#ভালবাসা_তুই
#শেষ_পর্ব
#লেখিকাঃসাদিয়া_আক্তার
_______________________🍂
রুমের এদিক থেকে ওদিক,হাত কচলিয়ে বার বার হেটে বেরাচ্ছে ইরা।তূর্য কি এখনো ওই ডুকমেন্টটা পাইনি?আর কিছুক্ষনপর বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।কি হবে?সেদিন গায়ে হলুদের দিনও তূর্য ব্যর্থ হয়েছে।এখন যা করার আমাকেই করতে হবে।বলেই বের হয়ে গেলো ইরা রুম থেকে।
🌹
আমির ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ কি দেখে যেনো শরীরে জোরে বেগ কষে থেমে গেলো।লিজা কয়েকজন ছেলের সাথে হাসাহাসি করছে।অজান্তেই তা দেখে রাগ উঠে যায় আমিরের।আমির ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।লিজা আমিরকে দেখে হাস্যজ্বল মুখটা একদম চুপ্সে যায়।
—–লিজা এখানে কি করছো?আর এরা কারা?(রেগে আমির বলে)
—–আরে আমির ভাই ওরা হচ্ছে আমাদের গেস্ট।ইমরান ভাইয়ের আত্নীয়।
—–গেস্ট বুঝলাম।বাট এতো হাসির কি আছে?তা ঠিক বুঝলাম না।
—–আরে কি বলেন?উনারা গেস্ট আমাদের ভুলে গেছেন নাকি?(হেসে)
লিজার এরকম শয়তানিমার্কা হাসি দেখে আমিরের আরও রাগ কয়েক ডিগ্রী বেরে যায়।লিজার হাত শক্ত করে ধরে একটু টেনেই নিয়ে যায় সেখান থেকে।
——আ আরে আ আমির ভাই কি…কি করেছন কি?ছাড়ুন হাতটা।ব্যথা লাগছে খুব।
হাতটা ছেড়ে আমির বলে,
——এতো হাসছিলে কেনো?ভালো লাগছিলো বুঝি ওদের সাথে?
——কি বলছেন আমির ভাই?একটু কোম্পানিই তো দিচ্ছিলাম।এতে এতো হাইপার হচ্ছেন কেনো আপনি?
——কই আমি হাইপার হচ্ছি?
——তাই তো দেখছি নাকি জেলার্স হুম?
——আর ইউ মেড?আমি জেলার্স হবো কোন দুখে?
——তাই তো মনে হচ্ছে।
——না এমন কিছু না।আমি শুধু তোমাকে সর্তক করতে ওইসব ছেলের থেকে দুরে থাকতে বলছি।ওরা ইমরানের আত্নীয়। সেই জন্যে।
বলেই আমির চলে যায়।লিজা জোরে হেসে দেয়।আমি জানি আমির আপনি জেলার্স।আপনি যতোই নিজের ভালোবাসা আমার কাছে লুকানোর চেষ্টা করেন আমি কিন্তু ঠিকি দেখেছি আমার জন্যে আপনার মনে নূন্যতম সেই ফিলিংসটা যেইটা একটু হলেই আপনার মনে আমার জন্যে ভালোবাসা শুরুর জানান দেয়।আমি তো আপনাকে সেই কতো আগ থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি।শুধু আপনার উত্তরের অপেক্ষায় আছি।
🍁
ইমরান তার রুমে বসে কারো সাথে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত।হঠাৎ ইরা ইমরানের রুমে এসে নক করে।ইমরান তা দেখে ফোনটা রেখে বলে,
—–হ্যা ইরা ভিতরে আসো।এইটা তো আইজ বাদে কাইল তোমারই রুম।নিজের রুমে প্রবেশ করার লইগগা অনুমতি নেওয়র দরকার নাই।
—–আপনি ব্যস্ত নাকি?আমি আসছিলাম আপনার সাথে কিছু কথা বলার জন্যে।
—–আরে তুমি একটা কেন অনেকগুলা কথা কও।আমি সবই শুনতে রাজি আছি।
—–না আসলে যেহেতু আজ আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে,তাই আপনার সম্পর্কে কিছু জানতে চাচ্ছিলাম।আপনি কি করেন?আপনার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানতে চাই।
—–ওহ আইচ্ছা।আমার অনেক গুলাই বিজনেস আছে।আর ফ্যামিলি কইতে মাই আছে।আর তেমন কেউ নাই।
—–আচ্ছা।আমার একটা জিনিস জানার অনেক ইচ্ছে হচ্ছে।
——বল বল কি জানতে চাও?
