ভালোবাসার রংবদল পর্ব ১১

#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ১১
#Saiyara_Hossain_Kayanat

স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি সামনে থাকা মানুষ গুলোকে। আমার শাশুড়ী মা আমার সাথে ভালো মতো কথাই বলেন না অথচ রূপার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলছে। উনি হয়তো এই মেয়েটাকেই নিজের ছেলের বউ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। আর সেই জায়গায় আমাকে দেখেই তার ব্যবহারে এতো বিষাক্ততা আমার প্রতি।

কিছুক্ষন আগেই রূপা আর তার মা এসেছেন। আর তখন থেকেই আমার শাশুড়ী মুখে খুব মিষ্টি হাসি দেখা যাচ্ছে। রূপা মেয়েটা খুব সুন্দর দেখতে আর ব্যবহারও খুব ভালো আমার সাথে ভালো করেই কথা বলছে। তবে শাশুড়ী মা রূপাকে আমার সাথে দেখলেই আমাকে ধমকিয়ে এটা ওটা কাজের বাহানা দেখিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

আজ পনেরো দিন হলো আদ্রর সাথে তেমন কোনো কথা হয় না। লংড্রাইভে যাওয়াই ছিলো আমাদের এক সাথে কাটানো শেষ মুহুর্ত। ওইদিনের পর থেকে আদ্র কেন যেন আমার সাথে কথা বলে না। এমনকি সারাদিন ওনার দেখাও মেলে না। ভোর সকালেই চলে যান আর বাসায় ফিরেন কখনো মধ্যরাতে আবার কখনো বাসায় আসেনই না। জিজ্ঞেস করলেই বলেন কাজের চাপ।
এখন আর ওনার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। মন খারাপে তাকে পাশে পাই না ম্যাজিকের মতো। তার ভালোবাসায় সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে যেতে পারিনা। আমাদের মাঝে এখন আকাশ সমান দূরত্ব। মাঝে মাঝে ভাবি হয়তো ওনার ভালোবাসার রংবদলে গেছে। কিন্তু মন এটা মানতে নারাজ। আমি ওনাকে বিশ্বাস করি ওনার প্রতিটা কথা এখনও আমার মনে আছে। বিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্কে। ওনার ভালোবাসাকে আমি অবিশ্বাস করতে পারছি না। হয়তো আসলেই খুব কাজের চাপে আছেন উনি।
সব কিছু মেনে নিতে পারলেও ওনার এমন দূরত্বটা আমাকে খুব বেশিই কষ্ট দিচ্ছে। যে মানুষটা আমার সব মন খারাপের ওষুধ এখন সেই মানুষটার জন্যই সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকি তাকে একবার দেখার আশায়, একটি বার তার সাথে কথা বলার জন্য। জানি না আবার কবে আমি আমার সেই পুরনো আদ্রকে ফিরে পাবো। জানি না আবার কবে তার বুকে মাথা রেখে সব কষ্ট ভুলে যেতে পারবো।

আনমনে কাপে চা ঢালতে গিয়ে পুরো চায়ের কেটলিটাই আমার উপর পরে গেলো। হাতে পায়ে গরম চা পরায় মনে হচ্ছে পুরো হাত পা ঝলসে যাচ্ছে। কেটলি পরে যাওয়ার শব্দে শাশুড়ী মা, দীপ্ত, রূপা আর তার মা রান্নাঘরে ছুটে আসলেন। শাশুড়ী মা রেগেমেগে বললেন-

—”একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারিস না তুই। কোনো কাজই তো পারিস না। বাপের বাসায় কি শিখেছিস ছোট থেকে?? শিখবিই বা কার কাছে তোর মা তো তোকে ফেলে রেখেই অন্য জনের সাথে চলে গেছে।”

ওনার এমন কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। হাত পা জ্ব্বলে যাওয়ার থেকেও বেশি ওনার কথায় আমার বুকে জ্বালা পোড়া করছে। ওনার এই তিক্ত কথার সামনে যেন আগুনে পোড়ার কষ্ট ও খুব তুচ্ছ।

রূপ আমার কাছে এসে বললেন-

—”আহহ খালামনি কি করছো!! মেয়েটার হাত পা পুড়ে গেছে আর তুমি কি-না ওকে যা-তা বলে দিচ্ছো।”

দীপ্ত এবার বেশ রেগে গেলো। আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রাগে চিৎকার দিয়ে বললো-

—”আজ তুমি খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছো মা। এই শুভ্রতাকে তুমি আমার মতোই ভালোবাসতে আর আজ কি-না ওর সাথে এমন অমানুষের মত ব্যবহার করছো!! তোমাকে তো নিজের মা ভাবতেও আমার কষ্ট হচ্ছে।”

দীপ্তর কথা শুনে আমি ওকে ধমক দিয়ে বললাম-

—”দীপ্ত চুপ কর কিভাবে কথা বলছিস ওনার সাথে…..”

