ভালোবাসা রং বদলায় পর্ব -২৬ ও শেষ

#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক —- #মাহমুদ
শেষ — পার্ট
*
আচ্ছা আচ্ছা রাগ করিনি। এবার থামো, আর উঠবস করতে হবে না।”
শরৎ এবার থেমে গেল। বললো,
-“সত্যি তো?”
-“হু…. এবার চলো, আংকেল-আন্টি অপেক্ষা করছেন।”
শরৎ নিলুর গাল টেনে দিয়ে বললো,
-“আমার সুইট সো*না।”

চারিপাশ নি*র্জন। আশেপাশে কোনো ঘরবাড়ি নেই। জায়গাটা জ*ঙ্গল প্রকৃতি বলা চলে। নিলু আশেপাশে ঘুরেফিরে সবকিছু দেখছে। কিছুপথ এগিয়েই দেখতে পেল একটা পুরোনো আমলের বাড়ি। বাড়িটা বেশ ভু*তুড়ে টাইপের। নিলু বললো,
-“এখানে তুমি থাকো?”
-“হুম।”
-“এমন অন্ধকার বাড়িতে থাকতে তোমার ভয় করে না?”
-“উহু… ভয় কিসের? বাইরের দিক দিয়ে ভয়া*নক হলেও ভিতরের দিকটা খুবই সুন্দর। চলো, গেলেই বুঝতে পারবে।”
নিলুর কেন জানি ভিতরে ঢুকতে মন সাই দিচ্ছিলো না। তবুও বাধ্য হয়ে যেতে হলো তাকে। ভেতরে ঢুকেই দেখতে পেল ঘরের ভেতরটা সত্যিই সুন্দর। জিনিসপত্র গোজগাজ করে সাজানো। জায়গার জিনিস জায়গায় রাখা আছে। বাড়িটা তত একটা বড় না অবশ্য। দুই রুম বিশিষ্ট বাড়ি। নিলু বললো,
-“আংকেল-আন্টিরা কোথায়? উনাদেরকে তো দেখছি না।”
শরৎ গম্ভীর সুরে বললো,
-“না থাকলে দেখবে কিভাবে?”
-“মানে?”
-“মানেটা খুব সিম্পল। মাবাবা ঢাকায় এসেছে এসব মিথ্যা ছিলো।”
-“মানে! তুমি আমাকে মিথ্যা বলে ডেকে এনেছো এখানে?”
-“হু…..”
-“কেন?”
শরৎ নিলুর চুলগুলো পিছনে সরিয়ে দিয়ে বললো,
-“তোমাকে আদ*র করবো বলে।”
নিলু এক ঝট*কায় শরৎকে ধাক্কা মা*রলো। বললো,
-“মানে? কিসব বলছো তুমি?”
-“বুঝতে পারোনি এখনো? বুঝিয়ে বলি তাহলে?”
বলতে বলতেই নিলুর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো শরৎ। নিলু পিছন দিকে সরে যেতে যেতে বললো,
-“ছিঃ! আমার ভাবতেও ঘৃ*ণা হচ্ছে যে আমি তোমার মতো একটা বি*শ্বাস ঘা*তককে বিশ্বাস করেছিলাম। তুমি এতোটা নি*চে নামতে পারো আমি ভাবতেও পারিনি। ভাবি ঠিকই বলেছিলো। আজকালকের ছেলেদের যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করা উচিত না। সেদিন যদি ভাবির কথাটা শুনতাম তাহলে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না। তবে একদিক দিয়ে ভালোই হলো। তোমার ভালো মানু*ষির আড়ালে যে কত বড় ছল*নাময়ী মু*খোশ পড়া আছে সেটা আজ না আসলে জানতে পারতাম না। শোনো শরৎ….. তোমার নামটাও উচ্চারণ করতে আমার ঘৃ*ণা লাগছে।”
একটু থেমে ধমকের সুরে বললো,
-“সামনের দিকে এগুবে না বলে দিলাম। নাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।”
-“কি করবে শুনি?”
