ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ৩৬

#ভালোবাসার_ফোড়ন
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৬

– তোমায় কি শুধু আমি জরিয়েই ধরেছিলাম আর কিছু করেনি!

উনার এমন কথায় আমি অবাক হয়ে গেলাম। কি বলবো বুঝতেই পারছি না। আমি তাড়াতাড়ি করে নেমে গেলাম আর উনি কিছু বলার আগেই ওয়াসরুম এ চলে এলাম। উনার সাথে আমি সেই ব্যাপার নিয়ে কি বলবো বুঝতেই পারছি না।
শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখি উনি নেই। আমি আয়নায় দাঁড়িয়ে মাথায় চুল মুছতে থাকি, কিন্তু ফিতা বাঁধতে পারছি না। অনেক চেষ্টা করছি তবুও হাত পৌঁছাচ্ছে না। কে যে বলেছিল এসব পড়তে। হঠাৎ করেই কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে উঠি। আয়নায় দিকে তাকিয়ে দেখি উনি। আমি তাড়াতাড়ি সামনে ঘুরে বলি..

– আপনি!

– কেন আর কার আশা করছিল। সামনে ঘুরো!
বলেই আমাকে সামনে ঘুরিয়ে দিয়ে ফিতা বাঁধতে লাগলো।

– আপনি .. আপনি ছাড়ুন আমি আপু কে বলছি, সে বেঁধে দিবেন।

– কতোদিন আর বাঁধবে বলো একদিন না একদিন তো চলেই যাবে।

– কোথায় যাবে?

– ওর শশুড়বাড়ি!

– ওহ্ হ্যাঁ! তো কি হয়েছে আমি মার কাছে যাবো!

উনি আমার মাথা’য় একটা বাড়ি মেরে বলে…
– হ্যাঁ স্বামী থাকতে মা’র কাছে যাবে!

– তো কি স্বামী তো ভালোবাসে না আমায়!

– তুমি তো বাসো!

উনার কথায় আমি চট করেই উনার দিকে ফিরি। আমার চোখ আলুর মতো বড় বড় হয়ে গেছে।

– কি বললেন আপনি!

– বললাম তুমি আমায় ভালবাসো!

– ম..মটেও না।
বলেই চলে যেতে নিলাম। উনি বলে উঠেন..
– কিন্তু তুমি তো সেদিন বললে তুমি আমায় ভালোবাসো!

আমি সাথে সাথে থেমে গেলাম। উনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলি..
– মিথ্যে বলছেন কেন? আমি আমি এমন কিছুই বলি নি।

– বলেছো

– বলিনি!

– আরে বলেছো। প্রথমে তুমিই বলেছো।

কোমরে হাত রেখে উনার সামনে গিয়ে বলি…
– কবে বলিছি বলুন।

আমার কথাম উনি হাসলেন। অতঃপর আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো…
– সেদিন যেদিন তুমি মদ খেয়ে আবোল তাবোল বলছিলে!

আমার হতবুদ্ধি’র মতো দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু আমার তো মনে আছে আমি উনাকে এমন কিছু বলিনি। তাহলে…

– না আমার প্রায় সব কিছুই মনে আছে, আমি এমন কিছু বলি নি আপনাকে!

– বলেছো।

– না হয়তো মাতাল ছিলাম কিন্তু স্বজ্ঞান এ ছিলাম! আমার মনে পড়ছে না এমন কিছু।

– আমি কখন বললাম স্বজ্ঞান এ বলেছো! বলেছে তো তখন যখন অজ্ঞান হয়ে ছিলে। অজ্ঞান হয়ে খাটে পড়েছিলে তখন তোমাকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম তখন বলেছিলে…

– কি বলেছিলাম!

– বলেছিলে “আমি আপনাকে ভালোবাসি! অনেক ভালোবাসি!”

উনার কথায় আকাশ ভেঙ্গে আমার মাথায় পড়লো। কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এজন্য’ই সেদিন উনি এতো হাসছিলেন। ইশ্ কি লজ্জা! কি করলাম আমি!
উনি বলে উঠলেন..
– কি ভাবছো এতো মন দিয়ে!

– কি..কিছু না। আচ্ছা তো কি হয়েছে আমি বলেছি। আপনি বলেছেন আমায় ভালোবাসেন। বলুন আপনি!

