#ভালোবাসার_ফোড়ন
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৯
সোফায় বসে আছি আর আমার পাশে বসে আছেন উনি। কি আমার শাড়ি’র আঁচল নিয়ে গুঁতাগুঁতি করছে। আমার সামনে বসে আছে নিতি, টিনা, সেই ছেলেটা তবে হাতে মুখে ব্যান্ডেজ করা, ইতি ,আকাশ,আনাফ আর নাহান ভাইয়া। সবাই এসেছে উনাকে নিতে আনিকা”র বিয়েতে। কিন্তু উনি কিছু বলছেন চুপচাপ বসে আছে, ওদের যে বিরক্ত লাগছে সেটা আমি নিজেকে দেখেই বুঝতে পারছি। প্রায় অনেকক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর সেই ছেলেটা, টিনা আর নিতি আমায় সরি বললো। মনে মনে অনেক খুশি লাগছিলো কিন্তু আমি কিছুই বলি নি। কারন উনি আগে থেকে বলে দিয়েছে কিছু বলতে না আমায়। এক পর্যায়ে নিতি বলে উঠে…
– আহি সরি বললাম তো! এখনো রেগে থাকবি। মেয়েটা বসে আছে, আজ ওর বিয়ে চল এখন।
নাহান ভাইয়া বলে ওঠে…
– কতোক্ষণ বসে থাকবি এভাবে শাড়ির আঁচল ধরে।
উনি এবার বলে উঠে…
– বউ আমার যতক্ষন ইচ্ছা ওর শাড়ির আঁচল ধরে বসে থাকবো।
আমি উনাকে ফিসফিসিয়ে বললাম…
– মা আসবে এখন শাড়িটা ছাড়ুন এখন!
– চুপ হয়ে বসে থাকো। কথা বলো না!
আকাল ভাইয়া বলে ওঠে…
– আহি চল এখন!
– আমি যাবো না!
– কেন যাবি না?
সবাই পাশে তাকিয়ে দেখে মা দাঁড়িয়ে আছেন। মা আবার বলতে শুরু করেন…
– বন্ধু দের মধ্যে ঝগড়া হবে এটা স্বাভাবিক, তাই বলে তুই এমন কেন করবি। সবাই তোকে নিতে এসেছে আর তুই যাবি না বলছিস।
– মা তুমি জানো না কি হয়েছে?
– জানতে চাইও না, তোদের বন্ধুদের ব্যাপার তোরা বোঝ কিন্তু তাই বলে মেহমানদের এভাবে অপমান করবি।
– মেহমান কারা আবার?
ইতি বলে উঠে…
– এই যে ভাইয়া আমরা…
আমি বলে উঠে…
– মা আমিও অনেক বলেছি আপনি এখন বলুন!
– নিহাও বলেছে তার পর ও কেন বসে আছিস! ওঠ বলছি যা!
– মা…
– আহি আমি কি বললাম!
– যাচ্ছি!
বলে আমার শাড়ি’র আঁচল ফেলে রুমে গেলেন। রুমে গিয়ে আমাকে ডাকতে শুরু করলেন। সামনে তাকিয়ে দেখি নিতি’রা বাদে সবাই মুখ টিপে হাসছে। মা ওখান থেকে চলে গেছেন। আমি মাথা নিচু করে উনার কাছে গেলাম। সেদিনের মতো আজও পুরো রুমের অবস্থা খারাপ, এখানে ওখানে জামা কাপড় ছিটিয়ে পরে আছে। একটু আগে বললো যাবে না আর এখন ঘরের এই অবস্থা। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে বললেন…
– পাঞ্জাবি কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না!
– তাই বলে ঘরের এমন অবস্থা করবেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেই তো হতো!
– এই যে জিজ্ঞেস করলাম বলো এখন!
– ওই যে টেবিলে আমি গুছিয়ে রেখেছি।
– আচ্ছা তুমি রেডি হয়ে নাও এসব সার্ভেন্ট এসে গোছাবে বুঝলে।
– হুম!
.
আমরা তৈরি হয়ে দুজনে একসাথে নিচে নামলাম। উনি লাল রঙের পাঞ্জাবি পড়া আর আমি লাল রঙের একটা শাড়ি। সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। ইতি বলে উঠে..
– একদম পারফেক্ট জুটি লাগছে দুজনকে!
ইতি কথাটা নিতি কে শুনিয়ে বলেছে এটা আর কেউ না বুঝুক আমি বুঝেছি। নিতি’রা আর দাঁড়িয়ে না থেকে বের হয়ে যায়। আকাশ ভাইয়া আমাদের দেখে খানিকটা প্রশংসা করলেন। অতঃপর সবাই গাড়িতে ওঠলাম। আমি আর উনি উনার গাড়িতে বাকিরা তাদের নিজ নিজ গাড়িতে। বিয়ের বাড়িতে যাবার পর সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেছে আমি নামতে যাবো হুট করেই উনি আমার হাত ধরে বলে…
– আমার কথা আগে শুনো এরপর যাবে!