নিলু পিছন দিকে সরতে সরতে একদম দেয়ালের সাথে ঠেকে গেল। এদিকে শরৎ তার অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। শরৎ তার একহাত দেয়ালে রাখলো। আর অন্যহাত দিয়ে নিলুর মুখ*জুড়ে স্লা*ইড করতে লাগলো। এক মুহূর্তে নিলু ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। শরৎ একটানে নিলুর ওড়*না টেনে নিচে ফেলে দিলো। এরপর নিলুর পিছন থেকে চুল মু*ঠো করে ধরে নিজের সাথে মি*শিয়ে নিলো সে। নিলু তার হাত থেকে বাঁ*চবার জন্য শতবার চেষ্টা করলেও বরাবরের মতো ব্যর্থ হয়ে গেল। শরৎ তাচ্ছিল্য হেঁসে বললো,
-“হেই সুইট ডা*লিং, কাম অন। এতটা বিচলিত হলে হবে নাকি? আমিই তো, তোমার ভালোবাসার মানুষ। লেটস ই*ঞ্জয় বেবি।”
নিলু রা*গান্বিত ক*ন্ঠে বললো,
-“ভালোবাসার মানুষ, মাই ফুট। তোর মতো জা*নোয়ারকে আমি ভালোবাসবো ভাবলি কিভাবে? মু*খোশ পরিহিতা বিশ্বা*স ঘা*তক একটা। দাড়া তুই! আমি ভাইয়াকে এক্ষুণি ফোন দিয়ে সবকিছু জানিয়ে দিচ্ছি। তারপর দেখবি ভাইয়া তোর কী হাল করে।”
বলেই নিলু শরৎকে ধা*ক্কা দিয়ে ধ্রুবর নাম্বারে কল দিতে যাচ্ছিলো। তখনি ছোঁ মেরে নিলুর হাতে থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিলো শরৎ। ফোনটা ফ্লোরে ছু*ড়ে ফেলে দিতেই টুকরোটুকরো হয়ে গেল। শরৎ এবার নিলুকে কো*লে তুলে বিছানায় ফেলে দিলো। নিলু ব্যা*থা পেয়ে “ও মাগো” বলে চেঁ*চিয়ে উঠলো। শরৎ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিলুর উপর ঝাঁ*পিয়ে পড়ছিলো, তখনি কেউ একজন তার মাথায় জোরেশোরে আ*ঘাত করতেই শরৎ মেঝেতে দড়াম দিয়ে পড়ে গেল। তখনও নিলু থরথর করে কাঁ*পছিলো। ভাবছিলো এই বুঝি জা*নোয়ারটার হাতে স্বী&কার হবে সে। কিন্তু যখনি মুখ তুলে চেনাপরিচিত মানুষটির মুখ দেখতে পেল তখনি ঝা*পিয়ে পড়লো তার বুকে। কাঁন্না*মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
-“ভাবি! তুমি না আসলে ও আমাকে….”
-“শান্ত হও নিলু। আমি এসে গেছি। কোনো ভ*য় নেই তোমার।”
নিলু ফুঁ*পিয়ে কেঁ*দে উঠলো। রূপা মেঝে থেকে ও*ড়না তুলে নিলুকে পরিয়ে দিলো। এরপর তাকে শান্ত করে শরৎ কাছে গিয়ে বললো,
-“সৈকত… সরি শরৎ… আচ্ছা কী নামে ডাকি আপনাকে বলেন তো?”
সে কিছু বললো না। রূপা বললো,
-“চুপ করে আছেন কেন? আপনাকে শরৎ বলে ডাকবো নাকি সৈকত?”
নিলু অবাক হলো। বললো,
-“ভাবি, ওকে তুমি চেনো? আর ওর নাম তো শরৎ সৈকত কেন বলছো?”
