ভালোবেসে থাকবো পাশে পর্ব -১৫+১৬

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১৫
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

আরিয়া কিছু বলার আগেই ছোঁয়া বলে উঠলো,, রাতুল ভাইয়া আসলে ভালো টা কাকে বাসো তুমি? এই বলো ফারিয়াকে ভালোবাসো! এই আবার আরুকে! বাই এনি চান্স তুমি আবার দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চাইছো না তো নাকি আরুর বদলে যাওয়াটা নিতে পারছো না?

—ছোঁয়া প্লিজ তুমি কথা বলো না। তুমি কথা বলার কে? আমি তোমার থেকে না আমার আরুর থেকে উত্তর চাইছি! তোমার থেকে না। সো প্লিজ তুমি দয়া করে চুপ থাকো।(রাতুল)

— প্রথমে এটা মনে রেখো ওর নাম টা আরিয়া। তোমার কোনো যোগ্যতা নেই যে ওকে আরু ডাকবে। আর কী বললে ও তোমার আরু! হাহাহা! আরু দিস ইজ জোক্স অফ দ্যা ডে। আর হ্যা আরুর জীবনে অন্য কেউ চলে এসেছে। যদিও আরু এখনও তাকে মেনে নেই নি। তবে হ্যা আমার এইটুকু বিশ্বাস আছে যে আরু তাকে একদিন মন থেকে মেনে নিবে।(ছোঁয়া)

– ছোঁয়ার কথা শুনে রাতুল অবাক হয়ে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আরিয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। এটা রাতুলের একদম সহ্য হয়নি। রাগে আরিয়াকে বলল, বাহ্ আরিয়া বাহ্। এই তাহলে তোমার ভালোবাসা। এই কই দিনে ভালোবাসা শেষ? এর মধ্যে আবার অন্য নাগর জুটিয়ে ফেলছো৷ তোমাদের মতো মেয়েদের কাছে এর থেকে বেশি আর কী বা আশা করা যায়।

— এটা শুনেই আরিয়া রেগে গেলো। তবুও যতটা সম্ভব নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে রাতুলকে জবাব দিলো, অনেক বলে ফেলেছো তুমি। কি ভাব কি নিজেকে? রাণবীর সিং! আর ভালোবাসার মানে বুঝো তুমি? কখনও একে ভালোবাসো তো কখনো আবার ওকে। আর একটা মানুষ যে কতটা চরিত্রহীন হতে পারে, সেটা তোমাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না । তুমি এমন একটা মানুষ যে প্রতিনিয়ত সবাইকে ঠকাও কিন্তু আজ পর্যন্ত তোমাকে কেউ ঠকাতে পারলো না । হয়তো তুমি সবাইকে ঠকিয়ে নিজেকে মহান মনে করলেও একদিন তুমি ঠিকই প্রমাণ পাবে আসলেই তুমি কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। তুমি যাদের ঠকিয়েছো তারা বোকা নয় বিশ্বাসী ছিল। তুমি নিজেকে চালাক মনে করে একের পর এক মানুষকে ঠকাচ্ছো দিনের পর দিন। তবে জানোতো পাপের খাতা থেকে কারোর মুক্তি নেই। এই প্রকৃতি হিসেব করে চুকিয়ে দেবে তোমার কর্মের ফল। সেদিন তুমি বুঝবে ভালোবাসা হাজারটা মানুষ বদল করে নয়। একটা মানুষের মধ্যে হাজারভাবে ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায়। আর এখানে যদি এত গুলো মানুষ না থাকতো তাহলে তোমাকে থাপ্পড় দিয়া বুঝাইতাম আমি কী জিনিস। কী যেন বলছিলে আমি অন্য নাগর জুটিয়েছি? তোর মতো পাইছোস আমারে? আর তুই যে আমারে ঠকাইছিস তার বেলায় কী? তুই তো আমার সাথে রিলেশনে থাকার পরও ফারিয়ার সাথে রিলেশন করছস। আর আমি এখন করলে তোর গায়ে লাগে? এখন রিলেশনে গেলেই আমি প্রতারক আর তুই যে বিয়ে করলি তুই কী সুপ্রিম কোর্টের বিচারক?