– ভূতনি! ভালোবাসি কথাটা অনুভব করতে হয় বুঝলে।

– না আমি শুনতে চাই।‌আপনি বলুন, আচ্ছা আগে বলুন তো ভালোবাসেন আমায়!

– কালকের ঘটনার পরও তোমার ডাউট আছে

– হ্যাঁ আছে তাই জিজ্ঞেস করছি। বলুন…

উনি আমার সোফায় গিয়ে বসে বললেন…
– ভালোবাসি বলাটা এতো সহজ না নিহা বুঝলে!

– এখন তো এটাই বলবেন জানি আমি!

– আচ্ছা তাহলে তুমি বলো!

– কি বলবো?

– তুমি ভালোবাসো আমায়! বলতে পারবে!

– হ্যাঁ পারবো, পারবো না কেন?

– কচু পারবে! সামনে এসে বলতে গিয়ে দু’তিন বার তোতলালে আবার বলছে বলবে।

– আমি পারবো বুঝলেন আপনি।

– আচ্ছা তাহলে বলো শুনি আমি বলো।

এখন কি হবে, আমি তো এমনেই বলে দিয়েছিলাম! কে জানতো উনি এটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিবেন। সত্যি’ই তো উনার সামনে গিয়ে এটা বলতে গিয়ে আমি তো সব গুলিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন যদি ভয় পেয়ে যাই তাহলে আমাকে ছাড়বেন না উনি। তাই বলে উঠি…

– হ্যাঁ বলবো! বলবো না কেন? তার আগে আপনি বলুন আমায় ভালোবাসেন তখন আমি বলবো এর আগে না।

– আমার চাল আমাকে দিচ্ছ!

– বউ তো আপনার’ই।

– তাও বটে! দেখা যাক তাহলে…

– হুম আমিও একটু দেখি!

বলেই চলে এলাম। সোজা গেলাম রান্না ঘরে। আজ ভার্সিটি বন্ধ তাই আর কোনো কাজ নেই। রান্না ঘরে এসে দেখি মা রান্না করছে আর অনেক খুশিও লাগছে তাকে। আমি মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম! কিন্তু মা’র উওর টা এতো সুন্দর হবে আগে বুঝিনি। সত্যি’ই খুশির খবর এইটা। আয়ানা’র আপু’র বিয়ের কথা বলতে আজ ছেলে পক্ষ আসছে। ব্যাপার টা হঠাৎ করেই ঠিক হয়েছে। বাবা’র বন্ধু’র ছেলে’র সাথে বিয়ে’র কথা হবে। আমি এই কথা শুনে ওখানে আর না দাঁড়িয়ে সোজা আয়ানা আপু’র ঘরে আসলাম। এসেই আপু কে জরিয়ে ধরলাম।

– আপু তোমাকে তো খুব খুশি লাগছে ইশ লজ্জায় মুখ খানা লাল হয়ে গেছে।

– বাহ কতো বড় বড় কথা বলছো তুমি!

– আরে আপু বুঝছো না কেন? তোমার বিয়ে হতে যাচ্ছে। জানো আমি কতো মজা করবো। আচ্ছা আপু তুমি খুশি তো এই বিয়েতে!

– হ্যাঁ অবশ্যই! আমার মতামত নিয়েই তো ছেলেরা আসবে!

– ওহ্ আচ্ছা তার মানে তোমার কোনো ক্রাশ নেই!

– ক্রাশ নেই মানে!

– ক্রাশ নেই মানে ক্রাশ নেই যার জন্য আর কি তুমি ভেবে রাখবে বিয়ে করবে!

– ধুর বোকা মেয়ে! ক্রাশ তো ক্রাশ’ই!

– মানে!

– শোন! সবার ভাগ্যে ক্রাশ থাকে না বুঝলে, আর থাকে না বলেই সে ক্রাশ হয়।

– হ্যাঁ বুঝেছি! আচ্ছা আমি সাজিয়ে দেই তোমায়, কিছুক্ষণ বাদেই তো ছেলেরা এসে পড়বে না।

– আচ্ছা। বসো তুমি!
.
অতঃপর ছেলেরা চলে এলো। ছেলেটা বেশ হ্যান্ডসাম ছিল। সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল। সবার মতামত নেওয়া হলো। আপু আর ছেলেকে একা কথা বলতেও পাঠানো হলো। তারাও তাদের মত দিলেন। অবশেষে সবাই বিয়ের জন্য রাজি হলেন। সামনের মাসে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো।

সন্ধ্যার সময় আমি দু’কাপ চা নিয়ে হাজির হলাম আপু’র রুমে। দেখি আপু বেলকনির দোলনায় বসে আছে। আমি তাকে গিয়ে চা দিলাম। আমি মুচকি হেসে সেটা নিলো। আমি বলে উঠি….
– পছন্দ হয়েছে বর কে!

