#ভালোবাসা ভালোবাসা
#পর্ব – ০৪
#লেখিকা > জান্নাতুল ইসলাম মাওয়া
মিসেস সাহেয়া জবাব দিলেন না।কান্না করেই যাচ্ছেন। অধরা অয়ন কে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে?অয়ন আঙুল দিয়ে অধরা কে চুপ থাকতে বললো।অয়ন মায়ের চোখের পানি মুছে দিলো।অধরা এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো।অধরা গ্লাসে করে পানি এনে দিলো।অয়ন মা কে সোফায় বসিয়ে পানি খাওয়ার জন্য দিলো।পানি খেয়ে কান্না করে যাচ্ছে।
-আম্মু শান্ত হও।আমার কথা শুনো আগে তারপর কান্না করো।জন্মালে মরতে হবে এইটা চরম সত্য।এই পৃথিবীতে কেউ কারো না।সবাই একদিন চলে যাবে সব মায়া ত্যাগ করে। বাবা,মা, ভাই, বোন,আত্মীয়স্বজন কেউ থাকবে না।তুমি অসুস্থ এভাবে কান্না করলে আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।আম্মু এভাবে কান্না করো না।
-তুই কিভাবে করলি আমার সাথে এমন?জবাব দে আমাকে একটা বার বললি না।আমি চলে যাবো, এখনি যাবো তোরা কেউ না গেলে না যাবি।আমি একাই চলে যাবো।
-আমাকে ফাহাদ সকালে কল দিয়ে বলেছিলো নানু অসুস্থ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।ভেবেছিলাম সুস্থ হয়ে যাবে।তুমি অসুস্থ তাই খবরটা তোমাকে দেই নি।তবে যাওয়া সময় বাবা কে বলে গেছিলাম। বাবাও নিষেধ করেছিলো তোমাকে জানাতে।
-চমৎকার আমার মা অসুস্থ।মারা যাওয়ার পর আমাকে খবর দেওয়া হয়েছে।অথচ বাপ ছেলে সবটা জানে।
-তুমি শান্ত হও আম্মু।এভাবে কান্না করলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
অভ্র সাহেব পাশে এসে বসলেন।হাতে হাত রেখে বললো।একটু শান্ত হও তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে ঝামেলা বাড়বে কমবে না।বুঝার চেষ্টা করো।মিসেস সাহেয়া হঠাৎ করেই অধরার দিকে এগিয়ে গেলেন।অধরা এগিয়ে বললো, মা একটু শান্ত হও এভাবে কান্না করলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
-তোমার জন্য আমার মা মরছে।
কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়।অধরা কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।অয়নও বোকার মতো তাকিয়ে আছে।
-তুমি অলক্ষী আসতে না আসতে আমার মা কে খেয়ে ফেলেছো।
অধরা কান্না করে দেয়। নিমিষেই চোখ ভিজে যায় অধরার।অয়ন ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিলো।আম্মুর কথায় কিছু মনে করো না।আম্মুর এখন মাথা ঠিক নেই।
-তুমি কাল সকালেই আমার বাসা থেকে চলে যাবে।আমি দেখতে চাই না তোমার চেহারা।
অধরা রুমে চলে যায় দরজা বন্ধ করে কান্না করে।অয়ন পেছন পেছন চলে আসে।দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখলো ভেতর থেকে বন্ধ। অয়ন উচ্চস্বরে বললো, আজকে রাতে কি আমি বাহিরে থাকবো?অনেক ক্লান্ত লাগছে মহারানী আপনার মনে যদি দয়া মায়া হয়ে থাকে। আমাকে একটু জায়গা দিবেন রুমে। অধরা কিছুই বললো না চুপচাপ বসে আছে।ইচ্ছে করছে সব ভেঙে গুড়িয়ে দেই।অধরা দরজা খুলে দিলো।অয়ন ভেতরে ঢুকে দেখলো অধরার চোখ ভিজে আছে।ইচ্ছে করছে চোখের পানি মুছে দেওয়ার অজুহাতে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে।অধরা দরজা খুলে দিয়ে বাহিরে চলে যাচ্ছে।
-যাচ্ছো কোথায়?
-মায়ের কাছে।
-আম্মু কে বাবা সামলে নিয়েছে কান্নাও থেকে গেছে।বাবা ঘুম পাড়িয়ে দিবে চিন্তা করো না।
-ও আচ্ছা। তাহলে একটিবার দূর থেকে দেখে আসি।
-রুমের দরজা বন্ধ অধরা দেখবে কিভাবে। তুমি রাতে খাবে না?
