবের কথায়। যে ছেলে নিজের ভাই এর সম্পর্কে এমন‌ মন্তব্য করতে পারে। তার মন মাইন্ড কতটা সাফ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অধরার থাপ্পড় পরতেই অর্ণব মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা রাগে গজগজ করতে করতে চেঁচিয়ে বলে উঠলো

— এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলে যাও আমার সামনে থেকে।

অধরার কথা শেষ হবার সাথে সাথে অর্ণব রান্না ঘরের সামনে থেকে চলে যায়। অর্ণব চলে যেতেই অধরা আপন মনে ভাবতে লাগলো অয়ন সবটা শুনে ফেলেছে। অয়ন কি আমায় ভূল বুঝবে? আমি তো অর্ণবকে ওর ভূলটা বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু অয়নের ভুলটা কি করে ভাঙ্গাবো?

— মিস্টার কাব্য অফিসটা আপনার বাবার সম্পত্তি না যে যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে চালাবেন। এই অফিসটা আমার বুকের রক্ত দিয়ে গড়া। যদি দু দিনের মধ্যে ৮ কোটি টাকার হিসেব দিতে আপনি ব্যর্থ হন। তবে আমি আপনার বিরুদ্ধে আকশন নিতে বাধ্য হব। নাউ ইউ গেইট লস্ট।

কাব্য অয়নের কেবিন থেকে মাথাটা নিচু করে বেরিয়ে যায়। অয়ন রাগে গজগজ করতে থাকলো। এতো গুলো টাকা বেপাত্তা। অয়নকে রেগে থাকতে দেখে অর্পা অয়নের কেবিনে প্রবেশ করে। অর্পার হাতে একটা ফাইল ছিলো। অয়ন ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে কাজ করছে। অর্পা অয়নের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল

— স্যার আপনি কি ব্যস্ত আছেন? কিছু কথা বলার ছিলো।

ল্যাপটপের স্ক্রিনের থেকে মুখ তুলে অর্পার দিকে তাকিয়ে বলল অয়ন

— জ্বি বলো।

— আজকের দিনটা আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই।

— আজ কি?

— আজ আমার বার্থ ডে।

— ওপস। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।

— ধন্যবাদ। আমার কথা মনে না পরাটাই স্বাভাবিক। আজ রাতে একটা ছোট পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। আপনি আসবেন প্লিজ।

— আজ! আচ্ছা ঠিক আছে চেষ্টা করবো।

— না। চেষ্টা না। আসতেই হবে আপনাকে।

— ওকে।

অর্পা ফাইলে সাইন নিয়ে চলে যায় অয়নের কেবিন থেকে। সারা দিন কাজ শেষ করে অয়ন সন্ধ্যায় চলে যায় অর্পার দেয়া‌ পার্টিতে। যদিও আসার ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু ভাধ্য হয়ে আসতে হলো। অয়ন পার্টি হলে এসে একটু অবাক হলো। একটা কেক আর কিছু ওয়েটার ছাড়া তেমন কাউকে চোখে পরছে না। অয়ন নিজের হ্যান্ড ওয়াচটার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো সময় ঠিক আছে তো! হ্যাঁ, সময় ঠিক আছে। তবে সবাই এখনও আসছে না কেনো? অয়ন সোফায় বসে ওয়েটারের থেকে একটা সফট ড্রিংক নিলো। ড্রিংকটা শেষ করতেই অয়ন দেখতে পেলো অর্পা আসছে। অয়ন অর্পাকে দেখে সোফা থেকে উঠে অর্পার কাছে চলে এলো। অর্পাকে উদ্দেশ্য করে অয়ন বলল

— আচ্ছা সময় তো পেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ তো আমার আসছে না এখন ও। তবে কি আর কেউ আসবে না?

— হুম। সময় হয়ে এসেছে। চলুন কেক কাটি। আর কেউ আসবে না মনে হচ্ছে।

* অর্পার কন্ঠে অজানা এক ধরনের মানে প্রকাশ পাচ্ছে। অয়ন কিছু না ভেবে অর্পার সাথে কেক কাটতে চলে যায়। কেক কাটা শেষ হতেই অর্পা অয়নকে ভিশন অবাক করে দিলো। কেক কাটা শেষ হতেই অর্পা অয়নকে……………………..

#চলবে………………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here