-“হু…. খুব ভালো করেই চিনি ওকে। আর ওর আসল নাম তানভীর হাসান সৈকত। ছ*ন্দবেশে সে তোমার জীবন ন*ষ্ট করতে চেয়েছিলো। এটা শুধু তোমার সাথে নয় অনেকগুলো মেয়ের সাথে প্রেম করে রুম ডে*ট করেছে। তুমি বোধয় ওর প্রস্তাবে রাজী হওনি। এজন্য ও তোমাকে মিথ্যা বলে এখানে ডেকে এনেছে।”

হ্যা ভাবি। ও আমাকে প্রথমে ব্লা*ক মেইল করেছিলো। আমি না আসলে নাকি ওর ম*রামুখ দেখবো। এসব বলে আমাকে রাস্তা পর্যন্ত ডেকে আনলো। পরে বললো আংকেল-আন্টি নাকি ঢাকাতে এসেছে। তাদের সাথে আমাকে দেখা করানোর জন্য মিথ্যা কথা বলেছিলো। এই বলে আমাকে এখানে ডেকে আনলো। কিন্তু পরে যখন ঘরে ঢুকলাম তখনি জানতে পারলাম ও মিথ্যা বলে এখানে ডেকে এনেছে।”
-“কী বলছো নিলু? ওর তো বাবামা সেই ছোট থাকতেই মা*রা গেছে।”
সৈকত সবকিছু চুপচাপ শুনছে। মাথার ব্যা*থায় উঠতে পারছে না। নিলু অবাক হয়ে বললো
-“মানে? এটা কিভাবে সম্ভব?”
-“পাঁচ বছর আগে রোড এ*ক্সি*ডেন্টে দুজনই মা*রা যান।”
নিলু নিজের মাথায় হাত দিলো। বললো,
-“তার মানে ও মিথ্যা বলে আমার থেকে টাকা নিয়েছিলো?”
-“মানে?”
-“ভাবি ও কী করেছে জানো? আংকেল-আন্টির অ*সুস্থতার নাম করে আমার থেকে এক-দুইলাখ করে টাকা নিয়েছে। ওর জন্য আমার বাবার রেখে যাওয়া গয়না গুলোও বিক্রি করতে হয়েছিলো। কিন্তু ভাবি তুমি এসব কিভাবে জানলে?”
-“সে অনেক কথা। পরে বলছি। আগে এই ব্যাটাকে সা*য়েস্তা করতে হবে।”
-“আমরা একা মানুষ কিভাবে কী করবো? তুমি পু*লিশের কাছে ফোন দাও।”
-“কিন্তু পুলিশের না*ম্বারটা তো আমার কাছে নেই।”
-“এবার?”
সৈকত আস্তে আস্তে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো। রূপার উদ্দেশ্য বললো,
-“আবারও সেই একই ভুল করলে তুমি। সেদিন তো বেশ জোরেই আ*ঘাত করেছিলো। কিন্তু আজ…..”
বলেই ঘর কাঁ*পিয়ে হেঁ*সে দিলো সৈকত। বললো,
-“আজ কিন্তু তোমাদের দুজনকেই আমার হাত থেকে কেউ বাঁ*চাতে পারবে না। কেউ নাহ্।”
একথা শুনে নিলু ভয়ে রূপাকে জড়িয়ে ধরলো। শরৎ বললো,
-“আহা! আজ একজনকে নয় দুই দুইজনকে ভো*গ করবো।”
বলেই তাচ্ছিল্য হাঁসলো সৈকত। এরপর রূপার পে*টের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“উঁহু…. আগে শুভ কাজটা সেরে ফেলতে হবে।”
রূপা তার কথার ইঙ্গিতে বুঝতে পারলো যে সে কী করতে চলেছে। রূপা গর্জে উঠলো। বললো,
-“খবরদার আমার সন্তানের দিকে চোখ চোখ তুলে তাকাবি না বলে দিলাম। নাহলে কিন্তু খা*রাপ হয়ে যাবে।”
-“সরি বেবি। তুমি শুধু আমার। তোমার মাঝে ধ্রুবর কোনো অ*স্তিত্ব রাখতে দেবো না আমি। এই বাচ্চাকে দু*নিয়াতে আসার আগেই শে*ষ করে ফেলবো। স্বি*কারী হয়ে আমাকে ধরা দিয়েছো। তোমাকে পাবার জন্য আমি কতদিন ধরে অপেক্ষা করেছি তার কোনো আইডিয়া আছে তোমার?”