– কি কথা!
– একা একা কোথায় যাবে না, সবসময় আমার সাথে থাকবে, আমার হাত ছেড়ে হাঁটবে না বুঝলে।
– একটা কাজ করুন আমার শাড়ি’র আঁচল টা নিজের হাতে বেঁধে নিন। তাহলে আপনার সাথে থাকবো সবসময়
– হ্যাঁ এটা ভালো বলেছে! দেখি তোমার শাড়ি…
– রাখুন তো! বিয়ে বাড়ি আমি হারিয়ে কোথায় যাবো আজব। এতো বলার কি আছে।
রেগে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। উনি ও বের হয়ে বললেন..
– যা বলেছি সব যেন মনে থাকে।
অতঃপর আমার হাত ধরে ভিতরে ঢুকেন। সবাই আমাদের এমন ভাবে দেখছে যেন ভিন গ্রহের কোনো প্রানী আমরা। আনিকা উনাকে দেখে অনেক খুশি হলো। সে স্টেজ থেকে আহি’র কাছে আসল। অতঃপর আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরল। সরি ও বলল! যাই হোক খুব ভালো মতো বিয়ে সম্পন্ন হলো। নিতি কে মাঝে মাঝে দেখলাম কিভাবে রেগে আমার দিকে তাকাতে। আমার জন্য এটা স্বাভাবিক কারন নিতি এটা সহজে মেনে নিবে না এটা আমি জানি। কিন্তু উনি আমাকে কোথাও একা ছাড়লেন। পুরো বিয়ে বাড়িতে আমার হাত ধরে ছিলেন। ইতি আর আকাশ ভাইয়া এটা নিয়ে কম মজা করেনি তবুও উনি আমার হাত ছাড়েনি। আনিকা’র মা আমাকে অনেক আদর করলেন যখন জানলেন আমি আহিয়ান এর স্ত্রী। তিনি আহিয়ান কে অনেক আদর করেন বিধায় আমাকেও কম করলেন না। বেশির ভাগ মানুষই শুধু আমাকে দেখতে লাগল। অনেকে বলাবলি করতে লাগল, বিয়ে ব্যাপারে তারা কিছু জানলো না, এটা কেমন বিয়ে, কেন কেউ কি বুঝতে পারলো না। এরকম নানা ধরনের কথা। সত্যি’ই মানুষের কাজ শুধু অন্যের সমালোচনা করা। এখন সে যত’ই ব্যস্ত হোক না কেন সেই সমালোচনার মজা কেউ ছাড়তে চায় না। কি যে পায় এইসবে আমি বুঝি নাহ।
আনিকা কে বিদায় দিয়ে আমরা বাড়িতে আসলাম। আসতে আসতে অনেক রাত হলো, আর খুব ক্লান্ত হয়ে পরলাম। আমি কোন কাজ করিনি বটে তবুও সেখানকার মানুষের বক বক শুনে আমি অনেক ক্লান্ত। তারা কিভাবে যে এতো কথা বলতে পারে এটা ভাবতেও আমারা অবাক লাগে। যাই হোক উনার কোনো খবর জানি না। আমি এসেই চেঞ্জ না করে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে কারো চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল। ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রায় অনেক বেলা হয়ে গেছে। এতোক্ষণ কিভাবে ঘুমালাম, পাশে তাকিয়ে দেখি উনি নেই। তার মানে উনি উঠে গেছেন কিন্তু আমাকে উঠায় নি। এটা কি হলো আমাকে ডাক দিলো না কেন?
কিন্তু এতো জোরে জোরে কথা বলছিলো কে? আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি বসার ঘরে কেউ বসে আছে। একজন মহিলা, সে এতো জোরে জোরে কথা বলছে। কিন্তু কে উনি?
মা আমাকে দেখে নিচে আসতে বললেন। আমি নিচে আসলাম। দেখি আপু আর উনি বসে আছেন সোফায় আর সেই মহিলাও। এখন তাকে আরো ভালো করে দেখছি। মধ্যবয়স্কী একজন মহিলা, ফর্সা গায়ের রঙ, বাঙালি সাদা শাড়ি পড়া, চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা পড়া, খুব সাজগোজ করতে ভালোবাসে দেখেই মনে হচ্ছে। গয়না – গাটি পড়া এমনকি কানের উপরে অবদি ফুটানো আর সব গুলোতেই দুল পড়া। দেখে মনে হয় না এতো বয়স তার খুব পরিপাটি থাকেন তিনি। খুব রাগিও বটে, আমাকে দেখে মুখটা কেমন বেজার করে ফেললেন।
মা তাকে বললেন..
