ভালোবাসার রংবদল পর্ব ৭

#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ৭(স্পেশাল পর্ব)
#Saiyara_Hossain_Kayanat

দরজা খুলতেই আচমকা কেউ একজন আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এতো শক্ত করেই ধরেছে যে আমার হাড়গোড় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়া মতো অবস্থা। আচমকা এমন একটা ঘটনায় আমি পুরোই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এই সিচুয়েশনে কেমন রিয়েক্ট করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না। পরক্ষনেই নিজেকে ছাড়ানো জন্য মানুষটাকে ধাক্কা দিতে যাবো তখন খেয়াল করলাম এই মানুষটা আর কেউ নয় আদ্র ভাই। ওনাকে দেখে আমার মেজাজ পুরোই বিগড়ে গেল। দুপুরে ওনার করা ব্যবহার গুলো মনে পরতেই ওনাকে নিজের থেকে ছাড়ানো জন্য জোরে ধাক্কা দিতে লাগলাম কিন্তু ওনার শক্তির কাছে আমার শক্তি বার বারই ব্যর্থ হচ্ছে। রেগেমেগে শক্ত গলায় বললাম-

—”আদ্র আমাকে ছাড়ুন।”

আমার কথা হয়তো ওনার কান অব্দি পৌঁছায়নি তাই ওনার মধ্যে কোনো হেরফের দেখা গেল না। আমি এবার আগের থেকেও জোরে ধাক্কা দিতে দিতে মৃদু চিৎকার দিয়ে বললাম-

—”আমাকে ছাড়ুন আদ্র। এভাবে এতো রাতে একটা মেয়ের রুমে এসে জড়িয়ে ধরতে কি একটুও লজ্জা করলো না আপনার!! ছাড়ুন আমাকে না হলে আমি চিৎকার দিতে বাধ্য হবো আদ্র।”

আমার কথায় উনি আমাকে আরও শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলেন। কিছুটা সময় পর নিম্ন স্বরে বললেন-

—”যা ইচ্ছে হয় কর তবে এই মুহূর্তে আমি তোকে ছাড়ছি না।”

—”আপনি কিন্তু খুব বারাবাড়ি করছেন আদ্র। আমাকে ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি আমি।”

আদ্র ভাই আমার ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়ে অপরাধীর গলায় বললেন-

—”তুই এতটা রাগ করেছিস আমার উপর শুভি!! আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। রাগের মাথায় তোকে ব্যথা দিয়েছি এটা আমার একদমই উচিত হয়নি শুভি। আমাকে মাফ করে দে প্লিজ।”

ওনার কথা আমি কোনো রকম সাড়াশব্দ করলাম না। এবার উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার মুখোমুখি হয়ে আমার দু গালে আলতো করে ধরে বললেন-

—”চুপ করে আছিস কেন কথা বল। খুব ব্যথা পেয়েছিস তাই না শুভি?? আসলে তখন আমার মাথা একদমই ঠিক ছিলো না। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তোকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”

আমি এবারও কিছু বলছি না। উনি এভাবে কথা বলতে থাকলে আমি নিশ্চিত ওনার কথায় মুহুর্তেই গলে পানি হয়ে যাবো। তাই কিছুটা রাগ দেখিয়ে ওনার হাত আমার গাল থেকে সড়িয়ে দিলাম। একপলক ওনার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বিছানা যেয়ে বসে পরলাম। আদ্র আমার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থেকে আমার কাছে এসে হাটু গেড়ে বসে পরলেন। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমার দু’হাতে ওনার হাতের মুঠোয় নিয়ে অনুনয়ের স্বরে বললেন-

—”এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দে শুভি। আর কখনো এমন করবো না। তুই দু’দিন ধরে আমাকে এড়িয়ে চলছিস কোনো যোগাযোগ করিস না তাই খুব রাগ ছিলো। কিন্তু আজ যখন ওই চিঠিটা পরলাম তখন রাগে মাথা একদমই কাজ করছিলো না। তাই না বুঝে শুনেই তোর গায়ে হাত তুলে ফেলেছি। কিন্তু পরে নিজের উপরই খুব রাগ হচ্ছিলো এমন কাজের জন্য। মাফ চাওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু তুই ফোনও অফ করে দিলি। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে তাই এখনই চলে আসলাম তোর কাছে।”

শেষ হয়ে গেল আমার সব প্রচেষ্টা। নিজেকে আর শক্ত করে রাখতে পারলাম না ওনার সামনে। সব অভিমান নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। রাগ অভিমান সব ভুলে কান্না শুরু করে দিলাম কিন্তু কেন জানি না। আমাকে কান্না করতে দেখে আদ্র উত্তেজিত হয়ে আমার পাশে বসে অস্থির কন্ঠে বললেন-

—”আরে আরে কান্না করছো কেন?? এখন আবার কি করলাম?”

ওনার কথায় রাগ উঠে গেল আমার। কান্না করতে করতেই রাগী কন্ঠে বললাম-

—”আপনার জন্য কি শান্তিতে একটু কান্নাও করতে পারবো নাকি আজব!!”