আরিয়া এসব কোন ধরনের কথা বলছো? আর তুই-তুকারি করছো কেন?(রাতুল)

— বেশ করেছি। এটারই যোগ্য তুমি ভালো করে বলছি বাসায় যাও আর ফারিয়ার সাথে আগের মতো সব ঠিক করে নাও। আমার কথা আর ডিভোর্সের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো.! মন দিয়া সংসার কর! আর কখনো আমাকে ডিস্টার্ব করবে না দয়া করে।(আরিয়া)

—আরিয়া প্লিজ ভালোবাসি তোমাকে। লাস্ট বার একটা সুযোগ দাও।(রাতুল)

— রাতুল শুনো__ কাউকে মায়ায় জড়ানো খুব সহজ একটা অভিনয়। তবে জানো কি? মায়ায় জড়ানোর পর ছেড়ে গেলে ঠিক কতটা কষ্ট হয়! হাতে হাত দিয়ে কথা দেওয়া খুব সহজ। তবে সারা জীবন সেই দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন। সম্পর্কের সূচনা মধুর হয়! কারণ ,তখন যে মায়ায় জড়ানো প্রস্তুতি চলে, আর বিচ্ছেদটা বড্ড তেতো! কারণ, তখন যে মায়াকাটার ষড়যন্ত্র চলে। তবে যে মানুষগুলো মায়া কেটে চলে যেতে চায় বা চলে যায়, তারা পিছনের মানুষটার কথা একবারও চিন্তা করে না। লক্ষ্য করে না পিছনের মানুষটার অসহায় চেহারা। দেখেও না দেখার ভান করে পিছনের মানুষটা চোখের জল। বুঝেও বুঝতে চায় না বুকের ভিতর চাপা কান্নার আর্তনাদ। যেমনটা করছো তুমি। দিনের পর দিন ঠকিয়েছো আমায়। প্রতিনিয়ত মিথ্যে বলছো। আমার কষ্ট দেওয়ার আগে তো ভাবনি তুমি একবারও। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তুমি আমাকে যে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছো তা আমাকে আমার দুশমনও দেয়নি। কি অদ্ভুত ব্যাপার তাইনা? যে মানুষটা সম্পর্কের শুরুতে ভালো-মন্দের ,মন খারাপের, কান্নার সব কিছুর খোঁজ রাখতো ! সেই মানুষ ছেড়ে যাওয়ার সময় অপর মানুষটা মরলো কি বাঁচলো সেই খবরটাও রাখেনা। তাই এখন আর ভালোবাসা দেখাতে এসে না। এক ফোঁটা ভালোবাসাও তোমার জন্য অবশিষ্ট নেই সেখানে তোমাকে কী করে মেনে নিই বলতো। ভালো থেকো। সুখে থেকো ফারিয়াকে নিয়ে। আসি!(আরিয়া)

রাতুলকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওরা বেরিয়ে আসলো।

_____________________

বাসায় এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা লোকটার মেসেজ।

আজকের জবাব টা অনেক ভালো দিয়েছো। এটা বুঝতে পারছি আমি তোমার মনে একটু একটু করে জায়গা করে নিতে পারছি। তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না আমি আজ কতটা খুশি। আজ রাতুলকে যখন হচ্ছে মতে ধুয়ে দিচ্ছিলে তখন যে আমার কী যে আনন্দ হচ্ছিল তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। ইচ্ছে করছিল তোমাকে জড়িয়ে ধরে একটা কিস করি। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। তবে এত এত থ্যাংকু আরুপাখি। খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হচ্ছে। ভালোবাসি আরুপাখি। সাবধানে থেকো। বাই।

আরিয়া মেসেজটা পড়ে মুচকি হেসে ফোনটা রেখে দিল।
_____________________

সময় বহমান। সময় আর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। দেখতে দেখতে তিনমাস পেরিয়ে গেলো। ছোঁয়া আর সায়ান মুটামুটি ক্লোজ হয়ে গেছে। আরিয়া অচেনা লোকটার প্রতি অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে। রাতুল অনেক বার আরিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আরিয়া পাত্তা দেয় নি।

— রাতে আরিয়া শুয়ে ফেসবুকিং করছে তখনি অচেনা লোকটার মেসেজ।

আরুপাখি কালকের পরের দিন তোমার সাথে দেখা হচ্ছে। কাল একটা পার্সেল যাবে তোমার নামে নিয়ে নিও। প্লিজ ফিরিয়ে দিও না। ভালেবাসি।

মেসেজটা দেখে আরিয়ার বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। না জানি কে এই লোকটা। এতদিনে আমিও হয়তো লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসাটা কী অপরাধ হয়ে গেলো। আর কাল কী পার্সেল আসবে। আল্লাহ এই বেডা আমারে পাগল কইরা দিলো।

