ভালোবাসার রংমশাল পর্ব-১০

#ভালোবাসার রংমশাল
#পর্ব-১০
#সিফাতী সাদিকা সিতু

নিঝুম চট করে উঠে বসলো। এভাবে ঘুমোতে পারবে না।দমবন্ধ হয়ে আসছে। সাম্যর কোনো হেলদোল নেই। সে দিব্যি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।অসভ্য একটা লোক!নিঝুম বিছানা থেকে নামলো।ঘরের আশেপাশে খুঁজলো মেঝেতে বিছানোর মতো কিছু কিন্তু পেল না।তার সাথে সবসময় এমনই হয়!সে আবার শুয়ে পরলো বিছানার এক কোণে। জোড় করে ঘুমোনোর চেষ্টা করলো।

অন্যদিকে সাম্য নিজেকে বকছে!আজ হঠাৎ এলোমেলো ইচ্ছে গুলো মাথা চারা দিয়ে উঠতে চাইছে!নিঝুমকে খুব করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে। এমন নিষিদ্ধ ইচ্ছে কেন হচ্ছে? নিঝুমের প্রতি ঘৃণা ছাড়া অন্য কোনো অনুভূতি থাকা একদম উচিত নয়। অথচ অবাধ্য ইচ্ছে গুলো যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।বিয়ের পর থেকেই এমনটা হচ্ছে। তার সত্যি নিঝুমকে বিয়ে করা একদম উচিত হয়নি।একদম না।

সাম্য ঘুম থেকে উঠে নিঝুমকে পাশে পেল না।দরজাটা হালকা ভাবে খোলা।নিঝুম কখন উঠেছে সে টের পেল না কেন?এতো ঘুমিয়েছে সে! অচেনা পরিবেশে এতো ভালো ঘুম হবাব কি অন্য কোনো মানে আছে?সাম্য কিছু ভাবতে চাইলো না।ঘর থেকে বের হলো সে।ছোট চাচার ছেলে এসে একটা গামছা দিয়ে বাথরুমে যেতে বললো।তার জন্য সবাই নাস্তা নিয়ে অপেক্ষা করছে। খেতে বসে দেখলো,নাস্তার বাহারি পদ।পরোটা,হাসের মাংস, খিচুরি, কয়েক ধরনের পিঠা।গ্রামের মানুষ গুলো মেহমানদের খাওয়াতে পছন্দ করে সেটা সাম্য জানে।তবে সকালে এতো ভারী খাবারের সাথে শহরের মানুষজন অভ্যস্ত নয়।সাম্য তবুও অনেকটাই খেলো।চমৎকার রান্না।পরোটা গুলো তেলতেলে হয়নি বরং নরম, সুস্বাদু হয়েছে।সাম্য অনেক তৃপ্তি নিয়ে খেলো।খাওয়া শেষে চাচার সাথে আলোচনায় বসলো।চাচা তাকে নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে গেল।ওরা বেরিয়ে যাবার পর নিঝুমও বেরোলো।মেঠো পথ দিতে হাঁটতে সেই চেনা অনুভূতি হলো!কত হেঁটে বেরিয়েছে এই পথ দিয়ে,কত খেলেছে।আজ সবকিছু হারিয়ে গেছে।বাবা মা বেচে থাকলে সবকিছু অন্যরকম হতো।সাম্যর সাথে এভাবে জীবনটা জড়িয়ে যেত না!

আশফি গতরাতে বেশ দেরি করে বাড়ি ফিরেছিল। মিনারা বেগম ডেকে তুললেন ছেলেকে।ভার্সিটির দেরি হয়ে যাচ্ছে। আশফির মোটেও ইচ্ছে করছে না যেতে। হঠাৎ মনে পরলো,আজ তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হবে।নিঝুম আসতে পারে!ঝটপট রেডি হয়ে নিলো।ভার্সিটিতে এসে তার দুচোখ শুধু নিঝুমকেই খুঁজলো।নিঝুমের ক্লাসের পাশদিয়ে কয়েকবার হেটেও আসলো কিন্তু নিঝুমকে দেখতে পেল না।হতাস হয়ে অফিসের দিকে এগোতেই সিঁথির সাথে দেখা হলো।সিঁথি সালাম দিল তাকে।

আশফি সালামের উত্তর দিয়ে বললো,ভালো আছ?

