ভালোবাসা বারণ পর্ব -২৫ ও শেষ

#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ২৫/অন্তিম_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
ঈশা ফাইলটা খুলতেই দেখতে পেলো কিছু আপত্তিকর ছবি। ঈশা একটু অবাক হলো। একে একে সব গুলো পিক দেখলো সে। সব গুলোতে অয়ন আর রিদ্রিতাকে বেশ খোলামেলা দেখা যাচ্ছে। ঈশা পিক দেখা শেষ করে পরের পাতা উল্টে দেখলো একটা প্রেগনন্সি রিপোর্ট। এই রিপোর্টটা ঈশাকে বাকরুদ্ধ করে দিলো। রিপোর্ট কার্ডে পিতা হিসেবে অয়নের সাইন। ঈশার চোখ জোড়া ছলছল জলে সিক্ত। ঈশাকে উদ্দেশ্য করে রিদ্রিতা বলল

— দেখেছো ঈশা আমি কোনো মিথ্যে বলি নাই। অয়ন সত্যি আমার বাচ্চার বাবা। প্রয়োজন শেষ হয়ে যাওয়াতে ও বদলে গেছে।

ঈশা রিদ্রিতার কথা শুনে মৃদু হেসে ফেললো। ঈশার এই হাসির কারণ রিদ্রিতার কাছে অজানা। রিদ্রিতা কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। ঈশা ফাইলটা বন্ধ করতে করতে বলল

— আরে ধূর। তোমাকে আমি বলেছি পাকা প্রমান দিতে। যাতে করে অয়ন চৌধুরীর চোখের সামনে গিয়ে আমি বলতে পারি যে অন্যের চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য করার আগে নিজের চরিত্র ঠিক করতে। আরো অনেক হিসেব নিতে হবে আমায়। কিন্তু এই প্রমান গুলো অয়ন দেখলে হেসে উড়িয়ে দিবে। এগুলোর কোনো মূল্য নেই।

ঈশা কথা শেষ করতেই রিদ্রিতার হাতে ফাইল গুলো তুলে দিয়ে মুখ‌ ভেংচি কেটে চলে যেতে লাগলো। রিদ্রিতা ছলছল চোখে ঈশার পিছন দিকে দাড়িয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে

— ঈশা বিশ্বাস করো আমায়। আমি কোনো মিথ্যে বলছি না। সব সত্যি করে বলছি আমি। আমার এই অসময়ে আর কেউ না হোক তুমি আমার পাশে থাকো। প্লিজ!

ঈশা একটু থেমে দাঁড়িয়ে পরলো। এই মেয়েটা যদি সত্যি বলে থাকে তবে আমার উচিৎ ওর সাহায্য করা। আর যদি এই মেয়ে মিথ্যে বলে থাকে তো ওর অবস্থা আমি……! কিন্তু এই মেয়ের কথা গুলো আমার মন বিশ্বাস করতে চায় না‌। বার বার মনে হচ্ছে এর প্রতিটা কথা মিথ্যে। মিথ্যে দিয়ে গাঁথা অয়নের সাথে ওর প্রেমের গল্প। একটা তো উপায় আছে সত্যিটা প্রমান করার। কিন্তু সেই উপায়টা কি?

* আনমনে কথা গুলো ভাবছে ঈশা। ঈশাকে থমকে যেতে দেখে মনে মনে আনন্দিত রিদ্রিতা। রিদ্রিতা ভাবছে ঈশা হয়তো তার কথা বিশ্বাস করেছে। রিদ্রিতা ঈশার দিকে একটু এগোতেই ঈশা মুখ ঘুরিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড়ায়। ঈশা রিদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে‌ ভিশন শান্ত গলায় বলল

— আচ্ছা তোমার কথা গুলো সত্যি। আমি বিশ্বাস করলাম। আর আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। কিন্তু একটা শর্ত আছে আমার। আর আমার‌ শর্তে তোমাকে রাজি হতে হবে। তবেই আমি তোমাকে সাহায্য করবো।

ঈশার কথা গুলো রিদ্রিতার মনের মধ্যে ঝড় তুলে দিলো। এই তো সব ঠিক হয়ে যাচ্ছিলো তবে এখন‌ কেনো ঈশা আবার শর্ত জুড়ে দিলো?

— কি শর্ত?

