#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১০
#লেখিকা_সাদিয়া_আক্তার
______________________________
গাড়ি থেকে নেমে আমির ফাহিমকে নিয়ে হসপিটালের ভিতর ঢুকলো।ট্রিটমেন্ট শুরু হলো।ফাহিমের অনেক অংশ কেটে ক্ষতবিক্ষত অবস্থা প্রায়। আমির ইরার ফ্যামিলির সবাইকে ফোন করে খবর দিয়ে দিয়েছে।ফাহিমকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে।তাই ঘুমিয়ে আছে সে।ইরার খুব টেনশন হচ্ছে। ভাইকে ছাড়া এখন কোনো চিন্তা তার মাথায় আসছে না ।ইরাকে চিন্তিত দেখে আমির যায় ইরার কাছে।
—–ইরা প্লিজ তুমি একটু শান্ত হও।তোমার ভাইয়ের কিছুই হবে না।
—–আমি এখন চাইলেও শান্ত হতে পারবো না আমির।ভাইয়ার যদি কিছু……বলেই আবার কাদঁতে লাগলো।
—–আরে বোকা কিছুই হবে না।ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে শুধু।ঠিক হয়ে যাবে।রিস্ক নেই।আমি ডক্টরের সাথে কথা বলেছি একটু আগেই।
ইরার কিছুই বলেনি আর।ভাইয়ের জন্যে খুব চিন্তিত।প্রায় পাঁচঘন্টা পর ফাহিমের জ্ঞান ফিরেছে।তা শুনে ইরা,ইরার ফ্যামিলিরা ফাহিমকে দেখার জন্যে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।ফাহিম চোখ খুলছে।ফাহিমের বাবা আফজাল রহমান ছেলের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করলো,
—–তোর এই অবস্থা কে করেছে?আমাকে বল।পুলিশকে এই বিষয়ে জানাতে হবে।
ফাহিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইরার মা বলে উঠলো,
—–সবে ছেলের জ্ঞাম ফিরলো।আর তুমি এখনি অকে চাপ দেওয়া শুরু করে দিছো?প্লিজ এখন এইসব বাদ দাও।ডক্টর ডিসচার্জ দিয়েছে বাসায় বাকি ট্রিটমেন্ট করে সুস্থ করা যাবে।আর আমিও চাই আমার ছেলে বাসায় ট্রিটমেন্ট নিক।মা এর চেয়ে ভালো সেবা তো আর কেউ দিতে পারবে না বল।আর ইরাও আছে।তো এখন চলো।
—–তা ঠিক।আচ্ছা চলো।
ফাহিমকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো।সবাই খুব ব্যস্ত ফাহিমের সেবায়।ইরাকে সেই তখন থেকে তূর্য বার বার কল করে যাচ্ছে কিন্তু ইরা কল ধরছে না।বাধ্য হয়ে আর কোনো উপায় না পেয়ে তূর্য ইরাকে এসএমএস করলো।
ইরা মেসেজের শব্দ পেয়ে তা খুলে দেখতেই—-“দেখ,ইরা কলটা একবার ধর প্লিজ।এভাবে আমাকে ভুল বুঝে অপরাধী করে দিও না”….তূর্য অপেক্ষা করছে ইরার মেসেজের রিপ্লের জন্য ।কিন্তু মেসেজ না পেয়ে হতাশা হয়ে ফোনটা পকেটে গুজে রেখে দেয়।
🍀
প্রায় তিনদিনপর,
আমির ইরাদের বাসার সোফায় বসে আছে।ফাহিমের শরীরের অবস্থার খোঁজ নিতে।ইরা ফাহিমকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে লিভিং রুমে চোখ পরতেই দেখলো আমির বসে আছে।দেখে ইরার মনে হলো আমির তার ভাইয়ের জন্যে কতো কিছু করলো কিন্তু সেদিন তার ভাইয়ের এই অবস্থায় সে আর কোনো কিছুই খেয়াল করতে পারছিলো না।তাই এখন আমিরকে দেখেই ইরার মনে হলো আমিরকে এতো কিছুর জন্যে থ্যাংকস তো অন্তত বলা উচিৎ।ইরা আমিরের কাছে যেয়ে বলে,
——কেমন আছেন আমির?
——আলহামদুলিল্লাহ।বাট আগে এইটা বলো ফাহিম ভাইয়ের এখন অবস্থা কেমন?