__ কলেজ বন্ধ এই কারণে আজ বাসায়। ১১ টা থেকে আরিয়া বসে আছে কখন পার্সেলটা আসবে। যদি অন্য কারো হাতে পড়ে যায় তাহলে তো বিপদ এই ভেবে বসে আছে৷ সাথে বিরক্তও হয়ে গেছে। ১১ টা ২৭ মিনিটে কলিং বেল বেজে উঠলো। আরিয়া দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো। একটা ছেলে বাহিরের দিকে চলে যাচ্ছে। পেছনের দিক টা দেখা শুধু তাই চিনতে পারছে না। নিচ থেকে তাড়াতাড়ি বক্স টা হাতে নিয়ে এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো। বাবা আর ভাই বাহিরে আর মা রুমে এই জন্য কেউ দেখি নি। আরিয়া তাড়াতাড়ি করে বক্স টা খুলে দেখলে একটা কালো রঙের সোনালী পাড়ের শাড়ি। সাথে কালো চুড়ি, কাজল, লিপস্টিক আর এক জোড়া ঝুমকো।

ঝুমকো টা দেখেই আরিয়া একাই বলে উঠলো আরে এটা তো সেই ঝুমকো যেটা আমি পছন্দ করে আসছিলাম। সেদিন ছোঁয়ার জন্য কিনতে পারিনি। পরের দিন গিয়ে শুনলাম অন্য কেউ কিনে নিয়েছে। শুনে কতো বকা দিলাম। আর এদিকে এটা সেই অচেনা লোকটা আমার জন্যই কিনে রেখেছে। ভাবতেই আরিয়ার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। আবার ভাবছে এই লোকটা সবসময় আমার উপর নজর রাখে। কিন্তু আমার চোখে কেন পড়লো না। ধ্যাত কত মানুষই তো থাকে কে ছিলো আল্লাহ জানে। আচ্ছা দেখি আজ কোনো চিঠি দিয়েছে কি না। বলেই চিঠি খুজতে লাগলো। কিন্তু আজ কোনো চিঠি দেয় নি। শুধু এই গিফট গুলা৷ কিন্তু কখন যাব কোথায় যাব এগুলা কেন বলে নি লোকটা।

আরিয়ার ভাবনার মাঝেই মেসেজ টোন বেজে উঠলো। এটা নিশ্চয় অচেনা লোকটিই হবে। আরিয়া তাড়াতাড়ি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো সত্যিই তার মেসেজ।

আরুপাখি চিঠি দেয়নি তাই হয়তো অবাক হয়েছো! কিন্তু কী করবো বলো তোমার কাছে কাল ধরা দিবো৷ তোমার জন্য সারপ্রাইজ প্লান করতে করতে আর সময়ই হয় নি। কাল লোকেশন পাঠিয়ে দিবো ১১ টায় চলে এসো। আর গিফট গুলো যে দিলাম তার কারণটা রাত ঠিক ১২ টায় বলবো। অপেক্ষা করো একটু। বাই”!

আরিয়া সাথে সাথে রিপ্লাই করলো, না ঘুমিয়ে আপনার জন্য জেগে থাকবো নাকি! এ কখনোই সম্ভব না।

–রিপ্লাই আসলো, সে দেখা যাবে আরুপাখি।

আরিয়া মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিলো।

রাতে খাবার জন্য সাঁদ এসে ডেকে নিয়ে গেলো।

খাবার টেবিলে,,
কি রে শাঁকচুন্নি কাল জানি কী ডে?(সাঁদ)

–কাল কী ডে সেটা কেলেন্ডারে দেখে নে। খাইতে বসছি বিরক্ত করিস না তো।(আরিয়া)

–আপু তুই জানিস না?(সাঁদ)

–না। আব্বু ওরে বল চুপচাপ খাইতে না হলে কিন্তু….(আরিয়া)

–আরে রাগিস না আপু। তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।(সাঁদ)

আরিয়া মনে মনে ভাবলো আবার সারপ্রাইজ!🤷‍♀️
তখনি আরিয়ার আব্বু বলে উঠলো, খাবার সময় বেশি কথা বলতে নেই। চুপচাপ খাও।

____________

রাত ১১ টা বেজে ৪৫ মিনিট। আরিয়া এখনো জেগে আছে৷ সে নিজেও জানে না কেন জেগে আছে। বার বার টাইম দেখছে কখন ১২ টা বাজবে। লোকটার জন্য সত্যিই কী তার মনে ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে! হয়তো।

অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো! ১২ টায় আরিয়ার ফোন বেজে উঠে! অচেনা লোকটির তো মেসেজ করার কথা। ফোন কেন দিলো! এটাও আবার সারপ্রাইজ নাকি!

