ভালোবাসি প্রিয় পর্ব -২০

#ভালোবাসি_প্রিয়( ২০)

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

কারন শায়ান ভাইয়া আর কেউ নয় স্বয়ং রাজ।রাজ আমাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠে বলল, কুয়াশা তুমি এইখানে?

রাজ আমাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে কিন্তু আমি কোন কথা বলতে পারছি না। আমি শুধু ভাবছি এইটা কিভাবে সম্ভব? আহনাফ আহমাদ শায়ান কিভাবে রাজ হতে পারে? রাজ কে শায়ান রুপে দেখে আমি যেন বোবা হয়ে গিয়েছি।মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার গলা চেপে ধরে রেখেছে। আমি হাজার চেষ্টা করেও কোন কথা বলতে পারছি না। আমার ভেতরে কোন অনুভূতি কাজ করছে না। এখন আমার বুঝতে বাকি রইল না বাবা কেন বলছিল আমার অনেক কিছু জানার বাকি আছে? বাবা তাহলে রাজের পরীক্ষার জন্য‌ই নিজের অসুস্থতার কথা বলে আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসল যাতে আমি রাজের সত্যি টা জানতে না পারি।রাজ কে নিয়ে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। কিন্তু শায়ান ভাইয়া যে রাজ হতে পারে এইটা আমার ধারনার বাইরে ছিল।

কুয়াশা তুই যে শায়ান ভাইয়া কে আগে থেকেই চিনতিস তাহলে আমাকে বলিস নি কেন?

আহনাফ আহমাদ শায়ান আর কেউ নয় জামিয়া স্বয়ং রাজ।রাজ কথা টা শুনে জামিয়া আমার পা ধরে বসে পড়ল।

একি জামিয়া! কি করছিস পা ছাড় বলছি?

জামিয়া কান্না করতে করতে বলল,কুয়াশা তুই তো বলেছিলি আমার জন্য সব করতে পারবি। তুই তো রাজ কে ভালোবাসিস না । তুই প্লিজ রাজ কে ছেড়ে দে। বিশ্বাস কর এই মানুষ টা কে আমি সত্যি অনেক ভালোবাসি। ওকে ছাড়া এক মূহূর্ত আমি ভাবতে পারি না। আমি সত্যিই শায়ান ভাইয়া কে ছাড়া বাঁচতে পারব না কুয়াশা।

জামিয়ার কথা শুনে আমার ক”লি”জা মোচড় দিয়ে উঠলো।কি বলব আমি কিছু বুঝতে পারছি না। একদিকে বন্ধুত্ব অন্যদিকে ভালোবাসা। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই জামিয়া হো হো করে হেসে উঠে বলল, কেমন দিলাম দোস্ত?কেউ না জানুক আমি জানি তুই রাজ ওরফে শায়ান ভাইয়া কে কতটা ভালোবাসিস।সব ভালোবাসা তো পূণর্তা পায় না দোস্ত। আমি না হয় শায়ান ভাইয়া কে দূর থেকে ভালোবেসে যাবো। তবুও আমার কাছে ভালোবাসার থেকে বন্ধুত্বের মর্যাদা বেশি। দোয়া করি তোদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক। কুয়াশা বেশি দেরি করিস না । শায়ান ভাইয়া কে তোর ভালোবাসার কথা টা তাড়াতাড়ি বলে দিস।আসছি আমি বাই।ভালো থাকিস।

দাঁড়াও জামিয়া। পেছন থেকে রাজ বলে উঠলো। এতো দিন ‌শুনে আসছো আমি এক নারী তে আসক্ত ।জানতে চাইবে না সেই নারী টা কে?

তারমানে কুয়াশা ছাড়া অন্য কোন নারী আছে আপনার জীবনে?

না। সেই একমাত্র নারী হলো আমার স্ত্রী কুয়াশা।
আমি সেই ভাগ্যবান নারী কথা টা শুনে খুশি তে আপনা আপনি চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। একটা মানুষ আমাকে এতোটা ভালোবাসতে পারে ভাবতেই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হল।জামিয়া যেতেই রাজ বলল, প্লিজ কুয়াশা তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি চেয়েছিলাম তুমি এই অশিক্ষিত , আনস্মার্ট রাজকে ভালোবাস ,শিক্ষিত স্মার্ট আহনাফ আহমাদ শায়ান কে নয়। আমি চেয়েছিলাম একজন বিসিএস ক্যাডার হয়ে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে ‌। তাছাড়া তুমি তো কখনো আমার সম্পর্কে জানতে চাও নি কুয়াশা। যাকে বিয়ে করছে অথচ তার সম্পর্কে কিছু না জেনেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে গিয়েছ।একবার ও জানতে চাও নি কি তার পরিচয় ,কি তার পেশা?