– কাকী এই হলো আপনার আহি’র বউ! আর নিহা এনি হলেন তোমার দাদি শাশুড়ি!
আমি সাথে সাথে তাকে সালাম দিলাম। উনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন…
– আয়ানা’র মা তোর কি চোখ নষ্ট হয়ে গেছিলো গা! আমার আহি’র জন্য এই মেয়ে আনলি তুই!
আমি তার কথা শুনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মা হেসে বললেন…
– কাকী আপনার আহি পছন্দ করে বিয়ে করেছে আমি আপন না করে পারি বলুন।
কাকী বলেন…
– এখনকার ছেলে মেয়েদের আবার পছন্দ। আমাদের সময় মা বাবাদের কথাই ছিল শেষ কথা আর এখানকার মেয়ে ছেলে রা। বাপরে বাপ।
আহিয়ান বলে উঠে…
– কিন্তু দাদী, দাদা নাকি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন! তাহলে…
আহি’র কথায় উনি হেসে দিলেন। উনাকে খুব ভালোবাসে হয়তো। কাকী বলে ওঠে…
– ভালোবেসে বিয়ে করলে কি হবে দেখলি না আমাকে একা ফেলে চলে গেলো।
– চিন্তা করো কেন? তুমি এখনো অনেক সুন্দরী দেখতে। চলো আরেকটা দাদা নিয়ে আসি।
– তবে রে ( বলেই উনার কান টানলেন )
সবাই হাসিতে ফেটে ওঠলেন। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। উনি আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে বলে উঠেন…
– কিন্তু আহি তোর মা তোর বউ কে কিছু শেখায় নি দেখ। বাড়ির বউ এখন উঠেছে ঘুম থেকে। তাহলে কি করে হবে শুনি। বউ দের উচিত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য রান্না করা। আর দেখে মনে হচ্ছে এখনো গোসল করে নি। আচ্ছা ও কি জানে না নতুন বউ রা গোসল না করে ঘর থেকে বের হয় না।
আমি চুপচাপ উনার কথা শুনছি। আপু বলে উঠে…
– দাদি প্রতিদিন ওই তাড়াতাড়ি উঠে সবার জন্য রান্না করে। তবে কাল অনেক রাত করে আহি’র সাথে বাড়ি এসেছে। তাই আজ উঠতে দেরি হয়ে গেল।
– বাহ এখন’ই দেখছি ভাইয়ের বউ এর সাধ দিচ্ছিস। তা ভালো মিল থাকা ভালো। কিন্তু আমার আহি ও তো ওর আগে ঘুম থেকে উঠলো। স্বামী উঠার পরও স্ত্রী ঘুমিয়ে থাকে কিভাবে লা!
আমি দাদী’র কথা শুনে উনার দিকে তাকাচ্ছি। উনি মুখ টিপে হাসছে। বেশ মজা লাগছে উনার। আমাকে দাদী’র হাতে বকা খাওয়ানো। ইচ্ছে করে উনি আমাকে ঘুম থেকে তুলেননি। দাদী আরো কতোক্ষণ আমাকে বক্তৃতা দিলো আর উপদেশ যার অনেকটাই আমার মাথা’র ওপর দিয়ে গেল। কারন বেশির ভাগ কথাই আমি বুঝতে পারি নি। শুধু স্বামীর সেবা আর সেবা! তবুও আমি শুধু মাথা নেড়ে গেলাম। উনি বলে উঠেন…
– এখন যাও গোসল করে রান্না ঘরে যাও। দুপুরের খাবার রাধো গিয়ে।
উনার কথায় আমি জ্বি বলে রুমে চলে এলাম। আমার পুরো মাথা ধরে গেছে। কিছুক্ষণের জন্য একটু বসে পরলাম। তখন মা এলেন। আমার পাশে বসে বললেন…
– নিহা!
– জ্বি মা!
– মন খারাপ।
– না মা।
– আসলে উনি খুব শক্ত মানুষ, দেখলে তো। মনের জোড় খুব আর একটু রাগিও। তাই বলে কি যতদিন উনি এখানে থাকে ততোদিন তুমি ভার্সিটিতে যেও না।
– আচ্ছা মা।
– আর শোন সবসময় উনার কথা শুনবে, উনি যা বলুক তাতেই হ্যাঁ বলবে। আসলে উনি আগের যুগের মানুষ। বোঝোই তো সবার গুরুজন তিনি। উনার কথাই সবার শুনতে হয়।
– হ্যাঁ মা আমি বুঝতে পেরেছি।
– আমি জানি তুমি বুঝবে। তোমার উপর ভরসা আছে আমার। অনেকটা রাগি তিনি তবে যতটা রাগি ততোটাই ভালো। আহি আর আয়ানা কে অনেক আদর করে বুঝলে। তোমাকেও করবে কিন্তু একটু সময় লাগবে বুঝলে।
– হুম মা।
– যাও গোসল করে উনার কাছে যাও নাহলে আবার রেগে যেতে পারেন।
– আচ্ছা মা!