——আপনি আমার যে ছবিটা দেখে আমাকে ভালো লেগে গিয়েছিল সেই ছবিটা কোথায় পেয়েছেন?
——ওইটা হয়তো তোমার ভাইয়ের পকেট থেইক্কা পইরা গেছে।বাট আমি কাজ শেষে সোফা থেকে উঠতেই দেখি একটা ছবি পইরা আছে পায়ের সামনে।উঠাই তোমার সেই চোখই আমারে শেষ কইরা ফেলছিলো।আ…
-আর কিছু বলার আগেই ইরা বলে উঠে,
——বাট আমার যে ছবি আপনি দেখেই ফিদা হয়ে গেছেন,ওই ছবিটা কি আমি দেখতে পারি?কোথায় রেখেছেন?
——ওই ছবি তো অনেক যত্ন করে মনের পিঞ্জিরায় রাইক্কা দিছি।তবে তুমি এতই দেখতে চাইছো যহন দেখাই দেই। অপেকা করো।বলেই একটা দাঁত কেলানো খুশির হাসি দিয়ে ইমরান তার আলমিরা দিকে যাই।আলমিরার দরজা টা খুলতেই সেখানে একটা লকার দেখা যাচ্ছে।যেখানে ইমরাম তার সব ইমপ্রোটেন্ট জিনিস রেখে দেয়।সেইটা থেকে ইরার ওই ছবিটা বের করে।ইরা দুর থেকে সবই দেখছিলো।ইরার বুঝার বাকি রইলো না এখানেই সেই সব ডুকুমেন্ট লুকিয়ে রেখেছে ইমরান।ইমরান ইরার ছবিটা হাতে নিয়ে যেই লকারটা লক করতে নিবে ইরা তার পাশে থাকা কাচের ফুলদানি হাত দিয়ে ফেলে দেই।ফুলদানিটা এমনভাবেই ফেলেছে যে তা ইরার পায়ে পরে।ইরার পায়ের কিছুটা অংশ কেটে গেছে ফুলদানি ভেঙে কিছু কাচের টুকরো পায়ে পরে।ইরা জোরে আওয়াজ করায় তা শুনে ইমরান দৌড়ে এসে ইরার কাছে চলে যায়।
——ই ইরা কি হইছে?ঠিক আছো তো?(ইমরান)
——হ্যাঁ ইমরান।শুধু পা টা কেটে গেছে একটু।উফফ ব্যথা করছে।
——রক্ত বের হচ্চে।চল ব্যান্ডেচ করে দেই।
বলেই ইমরান ইরাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
♦
সন্ধ্যা ৬টা।
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।ফুল দিয়ে পুরো মেনশনটা সাজানো হয়েছে।ইরাকে কিছু মেয়ে এসে সাজিয়ে দিচ্ছে।ইরার কিছুটা ভয় পাচ্ছে।কি হবে এখন।
লিজার সাজা শেষ।অনুষ্ঠানে এসেই লিজা দৌড়াদোড়ি শুরু।হঠাৎ দেখলো ওয়েটাররা কিছু সফট ড্রিংকস সার্ভ করছে তা দেখেই লিজা তা খেতেই দৌড়ে ওয়েটারটার কাছে চলে যায়।যেইনা কোকের একটা গ্লাস উঠাতে নিবে আমির এসে লিজার হাত থেকে নিয়ে নেই।
লিজা কিছুটা রেগে বলে,
——কি হয়েছে?এভাবে নিয়ে নিলেন কেনো গ্লাসটা?