——হুম। এখন আল্লাহর রহমতে বেশ সেরেই উঠেছে। সরি আপনার দিকে এতো ব্যস্ততা তার উপর ভাইয়ার এই অবস্থার জন্যে খেয়ালই করতে পারি নি।আর থ্যাংকস আমাদের এতোটা হেল্প করার জন্যে।
——এখন কিন্তু একটা মাইর লাগাবো আর কখনো থ্যাংকস বললে। কিছুই করিনি তেমন তবে তোমার জন্যে সব করতে পারি আমি,, আই মিন সবসময়ে এজ এ ফ্রেন্ড পাশে পাবে আমাকে।
——অনেক বেশি থ্যাংকস। (মুচকি হেসে)
——আবার থ্যাংকস? (ভ্রু কুচকে)
——ওহ সরি।বলে দুইজনেই হেসে দিলো।
দুর থেকে আফজাল রহমান তা দেখে না চাইতেও অকৃত্রিম আনন্দ পেলেন।আমিরের কাছে গিয়ে আফজাল সাহেব বলে,
—–অনেক অনেক থ্যাংকস বাবা তোমাকে আমাদের এতো হেল্প করার জন্যে।
—–আরে আংকেল কি যে বলছেন।এইসব বলে লজ্জা দিবেন না।আমি আপনার ছেলের….
ইরা তাদের কথার মাঝে ব্যপ্তি ঘটিয়ে বলে,
—–আচ্ছা আব্বু তোমরা কথা বলো আমি চা নিয়ে আসি।
—–আচ্ছা যা।(আফজাল সাহেব)
আবার আমিরের কথার মনোযোগ দিয়ে আফজাল সাহেব বলে,
—-আরে বাবা লজ্জা কেনো দিবো!
—–আচ্ছা আংকেল আমি আসি এবার।কিছু কাজ আছে।
—–চা না খেয়েই চলে যাবা?
——জ্বি আংকেল যেতে হবে তারা আছে।ফাহিমের কেইসটা নিয়ে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে আর হ্যা ফাহিমের স্ট্যাটমেন্ট নিতে আসতে পারে কিছু পুলিশ অফিসাররা।ফাহিম যেনো সঠিকভাবে সেই ক্রিমিনালের পরিচয় দিতে পারে তা নাহলে সেই ক্রিমিনালের সাজা হবে না আংকেল।
—–হ্যা বাবা বুঝতে পারছি।ওহ নিয়ে ভেবো না আমি আছি।আমার ছেলের যে এই অবস্থা করেছে তাকে তো সাজা পেতেই হবে।
🍂
চৈতী ইরার বাসায় এসে ইরা, ইরা বলে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো। ইরা তা শুনে পাশের রুম থেকে এসে বলে,
—–কি হয়েছে হারামি!এভাবে গন্ডারের মতো ডাকসিস কেনো?
—–তুই আমার ফোন ধরিস না কেন?কতো বার কল করছি দেখসিস?আর তোর ভাইয়ের সাথে এইসব হয়ে গেছে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করিসনি।(মলিন স্বরে)
——দোস্ত তুই কিছুই জানিস না এই কয়দিন কি গেলো আমার সাথে।ভাইয়ার সাথে এমন কিছু হয়ে যাওয়া আমার চোখের সামনে সবকিছু নিয়ে আমি মানুষিকভাবে ভেঙে পরছিলাম।
—–আমাকে তোর আপন মনে হয়না তাহলে!সব কিছু খুলে বল এখন।কি হয়েছে??
ইরা সবকিছু খুলে বলে চৈতীকে।তা শুনে চৈতী জোর গলায় বলে,
—–ক কি?তূর্য ভাইয়া!ফাহিম ভাইয়াকে মেরে এই হাল করেছে?