–আরিয়া একটা শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলো। সাথে সাথে অপর পাশ থেকে অচেনা লোকটি বলে উঠলো,, হ্যাপি বার্থডে আরুপাখি! ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দা ডে।

আরিয়া চমকে উঠলো। আজ আমার বার্থডে আর আমার মনে নাই৷ আমার হারামি ফ্রেন্ড গুলা একবারও মনে করে দিলো না। এই জন্যই সাঁদ কাল কী ডে জিজ্ঞেস করছিল। আর আমি বেমালুম ভুলে গেছিলাম। হায় আল্লাহ।

আরিয়ার ভাবনার ছেদ ঘটে অচেনা লোকটার কথায়,, কী হলো আরুপাখি! ফার্স্ট উইস করলাম তার জন্য কিস নাই বা দিলে একটা ধন্যবাদ তো দিতে পারতে।

–হ্যাঁ… হ্যাঁ। থ্যাংক ইউ! আরিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।

—ওয়েলকাম মাই ফিউচার ওয়াইফ।

–ওয়াইফ কথাটা শুনে আরিয়ার গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আবারও লোকটাকে বলল আপনি দিন দিন লুচু হয়ে যাচ্ছেন।

–এখনও তো কিছুই করলাম না আর লুচু বলছো। আচ্ছা এগুলা বাদ দাও। গিফট গুলা কেন দিয়েছি নিশ্চয় বুঝে গেছো। কাল সময় মতো চলে এসো আর হ্যাঁ চুল গুলা ভুল করেও বেঁধে আসবা না। খুলা রাখবা। লোকশন টা তোমাকে সেন্ড করে দিব। শুভ রাত্রি মাই ডিয়ার।

__আরিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অচেনা লোকটি কল কেটে দিলো। যাহ্ বাবা এটা কী হলো! আরিয়া ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমাতে যাবে তখনি দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। এখন আবার কে এলো! আরিয়া দরজা খুলার সাথে সাথেই সবাই চিল্লিয়ে উঠলো হ্যাপি বার্থডে আরু! ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দা ডে।
–আরিয়া তাকিয়ে দেখে ওর আব্বু, আম্মু আর ভাই! সাথে আহিল, ছোঁয়া আর অন্তু!

কী তোরা কখন এলি?আরিয়া)
–আমরা সন্ধ্যার আগেই তোদের বাড়িতে আছি।(অন্তু)
–কী….!!! তাহলে আমি তোদের দেখলাম না কেন? আর তোরা আমার রুমে আসিস নি কেন?(আরিয়া)
— যদি তোর সামনে চলে আসতাম তাহলে সারপ্রাইজ কী থাকতো?(ছোঁয়া)

অনেক কথা হয়েছে এখন সবাই ছাঁদে চলো!
–আব্বু এখন আবার ছাঁদে কেন?
–সেটাই সারপ্রাইজ!(আহিল)
–আর কত সারপ্রাইজ পাব আমি!(আরিয়া)

_আহিল আরিয়ার কানে কানে বলল,, কেন আরু আরো কেউ বুঝি সারপ্রাইজ দিচ্ছে তোরে?
–না না আর কে সারপ্রাইজ দিবে! তোরাই তো দেওয়ার মানুষ! আর তো কেউ নেই।
–ওওও৷ তাই নাকি রে!
–হ চল।

ছাঁদে এসে দেখে পুরো ছাঁদ টা অনেক সুন্দর করে সাজানো। আর একটা কেক রাখা! সবার সাথে কেক কাটলো সবাই আরিয়াকে খাইয়ে দিলো আর আরিয়া সবাই কে খাইয়ে দিলো।

— মা বাবা আর ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। এটাই তোমাদের সারপ্রাইজ ছিলো?(আরিয়া)
–হ্যাঁ শাঁকচুন্নি! তোর পছন্দ হয়ছে?(সাঁদ)
–হুম রে। তোকে এত্তগুলো ভালোবাসা। এখন যা ঘুমিয়ে পড়৷ আব্বু আম্মু তোমাদেরকেও এত্তগুলো ভালোবাসা। তোমরাও গিয়ে শুয়ে পড়। অনেক রাত হয়ছে। আর সাঁদ তোর রুমের দরজা খুলা রাখিস আহিল শুইবে!(আরিয়া)
—ওকে আপু।
–আরু মা তোমরাও তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো।
আচ্ছা আব্বু!আরিয়া এসে ছোঁয়া, অন্তু আর আহিলকে জড়িয়ে ধরলো। তোদের আর কী বলবো। ভালোবাসি অনেক।
–আমরাও তোকে অনেক ভালোবাসি।(তিনজন একসাথে)
–এখন চল ঘুমায়। আর তোরা রাতে খাইছিস তো?(আরিয়া)
–হুম খাইছি।(আহিল)

