ভালোবেসে থাকবো পাশে পর্ব -১০

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্ব_১০
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

এই নিয়ে আরিয়া বহুবার পড়েছে চিঠিটা।

ফ্ল্যাশব্যাক____

রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছে সবাই।

শালার একটা ভালা ছেলে যদি চোখে পড়তো সাথে সাথে বাপেরে কল দিয়া কইতাম বিয়ার ব্যবস্থা করতে। এই পড়ালেহা আর ভাল্লাগে না। (অন্তু)

এসব কোন ধরনের কথা বার্তা? (শিশির)

এমনে কথা কস কে?(আরু)

কেন তোদের লগে আবার কিয়ের ফর্মালিটি?(অন্তু)

তাই বলে সব জায়গায় এই ভাষায় কথা বলবি?(আহিল)

আরে বেডা তুই চুপ থাক। এখনো খাবার দিচ্ছে না কেনো?(অন্তু)

পেটুক আবার শুরু করলো!

কিছুক্ষণ পরে ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলো।

খেতে খেতে অন্তু বলল,, দোস্ত একটা প্রেম করা লাগবো! একা একা আর ভালো লাগে না রে। একটা বফ থাকলে তো তারে নিয়া ঘুরতে পারতাম! সময় টাও সুন্দর যাইতো।

আহিল বিরবির করে বলল,, আমি থাকতে আবার বফ খোঁজা লাগে?

কিছু কইলি আহু?

কী আর কমু! তোর এই সব ক্ষ্যাত মার্কা কথা শুইনা ছেলেরা আগেই পালাবে। আর কিছু বলা লাগবো না এখন চুপচাপ খা।

____________________🖤

বাসায় আসার পর ফ্রেশ হয়ে আরিয়া ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।

আম্মু দেখো তো কে আসছে!

আরিয়ার আম্মু চেঁচিয়ে বললো,, বসেই তো আছিস তাও দরজা টা খুলতে পারছিস না? একা হাতে কত দিকে সামলাবো আমি? বাপ-বেটি সারাদিন তো বসে বসেই খাস!

আরিয়া মনে মনে বলল,, এইযে ডায়ালগ শুরু।

তোমার ছেলে বুঝি সারাদিন কাজ করে?কিছুটা চেচিয়ে বলল আরিয়া।

একদম আমার ছেলের নামে বাজে কথা কইবি না। তোর থেকে আমার ছেলে অনেক বেশি কাজ করে। এখন আমারে একটু শান্তি তে কাজ করতে দে। আর দেখ কে আসছে।

সুযোগ ফেলেই ছেলের প্রশংসা করা লাগে।

বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলে দিলো আরিয়া। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। দরজা আটকাতে যাবে তখনি নিচে চোখ গেলো, একটা মাঝারি সাইজের বক্স রাখা। হাতে নিয়ে দেখলো উপরে আরুপাখি লেখা। এটা নিশ্চয় অচেনা লোকটা যে চিঠি গুলা দিচ্ছে তার পাঠানো! এই বক্স কোথা থেকে এল। কোথায় সে? যদি সে না এসে থাকে তো কেই বা রেখে গেলো!

কে আসছে আরু?

কেউ নাই তো আম্মু।

তাহলে বেল কে বাজালো?

হয়তো পাশের বাসার পিচ্চি টা হবে।

আচ্ছা দরজা আটকিয়ে দে।

আচ্ছা বলেই আরিয়া বক্স টা নিয়ে রুমে চলে গেলো।

আরিয়া খাটের উপর বক্স খুলে দেখে ভিতরে অনেক চিপস্ আর চকলেট। আর একটা চিঠি। চিপস্ আর চকলেট দেখে খুশি হলেও চিঠি পড়ে আরিয়ার মন খারাপ হয়ে যায়।

বর্তমানে___

আরু এই আরু..

সাড়ে দশটা বাজে এখনো ঘুমাস নি কেন?

এই তো ঘুমাবো।

আচ্ছা শুন!

হ্যাঁ আম্মু বল!