আসলে বিয়েতে আমার মত ছিল না ,তাই জানার প্রয়োজন মনে করি নি।

আমি হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছি এইটা নিশ্চয় জানো।

হুম। কিন্তু মাদ্রাসার চাকরি কিভাবে সম্ভব।

মাদ্রাসা টা আমাদের নিজেদের । আমার দাদু মৃ*ত্যু*র
আগে তার সম্পত্তির কিছু অংশ মাদ্রাসার জন্য দান করে গিয়েছিলেন।

তার মানে বাবা আপনার ব্যাপারে সবটা জানতো।

হ্যাঁ । বাবাই আমাকে বলেছিল আমি যেন তোমাকে এই কথাটা না জানাই।

আসলেই আপনি চরম মাত্রার অ*স*ভ্য একজন লোক।




দেখতে দেখতে কেটে গেল ৬ মাস।এই ৬ মাসে আমার ও রাজের জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু আমার অপ্রকাশিত ভালোবাসা অপ্রকাশিত‌ই থেকে গেছে। এখন ও রাজ কে মুখ ফুটে বলতে পারি নি #ভালোবাসি_প্রিয় । আমি এখন অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ৩.৩৫ পেয়ে তৃতীয় বর্ষে প্রমোট হয়েছি যা আমার মতো গরীব স্টুডেন্টের কাছে অনেক বেশি। যেদিন রেজাল্ট দিয়েছিল আমি খুশিতে সমস্ত লাজ লজ্জা ভুলে রাজ কে জ*রি*য়ে ধরে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি কি এখন ও দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা বলবেন?রাজ আমার কপালে চু”মু দিয়ে বলেছিল,ত‌ওবা ,ত‌ওবা ,কি বলো ? ঘরে চাঁদের মতো সুন্দরী ‌ব‌উ থাকতে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে যাবো কেন কুয়াশা?

তাহলে এতো দিন তো বলেছিলেন দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান?

বোকা মেয়ে। আমি জানতাম মেয়েরা আর যায় হোক স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না।তাই তো মজা করে দ্বিতীয় ‌বিয়ে করার কথা বলেছিলাম যাতে তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা কর।

অ*স*ভ লোক আপনি কখনো ভালো হবেন না।

আমি ভালো হতে চাই না কুয়াশা। আমি সারাজীবন তোমার কাছে অ*স*ভ্য লোক হয়ে থাকতে চাই।

পুরুষ মানুষ কে সহজে বিশ্বাস করতে নেই।এরা ক্ষণে ক্ষণে গিরগিটির মতো রং পাল্টে ফেলে।আজ আপনি সাধারণ একজন মাদ্রাসার শিক্ষক রয়েছেন কিন্তু আপনার বিসিএস পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই আপনাকে ভাইভার জন্য ডাকা হবে। আপনি যেহেতু সবোর্চ্চ নম্বরে বিসিএস এর প্রথম ধাপ ‌ও দ্বিতীয় ধাপ শেষ করেছেন সেহেতু ভাইভাতে পাশ করলেই বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাবেন। তখন একজন বিসিএস ক্যাডারের কি এই সাদামাটা কুয়াশা কে ভালো লাগবে?

তোমাকে অনেক বার বলেছি কুয়াশা এক নারীতে আসক্ত পুরুষ কখনোই পরনারীর তে‌ আসক্ত হয় না। তুমি আমার প্রথম ভালোলাগা, ভালোবাসা ছিলে আর মৃ*ত্যু*র আগ পর্যন্ত থাকবে। আমি তোমার হাত ধরে বুড়ো হতে চাই কুয়াশা। বুড়ো বয়সে লাঠিতে ভর করে কাপাকাপা স্বরে বলতে চাই #ভালোবাসি_প্রিয় ।

গতকাল বিসিএস এর চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।আর ক্যাডার লিস্টে সর্ব প্রথম আহনাফ আহমাদ শায়ান নামটা ছিল।
আজ ইচ্ছে হলো রাজের জন্য নিজেকে সাজাতে। বিয়ের প্রায় এক বছর পরে আজ হঠাৎ মনে পড়ল বাসর রাতে রাজের দেওয়া গিফট এর কথা। গিফটের প্যাকেট খুলে দেখলাম অনেক সুন্দর কালো একটা জামদানি শাড়ি। কালো রং বরাবরই পছন্দ আমার। তারপর আবার শাড়ির কাজ টা ও চোখে পড়ার মতো। আসলেই মানুষ টার পছন্দের প্রশংসা না করলেই নয়।
আমি গোসল সেরে শাড়ি পড়ে চোখে হালকা কাজল দিলাম, ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে চুলগুলো ছেড়ে দিলাম।আয়নাতে নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। হঠাৎ করে আয়নার অপর প্রান্তে অন্য এক কুয়াশা কে আবিষ্কার করলাম।অন্য কুয়াশা হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,বাহ কুয়াশা অবশেষে তুই আহনাফ আহমাদ শায়ান কে ভালোবেসে ফেললি‌ ও একজন বিসিএস ক্যাডার বলে?

না। আমি প্রতিষ্ঠিত শায়ান কে ভালোবাসি নি। আমি অশিক্ষিত, আনস্মার্ট রাজ কে ভালোবেসেছি।

তাহলে আর দেরি কেন? রাজকে বলে দে #ভালোবাসি_প্রিয় ।

হুম অনেক হয়েছে লুকোচুরি আর নয়। সময় হয়েছে আমার অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশ করার।আজ আমি রাজ কে বলব, ওকে আমি ঠিক কতোটা ভালোবাসি‌ ,ঠিক কতোটা নিজের করে চাই। আমার অপ্রকাশিত ভালোবাসার গভীরতা ঠিক কতোখানি আজ রাজকে বোঝাব।আর কোন লজ্জা নয়। সমস্ত লজ্জার অবসান হবে আজ। রাজকে বলব, আমাদের এই টোনাটুনির সংসারে ছোট্ট একটা বাবু আসলে মন্দ হয় না।যে সারাক্ষণ আমাদের ঘর মাতিয়ে রাখবে,আধো আধো বুলিতে আমাকে আম্মু ,রাজকে বাবা বলে ডাকবে। ইস্ এমন মূহুর্তের কথা ভাবতেই ভালো লাগছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here