.
অতঃপর আবার উনার কাছে গেলাম। উনি খুব ভালো ভাবে আমাকে পর্যবেক্ষণ করলেন। অতঃপর পর বললেন রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করতে। তার আগে বললেন চুল যেন বেঁধে রান্না করতে যাই। আমিও তাই করলাম। উনার কথামতো আমি রান্না করতে গেলাম। রান্না ঘরে কোনো সার্ভেন্ট নেই। আমি একাই সব রান্না করছি। কয়েক রকমের ভর্তা করতে বলেছেন আর খিচুড়ি। আমি ভর্তা বানিয়ে এখন খিচুড়ি রাঁধছি। হুট করেই কেউ আমার চুলের কাঠি খুলে দিলো। আমার খোঁপা করা চুল সব খুলে গেল। আমি তাকিয়ে দেখি উনি আমার কাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– কি করলেন এটা আপনি?
– বেশ করেছি! তোমাকে না বললাম চুল বেঁধো না তাহলে বাঁধলে কেন?
– দাদী বলেছেন বাঁধতে। এখন দিন দাদি দেখলে খুব বকবে।
– বকুক ভালো হবে। অবশেষে ভূতনি কারো কাছে জব্দ হবে।
– আপনার খুব মজা লাগে নাহ আমি বকা খেলে।
– আসলেই খুব…
হাসতে হাসতে কাঠি নিয়ে চলে গেলেন। উনার হাসি দেখে আমার রাগ হচ্ছিল। কোনোমতে হাত দিয়ে খোঁপা বেঁধে রান্না শেষ করলাম। অবশেষে দাদী খেয়ে গম্ভীর স্বরে বললেন..
– ভালো হয়েছে! নাহ রান্না করতে পারো তুমি তাহলে!
উনার ভালো লেগেছে শুনে শান্তি পেলাম। যাক আমার কষ্ট সফল হলো। এরকম করে ১ সপ্তাহ কেটে গেলো। এই ১ সপ্তাহ ধরে আমাকে সব রান্না করতে হয়েছিল। সকাল, দুপুর আবার বিকালের নাস্তা। এছাড়াও দাদী’র খেতমদ তো আছেই। মা’কে রান্না ঘরে আসতে মানা করে দিয়েছে দাদী তাই উনি আসেন না। আর উনি ছিলেন শুধু মজা নেওয়ার জন্য। যখন তখন এসে আমাকে জ্বালিয়ে মারতেন। সেদিন এসেছিল আমাকে রান্না’য় সাহায্য করতে। এই বলে খাবারে নুন দিতে গিয়ে পুরো লবন’ই দিয়ে দেন। অতঃপর অসহায় মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন “সরি”. ইচ্ছে করছিল উনার মাথা ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু দাদী এসে যদি শুনে স্বামীর সাথে ঝগড়া করছি তাহলে আমার একদিন করে ছাড়বে। তাই দাঁতে দাঁত চেপে উনাকে বের হতে বললাম। এই শেষ এরপর থেকে আমি রান্না করতে আসলে উনি বক বক করে আমাকে সাহায্য করেন। তবে হ্যাঁ কিছু থালা বাসন ধুয়েও সাহায্য করে বটে। এতো দিন উনিও ভার্সিটিতে যায় নি।
তবে আজ গেছেন। কোনো কাজে স্যার ফোন করে যেতে বলেছেন ওকে। আমি সকাল সকাল উঠে সবার জন্য নাস্তা বানালাম। সবাইকে খাইয়ে দিলাম কিন্তু উনি না খেয়ে চলে গেছেন তাই আমিও আর খেলাম না। কিছুক্ষণ পর পর দাদী বলতেন তার জন্য পা আর চা বানিয়ে দিতে। পান খেতে খুব ভালোবাসেন তিনি আর সেটা আমাকেই বানিয়ে দিতে হয়। কারন আমার হাতের পান নাকি তার খুব ভালো লাগে। সেদিন মা বললো দাদী নাকি আমার প্রশংসা করেছেন তার কাছে। তবে আমার সামনে গম্ভীর ভাবেই থাকেন হয়তো ভাবেন তাহলে আমি উনাকে ভয় পাবো। দুপুরে রান্না করতে যাবো দাদী এসে বললেন আজ কিছু মেহমান আসবে, তাই যেন রান্না আরো ভালো করে করি। আর কি! রান্না নিয়ে রীতিমতো আমায় যুদ্ধ করতে হলো। আজ দাদী নিজেই সার্ভেন্ট পাঠিয়ে দিলেন আমাকে সাহায্য করার জন্য। মা’র কাছ থেকে শুনলাম দাদী’র কিছু বান্ধবী’রা আসবেন। তারাও দাদী’র মতো! তাই জেনো বুঝে শুনে উওর দেই তাদের।
সারাদিন না খেয়েই তাদের সেবাযত্ন করে গেলাম। উনি এখনো বাসায় আসে নি। আর খাওয়া হলো না আমার। দাদী হঠাৎ ডেকে বললেন সবার জন্য পান বানাতে। সত্যি বলতে কি দাদী’র বান্ধবী’রা দাদী’র থেকেও আরো গম্ভীর স্বভাবের। তার সাথে রাগিও। কাজে কাজে শুধু খুদ ধরেন। আমি পান বানিয়ে দাদী কে দিতে গিয়ে হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে গেল। দাদি আমার হাত ধরে বললেন…
– ঠিক আছো নাত বউ!