– হুম সুন্দর তো।

– তাহলে আর কি? আচ্ছা একা ঘরে কি বললে বলো!

– পাকনা মেয়ে! তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছু না। উনি শুধু আমায় জিজ্ঞেস করেছেন আমার লাইফে এমন কেউ আছে কি না যাকে আমি বিয়ে করতে চাই বা এই বিয়েতে আমি নিজস্ব মত দিয়েই কি না।

– তো তুমি কি বললে!

– প্রথমে না পরে হ্যাঁ!
দুজনেই হেসে দিলাম।

– তা তোমার উনি’র নাম টা জানো কি?

– উনি’র নাম তো উনি!

– এটা কি বলো! তার তো একটা নাম আছে না।

– হ্যাঁ তা আছে বটে।

– তাহলে বলো সেটা!

– ইফান!

– বাহ আয়ানা + ইফান ফাটাফাটি!
আবার একবার হাসির শব্দ!

আপু বসা থেকে উঠে আমার কাছে আসলেন। আমার হাতে হাত রেখে বললেন…
– নিহা! আমার মা বাবা দুইটাই সম্বল, আমি আর আহি। আমি চলে গেলে আমার মা বাবা খেয়াল রাখার জন্য শুধু তুমি আছো। আহি’র বউ হিসেবে রাখবে তো খেয়াল! ঠিক নিজের মা বাবা’র মতো! ফেলে দিবে না তো তাদের। আমি এখান থেকে চলে গেলে কেউ থাকবে না আমার মা কে বোঝার জন্য! তুমি দেখে রাখবে তো তাদের!

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি..
– আপু আমার মা বাবা’কে আমি সেই ছোট বেলায় হারিয়েছি। শুধু তাদের চেহারা’র কিছু বৈশিষ্ট্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে, খুব অল্প স্মৃতি আছে তাদের সাথে আমার! কিন্তু এখানে আসার পর তাদের জন্য আমার মন খারাপ খুব বেশি একটা হয় নি, কারন এখানে আরেক মা বাবা আছে যারা আমাকে সেই কষ্ট পেতে দেয় নি। তারা আমারও মা বাবা! কথা দিলাম তোমায়, তোমার মতো করে না পারলেও নিজের মতো করেই তাদের দেখাশোনা করবো।

– এটাই আশা করছিলাম তোমার কাছে। কিন্তু আহি কে দেখে রাখো এটা বলবো না।

– জানি কেন বলবে না! কারন আমি উনাকে দেখি না বরং উনি আমায় সামলে রাখে তাই তো!

– বাহ বুদ্ধিমতি হয়ে গেছো দেখছি ‌

– আমি অনেক আগে থেকেই বুদ্ধিমতি মেয়ে!
দুজনেই হাসতে থাকলাম।
.
আপু’র রুম থেকে আসতে আসতে রাত হয়ে গেল তবে বেশি রাত নয়। রুমে এসে দেখি উনি রুমে নেই! কারনটা কি? কোথায় গেলেন উনি। হঠাৎ টেবিলের দিকে চোখ গেল। সেখানে একটা চিরকুট ছিল আরেকটা প্যাকেট! চিরকুটে লেখা ছিল…

– “ভূতনি! শাড়ি টা পড়ে ছাদে চলে এসো! আর একদম সাজবে না বুঝলে..!”

আমি কিঞ্চিত হেসে প্যাকেট খুললাম, একটা লাল রঙের শাড়ি ছিল তাতে! শাড়ি’র ওপর গোল্ডেন রঙের কারুকাজ। উনার কথা মতো শাড়ি টা পড়ে নিলাম তবে সাজলাম না। শাড়ি পড়ে চুল গুলো খোঁপা করতে করতে ছাদে উঠতে লাগলাম। তবে ছাদে উঠার পথে ‌সিড়ির চারদিকে মোমবাতি দিয়ে সাজানো ছিল। আর একটা লাল রঙের বেলুন ঝোলানো ছিল। তাতে একটা চিরকুট দিয়ে বাঁধা ছিল। তাতেও কিছু লেখা ছিল…

“তোমার চোখের কাজল আমি হবে বলে তোমাকে কাজল দিতে দেয় নি..!”