——কারণ এইটা তুমি খাবা না তাই।
——আজব তো।আমি খাবো কোকটা।দিন।
——খাবে না মানে খাবে না।
—–কেনো খাবো না?
——কারণ এইটা তোমাকে স্যুট করে না তাই।সেইদিন এইটা খেয়ে অনেক গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম হয়েছিলো।
ভ্রু কুচকে লিজা বলে,
——আপনি জানলেন কিভাবে?
——-আ আমি দে দেখছিলাম সেদিন তোমাকে আরকি খেতে তাই।
——এতো খেয়াল করেন আমাকে?
——কয় না তো।ওইটা হঠাৎ চোখে পরল আরকি।
এবার লিজা আমিরের হাতটা ধরে বলেই দিলো তার মনের কথা।আমির আমি আপনাকে ভালোবাসি অনেক বেশি।কখন ভালোবেসে ফেলেছি তা হয়তো নিজেও জানি না।তবে ভালোবেসেই ফেলেছি।
তা শুনে আমির কিছুটা চমকে উঠে।লিজা হঠাৎ বলে দিবে তা ভাবতেও পারেনি আমির।তা শুনে কোনো উত্তর না দিয়েই আমির চলে যায়।আমির ভাবতে থাকে সে তো ইরাকে ভালোবাসে।কিন্তু আসলেই কি ইরাকে ভালোবাসতো?কিন্তু ইরার পছন্দ অপছন্দের কোনো ধারণাই তো আমার নেই।”বাট লিজার পছন্দ অপছন্দ সবই আমি জেনে ফেলেছি মনের অজান্তেই।আমি তো এতোদিন ইরার দিকে তাকাইও নি।আমার চোখ ছিলো শুধু লিজার সব কাজকর্মের দিকে।সে কি করে কোথায় যায়।” (মনে মনে আমির বলে)
আমির এখন বুঝতে পেরেছে ইরার প্রতি তার এতোদিন যা ছিলো তা শুধু ভালোলাগা আর ইরাকে পাওয়ার যে আকুল অনুভূতি কাজ করতো তা ছিলো শুধু তূর্যের থেকে নেওয়া প্রতিশোধের হিসাব।আর কিছুই না।আমির এইসব ভেবেই আবার উল্টো দিকে পা বারিয়ে লিজাকে খু্ঁজতে যাচ্ছে আজ তার মনের কথা বলতে,, তখনি পুলিশ এসে দা্ঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।তা দেখে আমির,লিজা অবাক হয়ে যায়।
ইমরান বর সেজে বসে থাকা তার জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ায়।পুলিশের পাশে তূর্য আর ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে।
তূর্য পুলিশকে আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে দেই,
—–অফিসার ওইযে মিস্টার ইমরান হাসান।(তূর্য)
✨
পুলিশ সদস্যের দুইজন ইমরানের কাছে এসে হ্যান্ডক্রাফট পরিয়ে গ্রেফতার করে।ইউ আন্ডার এরেস্ট মিস্টার ইমরান হাসান।অনেক কালোধান্দা,অনেক অবৈধ কারখানা,ফার্ম, মানুষের জায়গা নিজের জোর করে নিজের করার অপরাধে আপনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।ইমরান কিছুই বুঝতে পারছে না।হঠাৎ তার সাথে কি হয়েছে?ইমরানকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশরা।
——-অফিসার আমাকে ছাড়ুন।ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিলুম।
——-তোর এইসব হুমকি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে জেলে বসে দিস।তোকে অনেক আগ থেকেই গ্রেফতার করতে চাচ্ছিলাম।কিন্তু কোনো সোলিড প্রুফ পাচ্ছিলাম না।তূর্য স্যার না থাকলে আজও তোর মতো নরপিশাচকে গ্রেফতার করতে পারতাম না।(পুলিশ অফিসার)
ইমরান কিছুটা বিষম খেয়ে বলে,
——-তূর্য তুই করেছিস?তোর সাথে আমার এমন কি শত্রুতা?