রূপা চুপ। সৈকত বললো,

ধ্রুব শা*লা, তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে। দ্বীপের মতো ভেবেছিলাম এই ব্যাটারেও পর*কালে পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু কোনোভাবেই ওকে মা*রতে পারলাম না। বরাবরই কোনো না কোনোভাবে বেঁ*চে গিয়েছে। তাই ভাবলাম স্বি*কারী হিসাবে নিলুকেই ব্যবহার করবো। ওর জীবন ন*ষ্ট করবো যাতে ধ্রুবর মান-স*ম্মান ন*ষ্ট হয়ে যায়।”
নিলু-রূপা দুজনই হতভম্ব। সৈকত তাচ্ছিল্য হেঁসে বললো,
-“কেউ ভাই হারালো আর কেউ ভালোবাসা।”
বলেই আবারও হেঁসে দিলো। রূপা কোনোভাবে ওর কথাটা ধরতে পারলো না। কিন্তু নিলুর বুঝতে অসুবিধা হলো না। সৈকতের মুখ থেকে দ্বীপের কথাগুলো শুনে রূপা তার কলার ধরে রা*গান্বিত ক*ন্ঠে বললো,
-“কী করেছিস তুই দ্বীপকে?”
-“খা*ল্লাশ।”
বলেই বাকা ঠোঁটে হাঁসলো। রূপা তার গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে সৈকতের গালে চড় মারলো। বললো,
-“কেন মে*রে ফেললি তাকে? কী দোষ করেছিলো সে? কী দোষ করেছিলো?”
বলতে বলতেই কেঁদে দিলো রূপা। সৈকত বললো,
-“ও তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিলো। এজন্য আমি….”
কথাটা শে*ষ করার আগে নিলু তার গালে কষে তিন-চারটা চড় মা*রলো। বললো,
-“আমার ভাই কী দোষ করেছিলো? বল কী দোষ করেছিলো? তাকে কেন মা*রলি তুই? কেন মা*রলি?”
রূপা অবাক হয়ে নিলুর দিকে তাকলো। সবকিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সৈকত রূপাকে নিলুর দিকে প্রশ্ন*সূচক দৃষ্টিতে তাকাতে থাকতে দেখে ফিক করে হেঁসে দিলো। বললো,
-“প্রেম করলে দ্বীপের সাথে আর বিয়ে করলে তার বড় ভাই ধ্রুবর সাথে। হা হা হা! তোমার তো দেখি মা*লের কোনো অভাব নেই। একটা গেলে আরেকটা আসে।”
বলেই তাচ্ছিল্য হাঁসলো। রূপা একথা শু*নে আকাশ ভেঙে পড়লো যেনো। তার মানে দ্বীপ ধ্রুবর ছোট ভাই? সৈকত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ওহ গড! অনেক সময় ন*ষ্ট করেছি। এবার শুভ কাজটা সেরে ফেলি কী বলো?”
রূপা তে*ড়ে উঠলো। বললো,
-“খ*বরদার সামনে এগুবি না বলে দিলাম।”
সৈকত মেঝে থেকে লা*ঠিটা তুলে নিলো। সামনের দিকে এগুতে লাগলো। রূপা বললো,
-“কী বলেছি শুনতে পাসনি?”
সৈকত সেকথার জবাব না দিয়ে রূপার ঠিক কাছাকাছি চলে এল। রূপা কী করবে বুঝতে পারছে না। নিলুও বেশ আ*তংকে আছে। রূপা মনে প্রাণে আল্লাহ্’কে স্মরণ করতে লাগলো। সৈকত তার পে*ট বরাবর লা*ঠিটা উঁচু করতেই পিছন থেকে কেউ একজন ধরে ফেললো। সৈকত বিরক্ত হয়ে বললো,
-“লা*ঠিটা কে ধরলো রে? কার এতো সাহস হলো?”
-“আমি!”
পিছন ঘুরে তাকিয়ে ধ্রুবকে দেখতে পেল সে। ধ্রুবকে দেখতে পেয়ে নিলু-রূপার জানে আত্মা ফিরে এলো। সৈকত ভ*য়ে ঢোক গিললো। বললো,
-“দোস্ত, তুই? এখানে?”
-“এটা আমারও প্রশ্ন। তুই এখানে কেন?”