চিরকুট পড়ে আমি মুচকি হাসি! অতঃপর কাগজ টা নিয়ে উপরের সিঁড়িতে উঠতে থাকি। পুরো সিঁড়িতে মোমবাতি! খানিকবাদেই আরেকটা বেলুন পাই, সেটাতেও একটা চিরকুট ছিল। চিরকুটে লেখা ছিল…

“তোমার কপালে আমি ভালোবাসার পরশ দেবো বলে ছোট্ট টিপ পড়তে বলি নি..!”

আমি এই চিরকুট’টাও নিয়ে নেই। আরো কিছুক্ষণ পর আরেকটা চিরকুট পাই একই রকম ভাবে তাতে লেখা ছিল..

“তোমার এলোমেলো চুলে নিজেকে হারাবো বলে চুল বাঁধতে বলি নি…!”

এরকম পাগলামি দেখে না হেসে পারলাম না। আবার একটা চিরকুট পেলাম…

“সাদা – লাল শিউলি নাকি খুব প্রিয় তোমার! তোমার কানে নিজের হাতে পড়িয়ে দেবো বলে তোমাকে শিউলি দেয় নি। শিউলি ফুলের স্নিগ্ধতা নিজের হাতে দেবো তোমায়! শিউলি ছোট হলে কি হবে তার ভালোবাসা নাকি ভরপুর! তবে আমার সেই স্নিগ্ধতা মুখর ভালোবাসা নেবে তুমি…!”

উনার এই চিরকুট আমার মন কেড়ে নিলো। এতো ভালোবাসেন আমায় আমি তো আগে জানতাম না। নিজেকে আজ খুব ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে!

আর কয়েকটা সিঁড়ি আছে, তবে ইচ্ছে হচ্ছিল আর কিছু সিঁড়ি থাকুক। উনার ভালোবাসা একটু জানা যেত তাহলে। আবার একটা চিরকুট..

“আমার এইসব বাজে কবিতা পড়ে হাসবে না একদম, তোমার স্নিগ্ধ ঠোঁটের হাসি শুধু আমার জন্য আর সেটা দেখার অধিকার শুধু আমার’ই…!”

কবিতা গুলো মোটেও বাজে ছিল না এতে কিছু সূক্ষ্ম ভালোবাসা ছিল। তবে আমার মুখের হাসি’র দাবি করছেন তিনি। এই শেষ সিঁড়ি এখানে আর একটা চিরকুট..

“বিদ্রোহ ও চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই…!”

লজ্জায় লাল হয়ে গেছি আমি। এখন ছাদে যাবো কিভাবে? আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে অনেকখানি। উনার সামনে গিয়ে কিভাবে দাঁড়াবো আমি! কিন্তু যেতে তো হবে! আমি ছাদের দরজা খোলার সাথে সাথে কিছু ফুলের বর্ষন হলো আমার ওপর। সবগুলোর ছিল সাদা – লাল শিউলি ফুল। এবার ছাদের দিকে নজর গেল। পুরো ছাদের চারপাশে পর্দা দেওয়া! এই বাড়ির আশপাশ বাড়ি নেই বললেই চলে আর থাকলেও অনেক দূরে তবে এইসব কেন? ছাদের ঠিক মাঝখানে একটা খাট রাখা। খাটের চারপাশে সাদা পর্দা আর গোলাপি রঙের কাপড় দিয়ে ডেকোরেট করা। এছাড়া পুরো ছাদ মোমবাতি, ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজানো। বেশ খাটনি হয়েছে এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর পাশে একটা টেবিল আছে, সেখানে কিছু জিনিসপত্র আছে।

আমি সামনে যেতেই কেউ এসে আমার পিছনে দাঁড়ালো এটার উপস্থিত পেয়েছি আমি। এটা যে উনি এটা আমি জানি। উনি আমার চুলের খোঁপা খুলে দিলেন। আমি পেছনে ঘুরতে যাবে তখন পেছন থেকে আমার সামনে একটা বেলুন রাখলেন। এতেও আরেকটা চিরকুট, আমি এটা নিয়ে পড়তে লাগলাম..