– জ্বি দাদী একটু মাথা ঘুরলো শুধু!
আমার কথায় তারা সবাই মিটিমিটি হাসলো। আমি বুঝতে পারলাম না। পান দিয়ে চলে আসলাম। সারাদিন কিছু খায়নি এখন ভাবলাম একটু বিস্কিট খাবো। একটা বিস্কিট মুখে দিতেই কেমন জানি লাগল। আমি সেটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে হাত মুখ দিয়ে পিছনে ঘুরলাম। পিছনে ঘুরেই অবাক হয়ে গেলাম কারন দাদী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। তার এই হাসির মাঝে যেন রহস্য আছে বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎ দাদী চেঁচিয়ে মা কে ডাকলেন। মা তাড়াহুড়ো করে নিচে আসলে দাদী হেসে হেসে মা কে বললেন…
– বুঝলে আয়ানা’র মা। এতোদিন আমি দাদী ছিলাম আজ মনে হচ্ছে সেই সুসংবাদ তুইও পেলি লা!
#ভালোবাসার_ফোড়ন
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩০
মা তাড়াহুড়ো করে নিচে আসলে দাদী হেসে হেসে মা কে বললেন…
– বুঝলে আয়ানা’র মা। এতোদিন আমি দাদী ছিলাম আজ সেই সুসংবাদ তুমিও পেলে।
দাদী’র কথা শুনে মা আমার দিকে তাকান। আমি বেকুব’র মতো তাকিয়ে আছি। মা তাড়াতাড়ি করে আমাকে নিয়ে সোফায় বসান। দাদী তার বান্ধবীরা এসে আমাকে দেখে বলছেন আমি প্রেগন্যান্ট। আমি হা করে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মা যেন খুশিতে আত্মহারা। সার্ভেন্ট কে পাঠালেন মিষ্টি আনতে। আমি বললামও আমি প্রেগন্যান্ট না। তখন দাদী’র এক বান্ধবী এসে আমার পেটে হাত রাখলেন। বললেন আমি নাকি সত্যি’ই প্রেগন্যান্ট। আমি মা কে না বলছি তখন দাদী বললেন…
– আরে মেয়ে এটা নিয়ে এতো চিন্তার কি আছে। তোমাকে দেখেই আমার সব সই রা আগেই বলেছে তোমার কথা। কিন্তু আমি বিশ্বাস করে নি লা। এখন করছি। তোমার হাবভাব দেখে আমার কাছেও এমন লাগছে। আর বিয়ে যখন হয়েছে তখন বাচ্চা তো হবেই। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে বুঝলে। কোনটা বাচ্চার মা আর কোনটা কুমারী এটা আমরা দেখেই বুঝতে পারি।
আমি হা করে তাদের কথা শুনছি। কি বলছে এইসব। সত্যি’ই কি তবে আমি ছিঃ ছিঃ ছিঃ এটা কি করে হতে পারে। কিন্তু যদি আহিয়ান জানে। তখন… উনি কি বলবেন এসব শুনে! আমার মাথা আবার ঘুরতে লাগল। সবাই আমাকে দেখে ধরে রুমে নিয়ে গেল। মা আমার পাশে বসে আছেন। আমি তাকে বলছি এমন কিছু না। তারা ভুল বুঝছে কিন্তু দাদী না বলেই যাচ্ছে। আর মা ও দাদী’র কথাই শুনছে। তারা আমাকে বিশ্রাম করতে বলে চলে গেছে। খুব কান্না পাচ্ছে এখন আমার। উনি এসব শুনলে কি বলবে। কি ভাববে? আচ্ছা যদি সত্যি’ই আমি… না না এটা কিভাবে হতে পারে। এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না। কিন্তু যদি আহিয়ানও বিশ্বাস করে। তখন…
বিছানায় বসে কাঁদছি হঠাৎ গাড়ি’র আওয়াজ পেলাম। আমি দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখি উনার গাড়ি তার মানে উনি এসে গেছেন। আমি চোখ মুছে দৌড়ে বার হলাম। আমি উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছি, উনি ভিতরে আসার সাথে সাথে সবাই উনাকে ঘিরে ধরেছে। দাদী উনাকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে কিন্তু সব উনার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। উনি জিজ্ঞেস করলেন…
– কি হয়েছে? কি শুরু করলে তোমরা এইসব?