দুদিন পর যে ফারিয়ার গায়ে হলুদ ভুলে গেছিস?

ভুলিনি তো। কিন্তু হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস কেন করছো?

তুই যাবি না কাল ওদের বাসায়?

আমি কেন যাব? গায়ে হলুদ, বিয়ে ফারিয়ার আমি গিয়ে কী করব?

এই আরু তোর শরীল ঠিক আছে তো? এসব কী বলছিস?

আম্মু আমার কিচ্ছু হয়নি আমি একদম ঠিক আছি।

সত্যি করে বল কী হয়ছে তোর আরু? ফারুর বিয়েটা নিয়ে সব থেকে বেশি এক্সাইটেড তো তুই ছিলি। তুই ফারুর সাথে শপিংও করতে যাস নি।বললি অসুস্থ। সেটা মানলাম। এখন আবার বলছিস ওর গায়ে হলুদেও যাবি না।

আম্মু হলুদ তো রাতে হবে। তাই আমি, ছোঁয়া, অন্তু আর আহু বিকালের দিকে যাবো।

তোর তো একদিন আগেই যাবার কথা ছিল!

আম্মু আমি এটা নিয়ে আর কথা বলতে চায় না। একা থাকতে দাও প্লিজ।

জানি না মা তোর কী হয়ছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি বিয়েতে তুই খুশি না।

আম্মু আমি অনেক খুশি। কিন্তু আমি ওদের ছাড়া যেতে পারবো না তাই বিকেলে একসাথে যাব৷

ঠিক আছে।

আরিয়ার আম্মু যেতেই দরজা বন্ধ করে দেয়।
বিছানায় শুয়েই বালিশে মুখ গুছে কান্নায় ভেঙে পড়ে আরিয়া । সারাদিন যতই ভালো থাকার অভিনয় করে যায়! মাঝরাতে সবাই অভিনয়ের কাছে হেরে যায়।

__সে আমায় কখনোই ভালোবাসে নি। তার নিখুত অভিনয় গুলা কখনোই আমি বুঝতে পারিনি। তার মিথ্যে হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা চেহারা টা আমি কখনোই চিনতে পারি নি। হ্যাঁ সে আমায় কখনোই ভালোবাসে নি৷ তার কোনো ইচ্ছাই আমি আমার সাধ্যের ভেতরে অপূর্ণ রাখিনি! বিনিময়ে তার কাছ থেকে বেশি কিছু চাই নি শুধু ভালোবাসাটুকু চেয়েছিলাম। কিন্তু তার কাছ থেকে শুধই কষ্ট আর অবহেলা পেয়েছিলাম। সে ভুল করলে তাকে ক্ষমা করে দিতাম। কারণ আমি তাকে সবসময় হারানোর ভয় করতাম। আর এই সুযোগ টা নিয়েই সে আমাকে বারবার কষ্ট দিতো। আর এই কষ্টটা তার সামনে প্রকাশ না করে আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে অঝোরে দু-চোখ থেকে কান্না ঝরাতাম। বিনিময়ে শুধু তার ওই মুখের হাসিটাই দেখতে চাইতাম। কিন্তু এত কিছু করার পরও দিনশেষে সেই মানুষটা আমার হয়নি। আর দুদিন পর সে সম্পূর্ণ ভাবে অন্যের হয়ে যাবে। কারণ সে আমায় কখনো ভালোইবাসেনি। আমি তাকে ভালোবেসে বিশ্বাস করতাম আর সে আমাকে বোকা ভাবতো। আর বোকা ভেবেই সে আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আমাকে ধোঁকা দিলো। কিন্তু সেও হয়তো জানে না যে ধোঁকা দেয় সেও একদিন ধোঁকা খায়। জাস্ট পার্থক্য শুধু মানুষের আর অপেক্ষা টা শুধু সময়ের। ভেবেই আরিয়া চোখের জল টা মুছে নেই৷

আরিয়া আইডিটা এক্টিভ করল। দেখলো রাতুল অনলাইনেই আছে!