রিদ্রিতা কৌতুহলি জ্বিগাসা করলো। ঈশা হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে জবাব দিলো

— আরে তেমন কিছু না। আমার ডি.এন.এ টেষ্টের রিপোর্ট লাগবে। যেখানে স্পষ্ট প্রমান হবে যে তোমার সন্তান অয়নের সন্তান। একটা বার প্রমান হয়ে যাক। তারপর দেখো কি কি করতে‌ পারে এই ঈশা।

— ডি.এন.এ টেষ্ট! সেটার কি প্রয়োজন? আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? একদমই না। তোমার কথা বিশ্বাস করে আমি অয়নকে আর আঘাত দিতে চাই না। তবে‌ যদি সত্যি হয় রিপোর্ট তা হলে অয়ন তার জন্য শাস্তি পাবে।

— ওকে। এই নাও তোমার ডি.এন.এ টেষ্টের রিপোর্ট। দেখো কি আছে এতে!

কথা শেষ করতেই রিদ্রিতা ফাইল থেকে ডি.এন.এ টেষ্টের রিপোর্ট টা ঈশার হাতে তুলে দিতেই ঈশা রিপোর্ট কার্ডটা ছিঁড়ে ফেলল। রিদ্রিতা ঈশার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এটা কি করলো ঈশা? ভাবাচ্ছে তাকে! রিদ্রিতার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ঈশা

— এটাতে হবে না। আমি নিজে‌ টেষ্ট করাবো।

— মানে?

— মানেটা হলো আমার সাথে এখনি তোমার হসপিটালে যেতে হবে। ডি.এন.এ টেষ্ট করাতে হবে এই বাচ্চার। রিপোর্ট বলবে বাকি কথা। রাজি তো তুমি?

রিদ্রিতা নিশ্চুপ হয়ে যায়। কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা সে। ঈশা তো টেষ্ট করালে সত্যি টা জেনে যাবে। তখন কি হবে? রিদ্রিতা একটু চুপ করে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— হুম চলো।

* মিস্টার গোমস কে কল করে ভিশন বিচলিত অয়ন। মিস্টার গোমসের থেকে ঈশার খবর জানতেই উনি অয়নকে বলল ঈশা চলে গেছে অনেক আগেই। অয়ন কথাটা শুনে বিচলিত হয়ে যায়। অয়ন ফোনটা রেখে আনমনে চিন্তা করতে লাগলো অয়ন

— ঈশাকে আবির আবার ডেকে নিলো না তো? জেদ করে ও আবার আবিরের কোনো খারাপ চালে ফেঁসে গেলো‌ না তো! ঐ আবিরের তো চরিত্রে ভালো না। জোর করে যদি ঈশার উপর! ঈশার তো এসব পছন্দ নয়। আমি কি যাবো ঈশার খোঁজে? নাকি যাবো না? ঈশা তো আমায়‌ দেখতে পেলে আবারও অপমান করবে। করুক অপমান আমি সহ্য করে নিবো। তবুও ঈশার ক্ষতি হতে দিবো না।

* অয়ন গাড়ি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। ঈশার ফোনে জিপিএস ছিলো। তাই ঈশাকে খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হয়না অয়নের। অয়ন গাড়ির জিপিএস ট্র্যাকিং অন করে গাড়ি স্টার্ট করলো। ঈশা রিদ্রিতাকে ডক্টরের চেম্বারে রেখে বাহিরে চলে আসে। রিপোর্ট রেডি করতে বেশি টাইম লাগবে না। ঈশা বাহিরে বসে অপেক্ষা করছে। কিছু সময় পর ডক্টর ঈশাকে ঠেকে পাঠায়। ঈশা মনের মধ্যে অজানা ভয় নিয়ে চেম্বারে প্রবেশ করলো। সত্যি যদি অয়ন রিদ্রিতার বাচ্চার বাবা হয় তবে এই জীবনে ২য় কাউকে বিশ্বাস করার মতো ক্ষমতা আমার হবে না। চেম্বারে ঢুকেই ঈশা দেখতে পেলো ডক্টর রিপোর্ট চেক করছে। ঈশা তার সামনে বসে কৌতুহল পূর্ণ কন্ঠে বলতে লাগলো

— ডক্টর রিপোর্ট কি পজেটিভ?

ডক্টর মৃদু কন্ঠে বলল

— জ্বি। অয়ন হলো রিদ্রিতার সন্তানের বাবা।

কথাটা ঈশার কানে পৌঁছুতেই তার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। রিদ্রিতা মনে মনে যে বড্ড খুশি হয়েছে তা তার চোখ দেখলেই বোঝা যায়। ঈশা চোখ মুছে ফেললো। রিদ্রিতা ঈশা কে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি বলে ছিলাম তোমায়। কিন্তু তুমি আমার কথা………….