-“আসলে……”
কথাটা শেষ করতে না দিয়ে ধ্রুব তার নাগ বরাবর ঘু*ষি মা*রলো। সৈকত ছি*টকে মেঝেতে পড়ে গেল। ধ্রুব তার কলার ধরে দাঁড় করালো। এরপর এলো*পাথাড়ি মা*রতে লাগলো। ফ্লোর লা*ঠি তুলে পিঠে এলোপাথাড়ি মা*রতে লাগলো। বললো,
-“বিশ্বা*স ঘা*তক! আমার বন্ধু সেজে আমার পিঠেই ছু*রি মা*রা না? দাঁড়া তোর ছু*রি ছুটা*চ্ছি।”

ধ্রুব কথাগুলো বলছিলো আর সৈকতকে নিজের সর্বশ*ক্তি দিয়ে মা*রছিলো। রূপা তাকে বাঁধা দিয়ে বললো,
-“এবার ওকে ছেড়ে দেন। ও ম*রে যাবে তো।”
-“ম*রুক। ও আমার বাবা ও ছোট ভাইকে খু*ন করেছে। ওকে তো আমি বাঁ*চতেই দেবো না। একদম মে*রে ফেলবো।”
তৎখানিক পু*লিশও চলে এলো। ধ্রুবকে এক প্রকার জো*রপূর্বক সরিয়ে আনলো সৈকতের থেকে। ধ্রুব গ*র্জে উঠলো। বললো,
-“ছাড়েন আমাকে। আমি ওকে আজ মে*রেই ফেলবো। ও আমার বাবা-ভাইকে খু*ন করেছে। আমার স্ত্রী-বোনকে রে*প করতে চেয়েছে। আমি ওকে কোনোক্রমে বাঁ*চতে দেবো না। কোনোক্রমেই না।”
পুলিশ অফিসার ধ্রুবকে শান্ত হতে বললো। আর সৈকতের উদ্দেশ্য বললো,
-“ওকে আমাদের হাতে ছেড়ে দেন। খাতের*দারী আমরাও কম করবো না।”
ধ্রুব বললো,
-“ও যেনো কোনোভাবে জামিন না পায় পুলিশ অফিসার।”
-“জ্বি পাবেনা। বিশ্বাস রাখতে পারেন।”
-“ওকে এখনই আমার সামনে থেকে নিয়ে যান। ওর মুখ দেখতেও আমার ঘৃ*ণা লাগছে।”
সৈকতকে পু*লিশরা নিয়ে গেল। সৈকত যখন রূপাদেরকে একে একে সত্যি কথাগুলো বলছিলো তখন ধ্রুব নিরব দর্শকদের মতো দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু শুনছিলো। সৈকতের প্রত্যেকটা কথা রে*কর্ড করে রেখেছিলো সে। পুলিশকেও সেটা শুনিয়েছে ধ্রুব। একে একে পুলিশেরা চলে যেতেই নিলু-রূপা দুজনই তার বুকে ঝাঁ*পিয়ে পড়লো। ধ্রুব দুজনের মাথায় চু*মু খেলো। রূপা বললো,
-“আপনি কিভাবে বুঝলেন আমরা এখানে?”
-“তখন তোমার তাড়াহুড়ো হয়ে যাওয়া দেখে বুঝতে পেরেছিলাম কোনো একটা অ*ঘটন ঘটেছে। নাহলে তুমি আমাকে না বলে, আমাকে সাথে না নিয়ে কোথাও যাওয়ার মতো মেয়েই না। তাই তোমার পিছু নিয়েছিলাম। যখন তুমি গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে নিলু আর সৈকতকে লুকিয়ে দেখছিলে তখন আমি গাড়িতে বসে তোমাকে লক্ষ্য করছিলাম। তোমার তাকানোর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখতে পেলাম নিলুকে। সৈকতকে অবশ্য দূর থেকে চেনা যাচ্ছিলো না। তাই গাড়িটা একটু কাছে নিয়ে গিয়ে থামিয়েছিলাম। এরপর সবকিছু আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো। কিন্তু রূপা, আমাকে না বলে ভু*ল করলে তুমি। আমাকে তখন জানালে কী এমন ক্ষ*তি হতো?”