—”থাক আমাকে এখন আর রাগ দেখাতে হবে না। কান্না করো যত ইচ্ছা কান্না করো তবে আজকেই শেষ মনে রেখো।”

আমি কিছু বললাম না মাথা নিচু করে আছি। আদ্র‍ আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন-

—”আমাকে মাফ করে দিস পিচ্চি। আমি তোকে ভালোবাসি এটা শোনার পর কেন এড়িয়ে যাচ্ছিস আমাকে শুভি? আর কখনো আমাকে ভাবে ইগ্নোর করিস না প্লিজ। আর আমি তোর পাশে অন্য কাওকে কল্পনাতেও সহ্য করতে পারিনি না তাই তো সব সময় তোকে এতো শাসন করি যেন কোনো ছেলের সাথে মিশতে না পারিস। কিন্তু আজ তোর কাছে এরকম একটা চিঠি দেখে আমার মেজাজ বিগড়ে গেছিলো। তোর কথা না শুনেই তোকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আর কখনো এমন করবো না প্রমিজ।”

আমি কোনো কথা না বলে ওনার শার্ট খামচে ধরে বুকে মাথা এলিয়ে দিলাম। উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর বার বার সরি বলছেন। কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম নিজেও জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করলাম আমি বিছানা শুয়ে আছি। আর আমার মাথার পাশেই একটা চিরকুট।

“তুই আসলেই একটা পিচ্চি তা না হলে এভাবে কেউ ঘুমিয়ে পরে?? ভেবেছিলাম একটু রোমান্টিক কথা বলবো কিন্তু তা আর হলো কই তুই তো বাচ্চাদের মতো কেঁদেকেটে আমার বুকেই ঘুমিয়ে পরলি।”

লেখা গুলো পরে একরাশ লজ্জা এসে আমাকে আঁকড়ে ধরলো। এই লোকটা দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।

————————

এই এক সপ্তাহে আমি আদ্র ভাইয়ের প্রতি অনেকটাই দূর্বল হয়ে পরেছি। শুধু দূর্বল হয়েছি বললে ভুল হবে কারন আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। হয়তো মুখে কখনো বলিনি তবে আমি অনুভব করতে পারি। আর আদ্র ভাইও এই কয়দিন আমার সাথে আর রাগারাগি করেনি। ভালো ভাবেই ব্যবহার করতেন তবে মাঝে মাঝে দীপ্তর সামনে ভালোবাসার কথা বলে আমাকে লজ্জায় ফেলেন।

কিছুদিন ধরে আমার কেমন যেন খুব অস্বস্তি লাগছে। মনে হয় কেউ আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। কিন্তু আশেপাশে কাওকে দেখি না। তাই বিষয়টাকে তেমন কোনো গুরুত্ব দেইনি। মনের ভুল ভেবেই এড়িয়ে গেছি। ভার্সিটি থেকে এসে বাসার সামনে সেই চিরকুট দেওয়া ছেলেটার বাইক আর তার সাথে একটা গাড়ি দেখে খুব অবাক হয়েছি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাইকটা পর্যবেক্ষণ করছি আশেপাশে কেউ নেই। আর আমাদের বাসার সামনেই বা এই বাইক কি করছে!! তাহলে কি এই ছেলেটাই এতো দিন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো??

—”কিরে এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?? বাসায় যাবি না!!”

আমাকে এভাবেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদ্র ভাই কথাটা বললেন। আমি হাত দিয়ে বাইকটার দিকে ইশারা দিয়ে বললাম-

—”আদ্র এটা ওই চিরকুট দেওয়া ছেলেটার বাইক।”

আদ্র ভাই কিছু ক্ষন চুপ করে থেকে গাড়ি থেকে নেমে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন-

—”চল ভিতরে যাই। আংকেল আর দিদুমনির সাথে আজ দেখা করে যাবো।”

আমি ওনার দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। আমি জানি আদ্র ভাই কেন আজ বাসায় যেতে চাইছে তাই আর কথা বাড়ালাম না।

———————

“শুভ আমার ছেলে তোমার মেয়েকে পছন্দ করেছে বিয়ে করতে চায়। তুমি রাজি হলে আমরা বিয়ের কথা সামনে আগাতে পারি।”

ড্রয়িং রুমের সামনে এসে এমন কথা শুনতেই আমি থমকে দাড়ালাম। আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। ওনার চেহারায় রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। সামনে তাকিয়ে কিছু মানুষ দেখতে পেলাম। কেন যেন ওনাদেরকে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে পরছে না।

চলবে…

(বিয়ের কাজটা কি সম্পূর্ণ করে দিবো না-কি???
বিঃদ্রঃ ১.আপনারা অনেকেই পর্ব করে দিতে বলেন তাই আজ আপনাদের সবার মতামত চাই পর্ব কি বড় করে দিবো নাকি এমনই ঠিক আছে!!
২.আপনাদের জন্য স্পেশাল পর্ব দিয়ে দিলাম। ভালোবাসা রইলো সবার জন্য।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here