রুমে এসে দেখে রাতুল মেসেজ দিছে! হ্যাপি বার্থডে আরিয়া। দোয়া করি খুব বেশি হ্যাপি থাকো।
–এই বেয়াদব ছেলে জীবনেও ভালো হইবো না। আর টাইম ওয়েস্ট করিস না আমার খুব ঘুম পাইছে ঘুমাব!(ছোঁয়া)
হু ঘুমা। গুড নাইট।(আরিয়া)

–তিনজন একসাথে ঘুমিয়ে গেলো।
______________

সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো আটটা বেজে গেছে। অনেক রাতে ঘুমানোর ফলে লেইট হয়া গেছে। আরিয়া সবাইকে ডেকে তুললো৷ সবাই ফ্রেশ হয়ে একসাথে বসে আছে। তখনি আহিল আসলো আরিয়ার রুমে।

–এই আরু অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি কেমন উসখুস করছিস! কিছু বলবি?(ছোঁয়া)
–হুম!
–বল।

__আরিয়া সবাইকে গিফট গুলা দেখাইলো আর আজকে কোথাও মিট করার কথা সেটা বললো!
–এতো ভালো কথা কিন্তু কোথায় যেতে বলছে?(অন্তু)
–লোকেশন পাঠাবে বলছিল। আর শুন তোরাও যাবি আমার সাথে প্লিজ।(আরিয়া)
–আমরা গেলে রাগ করবে না তো?(ছোঁয়া)
–আরে রাগ করবে কেনো? রাগ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং আমাদের দেখে আরো খুশি হবে।(আহিল)
__আরিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আহু তুই কেমনে জানিস এটা?
–আহিল ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। কোনো রকম উত্তর দিলো আমার মনে হলো।

_এই দেখ লোকেশন দিয়ে দিছে।(আরিয়া)

আচ্ছা আমরা বাসায় যায়া রেডি হয়ে যাবো ওই লোকেশনে৷ তুই চলে যাস!(আহিল)
–একসাথে যাই।(আরিয়া)
–আরে সারপ্রাইজ টা তো আমাদের না! তুই আগে যাবি। আমরাও তো যাবোই।(ছোঁয়া)

আরিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার আম্মু এসে সবাইকে নাস্তা করার জন্য ডেকে নিয়ে গেলো।
–সবাই নাস্তা করে চলে গেলো। আর আরিয়া রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছে।

–লোকটার দেওয়া গিফটেই সেজেছে। শাড়ি, দুই হাতে কালো ম্যাচিং চুড়ি, কানে ঝুমকো, কাজল আর হালকা লিপস্টিক। চুল গুলা ছেড়ে দেওয়া। রুম থেকে বেরিয়ে আরিয়া আব্বু, আম্মুকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

–লোকটার পাঠানো লোকেশনে পৌঁছে গেছে। একটা বাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়া। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। তখনি আরিয়ার ফোনে কল এলো। রিসিভ করার সাথে সাথেই লোকটি বলে উঠলো, আরে আরুপাখি দাঁড়িয়ে কেন আছো? ভিতরে আসো। একদম ভয় পেয়ো না। কোন ক্ষতি করবো না তোমার। ভালোবাসি তোমাকে। প্লিজ কাম। বলেই কেটে দিলো।

আরিয়া আস্তে আস্তে ভিতরে গেলো। সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলো ওয়েলকাম ব্যানার! লেখা আছে ওয়েলকাম মাই প্রিন্সেস। আরেকটু ভিতরে গিয়ে দেখলো ড্রয়িং রুম টা অনেক সুন্দর করে সাজানো। বেলুন, ফুল আর স্টীমার সাজিয়েছে সেই কারণে এগুলা সৌন্দর্য যেন বাড়িয়ে তুলেছে। ভেতরে তেমন কাউকে দোখা যাচ্ছে না৷ একটু সামনেই দেখলো কেউ একজন বসে আছে হাতে গিটার। কিন্তু তার ফেইস দেখা যাচ্ছে না। উল্টো দিকে বসা৷

লোকটি আরিয়ার অস্তিত্ব বুঝতে পেরে গান ধরলো___
#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১৬(সারপ্রাইজ)
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

লোকটি আরিয়ার অস্তিত্ব বুঝতে পেরে গান ধরলো__

অবুঝ মন ডাকছে তোমায় ভালবাসার আকাশে!
ভিজবো দুজন স্বপ্ন নিয়ে সুখেরই আবেশে।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে!
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবাসো আমাকে।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে।
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবেসো আমাকে।(২বার)