— ঠাসসসসসসসস, ঠাসসসসসসস।

সম্পূর্ন কথা বলার সুযোগ ঈশা দিলো না। তার আগেই সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রিদ্রিতার গালে। রিদ্রিতা এই থাপ্পড়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। রিদ্রিতা থাপ্পড় খেয়ে একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়। ঈশা রিদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আমার চোখে জল এই রিপোর্ট দেখে আসেনি। আমার চোখে জল এসেছে এইটা দেখে যে, যেই মানুষটা তোকে একটা সময় পাগলের মতো ভালোবাসতো, বিশ্বাস করতো, আজ তুই সেই মানুষটির নামে এতো বড় মিথ্যে বলে সবার সামনে তাকে ছোট করছিস। লজ্জা করে না তোর? ইচ্ছে করছে তোকে!

* ঈশা কোনো কথা না বলে রিদ্রিতার চুল গুলো ধরে রিদ্রিতার গালে চড় বসিয়ে দিতে লাগলো। ঈশা অতিরিক্ত রাগে গজগজ করতে করতে বলছে রিদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে

— তোর একটা কথার বিনিময়ে অয়নকে অনেক আঘাত করে ফেলেছি আমি। কেনো এই‌ নোংরা খেলা খেলছিস তুই? ভেবেছিস আমি কিচ্ছু জানতে পারবো না! যা যা বলবি তাই তাই বিশ্বাস করবো? বোকা তুই। আমি জানতাম তুই কোনো চাল ঠিক চালবি তাই তোকে এখানে এনেছি। যেই ডক্টরকে তুই কিনতে চেয়েছিস। জানিস সে কে? আমার বান্ধবী। ওতো আমায় বলেই দিয়েছে সব। তোকে তো ইচ্ছে করছে মেরে ফেলি আমি।

* ঈশা রিদ্রিতাকা আঘাত করেই চললো। ঈশার বান্ধবী মিলি দৌড়ে এসে ঈশাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।

— মিলি ছাড় বলছি আমায়। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। ছেড়ে দে আমায়।

— ঈশা একটু শান্ত হয়ে যা। প্লিজ। ওকে ছেড়ে দে।

— এতো বড় পাপ করে এমনি এমনি রেহাই পেয়ে যাবে? ইমপসিবল।

ঈশা পুলিশকে কল করে। পুলিশ আসার পর ঈশা রিদ্রিতাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ রিদ্রিতাকে নিয়ে যেতেই ঈশা মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আজ তুই না থাকলে আমি কখনও সত্যিটা জানতে পারতাম না। অনেক‌ ধন্যবাদ তোকে।

— আরে ধূর। এটা আমার দায়িত্ব ছিলো। এখন বল সামনে কি করবি?

ঈশা মুচকি হেসে জবাব দিলো

— কি আর করবো? অয়নের জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে দিবো আরকি!

* অয়ন জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবহার করে এগোচ্ছে। হঠাৎ করে অয়ন দেখতে পেলো যে জিপিএস কাজ করছে না। ঈশার ফোন কোনো সিগন্যাল দিচ্ছে না। অয়ন লাস্ট লুকেসন অনুযায়ী চলতে লাগলো। শেষ সিগন্যাল এসেছে হাসপাতাল থেকে। অয়ন হাসপাতাল এর সামনে গাড়ি পার্ক করলো। গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালের ভিতরে এসে অয়ন ঈশাকে খুঁজতে লাগলো‌। অয়ন একজন নার্সকে ঈশার ছবি দেখিয়ে বলে

— আচ্ছা আপনি কি এই মেয়েকে এখানে দেখেছেন?

নার্স ভালো করে ছবিটা দেখে অয়নকে জানালো

— না।

অয়ন উত্তরটা শুনে মুখটা মলিন করে আবারও খুঁজতে লাগলো ঈশাকে। অয়ন ঈশাকে খুজচ্ছে এমন সময় অয়নের ফোনে ইফতির কল চলে আসে। অয়ন কলটা পিক করতেই

— অয়ন তুই কোথায় আছিস এখন?

— কেনো? কি হয়েছে!

