#ভালবাসা_তুই
#পর্ব_১
#লেখিকা_সাদিয়া_আক্তার
ভার্সিটির ক্যান্টিনের একপাশে বসে গালে আলতো করে বার বার হাত ঘষে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করেই চলছে ইরা।হাতে কিছু বরফের টুকরো নিয়ে পাশে বসে আছে চৈতী। একরাশ সমবেদনা নিয়ে চৈতী বললো,
—-দোস্ত বরফটা একটু গালে ঘষ।নয়তো একটুপর পুরো পাঁচ আঙুলের ছাপটা স্পষ্ট বুঝা যাবে।বাসাই যাবি কি করে এভাবে?
রাগে ফুসতে ফুসতে ইরা বলে উঠলো,
–চুপ কর শয়তান।তোর মতো ফ্রেন্ড থাকলে আজ গালে থাপ্পড় খাইছি,,কাল আবার হসপিটালে না চলে যাই।একটু ঠিক করে বলতে পারলি না ছেলেটার বিবরণ? আমি ইরা।পুরো নাম নাবিলা রহমান ইরা।আমার এই ইডিয়েট বেস্টুর জন্যে আজ ভার্সিটির প্রথম দিনেই গালে পাঁচ আঙুলের এক জোরদার থাপ্পড় পড়ল।এইতো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা…
ভার্সিটির প্রথমদিনের প্রথম ক্লাস শেষেই ব্যস্ত হয়ে পরলাম সবার সাথে পরিচয় হতে।এরমধ্যেই একজন মহারানীকে খুজেই যাচ্ছি। চৈতী নাম তার।কিছুদুর চোখ যেতেই দেখলাম,চৈতী কান্না করছে এক কণায় দাঁড়িয়ে। দৌড়ে গেলাম।
অবাক হয়ে বললাম,কি হলো তোর?আজ এসে কি এমন খুশিতে কান্না করছিস বলতো?
—-দোস্ত ভালো লাগছে না।বাসাই যাবো। চল(কান্না করতে করতে বলল চৈতী)
—-কি হলো চৈতী?এট লিস্ট বলবি তো?যদি না বলিছ এক পা ও যেতে দিবো না তোকে।
বাচ্ছাদের মতো জোরে কান্না করতে করতে চৈতী বললো,,
—-দোস্ত! আজ ক্লাস শেষে ভাবালাম ক্যান্টিনে যাই। কিন্তু সেখানে কিছু ছেলে আমাকে অনেক নোংরা নোংরা কথা বলেছে।তাও তাদের কথার তোয়াক্কা না করে চলে আসতেই তাদের একজন লিডার আমার পথ আটকে আমার গায়ে পানি ফেলে দেই।বলে,বাহ!তোমাকে এখন দারুণ লাগছে দেখতে।আমি ধাক্কা দিতেই সে আমার গা ও স্পর্শ করে।
—-এতো বড় সাহস হয় কি করে ওইসব ছেলেদের?রাগ আমার চঙে এখন! কি ভেবেছে এভাবে মেয়েদের ইভটিজিং করবে আর আমরা মেয়েরা তা সহ্য করেই যাবো? আজই এর আমি ফয়সালা করেই ছাড়বো।
—-দোস্ত থাক বাদ দে।চল বাসায় চল।
—-ওদের লিডার কে বল?এখুনি চল দেখাবি আমাকে।
ক্যান্টিনে চৈতী আমাকে কিছু ছেলেদের ভীড়ের মধ্যে আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বলছে,
—-ওইতো ব্লাক টি-শার্ট পরা দাঁড়িয়ে আছে।শ্যাম বর্ণের লম্বা,টোল মাখা হাসির ছেলেটা,হাতে একটা ঘড়ি আছে হুয়া…..