অনুভবের আড়ালে তুমি জোছনা স্বপ্নেরই আঙ্গিনায় হারিয়ে যাই, চলনা(২বার)
এ প্রণয়ের সবটা জুড়ে তোমারই আরাধনা।
জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে!
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবাসো আমাকে!
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবাসো আমাকে।

__ও দুচোখের আড়ালে কভু যেওনা ভালবাসাতে আমায় বেধে রাখোনা।(২ বার)
এ প্রণয়ের সবটা জুড়ে তোমারই আরাধনা।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে।
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবেসো আমাকে!(৩ বার)

__অবুঝ মন ডাকছে তোমায় ভালবাসার আকাশে!
ভিজবো দুজন স্বপ্ন নিয়ে সুখেরই আবেশে।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে!
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবাসো আমাকে।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে।
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবেসো আমাকে।(২বার)

ভয়েস টা আরিয়ার খুব চেনা লাগছে। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না। গান শেষ হতেই আরিয়া লোকটির কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে অচেনা লোকটির দিকে হাত বাঁড়িয়ে দিলো। তখনি লোকটি পিছনে ফিরলো! লোকটিকে দেখে আরিয়া অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,, আ….আপনি এখানে কেন মিস্টার তূর্য?

–অন্য কেউ থাকার কথা ছিল বুঝি?(তূর্য)
–হ্যাঁ! আপনি কী করছিলেন এখানে?(আরিয়া)
–গান গাইছিলাম। কেন শুনতে পাও নি?(তূর্য)
–আরে এখানে তো অন্য একজন থাকার কথা। কোথায় সে!(আরিয়া)
–যদি বলি আমিই সেই লোকটি!(তূর্য)
–না না এটা অন্য কেউ।(আরিয়া)
–তাই নাকি আরুপাখি!(তূর্য)

তূর্যের মুখে আরুপাখি ডাকটা শুনে আরিয়া চমকে উঠলো। এ লোকটা কী বলছে! আমাকে তো সেই অচেনা লোকটি আরুপাখি বলতো। তূর্য কেন বলছে! তাহলে কী তূর্যই সেই লোকটা? না না এটা হতে পারে না!

–কী ভাবছো আরুপাখি?(তূর্য)
–আপনি আমাকে আরুপাখি কেন বলছেন? এটা তো অন্য কেউ বলতো আমায়। তাহলে কী আপনিই সেই লোকটা?(আরিয়া)
–হুম আরুপাখি আমিই তোমার সেই অচেনা লোকটা। যে তোমাকে খুব ভালোবাসে। যে তোমাকে প্রতিনিয়ত মিস করে!(তূর্য)
–না না আমি এটা বিশ্বাস করি না। আপনি মিথ্যা বলছেন। বলেই আরিয়া ঘুরে দাঁড়ালো বেরিয়ে আসার জন্য। তখনি তূর্য আরিয়ার সামনে গিয়ে একগুচ্ছ কাঠগোলাপ ফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে শুরু করলো__
কতটা ভালোবাসি তোমায় বুঝাতে পারবো না। প্রথম যেদিন তোমাকে প্রায় ৫ বছর আগে আহিলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখেছিলাম তখন তোমার ওই মিষ্টি হাসিটার প্রেমে পড়েছিলাম। তোমার মায়াবী চোখের প্রেমে পড়েছিলাম। সেদিন তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম কি না জানি না, তবে শুধু মনে হয়েছিলো আমার তোমাকে লাগবেই আরুপাখি।

আরিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তূর্যের দিকে। তূর্য একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,,
আমার হৃদয় হৃৎপিণ্ডের চাইতেও অনেক গভীরে, রক্ত আর শিরা উপশিরারও অনেক গহীনে যে অস্পৃশ্য অবিনশ্বর রুহ আছে, সেই রুহবিন্দু থেকে তোমাকে ভালোবাসি আরএপাখি। তোমার রুপ অবয়ব বা বয়স নয়, তোমার আত্মাটাকে ভালোবাসি। কারন ভালোবাসার শুধু শারীরিক চাহিদা নয় । ভালোবাসা মানে নিজের অপর সত্ত্বাকে তোমার মাঝে খুজে পাওয়া। যাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ। আমার হৃৎপিণ্ডের একটু উপরে, অল্প ডানপাশে, আমি নতুন হৃদস্পন্দন টের পাই। তোমার জন্য এই হৃদস্পন্দনের জন্ম। তুমিই আমার সেই হৃদয়ের টুকরো, যা দিয়ে তোমাকে তৈরি করা হয়েছে, আর যাকে খুজেঁ না পাওয়া পর্যন্ত আমি শূন্য ছিলাম । তোমার কাছে কিছু চাওয়ার সাহস নেই আমার। আমি বরং তোমার কাছে নিজেকে দিয়ে দিলাম। আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সম্পত্তি দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব থাকলো শুধু তোমার। তোমায় ভালোবাসি আরুপাখি। কোনকিছু ছাড়াই ভালোবাসবো। একটু ভালোবাসবে আমায় প্লিজ!

আরিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তূর্যের দিকে! এই লোকটা আমাকে ৫ বছর ধরে ভালোবেসে আসছে! অথচ কখনো জানতেই পারলাম না! আমাকে আগে কেন বলে নি উনি! কী ভাবে ফিরিয়ে দিবো আমি লোকটাকে! কী ভাবে উপেক্ষা করে যাব তাকে।

আরিয়ার ঘোর কাটে তূর্যের কথায়!
আরুপাখি এভাবে কতক্ষণ থাকবো বলো! পা ব্যাথা হয়ে গেলো তো। তূর্যের ফেইসটা দেখে আরিয়া হাসি পাচ্ছে। দেখতে অনেক কিউট লাগছে কিন্তু কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
–কি হলো আরুপাখি?(তূর্য)
–কিছু না।(আরিয়া)
–ফুলটা অন্তত নেও প্লিজ।(আরিয়া)

আরিয়া সাথে সাথেই ফুল গুলা নিয়ে নিলো। তা দেখে তূর্য মুচকি হাসলো। সে জানে আরিয়া কাঠগোলাপ অনেক ভালোবাসে!

–আরুপাখি একটু দয়া কর!(তূর্য)
আরিয়া না চাওয়া সত্বেও তূর্যকে ধরে তুলল।

–আমি জানি তোমার মনে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো৷ তার আগে চলো কেক টা কেটে নিই।
–আমি বাড়ি যাবো! আর আপনিই যে সেই অচেনা লোকটি তার কি প্রমাণ আছে!(আরিয়া)
–আগে কেক কাট তারপর তোর সব প্রমাণ পাবি।

আরিয়া পরিচিত কারো কন্ঠ শুনে পেছনে তাকালো। ভেতর থেকে সায়ান, আহিল, ছোঁয়া আর অন্তু বেরিয়ে এলো। তাদের দেখে আরিয়া চিল্লিয়ে বলে উঠলো, তোরা এখানে কখন এলি? আর আমি তোদের ভেতরে ঢুকতে দেখলাম না কেন??
–আরু তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমরা পরে দিবো আগে কেক টা কাট।(আহিল)

আরিয়াকে সবাই একপ্রকার জোর করেই কেক কাটতে নিয়ে গেলো। কেক কাটার পর সবাই জোর করলো প্রথমে তূর্য কে খাওয়াতে হবে। সবার জোরাজোরিতে আরিয়া এক প্রকার বাধ্য হয়ে তূর্যকে কেক খাইয়ে দিলো। সাথে সাথে তূর্যও আরিয়াকে জোর করেই খাইয়ে দিলো। সবাইকে কেক খাওয়ানোর পর আরিয়া ছোঁয়া কে প্রশ্ন করলো __তোরা এখানে কখন আসলি?
–তোর বাসা থেকে বের হওয়ার পর আহু আমাদেরকে সবটা বলছে আর আমরা সোজা এখানে চলে আসছি।(ছোঁয়া)
–তার মানে আহিল্ল্যা কুত্তা তুই সব জানতি!(আরিয়া)

আহিল একটু ভাব নিয়ে উত্তর দিলো_ হুম।
–তুই আমাকে আগে বলিস নি কেন? আর ছোঁয়া তোরা তো সকালে জানতে পারছিলি আমায় একটা ফোন বা মেসেজ করে তো বলতে পারতি।(আরিয়া)
–আগে বলে দিলে সারপ্রাইজ টা কী থাকতো?(অন্তু)
–তোরা জানিস এই শিশুকে দেখে আমি কতটা ভয় পাইছিলাম!(আরিয়া)
–আবারও আমাকে শিশু বলো? দু’দিন পর যখন তোমাকে বিয়ে করবো আর আমাদের ফুটফুটে ১০-১২ টা বাচ্চা হবে তখনও বইলো আমি শিশু!(তূর্য)

তূর্যের কথা শুনে আরিয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলল।
–ভাইয়া এত বেবি দিয়া কী করবি?(আহিল)
–ক্রিকেট টিম বানাবো।(তূর্য)

তূর্যের কথায় সবাই হেসে উঠলো৷ আর এই দিকে আরিয়া লজ্জায় শেষ। তূর্যের এমন লাগামহীন কথা শুনে আরিয়ার ইচ্ছে করছে ওর মুখে সুপারগ্লু লাগিয়ে দিতে।

–এই আরু তুই লজ্জা কেন পাচ্ছিস? আর ভাইয়ার উত্তর টা দে।(ছোঁয়া)
–কিসের উত্তর?(আরিয়া)
–ভাইয়াকে ভালোবাসিস?