-“বি*শ্বাস করুন তখন আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কেবল মনে হচ্ছিলো নিলুকে একা ছাড়া ঠিক না। তাই আমার কোনো কিছু খেয়াল ছিলোনা। আপনাকে যে বলে যাবো সেটাও মনে ছিলোনা। সরি।”
-“আচ্ছা। এখন বাসায় যেতে হবে। মা টেনশন করছে।”

পুরো ঘরটা জুড়ে অ*ন্ধকার করে রেখেছে রূপা। আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে তার। দ্বীপ আর এই পৃথিবীতে নেই। ভাবতেই চোখ ফেঁটে পানি বেড়িয়ে এলো তার। দ্বীপকে নিয়ে কতই না কটু কথা বলেছিলো। “সে ভালে না, চে*ঞ্জ হয়ে গেছে, কারো সাথে বিয়ে করে সুখীর সংসার করছে।” আদৌ কী তাই? সে নিজেই তো স্বা*র্থপর। সে নিজেই তো দ্বীপকে ভুলে সুখের সংসার করছে। দ্বীপ কী তাকে কখনো ক্ষমা করবে?
-“মাধুরী।”
“মাধুরী” নামটা কানে পৌঁছাতেই রূপা ভাবনায় লাগাম পড়লো। এই নামে কে ডাকলো তাকে? এই নামে তো তাকে একজনই ডাকতো। দ্বীপ… তাহলে কে ডাকলো?
রূপা লাইট অন করলো। পাশ ঘুরে তাকাতেই নিলুকে দেখতে পেলো। রূপাকে নিজের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাকে বললো,
-“ভাবি আমি সবকিছু জানি। তুমি দ্বীপ ভাইয়াকে কতটা ভালোবাসতে সেটাও জানি।”
রূপা বললো,
-“কিভাবে?”

কয়েকমাস আগে ভোর সকালে ছাদে উঠেছিলাম শরৎ…. সরি সৈকতের সাথে কথা বলার জন্য। ছাদে উঠে প্রথমে আমি দোলনায় গিয়ে বসি। হঠাৎ আমার চোখ পড়ে দোলনার পাশে রাখা ডায়েরীর দিকে। কৌতূহলবশত ডায়েরীটা হাতে নেয়। প্রথম পাতাটা উল্টালেই একটা ময়ূরী টাইপের কলম দেখতে পায়। পরের পাতা উল্টালে দেখতে পায় কাগজের উপরে বড় বড় করে লেখা “দ্বীপ+রূপা” এরপর আস্তে আস্তে সব পাতা পড়ে ফেললাম। জানতে পারলাম আমার দ্বীপ ভাইয়ার মাধুরী আর কেউ না তুমিই ছিলে। জানো ভাবি, দ্বীপ ভাইয়া সবসময় তোমার কথা বলতো, “মাধুরীকে নিয়ে আজ এখানে গেছি, ওখানে গেছি। আজ মাধুরীকে শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর লাগছিলো। আজ আমরা একসঙ্গে অনেক সময় কাঁ*টিয়েছি।” এসব শুনলে খুব বি*রক্ত লাগতো। সারাদিন খালি মাধুরী মাধুরী করতো। “মাধুরী এই করতে পছন্দ করে, ওই করতে পছন্দ করে। এই কালার পছন্দ করে, ওই কালার পছন্দ করে।” আমি ভাইয়াকে বলতাম, “এই মাধুরীটা কে?” ভাইয়া বলতো, “তোর ভাবী।” কিন্তু ভাইয়া কখনোও মেয়েটার নাম বলতো না। রাগে দুঃখে একদিন ভাইয়াকে বলেই ফেললাম, “ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলে রাখি। হয় মেয়েটার নাম বলবা, আর না হয় ওর ব্যাপারে আমার সামনে কিছুই বলবা না।” সেদিন থেকে ভাইয়া আর আমার সামনে তোমার নেইনি। আমি রাগ করবো বলে। জানো ভাবি? ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসতো।”
বলেই থামলো নিলু। রূপা কথাগুলো শুনে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। নিলু বললো,
-“তাই বলে এই ভেবো না ধ্রুব ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে না। সেও কিন্তু তোমাকে ভালোবাসে। তার চোখে আমি তোমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছি। যেমনটা দ্বীপ ভাইয়ার চোখে তোমার প্রতি দেখেছিলাম।”
রূপা বললো,
-“আমি জানি উনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। হয়তো আমার থেকেও বেশি বাসেন। কিন্তু নিজের মনটাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না। মানুষটা পৃথিবীতে নেই এটা কিছুতেই আমি মানতে পারছি না। কিছুতেই না।”
-“তোমার মতো প্রথম প্রথম আমরাও মেনে নিতে পারছিলাম না। এমনও দিন গেছে আমরা প্রতিটা রাত নির্ঘুমে, কেঁ*দে কাটিয়েছি। ভাইয়া-বাবাকে ছাড়া যে আমাদের জীবনটাই অঁচল।”
রূপা গুটিসুটি মেরে বসে আছে। নিলু বললো,
-“আচ্ছা ভাবী তুমি থাকো। তাহলে আমি যায়। আর ডায়েরীটা আমার আলমারি রাখা আছে। কাল নিয়ে নিও।”
বলেই নিলু চলে গেল। রূপা আবারও একই ন্যায় বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ধ্রুব রাতে ঘুমানোর জন্য ঘরে ঢুকলো। পুরোঘর অন্ধ&কার। ধ্রুব আলো জ্বা*লিয়ে দেখতে পেল রূপা মূ*র্তির মতো শূণ্য দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রয়েছে। বললো,
-“কী হয়েছে তোমার?”