__রাতুল আমি তোমায় সত্যিই ভালোবেসে ছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসতে না। আমাদের রিলেশন টা কখনোই তুমি সিরিয়াস ভাবে নাও নি। আমাদের রিলেশন টা নেহাতই তোমার কাছে পুতুল পুতুল খেলা ছিল। তাই তো এমন টা করলা। জানো রাতুল, ছোটবেলায় অন্ধকারকে অনেক বেশিই ভয় পেতাম কিন্তু তুমি ধোঁকা দেওয়ার পর অন্ধকার টাই এখন বেশি ভালো লাগে। মনে রেখো, আমার শূন্যতাও একদিন তোমায় প্রচুর কাঁদাবে৷ তখন আর শত চেষ্টা করলেও আগের আমিটাকে খুজে পাবা না। সত্যি বলতে, কাউকে কাঁদিয়ে সুখী হওয়া যায় না। দোষ না করেও সবসময় তোমাকে Sorry বলতাম। তাও তুমি আমাকে কখনোই আগলে রাখতে চাওনি। শুনেছি অযোগ্যকে যোগ্য বানানো যায়। কিন্তু বিশ্বাস ঘাতককে বিশ্বস্ত বানানো অসম্ভব। আজ তোমার কারণে এই কথা টাও বড্ড বেশি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়।

মেসেজ টা সেন্ড করার দুই মিনিট পর রিপ্লাই আসলো,, আরু প্লিজ শুনো!

হেই কতবার বলব, ডোন্ট কল মি আরু! অনলি আরিয়া ওকে।

আচ্ছা আরিয়া আমার কথাটা দয়া করে শুনো!

জিজু আর কোনো কথা শুনতে চায় না। ভালো থাকুন।

আরিয়ার মেসেজ দেখে রাতুল ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। একটু আগেও তো রাতুল বলল। এখন আবার জিজু!

জিজু মানে? আর আপনি করে কেন বলছো?

দুইদিন পর ফারিয়া কে বিয়ে করবেন। আফটার অল বেইমান হলেও বোন তো। সেই কারণেই জিজু বললাম। আর বোনের বর কে তো আর তুমি করে বলা যায় না। বাই জিজু!🥱

মেসেজটা দিয়েই আরিয়া রাতুলের কোনো রিপ্লাই না দেখেই ডাটা অফ করে ঘুমিয়ে যায়।

আরু এতটা বদলে গেছে ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাতুল।

_________________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিতেই দেখে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসছে!
মেসেজ টা ওপেন করে পড়া শুরু করলো করল আরিয়া।

সুপ্রভাত আরুপাখি💝

আমি কে সেটা নিয়ে তুমি আর ভেবো না। তোমার ছোট্ট মাথায় এসব উত্তর আসবে না। সময় হলেই আমি তোমার সামনে আসবো। ততদিন একটু ধৈর্য ধরো। আর হ্যাঁ রাতুলকে ভুলে যাও। আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করো। সবসময় যদি ওই রাতুলকে নিয়ে ভাবতে থাকো তো আমাদের ফিউচার বাচ্চা-কাচ্চাকে নিয়ে কে ভাববে হু!🤪 আর শুনো, রাতুল আর ফারিয়ার বিয়েতে গিয়ে একদম মন খারাপ করো না। কষ্ট হলেও ওদের বুঝতে দিয়ো না। বুঝে গেলে ওরা তোমাকে কষ্ট দিতেই থাকবে।

ভেবো না তুমি একা, আমি আছি তোমার পাশে। ভালোবাসি তোমাকে।

অচেনা কেউ..!!

কে এই লোক! বাই দ্যা রাস্তা, লোকটা আবার পাগল নয়তো। এ নিশ্চয় পাবনা থেকে পালিয়ে আসছে। এখন আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে। আমার নাম্বার টাই বা কই পাইলো।

সব ভাবনা সাইডে রেখে আরিয়া নাম্বার টাই কল দিলো।

#চলবে….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here