আরিয়া কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না! সেও তো তূর্যকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে।

আরুপাখি তোমার এখনই কিছু বলতে হবে না। তোমার যখন মনে হবে তুমিও আমাকে ভালোবাসো তখন বলো। আমি ততদিন অপেক্ষা করবো। আর আমি তোমাকে ৫ বছর ধরেই ভালোবেসে এসেছি। তবে সেটা বুঝতে আমার দুই বছর লেগেছিলো! যখন আমি বাহিরে চলে গেছিলাম। আমি সবসময় তোমাকে ফলো করতাম। সেটা কেউ বুঝো নি তোমরা। আহিলকেও তখন কিছু বলে নি। বাহিরে যাওয়ার ১ বছর পর দেশে এসেছিলাম। তখন আহিলকে বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আহিল যা বললো সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ভাবতেই পারছিলাম না আমার আরুপাখি অন্য কাউকে ভালোবাসে! সে অন্য কারো বউ হবে এটা ভাবতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো। অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম আরুপাখি। কিছুদিন পরেই আবার বাহিরে চলে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ওখানে কাজে বিজি থাকলে তোমাকে ভুলে যাবো। হ্যাঁ সেটা শুধু দিনের বেলা পর্যন্ত পেরেছি। সারাদিন নিজেকে কাজে, লেখাপড়ায়, আর গানের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতাম। আর রাতে যখন ঘুমাতে যেতাম তখনই একাকিত্ব আমাকে গ্রাস করতো। এভাবেই চলতো আমার দিন। কিছুদিন আগে আহিল ফোন দিয়ে বললো তুমি যাকে ভালোবাসতে সে তোমাকে ঠকিয়ে চলে গেছে। জানো তখন আবার আশাটা ফিরে পেয়েছিলাম। আমি আমার আরুকে নিজের করে পাবো! হ্যাঁ আমি ওকে আমার করেই ছাড়বো! এটা ভাবতেই জানো কতটা খুশি হয়েছিলাম ভাবতে পারবে না। আবার কষ্টও হচ্ছিল তুমি কতটা আঘাত পেয়েছো ভেবে। জানো আরুপাখি হৃদয় ভাঙ্গার কোন শব্দ হয় না বলে বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব হয় না ভেতরে ঠিক কতটা ক্ষত হয়েছে । তবে যেসব মানুষের একবার হৃদয় ভাঙ্গে তারা বোঝে অপর মানুষটা হৃদয় ভাঙলে ঠিক কতটা যন্ত্রনা হয়। যেসব মানুষগুলো তার প্রিয় মানুষটাকে কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছে, তারা যখন কোন মানুষকে প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়ে কাঁদতে দেখে তখন তারাও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। মুহুর্তের মধ্যে যেন সব অতীতের স্মৃতিগুলো তরতাজা হয়ে চোখের কোনে শ্রাবন এনে দেয়। হৃদয় ভাঙ্গা মানুষগুলো কাউকে যেমন চট করে বিশ্বাস করতে পারে না। ঠিক তেমনি দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসার জন্য একটা হৃদয় ভাঙ্গা মানুষকে খুঁজে। কারণ, মানুষ মানুষের কষ্ট তখনই বোঝে যখন সেম একই কষ্ট দুজনেই ভোগ করে। তাই হৃদয় ভাঙ্গা মানুষগুলোর কারো হৃদয় ভাঙবে না।

__আর আমি জানতাম সে সময় তোমাকে প্রপোজ করলেও তুমি রাজি হতে না। আমি যতটা পেরেছি আড়ালে থেকে তোমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছি৷ তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা তৈরি করতে আড়ালে থেকেছি। জানি না কতটুকু জায়গা করতে পেরেছি। তবে হ্যাঁ তুমি যেটা বলবে সেটাই মেনে নিব আমি। হ্যাঁ বা না যেকোনো একটা। আমি সবটা মেনে নিব।

বলেই তূর্য চলে যেতে নিবে তখনি আরিয়া পেছন থেকে তূর্যের হাত ধরে ফেললো। তার আর বুঝতে বাকি নেই এই সে অচেনা লোকটা। যাকে সেও মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে। তাই তূর্যের উদ্দেশ্যে সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো, ভা…ভালোবাসি! আপনাকেও আমি ভালোবাসি।

আরিয়ার কথা শুনে তূর্য একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো।

#চলবে….!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here