-ইচ্ছে করছে না।
-ঘুমাবে?
-হুম।
-মায়ের কথায় মন খারাপ? মা এমনই কষ্টে থাকলে কখন কাকে কি বলে নিজেও জানে না।আজকে তোমাকে বলেছে। এমন আমাকে বাবা কে ও বলে।তুমি নতুন তাই হয়তো কষ্ট পেয়েছো। আমরা মায়ের রাগ,অভিমান সব কিছু জানি। তুমিও আস্তে আস্তে জেনে যাবে।
-কফি খাবেন?
-হ্যাঁ খেতে পারি।তবে আমি বানাবো। যদি আপনি আমার হাতে এক কফি খেতে চান তাহলে।
-সমস্যা নাই।
অয়ন কফি বানাতে রান্না ঘরের দিকে যায়।কফি বানিয়ে অধরার হাতে মগ দিয়ে বললো, ছাঁদে যাবেন?
-এতো রাতে ছাঁদে কেনো যাবো?
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
-কি কথা এখানেই বলেন।
-ছাঁদে চলো আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে।
-ইচ্ছে করছে না।
-মন ভালো হয়ে যাবে।
অধরা অয়নের কথা রাখতে অয়নের সাথে ছাঁদে গেলো।আকাশ ভর্তি তারা মনে হচ্ছে একঝাঁক সাদা ফুলের মেলা।চাঁদ অপূর্ব আলো দিচ্ছে। সত্যি এক নিমিষেই অধরার মন খারাপ উধাও হয়ে গেছে।বাসার পাশে বড় আম গাছে জোরে শব্দ হলো।শব্দ শুনে অধরা ভয় পেয়ে যায়।অয়ন চুমুক দিয়ে বললো, ভয় পেয়েছো?অধরা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,আমি ভয় পাবো কেনো?ভয় পাই নি।
-সত্যি।
-মিথ্যে হতে যাবে কেনো।
-তোমার চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে। তুমি ভয় পেয়েছো।
-দেখুন আমি ভয় পাই না।
-সাহসী মেয়ে তুমি। তাহলে তোমাকে একটা গল্প শুনাই?
-কিসের গল্প?
-ভূতের।
-দেখুন আমার গল্প শুনার কোনো ইচ্ছে নেই।
-ইচ্ছে নেই কেনো?একটু বলি শুনো।
অধরা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো। বলেন।শুনার আগেই কেমন ভয় করছে গলা শুকিয়ে আসছে তার।
-সত্যি বলছো?
-হ্যাঁ।
-ভয় পাবে না?
-ভয় পাওয়া কিছু নেই।
অয়ন অধরার দিকে তাকায়।চাঁদের আলোয় অধরার চোখ গুলো চিকচিক করছে। চারপাশ নিশ্চুপ হয়ে আছে।পুরো শহর ঘুমিয়ে আছে।শান্ত পরিবেশ রাত জাগা পাখি গুলো আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে।অয়ন অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,শুনো।
-চারপাশে অন্ধকার কোথাও কোনো কেউ নেই।হাতে হারিকেন নিয়ে হাঁটছে মাঝ রাতে।
-আলো নেই কেনো?এখন তো রাস্তায় ও আলো থাকে।
-গ্রামের বাড়ির কথা বলছি।
-তারপর।
-গ্রামের রাস্তায় একা হেঁটে যাচ্ছে একটি ছেলে।ছেলেটি হঠাৎ বুঝতে পারলো।তার পেছনে কেউ আসছে।ছেলেটি পেছনে ঘুরে তাকায়।প্রচন্ড বাতাস হচ্ছে বাতাসে হারিকেন নিভে যায়।
অধরার গলা শুকিয়ে আসছে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বারবার। অয়নের আরো একটু কাছে এসে দাঁড়ায় অধরা।শুকনো কন্ঠে বললো, তারপর কী হয়েছে?