আর না শুনেই রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলাম ছেলেগুলা আড্ডার মাঝে।গিয়েই দেখি অনেকগুলো ছেলেই ব্লাক টি-শার্ট পরে আছে।এখন যেনো সব গোল পাকিয়ে যাচ্ছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম হাসসে একটা ছেলে।টোলও পরছে।সঙে কিছু সাঙু-পাঙু ও আছে।বুঝতে বাকি রইলো না।গিয়ে ঠাসসস করে থাপ্পড় মেরে বললাম,
—এইযে মিস্টার। হ্যাঁ আপনাকেই বলছি,বাসায় বোন না থাকলেও মা তো আছে।তাই বলছি মেয়েদের রেসপেক্ট দেওয়া শিখবেন।আপনাদের মতো ছেলেদের জন্যে মেয়েরা রাস্তায় হাটতে নিরাপদ বোধ করে না।আর এতোই নষ্টামি করার শখ থাকলে বাজারু মেয়েদের কাছে যা….ঠাসসস করে আমার গালে তিনিও পাচঁ আঙুলের ছাপ বসাতে দেরি করলেন না।
রাগে লাল হয়ে তূর্য বললো,
—হুয়াট!তোমার সাহস কি করে হয় মেয়ে আমাকে থাপ্পড় মারতে?এই চাদঁ মুখখানা তারআগে দেখেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।রাগে যেনো আগুন বেরিয়ে আসসে তর্যর।যেনো এখনি আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেললে উনার মনে শান্তি আসতো।
পিছন থেকে তূর্য ভাইয়ার ফ্রেন্ডদের মধ্যে একজন বললো,দোস্ত নতুন,ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট।
—বাহ!নতুন এসেই দেখি বড় ভাইদের সাথে বেয়াদবি (দাতে দাত চেপে বললো তূর্য)
পিছন থেকে আমাকে টান মারলো।ভয়ার্থ কন্ঠে এক দাত কেলানো হাসি দিয়ে চৈতী বলে উঠলো,
—সরি সরি তূর্য ভাইয়া!আমার ফ্রেন্ডেরই মিসটেক হয়েছে।ও আসলে ইচ্ছা করে করেনি।ভুলবশত আপনকে স…সে ছেলেটা ভেবে বসসে যে ছেলেটা আমার সাথে মিসবিহেভ করেছে।
আর এই সব কিছুর মাঝে আমি গালে হাত দিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
চৈতীর ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসি।
—দোস্ত তুই তো আমাকে বলারই সুযোগ দিলি না।একটা হুয়াইট ঘড়ি পরে আছে তা বলার আগেই তুই চলে গিয়েছিস।আর তুই থাপ্পড়টা দিলি তো দিলি এই ভার্সিটির বড়ভাইকে।তাও তূর্য ভাইয়ার মতো একজন রাগী মানুষকে।আমার কথা পুরোটা তো শুনবি!
—চুপ কর তুই।আ আ ব্যাথা করছে বড্ড গালটা।আমার গুলুমুলু গালটা(কাদো কাদো কন্ঠে বললো ইরা)।এতো জোরে তার জন্যে কেউ মারে?শয়তান একটা।।ঠাডা পরুক ওই বানোরের গায়ে।আফ্রিকার বানর একটা!
গালি গুলো দিয়েই যাচ্ছি হঠাৎই পায়ের সামনে ধপাস! করে কারো পরার শব্দ শুনে আমি আর চৈতী দুজনই হা হয়ে আছি।
চৈতীকে সম্বোধন করে তূর্য বললো,
—এই ছেলে গুলোই তোমাকে বিরক্ত করেছিলো না?
—-হ..হ্যা ভাইয়া।(কাপা স্বরে বলতে লাগলো চৈতী)
সেই বখাটে ছেলেগুলোর নীচ থেকে উঠিয়ে কলার চেপে তূর্য বললো,
—-সরি বল শালা।আর যদি দেখি আমার ক্যাম্পসের মেয়েদের সাথে বিরক্তি বা উল্টোপাল্টা কিছু করতে মেরে লাশ ঝুলিয়ে রেখে দিব।
তূর্যর আগুনে জ্বলজ্বল চেহারা দেখে ইরা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।এক ধমকের স্বরে ইরার ধ্যান ভাংতেই তূর্য বললো
–হেই গার্ল ইউ?নেক্সট টাইম না জেনে রোং মানুষের সাথে এভাবে মিসটেক করার শাস্তি তার চেয়েও ভয়ংকর হবে যা তুমি কল্পনাও করো নি।
চৈতীর দিকে তাকিয়ে আরও বললো,
—তোমার ফ্রেন্ডকে দেখে রেখো।আজকের মতো না জেনে শুনে কাজ করলে নেক্সট টাইম তার চেয়েও জোরে খাবে থাপ্পড়।আর তোমার কোনো প্রব্লেম হলে আমাকে বলবে এসে চৈতী।
বলেই চলে গেলো তূর্য।চৈতী খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
—কিরে হাসিস কেন হ্যা?
—আরেএ হাসবো না কেনো?তূর্য ভাই যেভাবে কেলিয়েছে ছেলেগুলোকে একদম উচিৎ শিক্ষে হয়েছে।
—আর আমার যে গালের ব্যাথার বারোটা বেজে গেছে।সেদিকে তোর খেয়াল আছে?তুই আসলে বেস্ট ফ্রেন্ড নামে কলংকো । চল আহাম্মক বাসায় চল।
🍁
।
আস্তে আস্তে বাসায় ডুকলো ইরা।গালটা ওড়না দিয়ে কোনোরকম ডেকে দৌড়ে রুমে ডুকে গেলো।শাওয়ার নিলো।ব্যাথার যন্ত্রনার উপশম করতেই ঘুমের সাগরে ডুব দিলো ইরা।
______________________
চলবে
[ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।জানাবেন কেমন লাগলো ☺],