—–হুম।কেনো করলো জানি না।বাট কাজটা ঠিক করেনি।তার জন্যে অকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।
——দোস্ত শুন,তূর্য ভাইয়া কোনো রিজন ছাড়া একটা পোকাকেও মারে না আর সে জাগায় তোর ভাইকে মারার পিছনে অবশ্যই কোনো না কোনো রিজন আছে।আই সাজেস্ট দ্যাট তোর সত্যির খোঁজ করার উচিৎ।
—–আমার জানার দরকার নেই।ওর সাথে আমার কথা বলারো ইচ্ছে নেই।
—–না দোস্ত তুই ভুল করতেছিস একবার দেখা করে ক্লিয়ার হয়ে নে প্লিজ।আমার কথাটা রাখ।
——আচ্ছা ভেবে দেখবো।(মন খারাপ হয়ে বলে)
ইরার ফোনে তূর্যের একশরো উপরে এসএমএস, দুইশরো উপরে কলস।আবার কল করে তূর্য, এতোদিন পর ইরা কলটি রিসিভ করে, ” হ্যালো ” শব্দটা তূর্যের কানে যেতেই যেনো প্রাণে প্রাণ ফিরে পেলো।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তূর্য অনেক উৎকন্ঠ কন্ঠে বলে,—-প্লিজ ইরা আর এভাবে আমাকে কষ্ট দিও না।একবার তো আমার কথাটা শুনবে।আমাকে এভাবে ভুল বুঝে দুরে ঠেলে দিও না।বাঁচা টা কঠিন হয়ে যায় যে খুব।
—–অকে।সেই ক্যাফেতে আসেন।
তা শুনে যেনো শূন্য মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ার মতো আনন্দ পেলো তূর্য।অনেক খুশি হয়েই বলল,
—–হ্যা হ্যা আমি আসছি।পাঁচ মিনিটের মধ্যে।
ইরা ক্যাফেতে ঢুকেই দেখছে সেই কখন থেকেই তূর্য ইরার জন্যে অপেক্ষা করে বসে প্রায় তিন চার কাপ কফি শেষ করে বসে আছে।ইরাকে দেখতে পেয়েই তূর্য বসা থেকে উঠে বলে,
—–কতোদিন পর তোমায় দেখতে পেলাম।চেহারাটা কেমন ভেঙে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।খাওয়া-দাওয়া করো না কেনো?(রেগে)
তূর্যের কাছ থেকে দুরে গিয়ে ইরাও ভালো ছিলো না।ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়ায় তারও রুচি ছিলো না।তূর্যের তার ভাইয়ের সাথে এমন আচরণ সবকিছুই ইরার মনকে ভেঙেছে ভিতরে।
——আপনার এইসব বেহুদা কথা আপনার কাছে রাখেন প্লিজ।যা বলতে এসেছেন তা শুনেই চলে যাবো।
——এভাবে কথা বলছো কেনো?বলে ইরার হাত ধরতে গেলেই ইরা তূর্যকে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরে বলে,
——প্লিজ এভাবে কথার মাঝে হাত ধরে বসবেন না।আর আপনার পিরিতির আলাপ বন্ধ করেন।
——অকে পিরিতি আলাপ বন্ধ করেই বলছি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। তোমাকে তাহলে পুরো ঘটনাটা খুলেই বলি।আমাদের বড় একটা কোম্পানি আছে সেইটা তো তুমি জানো। বেশ কিছুদিন যাবৎ আমাদের কোম্পানিতে অভিযোগের লিস্ট লম্বা হতে শুরু করে।ডিলাদের কল আসতে শুরু করে যে আমরা তাদের নকল নিম্নমানের প্রোডাক্ট সেল করছি।কোম্পানি লসের মুখে।আব্বু ভেঙে পরতেছিলো।তা জেনে আমি ইনভেস্টিগেশন করা শুরু করলাম।কারণ আমার আব্বুর প্রতি ট্রাস্ট আছে যে তিনি কখনো এমন কিছু করতে পারেন না।ইনভেস্টিগেশন করে যতোটুকু জানতে পেলাম আব্বুর কিছু শত্রুর সাথে তোমার ভাইও জড়িত যাদের সাথে হাত মিলিয়ে কোম্পানির আসল প্রোডাক্ট গুলো চুরি করে তা বিদেশে কোনো এক ব্যবসায়ীর কাছে এক্সপোর্ট করা হচ্ছে।তার বেপারে বেশি কিছু জানতে পারি নি।তবে এইটুকু জানতে পারছি যে সে একজন বাঙালী।তোমার ভাইয়ের কাছ থেকে ওইলোকের ইনফরমেশন জানানোর জন্যেই সেদিন এতো কাহিনী।
ইরা রেগে ফুল ফেপে উঠলো তূর্যের কথা শুনে,
—–বাহ!ভালোই তো বানিয়ে বানিয়ে কাহিনী বলে একজন নিষ্পাপ মানুষকে দোষী বানিয়ে দিতে পারেন।লজ্জা করা উচিৎ আপনার।
—–দেখো ইরা তুমি উল্টাপাল্টা বকছো।আমি তোমাকে সব সত্যি বলেছি।
—–প্রমাণ আছে?