আমি আর কিছু বলবো তার আগেই আমার গালে সজোড়ে এক থাপ্পড় পরলো। থাপ্পড়ের শব্দে যেন পুরো ঘর কেঁপে উঠল। আমি ছিটকে পরে যেতে নিলেই দীপ্ত আর রূপা আমাকে আগলে ধরে নেয়। এতো জোরে থাপ্পড় খেয়ে মনে হচ্ছে আমার গাল পুরো অবশ হয়ে গেছে।

“ভাইয়া তুমি এটা কি করলে? তোমার কাছ থেকে কখনো এটা আশা করিনি।”

দীপ্ত রাগে গর্জে উঠে কথাটা বললো। আমি চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখলাম আদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রাগে তার চেহারা রক্তিম বর্নের হয়ে উঠেছে, কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি প্রচুর রেগে আছেন। কিন্তু আদ্র আমাকে থাপ্পড় দিলেন কেন? তা-ও আবার এতো গুলো মানুষের সামনে?? ওনার কাছে তো আমি এমন ব্যবহার আশা করিনি। ভালোবাসার রঙ কি সত্যি সত্যিই বদলে গেল??
সবার সামনে ওনার এমন কাজে আমার রাগ, লজ্জা, অভিমান আর কষ্ট সব মিলিয়ে ইচ্ছে করছে এখনই নিজেকে শেষ করে দেই। মাথা তুলে তাকাতেও লজ্জা করছে আমার।

—”দীপ্ত একদম চুপ কর। আর সবাই এই মুহূর্তে নিজের রুমে যাও আর এক মিনিটও যেন এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে না দেখি। আর শুভ্রতা তুই এখনই নিজের রুমে গিয়ে সব কিছু গুছিয়ে নে। নিজের বাপের বাড়ি থেকে যা যা এনেছিস তার বাহিরে একটা জিনিসও পেকিং করবি না। যদি দেখি এই বাড়ির থেকে একটা সুতো ও নিয়েছিস তাহলে এখানেই জ্যান্ত পুতে ফেলবো তোকে।”

ওনার এমন হুংকার দিয়ে কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিছু বলা বা কিছু করার মতো শক্তিই যেন হারিয়ে ফেলেছি। আদ্র আবার আগের থেকে দ্বিগুণ জোরে চিৎকার দিয়ে বললেন-

—” এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন মূর্তির মতো কথা কানে যায় নি???”

আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। দৌড়ে চলে আসলাম রুমে। ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েই মেঝেতে বসে অঝোরে কান্নায় ভেঙে পরলাম। আদ্র কিভাবে পারলেন সবার সামনে আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে। উনি কি সত্যি বদলে গেলেন!! আমি তো ওনার ভালোবাসার জন্যই এখানে সব সহ্য করতাম আর আজ কি না উনি নিজেই আমার সাথে এমন ব্যবহার করলেন। বাকি সবাই যেমনই ব্যবহার করুক আমার সাথে তবে ওনার উপর আমার ভরসা ছিলো। দিন শেষে ওনার কাছেই আমি ঠাই মেলতো। উনি কখনো আমাকে কষ্ট দিবেন না এই ভরসা নিয়েই ছিলাম আমি। হাত পায়ে পোড়ার যন্ত্রণা, শাশুড়ী মায়ের বাজে কথা অপমান এসব কিছুই এখন মাথায় নেই। এখন শুধু আমার মাথায় ঘুরছে আদ্রর করা ব্যবহার গুলো।

আচ্ছা উনি কি এখন আর আমাকে ভালোবাসে না?? উনি কেন আমাকে এড়িয়ে চলে সব সময়?? কেন আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না?? কেন আমার সাথে কথা বলে না?? কেন মানুষের ভালোবাসার রংবদলায়??? এই এতো ‘কেন’ নিয়ে আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো। এইসব প্রশ্নের একটা উত্তরও আমার কাছে নেই। আমার জীবনটা পুরো প্রশ্নবোধক চিহ্নে ঘিরে আছে। এইগুলো নিয়ে কি আমি ভালো থাকবো!!

—”শুভ্রতা দরজা খোল।”

—”চুপ করে আছিস কেন?? আমি তোকে দরজা খুলতে বলেছি শুভ্রতা। আমার কথা না শুনলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।”

—”তুই দরজা খুলবি নাকি আমি দরজা ভেঙে ফেলবো??

আদ্রর চিৎকার শোনা যাচ্ছে দরজার অপর পাশ থেকে। কিন্তু আমি শক্তি পাচ্ছি না এখন উঠে দাড়ানোর। হাতে পায়ে কোনো শক্তি নেই। চোখেও ঝাপসা হয়ে আসছে। বুকে প্রচন্ড ব্যথা করছে এই মুহূর্তে। আচ্ছা আমি মরে গেলে কি আদ্রর খুব কষ্ট পাবে?? হ্যাঁ পাবেই তো উনি তো আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। আমি আস্তে আস্তে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ আসছে আমার ঠিক তখনই বিকট এক শব্দ কানে ভেসে আসলো। আদ্র কি তাহলে দরজা ভেঙে ফেললো!!

চলবে….

(সময় আর সুযোগ পেলে আজ রাতেই একটা স্পেশাল পর্ব দিয়ে দিবো। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।🖤❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here