– আরে এখন তো কম’ই আরো খেতে হবে তোকে!
– কেন গো আমার নতুন দাদা আসছে বুঝি!
সবাই হেসে বলেন…
– তা তো আসছে তার সাথে আরেকজন ও আসছে!
উনি এবার একটু বিচলিত হন। দাদী হাসতে হাসতে বলেন…
– বুঝলি আহি তোর মা এবার আমার মতো দাদী’র ডাক শুনতে পাবে!
– মানে?
– মানে কি রে তুই বাপ হচ্ছিস রে বাপ!
– ওহ আচ্ছা! কিহহহ! কি…কি হচ্ছি আমি!
– বাবা হবি বাবা! নে এবার মিষ্টি খাওয়া শুরু কর।
উনি মিষ্টি কি খাবে? কাশতে শুরু করে। সবাই উনাকে ধরে সোফায় বসান। উনার কাশি ধামছে না। আমি দৌড়ে সিঁড়ি থেকে নিচে এলাম। মা উনাকে পানি খাওয়ালেন। ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে মা কে বললেন”আরো এক গ্লাস পানি দাও”। উনি ঘামতেও শুরু করেছেন। দাদী হেসে বলেন…
– দেখলে আমার নাতী’র কান্ড। খুশিতে যেন পাগল হয়ে গেছে।
এদিকে উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি বেশ রেগে আছে। হুট করেই সবার সামনে থেকে উঠে আমার কাছে এসে হাত টেনে রুমে নিয়ে গেলেন। সবাই আরো জোরে জোরে হাসতে থাকে।
রুমে এসে উনি আমার হাত ছেড়ে দরজা আটকান। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে । উনি গম্ভীর স্বরে বলেন…
– কার বাচ্চা এটা?
উনার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে। কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করে। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি…
– ব..বা.. বাচ্চা!
– হ্যাঁ বাচ্চা যার কথা নিচের সবাই বলছে। কার বাচ্চা এটা। তুমি তো আমাকে কিছু বলো নি এই বাচ্চা’র ব্যাপারে কখনো। কি লুকিয়ে রেখেছিলে কেন?
উনার কথায় বুঝতে পারছি উনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না। আমি ধপ করে নিচে বসে পরি। জোরে জোরে কাঁদতে থাকি। আর বলতে থাকি…
– বিশ্বাস করুন, আমি কিছু জানি না। কোনো বাচ্চা নেই। সবাই মিথ্যে বলছে।
উনি নিশ্চুপ হয়ে আছেন। কোনো কথা বলছেন না। তার মানে উনি আমার কথা বিশ্বাস করছে না। এখন কি হবে? আমি আরো জোরে কাঁদতে থাকি। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকি….
– আপনি বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি’ই কিছু জানি না। তারা কি থেকে কি বলছে।
উনি এখনো কিছু বলছেন না।আমি কাঁদতে কাঁদতে এবার হেঁচকি ওঠে যায়। উনি হুট করেই নিচে বসে আমার গালে হাত রেখে বলে…
– আরে আরে নিহা! কান্না থামাও আমি জানি তুমি প্রেগন্যান্ট নও। আমি তো মজা করছিলাম। এই নিহা!
আমি এবার কান্না থামিয়ে উনার দিকে তাকাই। দেখি উনি মুখ টিপে হাসছে। মেজাজ গেলো বিগড়ে।
– আপনি! তার মানে আপনি!
– সরি! আসলে সারাদিন কোনো ঝগড়া হয় নি তোমার সাথে তাই!
– তাই আপনি!
উনি উঠে গেলেন। আমি উঠে রেগে উনাকে ধমকাছি। এক পর্যায়ে উনি আর আমি খাটের এ পাশ থেকে ওপাশে দৌড়াদৌড়ি করছি। উনি হাসছেন আর বলছেন “আমার ভূতনি কে কাঁদলে এতো সুন্দর লাগে আমি তো আগে জানতাম না” ইত্যাদি আরো নানা কথা বলে আমাকে জ্বালাচ্ছেন। আমি উনাকে বালিশ ছুড়ে মারছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। একসময় আমি খাটে বসে কাঁদতে থাকি। আর বলতে থাকি…
– মজা করছে, সবাই মজা করছে আমাকে নিয়ে। কেউ আমার কোনো কথাই শুনছে না।
উনি এবার আমার কাছে এসে বলেন..
– নিহা সরি আসলে আমি..
দাঁড়িয়ে উনার কাছে গিয়ে…
– কি আপনি? হুম কি আপনি! জানেন কতোটা ভয় পেয়েছিলাম আমি! এ্যা এ্যা এ্যা…
– নিহা নিহা নিহা! আর কেঁদো না।
– কথা বলবেন না আমার সাথে!