——-তোর সাথে আমার অনেক পুরোনা শত্রুতা।তুই ফাহিমের সাথে মিলে আমার বাবার কোম্পানির প্রোডাক্ট বাইরে অবৈধ ভাবে সেল করতি।তোকে অনেক আগে থেকেই খুজঁছিলাম।বাট প্রুফের অপেক্ষায় ছিলাম শুধু।সেই প্রুফ পেতে আমার বউ ইরা আমাকে হেল্প করেছে।(তূর্য)
——-ক কি ইরা তোর বউ?ইরা বিবাহিত ছিলো তার মানে?
ইরা এসে তূর্যের হাত ধরে,
——-বিবাহিত ছিলো না আছি।আর আপনি ঠিকি শুনেছেন আমি তূর্যের বউ।
——–এবার তুই জেলে বসে জেলের ভাত খা শালা।(ফাহিম)
——–তোরা আমার সাথে যেই খেলা খেলেছিস তা ভালো করিছনি।এর জবার তোদের দি….।(ইমরান)বলার আগেই পুলিশরা ইমরানকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।আর তূর্যকে পুলিশরা অনেক ধন্যবাদ দেয় ইমরানের মতো এতো বড় কার্লপিটকে ধরতে সাহায্য করার জন্যে।
♥
পুলিশরা যাওয়ার পর তূর্য ইরাকে গলায় নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
——-ইরা আজ তুমি ওই প্ল্যানটা না করলে হয়তো কখনই আমি ওই ইমরানটাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে পারতাম না।তুমি জানতে যে ইমরান তোমার ছবিটাও ঠিক ওই জায়গায় রাখবে যে জাগায় তার সব ইমপ্রোট্যান্ট ডুকুমেন্ট রাখতো।
ইরা কিছুটা হেসে বলে,
——-তাই জন্যে স্যার অলওয়েজ মাথা গরম না করে বউয়ের কথা মাঝেমধ্যে শুনে কাজ করলে কাজে সফলতা পাওয়া যায় বুঝচ্ছেন।
——এতো ভালো বুদ্ধি দেওয়ার জন্যে থ্যাংকস ইরু।পায়ে বেশি লেগেছে নাকি দেখি তো।(তূর্য)
——-আরে না ঠিক আছি।একটু লেগেছে।তুমি লকার থেকে ডুকমেন্টগুলো নিতে তখন আর একটু দেরি করলেই ধরা খেয়ে যেতাম।
——-তাই তো খুব তারাহুরোর মধ্যে ডুকমেন্টা নিয়ে নিয়েছি।
আমির কিছুই বুঝছে না।
ফাহিম বলা শুরু করলো,
——বাট এখন এখানেই তো বিয়ের মঞ্চও রেডি আর কাজি ও রেডি শুধু বর,বউয়ের কমতি।
তা শুনে ইরা বলে,
——- কেনো ভাই আমাদের লিজা ম্যাডাম আর আমির আছে না?
তূর্য বলে,
—–মানে কি বলছো ইরা?কিছুই বুঝছি না।
——আরে তোমার বোন তো অলরেডি কারো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে জানো না?
——কার?
——আমিরের।
লিজা তা শুনে কিছুটা অবাকে হয়ে লজ্জায় লাল হয়ে যায় আমিরেরো একই অবস্থা।
——উফফ শিট!তার মানে এই আমির আমার পিছু ছাড়লই না।শেষমেষ আমাকে তোর শালাই করে ছাড়লি।বলে হেসে দেই তূর্য।
——হ্যা।এখন থেকে তুই আমার শালা বুঝছিস।দুলাভাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি।(আমির)
তা শুনে ইরা,লিজা,ফাহিম হেসে দিলো।
আমির আর লিজার বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।তূর্য ইরার হাত ধরে দাড়িয়ে, পাশে ফাহিম,সেহেলা বেগম,আফজাল সাহেব, আমির, লিজার সবার এই মুহুর্তটাকে স্মৃতিময় করতে ক্যামরাবন্ধি করে ফেলা হলো।
#হ্যাপি_এন্ডিং
[ ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে এতোদিন পাশে থাকার জন্যে😊❤]