—–প প্রমাণ আছে তবে সেইটা তোমার ভাইকে গ্রেফতার করার জন্যে যথেষ্ট না আর ওই লোকটাকেও এখনো খুঁজে পাইনি।
—–হয়েছে। বুঝেছি।আর কিছু শুনতে চাইনা।
—–ইরা দেখো যা সত্যি তাই বলেছি।আমাকে বুঝার চেষ্টা করো।তোমার ভাই সত্যি চোর এক…..
——হয়েছে চুপ!কিছু বলছি না দেখে যা তা বলবেন আমার ভাইয়ের বেপারে তা আমি মেনে নিবো না।
বলেই ইরা চলে যাই উঠে।
“ইরা, ইরা শুনো প্লিজ”—-বলে জোরে জোরে ডেকেই যাচ্ছে তূর্য।রাগে ফোনটা ছুড়ে মারে মাটিতে।সাথে সাথে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
🍂
বাসায় পৌঁছে ইরা কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়।অনেক গেস্ট এসেছে তাদের বাসায়।যেখানে আমির,আমিরের বাবা এসেছে সাথে তাদের কিছু আত্নীয়।ইরাকে দেখে সাহেলা বেগম ইরাকে রুমে নিয়ে যায়।
সাহেলা বেগম বলে,
—-ইরা তুই ফ্রেশ হয়ে আস।বাসায় আজ অনেক মেহমান।তাদের খাতির যত্ন করা লাগবে।
ইরা অবাক হলেও মায়ের কথা শুনে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
রাশেদ হোসেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফজাল সাহেবকে বলে,
—–আজ আপনাদের বাসায় এসেছি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে।
—–জ্বি বলুন না স্যার কি উদ্দেশ্য?(একটু ভয়ে পেয়ে)
—–দেখুন আমাদের ছেলে (আমির)এর কোনোদিক দিয়ে কম নেই।ওর নিজের বিজনেস আছে।আর আমিরের জন্যে বড়লোক মেয়েদের বিয়ের প্রপোজালের অভাব নেই।তবুও আমার ছেলের শুধু আপনাদের মেয়েকেই চোখে লেগে আছে।(তা বলাতে আমির কিছুটা লজ্জা পায়।)
—–মানে বুঝি নি স্যার।(আফজাল)
—–মানে এইটাই এখন থেকে আমি আপনার বেয়াইন।আপনাদের মেয়েকে আমার মেয়ে করে, আমিরের বউ করে নিয়ে যেতে চাই। যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে।
এই কথা শুনে আফজাল সাহেবের খুশির পাহাড় কে দেখে!তিনি তো মনে মনে এইটাই চেয়েছিলেন সবসময়।
সময় না নিয়েই বলে ফেললেন,
—-এতে আবার আপত্তি থাকার কি আছে?আমির বাবাকে আমারও খুব পছন্দ। জামাই হিসেবে মানতে একপায়ে রাজি আমি।
আমির তা শুনে খুশিতে লাল হয়ে যাচ্ছে রীতিমতো।
🍂
ইরা তার মায়ের কাছে জানতে পেলো ইরার আর আমিরের নাকি বিয়ের কথা চলছে।কিন্তু তার মতামত জানার আগেই আফজাল সাহেব পাকা কথা দিয়ে দিয়েছেন।তা শুনে ইরার মাথায় পাহাড় ভেঙে পরলো এমন লাগছে।না চাইতেও দুচোখ দিয়ে বৃষ্টি টুপটাপ করে বেরিয়ে যাচ্ছে।ইরা যতই তূর্যকে অবহেলা করুক কিন্তু ভালো তো শুধু তূর্যকেই বাসে।স্বামী হিসেবে শুধু তারই যে স্থান ইরার মনে।
হঠাৎ ইরার ফোনে চৈতীর কল আসে। ফোন রিসিভ করতেই চৈতী বলে,”হ্যালো ইরা কি হয়েছে জানিস?তূর্য ভাইয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।তোর ভাইকে খুন করার আক্রমণের অপরাধে”।ইরা তা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
“হ্যালো,হ্যালো ইরা শুনতে পারছিস দোস্ত, হ্যালো!” (চৈতী)
কিছুই বলতে পারছে না ইরা।কি হচ্ছে তার লাইফের সাথে এইসব।আর না কিছুই বুঝতে পারছে।
____________________
চলবে🍂