উনাকে কিল ঘুষি মারতে থাকি। এক পর্যায়ে উনি আমার হাত ধরে জরিয়ে ধরে। আমি উনাকে ধরে কেঁদেই যাচ্ছি। উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। প্রায় অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর একসময় আমি কান্না থামাই। উনি আমাকে ধরে গালে হাত ধরে চোখ মুছিয়ে বলে.. “আর কেঁদো না”।
– আপনি’ই তো কাঁদালেন আমায়!
– আচ্ছা সরি সরি,কতোবার সরি বলালে তুমি আমায় দিয়ে। আমার শার্ট পুরো ভিজিয়ে ফেলেছো কেঁদে কেঁদে!
– ভালোই করেছি!
– আচ্ছা কি হয়েছে বলো তো!
অতঃপর আমি উনাকে প্রথম থেকে শুরু করে সব বললাম। সব শুনে উনি হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। আমি কপাল কুঁচকে বলি…
– করো পৌষ মাস কারও সর্বনাশ!
হাসতে হাসতে বলেন…
– হ্যাঁ ঠিক বলেছো আমার পৌষ মাস আর তোমার সর্বনাশ!
আমি রেগে বালিশ উনার দিকে ছুড়ে মারি! উনি তবুও হাসছে। আমি রেগে বলে উঠি…
– এতো হাসছেন কেন? হাসির কি হয়েছে শুনি?
– হাসবো না আবার! তোমার একটু মাথা ঘুরার কারনে সবাই কি না কি ভেবে ফেলল।
– মজা নিচ্ছেন!
– আরে না!
– তাহলে ভাবুন কি করে সবাইকে বোঝাবেন। আমার মাথায় কাজ করছে না।
– তোমার মাথা কাজ করে কবে?
– ধুর রাখুন ছাতার মাথা!
– আচ্ছা চলো!
– কোথায় যাবো।
– ঘুরতে যাবা?
– আপনি আবার মজা করছেন?
– বক বক না করে চলো তো!
বলেই আমার হাত ধরে নিচে নিয়ে গেল। সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। দাদী বলে ওঠে…
– কি রে নাতবউ, কি কথা বললে এতোক্ষণ!
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। উনি বলে উঠেন…
– আমরা একটু বাইরে যাচ্ছি!
– এতো রাতে! এই সময়ে দরকার নেই!
– আছে ডাক্তার এর কাছে যাচ্ছি
মা বলে উঠেন…
– ডাক্তার এর কাছে? কেন কি হয়েছে সব ঠিক আছে তো! নিহা!
– মা সব ঠিক আছে। আমি নিহা কে চেকাপ করাতে নিয়ে যাচ্ছি!
– চেকাপ!
– তোমরা যা বলছো তাই সিউর হবার জন্য।
দাদী বলে উঠেন…
– কেন রে আহি তোর দাদী’র কথা তুই বিশ্বাস করিস না!
– এমন না দাদী কিন্তু এই যুগে মুখের কথায় কিছু হয় না তাই! আমি আসছি।
– কি যুগ রে বাবা, গুরুজনের কথাই বিশ্বাস করে না।দেখবি আসার সময় মিষ্টি তোকে আনতেই হবে!
.
অতঃপর উনি আমাকে চেকাপ করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে বাসার আসার জন্য রওনা হলেন। কিন্তু রিপোর্ট আমাকে দেখালেন না এমনকি বললেন ও না কি হয়েছে। অনেক জিজ্ঞেস করার পরও কোনো উওর পেলাম না শুধু একটাই কথা বাসায় গিয়ে বলবো।
বাসায় আসার সময় একগাদা মিষ্টি কিনলেন। কিন্তু কেন? সবকিছু আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তার পর উনার মুখ টা খুব গম্ভীর। এদিকে টেনশনে আমার অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
বাসায় এসে দাদী আর মা ছুটে আসেন আমাদের কাছে। তারা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। উনি হুট করে দাদী’র মুখে একটা মিষ্টি দিয়ে দেন। মা জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে রিপোর্ট কি?
উনি শান্ত গলায় বললেন..
– রিপোর্ট পজেটিভ!
উনার কথায় আমি বড় বড় চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। মা খুশিতে আত্মহারা। দাদী বলেন..
– দেখেছো! আমি বললাম না নাত বউ মা হতে যাচ্ছে।
উনি হেসে বলেন..
– জ্বি না এরকম কিছু না!
উনার কথায় আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মা অবাক হয়ে বলেন…
– কিন্তু তুই তো বললি রিপোর্ট পজেটিভ!
– হ্যাঁ পজেটিভ! আমি যা ভেবেছি সে হিসাবে আমার কাছে পজেটিভ। কিন্তু তোমাদের কাছে নেগেটিভ!