— রিদ্রিতাকে পুলিশ নিয়ে গেছে। ঈশাকে আবির নামে একজন খুঁজতে এসেছে অফিসে। আবির একা না ওর সাথে অনেক গুলো ছেলেও ছিলো। একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছিলো। ওরা একটা ঠিকানা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো।

— ইফতি ভাই বল কি ছিলো সেই ঠিকা। একটু মনে করে বল প্লিজ। আমার ভয় হচ্ছে ভিশন। আরে গ্রীন প্যালেসের পরে যে একটি নাইটক্লাবে আছে না! আরে কি যেনো নাম!!

* অয়ন ফোনটা কেটে দিলো। যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছে। অয়ন গড়ি নিয়ে দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করতে লাগলো। অয়ন মনে মনে ভাবছে। আজ আবির যদি ঈশার সাথে একটুও মিস বিহ্যাব করে তো ওকে শেষ করে ফেলবো আমি। অয়ন গাড়ি নিয়ে নাইটক্লাবে পৌচ্ছতেই দেখতে পেলো কেউ নেই এখানে। মনে হচ্ছে সব কি বন্ধ। অয়ন ক্লাবে ঢুকতেই দেখতে পেলো এক জন লোক বসে আছে। অয়নকে দেখতে পেয়ে লোকটা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই কাকে চাই?

অয়ন কোনো কথা না বলে ঐ লোকটার দিকে এগিয়ে আসলো। লোকটি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অয়নকে আবারও জ্বিগাসা করলো

— কি চাই তোর?

— তোর বন্ধু আবিরকে চাই। কোথায় আছে জানোয়া*টা বল আমায়।

— মানে? তোর কি জীবনের প্রতি কোনো মায়া নেই? ভালো চাইলে কেটে পর।

অয়ন লোকটির কথা শুনে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিলো। অয়ন লোকটার শার্টের কলার চেপে ধরে থুতনির নিচের দিকে নিজের গান টা চেপে ধরলো। লোকটা ভয়ে কাবু হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো

— আবির উপরে আছে। প্লিজ আমায় কিছু করবেন না।

অয়ন লোকটিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে দৌড়ে উপরে চলে আসে। উপরে আসতেই অয়ন যা দেখতে পায়। তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। অয়ন দেখতে পায় আবির মাদকাসক্ত অবস্থায় একটা মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় রয়েছে। অয়নকে আচমকা দেখতে পেয়ে আবির বেশ সংকিত হয়ে যায়। আবির অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে

— এখানে কি চাস তুই? কি জন্য এসেছিস এখানে?

অয়ন আবিরের কোনো কথার জবাব না দিয়ে ছলছল চোখে দৌড়ে আবির কাছে গিয়ে আবিরের গলা চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— ঈশা কোথায়?

আবির অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। একি বলছে অয়ন? ঈশা কোথায় তা আমি জানবো কি‌ করে? আবির কিছু বলতে যাবে এমন সময় অয়ন আবিরের মুখের মধ্যে গানটা চেপে ধরে রাগে ফিসফিসিয়ে বললো

— যদি মিথ্যা বলিস তবে যে কি কি হতে পারে আশা করি জানা‌ আছে তোর।

আবির ভয়ে কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল আবির

— বিশ্বাস করো অয়ন আমি ঈশার সম্পর্কে কিচ্ছু জানি না। আমি ওকে খুঁজতে গিয়েছিলাম ঠিক তবে পাইনি ওকে। বিশ্বাস করো আর কোনো দিন‌ ঈশার দিকে তাকবো না। ওর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা ও করবো আমি। ক্ষমা করে দাও।

আবিরের কথা অয়নের কতটুকু বিশ্বাস হয়েছে তা‌ আবির জানে না। তবে অয়ন আর কিছু না বলে আবার ও আবিরকে আঘাত করতে লাগলো। কিছু সময় মারপিটের পর অয়ন আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ঈশার কিছু হলে তোদের সব কয়টাকে কুকুরের মতো মারবো। দোয়া কর ঈশা যেনো ঠিক থাকে।

* কথাটা বলেই অয়ন ক্লাব থেকে বেরিয়ে যায়। বুকের মধ্যে অদ্ভুত এক ব‌্যথ্যা অনুভব করছে অয়ন। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ঈশার কথা ভাবছে। কোথায় আছে? ঠিক আছে তো? ওর কোনো বিপদ হলো না তো? বার বার ঈশা কে নিয়ে নানান রকমের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অয়ন কিছু দূর যেতেই হঠাৎ করে তার ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো ফারজানা কল করেছে। অয়ন কলটা পিক করলো না। অয়ন আবারও দেখলো কল এসেছে তার ফোনে তবে এই কলটা ফারজানা না। তার বাবা করেছেন। অয়ন কলটা পিক করতেই তার বাবা ভিশন কর্কশ গলায় বলল

— কোথায় আছিস তুই? এখনি বাসায় আয়।

— বা………….