“কাছে এসে জড়িয়ে ধরা বাকি,ভালোবাসি তোমাকে বলা বাকি…!”

এসব দেখে বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। ঠোঁটের কোনে হাসি যেন আমার থামছে না। উনি আমার বাহু ধরে পিছনে ঘুরালেন। উনার দিকে তাকানোর সাহস নেই বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমার থিতুনি তে হাত রেখে মুখ তুললেন। দু চোখ ভরে দেখছি উনাকে! উনার চোখের সেই ভালোবাসা আজ ধরা পড়ছে আমার চোখে! খুব স্নিগ্ধ ভালোবাসা এই’টা। উনি আমার কানে একটা শিউলি ফুল গুঁজে দিয়ে বললেন..

– কেমন লাগলো!

– অনেকটা আপনার ভালোবাসা’র মতো!

– যেমন।

– আপনার ভালোবাসা যেমন সূক্ষ্ম ভালোবাসা ঠিক তেমনই এসব!

– তাই!

– হুম..
বলেই সামনে হাঁটতে লাগলাম! উনি আমার পাশে হাঁটছেন! একটা লাল রঙের পাঞ্জাবি পড়া উনি! আমার শাড়ি’র ডিজাইন আর পাঞ্জাবির ডিজাইন সেম। আমি হাঁটতে হাঁটতে সেই টেবিলের দিকে আসছি। উনি আমার পাশাপাশি হাঁটছেন আর ধীরে ধীরে নিজের হাত আমার হাতে মুষ্টিবদ্ধ করছেন। আমি মুচকি হাসতে থাকি।

টেবিলের কাছে আসতেই উনি চেয়ার এগিয়ে দিলেন। আমি তাতে বসলাম। সেখানে আইসক্রিম ছিল। আমি উনাকে জিজ্ঞেস না খেতে লাগলাম। উনি আমার পাশে একটা চেয়ারে বসে আমাকে দেখেছেন। আমি আইসক্রিম খেতে খেতে বলে উঠি…
– আমাকে কেন দেখছেন?

– কে বললো তোমায় দেখছি আমি তো চাঁদ দেখছি!
বলেই আকাশের দিকে তাকালেন। আমিও তাকালাম! সত্যি আজকের আকাশ টা অনেক পরিষ্কার! চাঁদ টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর চাঁদ’টা দেখতেও অনেক সুন্দর।

দুজনেই নিরব, না উনি নিরব আর আমি আইসক্রিম খাচ্ছি। একবার ও উনাকে জিজ্ঞেস করেনি, ইচ্ছে করেই করি নি। এটাতে বেশ মজা লাগছিল আমার। হঠাৎ উনি বলে উঠে..

– আমার কথা আমি রেখেছি! এখন তুমি বলো ভালোবাসো!

– আপনি কখন বললেন ভালোবাসার কথা!

– কখন বললাম মানে এতো চিরকুট লিখলাম তোমার জন্য তাতে ভালোবাসা ছিল না!

– আমি কখন বললাম ছিল না!

– তো অনুভব করো নি।

– হ্যাঁ করেছি তো..

– তাহলে আবার কি?

– মুখে বলেছেন!

– তোমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে এই চিরকুট দেখে এতোক্ষণে আমাকে জড়িয়ে ধরতো।

– শুধু জরিয়ে ধরতো আরো অনেক কিছু’ই করতো তবে সেটা অন্য মেয়ে! কিন্তু আপনি ভুলে যাবেন না আমি আপনার স্ত্রী অন্য কোনো মেয়ে না!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
– এটাই আমার দুর্ভাগ্য!

– কি বললেন!

– কিছু না তুমি আইসক্রিম খাও বসে বসে।

– আমার জন্য’ই তো এনেছেন না! তবে এখানে এরকম ভাবে কেন সাজালেন যদি কেউ এসে পড়ে।

– দরজা আটকানো আর কেউ আসবে না এমনেতেও!

– হ্যাঁ সব জেনে বসে আছেন তো। আর এখানে এসব কিছুর প্ল্যান কে করলো।

– অবশ্যই সব আমি করেছি তবে আইডিয়া টা বাবা’র ছিলো!

– কিহহহহ!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here