দাদী বলেন..
– আর এই খুশিতে তুই মিষ্টি এসেছিস!
– উনি মাথা নাড়েন!
– আয়ানা’র মা বাবা লাঠি টা দে তো। ওর মাথা থেকে ভুত তাড়াতে হবে।
উনি ফিসফিসিয়ে আমাকে বলে…
– ভূতনি আমার মাথায় ভর করে আছে এটা তো আর দাদী জানে না
আমি রেগে উনার দিকে তাকাই। এদিকে দাদী এসে উনার কান ধরে কিছুক্ষণ ঘুরান। আমি মা’র দিকে তাকাই। উনার মুখটা মলিন হয়ে গেছে। কিন্তু খানিকক্ষণ পর উনি হেসে আমার কাছে এসে বলেন…
– নিহা! ঠিক আছো তুমি! আসলে মা বুঝোই তো এই আনন্দে এতোটা আত্নহারা ছিলাম যে তোমার কথা আমি শুনি নি। তোমার কথা শোনা উচিত ছিল আমার।
উনি বলে উঠেন…
– আরে মা দাদী তো আগের যুগের তাই এমন ভুল করলো আর তুমিও তার কথায় নাচলে। এজন্য’ই বলে মেয়েরা সবসময় এক লাইন বেশি বুঝে।
বলেই উনি জোরে জোরে হাসতে থাকে। দাদী এসে উনার কান আবার মলে দেন। আর বলেন…
– কি পাজি ছেলে এভাবে মায়ের সাথে মজা করছিস!
– তো কি করবো বলে। বাট তুমি কষ্ট পেয়ো না আমি একটা সুন্দর দাদা পেয়েছি।
– তবে রে…
উনি দৌড়ে উপরে চলে গেলেন। এখানে সবাই হাসতে থাকেন। মা আমাকে উপরে চলে যেতে বলেন। আমি রুমে এসে দেখি উনি এখনো হাসছেন। আমি রেগে উনার সামনে এসে কোমরে হাত রেখে বলি..
– এতো টেনশন কেন দেন আপনি আমায়!
– তোমায় আবার কি করলাম, বাই দ্যা ওয়ে টেনশন আমি না তুই দাও।
– ওহ্ আচ্ছা! তাহলে মিষ্টি আনলেন কেন বলেন তো!
– আরে দাদী বলেছিলো আসার সময় মিষ্টি আনতে তাই কেন এতে তোমার আবার কি হলো!
– কি আবার হবে, এমনেই তেই রিপোর্ট বলেন নি তার ওপর মিষ্টি এনে সবাইকে খাওয়াচ্ছেন। আমার অবস্থা কি হয়েছিল জানেন।
– আরে এতো ভয় পাচ্ছো কেন? আমি আর তুমি দু’জনেই জানি এটা সম্ভব না। তাহলে এতো ভয় পাচ্ছো কেন?
– জানি না কিন্তু মনে হচ্ছিল যদি আপনি বিশ্বাস না করেন তাহলে…
উনি এসে আমার গালে দু হাত রেখে বলেন…
– তোমার আমার সম্পর্ক যেমন হোক না কেন আমি অনেক বিশ্বাস করি তোমায় বুঝলে।
উনার কথায় আমি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। আসলেই খুব বিশ্বাস করেন উনি আমায়। আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি হেসে আমাকে বলেন..
– তুমি বসো আমি আসছি!
অতঃপর বাইরে চলে গেলেন। আমি খাটে বসলাম। খুব ক্লান্ত লাগছে আর ক্ষুধাও লেগেছে। কিছুক্ষণ পর উনি খাবার নিয়ে রুমে আসেন। অতঃপর আমার পাশে বসে আমাকে হা করতে বলেন। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো হা করি, উনি এক লোকমা ভাত আমার মুখে দিয়ে বলেন..
– পরের বার থেকে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো নাহলে এরপর মাথা ঘুরে গেলে আমি আর সামলাতে পারবো না!
বলেই জোরে জোরে হাসতে থাকেন। উনার কথায় আমি মুখ ভেংচি দিয়ে খেতে থাকি।
রাতে বাবা আর আপু এসে সমস্ত কথা শুনে আরেকদফা হাসাহাসি হয়ে যায়। তখন লজ্জায় আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু উনি, উনার হাসি যেন থামছেই না। তখন আমাকে কাঁদিয়ে ইচ্ছে মতো হেসেছেন তিনি আর এখনও হাসছেন। এদিকে দাদী আর ৩ দিন থেকেই চলে যান। বাবা মা অনেক বলেছেন থাকতে কিন্তু উনি থাকেন নি।তবে যাবার আগে আমার গলায় একটা গহনা পরিয়ে আমাকে আদর করে যান।
#চলবে….
#চলবে….