জ্বি স্যার।

নিঝুমকে দেখছি না,আসেনি?

না স্যার,ও একটু গ্রামের বাড়িতে গেছে।

ওহ্ আচ্ছা, ক্লাসে যাও।
আশফির ইচ্ছে করছিল নিঝুমের বিষয়ে আরও কিছু জানতে কিন্তু সেটা সিঁথির কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে।তাই ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নিজের কাজে গেল।

নিঝুমকে ঘিরে আছে তার ফুফু এবং দুই চাচি।হাজারটা প্রশ্ন করে অস্থির করে তুলছে তাকে।সে সম্পত্তি বুঝে নিতে আসছে জন্য কিছু কথাও শুনিয়ে দিলো।নিঝুমের মনে হলো সে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে এদের কথার বানে।নিঝুমকে এমন অবস্থা থেকে উদ্ধার করলো,সীমা।নানী বাড়িতে থাকে সে। নিঝুমের কথা শুনে এসেছে নিঝুমকে দেখতে।সে সারার ছোট বোন।এসেই সে নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।টেনে নিয়ে গেল একপাশে।

আপু তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।অনেক যোগাযোগ করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি।কথা গুলো তোমাকে না বললে অনেক সমস্যা হবে তোমার!

নিঝুম অবাক হয়ে গেল।কি কথা সীমা?

আপু,সারা আপু তোমার..
কথা শেষ করতে পারলো না সীমা তার আগেই সারা এসে দাড়ালো তাদের পাশে।সীমার মুখ শুকিয়ে গেল।নিঝুম সারার সাথে কথা বলতে গেলে সারা কথা না বলে সীমাকে টেনে নিয়ে চলে গেল।

সারা ব্যবহারে নিঝুমের চোখে পানি এসে গেল।

***

গ্রামের গোধূলি সন্ধ্যা সাম্যকে বিমোহিত করলো।সে হাঁটতে হাঁটতে পুকুর ঘাটে আসলো।দাড়িয়ে থাকতে চোখ গেল একটা মেয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। সাম্যর মবে হলো এটা নিঝুমের চাচাতো বোন সারা।তাই সে এগিয়ে গেল।সীমা তাকে দেখে ভয় পেল।সাম্যও কাছে গিয়ে দেখলো মেয়েটা সারা নয় তবে অনেকটাই সারার মতো দেখতে।কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করলো,তুমি কি সারার বোন।

সীমা অবাক হয়ে বললো,কে আপনি,আমায় কিভাবে চিনলেন?

তোমাকে অনেকটা সারার মতো দেখতে লাগে তাই মনে হলো।আমাকে চিনবে না।আমি তোমার নিঝুম আপার হাসবেন্ড! কথাটা বলার সময় কেন যেন সাম্যর গলাটা কেঁপে উঠলো।

সীমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই সেই নিঝুম আপু স্বামী!সীমা দ্রুত চোখ মুছে বললো,ভাইয়া আপনাকে যদি কিছু কথা বলি রাগ করবেন?

সাম্য অবাক হয়ে বললো,রাগ করবো কেন?বলনা কি বলতে চাও?

সীমা আশেপাশে তাকিয়ে বললো,নিঝুম আপুকে বলতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি তাই আপনাকেই বলি।

সাম্য সীমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে।এই সময় এখানে কথা বলা ঠিক হবে না। তুমি চলো ছোট চাচাট বাড়িতে ওখানেই তুমি কথা গুলো বলবে।নিঝুম তো আছে।

সীমা না, না করে উঠলো। সে জানে সারা ঠিক ছোট চাচার বাড়িতে হাজির হবে।সাম্য বাধ্য হয়ে বসে পরলো সীমার পাশে।সীমা দেরি না করে বলতে শুরু করলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here