-তারপর ছেলেটি ভয় পেয়ে যায়।ছেলেটি দেখলো অনেক লম্বা একটা লোক সাদা কাপড় জড়িয়ে এগিয়ে আসছে।ছেলেটি চিৎকার করে কিন্তু কেউ শুনতে পায় নি।ছেলেটি যে পথে হাঁটছিলো। সেই পথে সন্ধ্যের পর কেউ হাঁটে না।
অধরা অয়ন কে ঝাপটে ধরে। চুপ করেন আমার ভয় করছে।অয়নের বুকে নিজের অজান্তেই মাথা রেখে আছে অধরা।ইচ্ছে করছে অয়নের বুকের ভিতর গিয়ে লুকিয়ে যেতে।ভূত সেইখান থেকে অধরা কে ধরে নিয়ে যেতে পারবে না।অয়ন থমকে দাঁড়ায় নিশ্চুপ নিরবতা তাকে ঘিরে ধরে।কি অদ্ভুত অনূভুতি অধরার ছোঁয়ার পুরো শরীর শীতল হয়ে গেছে। ভালোবাসার মানুষের কি অদ্ভুত কোনো শক্তি আছে?আমার জানা নেই।কারণ আমাকে কোনো দিন কেউ ছুঁয়ে দেখে নি।কাউকে ভালোবাসি নি অধরা কে ছাড়া।অয়নের ইচ্ছে করছে একটি বার অয়ন ও অধরা কে জড়িয়ে ধরতে। অয়ন জড়িয়ে ধরলো না।কারণ তার সেই অধিকার নেই।
-আপনি জানেন এখানে ভূত আছে।ভূতের কথা কেউ বললেই ভূত চলে আসে।আমি নিশ্চিত আমার আশেপাশে ভূত আছে।রুমে চলেন প্লিজ।
-এখানে কোনো ভূত নেই।তোমার শুধু শুধু ভয় হচ্ছে।
-আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে দেখছে।
-হুম তোমাকে সবাই দেখছে।আকাশের মিষ্টি চাঁদ,পাখি,ফুল,তারা,গাছ আর আমি। সবাই তোমাকে দেখছে আর হাসছে।
-হাসছে কেনো?
-অধরা ভয় পাচ্ছে তাই হাসছে।
অধরা অয়ন কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বললো,সরি।আসলে ভয়ে আপনাকে কখন জড়িয়ে ধরছি বুঝতে পারিনি।অধরা সোজা হাঁটতে শুরু করে কিছুটা দূর গিয়ে দাঁড়িয়ে যাই।
অয়ন মুচকি হাসছে,কি দরকার ছিলো।আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেওয়ার। ভালো ছিলো মুহূর্ত গুলো স্মৃতির খাতায় তুলে রাখবো।তুমি তো থাকবে না অন্য কাউকে ভালোবাসো।অধরা তুমি কি আমার হয়ে থাকতে পারতে না।আমি কি এতোটা খারাপ। জানি না কেনো আমার সাথে এমন হলো।ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়েও হারিয়ে গেলো।ভাগ্যে এটাই লেখা ছিলো।তার মনের গহীনে অন্য কারো বসবাস। ভাবনা জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে অন্য কেউ।
অধরা অয়নের পাশে এসে দাঁড়ায়। অয়ন কপাল কুঁচকে তাকায়,ফিরে আসলে কেনো?
-আমি একা যাবো কেনো?আমি একা আসিনি আপনার সাথে এসেছি।আপনার সাথেই যাবো।
-ও আচ্ছা।তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
-করেন।
-তোমার বয়ফ্রেন্ড কী করে? তোমার ভালোবাসার মানুষটির নাম কী?
অয়নের প্রশ্নে অধরা অবাক হলো না।অধরা জানতো এই প্রশ্নগুলো অয়ন করবে।
-আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।তবে আমি একজন কে ভালোবাসি। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
-ওয়ান সাইট লাভ?
-না।তবে রিলেশন হয় নি।কখনো কেউ কাউকে বলে নি ভালোবাসার কথা।তবে দুজন দুজন কে প্রচন্ড ভালোবাসে।
-অদ্ভুত।
-আপনার প্রেমিকা কেমন আছে?
অয়ন শব্দ করে হেসে দেয়।জিবনে প্রেম করিনি।কোনো মেয়ের দিকেও তেমন তাকাই নি।তবে একটা মেয়ের উপর আমার চোখ আটকে যায়।মেয়েটা কে দেখা মাত্রই থমকে যায় আমার মনে শহর। রোজ মেয়েটা কে একটি বার হলেও দেখার জন্য অপেক্ষা করেছি।
-কখনো বলেন নি ভালোবাসেন?
-বলার মতো সুযোগ পাই নি।যখন ভেবেছি বলবো তখন জানতে পারি সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
-তারপর।
-তারপর আর কি নিজের রাস্তায় নিজে একা হাঁটতে শুরু করি।
-মিস করেন না তাকে।
-প্রচন্ড মিস করি।
-আপনি একটা বার বলে দেখতে পারতেন। হয়তো মেয়েটিও আপনাকে ভালোবাসে।
-না। সে আমাকে ভালোবাসে নি।চলো রুমে চলে যাই।অনেক রাত হয়েছে। অধরা আগে হাঁটতে শুরু করে। অয়ন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করে।
চলবে..
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।