অয়নকে কিছু বলার সুযোগ দিলো‌ না তার বাবা। মুখের উপর কলটা কেটে দিলেন উনি। অয়ন কিছুটা বাধ্য হয়ে বাসার দিকে গাড়িটা ঘুরিয়ে নিলো। অয়ন গাড়িটা দ্রুত ড্রাইভ করে বাসায় চলে আসে। কি জন্য বাবা ডেকেছে তা দেখার পর আবার বেরিয়ে যাবে সে। অয়ন বাসার সামনে গাড়িটা পার্ক করে বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই দেখতে পেলো ঈশা সোফায় বসে আছে। আর সবাই গল্প করছে। ঈশাও হাসাহাসি করছে। অয়ন ঈশাকে দেখতে পেয়ে থ হয়ে যায়। পাথরের মতো দরজায় হেল দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। ঈশা হঠাৎ করে অয়নকে এমন অদ্ভূত ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়নের ছলছল চোখ জোড়া প্রকাশ করছে তার মনের মধ্যে থাকা ভয় আর ভালোবাসা। ঈশা অয়নকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়নের দিকে দু’পা এগোতেই অয়ন বেশ ঝড়ের বেগে ঈশার দিকে ছুটে এসে তাকে জরিয়ে ধরে।‌ ঈশা একটু অবাক হয়ে যায় অয়নের এমন ব্যবহারে। কি হয়েছে ওর? মনে হচ্ছে এতক্ষণ ভয় পেয়ে ছিলো ভিশন। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু গলায় বলল

— কি হয়েছে? কি জন্য ভয় পাচ্ছো তুমি?

— কোথায় ছিলে বিকেল থেকে? আমি পাগলের মতো খুঁজেছি। বুঝবে না এসব। জানো তো অপমান করতে। আবির আসলে যে কি?……

— চুপ করো। ঐ আবির যেমনি হোক আমার সমস্যা কি? আমার সমস্যা তো তোমাকে নিয়ে। তুমি ঠিক থাকলেই চলবে।

ঈশা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে অয়নকে। অয়ন ঈশার হাত জোড়া আলতো করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল

— আপনাকে ভালোবাসা বারণ।

— ঐ কেনো?

— আপনি আমায় অনেক কষ্ট দিয়েছেন এটাই তার কারণ।

— উফফফরে আর আপনি তো আমায় অনেক সুখ দিয়েছেন তাই না?

— হুম। তবে যাই বলুন না কেনো আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।

— তাই। আপনার করা লাগবে না। অনেকেই আছে লাইনে। পাত্তা‌‌ দিচ্ছি না।

— কিহহহ, বিয়ে তো আমি তোমায়ই করবো। আর সব কিছুর সোধ তুলবো।

— ইমমম

* ঈশা আর অয়ন একসাথে বাড়ির ভিতর চলে আসে। ঈশা আর অয়নের খুশিতেই তাদের বিয়ে ঠিক করা হলো। আসলে ভালোবাসায় পূর্ণতা চায়‌। আর এই ভালোবাসা তো পূর্ণতা পাওয়ারি ছিলো। রিদ্রিতা জেল থেকে বেরিয়ে যায় ঠিক তবে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নিঋ আবিরের ও তেমন কোনো খোঁজ অয়ন বা ঈশা রাখেনি। আসলে রাখার কোনো প্রয়োজন পরেনি। ভূল বোঝাবুঝির সৃষ্টি তখনই হয় যখন মানুষ নিজের জায়গা থেকে অন্যকে বিচার করে। অয়ন অতিতের কথা ভূলে নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিলো। অতঃপর আর কি বিয়ের পরের ভালোবাসা, রাগ, ঝগড়া আর ভালোবাসার খুনসুটি করেই সুখে দিন কাটতে লাগলো অয়ন আর ঈশা।

* আপনারা সবাই অয়ন আর ঈশার জন্য দোয়া করবেন। নিজেরা ভালো থাকবেন আর ভালো রাখবেন আপনার প্রিয়‌জনদের। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা পাশে ছিলেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ 😊❣️

————————- সমাপ্ত———————–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here