রূপা উত্তরে বললো,
-“আপনি সারাজীবন আমার সাথে থাকবেন তো? কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো?”
ধ্রুব ম্লান হেঁসে বললো,
-“কখনোই ছেড়ে যাবো না।”
-“কথা দেন।”
-“কথা দিলাম।”

৫ বছর পর…..

আজ রূপার মেয়ে স্নেহার খুব জ্ব*র হয়েছে। সবাই’ই বেশ আ*তংকিত। ফারজানা বললেন,
-“মা, স্নেহাকে হাসপাতালে নিয়ে চল। আমার দাদুর অবস্থা কিন্তু খুব একটা ভালো না। নিলু বলছিলো ওর ছেলেকে কোন একটা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে নাকি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। তুই ওর থেকে নামটা শুনে দেখতো। কি জানি নাম! ভুলে গেছি।”
রূপা বললো,
-“জ্বি মা শুনছি।”
রূপা স্নেহাকে কোলে নিতে গেলেই স্নেহা তার সাথে যাবে না বলে সাফ সাফ জানিয়ে দিলো। সে বললো,
-“আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না। বাবাই এর কাছে যাবো।”
রূপা স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-“মা, তোমার বাবাই অফিসে গেছে। একটু পরই চলে আসবে। মা আমার জেদ ধরো না। তুমি খুব অ*সুস্থ মা। ডক্টর না দেখালে জ্বর কমবে কিভাবে বলো?চমি তোমার সাথে যাবোনা তুমি প*চা আমি বাবার সাথে যাব।এমন সময় ধ্রুব পেছন থেকে বলে উঠলো কি হয়েছে আমার মায়ের। কোথায় যাবেনা বলছে,কেন যাবেনা মা বলোতো,স্নেহা বললেন আমি কোন যাবো মায়ের সাথে, মা আমাকে একটু ও ভালোবাসেনা শুধু তোমাকে ভালোবাসে। কাল রাতে আমি আম্মুকে আদর করছি কিন্তুু আম্মু আমাকে আদর না করে তোমাকে আদুর করছে।,তাই আমি আম্মুর সাথে ডক্টরের কাছে যাবোনা। মেয়ের কথা শুনে রুপা ও ধ্রুব দুজনে হেসে দিলো আর স্নেহা কে কোলে নিলো। তাই নাকি? ওকে একন তোমার আম্মু তোমাকে আদর করবে,আর আমি তোমার আম্মুকে আদর করবো তাহলে রাতের টা শোধ হয়ে যাবে। ধ্রুবর কথা শুনে স্নেহা হাত তালি দিয়ে বলতে লাগলো ওহ কি মঝা আম্মু আমাকে আদর করবে তার আব্বু আম্মুকে আূর করবে,এভাবে হাসি খুশিতে তাদের দিন চলছে অবশেষে ভালোবাসাময় ভরপুরে কাটলো রুপার বাকি দিন গুলো।ধ্রুব তার ভালোবাসার রং বদলিয়ে ভালোবাসা দিয়ে রঙ্গিন করে দিলো রুপার প্রতিটি মুহুর্ত। আর সমাপ্তি ঘটলো আরেকটি গল্পের।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here